বিশেষ‍্য পদ | শব্দ ও পদ | বাংলা ব্যাকরণ | BanglaSahayak.com

শব্দ ও পদ 

ব্যাকরণে আমরা ধ্বনি বলি সেই আওয়াজকে যার অর্থ আছে। অর্থ যুক্ত ধ্বনি হল শব্দ ।যেমন ‘আকাশ’ শব্দের অর্থ ‘গগন’। কিন্তু বলা হল ‘কাশআ’ অর্থ হয় না । শব্দ নয়।

  ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি যখন অর্থযুক্ত হয়ে ওঠে তখন তাকে  শব্দ বলে।

 পদ :    পদ হল শব্দ বা ধাতুর বিভক্তিযুক্ত রূপ। 

বাক্যে ব্যবহৃত বিভক্তিযুক্ত শব্দ বা ধাতুকে পদ বলে।

সুতো দিয়ে   ফুল গেঁথে যেমন মালা তৈরি হয় তেমনই বিভক্তিযোগে শব্দ ও ধাতুকে গেঁথে পদের মালা গড়ে বাক্য গঠিত হয়।  

 মনে রাখতে হবে পদ হতে গেলে শব্দ ও ধাতু বিভক্তি যুক্ত হতে হবে।

 বিভক্তিযুক্ত শব্দ হয় নামপদ আর বিভক্তিযুক্ত  ধাতু হয় ক্রিয়াপদ ।

শব্দ ও পদের  পার্থক্য :

১.অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি হল শব্দ ।

১. বিভক্তিযুক্ত শব্দ হল পদ।

২. শব্দ  সরাসরি বাক্যে ব্যবহৃত হয় না। 

২. শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়েই পদ বাক্যে ব্যবহৃত        হয়।

পদের শ্রেণিবিভাগ  :

 পদ প্রধানত দুই প্রকার। নামপদ ও ক্রিয়াপদ ।

নামপদ :

শব্দের সঙ্গে শব্দবিভক্তি যোগে গঠিত হয় নামপদ ।

 ক্রিয়াপদ :

ধাতুর সঙ্গে ধাতুবিভক্তিযোগে যে পদের সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় ক্রিয়াপদ।

 নাম পদ আবার চারটি ভাগে বিভক্ত : বিশেষ্য ,সর্বনাম ,বিশেষণ, অব্যয় ।

অতএব  পদ মোট পাঁচ প্রকার। যথা-  বিশেষ্য ,সর্বনাম ,বিশেষণ, অব্যয় ও ক্রিয়া।



বিশেষ‍্য পদ :

বিশেষ্য কী :

কোনও কিছুর নামকে বিশেষ্য বলে। বাস্তব জগতে এবং আমাদের ধারণায় যা কিছুর কোনো অস্তিত্ব আছে, তার‌ই একটি নাম আছে। এই সমস্ত নামগুলি বিশেষ‍্যের অন্তর্ভুক্ত।

অর্থ :

বিশেষ‍্য কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল, ‘যাকে বিশেষ করা যায় বা পৃথক করা যায়’। 

নামকরণ:

দোষ গুণ ইত‍্যাদির দ্বারা আলাদা করা যায় বলেই বিশেষ‍্য নামকরণটি করা হয়েছে। 

সংজ্ঞা:

যে সব পদের দ্বারা কোনো ব্যক্তি, বস্তু, প্রাণি, শ্রেণি, সমষ্টি, ভাব, কাজ ইত‍্যাদির নাম বোঝানো হয় তাদের  বিশেষ‍্য বলে।
এক কথায় যে পদের দ্বারা কোনো কিছুর নাম বোঝায় তাকেই বিশেষ্য পদ বলে।

উদাহরণ: রবীন্দ্রনাথ,(ব‍্যক্তি), বই(বস্তু), কলকাতা(স্থান), ডাক্তার(শ্রেণি), আনন্দ (ভাব), বুদ্ধি, সৌন্দর্য (গুণ), দর্শন, পঠন (কাজ) ইত‍্যাদি।

বিশেষ‍্যের শ্রেণিবিভাগ: 

বিশেষ্যকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। যথা-

১: সংজ্ঞাবাচক বিশেষ‍্য

২: শ্রেণিবাচক বা জাতিবাচক বিশেষ‍্য

৩: সমষ্টিবাচক বিশেষ‍্য

৪: ভাববাচক বিশেষ‍্য

৫: গুণবাচক বিশেষ‍্য:

৬: অবস্থা‌বাচক বিশেষ‍্য:

৭: বস্তুবাচক বিশেষ‍্য:

৮: ক্রিয়াবাচক বিশেষ‍্য:

৯: সংখ‍্যাবাচক বিশেষ‍্য:


১: সংজ্ঞাবাচক বিশেষ‍্য:

ক) বঙ্কিমচন্দ্রকে সাহিত্যসম্রাট বলা হয়। 

কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী। 

গ) গঙ্গা  ভারতের পবিত্র নদী।

যে বিশেষ‍্যের দ্বারা একটি মাত্র সুনির্দিষ্ট ব‍্যক্তি, বস্তু, স্থান ইত‍্যাদির নাম বোঝানো হয়, তাকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ‍্য‍ বলে।

উদাহরণ : ‘দেবজিৎ’ বললে একটিমাত্র মানুষের কথা বলা হয়। ব‍্যক্তিনাম মাত্র‌ই সংজ্ঞাবাচক বিশেষ‍্য। এ ছাড়া, স্থান নাম, যেমন: কলকাতা , ভারত, আমেরিকা, জাপান ; নদীর নাম–গঙ্গা, তিস্তা ;  এছাড়া তাজমহল,হিমালয়,পৃথিবী,সূর্য, বাংলা  ইত্যাদি সব‌ই সংজ্ঞাবাচক বিশেষ‍্য। 

ইংরেজিতে একে Proper Noun বলে।

২: শ্রেণিবাচক বা জাতিবাচক বিশেষ‍্য:

ক) সবার উপরে মানুষ সত্য। 

খ) গাছ মানুুষের পরম বন্ধু ।

গ) এক বৃন্তে দুটি কুসুুুম হিন্দু মুসলমান

যে বিশেষ‍্য দ্বারা এক‌ই ধরণের বা এক‌ই গোত্রের সকল ব‍্যক্তি, স্থান, প্রাণি ইত‍্যাদির নাম বোঝানো হয়, তখন তাকে শ্রেণিবাচক বিশেষ‍্য বলে।

উদাহরণ : ‘মানুষ’ বললে কোনো নির্দিষ্ট মানুষ না বুঝিয়ে পৃথিবীর সকল মানুষকেই বোঝানো হয়। ‘পাখি’ বললে কোনো একটি পাখি বোঝায় না। ‘শিক্ষক’ বললে সকল শিক্ষক বোঝায়। তাই এই বিশেষ‍্যগুলি শ্রেণিবাচক বিশেষ‍্য। 
একইরকমভাবে- মাছ,গাছ,পশু,পাখি,গোরু,ঘোড়া, বাঘ,হিন্দু, জৈন ইত্যাদি।

ইংরেজিতে শ্রেণিবাচক বিশেষ‍্য‌কে Common Noun বলে।

মনে রেখো : ‘মানুষ’ বললে জাতিবাচক বিশেষ্য হবে,কিন্তু ‘দেবজিৎ’ বললে ঐ জাতিবাচক বিশেষ্যেরই ‘দেবজিৎ’ নামের বিশেষ এক বালককে বোঝাবে। তাই ‘দেবজিৎ’ সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য।


৩: সমষ্টিবাচক বিশেষ‍্য:

ক) ঐ আমাদের ছেলের দল।

খ) সমিতিতে চাঁদা দাও।

গ) বিজয়ী সেনাদল রাজধানীতে ফিরছে।

যে বিশেষ‍্যের দ্বারা কোনো সমষ্টির নাম বোঝায়, তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ‍্য বলে।

উদাহরণ : দল, পাল,  সভা, সমিতি, গোষ্ঠী, পরিবার, বাহিনী,সমাজ, গণ, জাতি, বৃন্দ, গুচ্ছ, ঝাঁক, গোছা, আঁটি,সারি, পংক্তি, ডজন, জোড়া, সংসদ ইত‍্যাদি।

ইংরেজিতে একে  Collective Noun  বলে।

মনে রেখো: ধর,নবম শ্রেণিতে তোমরা ত্রিশজন ছাত্র আছ। প্রত্যেককে যখন নিজ নিজ নামে ডাকা হবে তখন হবে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য; সবাইকে সাধারণভাবে ছাত্র বললে জাতিবাচক বিশেষ্য ; আর যখন শ্রেণি বলা হবে তখন ছাত্রদের সমষ্টিজাত পরিচয়টাই বড়ো হয়ে উঠে।এজন্য শ্রেণি সমষ্টিবাচক বিশেষ্য।
    


৪. গুণবাচক বিশেষ‍্য:

ক) মেয়েটির বুদ্ধি চমৎকার ।

খ) তাজমহলের সৌন্দর্য অতুলনীয়।  

গ) ক্ষমা পরম ধর্ম।

যে বিশেষ‍্যের দ্বারা কোনো গুণ, ধর্ম, বৈশিষ্ট্য ইত‍্যাদির নাম বোঝানো হয়, তাকে গুণবাচক বিশেষ‍্য বলে।

উদাহরণ: বুদ্ধি,ভয়, ক্ষমা, মমতা,স্নেহ, লজ্জা, ঘৃণা, হিংসা, করুণা, ক্রোধ, প্রেম, সুখ, আনন্দ, দুঃখ, শোক, শান্তি, আদর্শ, নীতি ইত‍্যাদি।

ইংরেজিতে একে Abstract Noun বলে।



৫:  ভাববাচক বিশেষ‍্য:

ক) মনে  আনন্দ আন,বেদনা আপনি হঠে যাবে।

খ) শিশুর সরলতার তুলনা হয় না। 

গ) ক্রোধ আমাদের চরম শত্রু।

যে বিশেষ‍্যের দ্বারা কোনো বিমূর্ত ভাবের নাম বোঝানো হয়, তাকে ভাববাচক বিশেষ‍্য বলে।

উদাহরণ : সততা, আনন্দ, সুখ,বেদনা, ভদ্রতা, সরলতা, নৈরাশ্য , হীনতা,ক্রোধ, উচ্চতা ইত‍্যাদি।

ইংরেজিতে এটিও Abstract Noun-এর মধ‍্যে পড়ে। 


৬: অবস্থা‌বাচক বিশেষ‍্য:

ক) শৈশব সারল্যের ঋতু।

খ) দারিদ্র্যে নাহিক ভয়।

গ) যৌবনের বনে মন হারিয়ে গেল। 

যে বিশেষ‍্যের দ্বারা কোনো অবস্থা বা পরিস্থিতির নাম বোঝানো হয়, তাকে অবস্থা-বাচক বিশেষ‍্য বলে।

উদাহরণ : শৈশব, যৌবন,বার্ধক্য, দারিদ্র্য, রাত্রি, সকাল, মৃত্যু, কষ্ট,  বিপদ, সংকট,রোগ,জ্বালা, যন্ত্রণা, শান্তি, নৈরাজ্য, গোলমাল, হট্টগোল ইত্যাদি।

ইংরেজিতে অবস্থাবাচক বিশেষ‍্য‌ও Abstract Noun-এর মধ্যে পড়ে।

মনে রেখো :  ভাববাচক, গুণবাচক ও অবস্থাবাচক, এই তিন প্রকার বিশেষ‍্য‌কে অনেকেই ভাববাচক শ্রেণিতে ফেলতে চান, কারণ এই তিনটিই বিমূর্ত কল্পনা। ইংরেজিতে‌ও তিনটিকেই Abstract Noun-এর মধ‍্যে ধরা হয়। 



৭: বস্তুবাচক বিশেষ‍্য:

ক) টাকা-পয়সায় কি সব পাওয়া যায়?

খ) রূপাসোনায় কিছুুই হয় না, চাই উপাসনা। 

গ) চা চিনি দুধ আমরাই নিয়ে যেতাম। 

যে বিশেষ‍্যের দ্বারা কোনো জড় বস্তুর নাম বোঝানো হয়, তাকে বস্তুবাচক বিশেষ‍্য বলে।

উদাহরণ : টাকা,পয়সা,জল, মাটি, দুধ,চিনি, চাল, ঘটি,বাটি,পাথর, কাঠ, কাগজ,কলম,মাংস, গ‍্যাস, ধুলো, কাদা, সোনা,রূপা, তামা ইত্যাদি।

ইংরেজিতে বস্তুবাচক বিশেষ্যকে Material Noun বলে।


৮: ক্রিয়াবাচক বিশেষ‍্য:

ক) ভজন-ভোজন শেষ এখন শয়নের জোগাড় চাই।

খ) গপ্পো শোনা হয়েছে পড়তে বসো।

গ) তার দিনেে ঘুমানোর অভ্যাস নেই।

যে বিশেষ‍্যের দ্বারা কোনো কাজের নাম বোঝানো হয়, তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ‍্য বলে। 

উদাহরণ : গমন,চলন,দর্শন,খাওয়া, যাওয়া, দেখা,দেখানো, বলা, পড়া, শোনা,শোনানো, পড়ানো, গ্রহণ, বর্জন, পঠন-পাঠন, ভোজন ইত্যাদি। 

মনে রেখো: ক্রিয়াবাচক বিশেষ‍্য ও ক্রিয়াপদের মধ‍্যে  পার্থক্য রয়েেছ  । ক্রিয়াপদের দ্বারা ‘কাজ করা’ বোঝানো হয়, ক্রিয়াবাচক বিশেষ‍্য দ্বারা শুধুমাত্র কাজের নাম বোঝানো হয়।


৯: সংখ‍্যাবাচক বিশেষ‍্য:

 ক) আমি দাদা সাতে-পাঁচে থাকি না ।

খ) উনিশে আর বিশে কী এমন তফাত। 

গ) দশে মিলি করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ।

যে বিশেষ‍্যের দ্বারা সংখ‍্যার নাম বোঝানো হয়, তাকে সংখ‍্যাবাচক বিশেষ‍্য বলে।


মনে রেখো: সংখ‍্যাবাচক বিশেষ‍্য অন‍্য পদের সংখ‍্যা প্রকাশ করবে না। শুধু একটি সংখ‍্যাকে বোঝাবে।

বিশেষ্য পদ চিনব কীভাবে ?:

বিশেষ্য পদকে সহজে চেনার কয়েকটি উপায় আছে ….

১:  বিশেষ্য শব্দের আগে একটি বিশেষণ শব্দ বসিয়ে দেখতে হবে ঠিকঠাক শুনতে লাগছে কিনা অর্থাৎ অর্থ স্পষ্ট হচ্ছে কিনা ।যেমন: আধুনিক আর আধুনিকতা- কোনটি বিশেষ্য?
আধুনিক যুগ আর আধুনিকতা যুগ  কোনটা ঠিকঠাক? নিশ্চয়ই আধুনিক যুগ।এখানে আধুনিক বিশেষণ আর আধুনিকতা বিশেষ্য।

২:  যার অস্তিত্ব আছে তাই বিশেষ্য হবে। কারণ অস্তিত্ব থাকলেই তার একটি নাম থাকবে।

৩:  র, এর, কে, এ, তে প্রভৃতি বিভক্তি যোগ করা গেলে সেই পদটি হয় বিশেষ্য হবে নতুবা সর্বনাম হবে। 


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top