বিশেষণ পদ | বাংলা ব্যাকরণ | বিশেষণ শিখুন সহজে | BanglaSahayak.com

বিশেষণ পদ ও তার শ্রেণিবিভাগ 


বিশেষণ কী ?



যা কোন কিছুকে বিশিষ্ট করে তাকে বিশেষণ বলে। বিশেষণ শুধু যে বিশেষ্যকেই বিশিষ্ট করে, তা নয়, অন্যান্য পদকেও বিশেষিত করে।


সংজ্ঞা :



যে পদ বিশেষ্য বা অন্য পদের দোষ,গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ প্রভৃতি প্রকাশ করে তাকে বিশেষণ পদ বলে।


বিশেষণ পদের উদাহরণ :

১. হেথায় নিত্য হেরো পবিত্র ধরিত্রীরে।

২.  ঘুমন্ত ছেলেটাকে জ্বালাতন করছ কেন?

৩. সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ কর নি।

৪. শুধু বিঘে-দুই ছিল মোর ভুঁই।

উদাহরণগুলিতে ‘পবিত্র’ গুণ, ‘ঘুমন্ত’ অবস্থা, ‘সাত কোটি ‘ সংখ্যা এবং ‘বিঘে-দুই’ পরিমাণ বোঝাচ্ছে।সুতরাং, এগুলি বিশেষণ।


বিশেষণ পদের শ্রেণিবিভাগ :

বিশেষণ পদ প্রধানত তিন প্রকার।যেমন-
ক) নাম বিশেষণ
খ) বিশেষণের বিশেষণ
গ) ক্রিয়া বিশেষণ


ক) নাম বিশেষণ :

যে বিশেষণ পদ বিশেষ্য বা  সর্বনাম পদের গুণ, অবস্থা ,ধর্ম ,সংখ্যা, পরিমাণ প্রভৃতি প্রকাশ করে, তাকে নাম বিশেষণ বলে।


উদাহরণ:



চমৎকার
ছেলে, ঠান্ডা বরফ , এক লক্ষ টাকা ,তৃতীয় কন্যা, দয়ালু ব্যক্তি, পবিত্র গ্রন্থ, পঞ্চ পান্ডব, নীলাভ আকাশ ইত্যাদি।

বিশেষ্য ও সর্বনাম পদকে নামপদ বলা হয়।এজন্য নাম-বিশেষণ।


বিশেষ‍্যের বিশেষণ :

যে বিশেষণ পদ কোনো বিশেষ‍্য পদের বৈশিষ্ট্য, ধর্ম, গুণাগুণ, সংখ‍্যা, পরিমাণ, অবস্থা, ক্রম, মাত্রা ইত‍্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষ‍্যের বিশেষণ বলে।

উদাহরণ : 

১) অর্ঘ্য বুদ্ধিমান ছেলে।
২) অঙ্কিতা লাল জামা গায়ে দিয়েছে।

এই দুটি বাক‍্যে ‘বুদ্ধিমান’, ও ‘লাল’  পদ দু’টি যথাক্রমে ‘ছেলে’, ‘জামা’  এই দুটি বিশেষ‍্যের পরিচয় স্পষ্ট করছে। তাই বুদ্ধিমান, লাল পদ বিশেষ‍্যের বিশেষণ।
যে বিশেষ্যপদগুলির গুণ প্রকাশ করছে ঠিক তাদের আগে এদের অবস্থান।
এছাড়াও-
পোষা ময়ূর,সফেন সমুদ্র,অন্ধকার রাত, ভাঙা কুঁড়ে ঘর ইত্যাদি।


সর্বনামের বিশেষণ :

যে বিশেষণ পদ কোনো সর্বনাম পদের গুণাগুণ, বৈশিষ্ট্য ইত‍্যাদি জানান দেয়, তাকে সর্বনামের বিশেষণ বলে।

উদাহরণ :

তুমি অধম – তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?

মূর্খ কি প্রকারে বলিবে?

উদাহরণদুটিতে অধম, উত্তম, মূর্খ বিশেষণগুলি যথাক্রমে তুমি,আমি,ও সর্বনাম পদের পরে বসেছে। তাই ‘অধম’, ‘উত্তম’, ‘মূর্খ’ – সর্বনামের বিশেষণ।



অর্থ ও গঠন প্রকৃতি অনুসারে নাম বিশেষণকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায় –


১) গুণবাচক বিশেষণ :

যে বিশেষণ পদের দ্বারা অন‍্য পদের দোষ, গুণ, ধর্ম প্রকাশ পায়, তাকে গুণবাচক বিশেষণ বলে। 

গুণবাচক বিশেষণের উদাহরণ:

পবিত্র মন্দির,ভালো ছেলে, মন্দ মেয়ে, সুন্দর দৃশ্য, লম্বা গাছ, বেঁটে লোক, উঁচু প্রাসাদ,  মধুর ভাষণ, বড়ো নদী, ছোটো ছেলে ইত্যাদি।


২) অবস্থাবাচক বিশেষণ :

যে বিশেষণ অন‍্য পদের অবস্থা প্রকাশ করে, তাকে অবস্থাবাচক বিশেষণ বলে।

অবস্থাবাচক বিশেষণের উদাহরণ :

গরিব কর্মচারী,জ্বলন্ত সূর্য, সুস্থ পরিবেশ, কঠিন পদার্থ, দরিদ্র ব্যক্তি, ধনী মহাজন, সুখী মানুষ , চলন্ত ট্রেন, ফুটন্ত জল ইত‍্যাদি।


৩) সংখ‍্যাবাচক বিশেষণ :

যে বিশেষণ পদ বিশেষ‍্যের  সংখ‍্যা প্রকাশ করে, তাকে সংখ‍্যাবাচক বিশেষণ বলে।

সংখ‍্যাবাচক বিশেষণের উদাহরণ :

এক দিন,পাঁচ  মাস, দশ বছর, পাঁচটি কলম, দুটো ছেলে,লাখ টাকা,কোটি বৃক্ষ ইত্যাদি।

৪) পূরণবাচক বা ক্রমবাচক বিশেষণ : 

যে বিশেষণ পদের দ্বারা কোনো বিশেষ‍্যের সংখ‍্যাগত ক্রমিক অবস্থান বোঝানো হয়, তাকে পূরণবাচক বা ক্রমবাচক বিশেষণ বলে। 


পূরণবাচক বিশেষণের উদাহরণ:

প্রথম বালক, দ্বিতীয় অধ্যায়, নবমী নিশি , দশের নামতা, পয়লা বৈশাখ, বাইশে শ্রাবণ,তিনের ঘণ্টা,তেরোর পাতা ইত্যাদি।

মনে রেখো : পূরণবাচক বিশেষণ সবসময় একটি বিশেষ‍্যকে বোঝায়। অর্থাৎ ‘দ্বিতীয় অধ্যায়’ বললে একটিই অধ্যায় বোঝায়।

৫) পরিমাণবাচক বিশেষণ :

যে বিশেষণ কোনো বিশেষ‍্যের পরিমাণ বোঝায়, তাকে পরিমাণবাচক বিশেষণ বলে।


পরিমাণবাচক বিশেষণের উদাহরণ :

এক লিটার তেল, দু’কেজি মাছ, দুই বিঘা জমি, একমুঠো চাল, কাঠা-চারেক পুকুর,হাত দশেক ফিতা,একফোঁটা দুধ ইত্যাদি।


৬) সংজ্ঞাবাচক বিশেষণ :



সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যের পরে তদ্ধিত প্রত্যয় যোগে গঠিত বিশেষণকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষণ বলে ।


উদাহরণ :



মোগলাই
পরোটা, কলকাতাই ফ্যাশন, ভারতীয় সংস্কৃতি, রাবীন্দ্রিক কাব্য, কাশ্মীরি শাল, জাপানি জাহাজ ইত্যাদি।


৭) উপাদানবাচক বিশেষণ :



বিশেষ্যের উপাদানটি বিশেষণ রূপে ব্যবহৃত হলে তাকে উপাদানবাচক বিশেষণ বলে ।


উদাহরণ:



সুতি
বস্ত্র ,কাগজি নোট ,পাথুরে কয়লা, কাঁকুরে মাটি, বেলে পাথর ,কাগুজে নৌকা ,কাচের চুড়ি ,লোহার বাসর ঘর ইত্যাদি।

৮) বহুপদী বিশেষণ / বাক‍্যাংশ বিশেষণ:


দুই বা তার বেশি সমাসবদ্ধ পদ বিশেষ্য পদের পূর্বে বসে বিশেষণের কাজ করলে তাকে বহুপদী বিশেষণ বলে।


উদাহরণ:



পিছনে-ফেলে-আসা
দিন।

মায়ে-তাড়ানো বাপে-খেদানো
ছেলে।

প্রাণ-কেড়ে-নেওয়া
হাসি।


৯) ধ্বন‍্যাত্মক বিশেষণ : 



ধন্যাত্মক অব্যয় যখন বিশেষ্য পদের গুণ বা অবস্থা প্রকাশ করে তখন তাকে ধনাত্মক বিশেষণ বলে।


উদাহরণ:

কনকনে শীত,গনগনে আঁচ,ঝরঝরে লেখা,ঝিরঝিরে হাওয়া,খুকখুক কাশি, থমথমে ভাব,ধুপধাপ শব্দ ইত্যাদি।


১০) সর্বনামীয় বিশেষণ :


সর্বনাম পদ বিশেষণ হয়ে ব্যবহৃত হলে তাকে সর্বনামীয় বিশেষণ বলে।


উদাহরণ:



যত
মত তত পথ, মদীয় গৃহে, তদীয় আলয়ে, সেই সূর্য ,এই চাঁদ, ওই আকাশ, যত লোক ইত্যাদি।


১১) অব্যয়ের বিশেষণ :



যে বিশেষণ পদ অব্যয়পদকে বিশেষিত করে তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে।


উদাহরণ:

তোমার একটু পরেই আমি এসেছি।

আমাদের মাথা  ঠিক উপরেই উড়ছিল একঝাঁক মশা ।

উদাহরণ  দুটিতে ‘একটু’ ও ‘ঠিক’ বিশেষণ দুটি যথাক্রমে ‘পরেই’ ও ‘উপরেই’ অব্যয় দুটিকে বিশেষিত করছে। তাই  ‘একটু’ ও ‘ঠিক’ অব্যয়ের বিশেষণ।


১২) বিধেয় বিশেষণ : 



বাক্যের বিধেয় অংশে অবস্থিত বিশেষণ বাক্যের উদ্দেশ্য পদকে বিশেষিত করলে তাকে বিধেয় বিশেষণ বলে ।


উদাহরণ:

কুঁড়েঘরটি ভাঙা, রাতটি অন্ধকার, পাখিটি কালো ,লোকটি পুত্রহীন ইত্যাদি।

খ) বিশেষণের বিশেষণ : 


যে বিশেষণগুলি অন‍্য একটি বিশেষণের  গুণ,অবস্থা,প্রকৃতি, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে  বিশেষণের বিশেষণ বলে।


উদাহরণ : 



ধবধবে সাদা
জামা, কুচকুচে  কালো কুকুরছানা, টকটকে লাল ফুল,খুব জোরালো বাতাস,অতিশয় বুদ্ধিমান লোক,বেশ কনকনে ঠাণ্ডা ইত্যাদি।

গ) ক্রিয়াবিশেষণ : 

যে সব বিশেষণ পদ ক্রিয়াপদকে বিশেষিত করে, তাদের ক্রিয়া-বিশেষণ বা ক্রিয়ার বিশেষণ বলে।

ক্রিয়া কী ভাবে ঘটছে, তা বুঝিয়ে দেওয়া ক্রিয়াবিশেষণের কাজ। অনেক ক্ষেত্রে ক্রিয়া সংঘটনের স্থান-কাল‌ও ক্রিয়াবিশেষণ রূপে কাজ করে। 


উদাহরণ : 


লেখাটা তাড়াতাড়ি সেরে নাও।
গাড়িটি জোরে ছুটছে।
লোকটি হেঁটে হেঁটে আসছে।
কাজটি সহজে করা যাবে না।

উদাহরণ‌গুলিতে ‘তাড়াতাড়ি’,  ‘জোরে’, ‘হেঁটে হেঁটে’, ‘সহজে’,  পদগুলি ক্রিয়াবিশেষণ।


সমাস 



Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top