খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা/
চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা
“দুর্বল মস্তিষ্ক কিছু করতে পারে না আমাদিগকে উহা বদলাইয়া সরল মস্তিষ্ক হইতে হইবে। গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমারা স্বর্গের সমীপবর্তী হইবে।” –স্বামী বিবেকানন্দ
ভূমিকা :
বহু প্রাচীন প্রবাদেই বলা আছে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তার কথা : ‘সুস্থ দেহেই সুস্থ মনের বাস’। আর সুস্থ সবলতার একমাত্র উৎস হল খেলাধুলা। মানবসভ্যতার ক্রম বিবর্তনের দেশে দেশে যুগে যুগে খেলাধুলার নানা রূপান্তর হয়েছে। সবরকম খেলাধুলাই মানুষকে অটুট স্বাস্থ্যের অধিকারি করে জীবনে জয় এনে দেয়।
শরীর চর্চার সেরা উপায় খেলাধুলাঃ
একটা আদর্শ ছাত্রের প্রধান কর্তব্য যেমন পড়াশোনা তেমনি খেলাধূলাও।শরীরচর্চার ফলে দুর্বল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সবল হয়।খেলাধুলায় শরীরচর্চার সঙ্গে আনন্দও মেলে।
স্বাস্থ্যই সম্পদ :
‘Health is wealth’-স্বাস্থ্যই সম্পদ।স্বাস্থ্যবান দেহ হয় সুখ সম্পদের অধিকারী, সৌন্দর্যের আকর।স্বাস্থ্য বিকশিত না হলে কোনো কর্মই সুন্দর ও সাফল্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে না।তাই স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে খেলাধুলা একাএকান্ত প্রয়োজন।এই প্রসঙ্গে স্মরণীয়-“All work and no play makes Jack a dull boy.”
খেলাধুলার শ্রেণিবিভাগঃ
খেলাধুলাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। (১) ইনডোর গেমস(ব্যায়াম, টেবিল টেনিস ইত্যাদি) (২) আউটডোর গেমস (ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি) প্রত্যেক বিদ্যালয়ে খেলাধুলার একজন শিক্ষক থাকেন। যিনি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ বাড়িয়ে তোলেন।
চরিত্র বিকাশ ও খেলাধুলা :
ব্যক্তির চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষের চরিত্রে দৃঢ়তা আসে। খেলাধুলা করতে ধৈর্য ও সংযম উভয়েরই প্রয়োজন হয়। ফলে যারা খেলাধুলা করে তাদের ব্যক্তিগত জীবনে ও চরিত্রের মধ্যে এই দুটির ছাপ পড়ে। খেলাধুলা সহমর্মিতা ও সহানুভূতি বোধের জন্ম দেয় । খেলাধুলার মাধ্যমে ব্যক্তির চরিত্রে আত্মবিশ্বাস, দৃঢ় প্রত্যয়, অধ্যবসায়ের মতো মানসিক গুণাবলীগুলো যুক্ত হয়।এছাড়া খেলাধুলা মানুষের মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়া অভ্যাস গড়ে তোলে।
খেলাধুলার গুরুত্ব :
ছাত্রজীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব অসীম।তাই স্কুল কলেজের পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে শারীরশিক্ষা।খেলাধুলা শিক্ষার্থীকে শেখায় বিনয়ী হতে এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন করতে।খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা আলোচনায় বলা যায়–
১. মানসিক বিকাশে খেলাধুলা:
শিশুর মানসিক বিকাশে খেলাধুলার ভূমিকা খুবই সহায়ক ও স্বতঃস্ফূর্ত। খেলাধুলার ফলে যে আনন্দময় পরিবেশে শিশু বড়ো হয় তা তাকে উচ্ছ্বল, প্রাণবন্ত, আনন্দমুখর করে তোলে। এর ফলে শিশুর মানসিক বিকাশ সহজ ও সাবলীল হয়।
২. সম্প্রীতির বন্ধন তৈরিতে খেলাধুলা:
খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি হয়। খেলার মধ্যে সৃষ্ট পরস্পরের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস ও নির্ভরযোগ্যতা মানুষের ভেতরে সম্পর্ক তৈরি করে। সেই সম্পর্ক সহযোগিতার, সৌহার্দ্যরে ও সম্প্রীতির।
৩. জাতীয়তাবোধ তৈরিতে খেলাধুলা:
খেলাধুলা মানুষের ভেতর জাতীয়তাবোধ তৈরি করে। কারণ খেলাধুলা এমন একটি বিষয় যা ধর্ম, বর্ণ, জাত, রাজনৈতিক পরিচয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আমরা এক পতাকার নিচে চলে আসি।
৪. বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ তৈরিতে খেলাধুলা:
অতীতকাল থেকেই একটি দেশের সাথে অন্য একটি দেশের সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরিতে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমান সময়েও বিশ্বভ্রাতৃত্ব সৃষ্টিতে খেলাধুলা কার্যকর একটি মাধ্যম।
৫. খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়:
খেলার মাঠ পুরো বিশ্বকে এক জায়গায় নিয়ে আসে। বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে এসময় মেলবন্ধন তৈরি হয় বলে তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হয়।
অতিরিক্ত খেলাধুলার কুফল:
অতিরিক্ত কোনো কিছুই মানুষের জন্য ভালো নয়। অতিরিক্ত খেলাধুলা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা রেখে শুধুমাত্র খেলাধুলায় মগ্ন হয়ে পড়ে। এতে করে তাদের শিক্ষাজীবন ব্যহত হয়। অতিরিক্ত খেলার ফলে সময়, অর্থ, শ্রমের অপচয় হয়।
উপসংহার :
শরীর ও মন পরিপূর্ণভাবে উজ্জীবিত করতে খেখেলাধুলা অন্যতম বিবিষয়। খেলাধুলা যেমন নির্মল আনন্দ দেয় তেমনি জীবনকে উপভোগ্য করে তোলে। শুধু তাই নয় খেলাধুলা ব্যক্তিকে নাম, যশ, খ্যাতি, অর্থ এনে দেয়। মানুষকে বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে। পারস্পরিক তিক্ততা দূর করে মনে প্রশান্তি এনে দেয়।তাই পৃথিবীব্যাপী খেলাধুলার ব্যাপক প্রচলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আরও প্রবন্ধ রচনা পড়ুন ও ডাউনলোড করুন :