শঙ্খ ঘোষ
আমাদের ডান পাশে ধ্বস
আমাদের বাঁয়ে গিরিখাদ
আমাদের মাথায় বোমারু
পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ
আমাদের পথ নেই কোনো
আমাদের ঘর গেছে উড়ে
আমাদের শিশুদের শব
ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে !
আমরাও তবে এইভাবে
এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি ?
আমাদের পথ নেই আর
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ।
আমাদের ইতিহাস নেই
অথবা এমন ইতিহাস
আমাদের চোখমুখ ঢাকা
আমরা ভিখারি বারোমাস
পৃথিবী হয়তো বেঁচে আছে
পৃথিবী হয়তো গেছে মরে
আমাদের কথা কে-বা জানে
আমরা ফিরেছি দোরে দোরে ।
কিছুই কোথাও যদি নেই
তবু তো কজন আছি বাকি
আয আরো হাতে হাত রেখে
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ।
কবি পরিচিতি
শঙ্খ ঘোষ :
জন্ম : ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২
মৃত্যু : ২১ এপ্রিল ২০২১
প্রকৃত নাম: চিত্তপ্রিয় ঘোষ
ছদ্মনাম: কুন্তক
▶️ শঙ্খ ঘোষ ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি ও সাহিত্য সমালোচক, রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ও শক্তিমান সাহিত্যিক। তিনি কাব্য সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দ দাসের উত্তরসূরী ছিলেন।
তাঁর প্রকৃত নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। মাতা অমলাবালা, পিতা সুশিক্ষক বাংলা ভাষার সম্মানিত বিশেষজ্ঞ মণীন্দ্রকুমার ঘোষ। তিনিও শিক্ষকতা করেছেন সারা জীবন।যাদবপুর, দিল্লি ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনা করেছেন। ‘বাবরের প্রার্থনা’ কাব্যগ্রন্থটির জন্য তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার ‘সাহিত্য একাদেমি পুরস্কার‘ লাভ করেন।১৯৮৯ সালে- “ধুম লেগেছে হৃদকমলে” কাব্যগ্রন্থের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার পান। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে লাভ করেন ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান, ‘জ্ঞানপীঠ পুরস্কার‘।
কাব্যগ্রন্থ :
দিনগুলি রাতগুলি (১৯৫৬)
এখন সময় নয় (১৯৬৭)
নিহিত পাতালছায়া (১৯৬৭)
শঙ্খ ঘোষের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৭০)
মূর্খ বড় সামাজিক নয় (১৯৭৪)
বাবরের প্রার্থনা (১৯৭৬)
পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ (১৯৮০)
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে (১৯৮৪)
ধুম লেগেছে হৃদকমলে (১৯৮৪)
কবিতাসংগ্রহ – ২ (১৯৯১)
লাইনেই ছিলাম বাবা (১৯৯৩)
জলই পাষাণ হয়ে আছে (২০০৪)
গদ্যগ্রন্থ :
কালের মাত্রা ও রবীন্দ্রনাটক (১৯৬৯)
ছন্দের বারান্দা (১৯৭২)
উর্বশীর হাসি (১৯৮১)
শব্দ আর সত্য (১৯৮২)
ছোটো ও কিশোরদের জন্যে লেখা :
বিদ্যাসাগর (১৯৫৬)
সকালবেলার আলো (১৯৭২)
শব্দ নিয়ে খেলা : বানান বিষয়ক বই {কুন্তক ছদ্মনামে লেখা } (১৯৮০)
রাগ করো না রাগুনী (১৯৮৩)
সব কিছুতেই খেলনা হয় (১৯৮৭)
সুপারিবনের সারি (১৯৯০)
আমন ধানের ছড়া (১৯৯১)
কথা নিয়ে খেলা (১৯৯৩)
ছোট্ট একটা স্কুল (১৯৯৮)
বড় হওয়া খুব ভুল (২০০২)
মূলগ্রন্থ:
‘জলই পাষাণ হয়ে আছে’
কবিতার বিষয়বস্তু :
কবি শঙ্খ ঘোষ ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় সমাজ ব্যবস্থার সঙ্কট মুহূর্তের এক প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন। কবিতার মধ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে বিপন্ন মানুষের কথা তুলে ধরেছেন সমাজ সচেতন কবি । এইসব মানুষদের ডানদিকের পথ ধ্বসে রুদ্ধ ,বাম দিকে গভীর গিরিখাদ দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত –
” আমাদের ডান পাশে ধ্বস
আমাদের বাঁয়ে গিরিখাদ
…আমাদের পথ নেই কোনো “
মাথার উপর আকাশটাও নিরাপদ নয়,সেখানে বোমারু বিমানের আনাগোনা। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষেরা আজ গৃহহারা। শিশুদের সব ‘ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে’। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে কবির আহ্বান- “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।”
কেবল সমাজের বাহ্যিক অবক্ষয় নয়। বিপন্ন মানুষেরা আজ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে।এই দুর্বলতার কারন তাদের কোনো ইতিহাস নেই। যদিও বা থাকে, সেখানে প্রকৃত সত্যের উন্মোচন ঘটেনি-
“অথবা এমনই ইতিহাস
আমাদের চোখমুখ ঢাকা।”
এইসব বিপন্ন মানুষেরা আজ সহানুভূতির কাঙাল। পৃথিবীর অন্যান্য মানুষ কোনো ভাবেই মনে রাখেনি তাদের কথা। এমতাবস্থায় যে কজন বেঁচে থাকতে পারবেন, তাদের একটাই কাজ হবে হাতে হাত রেখে বেঁধে বেঁধে থাকা। অর্থাৎ পারস্পরিক ঐক্য সুদৃঢ় করে, নিজেদের শক্তিকে একত্রিত করে অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে একত্রে বেঁচে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন কবি।
কবিতার ভাববস্তু :
‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় অস্থির সময়ের রাহুগ্রাসে বিপন্ন প্রাণির টিকে থাকার কথা ব্যক্ত হয়েছে। আমাদের চলমান জীবনের সার্বিক সংকটের কথা বোঝাতে গিয়ে কবি লিখেছেন আমাদের ডান পাশে ধ্বস ,আমাদের বামে গিরিখাত আমাদের মাথায় বোমারু বিমান।
আলোচ্য কবিতায় প্রতিটি স্তবকে মানুষের অস্তিত্বের সংকট প্রকাশিত । রাজনৈতিক আদর্শহীনতা, সাম্রাজ্যবাদ, ধর্মান্ধতার মতো অসুখ সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে ।এই অস্থির সময়ে মানুষের বিপন্নতার ছবি তুলে ধরেছেন কবি শঙ্খ ঘোষ । অস্তিত্বের সংকটে বিপন্ন মানুষ। কবি বলেছেন-
“আমাদের পথ নেই কোনো
আমাদের ঘর গেছে উড়ে
আমাদের শিশুদের শব
ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে!”
এত হতাশার মাঝে বাঁচার একটাই পথ, তা হলো সংঘবদ্ধতা ।
এই ক্ষয়ে যাওয়া সমাজে সাধারণ মানুষের কোনো ইতিহাস নেই । যদিও- বা থেকে থাকে তবে তা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে পদানত হওয়ার ইতিহাস ।কিন্তু এতসব প্রতিকূল ও নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যেও কিছু মানুষ এখনও তাদের শুভবুদ্ধি বিবেকবোধ বিসর্জন দেননি । কবি তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানিয়েছেন । তাঁরা যদি আরো সংঘবদ্ধভাবে থাকেন , তবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর কবিতার মাধ্যমে মানুষের কাছে এই বার্তায় পৌঁছে দিতে চেয়েছেন যে , প্রতিকূলতা ও অসহায়তা বঞ্চনা ও সংশয়ের মাঝেও সঙ্ঘবদ্ধ হতে হবে । কারণ একতা,সম্প্রীতি ও সম্মিলিত শক্তির কাছে উদ্ধত শক্তিকে নতজানু হতেই হয়- এটাই সভ্যতার ইতিহাস, এটাই বাস্তব।
কবিতার আলোচনা :
‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় বর্তমান সময়ের সঙ্গহীন-বিপর্যস্ত মানবাত্মার; যুগযন্ত্রণার অভিব্যক্তি প্রকাশিত।যুদ্ধ-দাঙ্গা, মহামারি- দুর্ঘটনা- সন্ত্রাস ও হানাহানির পাকচক্রে পড়ে মানুষ আজ বিপর্যস্ত, কোণঠাসা। সন্তানদের মৃতদেহ মানুষকে বিড়ম্বিত করে। ধ্বস ও গিরিখাতের মতো বিপজ্জনক ভয়াবহতায় তার জীবনের স্বাভাবিক স্থিরতা নিত্য দোদুল্যমান।
আসলে বেশিরভাগ মানুষ নির্বিবাদে সবকিছু মেনে ও মানিয়ে নেয় । তারা ইতিহাস বিস্মৃত। তাই কবি মুখ বুজে সব মেনে না নিয়ে, ভাগ্যের হাতে ভবিষ্যতের ভার ন্যস্ত না করে মানুষকে সংঘবদ্ধ হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে আহ্বান জানান। কবিতার শেষ দুই পঙক্তিতে এই কথাই উচ্চারণ করেন আরও মর্মস্পর্শী আন্তরিকতায়–
” আয় আরো হাতে হাত রেখে
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি ।”
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো :
১. ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ — কবিতাটি কবির কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ? [মাধ্যমিক – ২০১৮]
(ক) ‘নিহিত পাতাল ছায়া’
(খ) ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ’
(গ) ‘দিনগুলি রাতগুলি’
(ঘ) ‘জলই পাষাণ হয়ে আছে’ ।
উত্তর : (ঘ) ‘জলই পাষাণ হয়ে আছে’ ।
২. ‘ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে !’— কী ছড়ানো রয়েছে ?
(ক) আমাদের শিশুদের শব (খ) সৈন্যদের শব (গ) লালরঙের ফুল (ঘ) বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের শব
উত্তর:(ক) আমাদের শিশুদের শব
৩. ‘আমাদের পথ নেই কোনো / আমাদের _____ গেছে উড়ে’ । — শুন্যস্থান পূরণ করো ।
(ক) বাড়ি (খ) বাড়িঘর
(গ) ঘরবাড়ি (ঘ) ঘর
উত্তর: ঘর
৪. ‘পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ’ — ‘হিমানী’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ কী ?
(ক) জল (খ) আগুন (গ) তুষার (ঘ) পর্বত ।
উত্তর: তুষার
৫. আমাদের বাঁয়ে ——–রয়েছে —
(ক) ধ্বস (খ) গিরিখাদ
(গ) বোমারু (ঘ) পর্বত।
উত্তর : (খ) গিরিখাদ
৬. ‘আমাদের শিশুদের শব / ছড়ানো রয়েছে’ —
(ক) কাছে দূরে (খ) কাছে কাছে
(গ) দূরে দূরে (ঘ) বহুদূরে ।
উত্তর : (ক) কাছে দূরে
৭. শঙ্খ ঘোষের প্রকৃত নাম কী ? —
(ক) প্রিয়দর্শী ঘোষ (খ) চিত্তরঞ্জন ঘোষ
(গ) মণীন্দ্রকুমার ঘোষ (ঘ) চিত্তপ্রিয় ঘোষ ।
উত্তর: (ঘ) চিত্তপ্রিয় ঘোষ ।
৮. ‘আমাদের ডান পাশে _____’ শুন্যস্থান পূরণ করো ।
(ক) ধ্বস (খ) প্রান্তর (গ) বন (ঘ) গিরিখাদ
উত্তর: ধ্বস
৯. কবি শঙ্খ ঘোষের ছদ্মনাম-
(ক) কুন্তক (খ) বনফুল
(গ) চিত্তপ্রিয় (ঘ) রূপদর্শী
উত্তর: (ক) কুন্তক
১০. “আমাদের পথ নেই আর।”- ‘পথ’ শব্দটি কবিতায় ব্যবহৃত হয়েছে-
ক) একবার খ) দু-বার
গ) তিনবার ঘ) চারবার
উত্তর: খ) দু-বার
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর: (প্রশ্নের মান-১)
১. “আমাদের পথ নেই আর”— তাহলে আমাদের করণীয় কী ? [মাধ্যমিক-২০১৭]
উঃ- পথ না থাকার দরুন আমাদের আজ একতাবদ্ধ হয়ে ‘আরো বেঁধে বেঁধে’ থাকতে হবে।
২.”আমাদের পথ নেই কোনো “-একথা মনে হয়েছে কেন?
উত্তর: একথা মনে হওয়ার কারণ সম্পূর্ণ প্রতিকূল ও অস্থির পরিবেশ।
৩. “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি”- বেঁধে বেঁধে থাকার উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: বিপদকে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করার শক্তি সংগ্রহ করাই বেঁধে বেঁধে থাকার উদ্দেশ্য।
৪. “আমাদের ইতিহাস নেই “- এ কথা বলা হয়েছে কেন ?
উত্তর: কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতা’য় কবি সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি। আর সাধারন মানুষ কোনোদিনই ইতিহাসে স্থান পায় না ।তাদের ইতিহাস জনসমক্ষে প্রতিফলিত হয় না। তাই এমন উক্তি।
৫. “পৃথিবী হয়তো বেঁচে আছে /পৃথিবী হয়তো গেছে মরে”- একথা বলার কারণ কী ?
উত্তর: পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতার মাঝে পীড়িত ঘরহারা, ইতিহাসে ঠাঁই না পাওয়া মানুষগুলোর কাছে বেঁচে থাকার অর্থটাই হারিয়ে গেছে। পৃথিবীর বেঁচে থাকা বা না থাকায় তাদের কিছু যায় আসে না।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর: ( প্রশ্নের মান-৩)
১. “আমরাও তবে এইভাবে / এ মুহূর্তে মরে যাব না কি ? ?” — এমনটা মনে হচ্ছে কেন ? [মাধ্যমিক-২০১৮]
উঃ- প্রশ্নোদ্ধৃতাংশ মন্তব্যটি কবি শঙ্খ ঘোষ রচিত “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি” কবিতায় উল্লেখ করেছেন ।
চারপাশের অরাজকতা, ধর্ম কিংবা রাজনীতি —প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসহিষ্ণুতা, সাম্রাজ্যবাদের সীমাহীন লোভ পৃথিবী জুড়ে হত্যা আর ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে । বেঁচে থাকাটাই যেন এক বিস্ময় হয়ে উঠেছে । শিশুরা পর্যন্ত এই ধ্বংসলীলা থেকে রেহাই পাছে না । এই অবস্থায় প্রতিটি মানুষই যেন বেঁচে থাকার অনিশ্চয়তায় ভুগছে । সর্বোপরি, এই পরিজনহীন অবস্থাতে বেঁচে থাকা যেন মৃত্যুর মতো যন্ত্রনাদায়ক । এ কারণেই কবি প্রশ্নে উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন ।
৩. “আমাদের ইতিহাস নেই” — কে, কেন এ কথা বলেছেন ? [মাধ্যমিক-২০১৮]
উঃ- কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর রচিত “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি” কবিতায় প্রশ্নের উদ্ধৃত অংশটির কথা বলেছেন ।
ইতিহাস হল কোনো জাতির এবং সভ্যতার আত্মবিকাশের পথ ও পর্যায়ের কাহিনি । কিন্তু যখন সেই ইতিহাস নিয়ন্ত্রিত হয় কোনো ক্ষমতাবান গোষ্ঠী, ধর্মসম্প্রদায় কিংবা রাজনীতির দ্বারা, তখন ইতিহাসের বিকৃতি ঘটে । ক্ষমতাবানরা নিজেদের স্বার্থে ইতিহাসকে নিজেদের মতো করে গড়ে তোলে । মানুষ একসময় ভুলে যায় তার প্রকৃত ইতিহাস, আর চাপিয়ে দেওয়া ইতিহাসকেই নিজের বলে মেনে নেয় । এই পরিপ্রেক্ষিতেই এখানে কবি বলেছেন আমাদের ইতিহাস নেই ।
৩. “আমাদের পথ নেই কোনো”- ‘পথ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? কবির এমন আশঙ্কার কারণ ব্যাখ্যা করো ।
উত্তর: আলোচ্য অংশটি কবি শঙ্খ ঘোষ রচিত ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতার অন্তর্গত। এখানে ‘পথ’ বলতে অবক্ষয়ের যুগে আদর্শহীনতা ও অনিশ্চয়তার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে নতুন ভাবে বাঁচার উপায় বা দিশাকে বোঝানো হয়েছে ।
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ ,দাঙ্গা , রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা মানুষকে দিশেহারা করে তুলেছে। মানুষ আজ সন্ত্রাস আর বঞ্চনার শিকার। জীবনের প্রতি পদে প্রতিবন্ধকতা তার অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে ।তাই কবির আশঙ্কা এই অন্ধকারের আবর্ত থেকে বেরিয়ে এসে মানুষের সুস্থ জীবনযাপনের আর বুঝি কোনো উপায় নেই।
রচনাধর্মী প্রশ্ন : (প্রশ্নের মান—৫)
১. আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতার ভাববস্তু নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর:’আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় অস্থির সময়ের রাহুগ্রাসে বিপন্ন প্রাণির টিকে থাকার কথা ব্যক্ত হয়েছে। আমাদের চলমান জীবনের সার্বিক সংকটের কথা বোঝাতে গিয়ে কবি লিখেছেন আমাদের ডান পাশে ধ্বস ,আমাদের বামে গিরিখাত আমাদের মাথায় বোমারু বিমান।
আলোচ্য কবিতায় প্রতিটি স্তবকে মানুষের অস্তিত্বের সংকট প্রকাশিত । রাজনৈতিক আদর্শহীনতা, সাম্রাজ্যবাদ, ধর্মান্ধতার মতো অসুখ সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে ।এই অস্থির সময়ে মানুষের বিপন্নতার ছবি তুলে ধরেছেন কবি শঙ্খ ঘোষ । অস্তিত্বের সংকটে বিপন্ন মানুষ। কবি বলেছেন-
“আমাদের পথ নেই কোনো
আমাদের ঘর গেছে উড়ে
আমাদের শিশুদের শব
ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে!”
এত হতাশার মাঝে বাঁচার একটাই পথ, তা হলো সংঘবদ্ধতা ।
এই ক্ষয়ে যাওয়া সমাজে সাধারণ মানুষের কোনো ইতিহাস নেই । যদিও- বা থেকে থাকে তবে তা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে পদানত হওয়ার ইতিহাস ।কিন্তু এতসব প্রতিকূল ও নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যেও কিছু মানুষ এখনও তাদের শুভবুদ্ধি বিবেকবোধ বিসর্জন দেননি । কবি তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানিয়েছেন । তাঁরা যদি আরো সংঘবদ্ধভাবে থাকেন , তবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর কবিতার মাধ্যমে মানুষের কাছে এই বার্তায় পৌঁছে দিতে চেয়েছেন যে , প্রতিকূলতা ও অসহায়তা বঞ্চনা ও সংশয়ের মাঝেও সঙ্ঘবদ্ধ হতে হবে । কারণ একতা,সম্প্রীতি ও সম্মিলিত শক্তির কাছে উদ্ধত শক্তিকে নতজানু হতেই হয়- এটাই সভ্যতার ইতিহাস, এটাই বাস্তব।
২. “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি”- ‘বেঁধে বেঁধে থাকা’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন এবং কাদের এভাবে থাকতে বলেছেন ? কবি বেঁধে বেঁধে থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন কেন?
অথবা, “তবু তো কজন আছি বাকি/ আয় আরো হাতে হাত রেখে/ আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি”- কবিতাটির মধ্যে কবি যে- মূল বক্তব্য তুলে ধরতে চেয়েছেন তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। উদ্ধৃতাংশটির প্রেক্ষিতে কবি মানসিকতার পরিচয় দাও।
উত্তর: রবীন্দ্রোত্তর কালের অন্যতম প্রধান কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় ‘বেঁধে বেঁধে থাকি’ বলতে সংঘবদ্ধভাবে বেঁচে থাকাকে বোঝাতে চেয়েছেন। বর্তমান বিশ্ব ক্ষমতাবান শাসক, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও মৌলবাদীদের যৌথ ষড়যন্ত্র বিধ্বস্ত ।মানুষ আজ বিপন্ন, বড় অসহায় । প্রতি পদে পদে তার বিপদ। সাধারণ মানুষ প্রতিমুহূর্তে প্রাণসংশয়ের ভয়ে ভীত । তাই এভাবে ক্রমাগত শোষিত পৃথিবীর শান্তিকামী সাধারণ মানুষকে কবি বেঁধে বেঁধে একত্রিত হয়ে এই সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বলেছেন।
সাম্রাজ্যবাদী, ক্ষমতাবান ও মৌলবাদী শক্তি তাদের নৃশংসতায় সাধারণ মানুষের সামনে অস্তিত্বের সংকট সৃষ্টি করেছে। এই সংকট থেকে রক্ষা পেতে ভাবি প্রজন্মের কাছে সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে হলে মানুষের প্রয়োজন সংঘবদ্ধতা। সুস্থ শান্তিকামী বিবেকবান মানুষের ঐক্যবদ্ধ অঙ্গীকারেই একমাত্র এ সভ্যতার সংকট মোচন সম্ভব ।কবি এ কথাই বলতে চেয়েছেন।
৩. ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতার মূল বক্তব্য সংক্ষেপে আলোচনা করে নামকরণ সার্থকতা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: যদিও শেক্সপীয়র বলেছেন What’s in a name? তবুও আমাদের মনে হয় সাহিত্যে নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণ হয়ে থাকে চরিত্রকেন্দ্রিক, কখনও বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, আবার কখনও বা ব্যঞ্জনাধর্মী।
এবার আমরা কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে আলোচনা দেখব নামকরণ কতটা সার্থক হয়েছে।
‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় অস্থির সময়ের রাহুগ্রাসে বিপন্ন প্রাণির টিকে থাকার কথা ব্যক্ত হয়েছে। আমাদের চলমান জীবনের সার্বিক সংকটের কথা বোঝাতে গিয়ে কবি লিখেছেন আমাদের ডান পাশে ধ্বস ,আমাদের বামে গিরিখাত আমাদের মাথায় বোমারু বিমান।
আলোচ্য কবিতায় প্রতিটি স্তবকে মানুষের অস্তিত্বের সংকট প্রকাশিত । রাজনৈতিক আদর্শহীনতা, সাম্রাজ্যবাদ, ধর্মান্ধতার মতো অসুখ সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে ।এই অস্থির সময়ে মানুষের বিপন্নতার ছবি তুলে ধরেছেন কবি শঙ্খ ঘোষ । অস্তিত্বের সংকটে বিপন্ন মানুষ। কবি বলেছেন-
“আমাদের পথ নেই কোনো
আমাদের ঘর গেছে উড়ে
আমাদের শিশুদের শব
ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে!”
এত হতাশার মাঝে বাঁচার একটাই পথ, তা হলো সংঘবদ্ধতা ।
এই ক্ষয়ে যাওয়া সমাজে সাধারণ মানুষের কোনো ইতিহাস নেই । যদিও- বা থেকে থাকে তবে তা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে পদানত হওয়ার ইতিহাস ।কিন্তু এতসব প্রতিকূল ও নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যেও কিছু মানুষ এখনও তাদের শুভবুদ্ধি বিবেকবোধ বিসর্জন দেননি । কবি তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানিয়েছেন । তাঁরা যদি আরো সংঘবদ্ধভাবে থাকেন , তবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর কবিতার মাধ্যমে মানুষের কাছে এই বার্তায় পৌঁছে দিতে চেয়েছেন যে , প্রতিকূলতা ও অসহায়তা বঞ্চনা ও সংশয়ের মাঝেও সঙ্ঘবদ্ধ হতে হবে ।
আলোচ্য কবিতার বিষয়বস্তু বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে কবিতার নামকরণ ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ সম্পূর্ণরূপে সার্থক হয়েছে।
খুব সুন্দর যদি এভাবে আরও কিছু আলোচনা দেন তাহলে খুব উপকৃত হবো।
Amader kotha ka ba jana, amra phirhichi dora dora -dora phirar er kotha kobi kano bolacha?
aapane Khoob Bhalo likhe chain
অংশগ্রহণ
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কি ধরণের কবিতা? এটি কি রূপকধর্মী কবিতা?