প্রশ্ন : বাংলা গদ্যের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো।
[সংসদ একাদশ বার্ষিক পরীক্ষা ২০১৬, ২০১৮, ২০২০]
উত্তর: উনবিংশ শতকের বিস্ময় বীরসিংহের সিংহশিশু বিদ্যাসাগর ছিলেন “ বাংলা গদ্যের প্রথম যথার্থ শিল্পী।” বিদ্যাসাগরের সাহিত্যকীর্তিকে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করে আলোচনা করা যায়।
১. অনুবাদমূলক রচনা :
‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’, ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’, ‘বোধোদয়’, ‘কথামালা’, ‘সীতার বনবাস’, ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’ প্রভৃতি অনূদিত গ্রন্থের মাধ্যমে বাংলা গদ্য সাহিত্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়।
২. সমাজ সংস্কারমূলক রচনা :
‘বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’, ‘বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার’ ইত্যাদি হলো বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কারমূলক রচনা।
৩. শিক্ষামূলক রচনা :
বিদ্যাসাগরের শিক্ষামূলক রচনার মধ্যে ‘বর্ণপরিচয়’, ‘কথামালা’, ‘চরিতাবলী’, ‘আখ্যান মঞ্জুরী’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
৪. হাস্যরসাত্মক রচনা :
ছদ্মনামে লেখা হাস্যরসাত্মক রচনা হলো ‘অতি অল্প হইল’, ‘আবার অতি অল্প হইল’ ‘ব্রজবিলাস’,’রত্ন পরীক্ষা’।
৫. মৌলিক রচনা :
ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক তাঁর একটি মৌলিক রচনা ‘সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব’। ‘বিদ্যাসাগর চরিত’ নামে আত্মজীবনীটি একটি অসম্পূর্ণ রচনা। এছাড়া তিনি ‘প্রভাবতী সম্ভাষণ’ নামে একটি ব্যক্তিগত শোক আখ্যান রচনা করেন।
বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যভাষাকে সুষমামণ্ডিত করে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেন। সাধু বাংলা গদ্যের সৌন্দর্য তাঁর হাতেই বিকশিত হয়। ভাষার ওজস্বিতার সঙ্গে রচনার লালিত্য বিদ্যাসাগরের অবদান। তিনি বাংলা গদ্যের গঠনরীতি, ছন্দবদ্ধতা, যতি স্থাপন, বাক্য ও অর্থের সংগতিস্থাপন ইত্যাদির সম্পূর্ণ সংস্কারসাধন করেছিলেন।
পরিশেষে বলা যায় – বিদ্যসাগর বাংলা গদ্যের একটি রাজপথ তৈরি করে দিয়েছিলেন, সে পথে পরবর্তীকালে বহুতর পদাতিকের আগমন ঘটেছে।