অভিষেক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত | মাধ্যমিক বাংলা | পদ্য | আলোচনা ও প্রশ্ন | Banglasahayak.com

অভিষেক 

মাইকেল মধুসূদন দত্ত 




কবি পরিচিত:

জন্ম: ২৫ জানুয়ারি ১৮২৪

মৃত্যু : ২৯ জুলাই ১৮৭৩

মধুসূদন দত্ত   বাংলা   সাহিত্যের মহাকবি।  স্বতন্ত্র কবিসত্তার অধিকারী মধুসূদন  দত্ত  বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর  ছন্দ ও সনেটের প্রবর্তক।  মধুসূদন দত্ত  প্রথম  সার্থক  নাট্যকার, প্রহসন রচয়িতা ও পত্রকাব্যকার। 

নাট্যকার হিসেবেই প্রথম বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে পদার্পণ করেন। রামনারায়ণ তর্করত্ন বিরচিত ‘রত্নাবলী’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি বাংলা নাট্যসাহিত্যে উপযুক্ত নাটকের অভাব বোধ করেন। এই অভাব পূরণের লক্ষ্য নিয়েই তিনি নাটক লেখায় আগ্রহী হয়েছিলেন। ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রচনা করেন ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটক। এটিই প্রকৃত অর্থে বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক নাটক। 


সাহিত্য সৃষ্টি :

কাব্য : 

তিলোত্তমা সম্ভব -১৮৬৩

ব্রজাঙ্গনা কাব্য- ১৮৬১

The Captive ladie-1849

Vision of the past-1849

মহাকাব্য :

মেঘনাদবধ কাব্য- ১৮৬১

সনেট :

চতুর্দশপদী কবিতাবলী -১৮৬৫

পত্রকাব্য :

বীরাঙ্গনা -১৮৬২

নাটক :

শর্মিষ্ঠা – ১৮৫৯ 

কৃষ্ণকুমারী -১৮৬১

পদ্মাবতী – ১৮৬০

মায়াকানন-১৮৭৪

প্রহসন :

বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ – ১৮৬০

একেই কি বলে সভ্যতা -১৮৬০

অনুবাদ গ্রন্থ :

হেক্টর বধ – (হোমারের ইলিয়াড এর বঙ্গানুবাদ ১৮৬২)


উনিশ শতকের নবজাগরণের অগ্রদূত মধুসূদন সম্পর্কে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যথার্থই বলেছেন- 

“এই প্রাচীন দেশে ২ সহস্র বৎসরের  মধ্যে কবি একা জয়দেব গোস্বামী। …জয়দেব গোস্বামী পর শ্রীমধুসূদন । অবনতাবস্থায়ও বঙ্গমাতা রত্নপ্রসবিনী । …কাল প্রসন্ন সুপবন বহিতেছে দেখিয়া জাতীয় পতাকা উড়াইয়া দাও। তাহাতে নাম লেখো শ্রী মধুসূদন।”


মূলগ্রন্থ:

পাঠ্য অভিষেক নামক কাব্যাংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা সাহিত্যিক মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’র প্রথম সর্গ ‘অভিষেক’ থেকে নেওয়া হয়েছে।


কাব্যটি ন’টি  সর্গে  রচিত। প্রথম সর্গের নাম ‘অভিষেক’ । সর্গটিতে মোট ৭৮৬ টি লাইন আছে। তার মধ্যে থেকে ৬৫৭ থেকে ৭৬২ পর্যন্ত পাঠ্যাংশে সংকলিত হয়েছে । মোট পাঠ্য লাইনের সংখ্যা ১০৬ .



বিষয়-সংক্ষেপ:

পাঠ্যাংশের সূচনায় রাবণপুত্র  মেঘনাদ কনকআসন ত্যাগ করে ধাত্রীমাতার চরণে প্রণাম জানিয়ে লঙ্কার কুশল জানতে চায়।ধাত্রীর ছদ্মবেশে দেবী লক্ষ্মী জানায়  যুদ্ধে প্রিয়ভায়ের মৃত্যু-সংবাদ। লঙ্কাপুরী শত্রুসৈন্য  পরিবেষ্টিত আর মেঘনাদ যুদ্ধে না গিয়ে প্রমোদ উদ্যানে বিহার করছেন। দেশের আপদকালের কথা বিস্মৃত হয়ে আমোদপ্রমোদে মেতে থাকার জন্য মেঘনাদ নিজেকে ধিক্কার জানান।এবং সঙ্গে সঙ্গেই যুদ্ধে যাওয়ার সংকল্প নিলেন। পত্নী প্রমীলা কেঁদে বললেন, “কোথা প্রাণসখে,/ রাখি এ দাসীরে, কহ, চলিলা আপনি?”মেঘনাদ উত্তরে বললেন, 

“ত্বরায় আমি আসিব ফিরিয়া/ কল্যাণি, সমরে নাশি তোমার কল্যাণে,/ রাঘবে। বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখি।”


 রাবণের কাছে গিয়ে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন মেঘনাদ। সন্তানবৎসল পিতা রাবণ মেঘনাদকে যুদ্ধে পাঠাতে  রাজি নন। কেননা বিধাতা তার প্রতি বিরূপ। তাই তিনি বলেছেন- 

 “এ কাল সমরে/

নাহি চাহে প্রাণ পাঠাইতে তোমা/ বারংবার”


 রামের সঙ্গে যুদ্ধে লঙ্কার অনেক পরাক্রমী বীর নিহত হয়েছেন, তাই রাবণ ইষ্টদেবের পূজা ও নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সমাপ্ত করে যুদ্ধে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন তার প্রিয় পুত্রকে। তারপর গঙ্গাজল দিয়ে শাস্ত্রবিধি অনুসারে সেনাপতিপদে মেঘনাদের অভিষেক করলেন।

বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর :


১. ‘প্রণমিয়া ধাত্রীর চরণে’ — ইন্দ্রজিতের ধাত্রী কে ? উঃ প্রভাষা ।

২. ধাত্রীর ছদ্মবেশে ইন্দ্রজিতের কাছে কে এসেছেন ? উঃ লক্ষ্মী তথা ভগবতী ।

৩. ইন্দ্রজিৎ ছদ্মবেশধারী লক্ষ্মীর কাছে কি জানতে চাইলেন ?

 উঃ স্বর্ণলঙ্কার কুশল তথা খবরাখবর ।

৪. ইন্দ্রজিৎ ধাত্রীর চরণে প্রণাম করে তাকে কি বলে সম্বোধন করলেন ? 

উঃ মাতঃ ।

৫. ‘অম্বুরাশি-সূতা’ কে ? উঃ লক্ষ্মী ।

৬. লক্ষীর অপর নাম ‘অম্বুরাশি-সূতা’ কেন ? উঃ সমুদ্রমন্থনজাত বলে ।

৭. ‘অম্বুরাশি-সূতা’ কার ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন ? উঃ ইন্দ্রজিতের ধাত্রী মাতা (ধাই-মা) প্রভাষার ।

৮. অম্বুরাশি-সূতা কার মৃত্যু সংবাদ বহন করে নিয়ে এসেছিলেন ? উঃ বীরবাহুর ।

৯. বীরবাহুর শোকে কে সসৈন্যে যুদ্ধে যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন? 

উঃ স্বর্ণলঙ্কার অধিপতি রাবণ ।

১০. ‘মহাশোকী রাক্ষসাধিপতি’ কাকে বলা হয়েছে ?

উঃ লঙ্কার অধিপতি রক্ষরাজ রাবণকে ।

১১. হৈমপাখা বিস্তার করে কে উড়েছিল? — মৈনাক

১২. ‘কে বধিল কবে প্রিয়ানুজে ?’ — প্রিয়ানুজটি কে ? উঃ পিতা রাবণ ও মাতা চিত্রাঙ্গদার পুত্র বীরবাহু ।

১৩. প্রিয়ানুজকে বধ করেছে ? 

উঃ রাঘব তথা রামচন্দ্র ।

১৪. ‘তব শরে মরিয়া বাঁচিল ‘ — কার শর প্রয়োগে কে মরে বেঁচে উঠেছে ?  

উঃ রঘুবর তথা রামচন্দ্র ।

১৫. ‘রক্ষচূড়ামণি’ কাকে বলা হয়েছে ? 

উঃ ইন্দ্রজিৎকে ।

১৬.বীরেন্দ্রকেশরী বলতে কার কথা বলা হয়েছে?– ইন্দ্রজিৎ

১৭.মায়াবী মানব বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?  — রামচন্দ্র

১৮.ইন্দ্রজিতের যুদ্ধযাত্রাকালে রথের রঙ কেমন ছিল – -মেঘবর্ণ

১৯.বিধুমুখী বলে মেঘনাদ কাকে সম্বোধন করেছেন–প্রমীলা

২০.মহাশোকী বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? –রাবণ


২১. ‘ছদ্মবেশী অম্বুরাশি-সুতা উত্তরিলা;’— ‘অম্বুরাশি-সুতা’ কথার অর্থ কী ? — 

(ক) সমুদ্রকন্যা        (খ) অগকন্যা        

(গ) পবনকন্যা        (ঘ) রাক্ষসকন্যা ।

উত্তর:ক

২২. ‘হাসিবে মেঘবাহন;’— মেঘবাহন কাকে বলা হয়েছে ? —

(ক) ইন্দ্রজিৎকে        (খ) ইন্দ্রকে       

(গ) বরুণকে        (ঘ) অগ্নিকে ।

উত্তর:খ


২৩. ‘অভিষেক’ কবিাটি ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ র কোন সর্গ থেকে নেওয়া হয়েছে ? —

(ক) দ্বিতীয় সর্গ        (খ) প্রথম সর্গ      

(গ) ষষ্ঠ সর্গ         (ঘ) চতুর্থ সর্গ ।

উত্তর:খ


২৪. ‘হৈমবতীসুত যথা নশিতে তারকে’ — ‘হৈমবতীসুত কাকে বলা হয়েছে ? —   

(ক) অর্জুন         (খ) লক্ষণ        

(গ) কার্তিকেয়         (ঘ) মেঘনাদ ।

উত্তর:গ


২৫. ‘অভিষেক করিলা কুমারে।’ কবিতাটিতে কার অভিষেক হয়েছে ? —   

(ক) বীরবাহুর        (খ) কুম্ভকর্ণের       

(গ) মেঘনাদের        (ঘ) বিভীষণের ।

উত্তর:গ


২৬. ‘কে বধিল কবে প্রিয়ানুজে ‘ — প্রিয়ানুজ কে ছিলেন ? —

(ক) ইন্দ্রজিৎ        (খ) রামচন্দ্র        

(গ) লক্ষ্মণ       (ঘ) বীরবাহু ।

উত্তর:ঘ


২৭. ‘রাক্ষস-কুল-শেখর তুমি, বৎস; তুমি রাক্ষস-কুল- ভরসা ।’  — এখানে যার কথা বলা হয়েছে তিনি হলেন —

(ক) রাবণ        (খ) মেঘনাদ        

(গ) বীরবাহু        (ঘ) কুম্ভকর্ণ ।

উত্তর:খ


২৮. ‘সমরে নাশি তোমার কল্যাণে / রাঘবে । — ‘তোমার’ বলতে বোঝানো হয়েছে — 

(ক) রাবণকে        (খ) প্রমীলাকে       

(গ) ইন্দ্রজিৎকে       (ঘ) ইন্দিরাকে ।

উত্তর:খ


২৯. উত্তরিলা বীরদর্পে অসুরারি রিপু’  — ‘অসুরারি রিপু’ হল  —

(ক) রামচন্দ্র       (খ) বীরবাহু       

(গ) ইন্দ্রজিৎ       (ঘ) রাবণ ।

উত্তর:গ


৩০. ইন্দ্রজিতের স্ত্রীর নাম—            

(ক) ইন্দিরা         (খ) সরমা         

(গ) নিকষা         (ঘ) প্রমীলা ।

উত্তর:ঘ


৩১. ইন্দ্রজিতের কাছে ছদ্মবেশে কে এসেছিলেন ? — 

(ক) জনক সুতা    (খ) পাঞ্চাল সুতা       (গ) দানব সুতা       (ঘ) অম্বুরাশি-সুতা । 

উত্তর:ঘ


৩২. “তার শোকে মহাশোকী রাক্ষসাধিপতি”–রাক্ষসাধিপতি রাবণ যার শোকে কাতর, তিনি হলেন – 

(ক) প্রমীলা (খ) চিত্রাঙ্গদা 

(গ) মন্দোদরী (ঘ) বীরবাহু

উত্তরঃ (ঘ) বীরবাহু


৩৩.“সসৈন্যে সাজেন আজি যুঝিতে আপনি।”—কার কথা বলা হয়েছে? 

(ক) দেবরাজ ইন্দ্র (খ) ইন্দ্রজিৎ 

(গ) রাক্ষসরাজ রাবণ (ঘ) রাঘব

উত্তরঃ (গ) রাক্ষসরাজ রাবণ


৩৪. “জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া; —  ‘মহাবাহু’ হলেন— 

(ক) রাবণ    (খ) ইন্দ্রজিৎ 

(গ) রামচন্দ্র (ঘ) বীরবাহ

উত্তরঃ (খ) ইন্দ্রজিৎ



অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন  :


১. “কে কবে শুনেছে পুত্র, ভাসে শিলা জলে”—বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ কী ?        

উঃ– বক্তার বিশ্বাস জন্মেছে বিধাতা তাঁর প্রতি বিরূপ । প্রসঙ্গত তিনি রামচন্দ্রের পুনর্জীবন লাভের কথা বলেছেন ।


২. “ছদ্দবেশী অম্বুরাশি-সুতা” কেন ইন্দ্রজিতের কাছে এসেছিলেন ?       

উঃ– বীরবাহুর মৃত্যু সংবাদ ও রাজা রাবণের যুদ্ধসজ্জার সংবাদ মেঘনাদকে দেওয়ার জন্য অম্বুরাশি-সুতা মেঘনাদের ধাত্রীর ছদ্মবেশে এসেছিল ।


৩) ‘এক অদ্ভুত বারতা, জননী/ কোথায় পাইলে তুমি,’ – কোন বার্তাকে অদ্ভুত বলা হয়েছে?


৪) ‘হা ধিক মোরে’ – কে কেন নিজেকে ধিক্কার জানিয়েছেন?


৫) ‘বিদায় এবে দেহ বিধুমুখী’ – কেন এই অনুনয়?


৬) কোন ইষ্টদেবকে ইন্দ্রজিৎ পূজা করেছিলেন?


৭) ‘অভিষেক করিলা কুমারে,’ – কুমার কী দিয়ে অভিষিক্ত করা হয়েছিল?


৮) ” জিজ্ঞাসিলাজিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া।”- বিস্ময়ের কারণ কী ?


৯) ” ঘুচাব ও অপবাদ বধি রিপুকুলে । ” – কোন অপবাদ ?


১০) ” হায় বিধি বাম মম প্রতি । ” – কেন এই উক্তি? 


১১) ” বিদায় এবে দেহ বিধুমুখী।”- বিদায় চাওয়ার কারণ কী ?


১২) ” এ মায়া পিতঃ বুঝিতে না পারি।”- কোন মায়া ?


১৩) ” সসৈন্যে সাজেন আজি যুঝিতে আপনি।”- কে, কেন সসৈন্যে সেজেছেন ?



সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন:


১) ” জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া। “- মহাবাহু কে? তার বিস্ময়ের কারণ কী? 

উত্তর: মধুকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিরচিত ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’র প্রথম সর্গ থেকে গৃহীত ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের আলোচ্য অংশে মেঘনাদ বা ইন্দ্রজিৎকে মহাবাহু বলা হয়েছ। 


প্রভাষা রাক্ষুসীর ছদ্মবেশী দেবী লক্ষ্মীর কাছে ইন্দ্রজিৎ জানতে পারলেন যে ,তার প্রিয়ভাই বীরবাহু রামচন্দ্রের হাতে নিহত হয়েছেন । তাই পুত্রশোকে আহত রাজা ররাজা- ‘স্বসৈন্যে সাজেন আজি যুঝিতে আপনি’। কিন্তু ইন্দ্রজিৎ নিশারণে রাঘবদের পরাজিত করেছিলেন এমনকি তাদের খণ্ড-খণ্ড করে কেটেও ছিলেন। সুতরাং মৃত রামচন্দ্র কীরূপে পুনর্জীবন লাভ করে বীরবাহুকে হত্যা করতে পারেন – এই বিষয়টাই ‘মহাবাহু’ ইন্দ্রজিতের বিস্ময়ের কারণ হয়ে উঠেছিল।



২) ‘হায়, বিধি বাম মম প্রতি।’ – কার উক্তি? এমন উক্তির কারণ কী? ১+২


৩) ‘এ কলঙ্ক পিতঃ ঘুষিবে জগতে’ – কার এই উক্তি? বক্তা কোন কলঙ্কের কথা এখানে বলেছেন ? ১+২


৪)” ঘুচাব ও অপবাদ বধি রিপুকুলে।”- বক্তা কে? এখানে কোন অপবাদের কথা বলা হয়েছে? 


৫) “সাজিলা রথীন্দ্রর্ষভ বীর আভরণে।”– ‘রথীন্দ্রর্ষভ’ কে? তার সজ্জার বর্ণনা দাও।



রচনাধর্মী প্রশ্ন:


১. “নমি পুত্র পিতার চরণে, করজোড়ে কহিলা;”  — পিতা ও পুত্রের পরিচয় দাও । পাঠ্যাংশ অবলম্বনে পিতা ও পুত্রের কথোপকথন নিজের ভাষায় লেখ ।  ৫


 উঃ- মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত  বিরচিত ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের আলোচ্য অংশে পিতা ও পুত্র বলতে লঙ্কাধিপতি রাবণ ও তার প্রিয় পুত্র মেঘনাদের কথা বলা হয়েছে ।


     পুত্রের কথায় পুত্রবৎসল এক পিতার হৃদয়ের প্রকৃত স্বরূপটি প্রকাশিত হয় । যেখানে ধ্বনিত হয় স্নেহ হাহাকার ও অসহায়তা । রক্ষোকুলের শ্রেষ্ঠ সম্পদকে বিপদের মুখোমুখি হতে দিতে তিনি চান না ।


    “এ কাল সমরে, / নাহি চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তোমা / বারংবার ।” কারণ তিনি জানেন স্বয়ং বিধাতাও তার প্রতি বিমুখ । নইলে শিলা যেমন জলে ভাসে না, তেমনই মৃত কখনই পুনরায় জীবিত হয় না । অথচ  দশাননের জীবনে সেটাই ঘটতে দেখা গেছে । বীর ইন্দ্রজিৎ অগ্নিদেবকে রুষ্ট করতে কিম্বা ইন্দ্রদেবের উপহাসের পাত্র হতে চান না ।     

          – তাই তিনি বলেন—


” আর একবার পিতঃ দেহ আজ্ঞা মোরে 

দেখিব এবার বীর বাঁচে কি ঔষধে !”


বিক্ষত হৃদয়ে রাবণের দৃষ্টির সামনে ভূপতিত পর্বতসম ভাই কুম্ভকর্ণ । তিনি প্রাণাধিক প্রিয় ‘বীরমণিকে’ প্রথমে ইষ্টদেবের পূজা ও তারপর নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ করে পরদিন সকালে যুদ্ধযাত্রা করতে বলেন । যথাবিহিত উপাচারে ‘গঙ্গোদক’ সহকারে রাবণ মেঘনাদকে সেনাপতি পদে অভিষিক্ত করেন ।



২.”ঘুচাবো এ অপবাদ, বধি রিপুকূলে”— উদ্ধৃতাংশের বক্তা কে ? বক্তা তাঁর কোন অপবাদের কথা বলেছেন ? অপবাদ ঘোচাবার জন্য তিনি কী করেছিলেন ?


উত্তর:-  মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হলেন রাক্ষসাধিপতি রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎ।


  রামচন্দ্রের সঙ্গে লঙ্কার ঘোরতর যুদ্ধে লঙ্কার মহা মহা রথীদের মৃত্যু হচ্ছিল । এই যুদ্ধে রাবণের আর এক বীর পুত্র বীরবাহুর মৃত্যু ঘটে, রাবণের আর এক ভাই শূলী কুম্ভকর্ণের মৃত্যু হয়েছে । এদের মৃত্যু রাবণকে মহাশোকী করে তোলে । মহাশোকে রাবণ নিজেই যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন । অথচ এই বিপদের সময় রাবনের শ্রেষ্ঠপুত্র বীরেন্দ্র-কেশরী ইন্দ্রজিৎ আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত ছিলেন নিজের স্ত্রী ও ও তার সখীদের সঙ্গে । এই দুর্দিনে তাঁর পিতার পাশে থাকার কথা অথচ তিনি থাকেন নি । এটাই ছিল বক্তার কাছে অপবাদের বিষয় ।


  ধাত্রীমাতা প্রভাষার মুখে জন্মভূমি স্বর্ণলঙ্কার এরূপ দুর্দশার কথা শুনে রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎ  বিস্মিত হলেন । সঙ্গে সঙ্গে তিনি তাঁর শরীর থেকে সমস্ত আভরণ কনকবলয়, কুণ্ডল, ফুলমালা সবই দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন । তারপর তিনি দ্রুত লঙ্কায় যাওয়ার জন্য রথ আনার নির্দেশ দিলেন । নিজেকে রণসাজে সাজালেন, ঠিক যেমন কুমার কার্তিকেয় সেজেছিলেন তারকাসুরকে বধ করার জন্য । কিংবা বৃহন্নলারূপী অর্জুন বিরাটপুত্রসহ গোধন উদ্ধার করতে যাবার সময় যেমন ভাবে সেজেছিলেন । এই ভাবে বীর ইন্দ্রজিৎ তাঁর অপবাদ ঘোচানোর জন্য বীরসেনার সাজে সেজেছিলেন । রণসাজে সজ্জিত হয়ে তিনি দ্রুত লঙ্কায় প্রবেশ করেন । পিতা লঙ্কেশ্বরের কাছে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য অনুমতি চান এবং কথা দেন যে শত্রুদের তিনি অচিরেই পরাজিত ও নিহত করবেন ।


৩. অভিষেক কাব্যাংশে অবলম্বনে ইন্দ্রজিতের চরিত্র বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।          ৫


উত্তর :  উনবিংশ শতাব্দী নবজাগৃতির মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ তাঁর রচিত অমর মহাকাব্য। তাঁর এই মহাকাব্যের অন্তর্গত ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চরিত্র মেঘনাদ বা ইন্দ্রজিৎ।চরিত্রটি একাধিক সত্তায় বিকশিত।


 বীরত্ব :  স্বর্ণালঙ্কার বীর চূড়ামণি মেঘনাদ ত্রিভুবন বিজয়ী। অসীম সাহসী বীর সে। এসেছে বীরবাহুর নিধন সংবাদ। মেঘনাদের অন্তরে জেগে উঠেছে রোষানল।বীরের ন্যায় সে যাত্রা করেছে স্বর্ণালঙ্কার উদ্দেশ্যে। নিয়েছে সেনাপতির পদ।


কর্তব্য সচেতনতা : কর্তব্য পালনে অকুণ্ঠচিত্ত মেঘনাদ। প্রমীলার প্রতি তার যেমন কর্তব্য রয়েছে তেমনি রয়েছে দেশের প্রতিও।


 স্বদেশপ্রেম : স্বদেশ ও জাতির প্রতি একনিষ্ঠ মেঘনাদ ।আক্রান্ত হয়েছে স্বদেশ। দেশরিপু দমন করে জন্মভূমি রক্ষা করা তার  একান্ত কর্তব্য।তাই তার দৃঢ় শপথ –

“সমূলে নির্মূল/ করিব পামরে আজি।”


আত্মবিশ্বাসী : মেঘনাদ আত্মপ্রত্যয় বীর। নিজের পরাক্রম নিয়ে তার কোনো সংশয় নেই। আত্মপ্রত্যয়ী মেঘনাদের প্রত্যয়ী সুর ধ্বনিত হয়ে ওঠে-

“দুইবার আমি হারানু রাঘবে;  

আর একবার পিতঃ দেহ আজ্ঞা মোরে।”


পত্নীপ্রেম : মেঘনাদ প্রেমিকেরর চূড়ামণি। মেঘনাদ একাধারে যেমন আদর্শবান পুত্র, স্বদেশবৎসল বীর তেমনি অন্যদিকে একজন কর্তব্যপরায়ণ স্বামীও।


পরিশেষে বলা যায়, মহৎ গুণের সমন্বয়ে চিত্রিত কবির প্রিয় চরিত্র মেঘনাদ ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে নায়কোচিত গরিমায় প্রতিভাত।



৪.“তবে কেন তুমি, গুণনিধি,/ত্যাজ কিঙ্করীরে আজি?” – কে কখন কথাটি বলেছেন? তাকে কী সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছিল ? ৩+২


৫.“হায়, বিধি বাম মম প্রতি।”—কখন বক্তা এ কথা বলেছেন? বক্তার এ কথা বলার কারণ কী? ২+৩


৬.“তারে ডরাও আপনি।”—কে, কাকে ভয় পান? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির ভয় পাওয়ার কারণ কী? বক্তা কীভাবে সেই ভয় দূর করতে সচেষ্ট হয়েছেন? ১+২+২


4 thoughts on “অভিষেক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত | মাধ্যমিক বাংলা | পদ্য | আলোচনা ও প্রশ্ন | Banglasahayak.com”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top