বাংলা ছাত্রছাত্রীদের পাশে সারাক্ষণ

তারাশঙ্কর | তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস

প্রশ্ন : বাংলা উপন্যাসের ক্ষেত্রে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো।

 

উত্তর:  রবীন্দ্র-শরৎ উত্তর পর্বে বাংলা কথাসাহিত্যে যে ত্রয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হয় তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রাঢ় অঞ্চলকে নিজের সাহিত্যে স্থান দিয়ে বাংলা সাহিত্যে আঞ্চলিকতার আমদানি ঘটান।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিচিত্র সৃষ্টিকর্মের ইতিহাসকে মোটামুটিভাবে তিনটি পর্বে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমপর্বে আছে ‘চৈতালী ঘূর্ণি’, ‘পাষাণপুরী’, ‘নীলকণ্ঠ’, ‘রাইকমল’ প্রভৃতি উপন্যাস। দ্বিতীয় পর্বে আছে ‘গণদেবতা’, ‘ধাত্রীদেবতা’ , ‘কালিন্দী’, ‘কবি’, ‘পঞ্চগ্রাম’, ‘সন্দীপন পাঠশালা’, ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’, ‘নাগিনী কন্যার কাহিনী’ প্রভৃতি উপন্যাস । তৃতীয় পর্বে আছে ‘আরোগ্য নিকেতন’, ‘বিচারক’, ‘রাধা’, ‘সপ্তপদী’, ‘উত্তরায়ণ’প্রভৃতি উপন্যাস।

তারাশঙ্করের প্রথম পর্বের উপন্যাসগুলি আয়তনে ছোটো হলেও সেগুলির মধ্যে বাস্তব জীবনের সমস্যা চমৎকারভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।  দ্বিতীয় পর্বের উপন্যাসগুলিতেই বিধৃত রয়েছে তাঁর প্রতিভার যথার্থ পরিচয়। এইসব উপন্যাসে রাঢ় অঞ্চলের অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের জীবন, প্রাচীন ও নবীনের দ্বন্দ্ব, সামাজিক সংকট প্রভৃতি যেমন বর্ণিত হয়েছে, তেমনি তারই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে গভীর জীবনজিজ্ঞাসা। ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ (১৯৪৭) বাংলা তথা ভারতীয় সাহিত্যের একটি শ্রেষ্ঠ আঞ্চলিক উপন্যাস। তারাশঙ্করের তৃতীয় পর্বের আাসগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ রচনা ‘আরোগ্য নিকেতন’ ।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসে যে  বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায় তা হলো-

(১) তিনি তাঁর সাহিত্যসাধনায় খুঁজেছেন এক সমগ্র অখন্ড মানুষকে, মানুষ ও প্রকৃতিকে, মাটির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে।

(২) রাঢ় অঞ্চলের পরিবেশ এবং অন্ত্যজ মানুষের ভাষা ব্যবহারে তাঁর উপন্যাসগুলি কালজয়ী হয়েছে।

(৩) চরিত্রের জটিল মনস্তত্ত্বের রূপায়ণও তাঁর রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

(৪) আঞ্চলিকতার ঘেরাটোপে তাঁর উপন্যাসের কায়া নির্মিত হলেও সমকালকে অতিক্রম করে তাঁর রচনাগুলি হয়ে উঠেছে সর্বকালীন, সর্বজনীন।

আরও পড়ুন —

বাংলা উপন্যাসে বিভূতিভূষণের অবদান

Scroll to Top