ভাষা থেকে মোট ১০ নম্বরের প্রশ্ন আসে।
এম সি কিউ – ২×১=২
এস এ কিউ- ৩×১=৩
রচনাধর্মী – ১টি -৫×১=৫
১। সঠিক বিকল্পটি নির্বাচন করো :
১। একই পদ পাশাপাশি দুবার বসার প্রক্রিয়াকে বলে —
২। গঠন অনুসারে বাক্য সাধারনত –-
৩। ‘থিসরাস’ শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ হল —- 🔵রত্নাগার
৪। ‘প্রত্যয় দু প্রকার — কৃৎ প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয়। ভুজ+অন = ভোজন এটি কৃৎ প্রত্যয়ের উদাহরণ। চালাক+ই এটি তদ্ধিত প্রত্যয়।
৫। বিলাতি>বিলিতি ধ্বনি পরিবর্তনের কোন নিয়ম কাজ করেছে ––
৬। ‘Style is the man himself’ কথাটি বলেছেন—- আরি বুফো
৭। তুলনামুলক ভাষাবিজ্ঞানের সূত্রপাত করেছিলেন—- স্যার উইলিয়াম জোনস
৮। সংস্কৃত ভাষায় লিখিত থিসরাস হল—- অমর কোষ
৯। বাংলা মৌলিক স্বরধ্বনির সংখ্যা- ৭ টি (অ, আ, ই, উ,এ, ও, অ্যা)
১০। স্বাধীন রূপমূলের উদাহরন হল- — মানুষ, ফুল, গন্ধ, দেশ, ছেলে, তামা ইত্যাদি।
১১। বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞান আলোচনা করে—-সমকালীন ভাষার গঠন রীতি নিয়ে
১২। ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানের কাজ— বিবর্তনের ফলে ভাষার পরিবর্তন নিয়ে অনুসন্ধান।
১৩। ঐ,‘ঔ’ বর্ণদুটি –যৌগিক স্বর, আ –কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি।
১৪। ‘অন্ন’ শব্দটির আদি অর্থ ‘খাদ্য’ পরিবর্তিত অর্থ ‘ভাত’- এটি শব্দার্থ পরিবর্তনের কোন নিয়ম কাজ করেছে-
১৫। কালি শব্দের আদি অর্থ কালো রঙের তরল বস্তু। কিন্তু বর্তমান অর্থ যেকোনো রঙের কালি। এটি শব্দার্থ পরিবর্তনের কোন ধারা — শব্দার্থের প্রসার।
১৬। এরোপ্লেন>প্লেন, মাইক্রোফোন>মাইক, টেলিফোন>ফোন, ছোটোকাকা>ছোটকা— সংক্ষেপিত পদ বা ক্লিপিংস।
১৭। “যে লঙ্কায় যায় সে রাবন হয়”-এটি কোন বাক্যের উদাহরন – জটিল
১৮। ব্যাখ্যামূলক সমাসের উদাহরণ — মহাকবি, গায়েহলুদ, গোলাপলাল, মিশ-কালো। বর্ণনামূলক সমাস– চন্দ্রমুখী, ক্ষুরধার, হাতাহাতি।
১৯। রূপমূল বলতে বোঝায় – ভাষার ক্ষুদ্রতম অর্থপূর্ণ একক
২০। রুপিম বা রূপমূল মূলত – দুই প্রকার । স্বাধীন রূপমূল ও পরাধীন রূপমূল।
২১। সমাজভাষাবিজ্ঞানের মূলভাগ ক’টি? —-তিনটি। যথা –
২২। বাগধ্বনি প্রধানত দু-ধরণের– বিভাজ্য ধ্বনি ও অবিভাজ্য ধ্বনি।
২৪। VIP,BBC,DM শব্দগুলো হল –– মুণ্ডমাল শব্দ
২৫। ‘ঝি’ শব্দের আদি অর্থ ‘মেয়ে’ বর্তমান অর্থ ‘কাজের মেয়ে’। এটি কোন ধরণের পরিবর্তন- —অর্থের অবনতি
২৬। ‘Dictionarius’ শব্দটি প্রথম ব্যাবহার করেন- — জন গারল্যান্ড
২৭।খণ্ড ধ্বনির অপর নাম — বিভাজ্য ধ্বনি।
২৯। অনেক সময় ‘পদের আদিতে বসা তদ্ধিত প্রত্যয়’ বলা হয়—- উপসর্গকে
৩০। ভাষাজ্ঞানকে নিয়ম মেনে একটি ভাষাকৌমের প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা মানুষ যা প্রকাশ করে তাকে বলে- ল্যাড।
৩১। বাক্যের ‘অব্যবহিত উপাদান’ বিশ্লেষণের কথা প্রথম বলেন — লেওনার্দ ব্লুমফিল্ড।
৩২। ভাষারীতিকে ‘চিন্তার পোষাক’ বা ‘the dress of thought’ কে বলেছেন ?
৩৩। ভাষা ও সমাজের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয় হল— সমাজভাষাবিজ্ঞান
৩৪। ‘লাঙ’ এবং ‘পারোল’ তত্ত্বের প্রবক্তা — স্যোসুর।
৩৫। ভাষার সঙ্গে মস্তিষ্কের সম্পর্ক এবং ভাষার ব্যবহারগত সমস্যা আলোচনা করে—-স্নায়ু ভাষাবিজ্ঞান।
৩৬। Phonology শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হল—-ধ্বনিতত্ত্ব।
৩৭। মিশ্ররূপমূল– গঙ্গাফড়িং, মৃত্যুদণ্ড, শাসনকাল।
৩৮। জটিল রূপমূল — জাতীয়তাবাদ, অসহযোগিতা, কুসংস্কারগ্রস্ত।
৩৯। ‘র’ ধ্বনিটি হল—কম্পিত। ড়, ঢ়– তাড়িত। ল –পার্শ্বিক। ঊষ্মধ্বনি–শ্, ষ্, স্, হ্।নাসিক্যধ্বনি — ম্,ন্,ঙ্
৪০। ‘পদগুছের সংগঠন’ তত্ত্বের প্রবক্তা- নোয়াম চমস্কি।
৪১। পাশাপাশি উচ্চারিত দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশকে বলে—গুছধ্বনি।
৪২। প্রত্যেকটি শব্দের শুধুমাত্র প্রথম ধ্বনিগুলির সমাবেশ যখন একটি শব্দ তৈরি হয়, তখন তাকে বলে—মুণ্ডমাল শব্দ। যেমন -VIP.
৪৩। ন্যূনতম শব্দজোড়ের শব্দদুটি হওয়া চাই — একটি ভাষার।
৪৪। ভারতে অভিধান রচনার সূত্রপাত — যাস্কের নিরুক্ত থেকে।
৪৫। অর্থের পার্থক্য সৃষ্টিকারী ক্ষুদ্রতম ধ্বনিগত একক — স্বনিম।
৪৬। বাংলার যে পদের কোনো রূপবৈচিত্র্য নেই তা হল — অব্যয়।
৪৭। ভাষার শব্দ নির্মাণের শাস্ত্রকে বলে — রূপতত্ত্ব।
৪৮। বাক্যে সুরের ওঠাপড়াকে বলে — সুরতরঙ্গ।
৪৯। আলাপ, বিলাপ, প্রলাপ, সংলাপ — এই শব্দগুলির লাপ অংশটি হল — ক্যানবেরি রূপমূল।
৫০। ‘কুমোর’, ‘গাং’, ‘পরশু’— শব্দার্থের প্রসার। ‘মৃগ’, ‘প্রদীপ’— শব্দার্থের সংকোচ। ‘কলম’, ‘গবেষণা’ — শব্দার্থের রূপান্তর।
ভাষাবিজ্ঞান ও তার বিভিন্ন শাখা :
উত্তর- ভাষাবিজ্ঞানের বহুল প্রচলিত শাখা হলো তিনটি– তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান ,ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান এবং এবং বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞান।
২) তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান কাকে বলে ?
উত্তর – ভাষাবিজ্ঞানের যে আলোচনায় সমগোত্রজ ভাষাগুলির তুলনা করা হয় এবং তাদের মূল ভাষাকে পুনর্নির্মাণ করা হয় তাকে তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান বলে।
৩)কে, কবে তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের আলোচনার সূত্রপাত করেন?
উত্তর – স্যার উইলিয়াম জোনস্ ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান আলোচনার সূত্রপাত করেন।
৪) ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান কাকে বলে ?
উত্তর – যে ভাষাবিজ্ঞানে ভাষার বিবর্তন এবং ধ্বনি পরিবর্তনের কারণ বিশ্লেষিত হয় তাকে ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান বলে।
৫) বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞান কাকে বলে ?
উত্তর – যে ভাষাবিজ্ঞানে সমকালীন প্রচলিত ভাষার গঠনরীতি বিশ্লেষণ করা হয় তাকে বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞান বলে।
৬) বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানের সূত্রপাত হয় কোথায় এবং কখন?
উত্তর – বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইউরোপে এবং পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণামূলক ভাষাবিজ্ঞান ভাষাবিজ্ঞান আলোচনার সূত্রপাত হয়েছিল।
৭) সমাজ ভাষাবিজ্ঞান কাকে বলে ? এর মূল ভাগ কয়টি ও কী কী?
উত্তর – ভাষা কীভাবে সমাজে কাজ করে এবং সমাজ কীভাবে ভাষার ওপর প্রভাব বিস্তার করে ভাষা বিজ্ঞানের যে শাখায় এই নিয়ে চর্চা করে তাকে সমাজভাষাবিজ্ঞান বলে ।
সমাজভাষাবিজ্ঞানের মূল ভাগ তিনটি —
ক) বর্ণনাত্মক সমাজভাষাবিজ্ঞান
খ) পরিবর্তমান সমাজভাষাবিজ্ঞান
গ) প্রয়োগমূলক সমাজবিজ্ঞান
৮)চমস্কি মস্তিষ্ককে কি বলেছেন?
উত্তর – চমস্কি মস্তিষ্ককে বলেছেন “ভাষা শেখার ব্যবস্থা” (Language Acquisition System, সংক্ষেপে L. A. S)।
৯) স্যোসুর কাকে লাঙ্ (Langue) বলেছেন?
উত্তর – ভাষার নানা উপাদান এবং তাদের পরস্পরের সম্পর্কের মূল সংবিধি, ভাষার বিভিন্ন উপাদান এবং উপাদানগুলির পারস্পরিক সম্পর্কের জালবিন্যাসকেই স্যোসুর লাঙ্ (Langue) বলেছেন।
১০) পারোল বলতে কী বোঝ?
উত্তর – ভাষার লাঙ্-সংবিধানগুলিকে মান্য করেও ভাষা ব্যবহারের উপাদান নির্বাচন ও প্রতিস্থাপনের মধ্যে দিয়ে নিজস্ব বিন্যাসে স্পষ্ট ও একই বাচনক্রিয়াকে পারোল বলে।
১১) শৈলী বিজ্ঞান কাকে বলে ?
উত্তর – কোনো লেখকের লেখার শৈলী বিশ্লেষণকেই শৈলীবিজ্ঞান বলে।
১২) ‘Dictionary’ কথাটির উল্লেখ প্রথম কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর – ‘Dictionary’ কথাটির উল্লেখ প্রথম পাওয়া যায় 1538 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত থমাস এলিয়টের ল্যাটিন-ইংরেজি অভিধানে।
১৩) নিরুক্ত কী ?
উত্তর – নিরুক্ত হল যাস্ক প্রণীত বৈদিক অভিধান। এই গ্রন্থ থেকেই ভারতে অভিধান রচনার সূত্রপাত।
১৪) একটি ইতিহাসভিত্তিক অভিধানের উদাহরণ দাও?
উত্তর – “The Shorter Oxford English Dictionary” হল একটি ইতিহাসভিত্তিক অভিধান।
১৫) সর্বজনীন ব্যাকরণ কাকে বলে ?
উত্তর – চমস্কির মতে মানব মস্তিষ্কে প্রি-প্রোগ্রামড অবস্থায় আছে এমন এক ব্যাকরণ যাকে সর্বজনীন ব্যাকরণ বলে।
১৬) ল্যাড কাকে বলে?
উত্তর – নোয়াম চমস্কির মতে, মানুষের মাথায় যে ‘ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাকুইজিশন ডিভাইস’ থাকে, যা মানুষের ভাষা বলার সহজাত ক্ষমতাকে উসকে দেয়, সেটাই সংক্ষেপে ল্যাড।
দ্বিতীয় অধ্যায় : ধ্বনিতত্ত্ব
১) মুখের মান্য বাংলায় স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি সংখ্যা কত ?
উত্তর – মুখের মান্য বাংলার স্বরধ্বনি সাতটি এবং ব্যঞ্জনধ্বনি ৩০ টি।
২) মৌলিক স্বরধ্বনি কাকে বলে ?বাংলায় মৌলিক স্বরধ্বনি কয়টি?
উত্তর- যেসব স্বরধ্বনিকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাদেরকে মৌলিক স্বরধ্বনি বলে।
বাংলায় মৌলিক স্বরধ্বনির সংখ্যা ৭ টি। যথা – অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা
৩) ধ্বনিমূল কাকে বলে ?
উত্তর – বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানে উচ্চারণ বৈচিত্রসহ প্রত্যেকটি মূলধ্বনিকে ধ্বনিমূল বলে।
৪) সহধ্বনি কাকে বলে ?
উত্তর – কোনো নির্দিষ্ট ধ্বনির উচ্চারণ স্থান তার অবস্থান অনুযায়ী বদলে যায় । প্রতিবেশ অনুযায়ী ধ্বনির উচ্চারণভেদকে সহধ্বনি বলে।
৫) ন্যূনতম শব্দজোড় বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – দুটি ভিন্ন শব্দের মধ্যে উচ্চারণগত ন্যূনতম (একটি মাত্র) পার্থক্য থাকলে, সেই শব্দজোড়কে বলা হয় ন্যূনতম শব্দজোড়। যেমন :- ‘আম’ ও ‘জাম’।
৬) গুচ্ছধ্বনি কাকে বলে ?
উত্তর – পাশাপাশি উচ্চারিত দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশকে গুচ্ছধ্বনি বলে । যেমন উত্তর , এখানে পাশাপাশি দুটি [ত্] উচ্চারিত হয়ে একটি গুচ্ছধ্বনি তৈরি করেছে।
৭) বাংলা ভাষায় দুই ব্যঞ্জনে এবং তিন ব্যঞ্জনে তৈরি গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা কয়টি?
উত্তর – বাংলা ভাষায় দুই ব্যঞ্জনে তৈরি গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা ২০০ এর বেশি এবং তিন ব্যঞ্জনের সমাবেশে ৮টি।
৮) বাংলা ভাষায় চার ব্যঞ্জনের গুচ্ছধ্বনি দিয়ে তৈরি একটি শব্দের উদাহরণ দাও?
উত্তর — বাংলা ভাষায় চার ব্যঞ্জনের গুচ্ছধ্বনি দিয়ে তৈরি একটি শব্দ হল – ‘সংস্কৃত’।
৯) যুক্ত ধ্বনি কাকে বলে ?
উত্তর – যে ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশগুলি শব্দ বা দলের আদিতে উচ্চারিত হয় সেগুলিকে যুক্তধ্বনি বলে। যেমন – প্রথম, তৃতীয়, স্কুল ইত্যাদি।
১০) অবিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে ?
উত্তর – যে ধ্বনি উপাদানগুলিকে কৃত্রিমভাবে খন্ড করা যায়না সেগুলিকে অবিভাজ্য ধ্বনি বলে । কয়েকটি অবিভাজ্য ধ্বনি হলো – শ্বাসাঘাত, দৈর্ঘ্য ,যতি,সুরতরঙ্গ।
১১) শ্বাসাঘাত কী ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – শ্বাসাঘাত হল একাধিক দলযুক্ত শব্দের কোনো একটি দলকে অপেক্ষাকৃত বেশি জোর দিয়ে উচ্চারণ করা। শ্বাসাঘাতের উপস্থিতি পুরো দল জুড়ে, কোনো নির্দিষ্ট ধ্বনিতে নয়। বাংলায় সাধারণত শব্দের প্রথম দলে শ্বাসাঘাতের উপস্থিতি দেখা যায়।
যেমন :- শব্দ (শব্+দ) ; এখানে শব্ -এই শব্দটিতে শ্বাসাঘাত পড়েছে।
১২) দৈর্ঘ্য কী ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – দৈর্ঘ্য বলতে সাধারণত বোঝায়া দলের উচ্চারণে স্বরধ্বনির দৈর্ঘ্য। বাংলায় বহুদল শব্দের স্বরধ্বনির তুলনায় একদল শব্দের স্বরধ্বনির দৈর্ঘ্য বেশি। যেমন :- ‘আমার’ শব্দের ‘আ’ অপেক্ষা ‘আম’ শব্দের ‘আ’-এর দৈর্ঘ্য বেশি।
১৩) যতি কাকে বলে?
উত্তর – আমাদের বাকপ্রবাহের ধারায় দুটি স্বনিমের মধ্যবর্তী বিরতিকে বা শব্দসীমায় অপেক্ষাকৃত লম্বা ছেদকে, বলা হয় যতি।
১৪) সুর তরঙ্গ কাকে বলে ?
উত্তর- বাক্যে সুরের ওঠাপড়াকে সুরতরঙ্গ বলে । যেমন বিবৃতিবাক্য- ‘মিঠু কাল স্কুল যাবে’ এবং প্রশ্নবাক্য ‘মিঠু কাল স্কুল যাবে ?’ – এই দুটি বাক্যের উচ্চারণে সুরের ওঠাপড়া দু’রকমের।
তৃতীয় অধ্যায় : রূপতত্ত্ব
১) রূপিম বা রূপমূল কাকে বলে? ইহা কয়প্রকার ও কী কী?
উত্তর – রূপিম বা রূপমূল হল এক বা একাধিক স্বনিমের সমন্বয়ে গঠিত এমন অর্থপূর্ণ ক্ষুদ্রতম একক, যা পৌনঃপুনিক এবং যার অংশবিশেষের সঙ্গে অন্য শব্দের ধ্বনিগত ও অর্থগত কোনো সাদৃশ্য নেই।
ইহা দুই প্রকার। যথা – (ক) মুক্ত বা স্বাধীন রূপমূল এবং (খ) বদ্ধ বা পরাধীন রূপমূল।
২) স্বাধীন বা মুক্ত রূপমূল কাকে বলে ?
উত্তর- যে রূপমূল স্বাধীনভাবে অন্য কোনো ধ্বনি সমষ্টির সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে যুক্ত না হয়ে শব্দে ব্যবহৃত হয় তাকে স্বাধীন রূপমূল বলে । যেমন – মানুষ, ফুল, দেশ, ছেলে ইত্যাদি।
৩) পরাধীন রূপমূল কাকে বলে ?
যে রূপমূল স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত না হয়ে অন্য কোনো ধ্বনি সমষ্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দে ব্যবহৃত হয় তাকে পরাধীন রূপমূল বলে। যেমনঃ ‘মানুষকে’- এখানে কে পরাধীন রূপমূল।
৪) রূপ (রূপমূল) ও দলের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর :- রূপমূল হল শব্দের অর্থযুক্ত ন্যূনতম অংশ। অন্যদিকে, দল হল বাকযন্ত্রের একবারের চেষ্টায় উচ্চারিত পদের ন্যূনতম অংশ বিশেষ।
৫) সমন্বয়ী রূপমূল কী? উদাহরণ দাও।
উত্তর – যে পরাধীন রূপমূল শব্দকে পদে পরিণত করে এবং তার পর অন্য কোনো রূপমূল তার সঙ্গে বসে না, তাকে বলে সমন্বয়ী রূপমূল। যেমন – বিভক্তি।
৬) নিষ্পাদক রূপমূল কী?
উত্তর – যে রূপমূল শব্দকে নতুন শব্দে পরিণত করে, তাকে বলে “নিষ্পাদক রূপমূল”। এতে পদ-পরিবর্তন ঘটতে পারে, না-ও পারে। যেমন :- প্রত্যয়, উপসর্গ।
৭) মিশ্র রূপমূল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – দুটি মুক্ত বা স্বাধীন রূপমূলের সমন্বয়ে যখন একটি পদ তৈরি হয় এবং সেই পদের অর্থ শব্দে উপস্থিত দুটি রূপের অর্থের থেকে আলাদা ভাবে প্রকাশিত হয়, সেই রূপের সমবায়কে বলা হয় মিশ্র রূপমূল। যেমন :- গঙ্গাফড়িং , শাসনকাল , গাংচিল।
৮) জটিল রূপমূল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – দুইয়ের বেশি রূপমূলের সমবায়কে, বলা হয় জটিল রূপমূল। যেমন :- জাতীয়তাবাদ , অসহযোগিতা, বহুবর্ণপাথর।
৯) জোড়কলম শব্দ বা ‘পোর্টম্যানটু’ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – জোড়কলম শব্দ হচ্ছে একাধিক শব্দের বিভিন্ন রূপমূল জুড়ে তৈরি এক নতুন রূপমূলের শব্দ। যেমন :- ধোঁয়া + কুয়াশা = ধোঁয়াশা । বিরাট + অনুষ্কা=বিরুষ্কা।
১০) ফাঁকা রূপ ও শূন্য রূপ কাকে বলে? উভয়ক্ষেত্রে উদাহরণ দাও।
উত্তর – এক ধরণের রূপ আছে যাদের কোনো মানে নেই। বাস্তবে তাদের কোনো অস্তিত্বও পাওয়া যায় না, এদের বলে ফাঁকা রূপমূল। যেমন :- “ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমি”।
আর এক ধরণের রূপ আছে যেগুলিকে চোখে দেখা না গেলেও বোঝা যায় আছে, এদের বলে শূন্য রূপমূল। যেমন :- “শূন্য বিভক্তি”।
১১) স্বনিম এবং রূপিমের দুটি পার্থক্য লেখ?
উত্তর – (ক) স্বনিম ভাষার ক্ষুদ্রতম একক, কিন্তু রূপিম (বা রূপমূল) তা না-ও হতে পারে।
(খ) স্বনিমের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই, কিন্তু রূপিমের নিজস্ব একটা অর্থ থাকবেই।
১২) পদদ্বৈত কাকে বলে ?
উত্তর – একই পদ পাশাপাশি দুবার বসার প্রক্রিয়াকে পদদ্বৈত বলে। যেমন – সকাল-সকাল, চুপি- চুপি ,কাঁদতে- কাঁদতে।
১৩) ক্লিপিংস বা সংক্ষেপিত পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – বাংলা ভাষায় কখনো কখনো মূল শব্দের চেহারার পরিবর্তন ঘটে এবং শব্দটি আকারে ছোট হয়ে যায়, অথচ শব্দটির অর্থগত কোনো পরিবর্তন ঘটে না। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ক্লিপিংস বা সংক্ষেপিত পদ। যেমন :- “টেলিফোন > ফোন”, “এরোপ্লেন > প্লেন”, “মাইক্রোফোন > মাইক”।
১৪) বিকল্পন কী ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – বিকল্পন পদ গঠনের এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে দুটি পদের পারস্পরিক সম্পর্কের ধ্বনিতাত্ত্বিক চেহারার রূপ স্বাভাবিক নিয়মের আদলে তৈরি হয় না, বরং ব্যতিক্রমী রূপ চোখে পড়ে। যেমন :- ইংরেজিতে ক্রিয়া পদের অতীতকাল চিহ্নিত করার নির্দিষ্ট সময় হল শেষে ‘ed’ যোগ করা। কিন্তু ‘go’ ক্রিয়া পদটির বেলায় ‘goed’ হয় না, হয় ‘went’। তাই বলা যায় এখানে “বিকল্পন” ঘটেছে।
১৫) মুণ্ডমাল শব্দ বা অ্যাক্রোনিম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – কোনো শব্দগুচ্ছের প্রত্যেক শব্দ থেকে প্রথম ধ্বনিগুলি নিয়ে একটি শব্দ তৈরি হলে, তাকে বলে মুণ্ডমাল শব্দ (বা অ্যাক্রোনিম)। যেমন :- VIP (Very Important Person) , ATM (Automated Trailer Machine) , পিপুফিশু (পিঠ পুড়ছে, ফিরে শুই)।
১৬) “নব্যশব্দ প্রয়োগ প্রক্রিয়া” কী ? উদাহরণ দাও।
উত্তর – দৈনন্দিন ভাষা-ব্যবহারের তালিকায় নতুন শব্দ ঢোকার প্রক্রিয়াকে বলে “নব্যশব্দ প্রয়োগ প্রক্রিয়া”। যেমন :- “ফেসবুক”, “সেলফি”, “অনলাইন” প্রভৃতি শব্দ শব্দভাণ্ডারে প্রবেশ করেছে।
১৭) “বর্গান্তর” কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – কোনো বাক্যের একটি পদ অন্য বাক্যে অন্য পদ হিসেবে ব্যবহৃত হলে, তাকে বলে “বর্গান্তর”। যেমন :- “নির্মল” পদটি বিশেষ্য এবং বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বা, “রামবাবু একজন ধনী ব্যক্তি” – এখানে “ধনী” শব্দটি বিশেষণ। কিন্তু যখন “ধনী মাত্রেই অহংকারী হয়” – তখন “ধনী” কিন্তু বিশেষ্য পদ।
১৮) “ক্র্যানবেরী রূপমূল” কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।
উত্তর –
ক্র্যানবেরী রূপমূল হল এমন এক ধরণের পরাধীন রূপমূল যার কোনো আভিধানিক অর্থ নেই এবং কোনো ব্যাকরণ সম্মত অর্থও থাকে না। অথচ একটি শব্দকে অন্য শব্দের থেকে পৃথক করতে পারে। যেমন :- “আলাপ”, ‘প্রলাপ”, “বিলাপ”, “সংলাপ” – এই শব্দগুলির “লাপ” অংশটি।১৯) লোকনিরুক্ত কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর – অপরিচিত শব্দ লোকমুখে পরিচিত শব্দের সাদ্যশ্যে ধ্বনি-পরিবর্তিত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি করলে, সেই ধ্বনি পরিবর্তনকে বলা হয় “লোকনিরুক্ত”। যেমন :- “আর্মেচেয়ার > আরামকেদারা”।
২০) ধ্বনিমূল এর অবস্থান বলতে কী বোঝো ?
উত্তর – শব্দের যে যে স্থানে ধ্বনিমূল উচ্চারিত হয় তাকেই বলে ধ্বনিমূলের অবস্থান।
চতুর্থ অধ্যায় : বাক্যতত্ত্ব
১) গঠন অনুযায়ী বাক্য কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তর – গঠন অনুযায়ী বাক্য ৩ প্রকার। যথা- সরল বাক্য, যৌগিক বাক্য এবং জটিল বাক্য।
২) সরল বাক্যে কয়টি উদ্দেশ্য এবং কয়টি বিধেয় থাকে?
উত্তর – সরল বাক্যে একটি উদ্দেশ্য এবং একটি বিধেয় থাকে।
৩) অব্যবহিত উপাদান কী? বাক্যের অব্যবহিত উপাদান বিশ্লেষণের কথা প্রথম কে বলেন ?
উত্তর – বাক্যে অবস্থিত ঠিক আগে বা ঠিক পরে যে পদ বা পদগুচ্ছ থাকে, তাকে বলে অব্যবহিত উপাদান।
লেওনার্দো ব্লুমফিল্ড।
৪) সঞ্জননী ব্যাকরণ কাকে বলে?
উত্তর – সমস্ত বাক্য কীভাবে সঞ্জাত হয়, তার সংবাদ যে ব্যাকরণ দেয়, তাকে বলা হয় সঞ্জননী ব্যাকরণ।
৫) সঞ্জননী ব্যাকরণ পরিভাষার আগে সংবর্তনী শব্দ জোড়া হয় কেন?
উত্তর – নোয়াম চমস্কি প্রবর্তিত গবেষণারীতিতে বাক্য সঞ্জননের জন্য সংবর্তনকেও কাজে লাগানো হয়, সে কথা জানাতে সঞ্জননী ব্যাকরণ-এর আগে সংবর্তনী কথাটা জোড়া হয়।
১। শব্দার্থ তত্ত্ব কাকে বলে ?
উত্তর : ভাষা বিজ্ঞানের যে শাখায় কোনো ভাষার শব্দার্থ পরিবর্তনের কারণ,প্রকৃতি, ধারা ইত্যাদি আলোচনা ও বিশ্লেষণ করা হয় তাকে শব্দার্থতত্ত্ব বলে।
উত্তর : শব্দার্থের বিশাল জগতকে সুশৃংখলভাবে বিন্যাস করার একটি নিদর্শন হলো থিসরাস।থিসরাস শব্দের অর্থ রত্নাগার । সংস্কৃত ভাষায় লেখা অমরকোষ এর উদাহরণ।
উত্তর : সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে যখন কোনো শব্দের আগের অর্থের সঙ্গে সেই অর্থ ছাড়াও নতুন অর্থ বা অর্থসমষ্টি যোগ হয়, তাকে অর্থের প্রসার বলে ।
যেমন– ‘কালি’ শব্দের আদি অর্থ ছিল ‘কালো রঙের তরল বস্তু’ কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে লাল নীল সবুজ নানা রঙের কালিকে বোঝানো হয়।
উত্তর : কোনো কোনো সময় একটি শব্দের আদি অর্থের তুলনায় পরিবর্তিত অর্থের ব্যাপকতা যদি কমে যায়, তবে তাকে শব্দার্থের সংকোচ বলে । যেমন– ‘অন্ন’ শব্দের আদি অর্থ ‘খাদ্য’ কিন্তু বর্তমান অর্থ ভাত।
উত্তর : শব্দের ক্রমাগত সংকোচ ও প্রসারের ফলে মূল অর্থের সঙ্গে প্রচলিত অর্থের কোনো মিল থাকে না তখন তাকে শব্দার্থের রূপান্তর বলে।
যেমন- ‘গবেষণা’ শব্দের আদি অর্থ ছিল ‘গোরু খোঁজা’ কিন্তু পরিবর্তিত অর্থ ‘কোনো’ বিষয়ে নিয়মানুগ বিশ্লেষণ’।
উত্তর : ঐতিহাসিক শব্দার্থ তত্ত্বের মূল আলোচ্য বিষয় হল সময়ের সাথে ভাষায় অর্থের পরিবর্তনের আলোচনা।
ভাষাবিজ্ঞান ও তার বিভিন্ন শাখা
এই ভাষাবিজ্ঞানের সূত্রপাত করেছিলেন স্যার উইলিয়াম জোন্স। তিনি সংস্কৃত গ্রিক লাতিন ফারসি ভাষার মধ্যে প্রচুর মিল খুঁজে পেয়েছিলেন । তিনি বলেছিলেন এই সমস্ত ভাষাগুলি কোন একটি মূল ভাষা থেকে এসেছে । এই সমস্ত ভাষার উৎপত্তির মূলে যে প্রধান ভাষা কল্পনা করেছেন তা হল ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা । তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান চর্চার থেকে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞান চর্চার সূত্রপাত । তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান সমগোত্রজ ভাষাগুলির মধ্যে তুলনা করে এবং তাদের উৎস ভাষাকে পুননির্মাণ করে।
ভাষাবিজ্ঞানের এই শাখায় কোনো একটি ভাষার বিভিন্ন কালের বিবর্তন ধারা বিশ্লেষণ করা হয় । অর্থাৎ একটি ভাষার প্রাচীন সাহিত্য থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত লিখিত রচনা বৈশিষ্ট্যের ক্রমবিকাশ আলোচনাই ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান এর আলোচ্য বিষয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাষার যে বিবর্তন হয় এবং বিবর্তনের ফলে যে যে পরিবর্তন ভাষা সংগঠনে দেখা যায় তা নির্দেশ করা ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান এর কাজ ।
বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞান প্রচলিত ভাষার গঠনরীতি নেই বিচার-বিশ্লেষণ করে ।এই শাখার সূত্রপাত হয়েছিল ইউরোপে । নিদর্শনহীন ভাষার আলোচনার ক্ষেত্রে এই শাখার গুরুত্ব অপরিসীম । এই শাখার মতে কোনো ভাষার আলোচনার চারটি বিষয় রয়েছে – ধ্বনিবিজ্ঞান ও ধ্বনিতত্ত্ব ,রূপতত্ত্ব, বাক্যতত্ত্ব এবং শব্দার্থতত্ত্ব।
ধ্বনিতত্ত্ব
উত্তর : অবিভাজ্য ধ্বনি :
যে ধ্বনি উপাদানগুলিকে কৃত্রিমভাবে খন্ড করা যায়না সেগুলিকে অবিভাজ্য ধ্বনি বলে । কয়েকটি অবিভাজ্য ধ্বনি হলো – শ্বাসাঘাত,দৈর্ঘ্য, যতি, সুরতরঙ্গ।
শ্বাসাঘাত
শ্বাসাঘাত হল একাধিক দলযুক্ত শব্দের কোনো একটি দলকে অপেক্ষাকৃত বেশি জোর দিয়ে উচ্চারণ করা। শ্বাসাঘাতের উপস্থিতি পুরো দল জুড়ে, কোনো নির্দিষ্ট ধ্বনিতে নয়। বাংলায় সাধারণত শব্দের প্রথম দলে শ্বাসাঘাতের উপস্থিতি দেখা যায়।
যেমন :- “শব্দ” (শব্+দ) ; এখানে “শব্”-এই শব্দটিতে শ্বাসাঘাত পড়েছে।
দৈর্ঘ্য
দৈর্ঘ্য বলতে সাধারণত বোঝায়া দলের উচ্চারণে স্বরধ্বনির দৈর্ঘ্য। বাংলায় বহুদল শব্দের স্বরধ্বনির তুলনায় একদল শব্দের স্বরধ্বনির দৈর্ঘ্য বেশি। যেমন :- “আমার” শব্দের “আ” অপেক্ষা “আম” শব্দের “আ”-এর দৈর্ঘ্য বেশি।
যতি
আমাদের বাকপ্রবাহের ধারায় দুটি স্বনিমের মধ্যবর্তী বিরতিকে বা শব্দসীমায় অপেক্ষাকৃত লম্বা ছেদকে, বলা হয় “যতি”।
সুরতরঙ্গ
বাক্যে সুরের ওঠাপড়াকে সুরতরঙ্গ বলে । যেমন বিবৃতিবাক্য- ‘মিঠু কাল স্কুল যাবে’ এবং প্রশ্নবাক্য ‘মিঠু কাল স্কুল যাবে ?’ – এই দুটি বাক্যের উচ্চারণে সুরের ওঠাপড়া দু’রকমের।
রূপতত্ত্ব
উত্তর :জোড়কলম শব্দ
জোড়কলম শব্দ হচ্ছে একাধিক শব্দের বিভিন্ন রূপমূল জুড়ে তৈরি এক নতুন রূপমূলের শব্দ। যেমন :- “ধোঁয়া + কুয়াশা = ধোঁয়াশা”। বিরাট + অনুষ্কা=বিরুষ্কা।
মুণ্ডমাল শব্দ :
শব্দগুচ্ছের প্রত্যেক শব্দ থেকে প্রথম ধ্বনিগুলি নিয়ে একটি শব্দ তৈরি হলে, তাকে বলে “মুণ্ডমাল শব্দ” (বা অ্যাক্রোনিস)। যেমন :- “VIP” (Very Important Person) , “ATM” (Automated Trailer Machine) , “পিপুফিশু” (পিঠ পুড়ছে, ফিরে শুই)।
রূপমূল সম্পর্কিত ভাষাবিজ্ঞানের বিভিন্ন ধারণা থেকে নিন্মলিখিতভাবে রূপমূলের সংজ্ঞা দেওয়া যেতে পারেে-
এক বাা একাধিক ধ্বনির সমন্বয়ে গঠিত ক্ষুদ্রতম অর্থপূর্ণ পৌনঃপুনিক বাক্যিক একক হল রূপমূল।
সাধারণভাবে রূপিম বা রুপমূলকে দু’ভাগে ভাগ করা যায় । যথা – স্বাধীন রূপমূল ও পরাধীন রূপমূল।
যে রূপিম স্বাধীনভাবে অন্য কোন ধ্বনি সমষ্টির সঙ্গে যুক্ত না হয় শব্দে ব্যবহৃত হয় তাকে স্বাধীন রূপমূল বলে ।
উদাহরণ- ১. কুল মেয়েদের লোভনীয় ফল ।
২. সারদা মা সকলেরই মা
উপরের বাক্যটিতে ‘কুল’ ও ‘মা’ স্বাধীন রূপমূল। কারণ এগুলি অন্য কোনো ধ্বনির সঙ্গে যুক্ত না হয় স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহৃত হয়েছে।
যে রূপমূল স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত না হয়ে অন্য কোনো ধ্বনির সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দে ব্যবহৃত হয় তাকে পরাধীন রূপমূল বলে ।
উদাহরণ –
উপরের উদাহরণ দুটিতে মায়ের এবং ছেলেরা পদে এর এবং রা বিভক্তি হলো পরাধীন রূপমূল ।কারণ এরা অন্য কোনো ধ্বনির সঙ্গে যুক্ত না হয় স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হতে পারে না। গুলি, গুলো, কে , টা , ওয়ালা প্রভৃতি পরাধীন রূপমূল।
উত্তর :বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দ সমূহের বিপুল অংশ প্রত্যয়জাত শব্দ । প্রকৃতির সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হওয়ার ফলে এ শব্দগুলো গঠিত হয়। যে বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি ধাতু বা শব্দের পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাতে প্রত্যয় বলে।
ব্যবহারিক প্রয়োগের অবস্থান অনুযায়ী প্রত্যয় এর দুটি ভাগ। যথা – ১.কৃৎ প্রত্যয় বা ধাতু প্রত্যয় ২.তদ্ধিত প্রত্যয় বা শব্দ প্রত্যয় ।
কৃৎ প্রত্যয় :
ধাতুর উত্তরে যে প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলে ।
যেমন – কৃ (ধাতু) +অনীয় (প্রত্যয়) =করণীয়।
ভুজ + অন = ভোজন
তদ্ধিত প্রত্যয় :
শব্দের উত্তরে যে প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে।
যেমন – চালাক +ই =চালাকি
বাঁশি +ওয়ালা =বাঁশিওয়ালা
উত্তর : পরস্পর অর্থ সম্পর্কযুক্ত দুই বা ততোধিক পদকে এক পদে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। সমাস এর ফলে তৈরি পদকে সমস্ত পদ বলে। পদ গঠনের চরিত্রের ভিন্নতা অনুযায়ী সমাস তিন প্রকার। যথা- ১.দ্বন্দ্ব সমাস ২. ব্যাখ্যানমূলক সমাস ও ৩. বর্ণনামূলক সমাস।
দ্বন্দ্ব সমাস:
যে সমাসে পূর্বপদ ও উত্তরপদ সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং উভয় পদের অর্থই যেখানে প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
যেমন – বন ও জঙ্গল = বনজঙ্গল
দিন ও রাত্রি = দিনরাত্রি
ব্যাখ্যানমূলক সমাস :
এই সমাসের ক্ষেত্রে দুটি পদ যখন পাশাপাশি বসে তখন সাধারণত প্রথম পদটি দ্বিতীয় পদটিকে ব্যাখ্যা করে দেয় এবং দ্বিতীয় পদের অর্থ প্রধান হয় ।
যেমন – মহাকবি ,গায়ে হলুদ, পুরুষসিংহ প্রভৃতি ।
বর্ণনামূলক সমাস :
বর্ণনামূলক সমাসে পরস্পর পদগুলি যুক্ত হয়ে যে সমস্ত পদটির জন্ম দেয় তার অর্থ প্রধান রূপে প্রতীয়মান না হয়ে সমস্ত পদটির দ্বারা ভিন্ন একটি অর্থ প্রকাশ পায় । এর সমাসের আরেক নাম বহুব্রীহি সমাস।
যেমন- নীল কন্ঠ যার =নীলকন্ঠ
এখানে ‘নীল’ বা ‘কণ্ঠ’ এর অর্থ প্রাধান না হয়ে অন্য একটি অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে। নীলকন্ঠ হল এখানে শিব। চন্দ্রমুখী, ক্ষুরধার, হাতাহাতি -এই সমাসের উদাহরণ।
যে বাক্যেে একটি উদ্দেশ্য এবং একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে তাকে সরল বাক্য বলে।
যেমন – অঙ্কিতা কাল সকালে বহরমপুর যাবে। এখানে উদ্দেশ্য হল- ‘অঙ্কিতা’ এবং ‘কাল সকালে বহরমপুর যাবে’ হল বিধেয় । ‘যাবে’ সমাপিকা ক্রিয়া ।
দুই বা ততোধিক স্বাধীন বাক্য যদি সংযোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি বাক্য গঠন করে তবে তাকে যৌগিক বাক্য বলে।
যেমন – লোকটি দরিদ্র কিন্তু সৎ ।
এখানে দুটি স্বাধীন বাক্য ‘লোকটি দরিদ্র’ এবং ‘লোকটি সৎ’ কিন্তু অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে একটি বাক্য গঠন করেছে।
যে বাক্যে একটি প্রধান খণ্ড বাক্যের অধীন এক বা একাধিক অপ্রধান খণ্ড বাক্য থাকে তাকে যৌগিক বাক্য বলে ।
যেমন – আমি জানতাম যে তুমি আসবে।
এখানে ‘আমি জানতাম’ প্রথম খণ্ড বাক্য আর ‘তুমি আসবে’ অপ্রচলিত খণ্ড বাক্য।
উত্তর :
১১। শব্দার্থের উপাদানমূলক তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা করো। এই তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা লেখো।
উত্তর : সময়ের সাথে ভাষার প্রতিটি বিভাগ পরিবর্তিত হয়। শব্দার্থও এর বাইরে নেই। একই শব্দ সময়ের সাথে বিভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে। আবার একই অর্থ বিভিন্ন আলাদা শব্দের মাধ্যমে ব্যক্ত হতে পারে। এই পরিবর্তনগুলিকে তিনটি সাধারণ ভাগে ভাগ করা যায়। শব্দার্থের প্রসার, শব্দার্থের সংকোচ ও শব্দার্থের রূপান্তর।
শব্দার্থের প্রসার :
সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে যখন কোনো শব্দের আগের অর্থের সঙ্গে সেই অর্থ ছাড়াও নতুন অর্থ বা অর্থসমষ্টি যোগ হয়, তাকে অর্থের প্রসার বলে ।
যেমন– ‘কালি’ শব্দের আদি অর্থ ছিল ‘কালো রঙের তরল বস্তু’ কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে লাল নীল সবুজ নানা রঙের কালিকে বোঝানো হয়।
কোনো কোনো সময় একটি শব্দের আদি অর্থের তুলনায় পরিবর্তিত অর্থের ব্যাপকতা যদি কমে যায়, তবে তাকে শব্দার্থের সংকোচ বলে । যেমন– ‘অন্ন’ শব্দের আদি অর্থ ‘খাদ্য’ কিন্তু বর্তমান অর্থ ভাত।
শব্দের ক্রমাগত সংকোচ ও প্রসারের ফলে মূল অর্থের সঙ্গে প্রচলিত অর্থের কোনো মিল থাকে না তখন তাকে শব্দার্থের রূপান্তর বলে।
যেমন- ‘গবেষণা’ শব্দের আদি অর্থ ছিল ‘গোরু খোঁজা’ কিন্তু পরিবর্তিত অর্থ ‘কোনো’ বিষয়ে নিয়মানুগ বিশ্লেষণ’।
প্রেমের ছন্দ পড়ে খুব ভালো লাগলো ধন্যবাদ
ধন্যবাদ আপনাকে
Thanks you.It helps me a lot.
আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
দারুন
Thank you so much