জ্ঞানদাস :
জ্ঞানদাস ছিলেন চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য। যে সিঁড়ি বেয়ে বৈষ্ণব পদসাহিত্যের শ্রেষ্ঠত্বের আসন চণ্ডীদাস দখল করেছিলেন,— ভাব ও ভাষায় জ্ঞানদাস তাঁরই পথ অনুসরণ করেছিলেন। অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায় “যখন জ্ঞানদাস কৃত্রিম কবি সংস্কারের চশমা আর ব্রজবুলির সাজ সজ্জা ত্যাগ করিয়া বাঙালি সুরে রাধাকৃষ্ণের সুখ দুঃখের কথা শুনাইয়াছেন, তখনই তিনি পাঠকের মন লুঠ করিয়া লইয়াছেন, তখনই তিনি চণ্ডীদাসের যথার্থ উত্তর সাধক হইয়াছেন।” অন্যান্য পদকারদের মতো জ্ঞানদাস বাল্যলীলা, দানখণ্ড, নৌকাবিলাস, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পদরচনা করলেও তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পেয়েছে মূলতঃ রসোগারের পদরচনায়।
জন্ম : ১৫৩০
শব্দব্যবহার ও ভাষাভঙ্গি একই রকম বলে জ্ঞানদাসকে চন্ডীদাসের অনুসারী বলা হয়। অকৃত্রিম সহজ রচনারীতির দিক থেকে চন্ডীদাসের সঙ্গে তাঁর মিল অবশ্যই আছে। কিন্তু জ্ঞানদাস একজন সতন্ত্র কবি। আধুনিক কালের গীতিকবিতার বৈশিষ্ট তাঁর পদে পাওয়া যাবে।
জ্ঞানদাসের নামে প্রায় শ’দুয়েক পদ চালু আছে। ব্রজবুলিতেও তিনি অনেক পদ রচনা করেছেন। তবে তাঁর বাংলা পদগুলো ব্রজবুলির পদের তুলনায় অনেক ভালো। জ্ঞানদাসের একটি বিখ্যাত পদ নিম্নরূপ:
“ রূপের পাথারে আঁখি ডুবিয়া রহিল
যৌবনের বনে মন হারাইয়া গেল।
জ্ঞানদাস সঙ্গীত বিষয়েও একজন বিশেষজ্ঞ। একালে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল যেমন নিজেদের লেখার গানে সুর দিয়েছেন, সেকালে জ্ঞানদাসও একই কাজ করেছেন। সম্ভবত এ ক্ষেত্রে জ্ঞানদাস বাংলা সাহিত্যে প্রথম ব্যক্তি, যিনি গান লিখে সুর দিয়েছেন। কীর্তন গানেও তাঁর দক্ষতা ছিল বলা হয়। কীর্তনের নতুন ঢঙ তিনি তৈরি করেছিলেন।
জ্ঞানদাসের কিছু পদ ও তার পর্যায়
(১) রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর (পূর্বরাগ)
(২) আলো মুঞি জান না (পূর্বরাগ)
(৩) দেইখ্যা আইলাম তার (পূর্বরাগ)
(৪) তুমি কি জান সই কাহ্নুর পিরিতি (পূর্বরাগ)
(৫) পুলক ঢাকিতে করি কত পরকার (পূর্বরাগ)
(৬) কানু অনুরাগে হৃদয় ভেল কাতর (অভিসার)
(৭) মেঘ যামিনী অতি ঘন আন্ধিয়ার (অভিসার)
(৮) শ্যাম অভিসারে চলু বিনোদিনী রাধা (অভিসার)
(৯) সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু (আক্ষেপানুরাগ)
(১০) বঁধু তোমার গরবে গরবিনী আমি (নিবেদন)