স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি
বিসর্গ সন্ধি :
বিসর্গের সঙ্গে স্বরধ্বনি বা ব্যঞ্জনধ্বনি যুক্ত হয়ে যে সন্ধি হয় তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে।
সূক্ষ্ম বিচারে বিসর্গ সন্ধি ব্যঞ্জনসন্ধির অন্তর্গত। কেননা ,বিসর্গ উৎপন্ন হয় র্ ও স্ দুটি ব্যঞ্জন থেকে। তাই বিসর্গ হল র্-জাত ও স্-জাত।
র-জাত বিসর্গ : ‘র্’ ধ্বনির জায়গায় যে বিসর্গ হয়, তাকে র-জাত বিসর্গ বলে। যেমন : অন্তর্- অন্তঃ, আবির্-আবিঃ, দুর্- দুঃ, ইত্যাদি।
স-জাত বিসর্গ : ‘স্’ ধ্বনির জায়গায় যে বিসর্গ হয়, তাকে স-জাত বিসর্গ বলে। যেমন : পুরস্- পুরঃ, আশিস্-আশীঃ, বয়স্-বয়ঃ ইত্যাদি।
বিসর্গ+স্বরধ্বনি
সূত্র ১ :
‘অ’ স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে আবার ‘অ’ থাকলে অ+ঃ+অ = ‘ও’ হয়।
উদাহরণ- ততঃ+অধিক = ততোধিক
যশঃ+অভিলাষ =যশোভিলাষ
মনঃ+অভীষ্ট =মনোভীষ্ট
সূত্র ২ :
স্-জাত বিসর্গের ‘অ’কারের পর অ-ছাড়া অন্য কোনো স্বর থাকলে বিসর্গ লোপ পায়।
উদাহরণ-
অতঃ+এব=অতএব
শিরঃ+উপরি=শিরউপরি (আবার সন্ধি হয়ে শিরোপরি)
সূত্র ৩ :
র্-জাত বিসর্গ যুক্ত স্বরবর্ণের পর স্বরবর্ণ থাকলে বিসর্গ স্থানে র্ হয়।
উদাহরণ-
নিঃ +অন্ন =নিরন্ন
জ্যোতিঃ+ইন্দ্র =জ্যোতিরিন্দ্র
পুনঃ+উক্তি = পুনরুক্তি
পুনঃ+আগমন =পুনরাগমন
পুনঃ+উত্থান =পুনরুত্থান
দুঃ+অন্ত =দুরন্ত
দুঃ+অবস্থা=দুরবস্থা
প্রাতঃ+আশ =প্রাতরাশ
পুনঃ+অপি = পুনরপি
বিসর্গ+ব্যঞ্জনধ্বনি
সূত্র ৪ :
স্-জাত বিসর্গযুক্ত অ-কারের পর ঘোষ ধ্বনি, নাসিক্য ধ্বনি, অন্তস্থ ধ্বনি কিংবা হ থাকলে, বিসর্গের জায়গায় ‘ও’ হয়।
উদাহরণ-
মনঃ+ভাব =মনোভাব
মনঃ+হর = মনোহর
পুরঃ +হিত=পুরোহিত
তিরঃ+ধান = তিরোধান
সদ্যঃ+জাত =সদ্যোজাত
মনঃ+রম = মনোরম
শিরঃ+ধার্য =শিরোধার্য
তপঃ+বন = তপোবন
সরঃ+বর=সরোবর
মনঃ +বাসনা=মনোবাসনা
নভঃ+মণ্ডল=নভোমণ্ডল
ছন্দঃ+বদ্ধ=ছন্দোবদ্ধ
সূত্র ৫ :
‘অ/আ’ ছাড়া অন্য স্বরধ্বনির পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে অ, আ, ঘোষ ধ্বনি, নাসিক্য ধ্বনি, অন্তস্থ ধ্বনি কিংবা হ থাকলে বিসর্গের জায়গায় ‘র’ হয়।
উদাহরণ-
নি:+জন =নির্জন
নিঃ+গমন =নির্গমন
দুঃ+যোগ = দুর্যোগ
আশীঃ+বাদ = আশীর্বাদ
আবিঃ+ভাব = আবির্ভাব
দুঃ+লোভ = দুর্লোভ
প্রাদুঃ+ভাব = প্রাদুর্ভাব
জ্যোতিঃ+ময় = জ্যোতির্ময়
বহিঃ+গত = বহির্গত
ধনুঃ +ভঙ্গ =ধনুর্ভঙ্গ
সূত্র ৬ :
স্-জাত বা র্-জাত বিসর্গের পর চ কিংবা ছ থাকলে ওই বিসর্গের স্থানে শ হয়, ত বা থ থাকলে স্ হয়, ট বা ঠ থাকলে ষ্ হয়।
উদাহরণ-
নভঃ+চর = নভশ্চর
নিঃ+চয় = নিশ্চয়
শিরঃ+ছেদ = শিরশ্ছেদ
নিঃ+ছিদ্র =নিশ্ছিদ্র
নিঃ+ঠুর = নিষ্ঠুর
ধনুঃ+টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার
নভঃ+তল =নভস্তল
ইতঃ+ততঃ=ইতস্ততঃ
দুঃ+তর = দুস্তর
দুঃ+থ = দুস্থ
সূত্র ৭ :
অ-কারের পরবর্তী র্-জাত বিসর্গের পর ঘোষ বর্ণ, অন্তঃস্থ বর্ণ কিংবা হ থাকলে ওই বিসর্গ স্থানে র্ হয়।
উদাহরণ-
অন্ত:+গত =অন্তর্গত
অন্তঃ+ঘাত =অন্তর্ঘাত
অন্তঃ+নিহিত =অন্তর্নিহিত
প্রাতঃ +ভ্রমণ =প্রাতর্ভ্রমণ
পুনঃ +যাত্রা =পুনর্যাত্রা
পুনঃ+বিবেচনা =পুনর্বিবেচনা
সূত্র ৮ :
নিঃ, আবিঃ, দুঃ, চতুঃ ও বহিঃ শব্দের পর ক, খ, প, ফ থাকলে বিসর্গের স্থানে ষ হয়।
উদাহরণ-
নিঃ+কাম= নিষ্কাম
নিঃ+কর = নিষ্কর
নিঃ+ফল = নিষ্ফল
দুঃ+কর = দুষ্কর
আবিঃ+কার =আবিষ্কার
বহিঃ+কার=বহিষ্কার
দুঃ+প্রাপ্য = দুষ্প্রাপ্য
দুঃ+পাচ্য =দুষ্পাচ্য
চতুঃ+কোণ =চতুষ্কোণ
নিঃ+পাপ = নিষ্পাপ
দুঃ+কৃতি = দুষ্কৃতি
সূত্র ৯ :
বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে নমঃ, তিরঃ, পুরঃ , মনঃ, শ্রেয়ঃ ইত্যাদি শব্দের বিসর্গ স্থানে স্ হয়।
উদাহরণ-
পুরঃ+কার = পুরস্কার
নমঃ+কার = নমস্কার
মনঃ+কামনা = মনস্কামনা
বাচঃ+পতি = বাচস্পতি
তিরঃ+কার = তিরস্কার
শ্রেয়ঃ +কর=শ্রেয়স্কর
তেজঃ+কর=তেজস্কর
ভাঃ+কর = ভাস্কর
সূত্র ১০ :
অ, ই এবং উ -এর পরবর্তী বিসর্গ স্থানে র্ হলে এবং তারপর র থাকলে সেই র লোপ হয় এবং পূর্ববর্তী স্বর দীর্ঘ হয়।
উদাহরণ-
নিঃ+রব =নীরব
নিঃ+রস =নীরস
নিঃ+রোগ = নীরোগ
নিঃ+রক্ত =নীরক্ত
নিঃ+রন্ধ্র =নীরন্ধ্র
চক্ষুঃ+রোগ =চক্ষূরোগ
স্বঃ+রাজ্য =স্বারাজ্য
বিসর্গের অক্ষুণ্ণতা :
বিসর্গের পর ক, খ, প, ফ, ষ থাকলে বহু ক্ষেত্রে বিসর্গ অক্ষুণ্ণ থাকে।
উদাহরণ-
মনঃ+ক্ষুণ্ণ = মনঃক্ষুণ্ণ
একইরকমভাবে- প্রাতঃকাল, মনঃকষ্ট, মনঃসাধ, মনঃপূত, নিঃশঙ্ক, নিঃশেষ, স্বতঃসিদ্ধ, অন্তঃপুর, স্রোতঃপথ ইত্যাদি।
স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি
অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো।
অনেক সমস্যার সমাধান করতে পেরেছি।
This is shit
জেনে উপকৃত হলাম। একটি বিষয়ে যদিও প্রশ্ন রয়ে গেলো। বর্গীয় বর্ণ যেমন জ থাকলে কি হবে। অন্তঃ+ জাল এটি কোন নিয়মে হবে। সংস্কৃতে yo উচ্চারণ হয় কি জ এর তাই এটা জানতে পারলে সুবিধা হতো।
জানি না