চণ্ডীমঙ্গল|মুকুন্দ চক্রবর্তী| সাহিত্যের ইতিহাস |মধ্যযুগ|Chandimangal| BanglaSahayak.com

 

🌼 চণ্ডীমঙ্গল 🌼

🔵 মঙ্গলকাব্য ধারায় মনসামঙ্গলের পরেই চন্ডীমঙ্গলের নাম উল্লেখ করতে হয়। দেবী চণ্ডীর মাহাত্ম্য প্রচারমূলক কাব্যধারাই হলো চন্ডীমঙ্গল কাব্য।চণ্ডীমঙ্গল কাব্য রচিত  চণ্ডীদেবীর কাহিনি অবলম্বনে।


🔵 চণ্ডীমঙ্গল কাব্যধারার আদি কবি – মানিক দত্ত।

কবিকঙ্কন মুকুন্দ চক্রবর্তী লিখেছেন-
“মানিক দত্তেরে আমি করিলুঁ এ বিনয়
যাহা হৈতে হৈল গীত পথ পরিচয়।”

🔵 চণ্ডীমঙ্গল কাব্যধারার কবি দ্বিজ মাধবকে বলা হয় – ‘স্বভাব কবি’।

🔵 চণ্ডীমঙ্গল ধারার প্রধান বা
শ্রেষ্ঠ কবি – মুকুন্দ চক্রবর্তী।

🔵 মুকুন্দ চক্রবর্তীর উপাধি — ‘কবিকঙ্কন’।


🔵 মুকুন্দ চক্রবর্তীকে ‘কবিকঙ্কন’ উপাধি দেন – জমিদার রঘুনাথ রায়।

🔵 চন্ডীমঙ্গলের কাহিনি – ২ টি।
ক) আখেটিক খন্ড – কালকেতু ও ফুল্লরার কাহিনি
খ) বনিক খন্ড – ধনপতি , শ্রীমন্ত ও খুল্লনার কাহিনি

🔵 চন্ডীমঙ্গল ধারার কবি  – মানিক দত্ত, দ্বিজ মাধব, মুকুন্দ চক্রবর্তী, দ্বিজরাম দেব, মুক্তারাম সেন, অকিঞ্চন চক্রবর্তী।

🔵 চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের প্রধান চরিত্র – কালকেতু, ধনপতি, ভাড়ুদত্ত, মুরারী শীল।

🔵 কালকেতু , ফুল্লরা , শ্রীমন্ত , খুল্লনার পূর্ব পরিচয় —

কালকেতু – ইন্দ্রপুত্র নীলাম্বর
ফুল্লরা – নীলাম্বর পত্নী ছায়া
শ্রীমন্ত- মালাধর
খুল্লনা- রত্নমালা

🔵 বাংলা সাহিত্যের প্রথম ঠগ চরিত্র – ভাড়ুদত্ত।

🔵 দেবী চন্ডীর উল্লেখ আছে 
— মার্কান্ডেয় পুরাণে ।

🔵 চন্ডীমঙ্গলের আরাধ্য দেবতা — দেবী চন্ডী।

🔵 দেবী চন্ডী ওঁরাও সম্প্রদায়ের দ্বারা পূজিত।

চণ্ডীমঙ্গল কাব্যধারার কবি :

মানিক দত্ত :  

🔵 আদি কবি

🔵 কবির জন্মস্থান :
 মালদহের ফুলবাড়ি।

🔵 কবিকঙ্কন মুকুন্দ চক্রবর্তী ‘অভয়ামঙ্গল’ থেকে জানা যায়-
“মানিক দত্তেরে আমি করিলুঁ এ বিনয়
যাহা হৈতে হৈল গীত পথ পরিচয়।”

🔵 কবি প্রথম যৌবনে কালা ও খোঁড়া ছিলেন।


দ্বিজমাধব বা মাধবাচার্য  :

🔵 কবির কাব্যে প্রথম পূর্নাঙ্গ চন্ডীমঙ্গলের কাহিনি আছে।

🔵 কবির জন্মস্থান 
 সপ্তগ্রাম বা নবদ্বীপ

🔵 কবির পিতার 
পরাশর

🔵 কাব্যের নাম 
সারদাচরিত

🔵 রচনাকাল 
১৫০১ শকাব্দ অর্থাৎ ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দ।

🔵 কালজ্ঞাপক উক্তি
ইন্দু বিন্দু বাণ ধাতা শক নিয়োজিত।

🔵 কাব্যটির মৌলিকতা 
 গতানুগতিক হর-পার্বতির কাহিনির বদলে কবি মঙ্গলাসুর নামক বধের কাহিনীর সংযোজন ।

🔵 মঙ্গলচন্ডীর গীত 
 দ্বিজ মাধবের কাব্যটি মঙ্গলচন্ডীর গীত নামে পরিচিত।

🔵 মঙ্গলচন্ডীর গীত 
সম্পাদনা
সুধীভূষণ ভট্টাচার্যের সম্পদনায় প্রকাশিত।

🔵 জাগরন কী ? 
দ্বিজমাধবের সারদাচরিত চট্টগ্রামে জাগরন নামে পরিচিত।
আটদিন ধরে রাত জেগে লোকে মঙ্গলচন্ডীর গীত শুনত বলে এরূপ নামকরণ।


মুকুন্দ চক্রবর্তী :

🔵 চন্ডীমঙ্গল কাব্যধারার শ্রেষ্ঠ কবি।

🔵 কবির জন্মস্থান 
বর্ধমান জেলার রায়না থানার অধীন দামুন্যা গ্রামে।

🔵 কবির পিতা 
হৃদয় মিশ্র

🔵 কবির মাতা
 দৈবকী

🔵 কবি স্বগ্রাম ত্যাগ করছিলেন কারণ – 
 ডিহিদার মাহমুদ বা মামুদ শরিফের অত্যাচারের জন্য।

🔵 কবি স্বগ্রাম থেকে উৎখাত হয়ে যান মেদিনীপুরের আড়রা গ্রামের জমিদার বাঁকুড়া রায়ের আশ্রয়ে।

🔵 কবি কাব্য রচনা করেন –
 বাঁকুড়া রায়ের পুত্র  রঘুনাথ রায়ের নির্দেশে ।

🔵 কাব্যের নাম 
 অভয়ামঙ্গল , অম্বিকামঙ্গল , চন্ডীকামঙ্গল।

🔵 কাব্যটি 
৩ টি  খন্ডে বিভক্ত।
ক) দেবখন্ড
খ) আখেটিক খন্ড
গ) বনিক খন্ড

🔵 মুকুন্দ চক্রবর্তী দুঃখবাদী কবি নামে পরিচিত।
 
🔵 কাব্যের রচনাকাল
মতভেদ আছে । কারো মতে ১৫৪৪-৪৫ খ্রিস্টাব্দ । আবার কারো মতে ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দ ।

🔵 কালজ্ঞাপক উক্তি 
“শাকে রস রস বেদ শশাঙ্ক গনিতা
কত দিনে দিলা গীত হরের বনিতা ।”

🔵 ১৮২৩-২৪ খ্রিস্টাব্দে রামজয় বিদ্যাসাগরের সম্পাদনায় কাব্যটি প্রথম প্রকাশিত হয় ।

দ্বিজ রামদেব :

🔵 চট্টগ্রামের কবি।

🔵  সপ্তদশ শতকের কবি।

🔵 কবির পিতার নাম  কবিচন্দ্র

🔵 কাব্যের নাম — অভয়ামঙ্গল।

🔵 কাব্যটি 
আশুতোষ দাসের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।




প্রশ্নোত্তরে চণ্ডীমঙ্গল :

১) চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আদি কবির নাম কী ?
উঃ মানিক দত্ত।

২) চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের কটি কাহিনি ?
উঃ দুটি। আখেটিক খণ্ড ও বণিক খণ্ড।

৩) কালকেতু আসলে কে ?
উঃ ইন্দ্রপুত্র নীলাম্বর।

৪) কালকেতুর পিতার নাম কী ?
উঃ ধর্মকেতু।

৫) নীলাম্বরের স্ত্রীর নাম কী ?
উঃ ছায়া।

৬) ছায়া মর্ত্যে কার ঘরে কী নামে জন্মগ্রহণ করে ?
উঃ ফুল্লরা নামে সঞ্জয়কেতুর ঘরে জন্মায়।

৭) কালকেতুর পুত্রের নাম কী ?
উঃ পুষ্পকেতু।

৮) উজানী নগরের শ্রেষ্ঠ বণিক কে ?
উঃ ধনপতি সওদাগর।

৯) ধনপতি সওদাগর কার উপাসক ছিলেন ?
উঃ শিবের উপাসক ছিলেন অর্থাৎ শৈব।

১০) ধনপতি সওদাগরের প্রথম স্ত্রীর নাম কী ?
উঃ লহনা।

১১) ধনপতি সওদাগরের দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম কী ?
উঃ খুল্লনা।

১২)খুল্লনা আসলে কে ?
উঃ শাপভ্রষ্ট স্বর্গের নর্তকী রত্নমালা।

১৩) চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে যে সিংহল রাজার পরিচয় পাওয়া যায় তার নাম কী ?
উঃ শালিবাহন।

১৪) খুল্লনার গর্ভে কার জন্ম হয়?
উঃ স্বর্গের গন্ধর্ব মালাধর শাপভ্রষ্ট হয়ে জন্ম নেয় শ্রীমন্ত নামে।

১৫) দেবী চণ্ডী শ্রীমন্তকে কী মূর্তি দেখান?
উঃ কমলেকামিনী।

১৬)সিংহল রাজকণ্যার নাম কী ?
উঃ সুশীলা।

১৭)চৈতন্য যুগের একজন সার্থক চণ্ডীমঙ্গল রচয়িতার নাম লেখ।
উঃ দ্বিজমাধব বা মাধব আচার্য।

১৮)দ্বিজমাধবের কাব্যের নাম কী?
উঃ সারদামঙ্গল বা সারদাচরিত।

১৯)দ্বিজমাধবের কাব্যের রচনাকাল কত?
উঃ ১৫০১ শকাব্দ বা ১৫৭৯ খ্রিস্টাব্দ।
 
২০)দ্বিজমাধবের পরিচয় দাও।
উঃ কবির দেওয়া আত্মপরিচয় থেকে জানা যায়, তিনি ব্রাহ্মণ বংশে জাত। ত্রিবেণীর কাছে সপ্তগ্রামে তার বাড়ি।

২১) চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের শ্রেষ্ঠ কবির নাম কী?
উঃ কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তী।

২২) মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের আসল নাম কী?
উঃ অভয়ামঙ্গল।

২৩) মুকুন্দরামকে কবিকঙ্কণ উপাধি কে দিয়েছিলেন?
উঃ কবির আশ্রয়দাতা রঘুনাথ রায়।

২৪) মুকুন্দরামের পিতা ও মাতার নাম কী?
উঃ হৃদয় মিশ্র ও দেবকী।

২৫) কবির পূর্বপুরুষ মাধব ওঝার নিবাস কোথায় ছিল?
উঃ কর্ণপুরে।

২৬) কর্ণপুরে থেকে তারা কোথায় বসতি স্থাপন করেন?
উঃ বর্ধমান জেলার রায়না থানার অধীন দামুন্যা গ্রাম।

২৭) কবিকঙ্কণের পিতামহের নাম জগন্নাথ মিশ্র;মিশ্র হলেও তাঁদের আসল উপাধি কী ছিল?
উঃ চক্রবর্তী ;রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণ, কোয়ারি গাঁঞি।

২৮)কবির জন্মসাল কত?
উঃ আনুমানিক ১৫৪৭ খ্রীঃ।

২৯) মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গলকাব্য কার সম্পাদনায় প্রথম মুদ্রিত হয়?
উঃ ১৮২৩ খ্রীঃ, রামজয় বিদ্যাসাগরের সম্পাদনায়।

৩০) অভয়ামঙ্গল কাব্যের রচনাকাল সম্পর্কে কী জানা যায়?
উঃ ‘শাকে রস রস বেদ শশাঙ্ক গণিতা।
কত দিনে দিলা গীত হরের বনিতা।।’
অর্থাৎ রস=৬,রস=৬,বেদ=৪,শশাঙ্ক =১।অঙ্কস্য বামাগতি নিয়মানুযায়ী ১৪৬৬শকে বা ১৪৬৬+৭৮=১৫৪৪ খ্রীঃ।

৩১)দীনেশচন্দ্র সেনের মতে মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের রচনাকাল -১৫৭৭ খ্রি:।

৩২) অষ্টাদশ শতাব্দীর চণ্ডীমঙ্গল কাব্যধারার কয়েকজন কবির নাম লেখো।
উত্তর : জয়নারায়ণ সেন, মুক্তারাম সেন, অকিঞ্চন চক্রবর্তী।

৩৩) ‘বাসুলীমঙ্গল’ নামে চন্ডীমঙ্গল কাব্য কে রচনা করেন ?
উত্তর : মুকুন্দ মিশ্র

৩৪) মুকুন্দ চক্রবর্তী চন্ডীমঙ্গল কাব্যে কার বন্দনা করেননি ?
উত্তর : চণ্ডীর

৩৫) চণ্ডী কোন ভাষার শব্দ বলে অনুমান করা হয় ?
উত্তর : দ্রাবিড় 

৩৬) কবিকঙ্কণের নামে আর একটি গ্রন্থ পাওয়া যায় তার নাম -জগন্নাথমঙ্গল।

৩৮) ‘এযুগে জন্মগ্রহণ করিলে মুকুন্দরাম কবি না হইয়া ঔপন্যাসিক হইতেন’ -মুকুন্দরামের সম্পর্কে এ কথা কে বলেছিলেন?
উ: অধ্যাপক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় একথা বলেন।

৩৯)’এই চরিত্রটি যেন মসৃণ চিক্কন,কাঁঠাল গাছটির মত’ কালকেতু সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই মন্তব্য করেছিলেন।

৪০) সমালোচকরা মুকুন্দরামকে ‘দুঃখবাদী’কবি হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

৪১) অষ্টাদশ শতকের চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের দুজন কবির নাম -অকিঞ্চন মিশ্র ও শ্রীকৃষ্ণজীবন দাস।

৪২) শ্রীকৃষ্ণজীবন দাসের কাব্যের নাম -অম্বিকামঙ্গল।

৪৩) জয়নারায়ণ রায় রচিত চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের নাম -চণ্ডিকামঙ্গল।

৪৪) রামশঙ্কর দের চণ্ডীমঙ্গলের নাম -অভয়ামঙ্গল।

৪৫) ভবানীশঙ্কর দাসের চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের নাম-মঙ্গলচণ্ডী পাঞ্চালিকা।

৪৬) রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের লেখা চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের নাম-দুর্গামঙ্গল।

৪৭)চণ্ডীমঙ্গলের উল্লিখিত ফুল্লরার বারো মাসের দুঃখ-দুর্দশা বর্ণনাজ্ঞাপক চিত্রকেই বারমাস্যা বলে।

৪৮) চণ্ডীমঙ্গলের দুজন শঠ চরিত্র -ভাড়ু দত্ত ও মুরারী শীল।

৪৯) “পিপিড়ার শাখা উঠে মরিবার তরে
       কাহার ষোড়শী কন্যা আনিয়াছ ঘরে।” –এটি কার রচনা ?
উত্তর : মুকুন্দ চক্রবর্তী।

৫০) ভাড়ুদত্তের পিতার নাম কী ?
উত্তর : হরিদত্ত

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top