বাংলার উৎসব | Banglar Utsab

        বাংলার উৎসব

"এত ভঙ্গ বঙ্গ দেশ তবু রঙ্গে ভরা।" ---ঈশ্বর গুপ্ত

ভূমিকা : 

উৎসব মানবজীবনে প্রাণচঞ্চল আনন্দময়তার অভিব্যক্তি। কেবল অন্ন-বস্ত্র সংস্থানেই মানবজীবনে সার্থকতা আসে না। তার জীবনে চাই অবাধ মুক্তির আনন্দ। সে আনন্দ লাভের একটি উপায় উৎসব ও মানব সম্মিলন।


উৎসব কী ? :

উৎসব বলতে মূলত আনন্দময় অনুষ্ঠানকে বোঝায়। উৎসবের মাধ্যমে আমরা আনন্দ প্রকাশ এবং আনন্দ লাভ করে থাকি। তবে এ আনন্দ একার আনন্দ নয়। পারিবারিক, সামাজিক বা সাম্প্রদায়িক পরিমণ্ডলে সকলের সম্মিলনে সুখ বা আনন্দ লাভের উপায় হলো উৎসব।


উৎসবের উদ্দেশ্য :

বাঙালির উৎসবের উদ্দেশ্য হলো প্রীতি ও প্রেমের পূর্ণ বন্ধন।মানুষের সঙ্গে মানুষের আনন্দময় আত্মিক মিলন। দৈনন্দিন জীবন-সংগ্রামে অবসন্ন মানুষের প্রাণশক্তি যখন শুকিয়ে আসে, যখন অসহনীয় হয়ে ওঠে জীবনের খণ্ড খণ্ড করি দণ্ডে দণ্ডে ক্ষয় তখন উৎসবের আয়োজন মনে আনে ফূর্তি, আনে মুক্তি জীবনের আনন্দ, সৃষ্টি করে নতুন কর্মপ্রেরণা।


উৎসবের শ্রেণিবিভাগ :

রূপসী বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সুরে সুর মিলিয়ে বাঙালির জীবনে উৎসব আসে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বহন করে।বাঙালির এই উৎসবকে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায় । যথা- ক) ধর্মীয় উৎসব খ) ঋতু উৎসব গ) সামাজিক উৎসব ঘ) রাষ্ট্রীয় উৎসব।


ক) ধর্মীয় উৎসব :

সাধারণত ধর্মীয় উৎসবগুলো এক-একটি ধর্মীয় বিশ্বাস ও ভাবনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব গুলির মধ্যে দুর্গাপূজা, কালীপূজা, সরস্বতী পূজা প্রভৃতি প্রধান।বাঙালি মুসলমানদেরও অনেক ধর্মীয় অনুষ্ঠান থাকে।যেমন-ইদলফেতর, ইদুজ্জোহা, মহরম প্রভৃতি। বৌদ্ধদের বুদ্ধপূর্ণিমা। খ্রিস্টানদের বড়দিন । জৈনদের মহাবীর জয়ন্তী প্রভৃতি ধর্মীয় উৎসব লক্ষ করা যায়।


খ) ঋতু উৎসব :

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্যের সঙ্গে বাঙালির প্রাণের সম্পর্ক গভীর।ঋতুকেন্দ্রিক উৎসবগুলি মূলত কৃষিনির্ভর।গ্রীষ্ম ঋতুতে বৈশাখের পুণ্য প্রভাতে নববর্ষের উৎসব , বর্ষার সমাগমে বৃক্ষরোপণ উৎসব , হেমন্ত ঋতুতে নবান্ন উৎসব, শীতের দিনে পৌষপার্বণ, বসন্তে শুরু হয় বসন্তোৎসব।


গ) সামাজিক উৎসব

বাংলার সমাজ জীবনও উৎসবে মেতে ওঠে।ব্যক্তিগত কিছু অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উদযাপিত হয় সামাজিক উৎসব।বাংলার সামাজিক উৎসবগুলির মধ্যে বিবাহ, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন, ভাইফোঁটা, জামাইষষ্ঠী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।


ঘ) রাষ্ট্রীয় উৎসব :

উৎসব কেবল লোকাচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের দেশে এমন কিছু উৎসব রয়েছে যেগুলো কোনো ধর্মকেন্দ্রিক সস্প্রদায়, পরিবার প্রভৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এগুলো সকল ধর্মের, সকল শ্রেণির মানুষের উৎসব। এ সর্বজনীন উৎসবগুলো আমাদের কাছে রাষ্ট্রীয় উৎসব হিসেবে পরিচিত। যেমন- স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস প্রভৃতি। এছাড়াও রবীন্দ্র জয়ন্তী, নেতাজি জয়ন্তী, গান্ধি জয়ন্তী প্রভৃতি যথাযোগ্য মর্যাদায় উৎসব আকারে পালন করা হয়ে থাকে।

 

উৎসবের উপযোগিতা :

উৎসব কেবল মানব সম্মিলনের আনন্দ দেয় না, প্রাণের স্ফূরণ ঘটিয়ে শারীরিক ও মানসিক শক্তিকে সতেজ রাখে, দেয় নব নব কর্মপ্রেরণা। উৎসবকে কেন্দ্র করে মানুষের সৃজনশীলতারও নানা প্রকাশ ঘটে। রচিত হয় সংগীত, নৃত্য, চিত্রকলা, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, চলচ্চিত্রের কত না সম্ভার। উৎসবের অর্থনৈতিক উপযোগিতাও কম নয়। উৎসবকে কেন্দ্র করে যে ব্যাপক অর্থনৈতিক তৎপরতা চলে তাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অনেক পেশার মানুষ উপকৃত হয়।

 

 

উপসংহার :

উৎসব মানুষে মানুষে প্রীতির বন্ধনকে দৃঢ় করে, হৃদয়কে করে প্রসারিত। উৎসব সঞ্চারিত করে অপার আনন্দ, দেয় নবতর চেতনা। জাতীয় উৎসব জাতীয় চেতনাকে করে সংহত। আন্তর্জাতিক উৎসব প্রশস্ত করে শান্তি, মৈত্রী ও সৌহার্দ্যের পথ। উৎসব মানুষের চৈতন্যে বিস্তার ঘটায় সুরুচি ও শিল্পবোধের। মানুষের জীবনের ক্লান্তি, হতাশা, নৈরাজ্য, অস্থিরতা ও দুঃখ ঘোচাতে উৎসবের উপযোগিতা অসামান্য।

 

 

 

প্রবন্ধ রচনাটি PDF ডাউনলোড করার জন্য ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করুন 👇

 

 

 

‘একটি গাছ একটি প্রাণ’ প্রবন্ধটি ডাউনলোড করুন 👇 

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার  প্রবন্ধটি PDF ডাউনলোড করতে নীচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করুন 👇

             ডাউনলোড                

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান  রচনাটি PDF ডাউনলোড করার জন্য নীচের ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করুন 👇

            ডাউনলোড            

একটি নদীর আত্মকথা প্রবন্ধ 👇

             ডাউনলোড             

দেশভ্রমণ – শিক্ষার অঙ্গ প্রবন্ধটি ডাউনলোড করুন 👇

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top