ধাতু :
ক্রিয়াপদের মূল অবিভাজ্য অংশকে ধাতু বলে।
যেমন- পড়ি,পড়ছি,পড়ব,পড়ছে প্রভৃতি ক্রিয়াপদের পড়্ হল ধাতু।
ধাতুর শ্রেণিবিভাগ :
শব্দের মতো ধাতুও প্রথমত দুই প্রকার :
১। সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতু ও ২। সাধিত ধাতু
সিদ্ধ বা মৌলিক ধাতু :
যে সব ধাতুকে আর ভাঙা যায় না, তাকে মৌলিক বা সিদ্ধ ধাতু বলে।
উদাহরণ: √দেখ্, √খা, √বল্ প্রভৃতি ধাতুকে ভাঙা যাচ্ছে না। জোর করে ভাঙলে কয়েকটি অর্থহীন ধ্বনি পাওয়া যাবে। অর্থপূর্ণ অংশ পাবো না।
সাধিত ধাতু :
কোনো সিদ্ধ ধাতু বা শব্দের সঙ্গে এক বা একাধিক প্রত্যয় যোগ করে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে সাধিত ধাতু বলে।
সাধিত মানে ‘যাকে সাধন করা হয়েছে।’ অর্থাৎ তৈরি করা হয়েছে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, এগুলি একাধিক অংশের সমষ্টি। সাধিত ধাতুকে ভাঙলে তার উপাদানগুলি পৃথক করা যাবে এবং তখনও তাদের অর্থ থাকবে।
উদাহরণ:
বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
এখানে ‘চমকাচ্ছে’ ক্রিয়াপদটির মূলে আছে ‘চমকা’ ধাতু। চমকা= চমক + আ ।
√’চমকা’ ধাতুর মূলে আছে ‘চমক’ শব্দটি এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধাত্ববয়ব প্রত্যয় ‘আ’। (ধাত্ববয়ব প্রত্যয় – যে বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ ধাতু বা শব্দের পরে যুক্ত হয়ে নতুন ধাতু গঠন করে ,তাকে ধাত্ববয়ব প্রত্যয় বলে।)
এখন দেখব সাধিত ধাতু কত প্রকার হতে পারে।
প্রযোজক ধাতু :
যে ধাতু অন্যকে দিয়ে কিছু করানো বোঝায়, তাকে প্রযোজক ধাতু বলে।
উদাহরণ : √পড়্+আ=√পড়া – আমি তিতাসকে পড়াই।
√খা +আ =√খাওয়া – মা শিশুকে খাওয়ান
√বল্+আ =√বলা – আমি অর্ঘ্যকে দিয়ে গল্প বলাই।
নামধাতু :
শব্দের সাথে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে গঠিত ধাতুকে নামধাতু বলে।
উদাহরণ:
বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
এখানে ‘চমকাচ্ছে’ ক্রিয়াপদটির মূলে আছে ‘চমকা’ ধাতু। চমকা= চমক + আ ।
হাত+আ=√হাতা – লোকটি অন্যের সম্পত্তি হাতিয়ে বড়োলোক হয়েছে।
ঠ্যাঙা+আ= √ঠ্যাঙা – পাবলিক চোরটিকে বড়ো ঠ্যাঙিয়েছে।
লতা+আ=√লতা – গাছটা লতিয়ে উঠেছে।
বিষ+আ=√বিষা – সারা শরীর বিষিয়ে গেল।
কাছ+ আ =√কাছা – কাছিয়ে এসেছে পূজা।
কর্মবাচ্যের ধাতু :
মূল ধাতুর সঙ্গে আ প্রত্যয় যোগে কর্মবাচ্যের ধাতু পাওয়া যায়।
কর্মবাচ্যে ক্রিয়ার রূপ অন্য রকম হয়। তাই কর্মবাচ্যের ধাতুটিও আলাদা ধাতু হিসাবে গণ্য হয়।
উদাহরণ : মান্+আ=মানা
দেখ্+আ=দেখা
শুন্+আ = শুনা
কথাটা কি ভালো শোনাচ্ছে ?
দূর থেকে চাঁদকে ছোট্ট দেখায়।
যৌগিক ধাতু :
একটি অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে একটি ধাতুর যোগে গঠিত যে ধাতুতে অসমাপিকা অংশটির অর্থই প্রকাশিত হয়, তাকে যৌগিক ধাতু বলে।
যৌগিক ধাতুর উত্তরাংশে পড়্,নে,থাক্,ফেল্,দি,লাগে,রাখ্, প্রভৃতি ধাতুর প্রয়োগ বেশি হয়।
উদাহরণ : কলমটা ভেঙে ফেলেছি।
এখন দেখতেই পাচ্ছি, ‘ভেঙে ফেলেছি’ বললে ‘ভাঙা’ই বোঝায়, ‘ফেলা’ বোঝায় না।
এরকম আরও যৌগিক ধাতুর উদাহরণ :
√শুয়ে পড়্ , √ খেয়ে নে , √দেখে ফেল্ ইত্যাদি।
সংযোগমূলক ধাতু :
বিশেষ্য বিশেষণ বা ধন্যাত্মক শব্দের সঙ্গে কর্, হ ,যা, পা,খা ,বাস্ প্রভৃতি ধাতু যোগ করে যে ধাতু তৈরি হয় তাকে সংযোগমূলক ধাতু বলে
উদাহরণ : √কর্ –
√স্বীকার কর্, ‘√গান কর্’ , ‘√দেখা কর্’ , ‘√স্নান কর্’ , √শুরু কর্ ইত্যাদি।
√হ – √রাজি হ, √উদয় হ
√দে – √জবাব দে, √শাস্তি দে,√ভোট দে
√পা – √লজ্জা পা, √কষ্ট পা
√বাস্ – √ভালো বাস্, √মন্দ বাস
ধ্বন্যাত্মক ধাতু :
ধ্বন্যাত্মক শব্দের সাথে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে গঠিত ধাতুকে ধ্বন্যাত্মক ধাতু বলে।
উদাহরণ: ঝমঝম+আ=√ঝমঝমা
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল।
ধড়ফড়+আ=√ধড়ফড়া
বুক ধড়ফড়াচ্ছে।
একই রকমভাবে –
গুনগুনিয়ে , টনটনাচ্ছে, চনমনিয়ে,কড়কড়াচ্ছে ক্রিয়াগুলির ধাতুকে ধ্বন্যাত্মক ধাতু বলে।
ক্রিয়াপদ
ক্রিয়াপদের মধ্যেই থাকে ভাষার চলবার শক্তি। – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
যে পদের দ্বারা কোনো কাজ করা বা হওয়া বোঝায়, তাকে ক্রিয়াপদ বলে।
[ ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ক্রিয়াপদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “বাক্যের অন্তর্গত যে পদে কোনও কালের কোনও প্রকারের ক্রিয়া ব্যাপারের সংঘঠন বোঝায় এবং বাক্যের উদ্দেশ্য পদের সহিত যাহার রূপের সংগতি থাকে তাহাকে ক্রিয়াপদ বলে ।” ]
ক্রিয়ার উদাহরণ :
আমি পড়ি।
সূর্য ওঠে।
জল পড়ে।
পাতা নড়ে।
রিয়া খেলছে।
ক্রিয়াপদের শ্রেণিবিভাগ :
ক্রিয়াপদের শ্রেণিবিভাগ করার বেশ কয়েকটি মাপকাঠি আছে।
ক) গঠন অনুসারে ক্রিয়াপদের শ্রেণিবিভাগ :
প্রযোজক ক্রিয়া :
প্রযোজক ধাতুতে উপযুক্ত প্রত্যয় বিভক্তি যোগ করে যে ক্রিয়া পাওয়া যায় তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে।
প্রযোজক ক্রিয়ার দ্বারা অন্যকে কাজ করানো বোঝায়।
উদাহরণ :
মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।
শিক্ষকমহাশয় ছাত্রটিকে ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন ।
আমি অর্ঘ্যকে দিয়ে গল্প বলাই।
নামধাতুজ ক্রিয়া :
নামধাতু থেকে যে ক্রিয়া উৎপন্ন হয় নামধাতুজ ক্রিয়া বলে।
নামপদ বলতে বিশেষ্য, বিশেষণ পদ বুঝতে হবে।
উদাহরণ :
বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
লোকটি অন্যের সম্পত্তি হাতিয়ে বড়োলোক হয়েছে।
পাবলিক চোরটিকে বড়ো ঠ্যাঙিয়েছে।
গাছটা লতিয়ে উঠেছে।
সারা শরীর বিষিয়ে গেল।
কাছিয়ে এসেছে পূজা।
যৌগিক ক্রিয়া :
প্রধান অর্থবাহী অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে অপর একটি ক্রিয়ার যোগে যে ক্রিয়া গঠিত হয়, তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে।
ছেলেটি সবগুলো মিষ্টি খেয়ে ফেলল।
মেয়েটি বই পড়তে লাগল।
লোকটি পড়ে গিয়ে হাত ভেঙেছে ।
একইরকমভাবে,
বসে পড়ল, হাসতে লাগল, জেগে রইল, কেটে ফেলল, নেমে গেছে ইত্যাদি।
যুক্ত ক্রিয়া বা সংযোগমূলক ক্রিয়া :
একটি বিশেষ্য বা বিশেষণের সঙ্গে একটি ক্রিয়ার যোগে গঠিত ক্রিয়াকে যুক্ত ক্রিয়া বা সংযোগমূলক ক্রিয়া বলে।
অন্যভাবে বলা যায় , সংযোগমূলক ধাতু থেকে নিষ্পন্ন ক্রিয়াকে সংযোগমূলক ক্রিয়া বলে।
উদাহরণ :
কোনি নদীতে সাঁতার কাটছে।
আমি তোমার সাথে দেখা করব।
লজ্জায় জিভ কাটল মেয়েটা।
আবার তোরা মানুষ হ।
মনে রেখো :
যুক্ত ক্রিয়াতে দুটি অংশ থাকবে। প্রথমটি নামপদ হবে। দ্বিতীয়টি হবে ক্রিয়াপদ। দুটি মিলে একটি বিশেষ কাজ করা বোঝাবে।
সংযোগমূলক ক্রিয়ার দুটি অংশেরই অর্থপ্রাধান্য থাকে। কিন্তু যৌগিক ক্রিয়ার পূর্বাংশের অসমাপিকা ক্রিয়ারই অর্থ প্রধানভাবে বুঝায়।
ধ্বন্যাত্মক ক্রিয়া :
ধ্বন্যাত্মক ধাতু থেকে উৎপন্ন ক্রিয়াকে ধ্বন্যাত্মক ক্রিয়া বলে।
উদাহরণ :
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল।
বুক ধড়ফড়াচ্ছে।
ফোঁড়াটা টনটনাচ্ছে।
বাঘটা রাগে ফুঁসছে।
খ) বাক্যে অর্থ প্রকাশের বা সম্পূর্ণতার বিচারে ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ :
এই বিচারে ক্রিয়াকে ২টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া
সমাপিকা ক্রিয়া :
যে ক্রিয়া বাক্যের ভাবকে সম্পূর্ণ ভাবে প্রকাশ করতে পারে বা বাক্যের পূর্ণতা ঘটায়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে।
উদাহরণ :
আমি ভাত খেয়েছি ।
সে রোজ গান শোনে।
তারা কলকাতা যাবে।
এখানে খেয়েছি, শোনে, যাবে বাক্যের পূর্ণতা এনেছে তাই এরা সমাপিকা।
অসমাপিকা ক্রিয়া :
যে ক্রিয়া বাক্যের ভাবকে সম্পূর্ণ ভাবে প্রকাশ করতে পারে না বা বাক্যের অর্থ পূর্ণতা লাভ করে না , তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।
উদাহরণ :
আমি ভাত খেয়ে এসেছি।
সে খেলতে গেছে।
তুমি এলে আমি যাবো।
গ) কর্ম অনুসারে ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ :
কর্ম অনুসারে ক্রিয়া দু’প্রকার।যথা-
সকর্মক ক্রিয়া ও অকর্মক ক্রিয়া।
আমি ভাত খাই।
– এই বাক্যে ‘ভাত’ হল কর্ম । ক্রিয়াকে ‘কী’ বা ‘কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাই তা হলো কর্ম।
যদি কোনো বাক্যের মধ্যে কর্ম থাকে তাহলে সেই বাক্যের ক্রিয়াকে সকর্মক ক্রিয়া বলে।
আর যদি কোন বাক্যে কর্ম না থাকে তাহলে সেই বাক্যের ক্রিয়াকে আমরা বলি অকর্মক ক্রিয়া।
উদাহরণ :
আমি খাই।
বাপ্পা খেলছে।
লোকটি হাঁটছে।
উদাহরণগুলিতে ক্রিয়ার কোনো কর্ম নেই। তাই এগুলি অকর্মক ক্রিয়া।
সকর্মক ক্রিয়া আবার ২ ধরণের। যেমন- এককর্মক ও দ্বিকর্মক।
এককর্মক ক্রিয়া :
যে ক্রিয়াগুলির একটিমাত্র কর্ম, তাদের এককর্মক ক্রিয়া বলে।
উদাহরণ :
আমি ভাত খাই।
অর্ঘ্য ছবি আঁকছে।
তিতাস বই পড়ছে।
এই উদাহরণগুলিতে প্রতিটি ক্রিয়ার একটি করে কর্ম আছে।
দ্বিকর্মক ক্রিয়া :
যে ক্রিয়ার দু’টি কর্ম থাকে, তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে।
উদাহরণ :
আমি ভাইকে সাইকেল দিলাম।
সে রামকে টাকা দিল।
মা সকলকে খাবার দিলেন।
মনে রেখো :
দ্বিকর্মক ক্রিয়ার বস্তুবাচক বা অপ্রাণিবাচক কর্মটি হল মুখ্যকর্ম, প্রাণিবাচক কর্মটি গৌণকর্ম।
পঙ্গু ক্রিয়া :
যে ক্রিয়ার সকল কালের ও সকল ভাবের রূপ হয় না , তাকে পঙ্গু ক্রিয়া বলে।
বাংলায় কয়েকটি মাত্র পঙ্গু ক্রিয়া আছে, এদের সাধারণত একটিমাত্র কালেই ব্যবহার করা যায়।
উদাহরণ :
বটে, নয়, আছে প্রভৃতি ক্রিয়াগুলি পঙ্গু ক্রিয়া।
মেয়েটি বুদ্ধিমান বটে।
এই উদাহরণে ‘বটে’ ক্রিয়াকে অতীত বা ভবিষ্যতের রূপে বদলানো যায় না।
Apnar post gulo khubi valo laglo. Ami akjan wb tet candidate. Apni ki online paran? ??
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
না, এখন পড়াই না ।
লোকটি তাকে ভালো করে তুলেছে
এখানে 'করে তুলেছে' নাকি 'ভালো করে তুলেছে ' ক্রিয়া?