বৈষ্ণব পদাবলি বা বৈষ্ণব পদাবলী বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বের রসভাষ্য নামে খ্যাত এক শ্রেণীর ধর্মসঙ্গীত সংগ্রহ। বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যর সূচনা ঘটে চর্তুদশ শতকে বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস-এর সময়ে তবে ষোড়শ শতকে এই সাহিত্যের বিকাশ হয়। বৈষ্ণব পদাবলীর প্রধান অবলম্বন রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা।
বৈষ্ণব পদাবলীর তত্ত্ব :
শ্রীকৃষ্ণ হলেন সৎ-চিৎ-আনন্দের মূর্তিমান বিগ্রহ।রাধা তাঁরই প্রকাশাত্মিকা শক্তি।শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী অংশ সঞ্জাত রাধা সৃষ্টি হয়েছেন তাঁরই লীলাসুখানুভবের জন্য।শ্রীরাধা আয়ান বধূ।তাই শ্রীকৃষ্ণের সাথে তাঁর প্রেম অসামাজিক, পরকীয়া।জীবও তেমনই তত্ত্বের দিক থেকে শ্রীকৃষ্ণের স্বকীয় হলেও রূপ-রস-গন্ধযুক্ত জগতের সঙ্গে সে এমনই নিবিড়ভাবে আবদ্ধ যে সে তার স্বকীয়তা ভুলে যায়।সেই ভুল ভাঙলে জীব ভগবানের ডাকে সাড়া দেয়, তখন ঘটে তার পরকীয়া অভিসার।এভাবেই তৈরী হয়েছে বৈষ্ণব পদাবলীর তত্ত্ব।
বৈষ্ণব পদাবলী বিভিন্ন পর্যায় :
■পূর্বরাগ
শ্রীরূপ গোস্বামী তাঁর ‘উজ্জ্বলনীলমণি’তে শৃঙ্গারকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন।
ক)বিপ্রলম্ভ
খ) সম্ভোগ
আবার বিপ্রলম্ভকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- পূর্বরাগ, মান, প্রেমবৈচিও, ও প্রবাস।
শ্রীরূপ গোস্বামী পূর্বরাগের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন—
প্রকৃত মিলনের আগে নায়ক নায়িকার পারস্পরিক দর্শন প্রভৃতি থেকে জাত মিলনেচ্ছাময় রতি উপযুক্ত সঞ্চারীভাব ও অনুভাবের দ্বারা পুষ্ট হয়ে প্রকাশ পেলে তাকে পূর্বরাগ বলে।
■ অনুরাগ
যে রাগ নিত্য নব রূপে সর্বদা অনুভূত প্রিয়জনকেও নতুনভাবে অনুভব করিয়ে প্রতি মুহূর্তেই প্রেমকে নবীনতা দান করে তাকেই অনুরাগ বলে।
শ্রীরূপ গোস্বামী তাঁর ‘উজ্জ্বল নীলমণি’ গ্রন্থে অনুরাগের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন —
অনুরাগের ফলে প্রিয়স্বাদ বাসনার তৃপ্তি হয়না কখনো আর প্রীতিও পরিণতি পায়না। অনুরাগের লক্ষণ চারটি।
ক)পরস্পরবশীভাব
খ) প্রেমবৈচিত্ত
গ) অপ্রাণীতেও জন্মলাভের উৎকট লালসা
ঘ) বিরহেও কৃষ্ণ অনুভব বা বিপ্রলম্ভে বিস্ফুর্তি।
■ অভিসার
অভিসার শব্দের অর্থ সংকেত স্থানে গমন। আগে উদ্দিষ্ট স্থানে যাওয়া বোঝাতে শব্দটি ব্যবহৃত হত। ক্রমশ এটি প্রেমিক প্রেমিকার মিলনের উদ্দেশ্যে পরস্পরের অভিমুখে যাত্রাকেই বোঝাতে থাকে।
দুর্বার দারুণ মদন-বহ্নিতে উওপ্তা, যে নায়িকা আকুল মনে নির্ভয়ে প্রিয়র সাথে মিলিত হওয়ার জন্য যাত্রা করেন তিনিই অভিসারিকা।
পীতাম্বর দাস “রসমঞ্জরী”তে আট ধরনের অভিসারের কথা বলেছেন।
সেই অভিসার হয় পুন আট প্রকার।
জ্যোৎস্নী, তামসী, বর্ষা, দিবা-অভিসার।।
কুজ্ঝটিকা, তীর্থযাত্রা, উন্মত্তা, সঞ্চরা।
গীত পদ্য রসশাস্ত্রে সর্ব্বজনোৎকরা।।
আসলে অভিসারের এই সময় বৈচিত্র্যই বুঝিয়ে দেয় অভিসারের কোনও দিন-ক্ষণ নেই। প্রাণের আবেগ অসময়কেও সময় করে তোলে। বৈষ্ণব পদাবলীতেও শ্রেষ্ঠ অভিসার- বিষয়ক বেশিরভাগ পদই বর্ষণমুখর রাতে রাধার তিমিরাভিসারের বর্ণনা।
অভিসার পর্যায়ের বিশেষত্ব হল প্রকৃতি এখানে রাধাকৃষ্ণের প্রেমে বা রাধাকৃষ্ণের মিলনের পথে প্রতিকূল ভূমিকা গ্রহণ করেছে। আর সেই প্রতিকূলতার কষ্টিপাথরে যাচাই হয়েছে রাধার ‘নিকষিতহেম’ তুল্য কৃষ্ণপ্রেম। এই রাধা বিঘ্নবিজয়িনী, অধ্যাত্মপথযাত্রিণী।
■ প্রেম বৈচিত্ত্য ও আক্ষেপানুরাগ
প্রিয়স্য সন্নিকর্ষোহনপি প্রেমোৎকর্ষস্বভাবতঃ।
যা বিশ্লেষধিয়ার্তিস্তৎ প্রেমবৈচিত্ত্যমুচ্যতে।।
প্রেমোৎকর্ষহেতু প্রিয়তমের নিকটে অবস্থান করেও বিচ্ছেদের ভয় থেকে যে আর্তি তাকে প্রেমবৈচিত্ত্য বলে। বৈচিত্ত্য শব্দের অর্থ চিত্তের অন্যথা ভাব। গোপী প্রেমে বিশেষ করে মহাভাবময় রাধাপ্রেমে এই ভাবের প্রকাশ বিশেষভাবে হয়ে থাকে।
দীনবন্ধু দাস তাঁর ‘সংকীর্তনামৃতে’ প্রেমবৈচিত্তের যে আটটি বিভাগ করেছেন তা হল— রূপানুরাগ, উল্লাস অনুরাগ, পাঁচ ধরনের আক্ষেপানুরাগ ও রসোদগার। পাঁচ ধরনের আক্ষেপানুরাগ হল কৃষ্ণের প্রতি, মুরলীর প্রতি, নিজের প্রতি, সখীগণের প্রতি, ও দূতির প্রতি আক্ষেপ।
আক্ষেপানুরাগে শ্রীমতি রাধার সর্বদা বিরহ অবস্থার প্রকাশ। প্রায় অকারণ বিরহ কাতরতা , কৃষ্ণ মথুরায় না গেলেও স্বল্পকালীন বিচ্ছেদের অসহনীয় অবস্থায় আক্ষেপই এই পর্যায়ের পদের বৈশিষ্ট। আক্ষেপানুরাগ প্রেমবৈচিত্ত্যেরই অংশ। প্রেমবৈচিত্ত্যে রাধাকৃষ্ণ ঘনিষ্ঠ মিলনের মধ্যেও বিরহ কাতরতা অনুভব করেন। আর আক্ষেপানুরাগে স্থায়ী দুঃখকাতরতা লক্ষ করা যায়। এই দুঃখ যেহেতু রাধার অনুভবের ব্যাপার তাই এর শেষও নেই। প্রকৃতপক্ষে আক্ষেপানুরাগের মধ্যেই মহাভাবস্বরূপিণী রাধার সমাজ সংস্কার, নিজের অদৃষ্ট, কৃষ্ণের দেওয়া দুঃখ, এমনকি নিজের কাছ থেকে পাওয়া দুঃখের পূর্ণ পরিচয় লাভ করা যায়।
■ মাথুর
‘ মাথুর’ বিরহ পর্যায়ের একটি অবস্থা। পূর্বে মিলিত যুবক যুবতীর কেউ যদি দেশান্তরে গমন করেন তখনই বিরহ সম্ভব হয়। এই অবস্থাকে বলে প্রবাস। ‘উজ্জ্বল নীলমণি’তে শ্রীরূপ গোস্বামী বলেছেন—
প্রবাস-বিপ্রলম্ভ নিকট প্রবাস ও দূর প্রবাস ভেদে দুরকমের। কালিয়দমনে, গোচারণে নন্দমোক্ষণে, কার্যানুরোধে, স্থানান্তরগমনে এবং রাসের অন্তর্ধানে— এই পাঁচ প্রকার নিকট প্রবাস হয়।
দূর প্রবাস তিন প্রকার।– ভাবী, ভবন্ ও ভূত বা মথুরা প্রবাস।
ভাবী- বিরহে হঠাৎ বিরহ ঘনিয়ে আসছে বলে মনে হয়। যেমন একটি রথ এসেছে দেখে আশঙ্কা হয়, কৃষ্ণ বুঝি ওই রথে চড়ে চলে যাবেন।
কৃষ্ণ চলে যাচ্ছেন এই অবস্থা হল ভবন বিরহ।
কৃষ্ণ আসবেন কথা দিয়ে চলে গেছেন কিন্তু নির্দিষ্ট দিন উত্তীর্ণ হওয়ার পরও তিনি এলেন না। এই অবস্থা হল ভূত প্রবাস। এই অবস্থায় নায়িকার যে দশ দশা হয় শ্রীরূপ গোস্বামী তার বিভিন্ন নাম দিয়েছেন— চিন্তা, জাগরণ, উদ্বেগ, তানব বা কৃশতা, মলিনাঙ্গতা, প্রলাপ, ব্যাধি, উন্মাদ, মোহ ও মৃত্যু।
প্রবাসের আরও একরকম বিভাজন হয়।– বুদ্ধি পূর্বক ও অবুদ্ধি পূর্বক।
বৈষ্ণব পদাবলীর কবি :
বিদ্যাপতি:
পদাবলী বলতে আমরা যা বুঝি তার প্রথম ব্যবহার জয়দেবের গীতগোবিন্দে। প্রাকচৈতন্য যুগের বৈষ্ণব পদ সাহিত্যের দুজন বিখ্যাত পদকর্তা হলেন বিদ্যাপতি ও চন্ডীদাস। ব্রজবুলি ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি বিদ্যাপতি।
জন্মমৃত্যু : – বিদ্যাপতি ১৩৭০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে জন্মগ্রহণ করেন।সম্ভবত ১৪৬০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে পরলোক গমন করেন। ড. বিমানবিহারী মজুমদারের মতে, বিদ্যাপতি সম্ভবত ১৩৮০-১৪৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন।
জন্মস্থান : – বিহারের দ্বারভাঙ্গা জেলার মধুবনী পরগণার অন্তর্গত বিসফী গ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতা :– গনপতি ঠাকুর।
কৌলিক উপাধি :– ঠক্কুর, বংলায় ঠাকুর।
উপাসক – শৈব। কারও কারও মতে তিনি পঞ্চোপাসক (শিব, বিষ্ণু, দুর্গা, সূর্য, গনেশ) ছিলেন।
উপাধি : – মিথিলার কবি বিদ্যাপতিএকাধিক উপাধিতে ভূষিত।
১। মৈথিল কোকিল (রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়)
২। কবি সার্বভৌম (শঙ্করীপ্রসাদ বসু)
৩। অভিনব জয়দেব (শিবসিংহ)
৪। খেলন কবি (‘কীর্তিলতা’ কাব্যে কবি নিজেকে বলেছেন)
🔵 বিদ্যাপতির পদ প্রথম আবিষ্কার করেন জর্জ গ্রীয়ার্সন।
🔵 পাশ্চাত্য কবি চসারের সঙ্গে বিদ্যাপতির তুলনা করা হয়।
🔵 রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় ১৯৭৫ সালে ‘বঙ্গদর্শন পত্রিকা’য় বিদ্যাপতিকে ‘মিথিলার কবি’ প্রথম প্রমাণ করেন বিদ্যাপতি রচনায়।
🔵 কবি বিদ্যাপতি ‘কামেশ্বর’ রাজবংশের সভাকবি ছিলেন এবং তিনি কামেশ্বর বংশের কীর্তিসিংহ থেকে ভৈরবসিংহ প্রায় ৬ জন রাজা এবং ১ জন রানীর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন।
🔵 বিদ্যাপতি মাথুর, নিবেদন, প্রার্থনা এবং ভাবানুরাগ পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কবি।
🔵 কবি বিদ্যাপতির শ্রেষ্ঠ ভাবশিষ্য ছিলেন – গোবিন্দদাস।
🔵 মহাপ্রভু চৈতন্যদেব বিদ্যাপতির পদ আস্বাদন করতেন। অদ্বৈতাচার্য বিদ্যাপতির পদ পাঠ করে মহাপ্রভু চৈতন্যদেবকে অভ্যর্থনা করেছিলেন।
🔵 কৃষ্ণদাস কবিরাজের ‘শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত’ –এ কবি বিদ্যাপতির উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও ‘ক্ষণদাগীতচিন্তামনি’, ‘পদামৃতসমুদ্র’, ‘পদকল্পতরু’ প্রভৃতি পদসংগ্রহ গ্রন্থে বিদ্যাপতির বহু পদ ঠাঁই পেয়েছে।
🔵 দেব সিংহের অনুরোধে কবি বিদ্যাপতি কাব্য রচনা শুরু করেন।
🔵 শিবসিংহের রাজ সভায় থাকাকালীন বিদ্যাপতি তাঁর অধিকাংশ পদাবলী রচনা করেন।
🔵 বিদ্যাপতি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছিলেন জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যের দ্বারা। “গীতগোবিন্দ” কাব্যের ভাষা, ভাব, ছন্দ বিদ্যাপতি তাঁর পদগুলিতে যেমন আত্মীকরণ করেছেন ঠিক তেমনি তাঁর পদে সুললিত পদমাধুর্য এবং ধ্বনি ঝংকারও শোনা যায় তাঁর পদগুলিতে। তাই কবি বিদ্যাপতিকে ‘অভিনব জয়দেব’ আখ্যায় ভূষিত করা হয়।
🔵 ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকায় প্রকাশিত রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় –এর ‘বিদ্যাপতি’ প্রবন্ধ টি বাংলা সাহিত্যে প্রথম গবেষণামূলক প্রবন্ধ। এবং এই প্রবন্ধে রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় প্রথম প্রমাণ করেন ‘বিদ্যাপতি বাঙালী কবি নন’।
🔵 বিদ্যাপতি অবহট্ট ভাষায় – ‘কীর্তিলতা’ এবং ‘কীর্তিপতাকা’ গ্রন্থ দুটি রচনা করেন, বৈষ্ণব পদগুলি রচনা করেন মৈথিলী ভাষায়।
🔵 বিদ্যাপতি রচিত সংস্কৃতে স্মৃতিশাস্ত্র বিষয়ক ২ টি গ্রন্থ – ‘বিভাগসার’ এবং ‘দানবাক্যাবলী’।
🔵 জগবন্ধু ভদ্র ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাপতির পদাবলী সংকলন ‘মহাজন পদাবলী’ প্রকাশ করেন।
🔵 ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে সারদাচরণ মিত্র বিদ্যাপতির পদাবলী প্রকাশ করেন ।
🔵 বিদ্যাপতির সংস্কৃত ভাষায় লেখা ২ টি নাটক – ‘গোরক্ষবিজয়’ এবং ‘মণিমঞ্জরী’।
🔵 বিদ্যাপতি রচিত হর-পার্বতী বিষয়ক পদগুলি ‘মহেশবাণী’ নামে প্রচারিত ছিল।
বিদ্যাপতির গ্রন্থসমূহ :
১। ভূ-পরিক্রমা
রচনাকাল : (আনুমানিক- ১৪০০ খ্রিঃ)
পৃষ্ঠপোষক রাজা :দেবসিংহ
ভাষা : সংস্কৃত
বিষয় : ভৌগোলিক বিবরণ। এটি ভূগোল বিষয়ক বই
২। কীর্তিলতা
রচনাকাল : ১৪০২ থেকে ১৪০৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রচিত।
পৃষ্ঠপোষক রাজা : কীর্তিসিংহ
ভাষা : অবহটঠ
বিষয় : এই গ্রন্থে রাজা কীর্তিসিংহের বীরত্বের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।চম্পু জাতীয় কাব্য (গদ্য ও পদ্য মিশ্রিত)
এই গ্রন্থে কবি নিজেকে ‘খেলন কবি’ বা ‘খেলুড়ে কবি’ বলেছেন।
৩। কীর্তিপতাকা
রচনাকাল : আনুমানিক- ১৪০০ খ্রিঃ
পৃষ্ঠপোষক রাজা :শিবসিংহ
ভাষা :অবহটঠ
বিষয় : তুর্কি অত্যাচারের কাহিনি
৪। পুরুষ পরীক্ষা
রচনাকাল : ১৪১০ থেকে ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গ্রন্থটি রচনা করেন।
পৃষ্ঠপোষক রাজা : শিবসিংহ
ভাষা : সংস্কৃত
বিষয় : মণীষাও শিল্পকৃতির সমন্বয় রূপ কথাসাহিত্য
৫। দানবাক্যাবলী
রচনাকাল : ১৪৪০-১৪৬০ খ্রিঃ
পৃষ্ঠপোষক রাজা : নরসিংহ ও ধীরমতি দেবী
ভাষা :
বিষয় : পাণ্ডিত্যবিচার সমন্বিত স্মৃতিগ্রন্থ
৬। লিখনবলী
রচনাকাল :১৪১৮ খ্রিস্টাব্দ
পৃষ্ঠপোষক রাজা :পুরাদিত্য
ভাষা : সংস্কৃত
বিষয় : সংস্কৃত আলংকারিক বিষয়ক গ্রন্থ।
৭। শৈবসর্বস্বহার
রচনাকাল :
পৃষ্ঠপোষক রাজা :পদ্মিনী ও বিশ্বাস দেবী
ভাষা : সংস্কৃত
বিষয় : এটি উপসনা বিষয়ক গ্রন্থ।
৮। দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী
রচনাকাল : ১৪৪০-৬০ খ্রিঃ
পৃষ্ঠপোষক রাজা :ভৈরব সিংহ
ভাষা : সংস্কৃত
বিষয় : দুর্গাপূজার পদ্ধতি ও স্মৃতিশাস্ত্র বিষয়ক বিচার
৮। গঙ্গাবাক্যাবলী
রচনাকাল : ১৪৩০-৪০ খ্রিঃ
পৃষ্ঠপোষক রাজা : পদ্মসিংহ ও বিশ্বাস দেবী
ভাষা : সংস্কৃত
বিষয় :পৌরাণিক হিন্দুর পূজা ও সাধন পদ্ধতি
১০। বিভাগসার : আত্মজীবনীমূলক গ্ৰন্থ
কবি বিদ্যাপতি সম্পর্কে মন্তব্য : –
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
“বিদ্যাপতি সুখের কবি”।
বিদ্যাপতির চিত্রিত রাধা সম্পর্কে বলেছেন-
“বিদ্যাপতির রাধা নবীনা, নবস্ফুটা”।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
“দূরগামিনী বেগবতী তরঙ্গসঙ্কুলা নদী”।
“বিদ্যাপতির কবিতা স্বর্ণহার এবং চন্ডীদাসের কবিতা রুদ্রাক্ষমালা”।
শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
বিদ্যাপতির পদ বিশ্লেষণ করে সমালোচক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্যাপতিকে “Cosmic Imagination” –এর অধিকারী বলেছেন।
আচার্য দীনেশ চন্দ্র
আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন তাঁর “বঙ্গভাষা ও সাহিত্য” গ্রন্থে বিদ্যাপতি সম্পর্কে বলেছেন –
১। “বিদ্যাপতি ও জয়দেব” (প্রবন্ধ) – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
২। “চন্ডীদাস ও বিদ্যাপতি” (প্রবন্ধ) – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
৩। “বিদ্যাপতি গোষ্ঠী” – সুকুমার সেন।
৪। “বিদ্যাপতি বিচার” – সতীশচন্দ্র রায়।
৫। “কবি বিদ্যাপতি” – তারাপদ মুখোপাধ্যায়
জ্ঞানদাস :
জ্ঞানদাস ছিলেন চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য। যে সিঁড়ি বেয়ে বৈষ্ণব পদসাহিত্যের শ্রেষ্ঠত্বের আসন চণ্ডীদাস দখল করেছিলেন,— ভাব ও ভাষায় জ্ঞানদাস তাঁরই পথ অনুসরণ করেছিলেন। অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায় “যখন জ্ঞানদাস কৃত্রিম কবি সংস্কারের চশমা আর ব্রজবুলির সাজ সজ্জা ত্যাগ করিয়া বাঙালি সুরে রাধাকৃষ্ণের সুখ দুঃখের কথা শুনাইয়াছেন, তখনই তিনি পাঠকের মন লুঠ করিয়া লইয়াছেন, তখনই তিনি চণ্ডীদাসের যথার্থ উত্তর সাধক হইয়াছেন।” অন্যান্য পদকারদের মতো জ্ঞানদাস বাল্যলীলা, দানখণ্ড, নৌকাবিলাস, ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পদরচনা করলেও তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পেয়েছে মূলতঃ রসোগারের পদরচনায়।
জন্ম : ১৫৩০
মৃত্যু : ১৫৭৫
জন্মস্থান :
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কাঁদড়া গ্রামে।
🔵 গোবিন্দ দাস, বলরাম দাসের সঙ্গে জ্ঞানদাসও খেতুরীর মহোৎসবে উপস্থিত ছিলেন।
🔵 জ্ঞানদাসকে চণ্ডীদাসের ‘ভাবশিষ্য’ বলা হয়।
🔵 চণ্ডীদাস ‘রসপদ্মে অলি’ একথা বলেছেন – জ্ঞানদাস।
🔵 জ্ঞানদাস আক্ষেপানুরাগ পর্যায়ের পদ রচনায় শ্রেষ্ঠ ।
🔵 ‘পদ কল্পতরু’তে জ্ঞানদাসের ভূমিকায় পাওয়া পদের সংখ্যা ১৮৬টি ।
🔵 শ্রী সুকুমার ভট্টাচার্য কর্তৃক আবিষ্কৃত ‘যশোদার বাৎসল্য’ নামে পুঁথিটি জ্ঞানদাসের ভনিতায় ২০টি পদ স্থান পেয়েছে।
জ্ঞানদাস একজন উৎকৃষ্ট পদাকার ছিলেন। তাঁর কিছু স্মরনীয় পদ আছে। যেমন, ‘রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর’ কিংবা ‘সুখের লাগিয়ে এ ঘর বাঁধিনু’ ইত্যাদি। এই সব পদ বৈষ্ণব সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। পদাবলীর গুণ ও মান বৃদ্ধিতে জ্ঞানদাসের একটি বিশিষ্ট ভূমিকা আছে। ষোল শতক পদাবলীর স্বর্ণযুগ। জ্ঞানদাস এই স্বর্ণযুগের কবি। ভক্তের অনুভূতিকে কবিতায় প্রকাশ করার অপূর্ব প্রতিভা তাঁর মধ্যে ছিল।
শব্দব্যবহার ও ভাষাভঙ্গি একই রকম বলে জ্ঞানদাসকে চন্ডীদাসের অনুসারী বলা হয়। অকৃত্রিম সহজ রচনারীতির দিক থেকে চন্ডীদাসের সঙ্গে তাঁর মিল অবশ্যই আছে। কিন্তু জ্ঞানদাস একজন সতন্ত্র কবি। আধুনিক কালের গীতিকবিতার বৈশিষ্ট তাঁর পদে পাওয়া যাবে।
জ্ঞানদাসের নামে প্রায় শ’দুয়েক পদ চালু আছে। ব্রজবুলিতেও তিনি অনেক পদ রচনা করেছেন। তবে তাঁর বাংলা পদগুলো ব্রজবুলির পদের তুলনায় অনেক ভালো। জ্ঞানদাসের একটি বিখ্যাত পদ নিম্নরূপ:
জ্ঞানদাস সঙ্গীত বিষয়েও একজন বিশেষজ্ঞ। একালে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল যেমন নিজেদের লেখার গানে সুর দিয়েছেন, সেকালে জ্ঞানদাসও একই কাজ করেছেন। সম্ভবত এ ক্ষেত্রে জ্ঞানদাস বাংলা সাহিত্যে প্রথম ব্যক্তি, যিনি গান লিখে সুর দিয়েছেন। কীর্তন গানেও তাঁর দক্ষতা ছিল বলা হয়। কীর্তনের নতুন ঢঙ তিনি তৈরি করেছিলেন।
জ্ঞানদাসের কিছু পদ ও তার পর্যায়
(১) রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর (পূর্বরাগ) (২) আলো মুঞি জান না (পূর্বরাগ) (৩) দেইখ্যা আইলাম তার (পূর্বরাগ) (৪) তুমি কি জান সই কাহ্নুর পিরিতি (পূর্বরাগ) (৫) পুলক ঢাকিতে করি কত পরকার (পূর্বরাগ) (৬) কানু অনুরাগে হৃদয় ভেল কাতর (অভিসার) (৭) মেঘ যামিনী অতি ঘন আন্ধিয়ার (অভিসার) (৮) শ্যাম অভিসারে চলু বিনোদিনী রাধা (অভিসার) (৯) সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু (আক্ষেপানুরাগ) (১০) বঁধু তোমার গরবে গরবিনী আমি (নিবেদন)
✿ প্রশ্নোত্তরে বৈষ্ণব পদাবলী :
➺ মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ – বৈষ্ণব পদাবলী।
➺ এ অমর কবিতাবলী সৃষ্টি হয় – রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা অবলম্বনে।
➺ পদাবলী সাহিত্যের আদি বাঙালি কবি কাকে ধরা হয়? >জয়দেব।
➺ বৈষ্ণব পদাবলী বৈষ্ণব সমাজে পরিচিত – মহাজন পদাবলী নামে।
৩৬.বৈষ্ণব সাহিত্যে আট রকমের অভিসার লক্ষ্য করা যায়,যথা-জ্যোৎস্নাভিসার,তামসাভিসার, বর্ষাভিসার,দিবাভিসার,কুজ্ঝটিকাভিসার,তীর্থযাত্রাভিসার,উন্মত্তাভিসার,অসমঞ্জভিসার।
৩৭.মধুর রসকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়-সাধারণী, সমঞ্জস্য,সমর্থা।
৩৮.কবি কর্ণপুর পূর্বরাগের দর্শনজাত অনুরাগ তিন রকম হতে পারে বলে মনে করেন।যথা-সাক্ষাৎদর্শন,চিত্রপটে দর্শন,স্বপ্নে দর্শন।
৩৯.কবি কর্ণপুর পূর্বরাগের শ্রবণজাত অনুরাগ পাঁচ রকম হতে পারে বলে মনে করেন।যথা-বন্দীমুখে শ্রবণ, দূতী মুখে শ্রবণ, সখী মুখে শ্রবণ, গুণিজন দের মুখে শ্রবণ, বংশীধ্বনি শ্রবণ।
৪০.শ্রীচৈতন্যের অন্যতম প্রধান পার্শ্বচর ছিলেন নিত্যানন্দ।
৪১.বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন বিদ্যাপতির কবিতা ‘স্বর্ণহার’এবং চণ্ডীদাসের কবিতা ‘রুদ্রাক্ষমালা’।
৪২.রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিদ্যাপতিকে ‘সুখের কবি’ এবং চণ্ডীদাসকে ‘দুঃখের কবি’ বলেছেন।
৪৩.মহাপ্রভুর লীলার প্রত্যক্ষদ্রষ্টা ছিলেন বাদুদেব ঘোষ।
৪৪.জ্ঞান দাসের ভণিতায় ৪০০টি পদ পাওয়া গেছে।
৪৫.রূপ গোস্বামী তাঁর ‘উজ্জ্বলনীলমণি’গ্রন্থে কৃষ্ণ প্রেমিকাদের দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন।যথা-স্বকীয়া,পরকীয়া।
৪৬.ড.সুকুমার সেন বৈষ্ণব পদাবলীর চারটি বিভাগ করেছেন, যথা-গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদাবলী, ভজন পদাবলী, রাগাত্মিকা পদাবলী, রাধাকৃষ্ণ পদাবলী।
৪৭.গৌড়ীয় বৈষ্ণবগন শ্রীরাধাকে কৃষ্ণের ‘হ্লাদিনী শক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন।
৪৮.বৈষ্ণব সাহিত্যে পঞ্চরস হল-শান্ত,দাস্য,সখ্য,বাৎসল্য, মধুর।
৪৯.বলরাম দাস হলেন বাৎসল্য রসের শ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব পদকর্তা।
৫০.পদাবলীর চণ্ডীদাস ‘চণ্ডীদাস’ ছাড়াও ‘দ্বিজচণ্ডীদাস’ ভণিতায় পদ লিখেছেন।
৫১.বিদ্যাপতি অনেক পদে ‘কবিরঞ্জন’ ভণিতা ব্যবহার করেছেন।
মানব মনের অনুভূতির পর্যায় অনুভব করতে রাগ একটি মাপকাঠি বা বাটখারা যেমন সুন্দর বা সুন্দরীর বর্ণনা শুনে অনুভূতি প্রকাশ- 1)সই কেবা শুনাইল শ্যামনাম দর্শনে- অনুভূতি- যেমন, রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর,প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর
মানব মনের অনুভূতির পর্যায় অনুভব করতে রাগ একটি মাপকাঠি বা বাটখারা
যেমন সুন্দর বা সুন্দরীর বর্ণনা শুনে অনুভূতি প্রকাশ-
1)সই কেবা শুনাইল শ্যামনাম
দর্শনে- অনুভূতি- যেমন, রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর,প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর
খুব ভালো কিন্তু কবি বল্লভ সম্পর্কে কিছু অংশ দেওয়া থাকলে ভালো হতো
বৈষ্ণব রস শাস্ত্রে সম্ভোগ শৃঙ্গার গুলি ক্রম অনুসারে নাম গুলি কি কি?