বাক্য |Sentence|bakko|বাক্যের শ্রেণিবিভাগ



বাক্য :

ভাষার বৃহত্তম একক বাক্য।বাক্যের সাহায্যেই আমরা আমাদের মনের ভাবটিকে সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশ করি।

যদি বলি – ” আজ তোমাদের একটি গল্প বলবো।” তবে তোমরা নিশ্চয় আমার মনের কথা বুঝে একটু নড়ে চড়ে বসবে -বলবে হ্যাঁ বলুন ,বলুন।তাই তো …। এই যে তোমারা আমার মনের কথা বুঝতে পারলে  -আজ, তোমাদের, একটি, গল্প, বলবো এবং আমি [ উহ্য] –এই ছটি পদের সাহায্যে আমর মনোভাবটি প্রকাশ করলাম এবং তোমাদের বুঝতে  কোনো অসুবিধা হলো না।এই ছটি সুসজ্জিত পদের সমষ্টিকে বাক্য বলে।

কতোগুলো পদ সুবিন্যস্ত হয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করলে তাকে বাক্য বলে।

বাক্যে কতোগুলো পদ থাকে। শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হলে তাকে পদ বলে। এই বিভক্তি যুক্ত হয়ে শব্দগুলো পরস্পর সম্পর্কিত হয়ে বাক্য গঠন করে। নয়তো বাক্য তৈরি হয় না। যেমন- আমা মা আমা অনেক আদর করে। এখানে মূল শব্দগুলো বিভক্তি ছাড়া সঠিক ক্রমে  সাজানো হলেও একটির সঙ্গে আরেকটি শব্দের কোন সম্পর্ক তৈরি হয়নি। শব্দগুলোতে বিভক্তি যুক্ত করলে একটি সম্পূর্ণ বাক্য তৈরি হবে- আমার মা আমাকে অনেক আদর করে। ভাষার মূল উপকরণ বাক্য, বাক্যের মৌলিক উপাদান শব্দ। আর ভাষার মূল উপাদান ধ্বনি।

বাক্য গঠনের ত্রিসূত্র :

আলংকারিক বিশ্বনাথ কবিরাজ বলেছেন-“বাক্যং স্যাৎ যোগ্যতা – আকাঙক্ষা -আসত্তি যুক্ত পদোচ্চয়:।” -এটি শুদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গ বাক্য গঠনের ত্রিসূত্র নামে পরিচিত ।

ভাষার বিচারে/ব্যাকরণ অনুযায়ী একটি সার্থক বাক্যের ৩টি গুণ থাকতেই হবে/আবশ্যক- আকাঙক্ষা, আসত্তি, যোগ্যতা।

আকাঙক্ষা  :

বাক্যে সম্পূর্ণ একটি মনোভাব থাকতে হবে। বাক্যের ভাব বা বক্তার বক্তব্য অসম্পূর্ণ থাকলে সেটি বাক্য হবে না। যেমন- মা আমাকে অনেক… বা মা আমাকে অনেক আদর… উপরের কোন বাক্যই বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণ প্রকাশ করছে না। দুটি বাক্য শেষ হওয়ার পরও আরো কিছু শোনার আকাঙক্ষা থেকে যাচ্ছে। সুতরাং, কোন বাক্যেরই আকাঙক্ষা গুণটি নেই। তাই কোনটিই বাক্য নয়। সম্পূর্ণ বাক্যটি হবে- মা আমাকে অনেক আদর করে। এটি শোনার পর আর কিছু শোনার আগ্রহ বাকি থাকছে না। সুতরাং এটি আকাঙক্ষা গুণ সম্পন্ন একটি সার্থক বাক্য। অর্থাৎ, শ্রোতার সম্পূর্ণ বাক্য শোনার আগ্রহ-ই আকাঙক্ষা।

আসত্তি  :

বাক্যের পদগুলোকে সঠিক ক্রমে/ অর্ডারে না সাজালে সেটি বাক্য হয় না। উপরের বাক্যের পদগুলো অন্যভাবে সাজালে সেটি বাক্য নাও হতে পারে। যেমন, উপরের বাক্যকে যদি এভাবে সাজানো হয়- আমার অনেক মা আদর আমাকে করে। এখানে বাক্যের প্রকৃত অর্থ যেমন বিকৃত হয়ে গেছে, তেমনি বিকৃত অর্থও পরিষ্কার ভাবে প্রকাশিত হয়নি। সুতরাং, বাক্যের পদগুলোকেও সঠিক ক্রমানুযায়ী বিন্যস্ত করতে হবে। বাক্যের এই বিন্যাসকেই আসত্তি বলে। উপরের বাক্যটিকে সঠিক ক্রমে সাজালে হবে- আমার মা আমাকে অনেক আদর করে। এখানে বাক্যের পদগুলোর বিন্যাস বাক্যটির অর্থ সঠিক ও পরিষ্কার ভাবে প্রকাশ করছে। সুতরাং এটি আসত্তি গুণ সম্পন্ন একটি সার্থক বাক্য। অর্থাৎ, বাক্যের পদগুলোকে সঠিক ক্রমে (Order) বিন্যস্ত করে বক্তার মনোভাব সঠিক ও পরিষ্কার করে বোঝানোর কৌশলই আসত্তি গুণ।

যোগ্যতা :

বাক্যের অর্থ সঠিক ও পরিষ্কার করে বোঝাতে আকাঙক্ষা ও আসত্তি গুণ ছাড়াও আরো একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। বাক্যের পদগুলো যদি পরস্পর অর্থগত ও ভাবগত দিক দিয়ে সম্পর্কিত না হয়, তাহলেও সেটি সার্থক বাক্য হয় না।
যেমন-
ক) অঙ্কিতা আগুনে সাঁতার কাটছে।

খ) সূর্য পশ্চিমদিকে উঠে ।

–আদৌ বাক্য নয়। বাক্য দুটিতে আকাঙক্ষা গুণও যেমন আছে, তেমনি এতে আসত্তি গুণও আছে। কিন্তু বাক্যটি সার্থক বাক্য নয়। কারণ, মানুষের পক্ষে আগুনে সাঁতার দেওয়া অসম্ভব, আর প্রকৃতির নিয়মে সূর্যও কখনো পশ্চিমদিকে উঠে না। সুতরাং, বাক্যের পদগুলোর মধ্যে অর্থগত এবং ভাবগত কোনই মিল নেই।
বাক্য দুটি যদি এভাবে লেখা হয়-

ক) অঙ্কিতা নদীতে সাঁতার কাটছে।
খ) সূর্য পূর্বদিকে উঠে।

তাহলে বাক্য দুটির পদগুলোর মধ্যে অর্থগত ও ভাবগত মিল পাওয়া যাচ্ছে। ফলে তারা যোগ্যতা গুণ সম্পন্ন সার্থক বাক্য। অর্থাৎ, বাক্যের শব্দগুলোর অর্থগত ও ভাবগত মিলকেই যোগ্যতা বলে।


অতএব বাক্যের সংজ্ঞা এভাবে দেওয়া চলে-
যোগ্যতা, আকাঙক্ষা ও আসত্তি শর্ত মান্য করে অর্থবোধক যে পদ সমষ্টি মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করে তাকে বাক্য বলে ।


ব্যাকরণবিদগণ বিভিন্নভাবে বাক্যের সংজ্ঞা দিয়েছেন। যেমন :
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, 
যে পদ বা শব্দ-সমষ্টির দ্বারা কোনও বিষয়ে বক্তার ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকটিত হয়, সেই পদ বা শব্দ-সমষ্টিকে বাক্য বা Sentence বলে।

জ্যোতিভূষণ চাকী বলেন, 
যথাযথ বিন্যস্ত শব্দসমষ্টি যদি একটি সম্পূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে তাকে বাক্য বলে।

ড. সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন,
 পরস্পর অর্থসম্বন্ধ-বিশিষ্ট যে পদগুলোর দ্বারা একটি সম্পূর্ণ ধারণা বা বক্তব্য বা ভাব প্রকাশ পায়, সেই পদগুলোর সমষ্টিকে বাক্য বলে।


☆★☆★☆★☆★☆★☆★★☆★☆


         
উদ্দেশ্য ও বিধেয়


প্রতিটি বাক্যে দুটি অংশ থাকে : উদ্দেশ্য ও বিধেয়।

উদ্দেশ্য :
বাক্যের যে অংশে কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয় তাকে উদ্দেশ্য বলে।

বিধেয় :
উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয় তাকে বিধেয় বলে।
যেমন :  খোকা       এখন বই পড়ছে
           (উদ্দেশ্য)          (বিধেয়)
বিশেষ্য বা বিশেষ্যস্থানীয় অন্যান্য পদ বা পদসমষ্টিযোগে গঠিত বাক্যাংশও বাক্যের উদ্দেশ্য হতে পারে।
যেমন :
সৎ লোকেরাই প্রকৃত সুখী – বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত বিশেষণ

মিথ্যা কথা বলা খুবই অন্যায় – ক্রিয়াজাত বাক্যাংশ

উদ্দেশ্যের প্রকারভেদ :

একটিমাত্র পদবিশিষ্ট কর্তৃপদকে সরল উদ্দেশ্য বলে। উদ্দেশ্যের সঙ্গে বিশেষণাদি যুক্ত থাকলে তাকে সম্প্রসারিত উদ্দেশ্য বলে।

উদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ :

১. বিশেষণ যোগে- কুখ্যাত দস্যুদল ধরা পড়েছে।
২. সম্বন্ধ যোগে- হাসিমের ভাই এসেছে।
৩. সমার্থক বাক্যাংশ যোগে-
যারা অত্যন্ত পরিশ্রমী তারাই উন্নতি করে।
৪. অসমাপিকা ক্রিয়াবিশেষণ যোগে- চাটুকার পরিবৃত হয়েই বড় সাহেব থাকেন।
৫. বিশেষণ স্থানীয় বাক্যাংশ যোগে- যার কথা তোমরা বলে থাক তিনি এসছেন।

বিধেয়ের সম্প্রসারণ :

১. ক্রিয়া বিশেষণ যোগে- ঘোড়া দ্রুত চলে।
২. ক্রিয়া বিশেষণীয় যোগে-
জেট বিমান অতিশয় দ্রুত চলে।
৩. কারকাদি যোগে- ভুবনের ঘাটে ঘাটে ভাসিছে।
৪. ক্রিয়া বিশেষণ স্থানীয় বাক্যাংশ যোগে- তিনি যে ভাবেই হোক আসবেন।
৫. বিধেয় বিশেষণ যোগে-
ইনি আমার বিশেষ অন্তরঙ্গ বন্ধু (হন)।

উদ্দেশ্যের প্রসারক :
১ )
ক) ছেলেটি যায় ।
খ) গোয়ালা ছেলেটি যায়।
গ) বেঁটেখাঁটো গোয়ালা ছেলেটি  যায়।
ঘ) নীলরঙের জামা পড়া বেঁটেখাঁটো গোয়ালা ছেলেটি  যায়।

২)
ক) অমিত পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।
খ) দশম শ্রেণির ছাত্র অমিত পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।
গ) প্রণবানন্দ বিদ্যাপীঠ হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র অমিত পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।
ঘ) ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ পরিচালিত  প্রণবানন্দ বিদ্যাপীঠ হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র অমিত পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।


যে সব বিশেষণ পদ প্রধান উদ্দেশ্যের পূর্বে বসে উদ্দেশ্যের পূর্ণ পরিচয় ব্যক্ত করে তাকে উদ্দেশ্যের প্রসারক বলে ।

বিধেয়ের প্রসারক :
১ )
ক) ছেলেটি যায় ।
খ) ছেলেটি রোজ যায়।
গ) ছেলেটি রোজ দুধ দিতে যায়।
ঘ) ছেলেটি রোজ  সাইকেলে চেপে দুধ দিতে যায়।
ঙ) ছেলেটি রোজ  সাইকেলে চেপে বাড়ি বাড়ি দুধ দিতে যায়।
২)
ক ) অমিত পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।
খ) অমিত মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।
গ) অমিত 2018 সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে।
ঘ) অমিত 2018 সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় জেলার মধ্যে প্রথম হয়েছে।

বিধেয়ের অর্থকে বিশেষ করে পরিস্ফুট করার জন্য ক্রিয়ার যে বিশেষণ ইত্যাদি থাকে তাকে বিধেয়ের প্রসারক বলে।

বাক্যের শ্রেণিবিভাগ :

বাক্যকে দুটি দিক দিয়ে ভাগ করা হয়।
ক) রূপ বা গঠন অনুযায়ী বাক্যের শ্রেণিবিভাগ
খ) অর্থগত দিক দিয়ে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ

ক) রূপ বা গঠন অনুযায়ী বাক্যের শ্রেণিবিভাগ :

গঠনগত দিক দিয়ে বাক্য ৩ প্রকার- সরল বাক্য, যৌগিক বাক্য ও জটিল বাক্য । এছাড়াও আর একটি ভাগ হলো মিশ্র বাক্য।

সরল বাক্য :

যে বাক্যে একটি কর্তা বা উদ্দেশ্য ও একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে, তাকে সরল বাক্য বলে।


যেমন-


পুকুরে পদ্ম ফোটে। (উদ্দেশ্য- পুকুরে, সমাপিকা ক্রিয়া- ফোটে)


মা শিশুকে ভালোবাসে। (উদ্দেশ্য- মা, সমাপিকা ক্রিয়া- ভালোবাসে)


ছেলেরা মাঠে খেলতে খেলতে হঠাৎ করে সবাই মিলে গাইতে শুরু করলে বড়োরা ওদেরকে আচ্ছামত বকে দিল। (উদ্দেশ্য- বড়োরা, সমাপিকা ক্রিয়া- (বকে) দিল) (অন্য ক্রিয়াগুলোর সবগুলোই অসমাপিকা ক্রিয়া। তাই সেগুলো বাক্যের গঠনে কোনো প্রভাব ফেলে না।)


সরল বাক্য চেনার সহজ উপায় হলো, সরল বাক্যে একটিই সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। কারণ, সরল বাক্যের ভেতরে কোন খণ্ডবাক্য বা একাধিক পূর্ণবাক্য থাকে না।

যৌগিক বাক্য : 

একাধিক সরল বাক্য কোন অব্যয় দ্বারা সংযুক্ত হয়ে একটি বাক্য গঠন করলে তাকে যৌগিক বাক্য বলে।


যেমন-


তার বয়স হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধি হয়নি। (সরল বাক্য দুটি- তার বয়স হয়েছে, তার বুদ্ধি হয়নি)


সে খুব শক্তিশালী এবং বুদ্ধিমান। (সরল বাক্য দুটি- সে খুব শক্তিশালী, সে খুব বুদ্ধিমান)


একই রকম ভাবে-


লোকটি দরিদ্র কিন্তু সৎ।

যৌগিক বাক্যে এবং, ও, আর, কিন্তু, অথবা, অথচ, কিংবা, বরং, তথাপি – এই অব্যয়গুলো দিয়ে দুটি সরল বাক্য যুক্ত হয়। এগুলো দেখে সহজেই যৌগিক বাক্যকে চেনা যেতে পারে। তবে কোন অব্যয় ছাড়াও দুটি সরল বাক্য একসঙ্গে হয়ে যৌগিক বাক্য গঠন করতে পারে।

জটিল বাক্য : 

যে বাক্যে একটি প্রধান খণ্ডবাক্য ও তাকে আশ্রয় বা অবলম্বন করে একাধিক খণ্ডবাক্য থাকে, তাকে জটিল বাক্য বলে।

জটিল বাক্যে একাধিক খণ্ডবাক্য থাকে। এদের মধ্যে একটি প্রধান থাকে, এবং অন্যগুলো সেই বাক্যের উপর নির্ভর করে। প্রতিটি খণ্ডবাক্যের পরে কমা (,) বসে। যেমন-
যে পরিশ্রম করে,/ সে-ই সুখ লাভ করে। (প্রথম অংশটি আশ্রিত খণ্ডবাক্য, দ্বিতীয়টি প্রধান খণ্ডবাক্য)
যত পড়বে,/ তত শিখবে,/ তত ভুলবে। (প্রথম দুটি অংশ আশ্রিত খণ্ডবাক্য, শেষ অংশটি প্রধান খণ্ডবাক্য)

জটিল  বাক্য চেনার সহজ উপায় হল, এ ধরনের বাক্যে সাধারণত যে- সে,যদি-তবে, যত- তত, যারা- তারা, যাদের- তাদের, যখন- তখন, যেখানে-সেখানে, যেমন-তেমন ,যেহেতু-সেহেতু – এ ধরনের সাপেক্ষ সর্বনাম /অব্যয় পদ থাকে।

[একাধিক বাক্য বা খণ্ড বাক্য নিয়ে কোনো বাক্য তৈরি হলে এবং খণ্ড বাক্যগুলোর মধ্যে পরস্পর নির্ভরতা থাকলে ঐ ধরনের বাক্যকে জটিল বাক্য বলে।]

মিশ্র বাক্য :

যে বাক্য সরল, জটিল বা যৌগিক এই তিন প্রকার বাক্য কিংবা উক্ত বাক্যের প্রকারগুলির মধ্যে যে-কোনো দুটি যুক্ত হয়ে গঠিত হয় তাকে মিশ্র বাক্য বলে।
যেমনঃ
সরল+জটিল : তুমি পড়ো বলে পাঠক, যিনি লেখেন তিনি লেখক।

জটিল+সরল : যদি বৃষ্টি হয় তবে অনেকেই আসবে না কিন্তু আমি যাবই।

যৌগিক+যৌগিক : বর্ষা বলে যাই এবং শরৎ বলছে আসি–নিয়ম তাদের আনায় আর কাশের বনে ছড়ায় শুভ্র হাসি।

সরল-জটিল-যৌগিক বাক্যের রূপান্তর

বাক্য রূপান্তর : বাক্যের অর্থ পরিবর্তন না করে বাক্যের প্রকাশভঙ্গি বা গঠনরীতিতে পরিবর্তন করাকেই বাক্য রূপান্তর বলা হয়।

বাক্য রূপান্তর করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, বাক্যের অর্থ যেন পাল্টে না যায়। বাক্যের অর্থ পাল্টে গেলে বাক্যটি অন্য বাক্যে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। কিন্তু বাক্য রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমাদেরকে বাক্যের প্রকাশভঙ্গি বা গঠনরীতি তথা রূপ (Form) পরিবর্তন করতে হবে, বাক্যের অর্থ পরিবর্তন করা যাবে না।

সরল থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর :

সরল বাক্যের কোন একটি অংশকে সম্প্রসারিত করে একটি খন্ডবাক্যে রূপান্তরিত করতে হয় এবং তার খণ্ডবাক্যটির সঙ্গে মূল বাক্যের সংযোগ করতে উপরোক্ত সাপেক্ষ সর্বনাম বা সাপেক্ষ অব্যয়গুলোর কোনটি ব্যবহার করতে হয়। যেমন-

সরল বাক্য : ভাল ছেলেরা কম্পিউটারে বসেও ইন্টারনেটে পড়াশুনা করে।

জটিল বাক্য : যারা ভাল ছেলে, তারা কম্পিউটারে বসেও ইন্টারনেটে পড়াশুনা করে।

সরল বাক্য : ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।

জটিল বাক্য : যে ভিক্ষা চায়, তাকে ভিক্ষা দাও।

সরল : ফরিয়াদী প্রসন্ন গোয়ালিনী।

জটিল : যে ফরিয়াদী, সে প্রসন্ন গোয়ালিনী।

সরল : সাক্ষীটা কী একটা গণ্ডগোল বাধাইতেছে।

জটিল : যে সাক্ষী, সে একটা গণ্ডগোল বাধাইতেছে।

সরল : আমার নিবাস নাই।

জটিল : যা নিবাস, তা আমার নাই।

সরল : তোমার বাপের নাম কী?

জটিল : তোমার যিনি বাপ, তার নাম কী?

সরল : আমি এ সাক্ষী চাই না।

জটিল : যে সাক্ষী এ রকম, তাকে আমি চাই না।

সরল : কমলাকান্ত পিতার নাম বলল।

জটিল : যিনি কমলাকান্তের পিতা, সে তাঁর নাম বলল।

সরল : কোনো কথা গোপন করিব না।

জটিল : যাহা বলিব, তাহার মধ্যে কোনো কথা গোপন করিব না।

সরল : উকিলবাবু চুপ করিয়া বসিয়া পড়িলেন।
জটিল : যিনি উকিলবাবু, তিনি চুপ করিয়া বসিয়া পড়িলেন।

জটিল থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর :

জটিল বাক্যটির অপ্রধান/ আশ্রিত খণ্ডবাক্যটিকে একটি শব্দ বা শব্দাংশে পরিণত করে সরল বাক্যে রূপান্তর করতে হয়। যেমন-

জটিল বাক্য : যত দিন বেঁচে থাকব, এ কথা মনে রাখব।

সরল বাক্য : আজীবন এ কথা মনে রাখব।

জটিল বাক্য : যদি দোষ স্বীকার কর তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।

সরল বাক্য : দোষ স্বীকার করলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।

জটিল : কেহ কহিয়া দিতেছে না, তথাপি তপোবন বলিয়া বোধ হইতেছে।

সরল : কেহ কহিয়া না দিলেও তপোবন বলিয়া বোধ হইতেছে।

জটিল : শরাসনে যে শর সংহিত করিয়াছেন, আশু তাহার প্রতিসংহার করুন।

সরল : শরাসনে সংহিত শর আশু প্রতিসংহার করুন।

জটিল : যদি কার্যক্ষতি না হয়, তথায় গিয়া অতিথি সৎকার করুন।

সরল : কার্যক্ষতি না হইলে তথায় গিয়া অতিথি সৎকার করুন।

জটিল : ইহারা যেরূপ, এরূপ রূপবতী রমণী আমার অন্তঃপুরে নাই।

সরল : ইহাদের মতো রূপবতী রমণী আমার অন্তঃপুরে নাই।

জটিল : তুমি নবমালিকা কুসুমকোমলা, তথাপি তোমায় আলবালজলসেচনে নিযুক্ত করিয়াছেন।

সরল : তুমি নবমালিকা কুসুমকোমলা হওয়া সত্ত্বেও তোমায় আলবালজলসেচনে নিযুক্ত করিয়াছেন।

সরল থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর :

সরল বাক্যের কোন অংশকে সম্প্রসারিত করে একটি পূর্ণ বাক্যে রূপান্তরিত করতে হয় এবং পূর্ণ বাক্যটির সঙ্গে মূল বাক্যের সংযোগ করতে উপরোক্ত অব্যয়গুলো ব্যবহার করতে হবে। যেমন-

সরল বাক্য : দোষ স্বীকার করলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।

যৌগিক বাক্য : দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না। (এক্ষেত্রে ‘তাহলে’ অব্যয়টি ব্যবহার না করলেও চলতো)

সরল বাক্য : আমি বহু কষ্টে শিক্ষা লাভ করেছি।

যৌগিক বাক্য : আমি বহু কষ্ট করেছি এবং/ ফলে শিক্ষা লাভ করেছি।

যৌগক থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর :

যৌগিক বাক্যে একাধিক সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। অন্যদিকে সরল বাক্যে একটিই সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। তাই যৌগিক বাক্যের একটি সমাপিকা ক্রিয়াকে অপরিবর্তিত রেখে বাকিগুলোকে সমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত করতে হবে। যৌগিক বাক্যে একাধিক পূর্ণ বাক্য থাকে এবং তাদের সংযোগ করার জন্য একটি অব্যয় পদ থাকে। সেই অব্যয়টি বাদ দিতে হবে। যেমন-

যৌগিক বাক্য : তার বয়স হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধি হয়নি। (সমাপিকা ক্রিয়া- হয়েছে, হয়নি)
সরল বাক্য : তার বয়স হলেও বুদ্ধি হয়নি। (‘হয়েছে’ সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘হলেও’ অসমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা হয়েছে)

যৌগিক বাক্য : মেঘ গর্জন করে, তবে ময়ূর নৃত্য করে। (সমাপিকা ক্রিয়া- করে ও করে)

সরল বাক্য : মেঘ গর্জন করলে ময়ূর নৃত্য করে। (‘করে’ সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘করলে’ অসমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা হয়েছে)

যৌগিক : কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না।

সরল : কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিলেও বরের বাপ সবুর করিতে চাহিলেন না।

যৌগিক : আমি ছিলাম বর, সুতরাং বিবাহ সম্বন্ধে আমার মত যাচাই করা অনাবশ্যক ছিল।

সরল : আমি বর ছিলাম বলে বিবাহ সম্বন্ধে আমার মত যাচাই করা অনাবশ্যক ছিল।

যৌগিক : শিশিরের বয়স যথাসময়ে ষোলো হইল; কিন্তু সেটা স্বভাবের ষোলো।

সরল : শিশিরের বয়স যথাসময়ে ষোলো হইলেও সেটা ছিল স্বভাবের ষোলো।

যৌগিক : তোমাকে এই কটি দিন মাত্র জানিলাম, তবু তোমার হাতেই ও রহিল।

সরল : তোমাকে এই কটি দিন মাত্র জানিলেও তোমার হাতেই ও রহিল।

জটিল থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর :

জটিল বাক্যে কয়েকটি খণ্ডবাক্য থাকে, এবং সেগুলো পরস্পর নির্ভরশীল থাকে। জটিল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর করতে হলে এই খণ্ডবাক্যগুলোর পরস্পর নির্ভরতা মুছে দিয়ে স্বাধীন করে দিতে হবে। এজন্য সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়গুলো তুলে দিয়ে যৌগিক বাক্যে ব্যবহৃত অব্যয়গুলোর মধ্যে উপযুক্ত অব্যয়টি বসাতে হবে। পাশাপাশি ক্রিয়াপদের গঠনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-

জটিল বাক্য : যদি সে কাল আসে, তাহলে আমি যাব।

যৌগিক বাক্য : সে কাল আসবে এবং আমি যাব।

জটিল বাক্য : যদিও তাঁর টাকা আছে, তবুও তিনি দান করেন না।

যৌগিক বাক্য : তাঁর টাকা আছে, কিন্তু তিনি দান করেন না।

যৌগিক থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর :

যৌগিক বাক্যে দুইটি পূর্ণ বাক্য কোন অব্যয়ের দ্বারা যুক্ত থাকে। এই অব্যয়টি তুলে দিয়ে সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়ের প্রথমটি প্রথম বাক্যের পূর্বে ও দ্বিতীয়টি দ্বিতীয় বাক্যের পূর্বে বসালেই জটিল বাক্যে রূপান্তরিত হবে।
তবে, সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়গুলোর পূর্ণ বাক্য দুটির প্রথমেই বসাতে হবে, এমন কথা নেই; উপযুক্ত যে কোন জায়গাতেই বসানো যেতে পারে। যেমন-

যৌগিক বাক্য : দোষ স্বীকার কর, তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।

জটিল বাক্য : যদি দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।

যৌগিক বাক্য : তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, কিন্তু তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।

জটিল বাক্য : যদিও তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, তবুও তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।

যৌগিক বাক্য : এ গ্রামে একটি দরগাহ আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত।

জটিল বাক্য : এ গ্রামে যে দরগাহটি আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত।


☆★☆★☆★☆★☆★☆★☆★☆★


অর্থগত দিক দিয়ে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ :

অর্থগত দিক দিয়ে বাক্যে সাত প্রকার।যথা-
১) বিবৃতিসূচক বা নির্দেশাত্মক বাক্য
২) প্রশ্নসূচক বাক্য
৩) অনুজ্ঞাসূচক বাক্য
৪) বিস্ময়সূচক বাক্য
৫) প্রার্থনাসূচক বা ইচ্ছাবাচক বাক্য
৬) সন্দেহবাচক বাক্য
৭) শর্তসাপেক্ষ বা কার্যকারণাত্মক বাক্য


বিবৃতিমূলক বাক্য :

কোন কিছু সাধারণভাবে বর্ণনা করা হয় যে বাক্যে, তাকে বিবৃতিমূলক বাক্য বলে।

বিবৃতিমূলক বাক্য ২ প্রকার।

ক) ইতিবাচক বাক্য/ হাঁ বাচক বাক্য / অস্ত্যর্থক বাক্য:

যে বাক্যে সমর্থনের মাধ্যমে কোন কিছু বর্ণনা করা হয়, তাকে ইতিবাচক বাক্য বা হাঁ বাচক বলে।

যে বাক্যে হাঁ বাচক শব্দ থাকে, তাকে হাঁ বাচক বা ইতিবাচক বাক্য বলে।

যেমন- তুমি কালকে আসবে।
আমি কলকাতা যাব।

[সদর্থক বা ইতিবাচক বাক্য : এতে কোনো নির্দেশ, ঘটনার সংঘটন বা হওয়ার সংবাদ থাকে। যেমন :
ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারত জিতেছে।
আজ দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

খ) নেতিবাচক বাক্য /নঞর্থক বাক্য/ না বাচক বাক্য :

যে বাক্যে অসমর্থনের মাধ্যমে কোন কিছু বর্ণনা করা হয়, তাকে নেতিবাচক বাক্য বা না বাচক বলে।

যে বাক্যে না বাচক শব্দ থাকে, তাকে নেতিবাচক বাক্য বা না বাচক বাক্য বলে।

যেমন- তুমি কালকে আসবে না।
আমি কলকাতা যাব না।

[নেতিবাচক বা নঞর্থক বাক্য : এ ধরনের বাক্যে কোন কিছু হয় না বা ঘটছে না- নিষেধ, আকাঙ্ক্ষা, অস্বীকৃতি ইত্যাদি সংবাদ কিংবা ভাব প্রকাশ করা যায়। যেমন :
আজ ট্রেন চলবে না।
আপনি আমার সঙ্গে কথা বলবেন না।


অনুজ্ঞাসূচক বাক্য :

যে বাক্যে আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, নিষেধ ইত্যাদি অর্থ প্রতীয়মান হয় তাকে অনুজ্ঞাসূচক বাক্য বলে ।

যেমন :
ওঠো, জাগো, সাহস অবলম্বন করো।(আদেশ)
আমাকে এক গ্লাস জল দাও।(অনুরোধ)
একদম রোদে- রোদে ঘুরবি না।(নিষেধ)
অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের রূপ দুপ্রকার।যথা-
ক) বর্তমান অনুজ্ঞা , খ) ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা

ক) বর্তমান অনুজ্ঞা :
যে বাক্যে অনুজ্ঞার অর্থ বর্তমান কালকে বোঝায় তাকে বর্তমান অনুজ্ঞা বলে।
যেমনঃ
এসো মন দিয়ে পড়ো।
বইপত্র নাও।
দুঃখ ভুলে যাও।

খ) ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা :
যে বাক্যে অনুজ্ঞার অর্থ ভবিষ্যৎ কালকে বোঝায় তাকে ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা বলে ।
যেমনঃ
সদা সত্য কথা বলবে।


বিস্ময়সূচক বাক্য :

যে বাক্যে আশ্চর্য হওয়ার অনুভূতি বা আবেগ, উচ্ছ্বাস, শোক, বিস্ময় প্রকাশিত হয়, তাকে বিস্ময়সূচক বাক্য বলে।

যেমন-
সে কী ভীষণ ব্যাপার!
আহা ! কী অপরূপ দৃশ্য !
আহা! কী দদেখিলাম জন্মজন্মান্তরেও ভুলিব না!
সত্য সেলুকাস ! কী বিচিত্র এই দেশ !


ইচ্ছাসূচক বা প্রার্থনাসূচক বাক্য :

যে বাক্যে শুভেচ্ছা, প্রার্থনা, আশীর্বাদ, আকাঙক্ষা প্রকাশ করা হয়, তাকে ইচ্ছাসূচক বাক্য বলে।
যেমন-
তোমার মঙ্গল হোক।
ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করেন।
ভালো থেকো।
ঈশ্বর তোমার বাসনা যেন অপূর্ণ না রাখেন।

সন্দেহবাচক বাক্য :

যে ধরণের বাক্যের মাধ্যমে সন্দেহ , দ্বিধা, সংশয় ইত্যাদি প্রকাশিত হয় তাকে সন্দেহবাচক  বাক্য বলে।

যেমন :
তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে।
মনে করি আমর তুমি, বুঝি নও আমার।
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।


শর্তসাপেক্ষ  বা কার্যকারণাত্মক বাক্য :

যে বাক্যের একটি অংশে কারণ এবং অন্য অংশে কার্য , ফল বা পরিণাম থাকে তাকে কার্যকারণাত্মক  বা শর্তসাপেক্ষ বাক্য বলে।

যেমন :
ভালোভাবে লেখাপড়া করলে ভালো রেজাল্ট করবে।
যদি বৃষ্টি হয় তবে মাটি ভেজে।
যদি তুমি আসো তবে আমি যাব।

শর্তসাপেক্ষ বাক্য মাত্রেই জটিল বাক্য।


বাক্যের রূপান্তর :

ইতিবাচক- নেতিবাচক বাক্যের রূপান্তর :
ইতিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের কৌশল :

ক) বিশেষণ পদের বিপরীত শব্দ ব্যবহার করে অনেক অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর করা যায়। যেমন-
ইতিবাচক বাক্য : তুমি খুব ভাল।
নেতিবাচক বাক্য : তুমি মোটেও খারাপ নও। (ভাল- খারাপ)
খ) ‘না করলেই নয়’, ‘না করে পারবো না’ ইত্যাদি বাক্যাংশ যোগ করে অনেক ইতিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর করতে হয়। যেমন-


ইতিবাচক বাক্য : তুমি কালকে আসবে।
নেতিবাচক বাক্য : তুমি কালকে না আসলেই নয়।

ইতিবাচক বাক্য :  বাংলা সহায়ক ওয়েবসাইটটি এতো ভাল, তুমি আবার ঢুকবেই।

নেতিবাচক বাক্য :  বাংলা সহায়ক ওয়েবসাইটটি এতো ভাল, তুমি আবার না ঢুকে পারবেই না।


গ) নতুন কোন বিপরীতার্থক বা নঞর্থক (না বোধক) শব্দ যোগ করে। যেমন-


ইতিবাচক বাক্য : সে বইয়ের পাতা উল্টাতে থাকল।

নেতিবাচক বাক্য : সে বইয়ের পাতা উল্টানো বন্ধ রাখলো না।

নেতিবাচক বাক্যকে ইতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের কৌশল

ক) বিশেষণ পদের বিপরীত শব্দ ব্যবহার করে অনেক নেতিবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তর করা যায়। যেমন-

নেতিবাচক বাক্য : সে ক্লাশে উপস্থিত ছিল না।
ইতিবাচক বাক্য : সে ক্লাশে অনুপস্থিত ছিল।

খ) নেতিবাচক বাক্যের না বোধক বাক্যাংশকে কোন বিপরীতার্থক বিশেষণে রূপান্তর করেও অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তর করা যায়। যেমন-


নেতিবাচক বাক্য : দেবার্চনার কথা তিনি কোনদিন চিন্তাও করেন নি।

ইতিবাচক বাক্য : দেবার্চনার কথা তার কাছে অচিন্ত্যনীয় ছিল।


নেতিবাচক বাক্য : এসব কথা সে মুখেও আনতে পারত না।

ইতিবাচক বাক্য : এসব কথা তার কাছে অকথ্য ছিল।


গ) নতুন কোন ইতিবাচক বিপরীতার্থক শব্দ যোগ করে। যেমন-

নেতিবাচক বাক্য : মা জেগে দেখে খোকা তার পাশে নেই।


ইতিবাচক বাক্য : মা জেগে দেখে খোকা তার পাশে অনুপস্থিত।


প্রশ্নসূচক বাক্য :

যে বাক্যে কোন প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা প্রকাশিত হয়, তাকে প্রশ্নসূচক বাক্য বলে।

যেমন-
তুমি কেমন আছ?

তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুতুমি কি বেসেছ ভালো ?

মৃত্যুতেই কি জীবনের পরিসমাপ্তি ?

প্রশ্নবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের কৌশল :

মূলত প্রশ্নবাচক বাক্যকে ইতিবাচক থেকে সরাসরি নেতিবাচক বাক্যে পরিণত করলেই নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরিত হয়ে যায়। কেবল প্রশ্নবাচক বাক্যকে ইতিবাচক হিসেবে কল্পনা করতে হয়। আর যেগুলো সরাসরি অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তরিত হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে ইতি-নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের নিয়মে নেতিবাচক করতে হয়। যেমন-


প্রশ্ন : তুমি কি কালকে স্কুলে এসেছিলে?
নেতি : তুমি কালকে স্কুলে আসোনি।


প্রশ্ন : বাংলা শিক্ষার সোপান ওয়েবসাইটটি কি পড়াশোনা করার জন্য খারাপ?

নেতি : বাংলা শিক্ষার সোপান ওয়েবসাইটটি পড়াশোনা করার জন্য খারাপ না।


প্রশ্ন : তুমি কি ছবিটা দেখোনি?
নেতি : তুমি ছবিটা না দেখে পারোনি।

প্রশ্নবাচক বাক্যকে ইতিবাচক বাক্যে রূপান্তর :

কিছু প্রশ্নবাচক বাক্যকে স্বাভাবিকভাবে সরাসরি অস্তিবাচক থেকে প্রশ্নবাচকে রূপান্তরিত করা যায়। আর যেগুলো সরাসরি রূপান্তর করলে নেতিবাচক হয়, সেগুলোকে নেতি থেকে অস্তিবাচক বাক্যে রূপান্তরের নিয়মে অস্তিবাচক করতে হয়। যেমন-

প্রশ্ন : তুমি কি ছবিটা দেখোনি?
ইতি : তুমি ছবিটা দেখেছো।


প্রশ্ন : তুমি কি কালকে স্কুলে এসেছিলে?
ইতি : তুমি কালকে স্কুলে অনুপস্থিত ছিলে।

ইতি-নেতিবাচক (বিবৃতিমূলক) বাক্যকে প্রশ্নবাচক বাক্যে রূপান্তর

বিবৃতিমূলক বাক্যে প্রশ্নসূচক অব্যয় যুক্ত করে সেগুলোকে বিপরীত বাক্যে (অস্তি হলে নেতি এবং নেতি হলে ইতিবাচকে) সরাসরি রূপান্তর করলেই বাক্য রূপান্তর সম্পন্ন হয়। যেমন-

বিবৃতি : তুমি কালকে স্কুলে অনুপস্থিত ছিলে।
প্রশ্নসূচক অব্যয় যুক্ত করে : তুমি কি কালকে স্কুলে অনুপস্থিত ছিলে?

প্রশ্ন : তুমি কি কালকে স্কুলে উপস্থিত ছিলে?/ তুমি কি কালকে স্কুলে এসেছিলে?


বিবৃতি : তুমি ছবিটা দেখোনি।
প্রশ্নসূচক অব্যয় যুক্ত করে : তুমি কি ছবিটা দেখোনি?
প্রশ্ন : তুমি কি ছবিটা দেখেছো ?


পার্থক্য সমূহ :

2 thoughts on “বাক্য |Sentence|bakko|বাক্যের শ্রেণিবিভাগ”

  1. এই মন্তব্যটি একটি ব্লগ প্রশাসক দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top