প্রশ্ন: ‘ছুটি’ গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো। ৫
অথবা, ছুটি গল্পটির নামকরণ কতটা সার্থক হয়েছে আলোচনা করো।
উত্তর : যদিও শেক্সপীয়র বলেছেন ‘What’s in a name?’ তবুও আমাদের মনে হয় মহৎ সাহিত্য সৃষ্টিতে নামকরণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাস্তবে কানাছেলের নাম ‘পদ্মলোচন’ আপত্তিকর নাও হতে পারে। কিন্তু সাহিত্যে এধরনের সামঞ্জস্যহীন নামকরণ তীব্র সমালোচনার বিষয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত ‘ছুটি’ গল্পটির নামকরণ কতটা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে তা আমাদের আলোচ্য বিষয় । গল্পের প্রধান চরিত্র কিশোর ফটিক। ফটিক উচ্ছৃঙ্খল, পড়ায় অমনোযোগী। তাকে নিয়ে তার মা বিব্রত। তাই ফটিকের মামা বিশ্বম্ভর বাবু শহর কলকাতায় ফটিককে শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়ে আসেন।
মামার বাড়িতে ফটিক মামির স্নেহ, ভালোবাসা, আদর থেকে বঞ্চিতই থেকে যায়। স্নেহ-মমতাহীন বদ্ধ নাগরিক পরিবেশে সে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি। ফটিকের কেবলি মনে পড়ে অবাধ মাঠ, নদীতীর, নদী এবং তার মাকে। একদিন সাহস করে ফটিক মামাকে জিজ্ঞেস করে – “মামা, মার কাছে কবে যাব।” মামা জানান পুজোর ছুটিতে।
একদিন অসুস্থ শরীরে ফটিক বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। জলে ভিজে প্রবল জ্বরে প্রলাপ বকতে থাকে- বাড়ি যাবার, ছুটি পাবার। গ্রাম থেকে মা ছুটে এলে ফটিক জানায় –
“ মা এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি।”
ফটিক এইভাবেই শহর ছেড়ে চির ছুটির দেশে পাড়ি দেয়। ‘ছুটি’ শব্দটি এখানে গভীর ব্যঞ্জনা বহন করেছে। তাই ‘ছুটি’ গল্পের নামকরণ যথার্থ ও সার্থক হয়েছে।