মাধ্যমিক ভূগোল সিলেবাস বা পাঠ্যসূচি – Madhyamik Geography Syllabus
প্রাকৃতিক ভূগোল (Physical Geography)
◆ প্রথম অধ্যায় – বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ
◆ দ্বিতীয় অধ্যায় – বায়ুমণ্ডল
◆ তৃতীয় অধ্যায় – বারিমন্ডল
■ পরিবেশ ভূগোল (Environment Geography)
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
■ আঞ্চলিক ভূগোল (Regional Geography)◆ প্রথম অধ্যায় – ভারতের ভূ-প্রকৃতি
◆ দ্বিতীয় অধ্যায় – ভারতের নদনদী
◆ তৃতীয় অধ্যায় – ভারতের আবহাওয়া ও জলবায়ু
◆ চতুর্থ অধ্যায় – ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ
◆ পঞ্চম অধ্যায় – ভারতের জলসেচ ব্যবস্থা
◆ ষষ্ঠ অধ্যায় – ভারতের খনিজ সম্পদ
◆ সপ্তম অধ্যায় – ভারতের শিল্প
◆ অষ্টম অধ্যায় – ভারতের জনবণ্টন ও জনঘনত্ব
◆ নবম অধ্যায় – ভারতের নগর ও বন্দর
◆ দশম অধ্যায় – ভারতের প্রতিবেশী দেশসমূহ
■ উপগ্রহ চিত্র ও ভূ-বৈচিত্রসূচক মানচিত্র
মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ধরনঃ
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অনুযায়ী, মাধ্যমিক ভূগোলে মোট ছয়টি বিভাগ থেকে প্রশ্ন আসবে। প্রতিটি বিভাগের প্রশ্ন বিভাজন কেমন তা নীচে দেওয়া হলো-
◊বিভাগ-ক (বহুবিকল্পধর্মী প্রশ্ন):
এই বিভাগে মোট 14টি MCQ প্রশ্ন আসবে এবং প্রতিটি প্রশ্নের মান-1। এক্ষেত্রে কোনো বিকল্প প্রশ্ন থাকবে না।
◊বিভাগ-খ (অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন):
এই বিভাগে থাকবে দু’একটি শব্দের উত্তর, শূন্যস্থান পূরণ, শুদ্ধ-অশুদ্ধ নির্বাচন ও স্তম্ভ মেলানো। মোট 26টি প্রশ্ন থাকবে, করতে হবে 22 টি প্রশ্ন। প্রতিটি প্রশ্নের মান-1.
◊বিভাগ-গ (সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন):
এই বিভাগে মোট 12টি প্রশ্ন থাকবে এবং উত্তর দিতে হবে 6টি প্রশ্নের। প্রতিটি প্রশ্নের মান-2 এবং প্রতিক্ষেত্রে বিকল্প প্রশ্ন থাকবে। প্রাকৃতিক ভূগোলের অধ্যায় থেকে চারটি প্রশ্নের মধ্যে দুটি করতে হবে। বর্জ্য ব্যাবস্থাপনা অধ্যায় থেকে দুটির মধ্যে একটি, ভারতের ভূগোল থেকে চারটি প্রশ্নের মধ্যে দুটি করতে হবে এবং উপগ্রহ চিত্র অধ্যায় থেকে দুটি প্রশ্নের মধ্যে একটি করতে হবে।
◊বিভাগ-ঘ (সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন):
এই বিভাগে আটটি প্রশ্নের মধ্যে চারটির উত্তর করত হবে। প্রতিটি প্রশ্ন মান-3 । প্রাকৃতিক ভূগোল, বর্জ্য ব্যাবস্থাপনা, ভারতের ভূগোল এবং উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্রসূচক মানচিত্র অধ্যায় থেকে যথাক্রমে একটি করে প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নের একটি করে বিকল্প প্রশ্ন থাকবে।
◊বিভাগ-ঙ (দীর্ঘ উত্তরধর্মী প্রশ্ন):
এই বিভাগে মোট আটটি প্রশ্ন থাকবে এবং এর মধ্যে চারটি প্রশ্ন করতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নের মান-5 । প্রাকৃতিক ভূগোল থেকে চারটি প্রশ্নের মধ্যে দুটি এবং ভারতের ভূগোল থেকে চারটি প্রশ্নের মধ্যে দুটি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। এক্ষেত্রে বর্জ্য ব্যাবস্থাপনা এবং উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্রসূচক মানচিত্র অধ্যায় থেকে কোনো প্রশ্ন থাকবে না।
বিভাগ-চ (মানচিত্র চিহ্নিতকরণ):এই বিভাগে দশটি মানচিত্র উপযুক্ত প্রতীক ও নামসহ চিহ্নিতকরণ করতে হবে। প্রশ্নমান-1। ভারতের প্রাকৃতিক ভূগোল থেকে 5টি এবং ভারতের অর্থনৈতিক ভূগোল থেকে 5টি মানচিত্র চিহ্নিতকরণ থাকবে। এক্ষেত্রে কোনো বিকল্প থাকবে না।
বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ
✍বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ] : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. বায়ুপ্রবাহের দ্বারা সুক্ষ্ম বালিকণা বহুদুর বাহিত ও সঞ্চিত হয়ে যে ভুমিরূপ গঠন করে তাকে বলে—
[A] ড্রামলিন [B] সিফ [C] লােয়েস [D] বার্খান
উত্তরঃ [C] লােয়েস
2. পেডিমেন্ট সমভূমির মধ্যে অনুচ্চ পাহাড়গুলিকে বলে—
[A] স্কুপ পর্বত [B] ভঙ্গিল পর্বত [C] মােনাক [D] ইনসেলবার্জ
উত্তরঃ [D] ইনসেলবার্জ
3. আবহবিকারের ফলে ভূমিরূপের পরিবর্তন হয়—
[A] ধীরগতিতে। [B] দ্রুত গতিতে [C] A ও B উভয় গতিতে [D] কোনােটিই ঠিক নয়
উত্তরঃ [A] ধীরগতিতে।
4, উপকুল অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট জলমগ্ন উপত্যকাকে বলে—
[A] নিমজ্জিত উপত্যকা। [B] ঝুলন্ত উপত্যকা [C] সার্ক উপত্যকা [D] ফিয়র্ড উপত্যকা
উত্তরঃ [D] ফিয়র্ড উপত্যকা
5. একটি আদর্শ নদীর উদাহরণ হল-
[A] সিন্ধু [B] লুনী [C] তাপ্তী [D] নর্মদা
উত্তরঃ [A] সিন্ধু
6. ভূপৃষ্ঠস্থ চূর্ণবিচূর্ণ শিলাসমূহ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপসারিত হয়, তাকে বলে—
[A] বিচূর্ণীভবন [B] নগ্নীভবন [c] অঙ্গারযােজন [D] ক্ষয়ীভবন
উত্তরঃ [D] ক্ষয়ীভবন
7. মরু অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে সমান্তরালভাবে অবস্থিত কঠিন ও কোমল শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে ভুমিরূপ সৃষ্টি করে তাকে বলে—
[A] জুইগেন [B] গৌর [C] ইয়াদাং [D] মােনাক
উত্তরঃ [B]
৪. ওলটানাে নৌকোর মতাে ভূমিরূপকে বলা হয়—
[A] এসকার [B] ড্রামলিন [C] বােল্ডার ক্লে [D] বার্খান
উত্তর :ড্রামলিন
9. হিমবাহ থেকে নিঃসৃত জলস্রোতের মাধ্যমে হিমবাহ উপত্যকায় যে সমস্ত পলি সঞ্চিত হয়ে ভূমিরূপ গঠন করে তাকে বলে—
[A] ভ্যালি ট্রেন [B] মােনাক [C] বােল্ডার ক্লে [D] ড্রামলিন
উত্তরঃ [C] আর্দ্র অঞলে
10. নদী গঠিত প্লাবনভূমি দেখা যায়—
[A] মেরু অঞ্চলে [B] শুষ্ক অঞ্চলে [C] আর্দ্র অঞলে [D] কোনােটিই নয়
উত্তর :
11. কোনটি বহিজাত প্রক্রিয়া নয়— [A] আবহবিকার [B] পুঞ্জিত ক্ষয় [C] নদীর কাজ [D] ভূমিকম্প
[D] ভূমিকম্প
12. অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়—
[A] নদীর উচ্চ গতিতে [B] নদীর মধ্য গতিতে [C] নদীর নিম্নগতিতে [D] নদীর মধ্য ও নিম্নগতিতে
উত্তরঃ [D] নদীর মধ্য ও নিম্নগতিতে
13. হিমবাহ থেকে নিঃসৃত জলস্রোতের মাধ্যমে হিমবাহ উপত্যকায় যে সমস্ত পলি সঞ্চিত হয় তাকে বলে—
[A] ভ্যালি ট্রেন [B] বােল্ডার ক্লে [C] ড্রামলিন [D] পেডিমেন্ট
উত্তরঃ [A] ভ্যালি ট্রেন
14. গৌর ভূমিরূপ গঠিত হয়—
[A] নদীর স্রোতের দ্বারা [B] সমুদ্র তরঙ্গের দ্বারা। [c] হিমবাহের দ্বারা। [D] বায়ুর দ্বারা।
উত্তরঃ [D] বায়ুর দ্বারা।
15. প্রবাহমান বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরালভাবে গড়ে ওঠা বালিয়াড়িকে বলা হয়—
[A] অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি [B] ভ্রাম্যমান বালিয়াড়ি [C] তির্যক বালিয়াড়ি [D] কোনােটিই ঠিক নয়
উত্তরঃ [A] অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি
16. ভারতের একটি পিরামিড চূড়ার উদাহরণ হল-
[A] গৌরীশংকর শৃঙ্গ [B] কাকাবােরাজি শৃঙ্গ [C] নীলকণ্ঠ শৃঙ্গ [D] দোদাবেতা শৃঙ্গ
উত্তরঃ [C] নীলকণ্ঠ শৃঙ্গ
17. উচ্চ পাবর্ত্য ও উচ্চ অক্ষাংশে অধিক দেখা যায়-
[A] জলের কার্য [B] তুষারের কার্য [C] বায়ুর কার্য [D] তাপমাত্রার কার্য
উত্তরঃ [B] তুষারের কার্য
18. বন্যার সময় নদীর দুকুল প্লাবিত হয়ে নদীর তীরবর্তী নিম্নভূমিতে পলি, বালি, কাদা সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে বলে—
[A] উপকূলের সমভূমি [B] লােয়েশ সমভূমি [C] পলি-প্লাবন সমভূমি [D] ব-দ্বীপ সমভূমি
উত্তরঃ [C] পলি-প্লাবন সমভূমি
19. যান্ত্রিক আবহবিকার সর্বাধিক ঘটে—
[A] নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে [B] মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে [C] মরুভূমি অঞলে। [D] কোনােটিই ঠিক নয়।
উত্তরঃ [C] মরুভূমি অঞলে।
20. ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার সমভূমিটি একটি –
[A] ব-দ্বীপ সমভূমি। [B] প্লাবন সমভূমি। [C] লােয়েশ সমভূমি। [D] কোনােটিই ঠিক নয়
উত্তরঃ [B] প্লাবন সমভূমি।
21. পৃথিবীর বৃহত্তম উচ্চ মালভূমি হল—
[A] আরব মালভূমি। [B] পামির মালভূমি [C] তিব্বত মালভূমি [D] ছােটোনাগপুর মালভূমি
উত্তরঃ [C] তিব্বত মালভূমি
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. দুটি বা তার বেশি সার্ক পাশাপাশি গঠিত হলে দুটি সার্কের মধ্যবর্তী স্থান উঁচু হয়ে শিরার মতাে অবস্থান করলে তাকে বলে –
উত্তর : অ্যারেট।
2. রাজস্থানের চলন্ত বালিয়াড়িকে বলে __________________
উত্তর : ধ্রিয়ান।
3. বায়ুর কাজ প্রাধান্য লাভ করে ___________ অঞ্চলে।
উত্তর : মরু।
4. পেডিমেন্টের নীচে গঠিত লবণাক্ত জলের হ্রদকে বলে _______________
উত্তর : প্লায়া।
5. দুটি সি বালিয়াড়ির মাঝের অংশের নাম _______________
উত্তর : করিডোের।
6. ভূ-পৃষ্ঠের ওপরে সংঘটিত ভূমিরূপ প্রক্রিয়া হল ___________________ প্রক্রিয়া।
উত্তর : বহির্জাত।
বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাও
1. একটি বহিজাত প্রক্রিয়ার উদাহরণ দাও।
উত্তর : নদীর কাজ।
2. একটি লােয়েস সমভূমির উদাহরণ দাও।
উত্তর : উত্তর চিনের হােয়াংহাে নদী অববাহিকায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে লােয়েস সমভূমি গঠিত হয়েছে।
3. রাজস্থানের মরু অঞ্চলের চলমান বালিয়াড়িকে কী বলে?
উত্তর : রাজস্থানের মরু অঞ্চলের চলমান বালিয়াড়িকে প্রিয়ান বলে।
4. পৃথিবীর সৃদৃশ্য জলপ্রপাতটির নাম কী ?
উত্তর : পৃথিবীর সৃদৃশ্য জলপ্রপাতটির নাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নায়াগ্রা জলপ্রপাত।
5. প্রান্ত গ্রাবরেখা কাকে বলে?
উত্তর : হিমবাহবাহিত পাথর-নুড়ি, কাঁকর প্রভৃতি যখন হিমবাহের সামনে বা শেষপ্রান্তে সঞ্চিত হয়, তখন তাকে প্রান্ত গ্রাবরেখা বলে।
6. তির্যক বালিয়াড়ির আর এক নাম কী?
উত্তর : তির্যক বালিয়াড়ির আর এক নাম খান।
7. পৃথিবীর মরু খাতটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : পৃথিবীর বৃহত্তম মরুখাতটি শিরের কাতারায় অবস্থিত।
৪. হিমশৈল কী?
উত্তর : সমুদ্রে ভাসমান বিশালাকৃতি বরফের স্তুপকে বলে হিমশৈল। হিমশৈলের মাত্র 1/9 ভাগ জলের ওপরে ভেসে থাকে।
9. একটি লাভা গঠিত মালভূমির উদাহরণ দাও।
উত্তর : দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত মহারাষ্ট্রের লাভা মালভূমি বা ডেকানট্র্যাপ লাভা মালভূমির উদাহরণ।
10. দুটি পবর্তবেষ্টিত মালভূমির উদাহরণ দাও।
উত্তর : তিব্বতের মালভূমি এবং ইরাকের মালভূমি হল দুটি পর্বতবেষ্টিত মালভূমির উদাহরণ।
11. চুতিরেখা ও তিতল কী?
উত্তর : ভূত্বকে যে রেখা বরাবর চ্যুতি ঘটে, তাকে চ্যুতিরেখা এবং যে তলে চ্যুতি ঘটে, তাকে চুতিতল বলে।
12. দুটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরির উদাহরণ দাও।
উত্তর : দুটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরির উদাহরণ হল-(i) ইতালির ভিসুভিয়াস এবং (ii) ভারতের ব্যারেন।।
13. প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা’ কী?
উত্তর : প্রশান্ত মহাসাগরকে বলয়ের মতাে ঘিরে রয়েছে যে আগ্নেয়গিরি মণ্ডল, তাকেই ‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেঘলা’ বলে।
14. ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত কোনটি?
উত্তর : ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাতটি হল যােগ বা গেরসােপ্পা জলপ্রপাত। এর উচ্চতা 253 মিটার।
15. ক্যাটারাক্ট কী?
উত্তর : জলপ্রপাতের বিপুল পরিমাণে জল প্রবাহিত হলে তাকে ক্যাটারাক্ট বলে।
16. কোন শিলায় জীবাশ্ম দেখতে পাওয়া যায় ?
উত্তর : পাললিক শিলায় জীবাশ্ম দেখতে পাওয়া যায়।
17. কী কী প্রক্রিয়ায় শিলা রূপান্তরিত হয়?
উত্তর : (i) চাপ, (i) তাপ ও (ii) রাসায়নিক প্রক্রিয়ার প্রভাবে শিলা রূপান্তরিত হয়।
18. হর্নব্লেন্ড কী?
উত্তর : হর্নব্লেন্ড একটি রূপান্তরিত শিলা। আগ্নেয়শিলা অগাইট রূপান্তরিত হলে হর্নব্লেন্ড সৃষ্টি হয়।
19. জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট কী জাতীয় পর্বর্ত?
উত্তর : জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট একটি স্তুপ পর্বত।
20. গ্রাবেন কী?
উত্তর : যে গ্রস্থ উপত্যকার দু’পাশে স্তুপ পর্বৰ্ত থাকে, তাকে গ্রাবেন জাতীয় গ্রস্ত উপত্যকা বলে।
21. ক্ষয়জাত পর্তকে অবশিষ্ট পর্বত বলা হয় কেন?
উত্তর : মূল পর্বত বা মালভূমির অবশিষ্ট অংশ নিয়ে গঠিত হয় বলে ক্ষয়জাত পর্বতের অপর নাম অবশিষ্ট পর্বত।
22. পৃথিবীর বৃহত্তম মালভূমির নাম কী ?
উত্তর : পৃথিবীর বৃহত্তম মালভূমি হল তিব্বত মালভূমি।
23. একটি উন্নত ও একটি অবনত সমভূমির উদাহরণ দাও।
উত্তর : উন্নত সমভূমি—মেক্সিকো উপসাগরের তীরবর্তী উপসাগরীয় সমভূমি। অবনত সমভূমি—তুরানের নিম্নভূমি।
24. পৃথিবীর কোন অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার সবচেয়ে বেশি হয় ?
উত্তর : উয়-আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার সবচেয়ে বেশি হয়।
25. হিমবাহ সমভূমির উদাহরণ দাও।
উত্তর : উত্তর আমেরিকার প্রেইরি ভূমির উত্তরাংশ ও উত্তর ইউরােপের সমভূমিগুলি হিমবাহ সমভূমির প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
26. ভারতের সর্ববৃহৎ সঞ্জয়জাত সমভূমি কোনটি?
উত্তর : ভারতের সর্ববৃহৎ সঞ্চয়জাত সমভূমিটি হল—উত্তর-পূর্ব ভারতের সমভূমি। এর অন্য নাম সিন্ধু-ব্রম্মপুত্র-গঙ্গা সমভূমি।
27. ভারতের প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বত কোনটি?
উত্তর : ভারতের প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বতটি হল আরাবল্লি।
28. পৃথিবীর বৃহত্তম গিরিখাত বা ক্যানিয়ন কোনটি?
উত্তর : আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলােরাডাে নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।
29. নদীর কোন প্রবাহে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়?
উত্তর : নদীর পার্বত্য প্রবাহে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. পর্যায়ন’ কাকে বলে ?
উত্তর : অসমতল ও বন্ধুর ভূমির ক্ষয়সীমার সাপেক্ষে ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে সমতলে পরিণত হলে তাকে পর্যায়ন’ বলে। দুটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া-অবরােহণ ও আরােহণের সম্মিলিত ফল হল পর্যায়ন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বহির্জাত প্রক্রিয়া কার্যকর হয়।
2. ‘অবরােহণ’ (Degradation Process) প্রক্রিয়া বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : যে সমস্ত বহির্জাত প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠের উচ্চতা পর্যায়ক্রমিকভাবে হ্রাস পায়, তাকে অবরােহণ প্রক্রিয়া বলা হয়। শিলাবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয় এবং ক্ষয়ী ভবনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
3. ‘আরােহণ’ (Aggradation Process) প্রক্রিয়া বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : যে সমস্ত বহির্জাত প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠের উচ্চতা সাময়িকভাবে বৃদ্ধি পায়, তাকে আরােহণ প্রক্রিয়া বলা হয়। এর অপর নাম সয়। নদী, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, ভৌমজল ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তি ক্ষয়জাত পদার্থ নীচু স্থানে সঞ্জিত করে ক্রমশ উঁচু হয়ে ওঠে।
4. পর্যায়িত নদী (Graded Stream) কাকে বলে?
উত্তর : যদি কোনাে নদী তার ক্ষমতা অনুযায়ী যতটুকু বস্তৃভার বহন করা সম্ভব ততটুকু বস্তুভার বহন করে তাকে তখন পৰ্যায়িত নদী বলা হয়। ডেভিসের মতে পর্যায়িত নদী হল এমন একটি নদী যার, ক্ষয়সাধন, পরিবহন এবং অবক্ষেপন কার্যের মধ্যে সামঞ্জস্য আছে।
5. নগ্নীভবন’ (Denudation) কাকে বলে?
উত্তর : বহির্জাত অবরােহণ প্রক্রিয়ায় আবহবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয় ও ক্ষয়ীভবন—এই তিনটি পদ্ধতির যৌথ ক্রিয়াশীলতায় ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগের শিলাস্তর বিচ্ছিন্ন হয়ে অবসারিত হয়ে এবং নীচের শিলাস্তর ভূ-পৃষ্ঠে উন্মুক্ত হলে, এই অবরােহণ প্রক্রিয়াকে নগ্নীভবন বলা হয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
5. জলবিভাজিকা কী?
উত্তর : যে উচ্চভূমি পাশাপাশি অবস্থিত দুই বা ততােধিক নদী অববাহিকা বা নদীগােষ্ঠীকে পৃথক করে, তাকে জলবিভাজিকা বলে। উদাহরণ—হিমালয়, বিন্ধ্য, সাতপুরা, পশ্চিমঘাট পর্বত প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ। জলবিভাজিকা।
6. নদী অববাহিকা কাকে বলে?
উত্তর : একটি প্রধান নদী তার উপনদী, শাখানদী, প্রশাখানদী মিলিয়ে যতটুকু স্থান অধিকার করে আছে, তা হল ওই প্রধান নদীর অববাহিকা। উদাহরণ—গঙ্গা অববাহিকা ভারতের বৃহত্তম নদী অববাহিকা।
7. ধারণ অববাহিকা কাকে বলে?
উত্তর : নদীর উৎস অঞ্চলের অববাহিকাতে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলধারা বা শীর্ষনদী একত্রে মিলিত হয়ে নদীরূপে একটি নির্দিষ্ট খাতে নীচের দিকে প্রবাহিত হয়। নদীর উৎস। অণ্ডলে এই অববাহিকাকে ধারণ অববাহিকা বলে।
8. ষষ্ঠ-ঘাতের সূত্রটি কী?
উত্তর : নদীর গতিবেগের সঙ্গে বহন ক্ষমতার সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক আছে। দেখা গেছে নদীর গতিবেগ দ্বিগুণ হলে তার বহন ক্ষমতা 64 গুণ বা 2° হারে বেড়ে যায়। ইহাই যষ্ঠঘাতের সূত্র নামে পরিচিত। 1842 সালে W. Hopkins এই সূত্রের ব্যাখ্যা দেন।
9. নদী উপত্যকা কাকে বলে?
উত্তর : উৎস থেকে মােহানা গতিপথের দু’পাশের উচ্চভূমির মাঝে যে দীর্ঘ ও সংকীর্ণ নিম্নভূমির মধ্যদিয়ে নদীর জলধারা প্রবাহিত হয়, তাকে নদী উপত্যকা বলে।
10. নদীর ক্ষয়সীমা বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : নদী ভূ-পৃষ্ঠে যে উচ্চতা পর্যন্ত ক্ষয় করতে সক্ষম, সেই উচ্চতাকে নদীর ক্ষয়সীমা বলে। সাধারণভাবে নদীর ক্ষয়সীমা হল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। আবার মরু অঞ্চলে নদীর ক্ষয়সীমা হল প্লায়া হ্রদ।
11. কিউসেক ও কিউমেক কী?
উত্তর : এটি হল নদীর জলপ্রবাহ পরিমাপের একক। কিউসেক হল কিউবিক ফুট/সেকেন্ড। আর মেট্রিক পদ্ধতিতে কিউমেক হল কিউবিকমিটার/সেকেন্ড।
12. সমপ্ৰায় ভূমি কী ?
উত্তর : বৃষ্টিবহুল আর্দ্র অঞ্চলে নদীর জলপ্রবাহ, বৃষ্টির জল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে, প্রাচীন মালভূমি, উচ্চভূমি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে এক সময় উঁচু। নীচু ঢেউ খেলানাে বা প্রায় সমতলভূমিতে পরিণত হলে তাকে সমপ্ৰায় ভূমি বলে।
13. পাখির পায়ের মতাে ব-দ্বীপ কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তর : মূল নদী তথা প্রধান নদী বহু শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে পাখির পায়ের আঙুলের মতাে দীর্ঘ ও সংকীর্ণ হয়ে সমুদ্রের দিকে এগােলে নদীর সঞ্চয়কার্যে এরূপ ব-দ্বীপের সৃষ্টি হয়। যেমন—মিসিসিপি-মিসৌরী ব-দ্বীপ।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর :[প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. জলপ্রপাত সৃষ্টির কারণগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : নদীর প্রবাহপথে বিভিন্ন কারণে জলপ্রপাত সৃষ্টি হতে পারে। যেমন—(i) চ্যুতির ফলে নদীর গতিপথে খাড়া ঢাল সৃষ্টি হলে। (i) নদী গতিপথে কঠিন ও কোমলশিলা অনুভূমিক, উল্লম্ব বা তির্যকভাবে অবস্থান করলে বৈষম্যমূলক ক্ষয়ের ফলে ঢাল উৎপন্ন হয়ে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। (i) নদী হিমবাহ সৃষ্ট ঝুলন্ত উপত্যপার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে এবং (iv) নদীর পূর্ণযৌবন লাভের ফলে সৃষ্ট নিক্ বিন্দুতে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।
2. নদীর নিম্নগতিতে বন্যা হয় কেন?
উত্তর : সমভূমি প্রবাহে তথা নিম্নপ্রবাহে নদীর গতিবেগ একেবারে কমে যায় এবং নদী কেবল সঞ্চয়কার্য করতে থাকে। ফলে এই সময় নদীখাতের গভীরতা হ্রাস পায়। হঠাৎ কোনাে কারণে নদীতে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে (অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত) অতিরিক্ত জল নদীঘাত ছাপিয়ে পার্শ্ববর্তী উপত্যকা অলকে প্লাবিত করে। এই কারণে নদীর নিম্ন প্রবাহে বন্যা হয়। গঙ্গা, ব্ৰক্ষ্মপুত্র নদীর নিম্নপ্রবাহের উপত্যকা অঞ্চলগুলি অত্যধিক বন্যাপ্রবণ।
3. ব-দ্বীপের শ্রেণিবিভাগ করাে।
উত্তর : আকৃতি অনুযায়ী ব-দ্বীপ চার প্রকার। (i) ধনুকাকৃতি ব-দ্বীপ—ব-দ্বীপের সমুদ্রমুখী। বহিরেখা ধনুকের আকৃতির হয়। হােয়াংহাে নদী ব-দ্বীপ এইরূপ। (ii) পাখির পায়ের ন্যায় ব-দ্বীপ—মূল নদী বহুশাখায় বিভক্ত হয়ে পাখির পায়ের ন্যায় ব-দ্বীপ তৈরি করে। যেমন—মিসিসিপি-মিসৌরী ব-দ্বীপ। (iii) করাতের দাঁতের মতাে ব-দ্বীপ মােহানায় প্রবল সমুদ্রতরঙ্গের আঘাতে নদীর পলি দুদিকে ছাপিয়ে এরুপ ব-দ্বীপ গঠন করে। যেমন—ইতালির তাইবার ব-দ্বীপ। (iv) খাড়ীয় ব-দ্বীপ—খাঁড়ির মধ্যে এইরূপ ব-দ্বীপ সৃষ্টি হয়। যেমন—ফ্রান্সের সীন নদীর ব-দ্বীপ।
4. বর্তমানে সুন্দরবনের লােহাচড়া, নিউমুর, ঘােড়ামারা দ্বীপের ওপর জলবায়। পরিবর্তনের প্রভাব আলােচনা করাে।
উত্তর : (i) লােহাচড়া দ্বীপ : হুগলি নদীর মােহনায় এই দ্বীপটি 2006 সালে সমুদ্রজলতল বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অবলুপ্ত হয়। 6000 জনবসতিকে স্থানান্তরিত হতে হয়।
(ii) নিউমুর দ্বীপ : 10,000 বর্গমিটার এলাকায় দ্বীপটি 1970 সালে হাড়িয়াভাঙা নদীর মােহনায় জেগে উঠলেও 2010 সালে জলতলবৃদ্ধির কারণে তা ডুবে যায়।
(iii) ঘােড়ামারা দ্বীপ : 1975 সালে ৪.5 বর্গকিমি ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট দ্বীপটি বর্তমানে উপকুল ক্ষয়, জলতল বৃদ্ধির কারণে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। এর প্রথম ক্ষেত্রফল মাত্র 4.4 বর্গকিমি।
রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [ প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্টভূমিরূপগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরুপগুলি নিম্নে আলােচনা করা হলাে-
(i) শৃঙ্খলিত বা আবদ্ধ শৈলশিরা : পার্বত্য অংশে নদী পথের বাধা স্বরূপ শৈলশিরা বা পাহাড় থাকলে । এড়িয়ে যাবার জন্য নদী এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। তখন শৈলশিরা- গুলিকে দূর থেকে আবদ্ধ মনে হয়। এটি হল আবদ্ধ বা শৃঙ্খলিত শৈলশিরা। উদাঃ—তিস্তা নদীর ( আবদ্ধ শৈলশিরা পার্বত্য অংশে এই প্রকার ভূমিরূপ দেখা যায় )।
(ii) রাপিডস বা খরস্রোত : নদীগর্ভে পর্যায়ক্রমে কঠিন ও কোমল শিলা অবস্থান করলে কঠিন শিলা অপেক্ষা কোমল শিলা বেশি ক্ষয় পেয়ে ধাপের সৃষ্টি করে, ফলে নদীর জল ধাপে ধাপে নেমে আসে। একে রাপিডস বা খরস্রোত বলে। উদাঃ—আফ্রিকার জাইরে নদীতে 32টি খরস্রোত সৃষ্টি হয়েছে।
(iii) জলপ্রপাত : পার্বত্য প্রবাহে নদীর তলদেশের ঢাল হঠাৎ বিচ্যুত হলে বিচ্যুত তলের ওপর জলরাশি নীচে পতিত হলে তাকে জলপ্রপাত বলে। কঠিন ও কোমল শিক্ষা পাশাপাশি অবস্থান করলে এরূপ জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। দক্ষিণ আমেরিকার ভেনেজুয়েলার রিওকরােনি নদীর সান্টোঅ্যাঞ্জেল জলপ্রপাত পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত (উচ্চতা 979 মিঃ)।
(iv) প্রপাতকূপ বা প্রাপুল : জলপ্রপাতের পাদদেশে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্তের মধ্যস্থিত নুড়ি বা শিলা পাক খেতে খেতে ঘর্ষণের ফলে ভূমিশিলায় যে গর্তের সৃস্টি হয় তাকে প্রপাতকূপ বা প্রাপুল বলে।
(v) মন্থকূপ বা পটহােল : প্রবলবেগে প্রবাহিত নদীর তলদেশ বা পার্শ্বদেশে জলাবর্তের সৃষ্টি হলে সেখানে নুড়ি বা শিলার ঘর্ষণের ফলে যে গর্তের সৃষ্টি হয় তাকে মন্থকূপ বা পটহােল বলে। উদাহরণ-ঝাড়খণ্ডের খরকাই নদীগর্ভে অসংখ্য মন্থকূপ দেখা যায়।
2. নদীর সঞ্চয়কাজের ফলে কী কী ভূমিরূপ গড়ে ওঠে আলােচনা করাে।
উত্তর : নদীর সঞ্চয়কাজের ফলে গঠিত ভূমিরুপগুলি নিয়ে আলােচনা করা হল-
(i) পলল শঙ্কু ও পলল ব্যজনী : নদী পার্বত্য অঙুল থেকে সমভূমিতে পৌঁছানাের সময় পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষয়জাত পদার্থসমূহ পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে যে ত্রিকোণাকার ভূমিরূপ গড়ে তােলে তাকে পলিশ বলে। একাধিক পলিশঙ্কু পাশাপাশি অবস্থান করলে তাকে পলল ব্যজনী ও পলল শঙ্কু বলে।
(ii) নদী বাঁক বা মিয়েল্ডার : মধ্য ও নিম্নপ্রবাহে নদীর গতিবেগ কম থাকায় সামান্য বাধার সম্মুখীন হলে নদী গতিপথের পরিবর্তন ঘটিয়ে এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। একে নদী বাঁক বলে। তুরস্কের নদী মিয়েন্ডারেস এর নামানুসারে এই ভূমিরূপের নাম মিয়েন্ডার। উদাঃ—জলঙ্গী নদীতে অসংখ্য নদীবাঁক দেখা যায়।
(iii) অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ : মধ্য ও নিম্নগতিতে ঘােড়ার ক্ষুরের ন্যায় যে পরিত্যক্ত নদীঘাত দেখা যায় তাকে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে। মধ্য ও নিম্নগতিতে নদী ক্ষয়জাত পদার্থসমূহ নিয়ে এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হতে। হতে হঠাৎ সােজা পথে অগ্রসর হলে নদীবাঁকের একটি অংশ মূল প্রবাহ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ সৃষ্টি করে। উদাঃ–গঙ্গা নদীর নিম্নপ্রবাহে দেখা যায়।
(iv) প্লাবনভূমি ও (v) স্বাভাবিক বাঁধ : সমভূমি প্রবাহে নদীখাতের গভীরতা কমে যাওয়ায়। নদীর জল হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে অতিরিক্ত জল নদীখাত ছাপিয়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্জল প্লাবিত করে এবং নদীবাহিত পলি, বালি, কাদা সঞ্চিত হয়ে প্লাবনভূমির সৃষ্টি করে। উদাঃ–গঙ্গা নদীর সমভূমি প্রবাহে প্লাবনভূমি দেখা যায়। স্বাভাবিক ধাঁধ ও বনভূমি
বারংবার নদীতে প্লাবনের সময় পার্শ্ববর্তী অণ্ডলে একাধিকবার পলি জমা হবার ফলে নদী এবং প্লাবনভূমির মধ্যবর্তী অঞ্চলে একটু বেশি উচ্চতাসম্পন্ন ভূমির সৃষ্টি হয়, একে স্বাভাবিক বাঁধ বলে।
উদাঃ—নীলনদের গতিপথে এইরকম অনেক স্বাভাবিক বাঁধ দেখা যায়।
(vi) খড়ি : শেষ প্রান্তে মােহানায় নদী যেখানে সাগরে মেশে সেখানে ফানেল আকৃতির চওড়া নদী মােহানাকে খাঁড়ি বলে।
(vii) ব-দ্বীপ : মােহানার কাছে নদীর গতিবেগ কমে গিয়ে বস্তৃভার নদীবক্ষে সঞ্চয় করে গ্রিক অক্ষর ডেল্টা-র (4) ন্যায় বা বাংলার মাত্রাহীন ‘ব’-এর মতাে যে দ্বীপ গঠন করে তাকে ব-দ্বীপ বলে। উদাঃ–গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র নদীর ব-দ্বীপ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ।
বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – ভূমিরূপের পরিবর্তনে হিমবাহের ভূমিকা
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. হিমরেখা কাকে বলে?
উত্তর : অত্যধিক শীতলতার জন্য যে সীমারেখার ওপরে সারাবছর বরফ জমে থাকে এবং যে রেখার নীচে বরফ গলে জলে পরিণত হয়, সেই কাল্পনিক রেখাকে হিমরেখা বলে। হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে হিমরেখার গড় উচ্চতা স্থানবিশেষে 4000- 5000 মিটার। আবার তীব্র শীতলতার জন্য মেরু অঞ্চলে হিমরেখা প্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায় থাকে।
2. আইস শেল কাকে বলে?
উত্তর : দক্ষিণ আন্টার্কটিকা মহাদেশে উপকূলের সঙ্গে সংযুক্ত যে বরফের পাত দেখা যায়, সেই বরফের পাতটিকে আইস শেলফ বলে। যেমন—আন্টার্কটিকার রস ও রনি আইস শেলফ।
3. হিমযুগ কাকে বলে?
উত্তর : বর্তমান সময় থেকে প্রায় 50 লক্ষ বছর পূর্বে প্লিস্টোসিন উপযুগে পৃথিবীর অধিকাংশ স্থান বরফাবৃত ছিল, এই সময়কে হিমযুগ বলে। আর দুটি হিমযুগের মধ্যবর্তী সময়কে অন্তর্বর্তী হিমযুগ বলা হয়।
4. নেভে ও ফার্ন কী?
উত্তর : হিমরেখা ঊর্ধ্বে প্রবল শৈত্যের কারণে সদ্য পতিত তুষার হালকা পেঁজা তুলাের মতাে হয়, একে ‘নেভে’ বলে। নেভের ঘনত্ব থাকে 0.06 থেকে 0.16 সেমি। নেভের ওপর পুনরায় তুষারপাতে নীচের তুষারে ঘনত্ব ও দৃঢ়তা বাড়ে, একে বলে ফার্ণ। ফার্ণের ঘনত্ব 0.72 থেকে 0.9 সেন্টিমিটার হয়।
5. হিমানী সম্প্রপাত বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের বিশাল বরফের স্তুপ যখন ভূমিকম্প বা অধিক তুষারপাত বা ঢালের স্থিতিস্থাপকতা নষ্টের ফলে পর্বতের ঢাল বরাবর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পর্বতের পাদদেশে নেমে আসে, তাকে হিমানী সম্প্রপাত বলে। এটি হল একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
6. আমলক তল (Mammillated surface) কী?
উত্তর : আমলক তল সাধারণত হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত হয়। প্রবহমান হিমবাহের তলদেশে যে সকল প্রস্তর-খণ্ড থাকে তাদের ঘর্ষণে পর্বতগাত্রের শিলাস্তরে আঁচড় কাটার দাগ পড়ে এবং এই অলের শিলা মিশ্রিত হয়। একে আমলক তল বলে।
7. হিমসিঁড়ি বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : হিমবাহ উপত্যকার লম্বচ্ছেদ অসমতল ও অপর্যায়িত হয়। তবে কখনাে কখনােও লম্বচ্ছেদ মসৃণ ও অবতলাকৃতি হয়। হিমবাহ উপত্যকার অসমতল তলে সিঁড়ির মতাে ধাপের সৃষ্টি হয়, তাকে হিমসিঁড়ি বলে। হিমসিড়ির তিনটি অংশ। যথা— রাইজার, রিগেল ও ট্রেড।
8. নুনাটাকস কাকে বলে?
উত্তর : মহাদেশীয় হিমবাহের প্রান্তভাগে অগভীর বরফের স্তুপযুক্ত পর্বতগুলি মাঝে মাঝে বরফহীন হয়ে অবস্থান করে। মেরু অঞ্চলের তুষারক্ষেত্রের বরফমুক্ত শৃঙ্গগুলি নুনাটাকস নামে পরিচিত। উদাঃ—কুমেরুর প্রদেশের মাউন্ট তার্কাহি।
9. ‘ড্রামলিন’ কাকে বলা হয় ?
উত্তর : বিভিন্ন আকৃতির শিলাখণ্ড এবং নুড়ি, বালি, পলি ইত্যাদি হিমবাহ বাহিত পদার্থ। পর্বতের পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে উলটানাে নৌকা বা উলটানাে চামচের মতাে ভূমিরূপ তৈরি করলে, তাকে ড্রামলিন বলে। ড্রামলিনের দৈর্ঘ্য 1-3 কিমি, প্রস্থ 300-600 মিঃ এবং উচ্চতা 60 মিঃ পর্যন্ত হয়।
10. বহিঃধৌত সমভূমি কাকে বলে?
উত্তর : প্রান্তদেশে হিমবাহ গলতে শুরু করলে গলিত জল হিমবাহ বাহিত নুড়ি, বালি, পলিকে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চাদরের ন্যায় সgয় ঘটায়। এরফলে পর্বতের পাদদেশে যে সমভূমি গড়ে ওঠে তাকে বহিঃধৌত সমভূমি বা আউটওয়াশ প্লেন বলা হয়।
11. কর্তিত স্পার বা কর্তিত শৈলশিরা কী ?
উত্তর : উপত্যকার মধ্যদিয়ে হিমবাহ অগ্রসর হওয়ার সময় স্পার বা পর্বতের অভিক্ষিপ্তাংশে তীক্ষ্ম ও মসৃণভাবে ক্ষয় করে। এই স্পারগুলিকেই বলা হয় কর্তিত স্পার বা কর্তিত শৈলশিরা।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ঝুলন্ত উপত্যকায় জলপ্রপাত সৃষ্টি হয় কেন?—ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : ঝুলন্ত উপত্যকায় জলপ্রপাত সৃষ্টির কারণগুলি নিম্নরূপ-
(i) কর্তিত স্পার বরাবর মূল হিমবাহের গভীর উপত্যকা ও উপহিমবাহের দ্বারা গঠিত অগভীর উপত্যকার মধ্যে উচ্চতার উল্লম্ব ব্যবধান সৃষ্টি হয়ে জলপ্রপাত সৃষ্টি করে। (ii) বায়ুর উয়তার বৃদ্ধি পেলে হিমবাহ গলে গিয়ে বরফ গলা জলধারার সৃষ্টি হয়। (iii) বরফগলা জলধারা ঝুলন্ত উপত্যকা বরাবর প্রবাহিত হয়ে মূল হিমস্রোণীর ওপর জলপ্রপাতের সৃষ্টি করে।
2. গ্রাবরেখার শ্রেণিবিভাগ আলােচনা করাে।
উত্তর : পার্বত্য অঞ্চলে নানা আকৃতির বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখণ্ড, নুড়ি, কাকড়, বালি, কাদা-হিমবাহের সাথে স্তুপাকারে সঞ্চিত হতে হতে নীচের দিকে অগ্রসর হয়। একে গ্রাবরেখা বলে। একে নানাভাগে ভাগ করা হয়। যথা—(1) বিচলনশীল গ্রাবরেখা : (i) পার্শ্ব গ্রাবরেখা (ii) মধ্য গ্রাবরেখা (iii) হিমপৃষ্ঠ গ্রাবরেখা (iv) হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা (v) ভূমি গ্রাবরেখা।
(2) অবক্ষিপ্ত গ্রাবরেখা-(i) প্রান্ত গ্রাবরেখা (ii) বিরাম গ্রাবরেখা (iii) ঠেলা গ্রাবরেখা, (iv) অবিন্যস্ত গ্রাবরেখা। (v) রােজেন গ্রাবরেখা (vi) স্তরায়িত সামুদ্রিক গ্রাবরেখা (vii) বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা।।
ভূমিরূপের পরিবর্তনে হিমবাহের ভূমিকা—বায়ুর কাজ
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. আর্গ বা কুম কী?
উত্তর : বায়ুর অপসারণ কার্যের ফলে বালি দিয়ে ঢাকা ছােটো ছােটো যে ভূমির সৃষ্টি হয় তাকে আর্গ বলে। সাহারা মরুভূমিতে এটি আর্গ এবং তুর্কিস্থানে এটি কুম নামে পরিচিত।
2. গাসি কী?
উত্তর : বায়ুপ্রবাহের সমান্তরালে দীর্ঘ ও সংকীর্ণ শৈলশিরার মতাে বালির পাহাড়গুলিকে সিফ বালিয়াড়ি বলে। এই সিফ বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী করিডােরগুলি সাহারায় ‘গাসি’ নামে পরিচিত। এই করিডােরগুলি যাতায়াতের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
3. সিফ বালিয়াড়ি কাকে বলে?
উত্তর : বায়ুপ্রবাহের গতিপথের সঙ্গে সমান্তরাল গঠিত দীর্ঘাকৃতি বালিয়াড়িকে সিফ বা অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বলে। এদের আকৃতি তরােয়ালের মতাে বলে ভূবিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড এর নামকরণ করেন সিফ বালিয়াড়ি। এগলির উচ্চতা কয়েকশাে মিটার ও দৈর্ঘ্য কয়েক কিমি থেকে কয়েকশাে কিমি হয়। এর শীর্ষদেশ তীক্ষ্ণরু হয়। এরা একে অপরের সমান্তরালে গড়ে ওঠে।
4. মরুখাত বা ব্লো-আউট কাকে বলে ?
উত্তর : মরু অঞ্চলে প্রবল বায়ুপ্রবাহের দ্বারা কোনাে একটি অঞ্চল থেকে হাজার হাজার টন বালুকারাশি অপসৃত হলে সেখানে অবনতভূমি বা খাতের সৃষ্টি হয়। এই প্রকার খাত বা অবনতভূমি ব্লোআউট বলে। মিশরের কাতারা হল পৃথিবীর বৃহত্তম মরুখাত।
5. রেগ কী?
উত্তর : বিভিন্ন আকৃতির প্রস্তর খণ্ড দিয়ে গঠিত ও পাথুরে মরুভূমিকে আলজিরিয়াতে রেগ বলা হয়। লিবিয়া ও মিশরে এটি সেরীয় এবং অস্ট্রেলিয়ায় গিবার বলা হয়।
6. দুটি করে ক্রান্তীয় ও নাতিশীতােয় মরুভূমির নাম লেখাে।
উত্তর : ক্রান্তীয় মরুভূমি ও উয় মরুভূমি—(i) আফ্রিকার উত্তর সাহারা মরুভূমি। (ii) উত্তর আমেরিকা সােনেরান মরুভূমি।
নাতিশীতােয় মরুভূমি- (i) দক্ষিণ আমেরিকার প্যাটাগােনিয়া মরুভূমি। (ii) এশিয়ার গােবি ও তাকলামাকান মরুভূমি।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর :[প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজ সর্বাধিক কেন?
উত্তর : মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজ সর্বাধিক হবার কারণগুলি হল—
(i) যান্ত্রিক আবহবিকার : মরু অঞ্চলে সর্বাধিক পরিমাণে যান্ত্রিক আবহবিকার সংঘটিত হওয়ার প্রচুর বালুকারাশি উৎপন্ন হয়।
(ii) স্বল্প বৃষ্টিপাত : স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে উদ্ভিদহীন পরিবেশে বায়ু বাধাহীনভাবে প্রবল গতিতে প্রবাহিত হতে পারে।
(iii) উদ্ভিজ্জ আবরণের অভাব : গাছপালা না থাকায় উন্মুক্ত ভূ-পৃষ্ঠে বায়ু সহজেই নানা পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে।
(iv) শিথিল ভূপৃষ্ঠ : ভূ-পৃষ্ঠের শিথিল উপরিভাগ বায়ুর কার্যের সহায়ক।
2. টীকা লেখাে : ‘লােয়েশ।
উত্তর : লােয়েশ : মরুভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্জলের হলুদ ও ধূসর বর্ণের ক্যালশিয়াম কার্বনেট (CaCO3), কোয়ার্টজ, ফেলপার ডলােমাইট সমৃদ্ধ শিথিল সূক্ষ্ম (20-25 মাইক্রোমিটার) পলিকনা হলাে লােয়েশ। বায়ু দ্বারা বাহিত হয়ে এই পলিকণা অন্যত্র সঞ্চিত হলে তাকে লােয়েশ ভূমি বলে। মধ্য এশিয়ার গােবি মরুভূমি থেকে বায়ুকারাশি উড়ে চিনের হােয়াংহাে নদী অববাহিকায় সঞ্চিত হয়ে লােয়েশ সমভূমি গড়ে উঠেছে।
3. টীকা লেখাে : ‘বার্খান’।
উত্তর : বার্খান : বায়ুর গতিপথের সঙ্গে লম্বভাবে অবস্থিত অপ্রতিসম, অর্ধচন্দ্রাকৃতি উত্তল অংশ বিশিষ্ট বালিয়াড়িকে বার্খান বলে। এর সামনের দিক উত্তল এবং পিছনের দিক অবতল হয়। বাখানের দুই প্রান্তে শিং-এর মতাে দুটি শিরা দেখা যায়। এর উচ্চতা 10-30 মিটার এবং প্রস্থ 40-70 মিটার। উদাহরণ : সাহারা মরুভূমিতে অসংখ্য বার্খান দেখা যায়।
4. মরুসম্প্রসারণের কারণ এবং এর প্রতিরােধের উপায়গুলি কী কী?
উত্তর : মরু সম্প্রসারণের কারণগুলি হল—(i) বিশ্ব উষ্যায়ন : এটি মরুভূমিকরণের প্রধান কারণ। (ii) খরা : মরু প্রায় অঞ্চলে দীর্ঘ দিন খরা চললে তা মরুগ্রাসে পড়ে। (iii) পশুচারণ : এর ফলে মাটি আলগা হয়ে যায়। (iv) বৃক্ষচ্ছেদন : গাছপালা কেটে ফেললে মরুকরণ দ্রুত হয়। (v) অবৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষাবাদ।
মরুকরণ প্রতিরােধের উপায়গুলি হল : (i) চেক ড্যাম : বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য চেক ড্যাম নির্মাণ দরকার। (ii) গ্রিন ওয়াল নির্মাণ : গাছের বেড়া লাগাতে হবে। (iii) ঘাস রােপণ : অগভীর বালিস্তরে মুনা জাতীয় ঘাস লাগাতে হবে। (iv) পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ দরকার। (v) উন্নত ফসলের চাষ : জমির লবণতা কমাতে বিভিন্ন প্রকার ফসলের চাষ করতে হবে।
5. বার্খান এবং সিফ বালিয়াড়ির মধ্যে পার্থক্যগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : বার্খান এবং সিফ বালিয়াড়ির মধ্যে পার্থক্যগুলি-
বিষয় বার্খান সিফ বালিয়াড়ি
(i) অর্থ বার্খান শব্দের অর্থ বালির পাহাড়। ফরাসি শব্দ ‘বিউট’ এর অর্থ ‘টিবি’।
(ii) শব্দগত উৎপত্তি বায়ুর গতিপথের সাথে আড়াআড়ি মেসার ক্ষুদ্র সংস্করণ বিউট।
(iii) অবস্থান পার্শ্বদেশ মালভূমির মত খাড়া। ততটা খাঢ়া পার্শ্বদেশ নয়।
(iv) আকৃতি লােকালয় গড়ে ওঠে। লােকালয় গড়ে ওঠে না।
6. মেসা এবং বিউট-এর মধ্যে পার্থক্যগুলি লেখাে।
উত্তর : মেসা এবং বিউট-এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল-
বিষয় মেসা বিউট
(i) সংজ্ঞা স্পেনীয় শব্দ ‘Mesa’-র অর্থ হল ‘টেবিল। ফরাসি শব্দ ‘বিউট’ এর অর্থ ‘টিবি’।
(ii) আকৃতি মেসা আকৃতিতে বৃহৎ। মেসার ক্ষুদ্র সংস্করণ বিউট।
(iii) ঢাল পার্শ্বদেশ মালভূমির মত খাড়া। ততটা খাঢ়া পার্শ্বদেশ নয়।
(iv) বসতি লােকালয় গড়ে ওঠে। লােকালয় গড়ে ওঠে না।
রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি হল নিম্নরূপ-
(i) অপবাহন সৃষ্ট গর্ত বা বেসিন : প্রবল বায়ুপ্রবাহে বালিস্তর অপসারিত হয়ে কোনাে কোনাে স্থানে গর্ত বা অবনমিত অঞ্চল সৃষ্টি করলে তাকে বলা হয় অপবাহন সৃষ্ট গর্ত। ভারতে এটি ধান্দ নামে পরিচিত। আমেরিকার মন্টানা থেকে টেক্সাস পর্যন্ত এরূপ অনেক অপবাহন গর্ত দেখতে পাওয়া যায়।
(ii) জুগ্যান : মরু অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলা অনুভূমিক ভাবে অবস্থান করলে কঠিন শিলার দারন বা ফাটল বরাবর বায়ুক্ষয় করে নরম শিলা ক্ষয় করতে থাকে। ফলে কঠিন শিলায় চ্যাপ্টা মাথা বিশিষ্ট যে ভূমিরূপ গঠন করে তাকে জুগ্যান বলা হয়। উদাহরণ : কালাহারি মরুভূমিতে দেখা যায়।
(iii) ইয়াদাং :মর অলে কঠিন ও কোমল শিলা পাশাপাশি উল্লম্বভাবে অবস্থান করলে বৈষম্যমূলক ক্ষয়ের ফলে কঠিন কোমল শিলা শিলায় প্রাচীর ও কোমলশিলায় খাত সৃষ্টি করে। একে ইয়ার্দাং বলে। উদাহরণ : সাহারা, গােবি ও সােনেরান মরুভূমিতে দেখা যায়।
(iv) ভেন্টিফ্যাক্ট ও (v) ড্রেইকান্টার : মরুভূমি অঞ্চলে অনেক সময় একদিকে বায়ু প্রবাহের ফলে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় শিলার একদিক ক্ষয় পেয়ে মসৃণ হলে তা ব্রাজিল নাটের ন্যায় দেখতে হয়ে থাকে। একে ভেন্টি ফ্যাক্ট বলে। অপরদিকে বিভিন্ন দিকে বায়ু প্রবাহের ফলে শিলার দুই বা তিন দিক মসৃণ হয়ে যে ভুমিরুপ গঠন করে তাকে ড্রেইকান্টার বলে। কালাহারি মরুভূমিতে ভেন্টিফ্যাক্ট ও সাহারায় ড্রেইকান্টার দেখতে পাওয়া যায়।
(vi) ইনসেলবার্জ : অনেক সময় মরুভূমি অঞ্জলে স্থানে স্থানে দণ্ডায়মান উচ্চ পাহাড়গুলি বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অনুচ্চ ক্ষয়ীভূত টিলার ন্যায় আকার ধারণ করে। এদের ঢাল কম বেশি হয় অথচ এদের উচ্চতা খুব কম ও গােলাকার দেখতে হয়, এদের বলা হয় ইনসেলবার্জ। উদাহরণ : কালাহারি মরুভূমিতে ইনসেলবার্জ দেখা যায়।
2. বায়ু এবং জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত খুব কম হলেও আবহবিকার বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে ভূমিরূপের পরিবর্তন হয়। নীচে ভুমিরুপগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করা হলাে-
(i) ওয়াদি : মরুভূমির শুষ্ক নদীখাত হল ওয়াদি। ওয়াদির মধ্যে দিয়ে স্থায়ী নদী ইলের প্রবাহিত হয় না। ‘ওয়াদি’ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘শুষ্ক উপত্যকা। থর মরুভূমিতে একে ‘না’ বলা হয়।
(ii) পেডিমেন্ট : মরুভূমি মধ্যস্থিত পর্বতের পাদদেশে বায়ু প্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে একপ্রকার প্রায় সমতল ভূমির সৃষ্টি হয়, একে বলে পেডিমেন্ট। এর ঢাল 1.5°7° পর্যন্ত হয়। উদাহরণ : আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির মধ্যস্থিত আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির মধ্যস্থিত উত্তর পশ্চিম প্রান্তে পেডিমেন্ট লক্ষ করা যায়।
(iii) বাজাদা : মরু অঞ্চলের পর্বতের পাদদেশে বায়ু ও জলধারার মিলিত কাজের ফলে যে বালুময় সমতল ভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে বাজাদা বলে। বাজাদা সূক্ষ্ম পলি ও বালি দ্বারা গঠিত। বাজাদার তলদেশে থাকে পেডিমেন্টের আবৃত অংশ। বাজাদা মূলত বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত হয়। বাজাদার ঢাল কম, প্রায় 4°।
(iv) প্লায়া : মরুভূমির পাহাড় ঘেরা অবনমিত তালগুলিতে জল জমে যে হ্রদ তৈরি করে তাকে প্লায়া বলে। এই হ্রদগুলির লবণাক্ত ও কর্মস্তর দ্বারা বেষ্টিত। এটি দক্ষিণ আমেরিকায় ‘স্যালিনা’, আরব অঞ্চলে ‘সবখা’ বা ‘শট’ নামে পরিচিত। উদাহরণ : আরাবল্লী পর্বতে অবস্থিত। সম্বর’ হ্রদ একটি প্লায়া হ্রদ।
(v) পলল ব্যাজনী : মরু ও মরুপ্রায় অঞলে উচ্চভূমির পাদদেশে নুড়ি, বালি ও পলি গঠিত ত্রিকোণাকার ভূমি হল পলল ব্যজনী।
বায়ুমণ্ডল
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ]:[প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. উত্তর গােলার্ধে বায়ুপ্রবাহের দিকে পেছন করে দাঁড়ালে ডানদিকের থেকে বাঁদিকের বায়তে কম চাপ থাকে। একে বলে-
[A] ফেরেলের সূত্র [B] কোরিওলিস বল [C] বাইস ব্যালটসূত্র [D] কোনােটিই সঠিক নয়।
উত্তরঃ [C] বাইস ব্যালটসূত্র
2. কোরিওলিস শক্তির প্রভাবে বায়ুর –
[A] দিক বিক্ষেপ হয়। [B] গতিবেগের পরিবর্তন হয় [C] চাপের পরিবর্তন হয় [D] কোনােটিই হয় না
উত্তরঃ [A] দিক বিক্ষেপ হয়
3. ‘লু’বাতাস প্রবাহিত হয় যে ঋতুতে
[A] বর্ষাকালে [B] শীতকালে [c] বসন্তকালে [D] গ্রীষ্মকালে
উত্তরঃ [D] গ্রীষ্মকালে
4. ‘লু’ একটি
[A] স্থানীয় বায়ু [B] অনিয়মিত বায়ু [C] নিয়মিত বায়ু [D] সাময়িক বায়ু
উত্তরঃ [A] স্থানীয় বায়ু
5. উত্তর-পূর্ব আয়নবায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায়
[A] 10 কিমি [B] 15 কিমি [C] 16 কিমি [D] 40 কিমি
উত্তরঃ [C] 16 কিমি
6. দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায়
[A] 12 কিমি [B] 22 কিমি [C] 32 কিমি [D] 42 কিমি।
উত্তরঃ [B] 22 কিমি
7. দিনেরবেলা উম্ন ও হালকা বায়ু পর্বতের ঢাল বেয়ে ওপরের দিকে উঠলে তাকে বলে—
[A] ‘লু বায়ু। [B] ক্যাটাবেটিক বায়ু [C] অ্যানাবেটিক বায়ু [D] হ্যারিকেন বায়ু
উত্তর : অ্যানাবেটিক বায়ু
8. বৃষ্টিপাত পরিমাপের একক হল—
[A] মিটার-ফুট [B] সেমি বা ইঞি [C] গ্রাম [D] কিলােগ্রাম
উত্তরঃ [B] সেমি বা ইঞি
9. মেঘ থেকে ভূপৃষ্ঠের জলকণা ও বরফকণার পতনকে বলে—
[A] তুষারপাত [B] শিলাবৃষ্টি [C] বৃষ্টিপাত [D] অধঃক্ষেপণ
উত্তরঃ [D] অধঃক্ষেপণ
10. বৃষ্টিপাত পরিমাপ করার যন্ত্রের নাম—
[A] রেনগেজ বা বৃষ্টিমাপক যন্ত্র [B] ব্যারােমিটার [C] হাইগ্রোমিটার [D] থার্মোমিটার
উত্তরঃ [A] রেনগেজ বা বৃষ্টিমাপক যন্ত্
11. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত শহরটি হল—
[A] কালিম্পং [B] চেন্নাই [C] শিলং [D] দন্ডকারণ্য
উত্তরঃ [C] শিলং
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. কীভাবে বায়ু প্রবাহের নামকরণ করা হয়?
উত্তর : বায়ু যেদিক থেকে আসে সেই দিক অনুসারে বায়ু প্রবাহের নামকরণ করা হয়।
2. হ্যারিকেন কী?
উত্তর : পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ক্রান্তীয় ঘূর্ণর্বাত।
3. আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ প্রান্তে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতকে কী বলে?
উত্তর : টর্নেডাে।
4. বায়ুর আপেক্ষিক আদ্রর্তা 100% হলে সেই বায়ুকে কী বলে?
উত্তর : পরিপৃক্ত বায়ু।
5. নিরক্ষীয় অঞলে কী জাতীয় বৃষ্টি হয়?
উত্তর : পরিচলন বৃষ্টি।
6. কোন মৌসুমি বাতাসের দ্বারা বৃষ্টি হয় না?
উত্তর : শীতকালীন মৌসুমি বাতাসের দ্বারা বৃষ্টি হয় না।
7. বৃষ্টিমাপক যন্ত্রের নাম কী?
উত্তর : বৃষ্টিমাপক যন্ত্রের নাম রেনগজ বা বৃষ্টিমাপক যন্ত্র।
৪. বায়ুতে ভাসমান জলীয়বাষ্প যখন শীতল ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে জলকণায় পরিণত হয়, তাকে কী বলে?
উত্তর : শিশির।
9. কোন বায়ু স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর ব্যাপক সংস্করণ ?
উত্তর : মৌসুমি বায়ু।
10. লু’ বাতাস কোন্ সময় প্রবাহিত হয় ?
উত্তর : ‘লু’ বাতাস গ্রীষ্মকালে প্রবাহিত হয়।
11. একটি স্থানীয় বায়ুর নাম করাে।
উত্তর : ‘লু।
12. বায়ুর আদ্রর্তা কোন যন্ত্রের সাহায্যে নিরূপণ করা হয়?
উত্তর : শুষ্ক ও আর্দ্র কুন্ডযুক্ত হাইগ্রোমিটারের সাহায্যে।
13. সিসিলিতে প্রবাহিত এক ধরনের উন্ন স্থানীয় বায়ু কী নামে পরিচিত?
উত্তর : সিরােক্কো।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. ‘অ্যারােসল’ কী?
উত্তর : অ্যারােসেল : ‘অ্যারাে’ শব্দের অর্থ বাতাস, ‘সল’ শব্দের অর্থ ভাসমান ধূলিকণা। বায়ুতে ভাসমান সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কঠিন উপাদানকে (ধূলিকণা, লবণকণা, কয়লা গুঁড়াে, কাঠের গুঁড়াে প্রভৃতি) বলা হয় অ্যারােসল।
2. বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : ধূলিকণার গুরুত্বের কারণগুলি হল—(i) ভাসমান ধূলিকণাকে কেন্দ্র করে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয় এবং তার ফলে মেঘ, কুয়াশা, তুহিন, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির সৃষ্টি হয়। (i) বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা সরাসরি সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত ও বিচ্ছুরিত হয়ে বর্ণচ্ছটার সৃষ্টি করে। (iii) বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার আধিক্য বায়ুমণ্ডলকে অস্বচ্ছ করে। তােলে অর্থাৎ দৃষ্টি স্বচ্ছতা কমায় এবং পৃথিবীর গড় উত্তাপ বৃদ্ধি করে
3. Lapse rate’ বা ‘উয়তা হ্রাসের হার’ বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : সাধারণভাবে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উয়তা হ্রাস পায়। বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরে অর্থাৎ ট্রপােস্ফিয়ার স্তরে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ট্রপােপজ পর্যন্ত উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উয়তা হ্রাস পেতে থাকে। সাধারণত প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় 6:45°C (6.5°C) হারে উষ্মতা হ্রাস পেতে থাকে। এইভাবে উয়তা হ্রাস পাওয়ার বায়ুর স্বাভাবিক উম্লতা হ্রাস হার বলে।
4. ট্রপােপজ কী?
উত্তর : টুপােপজ কথাটির আক্ষরিক অর্থ ‘স্তন্ধ যে স্তর’, অর্থাৎ ট্রপােস্ফিয়ার ও স্ট্রাটোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী 2-3 কিমি বিস্তৃত অঞলে বায়ুপ্রবাহ ও উয়তার পরিবর্তন তেমন হয় না তাই একে ট্রলােপজ বলে। এখানে বায়ুর গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় –58°C থেকে –60°c।
5. অ্যাপলটন স্তর কাকে বলে?
উত্তর : ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় 300 কিমি ওপরে আয়নােস্ফিয়ারের একটি স্তরকে অ্যাপলটন স্তর বলে। এই স্তরে প্রতিফলিত হয়ে ভূ-পৃষ্ঠে উৎপন্ন হ্রস্ব তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের বেতার তরঙ্গ ভূ-পৃষ্ঠে আবার ফিরে আসে বলে ভূ-পৃষ্ঠে দূরবর্তী এবং অতি দূরবর্তী অঞ্জলগুলি মধ্যে বেতার যােগাযােগ সম্ভব।
6. ফেরেলসূত্রটি কী?
উত্তর : পৃথিবীর আবর্তনজনিত বলের প্রভাবে বায়ু সরাসরি উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে বায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। বায়ু প্রবাহের দিক সংক্রান্ত এই নিয়মটি বিজ্ঞানী উইলিয়াম ফেরেল আবিষ্কার করেন। তার নামানুসারে এটি ‘ফেরেল সূত্র নামে পরিচিত।
7. বাইস ব্যালস সূত্র কী?
উত্তর : বায়ুচাপের অবস্থানের সঙ্গে বায়ুপ্রবাহের সম্পর্কে সম্বন্ধে 1857 খ্রিস্টাব্দে ডাচ আবহবিদ বাইস ব্যালট একটি সূত্র উদ্ভাবন করেন। সূত্রটি হল উত্তর গােলার্ধে বায়ুর গতির দিকে পিছন ফিরে দাঁড়ালে ডানদিকের তুলনায় বামদিকের বায়ু চাপ কম অনুভূত হয় এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকের তুলনায় ডানদিকে বায়ু চাপ কম অনুভূত হয়। এই সূত্রটি বাইসব্যালট সূত্র নামে পরিচিত।
৪. কোরিওলিস শক্তি বা বল কী?
উত্তর : পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে বায়ুপ্রবাহের ওপর যে শক্তি প্রযুক্ত হয় তাকে কোরিওলিস বল বলে। 1835 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিজ্ঞানী ড. De. Coriolis এই শক্তি প্রথম আবিষ্কার করেন।
9. ‘গর্জনশীল চল্লিশা’ কী?
উত্তর : দক্ষিণ গােলার্ধে স্থলভাগের তুলনায় জলভাগ বেশি থাকায় পশ্চিমাবায়ু বাধাহীনভাবে প্রবলবেগে প্রবাহিত হয়। 40° দক্ষিণ অক্ষরেখা বরাবর পশ্চিম থেকে পূর্বে এই প্রবল পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহকে ‘গর্জনশীল চল্লিশা’ বলে।
10. প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে?
উত্তর : হিমমণ্ডল বা নাতিশীতােষ মণ্ডলের কোনাে স্থানে অধিক শীতলতার জন্য প্রবল উচ্চচাপের সৃষ্টি হলে তখন ওই উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চল থেকে শুষ্ক ও শীতল বায়ু কুণ্ডলী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। একে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে।
11. রসবি তরঙ্গ কী?
উত্তর : ঊর্ধ্ব ট্রপােস্ফিয়ারে বায়ুচাপের অবক্ৰমজনিত শক্তি ও কোরিওলিস শক্তির পরিমাণ সমান এবং তারা পরস্পরের বিপরীতে ক্রিয়া করে। ফলে উর্ধ বায়ুতে সমচাপ রেখার সঙ্গে সমান্তরালভাবে জিওট্রোফিক বায়ু প্রবাহিত হয়। C. G. Rossby- 1930 এর দশকে গাণিতিক পদ্ধতিতে এই ধরনের তরঙ্গায়িত বায়ুপ্রবাহের উপস্থিতি প্রমাণ করেছিলেন। তাই এই তরঙ্গায়িত প্রবাহকে ‘রসবি তরঙ্গা’ বলা। হয়।
12. হ্যাডলী সেল কী?
উত্তর : নিরক্ষীয় অঞ্চলে নিম্নচাপের দরুণ উর্ধ্বগামী বায়ু পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে ওই বায় ওপরে উঠে শীতল হয়ে উত্তর ও দক্ষিণে ছিটকে যায় এবং তা ক্রমশ সংকুচিত ও ভারী হয়ে কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি অঞ্চলে নেমে আসে, বায়ুর এই চক্রাকার আবর্তনকে হ্যাডলী কক্ষ বলা হয়।
13. সৌর ধ্রুবক (Solar Constant) কাকে বলে?
উত্তর : সূর্য থেকে পৃথিবী ক্রমাগত ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে সূর্যের তাপীয় ফল লাভ করে চলেছে। তবে সূর্য থেকে পৃথিবী প্রতিদিনি ও প্রতিবছর প্রায় কেই পরিমাণ সৌরতাপীয় ফল লাভ করে। একেই সৌর ধ্রুবক বলা হয়।
14. ITCZ কী?
উত্তর : নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 5 থেকে 10° অক্ষরেখার মধ্যে যে নিম্নচাপদ্রোণী আছে সেখানে উত্তর পূর্ব আয়নবায়ু এবং দক্ষিণপূর্ব আয়নবায়ু পরস্পর এসে মিলিত হয়। তাই এই মিলন অঞ্চলকে অন্তক্রান্তীয় অভিসৃতি অঞ্চল বা Inter Tropical Convergence Zone (ITCZ) বলে। এই অঞ্চলে বায়ুচাপীয় ঢাল প্রায় না থাকায়। অনুভূমিক বায়ুপ্রবাহ নেই। তাই এই অঙুলকে শান্তবলয় বলা হয়।
15. লীনাপ কী?
উত্তর : যে তাপ পদার্থের উন্নতার পরিবর্তন না ঘটিয়ে পদার্থের অবস্থার (যেমন—কঠিন থেকে তরলে এবং তরল থেকে গ্যাসীয় অথবা গ্যাসীয় থেকে তরল এবং তরল থেকে কঠিন ইত্যাদি) পরিবর্তন ঘটায় তাকে লীনতাপ বলে।
16. চরম আদ্রর্তা কাকে বলে?
উত্তর : কোনাে নির্দিষ্ট উয়তায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প বর্তমান। থাকে তাকে ওই বায়ুর নিরপেক্ষ বা চরম আদ্রর্তা বলা হয়। নিরপেক্ষ বা চরম আদ্রর্তার পরিমাণ সাধারণত গ্রামে প্রকাশ করা হয়। যেমন—10 গ্রাম/ঘনসেমি।
17. শিলাবৃষ্টি কী?
উত্তর : নাতিশীতােয় মণ্ডলে গ্রীষ্মকালে জলকণা ও বরকণা একত্রে অধঃক্ষেপন রূপে পতিত হলে তাকে শিলাবৃষ্টি বলে। ঊর্ধ্বমুখী প্রবলবায়ুর প্রভাবে জলকণাগুলি অনেক উঁচুতে উঠে গিয়ে শীতল হয়ে বরফকণায় পরিণত হয়। অবশেষে ধীরে ধীরে আয়তনে বেড়ে গিয়ে এই কণাগুলি বৃষ্টির সাথে ঝরে পড়ে।
18. ‘ঘূর্ণবাতের চক্ষু-কাকে বলে?
উত্তর : কুণ্ডলাকারে ঘূর্ণমান ক্রান্তীয় ঘূর্ণর্বাতের কেন্দ্ৰাঞ্চলটিতে বায়ু শান্ত থাকে এবং ঘূর্ণবাতের উপরিভাগ পর্যন্ত শান্ত বায়ুর একটি স্তম্ভ রচিত হয়। একে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলা হয়। এই অলটি প্রায়বৃত্তাকার এবং এর ব্যাস 20-40 কিমি। এখানে বায়ু অত্যন্ত হালকা ও পরিবর্তনশীল।
19. টর্নেডাে কী?
উত্তর : টর্নেডাে হল অতি ক্ষুদ্র কিন্তু অতি মারাত্মক শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণর্বাত। এদের আকৃতি অনেকটা চোঙের মতাে এবং ভূ-পৃষ্ঠের ওপর এদের ব্যাস 100-500 মিটার। এই ঝড়ের কেন্দ্রে বায়ুচাপ 900mb এর নীচে নেমে যায়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রকি পর্বতের পূর্বদিকে এই ঝড় বেশি হয়।।
20. আশ্বিনের ঝড় কী?
উত্তর : শরৎকালে ভারতের উপকূল অঞ্চলে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড়সহ বৃষ্টিপাত হয়। ঝড়ের তাণ্ডবে জীবনহানি ও ধনসম্পত্তির বিপুল ক্ষতি হয়। পশ্চিমবঙ্গে প্রধানত ‘আশ্বিন মাসে এই ধরনের ঘূর্ণিঝড় হয় বলে একে ‘আশ্বিনের ঝড়’ বলা হয়।
21. মৌসুমি বিস্ফোরণ কী?
উত্তর : ক্রান্তীয় পুবালি জেটের প্রভাবে মধ্যভারত ও বঙ্গোপসাগরে গ্রীষ্মকালে সৃষ্ট একাধিক নিম্নচাপজনিত গােলযােগকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমিবায়ু ত্বরান্বিত হয়। এবং বজ্রবিদ্যুৎসহ আকস্মিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। একেই ‘মৌসুমি বিস্ফোরণ’ বা Burst of Monsoon বলে।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ‘অশ্ব অক্ষাংশ কাকে বলে?
উত্তর : নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় ও মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় থেকে বিক্ষিপ্ত ও উর্ধ্বগামী উয় বায়ু শীতল হয়ে ভারি হয়ে উভয় গােলার্ধের 25-35° অক্ষাংশে সৃষ্ট কৰ্কটীয় উচ্চচাপ বলয়ে নেমে আসে ফলে এই অঞ্চলে বায়ুর কোনাে পার্শ্ব প্রবাহ থাকে না, শান্ত অবস্থা বিরাজ করে। উত্তর গােলার্ধে এই অঞ্চলকে কর্কটীয় শান্তবলয় বা অশ্ব অক্ষাংশ বলে। প্রাচীনকালে ইউরােপীয় ঔপনিবেশিকগণ পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে পালতােলা জাহাজে অশ্ব বােঝাই করে আনার সময় এই অণ্ডলে বাতাসের অভাবে আটকে যেত। পানীয় জল অপচয় রােধ করার জন্য নাবিকরা জাহাজের রুগ্ন অশ্বগুলিকে জলে ফেলে দিত। তাই এই কর্কটীয় শান্ত বলয়কে অশ্ব অক্ষাংশ বলা হয়।
2. ওজোন স্তরের গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : স্ট্রাট্রোস্ফিয়ারের 20-35 কিমি উচ্চতায় অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে দুটি অনুক্রমিক আলােক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঘনত্বযুক্ত যে গ্যাসের আস্তরণ সৃষ্টি হয়েছে তা ওজোনস্তর নামে পরিচিত। গুরুত্ব : (i) এই স্তর সূর্য থেকে আসা তিনটি (UV-A, B, C) ক্ষতিকারক রশ্মিকে শােষণ করে জীবজগৎকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। (ii) এই স্তর ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত দীর্ঘ তরঙ্গের অবলােহিত রশ্মির বিকিরণে বাধা দিয়ে বায়ুমণ্ডলের উষ্মতার ভারসাম্য বজায় রাখে।
3. ওজোনস্তর বিনাশের কারণগুলি লেখাে।
উত্তর : ওজোনস্তর বিনাশের কারণগুলি হলাে—(i) CFC বা ক্লোরােফ্লুরােকার্বন হল ওজোন স্তর বিনাশের অন্যতম কারণ। (i) নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রসারের সঙ্গে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস ওজোনস্তর বিনাশ ত্বরান্বিত করছে। (ii) হলােন যৌগের বিশেষত হ্যালােন। 1211 ও হ্যালােন 1301 যৌগদুটি ওজোনস্তর বিনাশে বিশেষ ভূমিকা নেয়। (iv) ট্রাইরাে ব্রোমাে কার্বন, মিথাইল ব্রোমাইড প্রভৃতি ওজোনস্তর বিনাশ করে। (v) কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া (vi) সুপারসনিক জেট বিমান কর্তৃক পরিত্যক্ত জলীয় বাষ্প ওজোন বিনাশ ঘটায়।
4. গ্রিন হাউস এফেক্ট বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : বর্তমানে যথেচ্ছভাবে বৃক্ষচ্ছেদন ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে বায়ুমণ্ডলে co, CH No প্রভৃতি গ্যাসের পরিমাণ দ্রুত হারে বাড়ছে। এই সমস্ত গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলের উধ্বস্তরে একটি স্বচ্ছ আবরণ সৃষ্টি করেছে যার ফলে সূর্যরশ্মি সহজে ভূ-পৃষ্ঠে প্রবেশ করতে পারে কিন্তু বিকিরিত সূর্যরশ্মি সম্পূর্ণরূপে ফিরে যেতে পারে না। ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠের উয়তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা গ্রিনহাউস এফেক্ট নামে পরিচিত।
5. বৈপরীত্য উয়তা (Inversion of Temperature) কাকে বলে?
উত্তর : সাধারণ অবস্থায় বায়ুমণ্ডলের ট্রপােস্ফিয়ার স্তরে প্রতি 1000 মি. উচ্চতা বৃদ্ধিতে 45°C হারে উয়তা হ্রাস পায়। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উয়তা হ্রাস না পেয়ে বরং বাড়তে থাকে। এরূপ অবস্থাকে বৈপরীত্য উয়তা বা উয়তার উক্ৰম বলে। উয়তার উক্ৰম ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরে কিংবা ট্রপােস্ফিয়ারে উর্ধ্ববায়ুস্তরে পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৈপরীত্য উয়তা হলাে বায়ু তাপের অস্থায়ী অবস্থা।
6. মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি অপেক্ষা মেঘমুক্ত রাত্রি শীতল কেন?
উত্তর : দিনের বেলায় মেঘমুক্ত আকাশ থাকলে আগত সৌরকিরণ বাধাহীনভাবে ভূ-পৃষ্ঠে পৌছায় ফলে ভূ-পৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলের উম্লতা বৃদ্ধি পায়। তেমনি রাত্রে পার্থিব বিকিরণ বাধাহীনভাবে হয় ও রাত্রে উয়তা কমে যায়। কিন্তু আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে দিনের বেলায় আগত সৌরকিরণ মেঘে বাধা পেয়ে ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারে না তাই দিনে উয়তা কম হয়। এবং রাতে পার্থিব বিকিরণ মেঘে বাধা পেয়ে পৃথিবী পৃষ্ঠেই ফিরে আসে, তাই রাতে উয়তা বৃদ্ধি পায়। এই জন্যই মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি মেঘমুক্ত রাত্রি অপেক্ষা বেশি উয় হয়।
7. ক্রান্তীয় মণ্ডলে মহাদেশগুলির পশ্চিমে মরুভূমির সৃষ্টি হয় কেন?
উত্তর : ক্রান্তীয় মণ্ডলে মহাদেশগুলির পশ্চিমে মরুভূমি সৃষ্টির কারণগুলি হল—(i) আয়নবায়ু মহাদেশের পশ্চিমদিক থেকে এসে সমুদ্রের শীতল বায়ুর সাথে মেশে। (ii) নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে যত যায় জলীয় বাষ্পধারণ ক্ষমতা তত বাড়ে বলে বৃষ্টির সম্ভাবনা কমে। (ii) মরুভূমি অঞ্চলের ওপর থেকে শুষ্ক বায়ুস্রোত নেমে আসে—ফলে দীর্ঘকাল এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় না। ফলে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
8. জেট বায়ুর বৈশিষ্ট্য লেখাে।
উত্তর : জেট বায়ু হল একটি দ্রুতগামী বায়ুস্রোত। যা মূলত 30° উত্তর অক্ষাংশে পশ্চিমাবায়ু প্রবাহিত অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলের 7-13 কিমি ঊর্ধ্বে ট্রপােস্ফিয়ারে একটি সংকীর্ণ আঁকাবাঁকা পথে প্রবল বেগে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়। বৈশিষ্ট্য—(i) এই বায়ু ভূ-পৃষ্ঠ থেকে 10-12 কিমি উর্ধ্বে সংকীর্ণ স্থানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। সময় | (i) জেট বায়ুর গতিবেগ 350-450km/ঘণ্টা (ii) শীতের প্রারম্ভে এই বায়ু প্রবাহ শুরু হয় এবং চলে মার্চ এপ্রিল মাস পর্যন্ত।
9. নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রতিদিন পরিচলন বৃষ্টিপাত হয় কেন ?
উত্তর : (i) নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর সূর্যকিরণ লম্বভাবে পড়ার দরুণ প্রচুর উত্তাপের সৃষ্টি হয়। (ii) এই অঞ্চলে জলভাগ বেশি। (iii) জলভাগ বেশি তাই প্রচুর জলীয়বাষ্প উৎপন্ন হয়। (iv) উভয় গােলার্ধ থেকে আয়নবায়ু নিরক্ষীয় অঞলে মিলিত হয়। উয়—আর্দ্র বায়ু উর্ধ্বগামী পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি করে। ও ঘনীভূত হয়ে শীতল হয় ও মেঘে পরিণত হয়। (v) পরে এই মেঘ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই ধরনের বৃষ্টি হয় ও বিকেলের দিকে হয় বলে 40 Clock Rain বলা হয।
রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. বায়ুর উয়তার তারতম্যের কারণ সমূহ আলােচনা করাে।
উত্তর : বায়ুর তাপের তারতম্যের কারণ সমূহ :
(i) অক্ষাংশ : পৃথিবীর কক্ষতলের সঙ্গে সর্বদা 66%° কোণে হেলে সূর্যের চারিদিকে পরিক্রমণ করে। এর ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য সারাবছর লম্বভাবে কিরণ দেয় এবং তাপীয় ফল বেশি থাকে। আবার মেরুর দিকে সূর্য ক্রমশ তির্যকভাবে পতিত হয়। ফলে সূর্যের তাপীয় ফল কম হয়। তাই উচ্চ অক্ষাংশ অপেক্ষা নিম্ন অক্ষাংশের গড় উয়তা অধিক হয়।
(ii) ভূমির উচ্চতা : ট্রপােস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতি কিমিতে গড়ে প্রায় 6.4° সেলসিয়াস | sIL ৪০০০ মি হারে উষ্মতা হ্রাস পায়। বায়ুমণ্ডলের উম্লতা তত কম হয়।
(iii) স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন : জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত উঃ বা শীতল হয়। এই কারণে সমুদ্র থেকে কম দূরবর্তী স্থান গ্রীষ্মকালে অধিক। উম্ন ও শীতকালে অধিক শীতল হয়।
(iv) বায়ুপ্রবাহ : সমুদ্রস্রোতের মতােই উয় বায়ু প্রবাহিত অঞল উয় এবং শীতলবায়ু প্রবাহিত অঞ্চল শীতল প্রকৃতির হয়।
(v) সমুদ্রস্রোত : সমুদ্রের যে উপকূলীয় অঞ্চল বরাবর উয় সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় |সে অঞ্চলের বায়ুমণ্ডল উয় এবং যে অঞ্চলে শীতল সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়। সেখানকার বায়ুমণ্ডল শীতল প্রকৃতির হয়।
(vi) ভূমির ঢাল : ভূমির ঢালের দিক অনুযায়ী সৌরশক্তি প্রাপ্তির তারতম্য ঘটে। উত্তর গােলার্ধে উত্তরমুখী ভূমির ঢাল অপেক্ষা দক্ষিণমুখী ভূমির ঢালে অধিক লম্বভাবে সৌরকিরণ পড়ে, ফলে বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা অধিক হয়।
(vii) মেঘাচ্ছন্নতা ও অধঃক্ষেপন : দিনের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে সৌররশ্মির তাপীয়। ফল হ্রাস পায় কিন্তু রাতের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপ মেঘদ্বারা বাধা প্রাপ্ত হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে। ফলে উয়তা বৃদ্ধি পায়। উয়তার ওপর বৃষ্টিপাতের প্রভাব কম হলেও বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে বায়ুমণ্ডলের। উয়তা সামান্য হ্রাস পায়।
(viii) স্বাভাবিক উদ্ভিদ : সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার সময় উদ্ভিদ সৌরশক্তি ও co, শােষণ করে এবং বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের সংযােজন ঘটায়। তাই অধিক উদ্ভিদ আবৃত অঙুল তুলনামূলকভাবে কম উয় হয়; কিন্তু উদ্ভিদ কম থাকলে উয়তা চরম প্রকৃতির
2. জীবজগৎ তথা পরিবেশের ওপর বিশ্ব উন্নয়নের প্রভাব আলােচনা করাে।
উত্তর : পরিবেশের ওপর বিশ্ব উয়ায়নের প্রভাব : বিশ্ব উয়ায়ণ বা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার জীবজগৎ তথা পরিবেশের ওপর সুদূর প্রসারি ক্ষতিকারক প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। যেমন—
(i) মেরু অঞ্চলে বরফের গলন ও পার্বত্য হিমবাহের গলন : বিয় উয়ায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের সঞ্চিত বরফ স্তুপের গলন শুরু হয়েছে এবং পার্বত্য হিমবাহগুলির বরফের আয়তন ক্রমশ কমছে।
(ii) সমুদ্র জলের উচ্চতা বৃদ্ধি : গ্রিনহাউস প্রভাব বৃদ্ধি পেলে পৃথিবীর গড় উয়তা বৃদ্ধিজনিত কারণে মেরু অঞ্চলে ও পার্বত্য অঞ্চলের বরং বেশি মাত্রায় গলে গিয়ে সমুদ্র জলতলে উচ্চতা বৃদ্ধি করছে। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর গড় উয়তায়। প্রায় 1:5° c বৃদ্ধি পাওয়ায় সমুদ্র জলতলের উচ্চতা প্রায় 10-12 সেমি বৃদ্ধি পেয়েছে।
(iii) অধঃক্ষেপনের প্রকৃতি পরিবর্তন : পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন উৎসের জল অধিকতর দ্রুত ও বেশি পরিমাণে বাষ্পীভূত হচ্ছে তার ফলে বৃষ্টিপাত বা অধঃক্ষেপনের পরিমাণ সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাস্পীভবন বেশি হওয়ার ফলে কোথাও প্রবল বর্ষণ অন্যত্র খরা আবার উপকুলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(iv) শস্য উৎপাদনে হ্রাসবৃদ্ধি : বিশ্ব উম্নয়নের প্রভাবে ফসলের উৎপাদন হ্রাস বা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা। নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভৌগােলিক অবস্থান, আবহাওয়ার পরিবর্তন, c0, বৃদ্ধির পরিমাণ, মৃত্তিকার আদ্রর্তা বা শুষ্কতা, ফসলের ধরণ প্রকৃতির উপর শস্য উৎপাদনের হ্রাসবৃদ্ধির বিষয়টি নির্ভর করে।
(v) কৃষি পদধতির পরিবর্তন : গ্রিনহাউস প্রভাবের জন্য পৃথিবীর উয়তা বৃদ্ধি পেলে কৃষিকাজের ওপর ভার প্রভাব পড়লে। যেমন—কৃষি বলয়ের স্থান পরিবর্তিত হয়ে উচ্চ অক্ষাংশের দিকে বিস্তৃত হচ্ছে। আবার চাষযােগ্য জমিতে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ, আগাছা ও রেশম পােকার উপদ্রব বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষিকাজের পরিবর্তে শিল্প, বসতি ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হবে।
3. পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়গুলির সঙ্গে নিয়তবায়ু প্রবাহের সম্পর্ক সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : বায়ুচাপের পার্থক্যই বায়ুপ্রবাহের প্রধান কারণ। ভূ-পৃষ্ঠে সাতটি স্থায়ী বায়ুচাপ বলয় অবস্থান করছে। যথা—(i) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ শান্তবলয়, (i) ও (ii) কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপযুক্ত বলয়, (iv) ও (v) সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়, (vi) ও (vii) সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয়। স্থায়ী চালবলয়গুলির প্রভাবে নিয়মিতভাবে প্রবাহিত বায়ুকেই নিয়তবায়ু বলে। নিয়তবায়ু প্রধানত তিন প্রকার (i) আয়ন বায়ু, (ii) পশ্চিমাবায়ু ও (iii) মেরু বায়ু।
(1) আয়ন বায়ু ও বায়ুচাপ বলয় : কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নির্দিষ্ট পথে, নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয়। উত্তর গােলার্ধে 25°-30° অক্ষরেখা থেকে 5-10° অক্ষরেখার মধ্যে আয়নবায়ু প্রবাহিত হয়। ফেরেলের সূত্রানুযায়ী আয়নবায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে যথাক্রমে উত্তরপূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব আয়নবায়রূপে প্রবাহিত হয়। এই দুই প্রকার আয়নবায়ু নিরক্ষীয় অঞ্চলে মিলিত হয়ে উর্ধ্বগামী হয়। তাই এই অঞ্চলে বায়ুর পার্শ্বপ্রবাহ থাকে না। এই অঞ্জলকেই নিরক্ষীয় শান্তবলয় বলে।
(2) পশ্চিমাবায়ু ও বায়ুচাপ বলয় : কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরু ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নিয়মিতভাবে বায়ু প্রবাহিত হয়। সাধারণভাবে এই বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হওয়ায়, একে পশ্চিমাবায়। বলে। ফেরেলের সূত্রানুসারে, এই বায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে যথাক্রমে দক্ষিণ পশ্চিমা পশ্চিমাবায়ু ও উত্তরপশ্চিম পশ্চিমাবায়ু রূপে প্রবাহিত হয়। উত্তর গােলার্ধে সাধারণত 30°-60° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে পশ্চিমাবায়ু প্রবাহিত হয়।
(3) মেরু ও বায়ুচাপ বলয় : সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নিয়মিতভাবে বায়ু প্রবাহিত হয়। মেরু কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নিয়মিতভাবে বায়ু প্রবাহিত হয়। মেরু। অঞ্চল থেকে প্রবাহিত হওয়ায় একে মেরুবলয় বলে। সাধারণভাবে এই বায়ু উভয় গােলার্ধে 70-80° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়। ফেরেলের সূত্রানুসারে এই বায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে যথাক্রমে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব মেরুবায়ু রূপে প্রবাহিত হয়। উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব আয়নবায়ু যেখানে মিলিত হয় সেই অঞ্চলকে Inter Tropical Convergence Zone বা ITCZ বলে। এবং পশ্চিমাবায়ু ও মেরুবায়ু সেখানে মিলিত হয়, সেই অঞ্জলকে মেরুসীমান্ত অঞ্চল বলে। চাপবলয়গুলি স্থায়ী এবং বায়ুপ্রবাহগুলি নিয়মিত হলেও সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সঙ্গে সঙ্গে চাপবলয়গুলিও যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণে সরে যায়। চাপবলয়গুলির স্থান পরিবর্তনের ফলে বায়ুপ্রবাহগুলিও উত্তরে বা দক্ষিণে সরে যায়।
4. বায়ুচাপের তারতম্যের কারণগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : বায়ুচাপের তারতম্যের প্রধান কারণ হলাে বায়ুর ঘনত্বের তারতম্য। বায়ুচাপের তারতম্যের নিয়ন্ত্রকগুলি হলাে-
(i) উচ্চতা : ভূমিভাগের উচ্চতা, বায়ুচাপের তারতম্যের ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ন্ত্রক। ওপরের বায়ুস্তরের প্রবল চাপে বায়ুর অণুগুলি ও ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি অঞ্চলে বেশি পরিমাণে থাকে। একারণেই সমুদ্রতল সংলগ্ন বায়ুস্তরে বায়ুচাপ বেশি হয়। আবার ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ুর ঘনত্ব ও ওজন কমতে থাকে বলে বায়ুর চাপও কমে যায়। দেখা গেছে, সমুদ্রতল থেকে প্রতি 110 মিটার উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে 1 cm পারদস্তম্ভের সমান বায়ুচাপ (1:34 mb হারে) কমতে থাকে।
(ii) উয়তা : বায়ুর উয়তার পরিবর্তন হলে বায়ুর আয়তন ও ঘনত্বের পরিবর্তন হয়। ফলস্বরূপ চাপেরও পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ বায়ু উত্তপ্ত হলে বায়ুর অনুগুলি গতিশীল হয়ে পরস্পর থেকে দুরে সরে যায়। ওই উয় বায়ু হালকা ও প্রসারিত হয়ে ওপরে উঠে যায় এবং এর চাপও কমে যায়। আবার উত্মতা কম হলে বা বায়ু শীতল হলে সংকুচিত হয় বলে বায়ুর ঘনত্ব বেড়ে যায় এবং চাপও বেশি হয়।
(iii) জলীয়বাষ্প : বায়ুতে উপস্থিত অন্যান্য উপাদানের মধ্যে জলীয়বাষ্প হল অধিক হালকা উপাদান। বেশি জলীয় বাষ্পযুক্ত বায়ু নিম্নচাপবিশিষ্ট হয় এবং কম জলীয়বাষ্পযুক্ত বায়ু উচ্চচাপবিশিষ্ট হয়।
(iv) পৃথিবীর আবর্তন : পৃথিবীর আবর্তনগতির ফলে সৃষ্ট কেন্দ্ৰবহির্মুখী বলের (Centrifugal force) প্রভাবে বায়ুর গতিবিক্ষেপ ঘটে। ফলে বায়ুর চাপ ও ঘনত্ব উভয়ই হ্রাস পায়। নিরীক্ষয় অঞলে আবর্তনের বেগ বেশি থাকায় বায়ুর বেশি গতিবিক্ষেপ ঘটে বলে স্থায়ী নিম্নচাপ বলয় সৃষ্টি হয়েছে।
(v) স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন : পৃথিবীপৃষ্ঠে জলভাগ ও স্থলভাগের বিন্যাস বা বণ্টন তথা উভয়ের মধ্যেকার তাপগ্রাহীতা শক্তির পার্থক্যের জন্যও বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে। জলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু জলীয়বাষ্প গ্রহণ করে বলে তা আর্দ্রও হালকা হয় এবং চাপও কম হয়। কিন্তু স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করতে পারে না। তাই তা শুষ্ক, ভারি হয় এবং চাপও অধিক হয়।
বারিমন্ডল
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ]:[প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. মরা কোটাল হয়—
[A] অমাবস্যা তিথিতে | [B] পূর্ণিমা তিথিতে [C] প্রতিপদে [D] শুক্ল ও কৃয়পক্ষের অষ্টমী তিথিতে
উত্তরঃ [D] শুক্ল ও কৃয়পক্ষের অষ্টমী তিথিতে
2. পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীরতম মহাসাগর হল—
[A] সুমেরু মহাসাগর। [B] ভারত মহাসাগর [C] আটলান্টিক মহাসাগর। [D] প্রশান্ত মহাসাগর
উত্তরঃ [C] আটলান্টিক মহাসাগর
3. ভূপৃষ্ঠের জলভাগের প্রতিটি স্থানে 24 ঘণ্টায় জোয়ার হয়—
[A] একবার [B] দু’বার [C] তিনবার। [D] কোনােটিই সঠিক নয়
উত্তরঃ [B] দু’বার
4. জাপান উপকূলে টাইফুন নামে ভয়ংকর ঝড়-তুফানের সৃষ্টি হয় –
[A] কুরেশিয়ে স্রোত ও শীতল বেরিং স্রোতের মিলনের ফলে [B] উয় নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত ও শীতল কুমেরু স্রোতের মিলনের ফলে [C] উয় নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত ও শীতল পেরু স্রোতের মিলনের ফলে [D] কোনােটিই সঠিক নয়।
উত্তরঃ [A] কুরেশিয়ে স্রোত ও শীতল বেরিং স্রোতের মিলনের ফলে
5. মরা কোটাল হয় যখন চন্দ্র ও সূর্য…………. অবস্থান করে।
[A] সমান্তরালে। [B] একই রেখায় [C] পরস্পরের সমকোণে। [D] সূক্ষ্মকোণে
উত্তরঃ [C] পরস্পরের সমকোণে
6. সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবীর সরলরৈখিক অবস্থানকে বলে-
[A] সি.জি.গি [B] প্রতিযােগ। [C] সংযােগ। [D] কোনােটিই সঠিক নয়
উত্তরঃ [A] সি.জি.গি
7. নিউ ফাউল্যান্ডের কাছে ঘন কুয়াশা ও ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়—
[A] উপসাগরীয় স্রোত ও উত্তর আটলান্টিক স্রোতের মিলনের ফলে [B] ক্যানারি স্রোতের সঙ্গে উপসাগরীয় স্রোতের মিলনের ফলে [C] উপসাগরীয় স্রোত ও ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনের ফলে [D] কোনােটিই সঠিক নয়।
উত্তরঃ [C] উপসাগরীয় স্রোত ও ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনের ফলে
8, ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত প্রবাহিত হয়—
[A] প্রশান্ত মহাসাগরে [B] ভারত মহাসাগরে [C] সুমেরু মহাসাগরে [D] আটলান্টিক মহাসাগরে
উত্তরঃ [A] প্রশান্ত মহাসাগরে
9. আটলান্টিক মহাসাগরে শৈবাল সাগর সৃষ্টি হয়েছে যে স্রোতের দ্বারা সেটি হল—
[A] বেগুয়েলা স্রোত। [B] ক্যানারি স্রোত [C] ল্যাব্রাডর স্রোত [D] কুরেশিয়ে স্রোত
উত্তরঃ [B] ক্যানারি স্রোত
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর :[ প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. আটলান্টিক মহাসাগরের কোন অংশে হিমপ্রাচীর সৃষ্টি হয়?
উত্তর : উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাংশে হিমপ্রাচীর সৃষ্টি হয়।
2. সি. জি. গি. কী?
উত্তর : পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য যখন একটি সরলরেখায় অবস্থান করে তখন সেই অবস্থানকে সি. জি. গি. বলে।
3. সৌর জোয়ার কাকে বলে?
উত্তর : সূর্যের আকর্ষণে পৃথিবীতে যে জোয়ার হয় তাকে সৌর জোয়ার বলা হয়।
4. চান্দ্র জোয়ার কাকে বলে?
উত্তর : চন্দ্রের আকর্ষণে পৃথিবীতে যে জোয়ার হয় তাকে চান্দ্র জোয়ার বলা হয়। (27 দিনে পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের একবার পরিক্রমাকে বলা হয় চান্দ্রমাস।)
5. কোনাে স্থানে একটি জোয়ার ও একটি ভাটার মধ্যে সময়ের ব্যবধান কত থাকে?
উত্তর : 6 ঘণ্টা 13 মিনিট।
6. মৌসুমি স্রোত কোন মহাসাগরে দেখা যায় ?
উত্তর : ভারত মহাসাগরে মৌসুমি স্রোত দেখা যায়।
7. কেন্দ্রাতিগ বল কাকে বলে?
উত্তর : পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতমুখী ক্রিয়াশীল বলকে কেন্দ্রাতিগ বল বলে।
৪. হিমপ্রাচীর কোন মহাসাগরে দেখা যায় ?
উত্তর : হিমপ্রাচীর আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশে দেখা যায়।
9. পশ্চিমবঙ্গে বান ডাকে এমন একটি নদীর নাম লেখাে।
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গে হুগলি নদীতে বান ডাকে।
10. ভূপৃষ্ঠের শতকরা কত ভাগ স্থান জলভাগ অধিকার করে আছে?
উত্তর : ভূপৃষ্ঠের প্রায় 70 ভাগ স্থান জলভাগ অধিকার করে আছে।
11. আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি উয় স্রোতের নাম লেখাে।
উত্তর : আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি উয় স্রোত হল—(i) উপসাগরীয় স্রোত ও (ii) ব্রাজিল স্রোত।
12. পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগরের নাম কী?
উত্তর : পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগরটির নাম প্রশান্ত মহাসাগর।
13. পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগরের নাম কী?
উত্তর : পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগরের নাম আটলান্টিক মহাসাগর।
বারিমন্ডল – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. মগ্নচড়া কী?
উত্তর : মেরু অঞ্চল থেকে শীতল সমুদ্রস্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈল উয়স্রোতের সংস্পর্শে এসে গলে যায়। হিমশৈল মধ্যস্থ নুড়ি, কাকর, বালি, কাদা প্রভৃতি ওজনানুসারে সমুদ্র তলদেশে পর্যায়ক্রমে থিতিয়ে পড়ে। দীর্ঘকাল ধরে এই সম পদার্থ অধঃক্ষিপ্ত হয়ে অগভীর নিমজ্জিত ও চড়ার সৃষ্টি হয়। একে মগ্নচড়া বা ব্যাংক বলে। উদাহরণ : সেবল ব্যাংক, জর্জেস ব্যাংক।
2. হিমপ্রাচীর কাকে বলে?
উত্তর : আটলান্টিক মহাসাগরের নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের নিকট (হ্যালিফক্স ও কড অন্তরীক্ষের মাঝে) উত্তর দিকে (ব্যাকিন উপসাগর) থেকে আগত শীতল ও গাঢ় সবুজ জলের শীতল ল্যাব্রাডার স্রোত এবং দক্ষিণ দিক থেকে আগত উয় ও গাঢ় নীল জলের উপসাগরীয় স্রোত পাশাপাশি পরস্পরের বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। এই দুই স্রোতের স্পষ্ট সীমারেখাকে হিমপ্রাচীর বলে। এখানে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়।
3. নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে ঘন কুয়াশা, ঝড় সৃষ্টি হয়—কারণ ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকুলে উম্ন উপসাগরীয় ও শীতল ল্যাব্রাডার স্রোত পরস্পর মিলিত হয়। উয় উপসাগরীয় স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু উয় ও জলীয়বাষ্পপূর্ণ এবং শীতল ল্যাব্রাডার স্রোতের ওপরকার বায়ু শীতল ও শুষ্ক হওয়ায়, দুই ভিন্নধর্মী বায়ু পরস্পরে সংস্পর্শে এলে শীতলবায়ুর প্রভাবে উয় বায়ুস্থিত জলীয় বাষ্প জমে গিয়ে কুয়াশার সৃষ্টি করে। আবার নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলের কাছে এই দুই ভিন্নধর্মী বায়ুর মুখােমুখী সংঘর্ষের ফলে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়।
4. উপসাগরীয় স্রোত (Gulf Current) কাকে বলে?
উত্তর : উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মেক্সিকো উপসাগর থেকে উৎপন্ন একটি উয়স্রোত হল উপসাগরীয় স্রোত। এই স্রোতের কয়েকটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল— (i) এই স্রোতের জলের রং নীল। (ii) এই স্রোত উয় (27:02°C)। (iii) এই স্রোতের বিস্তার 64 কিমি এবং গভীরতা 914 মিটার। (iv) এই স্রোতের গড় গতিবেগ হল 10-15 মাইল/দিন। (v) এই স্রোত প্রতিসেকেন্ডে 74-93 মিলিয়ন ঘনমিটার জল বহন করে।
5. জাপান বা কুরােশীয় স্রোত কাকে বলে?
উত্তর : উত্তর প্রশান্তমহাসাগরের এই স্রোতটি উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত প্রথমে পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে এবং পরে ফিলিপাইল্স দ্বীপপুঞ্জে প্রতিহত হয়ে উত্তরে বেঁকে যায় এবং দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের উত্তরগামী শাখার সঙ্গে মিশে কুরােশীয় স্রোত নামে এবং জাপানের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হবার সময় জাপান স্রোত নামে পরিচিত।
6. ৰেয়েলা স্রোত কাকে বলে?
উত্তর : দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের এই শীতল স্রোতটি কুমেরু স্রোতের একটি শাখা আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে উত্তমাশা অন্তরীপে প্রতিহত হয়ে পশ্চিম উপকূল বরাবর অ্যাগুয়েলার বেঙ্গুয়েলা বন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্রোতের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় 10 কিমি।
7. ব্রাজিল স্রোত কাকে বলে?
উত্তর : বেঙ্গুয়েলা স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহ দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূলে সেন্ট রক অন্তরীপে প্রতিহত হয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। এর দক্ষিণের শাখাটি ব্রাজিলের পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণে 40° দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্রোত ব্রাজিলস্রোত নামে পরিচিত। অধিক উয়তা ও লবণাক্ততা এই স্রোতের প্রধান বৈশিষ্ট্য। গতিবেগ 28 km/hour।
8. বানডাকা কাকে বলে?
উত্তর : ভরা কোটালের সময় সমুদ্রের জল সংকীর্ণ নদীমুখে বা চড়াযুক্ত নদীমুখে মােহানা দিয়ে উলটো খাতে, খুব উঁচু হয়ে তীব্র গতিতে নদীতে প্রবেশ করে প্রবল জলােচ্ছ্বাস ঘটায়। একে বান ডাকা বলে। হুগলি, ইয়াংসিকিয়াং, টেমস্ নদীতে বানডাকার সৃষ্টি হয়।
9. সিজিগি কী?
উত্তর : চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবীর সরলরৈখিক (180°) অবস্থানকে জ্যোতির্বিজ্ঞানে সিজিগি (Sy Zy Gy) বলে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে সিজিগি অবস্থান লক্ষ করা যায়। সিজিগি অবস্থানে জোয়ারভাটার প্রাবল্য বেশি হয়।
10. যাঁড়াযৗড়ি বান কাকে বলে?
উত্তর : প্রবল বর্ষায় ভরা কোটালের সময় জলস্ফীতির মাত্রা এত বেশি হয় যে ওই অবস্থানকে দুটি ষাঁড়ের (নদীর সমুদ্রগামী জল ও জোয়ারের উজানগামী জল) লড়াই বা যুদ্ধকালীন অবস্থার সাথে তুলনা করে একে যাড়া-যাঁড়ির বান বলে। এই সময় জোয়ারের জল 5-10 মিটার উঁচু হয়। উদাহরণ : ভাগীরথী হুগলি নদীতে বর্ষাকালে এই বান দেখা যায়।
11. বেলাের্মি কী?
উত্তর : জোয়ার তরঙ্গের অগ্রগমনকে বেলাের্মি বলা হয়। পৃথিবীর যে যে স্থানবিন্দু সমূহে GMT অনুসারে একই সময় জোয়ার হয়, সেই স্থানগুলিকে একটি কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করলে যে রেখা পাওয়া যায়, তাকে বলে সহবেলাের্মি রেখা।
12. জোয়ার অন্তর কাকে বলে?
উত্তর : যে কোনাে দুটি জোয়ারের সময়ের ব্যবধানকে জোয়ার অন্তর বলে। সাধারণভাবে পরপর দুটি জোয়ারের (মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ার) সময়ের ব্যবধান প্রায় 12 ঘণ্টা 26 মিনিট। তবে দুটি মুখ্য জোয়ার ও দুটি গৌণ জোয়ারের অন্তর হয় 24 ঘণ্টা 52 মিনিট।
বারিমন্ডল – ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. সারগাসসা সি বা শৈবাল সাগর কী?
উত্তর : নিয়ত বায়ু দ্বারা পরিচালিত সমুদ্রস্রোত অনেক সময় সমুদ্রের মধ্যবর্তী অংশে স্রোতের আবর্ত বা ঘূর্ণির সৃষ্টি করে। আবর্তের মধ্যবর্তী অংশ স্রোতহীন হওয়ায় সামুদ্রিক আগাছা ও শৈবাল জন্মায়। স্রোতহীন, আগাছা সমৃদ্ধ সমুদ্রের ওই অংশকে সারােগাসাে সি বা শৈবাল সাগর বলে। উদাহরণ : (i) আটলান্টিক মহাসাগরীয় শৈবাল সাগর, (ii) প্রশান্ত মহাসাগরীয় শৈবাল সাগর।
2. গ্র্যান্ড ব্যাংক কী?
উত্তর : গ্র্যান্ড ব্যাংক হল বিশ্বের বৃহত্তম মগ্নচড়া।
অবস্থান—উত্তর-পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগর, নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের নিকট অবস্থিত।
উৎপত্তির কারণ—শীতল লাব্রাডার স্রোতের সঙ্গে আসা হিমশৈল উয় উপসাগরীয় স্রোতের সংস্পর্শে গলে গিয়ে সমুদ্র তলদেশে নুড়ি, কাকর, বালি, পলি, কাদা প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে। বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণের জন্য বিখ্যাত।
3. সমুদ্রস্রোতের চক্ৰগতি বা জায়র (Gyre) বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : পৃথিবীর প্রধান তিনটি মহাসাগরে সমুদ্রস্রোতের গতিপথ অনুসরণ করলে দেখা যায় যে সেগুলি চক্রাকারে ঘুরে জলাবর্ত সৃষ্টি করে। একে সমুদ্রস্রোতের চক্রগতি বা জায়র বলে। কোরিওলিস বলের প্রভাবে এটি হয়। এই চক্রগতিতে সমুদ্রস্রোত উত্তর গােলার্ধে দক্ষিণাবর্তে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বামাবর্তে ঘুরতে থাকে।
4. গ্র্যান্ড ব্যাংক মগ্নচড়াটি বাণিজ্যিক মৎস্যক্ষেত্র হিসাবে
খ্যাতি লাভ করেছে কেন?
উত্তর : কারণগুলি হল—(i) এখানে সমুদ্র অগভীর হওয়ায় সূর্যরশ্মি তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। ফলে এখানে মাছের খাদ্য প্ল্যাঙ্কটন প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। (ii) উয় ও শীতল স্রোতের মিলনের ফলে এখানে প্রচুর সামুদ্রিক মাছের সমাবেশ ঘটে। (iii) এখানকার নীতিশীতােয় জলবায়ু মাছ শিকার, মাছ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অনুকূল। (iv) এখানে কৃষিজমির অভাব থাকায় মৎস্য আহরণ এখানকার অধিবাসীদের অন্যতম জীবিকা।
5. উয়স্রোত ও শীতলস্রোতের মধ্যে পার্থক্যগুলি লেখাে।
উত্তর : উয়স্রোত ও শীতলস্রোতের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল-
উয়ুস্রোত শীতলস্রোত
(i) ক্রান্তীয় ও উপক্ৰান্তীয় সমুদ্র (i) মেরু সমুদ্রে এর উৎপত্তি হয়।
(ii) জলের উয়তা প্রবাহিত অঞ্চলের জলের উয়তা অপেক্ষা বেশি। (ii) জলের উয়তা প্রবাহিত অঞ্চলের জলের উয়তা অপেক্ষা কম।
(iii) সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের উয়তা বাড়ায়। উচ্চ নাতিশীতােয় অঞ্চলের উপকূলে বরফ জমতে দেয় না। (iii) উয়তা কমায়। উয় অঞ্চলের উপকূলে মনােরম অবস্থা সৃষ্টি করে।
6. মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের মধ্যে পার্থক্য আলােচনা করাে।
উত্তর : মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল-
বিষয় মুখ্য জোয়ার গৌণ জোয়ার
সংজ্ঞা পৃথিবী আবর্তনরত অবস্থায় ভূ-পৃষ্ঠের যে অংশ চাদের সম্মুখীন বা সর্বাপেক্ষা নিবর্তী হয়, সেই স্থানের জলরাশি চন্দ্রের আকর্ষণে অধিকমাত্রায় ফুলে উঠে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয়, তাকে মুখ্য বা চন্দ্র জোয়ার বলে। ভূ-পৃষ্ঠের পৃথিবীর যে অংশে মুখ্য জোয়ার হয় তার বিপরীতে প্রতিপাদ স্থানে প্রধানত পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয় তাকে গৌণ জোয়ার বলে।
কার্যকরী বল চাদের আকর্ষণ বল মুখ্য ভূমিকা পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বল মুখ্য ভূমিকা নেয়। পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বল মুখ্য ভূমিকা।
জোয়ারের প্রাবল্য মুখ্য জোয়ারের প্রাবল্য গৌণ জোয়ারের তুলনায় অনেক বেশি। গৌণ জোয়ারের প্রাবল্য মুখ্য জোয়ারের তুলনায় বেশ কম।
ভরকেন্দ্রের দূরত্ব পৃথিবীর ভরকেন্দ্র থেকে মুখ্য জোয়ার স্থানের দূরত্ব কম অর্থাৎ চাদের অধিকতর নিকটবর্তী। পৃথিবীর ভরকেন্দ্র থেকে গৌণ জোয়ার স্থানের দূরত্ব পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে দূরত্ব অপেক্ষা প্রায় 4800 কিমি অধিক হওয়ায় ওই স্থানে পৃথিবীর আকর্ষণ বল কম, তাই কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবেই গৌণ জোয়ার হয়।
7. পূর্ণিমা অপেক্ষা অমবস্যার জোয়ার প্রবল হয় কেন তা ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : পূর্ণিমা তিথিতে চঁাদ ও সূর্যের মাঝখানে পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করায় পৃথিবীর যে অংশ চাদের ঠিক সামনে আসে সেখানে হয় মুখ্য চান্দ্র জোয়ার এবং প্রতিপাদ স্থানে হয় মুখ্য সৌর জোয়ার। ফলে পূর্ণিমা তিথিতে যে তীব্র জোয়ারের সৃষ্টি হয় তা পূর্ণিমার ভরা জোয়ার বা ভরা কোটাল বলে। অন্যদিকে অমাবস্যা তিথিতে একই সরলরেখায় পৃথিবীর একই দিকে চাঁদ ও সূর্য অবস্থান করলে তাদের মিলিত আকর্ষণ বল পৃথিবীর একই স্থানে হওয়ায় ওই স্থানে জলরাশি অতি প্রবলমাত্রায় স্ফীত হয় এবং ভরা কোটাল নামে পরিচিত। পূর্ণিমাতে একটি স্থানে চাদের একক মহাকর্ষ শক্তি, অমাবস্যাতে চাঁদ ও সূর্যের যৌথ মহাকর্ষ বল কাজ করায় অমাবস্যার জোয়ারে প্রাবল্য বেশি।
8. দিনে দুবার জোয়ার ভাটার কারণ কী?
উত্তর : আবর্তনের ফলে পৃথিবীর যে অংশ চঁাদের সামনে আসে সেখানে মুখ্য জোয়ার এবং তার বিপরীত প্রান্তে গৌণ জোয়ার হয়। এই দুই স্থানের সমকোণে অবস্থিত স্থানে ভাটা হয়। পৃথিবীর একবার আবর্তনের মধ্যে অর্থাৎ 24 ঘণ্টায় পৃথিবীর প্রতিটি স্থান একবার করে চাঁদের সামনে আসে। ফলে সেই স্থানে মুখ্য জোয়ার ও প্রতিপাদ স্থানে গৌণ জোয়ার হয়। এই গৌণ জোয়ারের 12 ঘন্টা 26 মিনিট পর প্রতিপাদ স্থানটি চাদের সামনে এলে সেখানে মুখ্য জোয়ার হয় এবং প্রথমে যে স্থানে মুখ্য জোয়ার হয়েছিল সেখানে গৌণ জোয়ার হয়। সুতরাং 24 ঘন্টায় একই স্থানে দিনে দুবার জোয়ার এবং জোয়ারের সমকোণী অবস্থানে ভাটা হয়। ভাঁটাও দিনে দু’বার সংঘটিত হয়।
9. অ্যাপােজি ও পেরিজির মধ্যে পার্থক্য লেখাে।
উত্তর : অ্যাপােজি ও পেরিজির মধ্যে পার্থক্য
বিষয় অ্যাপােজি পেরিজি
(i) সংজ্ঞা চাদের পৃথিবী পরিক্রমণ কালে চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব যখন সর্বাধিক থাকে সেই অবস্থানকে অ্যাপােজি বলে। চাদের পৃথিবী পরিক্রমণ কালে চঁাদ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব যখন সবচেয়ে কম থাকে, সেই অবস্থানকে পেরিজি বলে।
(ii) দূরত্ব অ্যাপােজি অবস্থানে চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যেকার দূরত্ব 4,07,000 কিমি. পেরিজি অবস্থানে চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে কার দূরত্ব 3,56,000 কিমি।
(iii) দৃশ্যমান অপর নাম এই সময় চাঁদকে ছােটো ও অনুজ্জ্বল দেখায়। এই সময় চঁাদকে অ্যাপােজি অপেক্ষা 12%-14% বড়াে ও 25-30 গুণ বেশি উজ্জ্বল দেখায়।
জোয়ারের তীব্রতা অ্যাপােজি অবস্থানে জোয়ার ভাটার তীব্রতা কম হয়। পেরিজি অবস্থান জোয়ারভাটার তীব্রতা বেশি হয়।
বারিমন্ডল – রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখাে। অথবা, সমুদ্রস্রোতের গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : সমুদ্রস্রোত জলবায়ু ও মানুষের অর্থনৈতিক কাজকর্মকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। যেমন-
(1) জলবায়ুর ওপর প্রভাব :
(i) উয়তার হ্রাসবৃদ্ধিতে : উয় সমুদ্রস্রোত উচ্চঅক্ষাংশীয় অঞ্চলে উয়তা বৃদ্ধি করে। যেমন—উয় উত্তর আটলান্টিক স্রোত নরওয়ের উপকুলীয় অঞ্চলে উয়তা বৃদ্ধি করে। শীতল সমুদ্রস্রোত সংশ্লিষ্ট উপকুলীয় অঞ্চলের উয়তা হ্রাস করে। যেমন— শীতল লাব্রাডার স্রোতের প্রভাবে কানাডার পূর্ব উপকূলের উয়তা হ্রাস পায়।
(ii) বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত : উয় উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে ইংল্যান্ডের পশ্চিম উপকুলে বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে শীতল বেরিং স্রোতের প্রভাবে রাশিয়ার পূর্ব উপকূলে তুষারপাত হয়।
(iii) ঝড়ঝঞা ও কুয়াশা : উয় ও শীতল সমুদ্রস্রোতের মিলন স্থলে কুয়াশা, ঝড়-ঝঞ্চার সৃষ্টি হয়।
(iv) মরুভূমির সৃষ্টি : ক্রান্তীয় অঞ্চলে শীতলস্রোত প্রভাবিত মহাদেশগুলির পশ্চিমাংশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কমে গিয়ে উয় মরুভূমি সৃষ্টি করে। যেমন—কালাহারি, সােনেরান, আটাকামা প্রভৃতি মরুভূমি সৃষ্টির অন্যতম কারণ শীতলস্রোত।
(2) পরিবহন ব্যবস্থার ওপর প্রভাব : (i) সমুদ্রস্রোতের অনুকুলে জাহাজ চলাচলের সুবিধা হয়। (ii) উয় সমুদ্রস্রোত উপকূলীয় অঞ্চলের বন্দরগুলিকে বরফযুক্ত রাখে। (iii) শীতল স্রোতের সঙ্গে আগত হিমশৈল জাহাজ চলাচলে বাধা দেয় ও বিপদ সৃষ্টি করে।
(3) মাচড়া ও মৎস্য আহরণ : শীতলস্রোতের সঙ্গে আগত বরফ উয়স্রোতের সংস্পর্শে গলে গিয়ে সেই সঙ্গে আসা নুড়ি, বালি, কাদা অধঃক্ষিপ্ত হয়ে অগভীর মগ্নচড়া সৃষ্টি করে। যেখানে প্ল্যাঙ্কটনের প্রাচুর্য থাকায় বিপুল পরিমাণ মৎস্যের সমাবেশ ঘটে ও বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ ক্ষেত্র তৈরি হয়। যেমন—উত্তর পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগরীয় ক্ষেত্র।
(4) জীবজগতের ওপর প্রভাব : (i) স্রোতের মাধ্যমে সমুদ্রজলের উয়তা নিয়ন্ত্রিত হয় যা সামুদ্রিক জীবের বসবাস নিয়ন্ত্রিত হয়। (i) উম্ন স্রোত সামুদ্রিক জীব, মাছ, প্রবাল, প্ল্যাঙ্কটন বিস্তারের আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। (ii) স্রোতের উর্ধ্বমুখী প্রবাহ বা আবর্তের কারণে লবণতার পরিমাণ নির্ভর করে। (iv) অন্যদিকে এলনিনাের প্রভাবে পেরু চিলি উপকুলে প্ল্যাঙ্কটন ও মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
2. জোয়ার ভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : প্রধানত দুটি কারণে পৃথিবীতে জোয়ার ভাটার সৃষ্টি হয়। যথা-(i) পৃথিবীর ওপর চঁদ ও সূর্যের মিলিত মহাকর্ষ বলের প্রভাব এবং (ii) পৃথিবীর আবর্তন জনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব।
(i) পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের মিলিত মহাকর্ষ বলের প্রভাব : নিউটনের মহাকর্ষ নিয়ম অনুযায়ী পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য পরস্পর পরস্পরকে আকর্ষণ করে। যে বস্তুর ভর যত বেশি আকর্ষণ বল তার তত বেশি এবং যে বস্তুর দূরত্ব যত বেশি তার আকর্ষণ বল তত কম।
পৃথিবী থেকে সূর্য গড়ে 15 কোটি কিমি দূরে অবস্থিত এবং চাঁদ ও 3 লক্ষ 84 হাজার 400 কিমি দূরে অবস্থিত। তাই পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ বল (2.2 গুণ) বেশি। প্রধানত চাঁদের আকর্ষণেই সমুদ্রের জল স্ফীত হয়ে জোয়ারের সৃষ্টি করে। জোয়ারের সমকোণস্থ অঞ্চলের জলতল নেমে গিয়ে ভাটার সৃষ্টি করে। সূর্যের চন্দ্রের চেয়ে প্রায় 255 লক্ষ গুণ ভারি হলেও বহু দূরে (প্রায় 391 গুণ) অবস্থিত হওয়ার জন্য সূর্যের আকর্ষণে জোয়ার তত প্রবল হয় না। সিজিগি অবস্থানে পৃথিবীর একই স্থানে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণ কার্যকরী হওয়ায় জোয়ার খুব প্রবল হয়।
(i) পৃথিবীর আবর্তনজনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব : পৃথিবীর আবর্তনজনিত কারণে কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয়, যার প্রভাবে সমুদ্রের জলরাশি বাইরের দিকে বিক্ষিপ্ত হওয়ায় প্রবণতা লাভ করে। এই বল মহাকর্ষ বলের বিপরীতে কাজ করে। অর্থাৎ চাঁদের আকর্ষণে যে স্থানে জোয়ার হয় তার বিপরীতে প্রতিপাদ স্থানে কেন্দ্রাতিগ বল অধিক কার্যকরী হওয়ায় সেখানে জোয়ার (গৌণ জোয়ার) হয়, তবে প্রাবল্য তুলনামূলক কম। জোয়ারের স্থানে বিপুল জলরাশি সরবরাহের জন্য এদের মধ্যবর্তী সমকোণস্থ স্থানগুলিতে জলতল নেমে গিয়ে ভাটার সৃষ্টি করে।
এছাড়া, সমুদ্রতলের ঢাল, তটভূমির প্রকৃতি, জলস্তরের ওঠানামা, জলের পৃষ্ঠতলে বায়ুর গতিশক্তির ঘর্ষণ প্রভৃতি জোয়ারভাটা সৃষ্টিতে পরােক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
3. ভরা কোটাল এবং মরা কোটাল কীভাবে সৃষ্টি হয় ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : ভরা কোটাল : আবর্তনকালে পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিতে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করে (সিজিগি অবস্থান)। এই সময় জোয়ার অতি প্রবল হয় এবং সাধারণ জোয়ার অপেক্ষা 20% জল বেশি ফুলে ওঠে। একেই ভরা কোটাল বলে।
পূর্ণিমায় ভরা কোটাল : পূর্ণিমা তিথিতে সিজিগি অবস্থানে পৃথিবী থাকে চাদ ও সূর্যের মাঝখানে (প্রতিযােগ)। এই অবস্থায় চাঁদের আকর্ষণে জোয়ার প্রবল আকার নেয় এবং বিপরীত অংশে কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব ও সূর্যের আকর্ষণেও জোয়ার প্রবল হয়। একেই পূর্ণিমার ভরা কোটাল বা তেজ কোটাল বলে।
অমাবস্যায় ভরা কোটাল : অমাবস্যা তিথিতে সিজিগি অবস্থানে চাদ থাকে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে (সংযােগ)। এই অবস্থায় পৃথিবীর যে অংশে চাদের আকর্ষণ বল কাজ করে সেখানেই সূর্যের আকর্ষণ বলও কাজ করে। ফলে জল প্রবলভাবে ফুলে ওঠে এবং জোয়ার অতি প্রবল আকার নেয়। একে অমাবস্যার ভরা কোটাল বা তেজ কোটাল বলে। পূর্ণিমার ভরা কোটাল অপেক্ষা অমাবস্যার ভরা কোটাল অনেক তেজি হয়।
মরা কোটাল বা মরা জোয়ার : কৃয় ও শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পৃথিবীর সাপেক্ষে চাঁদ ও সূর্য পরস্পরের সমকোণে অবস্থান করে। এরূপ অবস্থায় পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের ঠিক সামনে থাকে সেখানে জোয়ার হয়। এক্ষেত্রে চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল পরস্পরের বিপরীতে কাজ করে বলে সমুদ্রের জলরাশি সেভাবে ফুলে ওঠে না। অষ্টমী তিথির এই জোয়ারকে মরা কোটাল বা মরা জোয়ার বলে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ]:[প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. ছেড়া কাগজ থেকে পুনরায় কাগজ তৈরি করা হল যে ধরনের প্রক্রিয়া –
[A] পুনর্নবীকরণ [B] পরিমাণ হ্রাস [C] পৃথকীকরণ [D] পুনর্ব্যবহার
উত্তরঃ [A] পুনর্নবীকরণ
2. গৃহস্থালীর বর্জ্যের উদাহরণ হল—
[A] কীটনাশক [B] তরিতরকারির খােসা [C] ইনজেকশনের সিরি [D] বীজ
উত্তরঃ [B] তরিতরকারির খােসা
3. মৃতপ্রাণী বা গাছের পচা ডালপালা যে ধরনের বর্জ্যের উদাহরণ-
[A] গৃহস্থালী [B] তেজস্ক্রিয় [C] জৈব [D] কৃষিজ
উত্তরঃ [C] জৈব
4. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার তিনটি মূল প্রক্রিয়া হল-
[A] 3s [B] 3z [C] 3R [D] 3B
উত্তরঃ [C] 3R
5. পরিবেশের জীবজ ও অজীব উপাদনের মধ্যে গড়ে ওঠা পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ককে বলা হয়—
[A] বাস্তুতন্ত্র [B] গ্রিন হাউস [C] জীবতন্ত্র [D] জলতন্ত্র
উত্তরঃ [A] বাস্তুতন্ত্র
6. পরিবেশে থাকা এক ধরনের সবুজাভ সহজ দাহ্য গ্যাস হল-
[A] মিথেন [B] অক্সিজেন। [C] নাইট্রোজেন [D] নাইট্রাস অক্সাইড
উত্তরঃ [A] মিথেন
7. সিমেন্ট তৈরিতে যে প্রক্রিয়া প্রয়ােগ করা হয় সেটা হল—
[A] কম্পােজিট [B] স্ক্র্যাবার [C] ল্যান্ডফিল [D] নিষ্কাশন
উত্তরঃ [B] স্ক্র্যাবার
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. বর্জ্য পদার্থগুলিকে কোনাে স্থানে ফেলে জমাট করার পদ্ধতিকে বলে ____________
উত্তর : ভরাটকরণ বা Landfil
2. বর্জ্য থেকে নির্গত একটি গ্যাস হল, ______________
উত্তর : মিথেন।
3. প্রকৃতির বৃক্ক’ বলা হয় __________
উত্তর : জলাভূমিকে
4. GAP’-এর পুরাে নাম ____________
উত্তর : গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. ইউট্রোফিকেশন কী?
উত্তর : পরিপােষক দুষণের ফলে হ্রদ জলাশয় ও পুকুরে যে প্রক্রিয়ায় অ্যালগি জাতীয় জলজ উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটে এবং জলাশয় ক্রমশ ভরাট হয়ে আসে, সেই প্রক্রিয়াকে ইউট্রোসিকেশন বলে।
2. Bio-gas কী?
উত্তর : জৈব পদার্থকে বন্ধ জায়গায় রেখে যে জ্বালানি গ্যাস উৎপন্ন করা হয়, তাকে Bio- gas বা জৈব গ্যাস বলে। জৈব গ্যাসের কাঁচামাল হিসাবে সাধারণত গােবর ব্যবহার করা হয়। এটি একটি পুনর্ভব শক্তি সম্পদ ও পরিবেশমিত্র।
3. ল্যান্ডফিল কী?
উত্তর : লােকালয় থেকে দুরে ফাঁকা জায়গায় কিংবা নীচু জমিতে বিপজ্জনক নয় এমন কঠিন বর্জ্য পদার্থ জমা করাকে ‘ল্যান্ডফিল’ বলে। এ পদ্ধতি প্রয়ােগে খরচ কম হয় এবং এটি পরিকল্পনাহীন। সাধারণ নির্মাণ সামগ্রী, গার্হস্থ্য ও কুটির শিল্পজাত সামগ্রী নিক্ষেপ করা হয়।
4. জীববিশ্লেষ্য বর্জ্য ও জীব অবিশ্লেষ্য বর্জ্য পদার্থ কী?
উত্তর : জীববিশ্লেষ্য বর্জ্য পদার্থ হল সেই সমস্ত বর্জ্য পদার্থ যা যেকোনাে জীব, মূলত আণুবীক্ষণিক বিয়ােজক দ্বারা বিশ্লেষ্য হতে পারে। উদাঃ—উচ্ছিষ্ট খাদ্য বস্তু যে সমস্ত বর্জ্য পদার্থ কোনাে জীব দ্বারা বিয়ােজিত হয় না তাদের জীব অবিশ্লেষ্য বর্জ্য পদার্থ বলে। উদাঃ—কৃত্রিম পলিমার, প্লাস্টিক, ডিডিটি, কাচ ইত্যাদি।
5. ভার্মি কম্পােস্টিং কাকে বলে?
উত্তর : জৈব বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি পদ্ধতি হলাে ভার্মি কম্পােস্টিং। এই পদ্ধতিতে জৈব বর্জ্য পদার্থ, মানুষ বা গবাদি পশুর মল ব্যাকটিরিয়া দ্বারা পচন ঘটিয়ে হিউমাসে পরিণত করা হয়। কেঁচো, আবায়বীয় ব্যাকটেরিয়া দ্বারা জৈব বর্জ্যের সন্ধান প্রক্রিয়া ঘটে। 2-3 সপ্তাহের মধ্যে এই জৈবসার প্রস্তুত হয়।
6. ধোঁয়াশা (Smog) কী?
উত্তর : নাইট্রোজেন অক্সাইড ও হাইড্রোকার্বনের সঙ্গে সূর্যরশ্মির আলােক রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটলে যে ধোঁয়াটে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে ধোঁয়াশা বলে। এর ফলে নাক, জ্বালা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হয়। শীতকালে ধোঁয়াশা বেশি হয়।
7. London Smog ঘটনাটি কী?
উত্তর : 1952 সালে বায়ুদূষণজনিত কারণে যে ভয়ঙ্কর ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছিল লন্ডন শহরে তা London Smog নামে পরিচিত। শিল্প কারখানার অতিরিক্ত ভাসমান কয়লা গুড়াে, ঘূর্ণবাতের ফলে শহর জুড়ে ধোঁয়াশার একটি পুরু স্তর সৃষ্টি করেছিল যেটি 5 ডিসেম্বর 1952 থেকে 9 ডিসেম্বর 1952 পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল ঘটনাটি।
8. PAN কী?
উত্তর : PAN হলাে পারঅক্সি অ্যাসাইট নাইট্রেট, যা একটি গৌণ বায়ুদূষক যানবাহনের ধোঁয়া, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া এর উৎস। ধোঁয়া সৃষ্টির অন্যতম কারণ। বাতাসে এর উপস্থিতি মানুষের চোখের সমস্যা এবং ফুসফুসের সমস্যা সৃষ্টি করে।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ম্যানিওর পিট কী?
উত্তর : গ্রামাঞ্চলে বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপস্থল, সংগ্রহ ও তার নির্বিকরণ পদ্ধতি না থাকায় বর্জ্য পদার্থ যত্রতত্র ফেলা হয়। ফলে দূষিত হয়। ম্যানিওর পিট ব্যবস্থায় বাড়ির আশে পাশে গর্ত তৈরি করে গৃহস্থালির সকল প্রকার বর্জ্য পদার্থ ওই গর্তে 5-6 আশে পাশে গর্ত তৈরি করে গৃহস্থালির সকল প্রকার বর্জ্য পদার্থ ওই গর্তে 5-6 মাস ধরে চাপা দেওয়া হয় যা পরে জৈবসারে পরিণত হয় এবং কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়।
2. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় Fly Ash-এর ভূমিকা কী?
উত্তর : কয়লা নির্ভর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রচুর পরিমাণে ফ্লাই অ্যাশ ও তলানি ছাই উৎপন্ন হয়। ফ্লাই অ্যাস সিমেন্ট ও ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া বাঁধ তৈরি করতে, খনির ফাকা স্থান পূরণ করার কাজে, নীচু জমি ভরাট করতে, মৎস্য প্রকল্পে ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার করা হয়।
3. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্কাবারের ভূমিকা কী?
উত্তর : এই পদ্ধতিতে শিল্প থেকে নির্গত বায়ুদূষণকারী পদার্থ ও গ্যাসের অপসারণ ঘটিয়ে বায়ুকে বিপন্মুক্ত করা হয়। এটি দু’ প্রকার—(i) শুদ্ধ স্ক্রাবার ব্যবহার করা হয় নির্গত ধোঁয়া থেকে অন্নদূর করার জন্য। এবং (ii) আর্দ্র স্ক্রাবার ব্যবহার করা হয় দূষণকারী গ্যাস, দূষণ কণা দূর করার জন্য।
4. কম্পােস্টিং প্রক্রিয়া কী?
উত্তর : জৈব বর্জ্য পদার্থ, মানুষ বা গবাদি পশুর মলকে ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা পচন ঘটিয়ে হিউমাসে বা জৈবসারে পরিণত করাকে কম্পােস্টিং বলে। কম্পােস্টিং-এর সময় উপজাত বস্তু হিসাবে CO, জল ও তাপ উৎপন্ন হয়। এই পদ্ধতিতে 60°C বা তার বেশি উয়তা উৎপন্ন হওয়ায় মশা-মাছির ডিম বা লার্ভা নষ্ট হয়। আগাছা ও অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস হয়। আমাদের দেশে দুটি পদ্ধতিতে কম্পােস্টিং করা হয়। (i) বেঙ্গালুরু পদ্ধতি ও (ii) যান্ত্রিক কম্পােস্টিং ।
5. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় 4R এর ভূমিকা কী?
উত্তর : 4Rহল—(i) Reduction-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রথম স্তম্ভ হলাে বর্জ্যের পরিমাণকে হ্রাস করা। (ii) Waste Recycling-ব্যবহারের অনুপযুক্ত পদার্থকে পুনরায় ব্যবহারের উপযােগী করে তােলাকে বর্জ্যের পুনর্নবীকরণ বলে। (iii) Reuse-কোনাে পরিবর্তন ছাড়াই বর্জ্য পদার্থের ব্যবহার করা হলে তাকে পুনর্ব্যবহার বলে। (iv) Rot- কম্পােস্টিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জৈব বর্জকে জৈব সারে পরিণত করে কৃষিকাজে ব্যবহার করার প্রক্রিয়া।
6. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের ভূমিকা আলােচনা করাে।
উত্তর : বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীরা নিম্নলিখিত কাজগুলি করতে পারে- (i) বাড়ির বর্জ্য নির্দিষ্ট পাত্রে একত্রিত করা। (ii) ম্যানিওর পিট ব্যবস্থায় জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। (iii) নিজের শ্রেণিকক্ষ এবং স্কুল প্রাঙ্গণ বর্জ্য মুক্ত রাখা। (iv) নিকটস্থ হাট বাজার পর্যবেক্ষণ করে দূষণ সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।
7. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়ােজনীয়তা আলােচনা করাে।
উত্তর : বর্জ্য বা জঞ্জালকে কমিয়ে এনে মুক্ত করে পৃথিবীকে সুষ্ঠু বাসযােগ্য করে গড়ে তােলার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়ােজন। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে হাসপাতালের মােট বর্জ্যের 10% সংক্রামক বর্জ্য। খুব সহজেই এই 10% বর্জকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। পরিবেশ তথা মানব জাতি সমূহ সমগ্র জীবজগৎকে বাঁচাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার
8. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কী? এবং পদধতিগুলির নাম লেখাে।
উত্তর : দূষণ মাত্রাকে প্রকৃতির সহ্যসীমার মধ্যে রাখার উদ্দেশ্যে যে বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিভিন্ন উৎসস্থল থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ করিয়ে আনা, পুনর্নবীকরণ ও সংরক্ষণ করা হয় তাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগুলি হলাে—(i) বর্জ্য পৃথকীকরণ (i) ভরাটকরণ (iIi) কম্পােস্টিং (iv) নিকাশি বা নিষ্কাশন ব্যবস্থা (v) স্ক্রাবার ইত্যাদি।
ভারত : ভূমিকা, প্রাকৃতিক পরিবেশ
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ]:[প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. যে পর্বতকে হিমালয়ের উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত হিসেবে ধরা হয়—
[A] গডউইন অস্টিনকে [B] নাঙ্গা পর্বতকে [C] কাঞ্চনজঙ্ঘাকে [D] অন্নপূর্ণাকে
উত্তরঃ [B] নাঙ্গা পর্বতকে
2. শ্রীনগর ও জম্মুর মধ্যে সংযােগ রক্ষা করেছে—
[A] জোজিলা পাস। [B] নাথুলা পাস [C] বানিহাল পাস [D] সােলারগড় পাস
উত্তরঃ [C] বানিহাল পাস
3. কোঙ্কন উপকূল অবস্থিত যে সাগরের তীরে –
[A] আরবসাগর [B] বঙ্গোপসাগর [C] ভারতমহাসাগর [D] চিন সাগর
উত্তরঃ [A] আরবসাগর
4. কৃয়া নদীর বদ্বীপের পূর্বভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূল ভাগকে বলা হয়—
[A] ওড়িশা উপকূল [B] অন্ত্র উপকূল [C] করমণ্ডল উপকূল [D] উত্তর সরকার উপকূল
উত্তরঃ [D] উত্তর সরকার উপকূল
5. ভারতের বৃহত্তম নদী বাঁধ হল-
[A] নাগার্জুন সাগর [B] ম্যাসানজোর [C] হীরাকুঁদ [D] আক্রা-নাঙ্গাল
উত্তরঃ [D] আক্রা-নাঙ্গাল
6. ভারতের উচ্চতম লবণাক্ত জলের হ্রদ হল—
[A] প্যাংগং [B] ডাল [C] সাততাল [D] মিকির
উত্তরঃ [A] প্যাংগং
7. শিবালিক ও মধ্য হিমালয়ের মাঝে অবস্থিত ‘দুন উপত্যকা অবস্থিত
[A] হিমাচল প্রদেশে [B] অরুণাচল প্রদেশে [C] উত্তরাখণ্ডে [D] কাশ্মীরে
উত্তরঃ [C] উত্তরাখণ্ডে
8. মহারাষ্ট্রের উপকূল অঞ্চলকে বলে—
[A] করমণ্ডল উপকূল [B] মালাবার উপকূল [C] কোঙ্কন উপকূল [D] তামিলনাড়ু উপকূল
উত্তরঃ [C] কোঙ্কন উপকূল
9. পশ্চিম উপকূলের উপহ্রদগুলিকে বলা হয়—
[A] কয়াল [B] ভাবর [C] ধান্দ। [D] তাল
উত্তরঃ [A] কয়াল
10. ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহটি হল-
[A] জেমু [B] সিয়াচেন [C] চেমায়ুংদুং [D] গঙ্গোত্রী
উত্তরঃ [B] সিয়াচেন
14. মহারাষ্ট্রের নাসিকের কাছে ত্র্যম্বক উচ্চভূমি থেকে যে নদীটির উৎপত্তি হয়েছে, সেই নদীর নাম-
[A]গােদাবরী [B] কৃয়া [C] সরাবতী [D] কাবেরী
উত্তরঃ [A]গােদাবরী
11. ভারতের পশ্চিম উপকূলের ভেনাদ কয়াল অবস্থিত-
[A] কোঙ্কনে [B] মালাবারে [C] গুজরাতে [D] রাজস্থানে
উত্তরঃ [B] মালাবারে
12. আরাবল্লি পর্বত থেকে উৎপন্ন হওয়া নদীটির নাম
[A] কাবেরী [B] চম্বল। [C] সবরমতী [D] লুনি
উত্তরঃ [C] সবরমতী
13, জব্বলপুরের কাছে ধুয়াধর জলপ্রপাতটি যে নদীর ওপর অবস্থিত সেটি হল-
[A] তাপ্তী [B] নর্মদা [C] কাবেরী [D] তুঙ্গভদ্রা
উত্তরঃ [B] নর্মদা
14. ভারতের একটি অন্তর্বাহিনী নদী হল—
[A] সবরমতী [B] নর্মদা [C] লুনি [D] কাবেরী
উত্তরঃ [C] লুনি
15. যমুনােত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গার উপনদী যমুনা’ যে শহরের কাছে গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়েছে-
[A] লখনউ [B] আগ্রা [C] রাজমহল [D] এলাহাবাদ
উত্তরঃ [D] এলাহাবাদ
16. গাৱসােপ্পা বা যােগ জলপ্রপাতটি যে নদীর ওপর অবস্থিত সেটি হল—
[A] কৃয়া [B] সরাবতী [C] কাবেরী [D] গােদাবরী
উত্তরঃ [B] সরাবতী
17. মৌসুমি কথার উৎপত্তি ‘মৌসিন’ শব্দ থেকে। এটি একটি
[A] বাংলা শব্দ [B] মালয়ালাম শব্দ [C] আরবি শব্দ [D] ফারসি শব্দ।
উত্তরঃ [C] আরবি শব্দ
18. পূর্ব ভারতে কালবৈশাখী দেখা যায়-
[A] মার্চ-মে মাসে [B] জুন-জুলাই মাসে [C] সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে [D] ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে
উত্তরঃ [A] মার্চ-মে মাসে
19. আবৃষ্টি দেখা যায়-
[A] পূর্ব ভারতে [B] দক্ষিণ ভারতে [C] উত্তর ভারতে [D] উত্তর-পশ্চিম ভারতে
উত্তরঃ [B] দক্ষিণ ভারতে
20. কার্পাস চাষের পক্ষে খুব ভালাে—
[A] কৃয়মৃত্তিকা [B] এঁটেল মৃত্তিকা [C] পডসল মৃত্তিকা [D] নবীন পলি মৃত্তিকা
উত্তরঃ [A] কৃয়মৃত্তিকা
21. ভারতের প্রায় 46% অঞ্চল জুড়ে আছে যে মৃত্তিকা
[A] রেগুর মৃত্তিকা [B] ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা [C] পডসল মৃত্তিকা [D] পলি মৃত্তিকা
উত্তরঃ [D] পলি মৃত্তিকা
22. তরাই অঞলের মৃত্তিকার অপর নাম-
[A] ভাবর [B] ভুর [C] ভাঙ্গার [D] খাদার
উত্তরঃ [A] ভাবর
23. প্লাবনভূমিতে গঠিত নবীন পলিমাটিকে বলে—
[A] ভুর [B] ভাঙ্গার [C] খাদার [D] ভাবর
উত্তরঃ [C] খাদার
24. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা দেখা যায়—
[A] গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে [B] ছােটোনাগপুর মালভূমি অঞ্জলে [C] রাজস্থানের মরু অঞ্চলে [D] পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে।
উত্তরঃ [B] ছােটোনাগপুর মালভূমি অঞ্জলে
25. মার্চ-এপ্রিল মাসে নিম্নচাপজনিত ঝড় অসমে যে নামে পরিচিত
[A] বরদাইছিলা [B] নরওয়েস্টার [C] কালবৈশাখী [D] আঁধি
উত্তরঃ [A] বরদাইছিলা
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. সােনালি তন্তু ____________ কে বলা হয়।
উত্তর : পাট।
2. একটি লৌহ-সংকর ধাতুর নাম ।
উত্তর : ইস্পাত।
3. পশ্চিমবঙ্গের একটি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হল প্রকল্প।
উত্তর : জলঢাকা।
4. _______________ শিল্পকে ভারতে ‘আধুনিক শিল্প’ বলা হয়।
উত্তর : পেট্রো-রসায়ন।
5. ভারতের নবীনতম রাজ্য হল ________ ।
উত্তর : তেলেঙ্গানা।
6. গুজরাতের প্রধান বন্দর _____________
উত্তর : কান্ডালা।
7.____________ কে হ্রদের শহর বলা হয়।
উত্তর : হায়দরাবাদ।
৪, ভারতের সর্বাধিক জনঘনত্বপূর্ণ রাজ্যটি হল ______________ –
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গ।
9. সর্বাধিক সাক্ষর রাজ্যটির নাম ________________ ।
উত্তর : কেরালা।
10. ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহের নাম
উত্তর : সিয়াচেন।
11. যে সম্পদ শুধুমাত্র পৃথিবীর একটি স্থানেই আছে, তাকে বলে _______________ সম্পদ।
উত্তর : অদ্বিতীয়।
12. সম্পদ সৃষ্টির উপাদান অনুসারে সম্পদ প্রকার ______________ ।
উত্তর : তিন।
13, যে সব সম্পদ ক্রমাগত ব্যবহার করলেও নিঃশেসিত হয় না, তাদের ___________ সম্পদ বলে।
উত্তর : প্রবহমান।
একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাও :
1. সিপকিলা, লিপুলেখ ও নাথুলা কী?
উত্তর : সিপকিলা, লিপুলেখ ও নাথুলা হল—হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি গিরিপথ।
2. ভূস্বর্গ’ বা ‘প্রাচ্যের নন্দনকানন কাকে বলে ?
উত্তর : অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য কাশ্মীর উপত্যকাকে ‘ভূস্বর্গ’ বা ‘প্রাচ্যের নন্দনকানন বলা হয়।
3. ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাতটির নাম কী?
উত্তর : ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাতটির নাম গেরসােপ্পা বা যােগ জলপ্রপাত।
4. ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমিটির নাম কী?
উত্তর : ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমিটির নাম লাডাক মরুভূমি।
5. ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহ কোনটি?
উত্তর : ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহটির নাম সিয়াচেন হিমবাহ।
6. ভারতের জীবন্ত আগ্নেয়গিরিটির নাম কী?
উত্তর : ভারতের জীবন্ত আগ্নেয়গিরিটির নাম ব্যারেন দ্বীপ।
7. ভারতের নবগঠিত রাজ্য কোনটি?
উত্তর : ভারতের নবগঠিত রাজ্যটির নাম তেলেঙ্গানা (2014-2,জুন)।
৪. ভারত পাকিস্তান সীমারেখা কী নামে পরিচিত?
উত্তর : ভারত পাকিস্তান সীমারেখা র্যাডক্লিফ লাইন ও LoC নামে পরিচিত।
9. হিমালয় কী জাতীয় পর্বত?
উত্তর : হিমালয় ভঙ্গিল জাতীয় পর্বত।
10. দুন কাকে বলে?
উত্তর : কুমায়ুন হিমালয়ের মধ্যে হিমালয় পর্বতশ্রেণি এবং শিবালিক পর্বতশ্রেণির মধ্যবর্তী অংশে যে দীর্ঘ উপত্যকা রয়েছে তাকে দুন বলে।
11. পশ্চিম হিমালয়ের একটি উষ্ণ প্রস্রবণের নাম করাে।
উত্তর : পশ্চিম হিমালয়ের একটি উষ্ণ প্রস্রবণ হল কাশ্মীরের ভেরনাগ।
12. ‘বসুধার ধবল শীর্ষ’ কাকে বলে?
উত্তর : কারাকোরাম পর্বতশ্রেণিকে ‘বসুধার ধবল শীর্ষ’ বলে।
13. ভারতের কোন শহরে মৃত্তিকা গবেষণাগার স্থাপিত হয়েছে?
উত্তর : ভারতের উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে মৃত্তিকা গবেষণাগার স্থাপিত হয়েছে।
14. মৃত্তিকা সংরক্ষণের প্রধান উপায় কী?
উত্তর : মৃত্তিকা সংরক্ষণের প্রধান উপায় হল বৃক্ষরােপণ।
15. তিনটি চিরসবুজ বৃক্ষের নাম লেখাে।
উত্তর : তিনটি চিরসবুজ বৃক্ষ হল—শিশু, গর্জন ও তুন।
16. ভারতের কোন রাজ্যে বনভূমির পরিমাণ সর্বাধিক?
উত্তর : ভারতের মধ্যপ্রদেশে বনভূমির পরিমাণ সর্বাধিক।
17, ভারতের মরু অঞলে কোন ধরনের উদ্ভিদ জন্মায়?
উত্তর : ভারতের মরু অঞ্চলে ক্যাকটাস বা ফণিমনসা, বাবলা, ঘাস, খেজুর প্রভৃতি বিভিন্ন মরু উদ্ভিদ বা জেরােফাইটিক প্ল্যান্টস জন্মায়।
18. ভারতের একমাত্র ভাসমান অভয়ারণ্যের নাম কী?
উত্তর : ভারতের একমাত্র ভাসমান অভয়ারণ্যের নাম মণিপুর রাজ্যের কইরুল লামজা।
19. ভারতে মােট বনভূমির পরিমাণ কত?
উত্তর : ভারতের মােট বনভূমির পরিমাণ মাত্র 21.05%।
20. একটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের নাম লেখাে।
উত্তর : একটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের নাম হল গরান।
21, ধান চাষের জন্য কত ডিগ্রি তাপমাত্রার প্রয়ােজন হয় ?
উত্তর : ধান চাষের জন্য 20° সে থেকে 30° সেন্টিগ্রেড উয়তার প্রয়ােজন হয়।
22. ভারতে ধান গবেষণাগার কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : ভারতে ধান গবেষণাগার কেন্দ্রটি ওড়িশার কটকে অবস্থিত।
23. হটিকালচার কাকে বলে?
উত্তর : বাগানের মধ্যে বিভিন্ন শাকসবজি, ফল প্রভৃতির উৎপাদনকে হর্টিকালচার বলে। হর্টিকালচারকে বলে বাজার বাগান বা উদ্যান কৃষি।
24. গম উৎপাদনে ভারতের কোন রাজ্য প্রথম স্থান অধিকার করে?
উত্তর : গম উৎপাদনে ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্য প্রথম স্থান অধিকার করে।
25. ভারতের গম গবেষণাগার কেন্দ্রটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : ভারতের গম গবেষণাগার কেন্দ্রটি দিল্লির কাছে পুষায় অবস্থিত।
26. কোন ধরনের মাটিতে গম চাষ ভালাে হয় ?
উত্তর : দো-আঁশ মাটিতে গম চাষ ভালাে হয়।
27. ভারতের দুটি প্রধান তন্ত্রশস্যের নাম লেখাে।
উত্তর : ভারতের দুটি প্রধান তন্ত্রশস্যের নাম হল-(i) পাট ও (i) তুলাে।
28, কয়েকটি উন্নতফলনশীল তলােৰীজের নাম করাে।
উত্তর : কয়েকটি উন্নতফলনশীল তুলােবীজের নাম হল-সুজাতা, MCU-4, MCU-5।
29. তুলাে চাষের জন্য কী পরিমাণ বৃষ্টিপাত ও উয়তার প্রয়ােজন হয় ?
উত্তর : তুলাে চাষের জন্য 50 সেমি থেকে 100 সেমি বৃষ্টিপাত ও 20° সেলসিয়াস থেকে 25° সেলসিয়াস উয়তার প্রয়ােজন হয়।
30. তুলাে চাষের জন্য কীরকম মাটির প্রয়ােজন?
উত্তর : তুলাে চাষের জন্য চুন মেশানাে উর্বর দো-আঁশ মাটি বা কৃয় মৃত্তিকার প্রয়ােজন হয়।
31. বাণিজ্য ফসল কাকে বলে?
উত্তর : প্রধানত রপ্তানি বা বাণিজ্যের জন্য যে সব ফসল উৎপাদন করা হয়, সেগুলিকে বাণিজ্য ফসল বলে।
ভারতের ভূ-প্রকৃতি
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. ‘দুন’ বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : হিমাদ্রি হিমালয় ও হিমাচল হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদীগুলি শিবালিকের উত্তরদিকে যে উপত্যকা গঠন করেছে তাকে দুন উপত্যকা বলে। এই উপত্যকা উর্বর হওয়ায় কৃষিকার্য ভালাে হয় এবং জনবসতি ঘন। উত্তরাখণ্ড রাজ্যের দেরাদুন ভারতের বৃহত্তম দুন।
2. ‘কয়াল’ কী?
উত্তর : উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রতরঙ্গ বাহিত নুড়ি, বালি প্রভৃতি সঞ্চয়ে পুরােদেশীয় বাঁধ গঠিত হয়। পুরােদেশীয় বাঁধের পশ্চাতে আবদ্ধ লবণাক্ত জলাভূমিকে কয়াল বলে। কেরালার ভেম্বনাদ একটি কয়াল।
3. মরুস্থলী’ কী?
উত্তর : ভারতীয় মরু অঞ্চলের সর্ব পশ্চিম অংশে অবস্থিত উদ্ভিদহীন বালুকাময় যে মরুভূমি অঞ্চলটিকে মরুস্থলী। মরুস্থলী’ শব্দটির অর্থ ‘মৃতের দেশ। অতি অল্প বৃষ্টিপাতের কারণে এই অঞ্চলে জীবনের অস্তিত্ব প্রায় নেই। এখানে বেলে ও চুনা পাথর গঠিত ছােটো ছােটো টিলা দেখা যায়।
4, পূর্বাচল কী?
উত্তর : ভারতের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের উত্তর পূর্ব দিকের প্রসারিত অঞলটি পূর্বাঞ্চল নামে পরিচিত। ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে পূর্বাঞ্চল গঠিত। এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা 1500-4000 মি.। পাটকাই, নাগা, লুসাই, মিশনি এখানকার উল্লেখযােগ্য পর্বতশ্রেণি।
5. ডেকানট্টাপ’ কী?
উত্তর : ডেকান শব্দটির অর্থ দাক্ষিণাত্য এবং ‘টাপ’ শব্দটির অর্থ ‘সিঁড়ি’। মহারাষ্ট্রের লাভা গঠিত মালভূমিটি ডেকানট্রাপ নামে পরিচিত। প্রায় 6-7 কোটি বছর পূর্বে ভূ-ত্বকের প্রশস্ত ফাটল দিয়ে তরল ম্যাগমা বেরিয়ে এটি সিঁড়ি মত গঠন তৈরি করেছে। প্রাচীন ভূ-খণ্ড গন্ডােয়ানাল্যান্ডের অংশবিশেষ।
6. কারেওয়া কী?
উত্তর : উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে কাশ্মীর উপত্যকায় পাহাড়ের ধাপযুক্ত ঢালু অংশকে বলা হয় কারেওয়া।
7. মালনাদ ও ময়দান কী?
উত্তর : মহারাষ্ট্র মালভূমির দক্ষিণে অবস্থিত কর্ণাটক মালভূমি গ্রানাইট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত। এই মালভূমির বেশি উচ্চতাসম্পন্ন দক্ষিণ পশ্চিমাংশ মালনাদ ও কম উচ্চতাসম্পন্ন উত্তর পূর্বাংশ ময়দান নামে পরিচিত। মালদ বন্ধুর ও পর্বতময়। ময়দান তরঙ্গায়িত।
৪. আকসাই চিন কী?
উত্তর : ট্রান্স হিমালয়ের অন্তর্গত লাউক মালভূমির উত্তরপূর্বে একটি পর্বতবেষ্টিত উচ্চ মালভূমি আকসাই চিন নামে পরিচিত। এই অঞলের উচ্চতা 4500-6000 মি.। এই মালভূমি অঞ্চলে কয়েকটি লবণাক্ত হ্রদ আছে, যার মধ্যে লিং-জিং-টন উল্লেখযােগ্য।
9. তরাই কাকে বলে?
উত্তর : ভাবর অঞ্চলের দক্ষিণ প্রান্তে ভূ-গর্ভস্থ নদীগুলি যেখানে আত্মপ্রকাশ করেছে, সেখানকার 15 থেকে 30 কিমি প্রশস্ত সাতস্যাতে জলাভূমিকে সাধারণভাবে তরাই বলা হয়। এই অঞ্চলটি উত্তর পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ পূর্ব দিকে ঢালু হয়ে গেছে।
10. কচ্ছের রণ বলতে কী বােঝায়?
উত্তর : গুজরাত রাজ্যের উত্তরাংশে, তিনদিকে জলভাগ বেষ্টিত কচ্ছ উপদ্বীপের বিস্তীর্ণ, অগভীর, লবণাক্ত জলাভূমিকে কচ্ছের রণ বলে। এই অঞ্চলটি সম্পূর্ণ শুষ্ক, উদ্ভিদহীন ও সাদা লবণে ঢাকা বালুকাময় সমভূমিতে পরিণত হয়েছে।
11. ভাবর কাকে বলে?
উত্তর : উত্তর ভারতের অন্যতম ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ গঙ্গা সমভূমি। এই সমভূমি অঞ্চলের উত্তর প্রান্তের ভূমির নাম ভাবর। অঞ্চলটি হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চলে অবস্থিত।
12. তাল কাকে বলে?
উত্তর : কুমায়ুন হিমালয় অঞ্চলে হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদগুলিকে স্থানীয় ভাষায় তাল বলা হয়। যেমন—নৈনিতাল, সাততাল, ভীমতাল ইত্যাদি।
13. বাগার অল কাকে বলে?
উত্তর : থর মরু অঞ্চলের পূর্বপ্রান্তে আরাবল্লী পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত অল্প বালুকাময় অলটি হল বাগার অল। এই অঞ্চলটি প্রকৃতপক্ষে মরুভূমি ও সমভূমি অঞ্চলের মধ্যবর্তী অঞ্চল। এখানকার অধিকাংশ অল ঘাসে ঢাকা। রাজস্থান খাল এই অঞ্চলে কৃষি প্রসারে সাহায্য করেছে।
14. ‘থালি’ কী?
উত্তর : রাজস্থানের লুনির উত্তরে বালি গঠিত সমভূমি হল থালি।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. মালনাদ ও ময়দানের মধ্যে পার্থক্য আলােচনা করাে।
উত্তর : মালনাদ ও ময়দানের মধ্যে পার্থক্য –
বিষয় মালদান ময়দান
(i) অবস্থান কর্ণাটক মালভূমির পশ্চিমে অবস্থিত। কর্ণাটক মালভূমির পূর্বে অবস্থিত।
(ii) অর্থ মালনাদ’ শব্দের অর্থ ‘পাহাড়ি দেশ। ময়দান’ শব্দের অর্থ অনুচ্চ ভূমিভাগ।
(iii) ভূপ্রকৃতি এটি একপ্রকার ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি। এটি এক প্রকার সময় মালভূমি।
(iv) উচ্চতা মালনাদের উচ্চতা ময়দানের চেয়ে বেশি। ময়দানের উচ্চতা মালনাদের চেয়ে কম।
দশম শ্রেণী ভূগোল | ভারত : ভূমিকা, প্রাকৃতিক পরিবেশ – রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. উত্তরপূর্ব হিমালয়ে পাহাড়ি অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি আলােচনা করাে।
উত্তর : উত্তরপূর্ব পাহাড়ি অঞ্চল :
অবস্থান : ভারতের উত্তর পূর্বাংশে মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে উত্তর পূর্বের পাহাড়ি অঞ্চল অবস্থিত। এই উচ্চভূমিটি হিমালয় থেকে চুলের কাটার মতাে বাঁক নিয়ে উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত হয়েছে। ভূ-প্রকৃতি : উত্তর পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। নিম্নে তা। আলােচনা করা হল-
(a) পূর্বাঞ্চল : এই অংশে কতকগুলি ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণি উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত রয়েছে। এগুলির মধ্যে পাটকই, নাগা, লুসাই, মিরিক, মিশমি, কোহিমা প্রভৃতি প্রধান। মিশমি পাহাড়ের দাফাকুম (4579 মি.) পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। অন্যদিকে নাগা পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সরামতী শৃঙ্গ (3,826 মি.)। এই অঞ্চলের পাহাড়গুলির গড় উচ্চতা 1500-3000 মিটার। পূর্বাঞ্চলের মণিপুর রাজ্যের লােকটাক হ্রদটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র হ্রদ। মণিপুরের ইম্ফল উপত্যকা পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম উপত্যকা।
(b) মেঘালয় মালভূমি : বর্তমানে মেঘালয়ের মালভূমিটিকে উত্তরপূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলের অংশ ধরা হয়। প্রাচীনকালে এই অঞ্চলটি ছােটোনাগপুর মালভূমির অন্তর্গত ছিল। এই অংশের ক্ষয়প্রাপ্ত পাহাড় যেমন—গারাে, খাসি, জয়ন্তিয়া প্রভৃতি পশ্চিম থেকে পূর্বে অবস্থান করছে। এখানে শিলা পাহাড়ের শিলং শৃঙ্গ (1961 মি.) মেঘালয় মালভূমির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এই মালভূমির পশ্চিমে অবস্থিত গারাে পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নরেক (1412 মি.)। এই মালভূমির দক্ষিণে অবস্থিত চুনাপাথরে গঠিত চেরা মালভূমি।
2. উত্তর ভারতের সমভূমির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। অথবা, উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির বিবরণ লেখাে।
উত্তর : উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চল : উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা ও দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্যবর্তী অবনমিত অংশে এই বিশাল সমভূমি অঞ্চল অবস্থান করছে। আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে এই সমভূমিটি প্রধান তিনটি ভাগে বিভক্ত। নিম্নে আলােচনা করা হল।
(a) পশ্চিমের সমভূমি : উত্তর ভারতের সমভূমির একেবারে পশ্চিমে এই সমভূমিটি অবস্থিত। এটি দুটি ভাগে বিভক্ত। (i) রাজস্থানের শুষ্ক সমভূমি—আরাবল্লী পর্বতের পূর্বাংশে একসময় নদীর পলিসঞ্চয়ে এই সমভূমির সৃষ্টি হয়। (ii) পাঞ্জাব হরিয়ানা সমভূমি—শতদ্র, বিপাশা, ইরাবতী প্রভৃতি নদীবাহিত পলিসগুয়ে এই সমভূমি গঠিত।
(b) গাঙ্গেয় সমভূমি : গঙ্গা নদীর প্রবাহ পথে উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে পলি সয়ে সৃষ্ট সমভূমি গাঙ্গেয় সমভূমি নামে পরিচিত। এই সমভূমির তিনটি ভাগে বিভক্ত। (i) উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমি—উত্তরপ্রদেশে যমুনার বামতীর থেকে এলাহাবাদ শহর পর্যন্ত বিস্তৃত। গড় উচ্চতা 100 মিটার থেকে 300 মিটার। (ii) মধ্যগাঙ্গেয় সমভূমি-পশ্চিমে এলাহাবাদ শহর থেকে পুর্বে রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। গড় উচ্চতা 25-100 মিটার। (iii) নিম্নগাঙ্গেয় সমভূমি-রাজমহল থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অংশ নিম্নগাঙ্গেয় সমভূমি নামে পরিচিত। এই সমভূমি উত্তরবঙ্গের সমভূমি (তরাই, তিস্তা, মহানন্দার সমভূমি), রাঢ় সমভূমি ও ব-দ্বীপ সমভূমিতে (পরিণত, মৃতপ্রায় ও সক্রিয়) বিভক্ত।
(c) ব্রহ্মপুত্র সমভূমি : অসম রাজ্যের প্রায় 56,000 বর্গ কিমি অঞ্চল ব্যাপী ব্রম্মপুত্র ও তার একাধিক উপনদীর পলি সঞ্জয়ে গঠিত এই ব্রম্মপুত্র সমভূমি। এই অংশের গড় উচ্চতা 50-100 মিটার। নদীর গতিপথে স্বাভাবিক বাঁধ, বালুচড়া, জলাভূমি, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ প্রভৃতি দেখা যায়।
দশম শ্রেণী ভূগোল | ভারত : ভূমিকা, প্রাকৃতিক পরিবেশ – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্ববাহিনী কেন?
উত্তর : গােদাবরী, মহানদী, কৃয়া, কাবেরী প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য নদীগুলি পূর্ববাহিনী। কারণ— (i) দক্ষিণ ভারতের ভূমিভাগের ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্বে। (ii) পশ্চিমদিক থেকে আগত আরবসাগরীয় পাতের চাপ প্রতিরােধ করতে গিয়ে দাক্ষিণাত্য মালভূমি ভূভাগ পশ্চিম থেকে পূর্বে ঢালু হয়ে গিয়েছে।
2. দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্বাহিনী কিন্তু নর্মদা ও তাপ্তী নদী পশ্চিমবাহিনী কেন?
উত্তর : পূর্ব পশ্চিমে বিস্তৃত সাতপুরা পর্বতের উত্তর ও দক্ষিণে চ্যুতির ফলে দুটি গ্রস্ত উপত্যকা সৃষ্টি হয়েছে। নর্মদা ও তাপ্তী নদী ওই দুটি অবনমিত ভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার জন্য দাক্ষিণাত্য মালভূমির সাধারণ ঢাল নিরপেক্ষ হয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে।
3. জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনা বা জলবিভাজিকা উন্নয়ন বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : কোনাে নদী অববাহিকা অঞ্চলের জলবিভাজিকা সামগ্রিক ও বিজ্ঞানসম্মত উন্নয়নই হল জলবিভাজিকা উন্নয়ন বা ব্যবস্থাপনা। এই উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে কোনাে নদী অববাহিকা অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র, পরিবেশের উপাদান এবং সম্পদের স্থায়ী উন্নয়ন করা সম্ভব হয়।
4. জলসংরক্ষণ কী? এর গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : ভবিষ্যতে জলসংকট থেকে মুক্তি পেতে জলকে সংরক্ষণ করে রাখাই হল জলসংরক্ষণ। (i) দূষণ থেকে জলকে রক্ষা, (ii) জলের সুষম বণ্টন, (iii) ভৌম জলের যথাযথ ব্যবহার, (iv) জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, (v) জলসেচের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার, (vi) বনভূমির বৃদ্ধির মাধ্যমে জলসংরক্ষণ করা যায়।
5. GAP কী?
উত্তর : গঙ্গার দূষণ প্রতিরােধে গঙ্গা অ্যাক্সন প্লান (GAP) গঠিত হয়। 1985 খ্রিস্টাব্দে “সেন্ট্রাল গঙ্গা অথরিটি’ নামে একটি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার অধীনে ‘GAP পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যেসব শহরগুলি গঙ্গা দূষণের জন্য সর্বাধিক দায়ী সেখানে পরিকল্পনা মাফিক নিকাশি ব্যবস্থা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
6. DVC কী?
উত্তর : 1948 সালে কেন্দ্রীয় সরকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, বিহার সরকারের উদ্যোগে দামােদর পরিকল্পনার উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয় ‘দামােদর ভ্যালি কর্পোরেশন। 1955 সালে এর কাজ শেষ হয়। বন্যা প্রতিরােধ, জলসেচের সুবিধা, কলকাতার নাব্যতা বৃদ্ধি ও অনান্য সমস্যা সমাধানে দামােদর পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. দক্ষিণ ভারতে পশ্চিমবাহিনী নদী মােহানায় ব-দ্বীপ নেই কেন?
উত্তর : পশ্চিমবাহিনী নদী মােহনায় ব-দ্বীপ না গড়ে ওঠার কারণগুলি হল—(i) নদীগুলির দৈর্ঘ্যে ছােটো তাই পলি কম থাকে জলে। (ii) নদীগুলিতে জলের স্রোত বেশি থাকায় মােহানায় পলি সঞ্চিত হতে পারে না। (iii) নদীগুলির উপনদীর সংখ্যা কম থাকায় পলি বেশি থাকে না। (iv) মােহানা অংশে ভূমির ঢাল বেশি থাকায় পলি সঞ্চিত হতে পারে না। (v) সর্বোপরি আরব সাগর ও খাম্বত উপসাগর বেশ গভীর তাই তা পলি সঞ্চয়নের ক্ষেত্রে প্রতিকূল।
2. ব্রক্ষ্মপুত্র নদে প্রতিবছর বন্যা হয় কেন? অথবা, অসমে প্রতিবছর বন্যা হয় কেন?
উত্তর : ব্রম্মপুত্র নদের প্রভাবে অসমে প্রতিবছর বন্যার কারণগুলি হল—(i) পার্বত্য অঞ্চল থেকে আনা বস্তুর অসমের সমভূমির ওপর সঞ্চিত হয়ে নদীগর্ভ অগভীর করে তােলে, ফলে অতিরিক্ত জল বন্যার কারণ হয়। (i) বরফগলা জলে পুষ্ট হওয়ায় এবং বৃষ্টির জলে সমৃদ্ধ হওয়া এই নদে জল খুব বেশি, তাই উপত্যকা অঞ্চলে বর্ষার সময় অধিক জল বহন করতে না পেরে দুকূল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে।
3. দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ অধিক প্রচলিত কেন?
উত্তর : এর কারণগুলি হল—(i) কঠিন ও অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের অবস্থানের জন্য দক্ষিণ ভারতে কূপ খনন করে জলসেচ করা অসুবিধাজনক। (ii) এখানকার ভূমিভাগ বন্ধুর ও তরঙ্গায়িত হওয়ায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদীর উপর বাঁধ দিয়ে জলাশয় তৈরি করা সুবিধাজনক। (iii) বর্ষার জলে পুষ্ট হওয়ায় সারাবছর জলসেচ সম্ভব হয় না।
4. গঙ্গার উপনদীগুলির পরিচয় দাও।
উত্তর : (i) মধ্যগতিতে মিলিত হওয়া উপনদী : রামগঙ্গা, গােমতী, ঘর্ঘরা, গণ্ডক, বুড়িগণ্ডক, কোশি হল বামতীরের উপনদী। যমুনা ও শােন ডানতীরস্থ উপনদী। (i) নিম্নগতিতে মিলিত হওয়া উপনদী : বাঁশলই, ব্রাত্মণী, দ্বারকা, ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামােদর, রূপনারায়ণ, কংসাবতী ও রসুলপুর হল ডানতীরস্থ উপনদী। জলঙ্গী, মাথাভাঙ্গা ও চূর্ণী হল গঙ্গার বামতীরস্থ উপনদী।
5. দামােদর পরিকল্পনার (DVC) সুবিধাগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : (i) বন্যারােধ : পশ্চিবঙ্গের দামােদর উপত্যকা অনেকটা অংশ বন্যামুক্ত হয়েছে। (i) বিদ্যুৎ উৎপাদন : 4টি বড়াে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং 11টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। (ii) জলসেচ : জলসেচ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে ফলে রবি ফসলের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। (iv) পরিবহন : দুর্গাপুর থেকে খাল কেটে কলকাতা যুক্ত করা হয়েছে। (v) মৃত্তিকা ক্ষয় রােধ সম্ভব হয়েছে। (vi) মাছ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। (vi) নতুন বনভূমি স্থাপন হয়েছে। সার্বিকভাবে দামােদর অববাহিকা অঞ্চলের উন্নয়ন সাধন হয়েছে।
রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1, গঙ্গা নদীর গতিপথের বিবরণ দাও।
উত্তর : তিনটি গতি স্পষ্ট বলে গঙ্গাকে আদর্শ নদী বলে। গঙ্গা নদীর মােট দৈর্ঘ্য 2510 কিমি, তবে ভারতে প্রবাহ পথ 2071 কিমি।
(a) উৎস : গঙ্গার উৎস হল উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন হিমালয়ের গােমুখ গুহার গঙ্গোত্রী হিমবাহ।
(b) প্রবাহ পথ : সর্বপ্রথম গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে ভাগীরথী নামে একটি সংকীর্ণ জলধারা গিরিখাতের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে দেবপ্রয়াগের নিকট অলকানন্দার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মূলক পিন্ডার, মন্দাকিনি ও ধৌলিগঙ্গার মিলিত প্রবাহই হল অলকানন্দা। দেব প্রয়াগের পর ভাগীরথী ও অলকানন্দার মিলিত প্রবাহ গঙ্গা নামে পরিচিত।
(c) গতিপথ : (i) উচ্চগতি : উৎপত্তি স্থল বা দেবপ্রয়াগ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার উচ্চগতি। উৎস থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার উচ্চগতি হল 280 কিমি।
(ii) মধ্যগতি : হরিদ্বার থেকে বিহারের রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পথ মধ্যগতির অন্তর্গত।
(iii) নিম্নগতি : রাজমহল থেকে মােহানা পর্যন্ত গতিপথ (520 কিমি) হল নিম্নগতি। মুরশিদাবাদের ভগবানগােলায় গঙ্গা দুটি শাখায় ভাগ হয়ে প্রধান শাখা পদ্মা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং অপর শাখাটি প্রথমে ভাগীরথী এবং নবদ্বীপের পর হুগলি নাম নিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এই অংশে অজয়, দামােদর, ময়ুরাক্ষী প্রভৃতি ভাগীরথী ও হুগলির উপনদী।
ভারতের জলবায়ু
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. মৌসুমি বিস্ফোরণ কী?
উত্তর : ভারতে গ্রীষ্মকালের শেষদিকে উত্তর পশ্চিমভাগে এক গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এর ফলে ভারতমহাসাগর থেকে আগত জলীয়বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ু আরবীয় ও বঙ্গোপসাগরীয় দুটি শাখায় বিভক্ত করে ভারতে প্রবেশ করে এবং বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। মৌসুমি বায়ুর আগমনজনিত হঠাৎ বৃষ্টিপাতের ঘটনাকে মৌসুমি বিস্ফোরণ বলে।
2. পশ্চিমী ঝঞা কী?
উত্তর : শীতকালে ভারতে স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত উত্তর পূর্ব মৌসুমি বায়ু জলীয়বাষ্পহীন থাকায় ভারতে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না। এই সময় মাঝে মাঝে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ভুত ঘূর্ণবাত ভারতের উত্তর পশ্চিম অংশ দিয়ে প্রবেশ করে। ফলে উত্তরভারতে ঝড় ঝঞা হয়। এই পশ্চিমী নিম্নচাপ বিশিষ্ট ঘূর্ণবাত উত্তরভারতে শীতের শান্ত আবহাওয়াকে বিঘ্নিত করে বলে একে পশ্চিমী ঝঞ্চা বলে।
3. আবৃষ্টি বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক, কেরালা ও তামিলনাড়ুতে গ্রীষ্মকালে স্থানীয় নিম্নচাপের প্রভাবে যে, বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত ঘটে, তাকে আবৃষ্টি বলে। এই বৃষ্টিপাতের ফলে দক্ষিণ ভারতে আমের ফলন ভালাে হয় বলে এই বৃষ্টিকে আবৃষ্টি বা Mango Shower বলে।
4. কালবৈশাখী কী?
উত্তর : গ্রীষ্মকালে প্রখর সূর্যকিরণে স্থলভাগ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এপ্রিল মে মাসে গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও অসমের স্থলভাগের উয় বাতাস ও সমুদ্র থেকে আগত জলীয়বাষ্পপূর্ণ শীতল বাতাসের সংঘর্ষে ফলে বিকেলে বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড় বৃষ্টি হয়, যা কালবৈশাখী নামে পরিচিত।
5. মৌসুমি বায়ুর বিরতি বা ছেদ বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : মৌসুমি বায়ুর নিষ্ক্রিয় অবস্থায় এই বায়ুর গতিবেগ, গভীরতা, মেঘাচ্ছন্নতা, বৃষ্টিপাত কমে যায়। এই সময় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত অবিরাম না হয়ে সাময়িক বিরতি দেখা যায়। বৃষ্টিহীন এই অবস্থাকে মৌসুমী বায়ুর ছেদ বলে। এই বিরতি 3-10 দিন থাকে।
6. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল কাকে বলে?
উত্তর : জলীয়বাষ্পপূর্ণ আর্দ্রবায়ু পর্বতের প্রতিবাত ঢালে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে যখন পর্বতের বিপরীত ঢালে বা অনুবাত ঢালে এসে পৌঁছায় তখন জলীয়বাষ্পের অভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায়। অনুবাত ঢালে অবস্থিত বৃষ্টিহীন বিস্তীর্ণ অঞ্চলটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল নামে পরিচিত। উদাহরণ—ভারতের শিলং একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. লু কী?
উত্তর : গ্রীষ্মকালে ভারতের উত্তর পশ্চিমে রাজস্থান, গুজরাত, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি স্থানে ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরালে যে উয় ও শুদ্ধ বায়ু পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়, তাকে স্থানীয় ভাষায় ‘লু’ বলে। এটি অত্যন্ত উম্ন বায়ু (40°C – 50°C)।‘লু’-র প্রভাবে মানুষ ও গবাদি পশু মারা যায়।
2. ‘আঁধি’ কাকে বলে?
উত্তর : গ্রীষ্মকালে রাজস্থানের মরুভূমি অঞলে যে প্রবল ধূলিঝড়ের সৃষ্টি হয়, তাকেই স্থানীয় ভাষায়, আঁধি বলা হয়। আঁধির গতিবেগ 50-60 কিমি/ঘন্টা। মেঘের সার ঘটে না বলে এই ঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হয় না। তাই প্রবল ধুলাে ওড়ে। তবে এই ঝড়ের প্রভাবে উয়তা কিছুটা কমে।
3. ‘আশ্বিনের ঝড়’ কাকে বলে?
উত্তর : প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে সামুদ্রিক বায়ুর সংঘর্ষে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরীয় উপকূলের রাজ্যগুলিতে প্রবল ঝড় বৃষ্টি হয়। একে সাইক্লোন বলে। পশ্চিমবঙ্গে এই ঝড় যেহেতু আশ্বিন মানে দেখা যায়, তাই তা আশ্বিনের ঝড় নামে পরিচিত।
4. তামিলনাড়ু (করমণ্ডল) উপকূলে বছরে দুবার বর্ষাকাল হয় কেন?
উত্তর : তামিলনাড়ু উপকূলে মৌসুমি বায়ুর আগমনের সময় জুন মাসে বৃষ্টি হয়, আবার অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে উঃ পূঃ ভারত থেকে প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে ফেরেল সূত্রানুসারে ডানদিকে বেঁকে করমণ্ডল উপকুলে প্রবেশ করে এবং পূর্বঘাটে বাধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
5. ভারতে খরার কারণগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : (i) বিলম্বিত আগমন : দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নির্ধারিত সময়ের পরে ভারতীয় ভূখণ্ডে এলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে খরার সৃষ্টি করে।
(ii) অগ্রিম প্রত্যাবর্তন : দঃ পঃ মৌসুমি বায়ু নির্ধারিত সময়ের আগে ফিরে গেলে বৃষ্টিপাত কম হবার দরুন খরা হয়।
(iii) বৃষ্টিপাতের সাময়িক বিরতি : কোনাে কোনাে বছর বর্ষাকালের মাঝে দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত হয় না, ফলে খরার প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যায়।
(iv) পরিবেশ দূষণ : পরিবেশ দূষিত হলে বায়ুমণ্ডলের গড় উষ্মতা বেড়ে যায় এবং জলীয়বাষ্প ঘনীভূত না হলে বৃষ্টিপাত হয় না। ফলে খরা হয়।
6. ভারতে প্রায়ই বন্যা হয় কেন?
উত্তর : (i) অগ্রিম আগমন : নির্ধারিত সময়ের বহু পূর্বে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বন্যার সৃষ্টি করে।
(ii) বিরামহীন বৃষ্টি : বছরে কোনাে কোনাে সময় বিরামহীন বৃষ্টি বন্যার কারণ হয়।
(iii) বর্ষাকালের অধিক স্থায়ীত্ব : বর্ষাকালের স্থায়ীত্ব বেশি হলে ভারি বর্ষণের ফলে বন্যা দেখা দেয়।
(iv) নিম্নচাপের স্থায়ীত্ব : দীর্ঘক্ষণ নিম্নচাপ অবস্থান করলে ভারী বৃষ্টি বন্যার কারণ।
(v) নদীর গভীরতা হ্রাস : নদীর গভীরতা হ্রাসের ফলে অধিক বৃষ্টিতে দুকূল ছাপিয়ে বন্যা হয়।
7. ভারতে শীতকাল শুল্ক কেন?
উত্তর : (i) উয়তার অবনমন : 22 ডিসেম্বর তারিখে সূর্য দক্ষিণ গােলার্ধে মকরক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় উত্তর গােলার্ধে উয়তার অবনমন ঘটে।
(ii) উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমন : এশিয়ার উত্তরাংশে সাইবেরিয়া অংশ থেকে আগত শুষ্ক ও শীতল মৌসুমি বায়ু স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জলীয়বাষ্পের পরিমান অনেক কম থাকে। এই কারণে শীতকাল বৃষ্টিহীন ও শুষ্ক প্রকৃতির হয়।
৪. মনেক্স (Monex) কী?
উত্তর : Monex হল Monsoon Experiment বা মৌসুমি গবেষণা। বিশ্ব বায়ুমণ্ডল গবেষণা প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে মৌসুমি জলবায়ু গবেষণার যে বিশেষ কার্যক্রম স্থির করা হয়, তাকে Monex বলে।
9. থর মরুভূমির সৃষ্টির কারণ কী?
উত্তর : দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখাটি খাম্বা উপসাগরের ওপর দিয়ে কাথিয়াবাড় হয়ে গুজরাত ও পশ্চিম রাজস্থানে প্রবেশ করলেও মৌসুমি বায়ুকে প্রতিহত করার মতাে কোনাে উচ্চভূমি না থাকায় বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলার ফলে অনাবৃষ্টির কারণে ভারতে পশ্চিমে রাজস্থানের পশ্চিমাংশে থর মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 20 cm এর কম।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর :[প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলােচনা করাে।
উত্তর : ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব অপরিসীম। তাই ভারতকে মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলা হয়। এর প্রভাবগুলি নীচে আলােচনা করা হল।
(a) আর্দ্র পরিবর্তন ও শুষ্ক শীতকাল : ভারতে গ্রীষ্মকালে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌমুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং শীতকাল উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শুষ্ক থাকে।
(b) ঋতু পরিবর্তন : মৌসুমি বায়ুর আগমণ ও প্রত্যাগমন-এর ওপর নির্ভর করে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীত প্রশ্ন চারটি ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয়।
(C) বৃষ্টিপাত : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে 90% বৃষ্টিপাত হয়।
(d) উয়তা : দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমণে গ্রীষ্মকালের শেষে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে উয়তা কিছুটা হ্রাস করে। ও উত্তপূর্ব মৌসুমি বায়ুর ফলে শীতের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
(e) প্রাকৃতিক দুর্যোগ : মৌসুমি বায়ুর অনিয়মিত ও অনিশ্চয়তার জন্য অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির কারণে কোথাও বন্যা আবার কোথাও খরা সৃষ্টি হয়।
(f) ঘূর্ণাবাত সৃষ্টি : শরৎকালে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমণের সময় এবং সমুদ্রবায়ুর সংঘর্ষে বঙ্গোপসাগরে বা আরবসাগরে ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়।
(g) বৃষ্টিপাতের অসমবন্টন : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম উপকূল, উত্তর পূর্ব ভারত, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি স্থানে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে। অপরদিকে রাজস্থানের মরু অঞ্চল ও পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বটালে বৃষ্টিচ্ছায় অল স্থানে বৃষ্টির পরিমাণ কম। তাই মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ভারতের জলবায়ুতে বৃষ্টিপাতে অসমবণ্টন লক্ষ করা যায়।
ভারতের মৃত্তিকা
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. ‘রেগুর’ কী?
উত্তর : ভারতের মধ্য প্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের পশ্চিমাংশ এবং গুজরাত, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু অংশ তথা উপদ্বীপীয় মালভূমির ডেকানট্রাপ অঞ্চলে ব্যাসল্ট শিলা থেকে উদ্ভূত যে কালাে বর্ণের মৃত্তিকা দেখা যায়, তাকে কৃয় মৃত্তিকা বা রেগুর বলে। বিভিন্ন খনিজ সমৃদ্ধ এই মৃত্তিকা খুব উর্বর।
2. ব্যাডল্যান্ড’ কী?
উত্তর : অত্যধিক খাতক্ষয়ের ফলে ভূমিভাগ এবড়ােখেবড়াে হয়ে যায়। এর ফলে ভূমিভাগ কৃষিকাজের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। এই ধরনের কৃষিকাজে অনুপযুক্ত বন্ধুর ভূ-ভাগকে ব্যাডল্যান্ড বলে। মধ্যপ্রদেশের বদভূমি অঞ্চলে ব্যাডল্যান্ডের আধিক্য দেখা যায়।
3. ‘রাঙাইন ক্ষয় কী?
উত্তর : জলনালিকা ও খেয়াই আরও গভীরভাবে ক্ষয় পাবার ফলে তা গভীর খাড়া পাড়যুক্ত খাত তৈরি করে। এটি হল র্যাভাইন ক্ষয়। এর মাধ্যমে মাটি ক্ষয় খুব বেশি পরিমাণে ঘটে।
4, ‘ভর’ কী?
উত্তর : গাঙ্গেয় সমভূমির নিম্ন অঞ্চলে (বিশেষত উত্তর প্রদেশ রাজ্যে পশ্চিমাংশের দোয়াব অঞ্চলে) কলি মিশ্রিত অতিসুক্ষ্ম মৃত্তিকা গঠিত তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি দেখা যায়। যা ‘ভুর” নামে পরিচিত।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ঝুমচাষ মৃত্তিকা ক্ষয়কে কীভাবে তরান্বিত করে?
উত্তর : ভারতের উত্তর-পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলের আদিম সম্প্রদায় ঝুমচাষ প্রথায় কৃষিকাজ করে থাকে। এটি একটি আদিম ও অবৈজ্ঞানিক কৃষি পদ্ধতি। এক্ষেত্রে বনজঙ্গল কেটে, পুড়িয়ে সাফ করে কয়েকবছর পর চাষ করে যখন ওই স্থানের মাটির উর্বরতা কমে যায় তখন ওই স্থানকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে অন্যত্র গিয়ে এই পদ্ধতি চাষ করা শুরু করে। এর ফলে সমস্ত অঞ্চলটি প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে ভূমিক্ষয়ের কবলে পড়ে।
2. সমােন্নতি চাষ কাকে বলে?
উত্তর : সমােন্নতিরেখা বরাবর বাঁধ দিয়ে জলের গতিকে বাধা দিয়ে আটকে দিলে মৃত্তিকা ক্ষয়রােধ করার জন্য কৃষিকাজ করা হয় এবং গাছ লাগানাে হয়। এবং আটকে রাখা জলের সাহায্যে জলসেচও করা হয়। যথােন্নতি রেখা বরাবর এই কৃষিকাজকে বলে সমােন্নতি চাষ।
3. কৃষ্ণ মৃত্তিকা সম্পর্কে লেখাে।
উত্তর : ভারতের উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চলে ব্যাসল্ট শিলাদ্বারা গঠিত টাইটানিয়াম অক্সাইড ও জৈব যৌগ সমৃদ্ধ মৃত্তিকাকে কৃষ্ণ মৃত্তিকা বলে। এই মাটির রং কালাে। কৃয় মৃত্তিকা বা রেগুর তুলা চাষের পক্ষে বিশেষ উপযােগী। পলি ও কাদার ভাগ (50%-80%) বেশি থাকায় গ্রহণ মাঝারি বলে জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি। বিভিন্ন খজিন সমৃদ্ধ যেমন—অ্যালুমিনা, চুন, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রণ অক্সাইড থাকায় মাটি খুব উর্বর।
4. কারেওয়া কী?
উত্তর : বিজ্ঞানীদের মতে, প্রাচীন কোনাে হ্রদ ভরাট হয়ে কাশ্মীর উপত্যকার সৃষ্টি হয়েছে। এই উপত্যকার মধ্য দিয়ে ঝিলাম নদী প্রবাহিত হয়েছে এবং প্রায় সমতল উপত্যকার ধাপযুক্ত ভূমিভাগ বা কারেওয়া কৃষিকাজের জন্য বিখ্যাত।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. মৃত্তিকা সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : ভূমি বা মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ অনুসন্ধান করে বিজ্ঞানসম্মত সমাধান করাই হল মৃত্তিকা ক্ষয় বা ভূমিক্ষয় রােধের যথাযথ পন্থা। নিম্নে আলােচনা করা হলাে।
(a) যান্ত্রিক পদ্ধতি : (i) ঢালু জমিতে বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়ােজনীয়। (ii) সমােন্নতি রেখা ভিত্তিক বাঁধ নির্মাণ দরকার। (iii) উঁচু-নীচু, ভূ-ভাগের সমতলীকরণ প্রয়ােজন।
(b) জৈবিক পদ্ধতি : (i) ঢালু জমিতে তৃণভূমি তৈরী। (ii) মরুভূমি প্রসার রােধে বায়ু প্রবাহের দিকে অরণ্য সৃষ্টি। (iii) শস্যাবর্তন পদ্ধতির ব্যবহার মৃত্তিকা ক্ষয়ের রােধে সাহায্য করে। (iv) পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়ােজন। (v) সামাজিক বণসৃজন এবং বনমহােৎসব পালনের মাধ্যমে মৃত্তিকা রােধের ব্যবস্থা।
(c) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি : (i) স্থানান্তর কৃষি বা ঝুম চাষের বিলােপসাধন অত্যাবশকীয়। (ii) পার্বত্য বা উচ্চভূমি অংশে ধাপ বা সােপান কৃষির প্রচলন। (iii) স্বল্পোন্নত ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়ােগ। (iv) সরকারি উদ্যোগে গবেষণাকেন্দ্র (দেরাদুন, আগ্রা, যােধপুর) স্থাপন। (v) প্রচার মাধ্যম দ্বারা জনসচেতনতার বৃদ্ধি।
ভূ-বিজ্ঞানী বিনেটের মতে সর্বোচ্চ বা জাতীয় স্তরে ভূমি সংরক্ষণের জন্য কৃষিজমির বৈজ্ঞানিক ব্যবহার ও উপযুক্ত ভূমি ব্যবহার বিধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. সামাজিক বনসৃজন বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : কৃষি ও সামাজিক পদ্ধতিতে গাছের চারা রােপণ করে নতুন বনভূমি সৃষ্টি করা হয়, তাকে সামাজিক বনসৃজন বলে। এর ফলে স্থানীয় বন সম্পদের জোগান বজায় রাখা যায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক।
2. কৃষি বনসৃজন কাকে বলে ?
উত্তর : বিজ্ঞানী ফোলে ও বানার্ড-এর মতে, কৃষক তার কৃষিজমি বা পতিত জমিতে ফসল উৎপাদনের সঙ্গে কাঠ, ভেষজ ওষুধ, ফলমূল ইত্যাদি উৎপাদনের জন্য গাছ ও লতা গুল্ম রােপন করে যে বনভূমি গড়ে তােলে, তাকে কৃষি বনসৃজন বলে।
3. সিলভিকালচার কী?
উত্তর : পার্বত্য অঞ্চলে বাণিজ্যিক হারে কাঠের সরবরাহ বর্জ্য রাখার জন্য যখন বিশাল অঞ্চল জুড়ে বনভূমি তৈরি করা হয়। তাকেই সিলভিকালচার বলে।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. যৌথ বন ব্যবস্থাপনা (Joint Forest Management বা JFM) কী ?
উত্তর : বনসৃজন এবং বনভূমির সংরক্ষণের জন্য রাজ্যের বন দফতর ও স্থানীয় জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণকে যৌথ বন ব্যবস্থাপনা বলে। এই প্রকল্প অনুসারে অরণ্যের আদিবাসীরা অরণ্যকে পশুচারণ ও দাবানলের হাত থেকে রক্ষা করেন, তবে বনভূমির জমি স্থানান্তরের অধিকার তাদের নেই। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার আড়াআড়ি গ্রামে প্রথম যৌথ বন ব্যবস্থাপনা রূপায়িত করা হয়।
2. সামাজিক বনসৃজন এবং কৃষি বনসৃজনের পার্থক্যগুলি লেখাে।
উত্তর : সামাজিক বনসৃজন এবং কৃষি বনসৃজনের মধ্যে পার্থক্য –
ভারতের কৃষি
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. শস্যাবর্তন কাকে বলে?
উত্তর : কৃষি ব্যবস্থায় একই জমিতে বছরের বিভিন্ন সময় অথবা বিভিন্ন বছরে ভিন্ন প্রকার কৃষি ফসল উৎপন্ন করে জমির সাধারণ উর্বরতা শক্তি বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়, তাকে শস্যাবর্তন বলে
2. জায়িদ শস্য কী?
উত্তর : শীতের শেষে ও গ্রীষ্মের শুরুতে যে ফসল চাষ করা হয় এবং বর্ষার পূর্বে ফসল কাটা হয়, তাকে জায়িদ শষ্য বলে। যেমন—শশা, তরমুজ ইত্যাদি।
3. বাগিচা কৃষি কী?
উত্তর : পৃথিবীর ক্রান্তীয় ও উপক্ৰান্তীয় অঞ্চলের বিশেষ কতকগুলি স্থানে উপযুক্ত ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা ও জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে ছােটো, বড়াে ও মাঝারি বাগান তৈরি করে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যে কৃষিকার্য করা হয়, তাকে বাগিচা কৃষি বলে। উদাহরণ—চা ও কফি হল বাগিচা ফসল। রপ্তানি বা বাণিজ্যের জন্যই এই প্রকার কৃষিকার্য করা হয়।
4. অর্থকরী ফসল কাকে বলে?
উত্তর : নিজ বা পরিবারের ব্যবহারের জন্য নয়, বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে যে ফসল উৎপাদন করা হয় তা হল অর্থকরী ফসল। যেমন—পাট, আখ, কার্পাস ইত্যাদি।
5. চা-এর শ্রেণিগুলি লেখাে।
উত্তর : চা হল ক্যাফিনযুক্ত মাদক বর্জিত মৃদু উত্তেজক পানীয়। বিভিন্ন ধরনের চাগুলি হল : (i) কালাে সেঁকা চা—ভারতে এটি জনপ্রিয়। (ii) সবুজ চা-চিনে জনপ্রিয়, (iii) ইস্টক চা-রাশিয়ায় জনপ্রিয়। (iv) ওলং চা—তাইওয়ানে জনপ্রিয়।
6, টেন’ কী?
উত্তর : প্রথমবার আখ কাটার পর আখের যে চারা জন্মায়, তাকে বলা হয় রেটুন। আখ ভারতে রেটুন হিসাবে প্রধানত উৎপন্ন হয়।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় কৃষি তথা গম চাযের উন্নতির কারণগুলি লেখাে।
উত্তর : এই অঞ্চলে কৃষি তথা গম চাষের উন্নতির কারণগুলি লেখাে-
(i) বিস্তীর্ণ সমভূমি ও উর্বর মৃত্তিকা : সিন্ধুনদের পাঁচটি উপনদী বিধৌত বিস্তীর্ণ সমভূমি এবং উর্বর পলিমাটি কৃষির উন্নতির অন্যতম কারণ।
(ii) ভাকরা-নাঙ্গল প্রকল্প : এই প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে 14.6 লক্ষ হেক্টর। জমিতে জলসেচ সম্ভবপর হয়েছে।
(iii) উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার : উচ্চ ফলনশীল গমবীজ, যেমন- সােনারা-64, কল্যাণ সােনা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
(iv) আধুনিক কৃষি পদ্ধতি : আধুনিক কৃষি পদ্ধতির সাথে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার করা হয়। সুলভ শ্রমিকের অভাব হয় না।
(v) চাহিদা : মানুষের খাদ্য হিসাবে গমের ব্যবহার হওয়ায় বিপুল চাহিদা এই অঞ্চলে।
2. ভারতীয় কৃষির সমস্যাগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : ভারতের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় কৃষি পদ্ধতি বর্তমানে প্রাচীন ও অনুন্নত। ভারতীয় কৃষি সমস্যাগুলি হল—(i) যথাসময়ে জলের অভাব, জমির উর্বরতা শক্তির অভাবে হেক্টর প্রতি উৎপাদন কম। (ii) ভারতের কৃষি জোতগুলি আয়তনে ক্ষুদ্র ও অখণ্ডিত কৃষি-জোত। (iii) প্রাকৃতিক দুর্যোগ। (iv) কৃষিতে প্রাচীন পদ্ধতির প্রচলন। (v) যথেচ্ছ বনভূমি ধ্বংসের ফলে ভূমিক্ষয় অধিক। (vi) সীমিত জলসেচ। (vii) সর্বোপরি ভারতীয় কৃষকদের শিক্ষার অভাব থাকায় বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করা সম্ভবপর হচ্ছে না।
3. দক্ষিণ ভারতে কফি চাষের উন্নতির কারণ কী?
উত্তর : দক্ষিণ ভারতের কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চলে কফি চাষ উন্নতিলাভ করেছে। কারণ—(i) দক্ষিণ ভারতের গড় উয়তা (18°-28°C) কফি চাষের আদর্শ। (ii) 140-200 cm বৃষ্টি হয় যা কফি চাশের ক্ষেত্রে উপযােগী। (iii) দক্ষিণ ভারতের মাটি লােহা, পটাশ, নাইট্রোজেন ও হিউমাস সমৃদ্ধ হওয়ায় কফি চাষ ভালাে হয়। (iv) কফি চাষের অনুকুল ভূ-প্রকৃতি দক্ষিণ ভারতে বিদ্যমান। (v) তুষারপাত না হওয়ায় দক্ষিণ ভারত কফি চাষের আদর্শ অঞ্চল।
4. সবুজ বিপ্লবের সুফলগুলি কী কী?
উত্তর : কৃষি বিজ্ঞানী নরম্যান বােরলােগ ও ভারতীয় কৃষিবিজ্ঞানীদের সহায়তায় কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি সবুজ বিপ্লব নামে পরিচিত। সবুজ বিপ্লবের ফলে (i) শস্য উৎপাদন বিশেষত গমের উৎপাদনে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। (ii) শস্যাবর্তন পদ্ধতির প্রয়ােগে শুরু হয়। (iii) নতুন করে ভারতীয় কৃষির ভিত্তি স্থাপন হয়। (iv) উন্নতসার, কীটনাশক প্রয়ােগে হেক্টর প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। (v) ভূমি সংস্কার ও পরিকাঠামােগত উন্নতি সাধন হয়।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর :[প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. চা-চাযের অনুকূল পরিবেশ বর্ণনা করাে।
উত্তর : চাষের অনুকূল পরিবেশ নিয়ে আলােচনা করা হল-
A. প্রাকৃতিক অবস্থা :
(i) উয়তা : গড়ে 21°c-27°C উয়তা ও রৌদ্রকরােজ্জ্বল আবহাওয়ার প্রয়ােজন।
(ii) বৃষ্টিপাত : প্রতিমাসের নিয়মিত বৃষ্টিপাত উপযােগী। বার্ষিক 200cm-250cm বৃষ্টিপাত প্রয়ােজন।
(iii) মৃত্তিকা : লৌহমিশ্রিত উর্বর দোঁয়াশ মাটি এবং অধিক জৈবপদার্থ সমৃদ্ধ পার্বত্য মৃত্তিকা বিশেষ উপযােগী।
(iv) ভূমির প্রকৃতি : চা গাছের গােড়ায় জল দাঁড়ানাে ক্ষতিকর, তাই চা বাগিচার জন্য ঢালু জমির প্রয়ােজন।
(v) তুষারপাত : কিছুটা তুষারপাত সহ্য করতে পারলেও অধিক তুষারপাত চা গাছ সহ্য করতে পারে না।
(vi) ছায়া-প্রদানকারী বৃক্ষ : প্রখর সূর্যকিরণ চা গাছের জন্য ক্ষতিকারক। তাই চা বাগিচার মাঝে মাঝে ছায়া প্রদানকারী গাছ লাগানাে দরকার।
B. অ-প্রাকৃতিক বা অর্থনৈতিক পরিবেশ :
(i) শ্রমিক : চা বাগিচা থেকে পাতা ও কুঁড়ি সংগ্রহ, ডাল ছাঁটা প্রভৃতি কাজের জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়ােজন। মহিলা শ্রমিক বেশি দরকার।
(ii) মূলধন : সমস্ত কিছু ব্যবস্থাপনার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে মূলধন আবশ্যক।
(iii) পরিবহণ : অন্তর্দেশীয় বাজার ও রপ্তানিকারী বন্দরগুলির সাথে যােগাযােগের জন্য উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা দরকার।
(iv) চাহিদা : সর্বোপরি মৃদু উত্তেজক পানীয় রূপে অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চায়ের ব্যাপক চাহিদা বা বাজারে চা চাষকে প্রভাবিত করে।
2. ইক্ষু চাষের অনুকূল অবস্থাগুলি বর্ণনা করাে।
উত্তর : ইক্ষু চাষের অনুকূল অবস্থা নিয়ে আলােচনা করা হলাে-
A. প্রাকৃতিক অবস্থা :
(i) উয়তা : ইক্ষু উয়ুমণ্ডলের ফসল হওয়ায়, ইক্ষু চাষে গড় মাসিক 21°c-27°c উয়তা প্রয়ােজন হয়।
(ii) বৃষ্টিপাত : ইক্ষু উৎপাদনের জন্য বার্ষিক 125-200 সেমি বৃষ্টিপাতের প্রয়ােজন হয়।
(iii) মৃত্তিকা : ইক্ষু চাষের জন্য চুন ও লবণমিশ্রিত উর্বর দোঁয়াশ মাটি আদর্শ। এই কারণে সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে ইক্ষুর চাষ ভালাে হয়।
(iv) ভূমির প্রকৃতি : সামান্য ঢালযুক্ত সমতলভুমিই ইক্ষু চাষের পক্ষে ভালাে।
(v) তুহিন ও কুয়াশা : তুহিন ও কুয়াশা দুইই ইক্ষু চাষের পক্ষে ক্ষতিকর। ভারত ক্রান্তীয় মণ্ডলের অন্তর্গত হওয়ায় এখানকার সমভূমি অঞ্চলে তুষারপাত হয়
B. অ-প্রাকৃতিক বা অর্থনৈতিক পরিবেশ :
(i) শ্রমিক : ইক্ষু চারারােপণ, পরিচর্যা, ফসল কাটার জন্য পর্যাপ্ত সুলভ শ্রমিকের প্রয়ােজন হয়। এই কারণে ঘন বসতিপূর্ণ অল ইক্ষু চাষের সহায়ক পরিবেশ।
(ii) মূলধন : ইক্ষু চাষের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে মূলধনের প্রয়ােজন।
(iii) পরিবহণ : ইক্ষু উৎপাদক অঞ্চলে সুনদ্র পরিবহণ ব্যবস্থার প্রয়ােজন কারণ ইক্ষু কাটার 24 ঘণ্টার মধ্যে তা থেকে রস নিষ্কাশ না করলে রসের পরিমাণ হ্রাস পায়। এই কারণেই ইক্ষু কলগুলি উৎপাদন ক্ষেত্রের নিকটেই গড়ে ওঠে।
(iv) বাজার বা চাহিদা : ইক্ষু গুদামজাত করে রাখা যায় না। ভাটার একদিন পর থেকেই এর রসের পরিমাণ কমতে থাকে। এই কারণে ইক্ষুর জন্য পর্যাপ্ত নির্ভরযােগ্য বাজার থাকার প্রয়ােজন।
ভারতের শিল্প
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. অনুসারী শিল্প কাকে বলে?
উত্তর : বৃহদায়তন শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যকে কাচামাল রূপে ব্যবহার করে যে-সব ক্ষুদ্র আয়তন শিল্প গড়ে ওঠে তাদের অনুসারী বা Downstream Industry বলে। উদাহরণ : পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে উৎপাদিত প্লাস্টিক বা PVC কে ব্যবহার করে মগ, বালতি, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
2. পূর্ত শিল্প কাকে বলে? অথবা, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, তামা, দস্তা প্রভৃতি ধাতব পদার্থ এবং রবার, প্লাস্টিক, কাঠ প্রভৃতি পদার্থকে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে যে শিল্পে নানা ভারি ও হালকা যন্ত্রপাতি প্রস্তুত করা হয় তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলে। পূর্ত শিল্প হল যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ নির্মাণ শিল্প।।
3. সহায়ক (Ancillary Industry) শিল্প বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : যে সমস্ত ছােটো ছােটো শিল্প অন্য কোনাে বড়াে শিল্পকে তাদের প্রয়ােজনীয় কাঁচামাল হিসাবে নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের জোগান দেয়, সেই সমস্ত ছােটো শিল্পকে সহায়ক শিল্প বলে। উদাহরণ—মােটর গাড়ি নির্মাণ শিল্পের সহায়ক শিল্প হল কাচ, কাঠ, ব্যাটারি, টায়ার, টিউব শিল্প ইত্যাদি।
4. দুর্গাপুরকে কেন ‘ভারতের রূঢ় বলা হয় ?
উত্তর : বুঢ় যেমন পশ্চিম জার্মানির বিখ্যাত লৌহ ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র তেমনি দুর্গাপুর পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের বিখ্যাত লৌহ-ইস্পাতকেন্দ্র। রূঢ় শিল্পাঞ্চলের ওয়েস্টফেলিয়া খনির বিটুমিনাস কয়লা, আয়ারল্যান্ডের লৌহ আকরিক ব্যবহৃত হয়। তেমন দুর্গাপুরে রানিগঞ্জের কয়লা, নােয়ামুন্ডি ও বাদাম পাহাড়ের লৌহ আকরিক ব্যবহৃত হয়। উক্ত সাদৃশ্যের কারণে দুর্গাপুরকে ভারতের রূঢ় বলা হয়।
5. পণ্যসূচক কাকে বলে?
উত্তর : বিশুদ্ধ ও অবিশুদ্ধ কাঁচামাল দিয়ে পণ্যসুচক নির্ধারিত হয়। শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং উৎপাদিত দ্রব্যের অনুপাত হল পণ্যসূচক। এর মান যদি 1 হয় তাহলে বুঝতে হবে বিশুদ্ধ শ্রেণির কাঁচামাল ব্যবহূত হয়েছে। এবং 1 এর বেশি হলে অবিশুদ্ধ শ্রেণির কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়।
6. আউট সাের্সিং বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : মানের উন্নতি, দক্ষতা বৃদ্ধি, খরচ কম, দ্রুত কাজ সম্পন্ন ইত্যাদি কারণে কোনাে একটি সংস্থা বাইরের অন্য কোনাে সংস্থার মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেয় তা হল আউট সাের্সিং (Outsourcing) । এবং এই কাজ যখন অন্য দেশ থেকে করিয়ে নেওয়া হয় তখন তা ‘অফ সাের্সিং (off-Sourcing)।
7. মােটর গাড়ি বা অটোমাবাইল শিল্প কাকে বলে?
উত্তর : বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ, যেমন—টায়ার, টিউব, প্লাস্টিক, গ্লাস, ফোম ইলেকট্রিক তার ইত্যাদি সংযােজনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন নির্মাণ শিল্পকে অটোমােবাইল শিল্প বলে। বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য দ্রব্য সযােজনের মাধ্যমে মােটর গাড়ি নির্মিত হয় বলে মােটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পকে সংযােজনভিত্তিক শিল্প বলে।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. পেট্রোরসায়ন শিল্পকে উদীয়মান শিল্প বলা হয় কেন?
উত্তর : কারণ—(i) তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কালে 1966 সালে এই শিল্পের সূত্রপাত হয়। সর্বসাকুল্যে এর বয়স 43 বছর হলেও এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল। (ii) এই শিল্পের অগ্রগতি অতি দ্রুত হচ্ছে এবং শিল্পগুচ্ছের আকারে গড়ে উঠেছে। (iii) পেট্রোরসায়ন শিল্পের ওপর নির্ভর করে ভারতে বহু বৃহদায়তন শিল্পের বিকাশ হয়েছে। (iv) এই শিল্পের কাঁচামাল অন্যান্য শিল্পের ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সহযােগী শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।
2. TISCO কী?
উত্তর : 1907 খ্রিস্টাব্দের 25 আগস্ট ভারতের জামশেদপুরে জামশেদজি টাটার উদ্যোগে TISCO বা Tata Iron and Steel Company স্থাপিত হয়। ঝাড়খণ্ডের সিংভূম জেলার জামশেদপুরে সুবর্ণরেখা ও খরকাই নদীর সংগমস্থলে এই বেসরকারি কারখানাটি স্থাপিত হয়। এটি লৌহ ও কয়লাখনির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।
দশম শ্রেণী ভূগোল | ভারত : ভূমিকা, প্রাকৃতিক পরিবেশ – রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. পশ্চিমভারতে পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের কারণগুলি হল—
(i) খনিজ তেলের প্রাচুর্য : বােম্বে হাই, আলিয়াবেত, বাসিন, কাম্বে প্রভৃতি অঞ্চল। থেকে খনিজতেল পাওয়া যায়। যা এই শিল্পের প্রধান কাচামাল হিসাবে ব্যবহৃত।
(ii) খনিজতেল শােধনাগারের অবস্থান : গুজরাতের জামনগর ও কয়ালি এবং মহারাষ্ট্রের ট্রম্বেতে খনিজ তৈল শােধনাগারের অবস্থান।
(iii) বন্দরের সুবিধা : মুম্বাই, কান্ডালা, নবসেবা, সুরাত, পােরবন্দর দিয়ে অপরিশােধিত খনিজ তেল, পলিমার ও যন্ত্রপাতি আমদানি ও উৎপাদিত শিল্পদ্রব্য রপ্তানির সুবিধা রয়েছে।
(iv) পর্যাপ্ত জল : নর্মদা, তাপ্তী, মাহী, সবরমতী নদী থেকে পর্যাপ্ত জলের সুবিধা।
(v) বাজার : মুম্বাই, পুনে, আমেদাবাদ, ভাদোদরা প্রভৃতি অঞ্চলে অসংখ্য অনুসারী শিল্প গড়ে ওঠায় উৎপাদিত পণ্য যেমন বস্ত্র, ওষুধ, প্লাস্টিক, সার প্রভৃতির সারা দেশব্যাপী বৃহৎ বাজার সৃষ্টি হয়েছে।
(vi) পরিবহণ : রেলপথ-পশ্চিম, মধ্য, কোঙ্কন, দক্ষিণ-মধ্য, জাতীয় সড়কপথ (NH- 3, 4, 6, 7, 8, 9, 15, 17) দ্বারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও (vii) মফতলাল, রিলায়েন্স শিল্প গােষ্ঠী ও বহুজাতিক সংস্থার মূলধন। বিনিয়ােগ, (viii) সুলভ দক্ষ শ্রমিক, দক্ষ পরিচালন ব্যবস্থা, (ix) দুই রাজ্য সরকারের অনুকূল প্রগতিশীল শিল্পনীতি পশ্চিমাঞ্চলের পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের উন্নতিতে অনুঘটকের কাজ করছে।
2. ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে দ্রুত উন্নতি লাভের কারণগুলি ব্যাখ্যা করাে
উত্তর : ভারত তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে দ্রুত উন্নতি লাভের কারণগুলি হল—
(i) মানব সম্পদ : মানুষের উচ্চমেধা জ্ঞান তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের প্রধান সম্পদ। সারা ভারত জুড়ে উন্নত মেধা সম্পন্ন মানব সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে।
(ii) প্রশিক্ষণ কেন্দ্র : সারা ভারত জুড়ে বহু উচ্চমানের তথ্য প্রযুক্তির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন-(i) IT রয়েছে 16টি স্থানে (রুকি, নিউ দিল্লি, কানপুর, খল্লাপুর)। এছাড়াও অনেক উচ্চমানের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন-(i) Indian Institute of Science-Bengaluru (ii) Indian Institute of Science Education and Research-Kolkata, Pune প্রভৃতি।
(iii) উন্নত পরিকাঠামাে : উন্নত যাতায়াত ও যােগাযােগ ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ পরিসেবা, নিরপত্তা, 24×7 কর্মের পরিবেশ প্রভৃতি বিষয়ে উন্নত পরিকাঠামােগত সুযােগ করে দিচ্ছে।
(iv) বিপুল চাহিদা ও বাজার :কৃষি, শিল্প, পরিবহণ-যােগাযােগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, সরকারি, বেসরকারি পরিসেবা প্রদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বহুল ব্যবহার ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলিতে বিশাল বাজার তৈরি করেছে।
(v) মূলধনের প্রাচুর্য : উদারীকরণ ও বিশ্বায়নের মধ্য দিয়ে ভারতের এই উদীয়মান শিল্পটিতে দেশীয় ও বহুজাতিক সংস্থাগুলি বিপুল অর্থ বিনিয়ােগ করায় শিল্পটি বিকশিত হচ্ছে।
ভারতের কয়েকটি হাব হল—(i) বেঙ্গালুরু, (i) চেন্নাই, (ii) হায়দরাবাদ, (iv) কলকাতা, (v) দিল্লি-গুরগাঁও-নয়ডা (vi) পুনে (vii) ত্রিবান্দ্রম এবং (viii) তিরুবন্তপুরম।
ভারতের জনসংখ্যা
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. জনবিস্ফোরণ কাকে বলে?
উত্তর : কোনাে অঞ্চলে জন্মহার ও প্রবাসনের তুলনায় মৃত্যুহার হ্রাস ও অভিবাসন বৃদ্ধি পেলে মােট জনসংখ্যার পরিমাণের ব্যাপক বৃদ্ধিকে জন-বিস্ফোরণ বলে। কোনাে দেশে বার্ষিক জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার 2% এর বেশি বৃদ্ধি পেলে সেই দেশে জনবিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
2. শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি কাকে বলে?
উত্তর : কোনাে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনাে দেশে জন্মহার ও মৃত্যুহার প্রায় সমান হলে তাকে শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা Zero Popolation Growth বলে। জীবিত শিশু ও অভিবাসন জনসংখ্যা এবং মৃত ও প্রবাসন জনসংখ্যা প্রায় সমান হলে শুন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে।
3. মহানগর বা মেগাসিটি কাকে বলে ?
উত্তর : যখন কোনাে জনপদ বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তারলাভ করে এবং অত্যাধুনিক পরিসেবা প্রদান করে, তখন তাকে মহানগর বা মেগাসিটি বলে। 2011 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতে মেগাসিটির সংখ্যা ৪টি। উদাহরণ—মুম্বাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, আহমেদবাদ, বৃহত্তর কলকাতা, বৃহত্তর চেন্নাই, বৃহত্তর সুরাত প্রভৃতি।
4. কোন রাজ্যে জনঘনত্ব সবথেকে কম এবং কেন?
উত্তর : ভারতের অরুণাচল প্রদেশের জনঘনত্ব সবথেকে কম। প্রতি বর্গকিমিতে 13 জন বাস করে। কারণ—(i) দুর্গম পার্বত্য ভূ-ভাগ, (ii) প্রতিকুল জলবায়ু, (iii) গভীর বনভূমি, (iv) কৃষি, শিল্প নগরায়ণের অভাব, (v) খনিজ ও শক্তি সম্পদের অভাব এই অতি জনবিরলতার কারণ।
5. সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের সর্বাধিক ও সর্বনিম্ন জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাজ্য দুটির নাম লেখাে।
উত্তর : সর্বাধিক জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাজ্য—ভারতের সর্বাধিক জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাজ্য হল উত্তর প্রদেশ। মােট জনসংখ্যা 16.62 কোটি।
সর্বনিম্ন জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাজ্য—ভারতের সর্বনিম্ন জনসংখ্যা বিশিষ্ট্য রাজ্য হল সিকিম। মােট জনসংখ্যা—5,40,493 জন।
6. পরিব্রাজন বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : যখন কোনাে দেশের বা কোনাে অঞ্চলের জনসাধারণের এক অংশ কোনাে বিশেষ পরিব্রাজন বলে। পরিব্রাজনে আকর্ষণজনিত কারণগুলি হল—(i) উন্নততর শিক্ষালাভ ও গবেষণা, (ii) সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, (iii) মনােরম আবহাওয়া ও পরিবেশ, (iv) নতুন সম্পদ বা নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কার ইত্যাদি। এবং Push Factor গুলাে হল-(i) রাজনৈতিক অস্থিরতা, (ii) কর্মসংস্থানের অভাব, (iii) যুদ্ধবিগ্রহ, দেশভাগ (iv) সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে অস্থিরতা, (i) জনসংখ্যা বৃদ্ধি, (ii) উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা করার সুযােগের অভাব ইত্যাদি বিষয়ের আকর্ষণে অথবা বিকর্ষণজনিত কারণে অন্যত্র গমন করে থাকে।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : (i) বৃদ্ধির হার : ভারতের উচ্চ জন্মহার ও নিম্নমৃত্যুহার জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ।
(ii) বিবাহ : বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, বিধবা বিবাহ, সর্বজনীন বিবাহ জনসংখ্যা বাড়ায়।
(iii) শিক্ষা : স্বল্প শিক্ষা, অশিক্ষা, কুসংস্কার, নারীশিক্ষার অভাব জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে।
(iv) অনুপ্রবেশ : অনুপ্রবেশ ও উদ্বাস্তু সমস্যা জনসংখ্যা বাড়ায়।
(v) সামাজিক মর্যাদা : নারীদের স্বল্প সামাজিক মর্যাদা জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ।
এছাড়াও (i) যৌথ পরিবার প্রথা, (ii) পুত্রসন্তানের আশঙ্কা এবং (ii) কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি জনসংখ্যা বাড়ায়।
2. ভারতের অধিক জন্মহারের কারণগুলি কী কী?
উত্তর : (i) আধুনিক চিকিৎসা ব্যবহার উন্নতি ভারতের মৃত্যুহারকে অনেকাংশে কমিয়েছে। (ii) দুর্ভিক্ষ, খরা, বন্যা রােধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা, ত্রাণ মৃত্যুহার কমিয়েছে। (iii) পুষ্টিকর সুষম খাদ্যের সরবরাহ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। (iv) আধুনিক যােগাযােগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা মৃত্যুহার কমিয়েছে। (v) মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, সন্তান প্রতিপালনের আর্থিক স্বচ্ছলতা, সুশিক্ষা মৃত্যুহার কমিয়ে দিয়েছে।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. ভারতের অসম জনসংখ্যা বণ্টনের কারণগুলি আলােচনা করাে :
উত্তর : ভারতের মােট জনসংখ্যা 121.02 কোটি (2011 খ্রীঃ) হলেও সর্বত্র জনসংখ্যা সমান হারে বন্টিত হয়নি। ভারতে অসম জনসংখ্যা বন্টনের কারণগুলি হল নিম্নরূপ-
প্রাকৃতিক কারণ :
(a) ভূ-প্রকৃতি : উচ্চ পার্বত্য অঞলে খাড়া ঢাল, বাসযােগ্যতার অভাব, পরিবহন যাতায়াত ব্যবস্থার অসুবিধার দরুণ জনজাতি তুলনামূলক কম। মালভূমি অঞ্চলে খনিজ ও শিল্পের সমৃদ্ধির জন্য জনবসতি মাঝারি। এবং পৃথিবীর প্রায় 90% মানুষ সমভূমি অঞ্চলে বাস করে সমস্ত সুযােগ সুবিধা পাওয়া যায় বলে।
(b) জলবায়ু : উমরু অঞ্চলে জলবায়ু চরমভাবাপন্ন, উয়, পার্বত্য অঞ্চলে হিমশীতল জলবায়ু ও বৃষ্টিবহুল পরিবেশের কারণে জনবসতি বিরল। অন্যদিকে উপকূলীয় এবং সমভূমি অঞলে সমভাবাপন্ন মনােরম জলায়ুর কারণে জনঘনত্ব অধিক।
(c) নদ-নদী : নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় ভারতের অধিকাংশ শহারল নদী তীরবর্তী অণ্ডলে গড়ে উঠেছে।
(d) মৃত্তিকা : মৃত্তিকার গুণাগুণের ওপর কৃষির সাফল্য নির্ভর করে। উর্বর মৃত্তিকাযুক্ত অণ্ডলে ঘনবসতি দেখা যায়। অপরদিকে অনুর্বর মৃত্তিকায় বিরল জনবসতি দেখা যায়।
(e) বনভূমি : বনভূমির প্রকৃত ও বনভূমির বন্টনের উপর জনসংখ্যার তারতম্য নির্ভরশীল।
II অর্থনৈতিক কারণ :
(a) কৃষি : ভারত কৃষি নির্ভর দেশ। তাই কৃষির সুবিধাযুক্ত অঞ্চলে জনঘনত্ব অর্ধেক।
(b) শিল্প : শিল্পাঞ্চলে কর্ম সংস্থানের সুযােগ থাকায় জনঘনত্ব বেশি হয়।
(c) পরিবহণ ও যােগাযােগ : ভারতের উন্নত পরিবহণ ও যােগাযােগ ব্যবস্থা সম্পন্ন স্থানে জনঘনত্ব বেশী। অপরদিকে এই স্বসুবিধা না থাকায় সেখানে বিরল জনবসতি।
(d) ধর্ম : ধর্মীয় আচার আচরণকে কেন্দ্র করে ধর্মতীর্থস্থলগুলিকে জনসংখ্যা বেশি।
(e) শিক্ষা ও সংস্কৃতি : শিক্ষা দীক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্পকলা সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলােতে জনঘনত্ব অনেক বেশি। সেখানে এই সকল সুযােগ কম সেখানে জনঘনত্ব অনেক কম।
III রাজনৈতিক কারণ :ভারত বিভাজন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পর্বে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে অনুপ্রবেশের কারণে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ, অসম রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলিতে অধিক কর্মসংস্থানের জন্য শহুরে জনসংখ্যার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তুলনামূলক ভাবে গ্রামাঞ্চলে কম।
উপরিউক্ত কারণগুলির জন্য ভারতে অসম জনসংখ্যা বন্টন লক্ষ করা যায়।
ভারতের পরিবহণ ও যােগাযােগ ব্যবস্থা
1. ইন্টারনেট বা আন্তর্জাল কী?
উত্তর : সমগ্র পৃথিবীর সমস্ত কম্পিউটারকে মডেমের সাহায্যে টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে একসূত্রে যােগ করার নামই হল ইন্টারনেট বা অন্তর্জাল। 1963 খ্রিস্টাব্দে ইন্টারনেট হল সমগ্র বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার নেটওয়ার্কের ইন্টারনেট বা অন্তর্জাল সূচনা : হয় মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের উদ্যোগে।
2. ই-মেল (E-mail) কী?
উত্তর : ই-মেল-এর অর্থ হল Electronic mail বা বৈদ্যুতিক বার্তা। কম্পিউটার ইন্টারনেট ব্যবস্থায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ পদ্ধতিতে অতি অল্প সময়ে পৃথিবীর যে কোনাে প্রান্তে যেখানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা আছে, সেখানে ডিজিটাল তথ্য পাঠানাে যায়।
3. ব্যাক ওয়াটার্স ৰা পশ্চাদভূমি বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : ভারতের মালাবার উপকূলে অসংখ্য কয়াল বা উপহদ আছে, এগুলিকে ব্যাকওয়াটার্স বলে। এগুলি জলপথরূপে ব্যবহৃত হয়। আলেপ্পি থেকে কোচিন পর্যন্ত ভেম্বনাদ কয়ালের মধ্য দিয়ে স্টিমারে যাতায়াত করা যায়। তাছাড়া তিরুবন্তপুরম থেকে উত্তরে কেপুর পর্যন্ত জলপথে যাওয়া যায়।
4. শিপিংলেন কাকে বলে?
উত্তর : মহাসাগরের বিস্তৃতি হলেও তারতম্যের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করে জাহাজ চলাচল করে। জাহাজ সমুদ্রে যে নির্দিষ্ট পথে চলে তাকে শিপিংলেন বলে।
5. শিপিং লাইন কী?
উত্তর : জলপথ পণ্য ও যাত্রী পরিবহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সমুদ্রপথ পরিবহণে কোম্পানির জাহাজ সমুদ্রে চলাচল করে, সেই কোম্পানিকে শিপিং লাইন বলে।
6, পুনঃ রপ্তানিবন্দর কাকে বলে?
উত্তর : যে বন্দরের মাধ্যমে পণ্যদ্রব্য, আমদানি, আমদানিকৃত পণ্য সঞ্চয় অথভা ব্যবসা করার পর পুনরায় রপ্তানি করা হয়, তাকে বলা হয় পুনঃরপ্তানিবন্দর। যেমন- কেরলের কোলাম বন্দর।
7. বুলেট ট্রেন কী ?
উত্তর : বুলেট ট্রেন হল প্রচণ্ড গতিসম্পন্ন ট্রেন। জাপানে টোকিও-ওসাকার শহরের মধ্যে 1964 সালে প্রথম এই ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ভারতের 2014-15 অথবর্যে রেল বাজেটে মুম্বাই থেকে আমেদাবাদের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালানাের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর : (প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ‘জলপথ হল উন্নয়নের রূপরেখা’-ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : সমুদ্র, হ্রদ, নদী, খাল প্রভৃতি দিয়ে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণকে জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থা বলে। পথ নির্মামে খরচ কম (কখনাে খরচ লাগে না), পরিহণ পদ্ধতি সহজ ও সরল ও কমব্যয়বহুল, একসাথে প্রচুর পণ্য বহন করা যায় এবং শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটে বলে জলপথ হল উন্নয়নের রূপরেখা।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. পরিবহণ (Transport) এবং যােগাযােগ (Communication) ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য লেখাে।
উত্তর : পরিবহণ এবং যােগাযােগ ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য –
ভিত্তি ভাবর তরাই
1. প্রকৃতি পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে কেবল পণ্যসামগ্রী ও যাত্রী এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত হয়। যােগাযােগ ব্যবস্থার মাধ্যমে কেবল সংবাদ ও তথ্যের আদান-প্রদান হয়।
2. মাধ্যম এর মাধ্যমগুলি হল—সড়কপথ,রেলপথ, জলপথ, আকাশপথ,রজ্জুপথ, পাইপলাইন, পাতাল রেল। এর মাধ্যমগুলি হল ইন্টারনেট, ই-মেল মােবাইল ফোন, টেলিগ্রাফ ইত্যাদি।
3. সময় পরিবহণ ব্যবস্থায় যাত্রী বা পণ্যদ্রব্য এক স্থান থেকে অপরস্থানে পৌঁছাতে অনেক বেশি সময় লাগে। যােগাযােগ ব্যবস্থায় তথ্য বা সংবাদ পৃথিবীর যে কোন স্থানে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারে।
4. ব্যয় পরিবহণ ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়বহুল।
উপগ্রহ চিত্র ও ভূ-বৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ]:[প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. ভারতীয় সর্বেক্ষণ বিভাগ স্থাপিত হয় যে সালে—
[A] 1667 সালে [B] 1767 সালে [C] 1867 সালে [D] 1967 সালে
উত্তরঃ [B] 1767 সালে
2. ভারতের একটি ভূসমলয় উপগ্রহ হল—
[A] NOAA [B] GMS [C]INSAT [D] METEOSAT
উত্তরঃ [C] INSAT
3, পৃথিবীর প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ হল ।
[A] ল্যান্ডস্যাট-1 [B] আর্যভট্ট [C] ইনস্যাট [D] স্পুটনিক
উত্তরঃ [D] স্পুটনিক
4. ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র আঁকা হয়—
[A] জরিপ থেকে [B] বিমানচিত্র থেকে [C] উপগ্রহ চিত্র থেকে। [D] কোনােটিই না
উত্তরঃ [A] জরিপ থেকে
5. নাসা প্রেরিত প্রথম উপগ্রহের নাম হল-
[A] NOAA [B] TRIOS-1 [C] IRS-1A [D] LISS-I
উত্তরঃ [B] TRIOS-1
6. ভারতের মহাশূন্য থেকে ছবি তােলার কাজ শুরু হয় যে সালে—
[A] 1950 [B] 1960 [C] 1970 [D] 1990
উত্তরঃ [D] 1990
7. ভূসমলয় উপগ্রহগুলি ভূপৃষ্ঠ থেকে কত কিলােমিটার ওপরের অবস্থান করছে?
[A] 400 কিমি [B] 4000 কিমি [C] 600 কিমি [D] 6000 কিমি।
উত্তরঃ [B] 4000 কিমি
8. ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের আন্তর্জাতিক স্কেল হল—
[A] ১00000 [B] 1 – 100000 [C] 1 – 200000 [D] 1 – 1000000
উত্তরঃ [C] 1 – 200000
9. স্যাটেলাইট শব্দের ফরাসি অর্থ হল—
[A] দ্বাররক্ষী [B] উপগ্রহ [C] নজরদারি [D] প্রহরী
উত্তরঃ [D] প্রহরী
10. ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ
[A] আর্যভট্ট [B] স্পুটনিক [C] লুনা-II [D] ভস্তক
উত্তরঃ [A] আর্যভট্ট
11. ভারতের প্রথম মহাকাশচারী
[A] কল্পনা চাওলা [B] রাকেশ শর্মা। [C] ভ্যালেনন্তিলা [D] ইউরি গ্যাগারিন
উত্তরঃ [B] রাকেশ শর্মা
12. SPOT উপগ্রহটি উৎক্ষেপন করা হয় যে সালে
[A] 1966 [B] 1976 [C] 1986 [D] 1996
উত্তরঃ [C] 1986
13. অবলােহিত রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকে পাওয়া যায়
[A] উপগ্রহ চিত্রের [B] চাঁদের [C] বিমানপথের [D] ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের
উত্তরঃ [D] ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
নিম্নলিখিত বাক্যগুলি শুদ্ধ হলে পাশে ‘শ’ এবং অশুদ্ধ হলে পাশে ‘অ’ লেখাে :
1. এক্স রশ্মি থেকে দূর সংবেদন সম্ভব নয়। উত্তর : শু
2. লাল রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে স্বাভাবিক উদ্ভিদের মানচিত্র তৈরি করা হয় উত্তর : শু
3. LANDSAT উপগ্রহ থেকে ওজোনস্তরের ঘনত্ব সম্পর্কে জানা যায়। উত্তর : অ
4. গামা রশ্মিকে দূর সংবেদনের প্রধান রশ্মি হিসেবে ধরা হয়। উত্তর : অ
5. ভারতের উপগ্রহ চিত্র শুধুমাত্র হায়দরাবাদ-এর দূর সংবেদন সংস্থা থেকেই প্রকাশ করা হয়। উত্তর : শু
শূন্যস্থানে সঠিক শব্দ বসিয়ে বাক্যটি সম্পূর্ণ করাে
1. 10m×10®®M হল _ রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য। উত্তর : অবলােহিত
2. LANDSAT উপগ্রহ একই জায়গার ছবি – দিন পরপর পাঠায়। উত্তর : 18
3. বস্তুর সংস্পর্শে না এসে দূর থেকে কোনাে বস্তুর ছবি তােলাকে বলে উত্তর : দূরসংবেদন।
4. উপগ্রহ চিত্রের ক্ষুদ্রতম একককে বলে । উত্তর : পিক্সেল
5. স্পেকট্রাম বরাবর তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিমাপের যে একক ব্যবহার করা হয় তা হল উত্তর : মাইক্রোমিটার
6. মানচিত্রে তিন ধরনের স্কেল ব্যবহৃত হয়। যথা – ভগ্নাংশসূচক ও লৈখিক স্কেল। উত্তর : বিবৃতিমূলক।
7, 198৪ সালে ভারতে। উপগ্রহ নামে উৎক্ষেপন শুরু হয়। উত্তর : IRS
8. ভারতের দুর সংবেদনের পিতা বলা হয় উত্তর : সতীশধরণ।
একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাও :
1. ভারতের টোপাে মানচিত্রে কতগুলি গ্রিড রয়েছে?
উত্তর : 135টি।
2. সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার শাখা দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : কলকাতার উড স্ট্রিটে।
3. টোগােশিটের কোন দিকে স্কেল উল্লেখ করা থাকে?
উত্তর : উত্তর-পূর্বদিকে।
4. টোপাে মানচিত্রে জাতীয় সড়কের চিহ্ন কী?
উত্তর : NHT
5. ডিগ্রি শিটের মেট্রিক স্কেল কত?
উত্তর : 1 সেমিতে 25 কিমি বা 1:250000।
6. ভারতের প্রথম উপগ্রহের নাম কী?
উত্তর : আর্যভট্ট।
7. ভূসমলয় উপগ্রহের কক্ষপথটিকে কী বলে?
উত্তর : পার্কিং অরবিট।
৪. রিমােট সেসিং শব্দের আভিধানিক অর্থ কী?
উত্তর : দূরসংবেদন।
9. সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : দেরাদুনে।
10. পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার সঠিক অবস্থান নির্ণয়ের জন্য ভারতে কোন উপগ্রহ ব্যবহার করা হয়?
উত্তর : INSAT উপগ্রহ।
11. নিরক্ষীয় তল বরাবর যে সব উপগ্রহ পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘােরে তাকে কী বলা হয়?
উত্তর : ভূসমলয় উপগ্রহ।
12. ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের অপর নাম কী?
উত্তর : টোপাে মানচিত্র।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. দূর সংবেদন (Remote Sensing) কাকে বলে?
উত্তর : বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে দূরের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সুন্দর নিখুঁত ধারণা গড়ে তােলার পদ্ধতিকে দূরসংবেদন বা Remote Sensing বলে। এই পদ্ধতির দুটি প্রধান উপাদান হল-(i) বিমান চিত্র (Aerial Photo) এবং (ii) উপগ্রহ চিত্র (Satellite Imagery)।
2. বিভেদন বা Resolution কাকে বলে ?
উত্তর : সংবেদক (Sensor)-এর সাহায্যে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে গৃহীত কৃত্রিম উপগ্রহ চিত্রের বিভিন্ন বস্তু, ক্ষেত্র, উপাদানের পৃথক করণের ক্ষমতাকে বিভেদন বা Resolution বলে।
3. উপগ্রহ চিত্রে ব্যান্ড’ (Bond) বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : পৃথিবীর কোনাে বস্তু বা পদার্থ থেকে বিচ্ছুরিত অথবা প্রতিফলিত তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণগুলি উপগ্রহ সংবেদনে স্থাপিত ডিভাইসের যে অংশে লিপিবদ্ধ হয় তাকে ‘ব্যান্ড (Band) বলে।
4. কৃত্রিম উপগ্রহ কাকেবলে?
উত্তর : কৃত্রিম উপগ্রহ হল তথ্য প্রযুক্তি সমৃদ্ধ মানুষ দ্বারা নির্মিত এক অত্যাধুনিক যন্ত্র যা একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৃথিবীকে বারবার প্রদক্ষিণ করে।
5. দূরসংবেদনে ‘সেনসর’ (Sensor) কাকে বলে?
উত্তর : সেনসিং’ কথাটির অর্থ—কোনাে বস্তুকে পর্যবেক্ষণ করা। সুতরাং সেনসর হল একটি যন্ত্র যা মহাকাশ থেকে ভূ-পৃষ্ঠের কোনাে নির্দিষ্ট লক্ষ বস্তুর তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ গ্রহণ করে, তাকে চিহ্নিত করতে পারে। র্যাডার, ল্যাডার, অপটিক্যাল স্ক্যানার এর উদাহরণ।
6. Pixel কাকে বলে?
উত্তর : উপগ্রহ প্রতিচ্ছবির ক্ষুদ্রতম অঙ্গানু বা উপাদানকেই পিক্সেল বলা হয়। যার নির্দিষ্ট value, address থাকে। এই address আবার দুই প্রকার। যথা-(i) Latitude/ Longitude এবং (i) Row/Column। এক একটি পিক্সেল ভূ-পৃষ্ঠের নির্দিষ্ট অংশকে নির্দেশ করে।
7. দূরসংবেদন ব্যবস্থায় (True Colour Composition (TCC) বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : উপগ্রহ প্রতিচ্ছবিতে ভূমির ব্যবহার দেখাবার জন্য সাধারণত তিনটি রঙ যথা—লাল, সবুজ, নীল (RGB) বা এদের সংমিশ্রণ করে দেখানাে হয়। তাই সাধারণত ও ব্যান্ডের উপগ্রহের মাধ্যমে কোনাে প্রতিচ্ছবি TCC প্রতিস্থাপনের জন্য Red, Green, Blue Channel ব্যবহৃত হয়। ফলে লাল বস্তুকে লাল, নীল বস্তুকে নীল সবুজ বস্তুকে সবুজ ব্যান্ডের রঙ এ দেখানাে হয়, একে TCC বলে।
8. দূরসংবেদনে False Colour Composition (Fcc) বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : উপগ্রহ প্রতিচ্ছবিকে নিখুতভাবে বােঝাবার জন্য যখন Image-processing এর সময় লক্ষবস্তুর প্রকৃতি রং-এর পরিবর্তে ছদ্মরং ব্যবহার করা হলে তাকে False Colour Compoisition (FCC) বলে।
9. GIS কী?
উত্তর : GIS কথাটির পুরাে কথা হল—Geographical Information System। যা একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। যার সাহায্যে ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন পরিসংখ্যানকে ধারণ, সংরক্ষণ, পরীক্ষা পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়, ব্যাখ্যা, সর্বোপরি মানচিত্রের আকারে প্রকাশ করা হয়।
10. Nadir Point কী ?
উত্তর : কৃত্রিম উপগ্রহের সােজাসুজি নীচে ভূ-পৃষ্ঠের অবস্থিত বিন্দুকে নাদির বিন্দু বলে। এটি ভূ-পৃষ্ঠস্থ পথের মধ্যে অবস্থিত হয়।
11. বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ বা EMR (Electro Magnetic Radiation) কী?
উত্তর : বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ হল শক্তির একটি রূপ। এতে একটি সর্পিল বিদ্যুৎ তরঙ্গ থাকে এবং সর্পিল চৌম্বকীয় তরঙ্গ থাকে। অতিবেগুনী রশ্মি, মাইক্রোওয়েভ, এক্সরশ্মি, রেডিওতরঙ্গ ও দৃশ্যমান আলাে প্রত্যেকটি এক একটি বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. দূরসংবেদন ব্যবস্থার সুবিধাগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : (i) সংগৃহীত তথ্য বাস্তবের সাথে সঠিক। (ii) বিস্তীর্ণ অঞ্চলের তথ্য সংগ্রহ। (iii) দুর্গম অঞ্চলের তথ্য সহজেই পাওয়া যায়। (iv) বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে সহজে তথ্য সংগৃহীত হয়। (v) কম্পিউটারের মাধ্যমে সহজে ও দ্রুত তথ্য বিশ্লেষণ করা যায়। (vi) Digital আকারে তথ্য সংগৃহীত হয়। (vii) প্রতিনিয়ত এই তথ্য পাওয়া যায় বলে তথ্যের পরিবর্তন কি ঘটলাে তা ধরে ফেলা যায়।
2. উপগ্রহ চিত্রের বিশেষ ব্যবহারগুলি কী কী?
উত্তর : উপগ্রহ চিত্র এবং তথ্যাদি বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন—(i) আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা যায়। (ii) ক্রান্তীয় সরল বা দুর্বল ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান, গতিপ্রকৃতি, ক্ষমতা জানা যায়। (iii) কৃষিজ ফসলের বন্টন পরিমাপ করা যায়। (iv) ফসলের গুণমান এবং (v) অন্যান্য গ্রহদের সম্পর্কে জানা যায়।
বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ
✍বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ] : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. বায়ুপ্রবাহের দ্বারা সুক্ষ্ম বালিকণা বহুদুর বাহিত ও সঞ্চিত হয়ে যে ভুমিরূপ গঠন করে তাকে বলে—
[A] ড্রামলিন [B] সিফ [C] লােয়েস [D] বাখান
উত্তরঃ [C] লােয়েস
2. পেডিমেন্ট সমভূমির মধ্যে অনুচ্চ পাহাড়গুলিকে বলে—
[A] স্কুপ পর্বত [B] ভঙ্গিল পর্বত [C] মােনাক [D] ইনসেলবার্জ
উত্তরঃ [D] ইনসেলবার্জ
3. আবহবিকারের ফলে ভূমিরূপের পরিবর্তন হয়—
[A] ধীরগতিতে। [B] দ্রুত গতিতে [C] A ও B উভয় গতিতে [D] কোনােটিই ঠিক নয়
উত্তরঃ [A] ধীরগতিতে।
4, উপকুল অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট জলমগ্ন উপত্যকাকে বলে—
[A] নিমজ্জিত উপত্যকা। [B] ঝুলন্ত উপত্যকা [C] সার্ক উপত্যকা [D] ফিয়র্ড উপত্যকা
উত্তরঃ [D] ফিয়র্ড উপত্যকা
5. একটি আদর্শ নদীর উদাহরণ হল-
[A] সিন্ধু [B] লুনী [C] তাপ্তী [D] নর্মদা
উত্তরঃ [A] সিন্ধু
6. ভূপৃষ্ঠস্থ চূর্ণবিচূর্ণ শিলাসমূহ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপসারিত হয়, তাকে বলে—
[A] বিচূর্ণীভবন [B] নগ্নীভবন [c] অঙ্গারযােজন [D] ক্ষয়ীভবন
উত্তরঃ [D] ক্ষয়ীভবন
7. মরু অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে সমান্তরালভাবে অবস্থিত কঠিন ও কোমল শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে ভুমিরূপ সৃষ্টি করে তাকে বলে—
[A] জুইগেন [B] গৌর [C] ইয়াদাং [D] মােনাক
উত্তরঃ [B] ড্রমলিন
৪. ওলটানাে নৌকোর মতাে ভূমিরূপকে বলা হয়—
[A] এসকার [B] ড্রমলিন [C] বােল্ডার ক্লে [D] বাখান
উত্তর :
9. হিমবাহ থেকে নিঃসৃত জলস্রোতের মাধ্যমে হিমবাহ উপত্যকায় যে সমস্ত পলি সঞ্চিত হয়ে ভূমিরূপ গঠন করে তাকে বলে—
[A] ভ্যালি ট্রেন [B] মােনাক [C] বােল্ডার ক্লে [D] ড্রামলিন
উত্তরঃ [C] আর্দ্র অঞলে
10. নদী গঠিত প্লাবনভূমি দেখা যায়—
[A] মেরু অঞ্চলে [B] শুষ্ক অঞ্চলে [C] আর্দ্র অঞলে [D] কোনােটিই নয়
উত্তর :
11. কোনটি বহিজাত প্রক্রিয়া নয়— [A] আবহবিকার [B] পুঞ্জিত ক্ষয় [C] নদীর কাজ [D] ভূমিকম্প
[D] ভূমিকম্প
12. অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ দেখা যায়—
[A] নদীর উচ্চ গতিতে [B] নদীর মধ্য গতিতে [C] নদীর নিম্নগতিতে [D] নদীর মধ্য ও নিম্নগতিতে
উত্তরঃ [D] নদীর মধ্য ও নিম্নগতিতে
13. হিমবাহ থেকে নিঃসৃত জলস্রোতের মাধ্যমে হিমবাহ উপত্যকায় যে সমস্ত পলি সঞ্চিত হয় তাকে বলে—
[A] ভ্যালি ট্রেন [B] বােল্ডার ক্লে [C] ড্রামলিন [D] পেডিমেন্ট
উত্তরঃ [A] ভ্যালি ট্রেন
14. গৌর ভূমিরূপ গঠিত হয়—
[A] নদীর স্রোতের দ্বারা [B] সমুদ্র তরঙ্গের দ্বারা। [c] হিমবাহের দ্বারা। [D] বায়ুর দ্বারা।
উত্তরঃ [D] বায়ুর দ্বারা।
15. প্রবাহমান বায়ুর গতিপথের সঙ্গে সমান্তরালভাবে গড়ে ওঠা বালিয়াড়িকে বলা হয়—
[A] অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি [B] ভ্রাম্যমান বালিয়াড়ি [C] তির্যক বালিয়াড়ি [D] কোনােটিই ঠিক নয়
উত্তরঃ [A] অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি
16. ভারতের একটি পিরামিড চূড়ার উদাহরণ হল-
[A] গৌরীশংকর শৃঙ্গ [B] কাকাবােরাজি শৃঙ্গ [C] নীলকণ্ঠ শৃঙ্গ [D] দোদাবেতা শৃঙ্গ
উত্তরঃ [C] নীলকণ্ঠ শৃঙ্গ
17. উচ্চ পাবর্ত্য ও উচ্চ অক্ষাংশে অধিক দেখা যায়-
[A] জলের কার্য [B] তুষারের কার্য [C] বায়ুর কার্য [D] তাপমাত্রার কার্য
উত্তরঃ [B] তুষারের কার্য
18. বন্যার সময় নদীর দুকুল প্লাবিত হয়ে নদীর তীরবর্তী নিম্নভূমিতে পলি, বালি, কাদা সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে বলে—
[A] উপকূলের সমভূমি [B] লােয়েশ সমভূমি [C] পলি-প্লাবন সমভূমি [D] ব-দ্বীপ সমভূমি
উত্তরঃ [C] পলি-প্লাবন সমভূমি
19. যান্ত্রিক আবহবিকার সর্বাধিক ঘটে—
[A] নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে [B] মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে [C] মরুভূমি অঞলে। [D] কোনােটিই ঠিক নয়।
উত্তরঃ [C] মরুভূমি অঞলে।
20. ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার সমভূমিটি একটি –
[A] ব-দ্বীপ সমভূমি। [B] প্লাবন সমভূমি। [C] লােয়েশ সমভূমি। [D] কোনােটিই ঠিক নয়
উত্তরঃ [B] প্লাবন সমভূমি।
21. পৃথিবীর বৃহত্তম উচ্চ মালভূমি হল—
[A] আরব মালভূমি। [B] পামির মালভূমি [C] তিব্বত মালভূমি [D] ছােটোনাগপুর মালভূমি
উত্তরঃ [C] তিব্বত মালভূমি
– অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. দুটি বা তার বেশি সার্ক পাশাপাশি গঠিত হলে দুটি সার্কের মধ্যবর্তী স্থান উঁচু হয়ে শিরার মতাে অবস্থান করলে তাকে বলে –
উত্তর : অ্যারেট।
2. রাজস্থানের চলন্ত বালিয়াড়িকে বলে __________________
উত্তর : প্রিয়ান।
3. বায়ুর কাজ প্রাধান্য লাভ করে ___________ অঞ্চলে।
উত্তর : মরু।
4. পেডিমেন্টের নীচে গঠিত লবণাক্ত জলের হ্রদকে বলে _______________
উত্তর : প্লায়া।
5. দুটি সি বালিয়াড়ির মাঝের অংশের নাম _______________
উত্তর : করিডোের।
6. ভূ-পৃষ্ঠের ওপরে সংঘটিত ভূমিরূপ প্রক্রিয়া হল ___________________ প্রক্রিয়া।
উত্তর : বহির্জাত।
বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাও
1. একটি বহিজাত প্রক্রিয়ার উদাহরণ দাও।
উত্তর : নদীর কাজ।
2. একটি লােয়েস সমভূমির উদাহরণ দাও।
উত্তর : উত্তর চিনের হােয়াংহাে নদী অববাহিকায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে লােয়েস সমভূমি গঠিত হয়েছে।
3. রাজস্থানের মরু অঞ্চলের চলমান বালিয়াড়িকে কী বলে?
উত্তর : রাজস্থানের মরু অঞ্চলের চলমান বালিয়াড়িকে প্রিয়ান বলে।
4. পৃথিবীর সৃদৃশ্য জলপ্রপাতটির নাম কী ?
উত্তর : পৃথিবীর সৃদৃশ্য জলপ্রপাতটির নাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নায়াগ্রা জলপ্রপাত।
5. প্রান্ত গ্রাবরেখা কাকে বলে?
উত্তর : হিমবাহবাহিত পাথর-নুড়ি, কাঁকর প্রভৃতি যখন হিমবাহের সামনে বা শেষপ্রান্তে সঞ্চিত হয়, তখন তাকে প্রান্ত গ্রাবরেখা বলে।
6. তির্যক বালিয়াড়ির আর এক নাম কী?
উত্তর : তির্যক বালিয়াড়ির আর এক নাম খান।
7. পৃথিবীর মরু খাতটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : পৃথিবীর বৃহত্তম মরুখাতটি শিরের কাতারায় অবস্থিত।
৪. হিমশৈল কী?
উত্তর : সমুদ্রে ভাসমান বিশালাকৃতি বরফের স্তুপকে বলে হিমশৈল। হিমশৈলের মাত্র 1/9 ভাগ জলের ওপরে ভেসে থাকে।
9. একটি লাভা গঠিত মালভূমির উদাহরণ দাও।
উত্তর : দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত মহারাষ্ট্রের লাভা মালভূমি বা ডেকানট্র্যাপ লাভা মালভূমির উদাহরণ।
10. দুটি পবর্তবেষ্টিত মালভূমির উদাহরণ দাও।
উত্তর : তিব্বতের মালভূমি এবং ইরাকের মালভূমি হল দুটি পর্বতবেষ্টিত মালভূমির উদাহরণ।
11. চুতিরেখা ও তিতল কী?
উত্তর : ভূত্বকে যে রেখা বরাবর চ্যুতি ঘটে, তাকে চ্যুতিরেখা এবং যে তলে চ্যুতি ঘটে, তাকে চুতিতল বলে।
12. দুটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরির উদাহরণ দাও।
উত্তর : দুটি জীবন্ত আগ্নেয়গিরির উদাহরণ হল-(i) ইতালির ভিসুভিয়াস এবং (ii) ভারতের ব্যারেন।।
13. প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা’ কী?
উত্তর : প্রশান্ত মহাসাগরকে বলয়ের মতাে ঘিরে রয়েছে যে আগ্নেয়গিরি মণ্ডল, তাকেই ‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেঘলা’ বলে।
14. ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত কোনটি?
উত্তর : ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাতটি হল যােগ বা গেরসােপ্পা জলপ্রপাত। এর উচ্চতা 253 মিটার।
15. ক্যাটার্যাক্ট কী?
উত্তর : জলপ্রপাতের বিপুল পরিমাণে জল প্রবাহিত হলে তাকে ক্যাটার্যাক্ট বলে।
16. কোন শিলায় জীবাশ্ম দেখতে পাওয়া যায় ?
উত্তর : পাললিক শিলায় জীবাশ্ম দেখতে পাওয়া যায়।
17. কী কী প্রক্রিয়ায় শিলা রূপান্তরিত হয়?
উত্তর : (i) চাপ, (i) তাপ ও (ii) রাসায়নিক প্রক্রিয়ার প্রভাবে শিলা রূপান্তরিত হয়।
18. হর্নব্লেন্ড কী?
উত্তর : হর্নব্লেন্ড একটি রূপান্তরিত শিলা। আগ্নেয়শিলা অগাইট রূপান্তরিত হলে হর্নব্লেন্ড সৃষ্টি হয়।
19. জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট কী জাতীয় পর্বর্ত?
উত্তর : জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট একটি স্তুপ পর্বত।
20. গ্রাবেন কী?
উত্তর : যে গ্রস্থ উপত্যকার দু’পাশে স্তুপ পর্বৰ্ত থাকে, তাকে গ্রাবেন জাতীয় গ্রস্ত উপত্যকা বলে।
21. ক্ষয়জাত পর্তকে অবশিষ্ট পর্বত বলা হয় কেন?
উত্তর : মূল পর্বত বা মালভূমির অবশিষ্ট অংশ নিয়ে গঠিত হয় বলে ক্ষয়জাত পর্বতের অপর নাম অবশিষ্ট পর্বত।
22. পৃথিবীর বৃহত্তম মালভূমির নাম কী ?
উত্তর : পৃথিবীর বৃহত্তম মালভূমি হল তিব্বত মালভূমি।
23. একটি উন্নত ও একটি অবনত সমভূমির উদাহরণ দাও।
উত্তর : উন্নত সমভূমি—মেক্সিকো উপসাগরের তীরবর্তী উপসাগরীয় সমভূমি। অবনত সমভূমি—তুরানের নিম্নভূমি।
24. পৃথিবীর কোন অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার সবচেয়ে বেশি হয় ?
উত্তর : উয়-আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার সবচেয়ে বেশি হয়।
25. হিমবাহ সমভূমির উদাহরণ দাও।
উত্তর : উত্তর আমেরিকার প্রেইরি ভূমির উত্তরাংশ ও উত্তর ইউরােপের সমভূমিগুলি হিমবাহ সমভূমির প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
26. ভারতের সর্ববৃহৎ সঞ্জয়জাত সমভূমি কোনটি?
উত্তর : ভারতের সর্ববৃহৎ সঞ্চয়জাত সমভূমিটি হল—উত্তর-পূর্ব ভারতের সমভূমি। এর অন্য নাম সিন্ধু-ব্রম্মপুত্র-গঙ্গা সমভূমি।
27. ভারতের প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বত কোনটি?
উত্তর : ভারতের প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বতটি হল আরাবল্লি।
28. পৃথিবীর বৃহত্তম গিরিখাত বা ক্যানিয়ন কোনটি?
উত্তর : আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলােরাডাে নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।
29. নদীর কোন প্রবাহে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়?
উত্তর : নদীর পার্বত্য প্রবাহে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. পর্যায়ন’ কাকে বলে ?
উত্তর : অসমতল ও বন্ধুর ভূমির ক্ষয়সীমার সাপেক্ষে ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে সমতলে পরিণত হলে তাকে পর্যায়ন’ বলে। দুটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া-অবরােহণ ও আরােহণের সম্মিলিত ফল হল পর্যায়ন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বহির্জাত প্রক্রিয়া কার্যকর হয়।
2. ‘অবরােহণ’ (Degradation Process) প্রক্রিয়া বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : যে সমস্ত বহির্জাত প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠের উচ্চতা পর্যায়ক্রমিকভাবে হ্রাস পায়, তাকে অবরােহণ প্রক্রিয়া বলা হয়। শিলাবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয় এবং ক্ষয়ী ভবনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
3. ‘আরােহণ’ (Aggradation Process) প্রক্রিয়া বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : যে সমস্ত বহির্জাত প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠের উচ্চতা সাময়িকভাবে বৃদ্ধি পায়, তাকে আরােহণ প্রক্রিয়া বলা হয়। এর অপর নাম সয়। নদী, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, ভৌমজল ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তি ক্ষয়জাত পদার্থ নীচু স্থানে সঞ্জিত করে ক্রমশ উঁচু হয়ে ওঠে।
4. পর্যায়িত নদী (Graded Stream) কাকে বলে?
উত্তর : যদি কোনাে নদী তার ক্ষমতা অনুযায়ী যতটুকু বস্তৃভার বহন করা সম্ভব ততটুকু বস্তুভার বহন করে তাকে তখন পৰ্যায়িত নদী বলা হয়। ডেভিসের মতে পর্যায়িত নদী হল এমন একটি নদী যার, ক্ষয়সাধন, পরিবহন এবং অবক্ষেপন কার্যের মধ্যে সামঞ্জস্য আছে।
5. নগ্নীভবন’ (Denudation) কাকে বলে?
উত্তর : বহির্জাত অবরােহণ প্রক্রিয়ায় আবহবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয় ও ক্ষয়ীভবন—এই তিনটি পদ্ধতির যৌথ ক্রিয়াশীলতায় ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগের শিলাস্তর বিচ্ছিন্ন হয়ে অবসারিত হয়ে এবং নীচের শিলাস্তর ভূ-পৃষ্ঠে উন্মুক্ত হলে, এই অবরােহণ প্রক্রিয়াকে নগ্নীভবন বলা হয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
5. জলবিভাজিকা কী?
উত্তর : যে উচ্চভূমি পাশাপাশি অবস্থিত দুই বা ততােধিক নদী অববাহিকা বা নদীগােষ্ঠীকে পৃথক করে, তাকে জলবিভাজিকা বলে। উদাহরণ—হিমালয়, বিন্ধ্য, সাতপুরা, পশ্চিমঘাট পর্বত প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ। জলবিভাজিকা।
6. নদী অববাহিকা কাকে বলে?
উত্তর : একটি প্রধান নদী তার উপনদী, শাখানদী, প্রশাখানদী মিলিয়ে যতটুকু স্থান অধিকার করে আছে, তা হল ওই প্রধান নদীর অববাহিকা। উদাহরণ—গঙ্গা অববাহিকা ভারতের বৃহত্তম নদী অববাহিকা।
7. ধারণ অববাহিকা কাকে বলে?
উত্তর : নদীর উৎস অঞ্চলের অববাহিকাতে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলধারা বা শীর্ষনদী একত্রে মিলিত হয়ে নদীরূপে একটি নির্দিষ্ট খাতে নীচের দিকে প্রবাহিত হয়। নদীর উৎস। অণ্ডলে এই অববাহিকাকে ধারণ অববাহিকা বলে।
8. ষষ্ঠ-ঘাতের সূত্রটি কী?
উত্তর : নদীর গতিবেগের সঙ্গে বহন ক্ষমতার সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক আছে। দেখা গেছে নদীর গতিবেগ দ্বিগুণ হলে তার বহন ক্ষমতা 64 গুণ বা 2° হারে বেড়ে যায়। ইহাই যষ্ঠঘাতের সূত্র নামে পরিচিত। 1842 সালে W. Hopkins এই সূত্রের ব্যাখ্যা দেন।
9. নদী উপত্যকা কাকে বলে?
উত্তর : উৎস থেকে মােহানা গতিপথের দু’পাশের উচ্চভূমির মাঝে যে দীর্ঘ ও সংকীর্ণ নিম্নভূমির মধ্যদিয়ে নদীর জলধারা প্রবাহিত হয়, তাকে নদী উপত্যকা বলে।
10. নদীর ক্ষয়সীমা বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : নদী ভূ-পৃষ্ঠে যে উচ্চতা পর্যন্ত ক্ষয় করতে সক্ষম, সেই উচ্চতাকে নদীর ক্ষয়সীমা বলে। সাধারণভাবে নদীর ক্ষয়সীমা হল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। আবার মরু অঞ্চলে নদীর ক্ষয়সীমা হল প্লায়া হ্রদ।
11. কিউসেক ও কিউমেক কী?
উত্তর : এটি হল নদীর জলপ্রবাহ পরিমাপের একক। কিউসেক হল কিউবিক ফুট/সেকেন্ড। আর মেট্রিক পদ্ধতিতে কিউমেক হল কিউবিকমিটার/সেকেন্ড।
12. সমপ্ৰায় ভূমি কী ?
উত্তর : বৃষ্টিবহুল আর্দ্র অঞ্চলে নদীর জলপ্রবাহ, বৃষ্টির জল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে, প্রাচীন মালভূমি, উচ্চভূমি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে এক সময় উঁচু। নীচু ঢেউ খেলানাে বা প্রায় সমতলভূমিতে পরিণত হলে তাকে সমপ্ৰায় ভূমি বলে।
13. পাখির পায়ের মতাে ব-দ্বীপ কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তর : মূল নদী তথা প্রধান নদী বহু শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে পাখির পায়ের আঙুলের মতাে দীর্ঘ ও সংকীর্ণ হয়ে সমুদ্রের দিকে এগােলে নদীর সঞ্চয়কার্যে এরূপ ব-দ্বীপের সৃষ্টি হয়। যেমন—মিসিসিপি-মিসৌরী ব-দ্বীপ।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর :[প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. জলপ্রপাত সৃষ্টির কারণগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : নদীর প্রবাহপথে বিভিন্ন কারণে জলপ্রপাত সৃষ্টি হতে পারে। যেমন—(i) চ্যুতির ফলে নদীর গতিপথে খাড়া ঢাল সৃষ্টি হলে। (i) নদী গতিপথে কঠিন ও কোমলশিলা অনুভূমিক, উল্লম্ব বা তির্যকভাবে অবস্থান করলে বৈষম্যমূলক ক্ষয়ের ফলে ঢাল উৎপন্ন হয়ে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। (i) নদী হিমবাহ সৃষ্ট ঝুলন্ত উপত্যপার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে এবং (iv) নদীর পূর্ণযৌবন লাভের ফলে সৃষ্ট নিক্ বিন্দুতে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।
2. নদীর নিম্নগতিতে বন্যা হয় কেন?
উত্তর : সমভূমি প্রবাহে তথা নিম্নপ্রবাহে নদীর গতিবেগ একেবারে কমে যায় এবং নদী কেবল সঞ্চয়কার্য করতে থাকে। ফলে এই সময় নদীখাতের গভীরতা হ্রাস পায়। হঠাৎ কোনাে কারণে নদীতে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে (অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত) অতিরিক্ত জল নদীঘাত ছাপিয়ে পার্শ্ববর্তী উপত্যকা অলকে প্লাবিত করে। এই কারণে নদীর নিম্ন প্রবাহে বন্যা হয়। গঙ্গা, ব্ৰক্ষ্মপুত্র নদীর নিম্নপ্রবাহের উপত্যকা অঞ্চলগুলি অত্যধিক বন্যাপ্রবণ।
3. ব-দ্বীপের শ্রেণিবিভাগ করাে।
উত্তর : আকৃতি অনুযায়ী ব-দ্বীপ চার প্রকার। (i) ধনুকাকৃতি ব-দ্বীপ—ব-দ্বীপের সমুদ্রমুখী। বহিরেখা ধনুকের আকৃতির হয়। হােয়াংহাে নদী ব-দ্বীপ এইরূপ। (ii) পাখির পায়ের ন্যায় ব-দ্বীপ—মূল নদী বহুশাখায় বিভক্ত হয়ে পাখির পায়ের ন্যায় ব-দ্বীপ তৈরি করে। যেমন—মিসিসিপি-মিসৌরী ব-দ্বীপ। (iii) করাতের দাঁতের মতাে ব-দ্বীপ মােহানায় প্রবল সমুদ্রতরঙ্গের আঘাতে নদীর পলি দুদিকে ছাপিয়ে এরুপ ব-দ্বীপ গঠন করে। যেমন—ইতালির তাইবার ব-দ্বীপ। (iv) খাড়ীয় ব-দ্বীপ—খাঁড়ির মধ্যে এইরূপ ব-দ্বীপ সৃষ্টি হয়। যেমন—ফ্রান্সের সীন নদীর ব-দ্বীপ।
4. বর্তমানে সুন্দরবনের লােহাচড়া, নিউমুর, ঘােড়ামারা দ্বীপের ওপর জলবায়। পরিবর্তনের প্রভাব আলােচনা করাে।
উত্তর : (i) লােহাচড়া দ্বীপ : হুগলি নদীর মােহনায় এই দ্বীপটি 2006 সালে সমুদ্রজলতল বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অবলুপ্ত হয়। 6000 জনবসতিকে স্থানান্তরিত হতে হয়।
(ii) নিউমুর দ্বীপ : 10,000 বর্গমিটার এলাকায় দ্বীপটি 1970 সালে হাড়িয়াভাঙা নদীর মােহনায় জেগে উঠলেও 2010 সালে জলতলবৃদ্ধির কারণে তা ডুবে যায়।
(iii) ঘােড়ামারা দ্বীপ : 1975 সালে ৪.5 বর্গকিমি ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট দ্বীপটি বর্তমানে উপকুল ক্ষয়, জলতল বৃদ্ধির কারণে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। এর প্রথম ক্ষেত্রফল মাত্র 4.4 বর্গকিমি।
রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [ প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্টভূমিরূপগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরুপগুলি নিম্নে আলােচনা করা হলাে-
(i) শৃঙ্খলিত বা আবদ্ধ শৈলশিরা : পার্বত্য অংশে নদী পথের বাধা স্বরূপ শৈলশিরা বা পাহাড় থাকলে । এড়িয়ে যাবার জন্য নদী এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। তখন শৈলশিরা- গুলিকে দূর থেকে আবদ্ধ মনে হয়। এটি হল আবদ্ধ বা শৃঙ্খলিত শৈলশিরা। উদাঃ—তিস্তা নদীর ( আবদ্ধ শৈলশিরা পার্বত্য অংশে এই প্রকার ভূমিরূপ দেখা যায় )।
(ii) র্যাপিডস বা খরস্রোত : নদীগর্ভে পর্যায়ক্রমে কঠিন ও কোমল শিলা অবস্থান করলে কঠিন শিলা অপেক্ষা কোমল শিলা বেশি ক্ষয় পেয়ে ধাপের সৃষ্টি করে, ফলে নদীর জল ধাপে ধাপে নেমে আসে। একে র্যাপিডস বা খরস্রোত বলে। উদাঃ—আফ্রিকার জাইরে নদীতে 32টি খরস্রোত সৃষ্টি হয়েছে।
(iii) জলপ্রপাত : পার্বত্য প্রবাহে নদীর তলদেশের ঢাল হঠাৎ বিচ্যুত হলে বিচ্যুত তলের ওপর জলরাশি নীচে পতিত হলে তাকে জলপ্রপাত বলে। কঠিন ও কোমল শিক্ষা পাশাপাশি অবস্থান করলে এরূপ জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। দক্ষিণ আমেরিকার ভেনেজুয়েলার রিওকরােনি নদীর সান্টোঅ্যাঞ্জেল জলপ্রপাত পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত (উচ্চতা 979 মিঃ)।
(iv) প্রপাতকূপ বা প্রাপুল : জলপ্রপাতের পাদদেশে সৃষ্ট ঘূর্ণাবর্তের মধ্যস্থিত নুড়ি বা শিলা পাক খেতে খেতে ঘর্ষণের ফলে ভূমিশিলায় যে গর্তের সৃস্টি হয় তাকে প্রপাতকূপ বা প্রাপুল বলে।
(v) মন্থকূপ বা পটহােল : প্রবলবেগে প্রবাহিত নদীর তলদেশ বা পার্শ্বদেশে জলাবর্তের সৃষ্টি হলে সেখানে নুড়ি বা শিলার ঘর্ষণের ফলে যে গর্তের সৃষ্টি হয় তাকে মন্থকূপ বা পটহােল বলে। উদাহরণ-ঝাড়খণ্ডের খরকাই নদীগর্ভে অসংখ্য মন্থকূপ দেখা যায়।
2. নদীর সঞ্চয়কাজের ফলে কী কী ভূমিরূপ গড়ে ওঠে আলােচনা করাে।
উত্তর : নদীর সঞ্চয়কাজের ফলে গঠিত ভূমিরুপগুলি নিয়ে আলােচনা করা হল-
(i) পলল শঙ্কু ও পলল ব্যজনী : নদী পার্বত্য অঙুল থেকে সমভূমিতে পৌঁছানাের সময় পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষয়জাত পদার্থসমূহ পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে যে ত্রিকোণাকার ভূমিরূপ গড়ে তােলে তাকে পলিশ বলে। একাধিক পলিশঙ্কু পাশাপাশি অবস্থান করলে তাকে পলল ব্যজনী ও পলল শঙ্কু বলে।
(ii) নদী বাঁক বা মিয়েল্ডার : মধ্য ও নিম্নপ্রবাহে নদীর গতিবেগ কম থাকায় সামান্য বাধার সম্মুখীন হলে নদী গতিপথের পরিবর্তন ঘটিয়ে এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। একে নদী বাঁক বলে। তুরস্কের নদী মিয়েন্ডারেস এর নামানুসারে এই ভূমিরূপের নাম মিয়েন্ডার। উদাঃ—জলঙ্গী নদীতে অসংখ্য নদীবাঁক দেখা যায়।
(iii) অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ : মধ্য ও নিম্নগতিতে ঘােড়ার ক্ষুরের ন্যায় যে পরিত্যক্ত নদীঘাত দেখা যায় তাকে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে। মধ্য ও নিম্নগতিতে নদী ক্ষয়জাত পদার্থসমূহ নিয়ে এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হতে। হতে হঠাৎ সােজা পথে অগ্রসর হলে নদীবাঁকের একটি অংশ মূল প্রবাহ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ সৃষ্টি করে। উদাঃ–গঙ্গা নদীর নিম্নপ্রবাহে দেখা যায়।
(iv) প্লাবনভূমি ও (v) স্বাভাবিক বাঁধ : সমভূমি প্রবাহে নদীখাতের গভীরতা কমে যাওয়ায়। নদীর জল হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে অতিরিক্ত জল নদীখাত ছাপিয়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্জল প্লাবিত করে এবং নদীবাহিত পলি, বালি, কাদা সঞ্চিত হয়ে প্লাবনভূমির সৃষ্টি করে। উদাঃ–গঙ্গা নদীর সমভূমি প্রবাহে প্লাবনভূমি দেখা যায়। স্বাভাবিক ধাঁধ ও বনভূমি
বারংবার নদীতে প্লাবনের সময় পার্শ্ববর্তী অণ্ডলে একাধিকবার পলি জমা হবার ফলে নদী এবং প্লাবনভূমির মধ্যবর্তী অঞ্চলে একটু বেশি উচ্চতাসম্পন্ন ভূমির সৃষ্টি হয়, একে স্বাভাবিক বাঁধ বলে।
উদাঃ—নীলনদের গতিপথে এইরকম অনেক স্বাভাবিক বাঁধ দেখা যায়।
(vi) খড়ি : শেষ প্রান্তে মােহানায় নদী যেখানে সাগরে মেশে সেখানে ফানেল আকৃতির চওড়া নদী মােহানাকে খাঁড়ি বলে।
(vii) ব-দ্বীপ : মােহানার কাছে নদীর গতিবেগ কমে গিয়ে বস্তৃভার নদীবক্ষে সঞ্চয় করে গ্রিক অক্ষর ডেল্টা-র (4) ন্যায় বা বাংলার মাত্রাহীন ‘ব’-এর মতাে যে দ্বীপ গঠন করে তাকে ব-দ্বীপ বলে। উদাঃ–গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র নদীর ব-দ্বীপ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ।
বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ – ভূমিরূপের পরিবর্তনে হিমবাহের ভূমিকা
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. হিমরেখা কাকে বলে?
উত্তর : অত্যধিক শীতলতার জন্য যে সীমারেখার ওপরে সারাবছর বরফ জমে থাকে এবং যে রেখার নীচে বরফ গলে জলে পরিণত হয়, সেই কাল্পনিক রেখাকে হিমরেখা বলে। হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে হিমরেখার গড় উচ্চতা স্থানবিশেষে 4000- 5000 মিটার। আবার তীব্র শীতলতার জন্য মেরু অঞ্চলে হিমরেখা প্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায় থাকে।
2. আইস শেল কাকে বলে?
উত্তর : দক্ষিণ আন্টার্কটিকা মহাদেশে উপকূলের সঙ্গে সংযুক্ত যে বরফের পাত দেখা যায়, সেই বরফের পাতটিকে আইস শেলফ বলে। যেমন—আন্টার্কটিকার রস ও রনি আইস শেলফ।
3. হিমযুগ কাকে বলে?
উত্তর : বর্তমান সময় থেকে প্রায় 50 লক্ষ বছর পূর্বে প্লিস্টোসিন উপযুগে পৃথিবীর অধিকাংশ স্থান বরফাবৃত ছিল, এই সময়কে হিমযুগ বলে। আর দুটি হিমযুগের মধ্যবর্তী সময়কে অন্তর্বর্তী হিমযুগ বলা হয়।
4. নেভে ও ফার্ন কী?
উত্তর : হিমরেখা ঊর্ধ্বে প্রবল শৈত্যের কারণে সদ্য পতিত তুষার হালকা পেঁজা তুলাের মতাে হয়, একে ‘নেভে’ বলে। নেভের ঘনত্ব থাকে 0.06 থেকে 0.16 সেমি। নেভের ওপর পুনরায় তুষারপাতে নীচের তুষারে ঘনত্ব ও দৃঢ়তা বাড়ে, একে বলে ফার্ণ। ফার্ণের ঘনত্ব 0.72 থেকে 0.9 সেন্টিমিটার হয়।
5. হিমানী সম্প্রপাত বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের বিশাল বরফের স্তুপ যখন ভূমিকম্প বা অধিক তুষারপাত বা ঢালের স্থিতিস্থাপকতা নষ্টের ফলে পর্বতের ঢাল বরাবর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পর্বতের পাদদেশে নেমে আসে, তাকে হিমানী সম্প্রপাত বলে। এটি হল একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
6. আমলক তল (Mammillated surface) কী?
উত্তর : আমলক তল সাধারণত হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত হয়। প্রবহমান হিমবাহের তলদেশে যে সকল প্রস্তর-খণ্ড থাকে তাদের ঘর্ষণে পর্বতগাত্রের শিলাস্তরে আঁচড় কাটার দাগ পড়ে এবং এই অলের শিলা মিশ্রিত হয়। একে আমলক তল বলে।
7. হিমর্সিড়ি বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : হিমবাহ উপত্যকার লম্বচ্ছেদ অসমতল ও অপর্যায়িত হয়। তবে কখনাে কখনােও লম্বচ্ছেদ মসৃণ ও অবতলাকৃতি হয়। হিমবাহ উপত্যকার অসমতল তলে সিঁড়ির মতাে ধাপের সৃষ্টি হয়, তাকে হিমসিঁড়ি বলে। হিমসিড়ির তিনটি অংশ। যথা— রাইজার, রিগেল ও ট্রেড।
8. নুনাটা কাকে বলে?
উত্তর : মহাদেশীয় হিমবাহের প্রান্তভাগে অগভীর বরফের স্তুপযুক্ত পর্বতগুলি মাঝে মাঝে বরফহীন হয়ে অবস্থান করে। মেরু অঞ্চলের তুষারক্ষেত্রের বরফমুক্ত শৃঙ্গগুলি নুনাটাকস নামে পরিচিত। উদাঃ—কুমেরুর প্রদেশের মাউন্ট তার্কাহি।
9. ‘ড্রমলিন’ কাকে বলা হয় ?
উত্তর : বিভিন্ন আকৃতির শিলাখণ্ড এবং নুড়ি, বালি, পলি ইত্যাদি হিমবাহ বাহিত পদার্থ। পর্বতের পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে উলটানাে নৌকা বা উলটানাে চামচের মতাে ভূমিরূপ তৈরি করলে, তাকে ড্রামলিন বলে। ড্রামলিনের দৈর্ঘ্য 1-3 কিমি, প্রস্থ 300-600 মিঃ এবং উচ্চতা 60 মিঃ পর্যন্ত হয়।
10. বহিঃধৌত সমৃভমি কাকে বলে?
উত্তর : প্রান্তদেশে হিমবাহ গলতে শুরু করলে গলিত জল হিমবাহ বাহিত নুড়ি, বালি, পলিকে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চাদরের ন্যায় সgয় ঘটায়। এরফলে পর্বতের পাদদেশে যে সমভূমি গড়ে ওঠে তাকে বহিঃধৌত সমভূমি বা আউটওয়াশ প্লেন বলা হয়।
11. কর্তিত স্পার বা কর্তিত শৈলশিরা কী ?
উত্তর : উপত্যকার মধ্যদিয়ে হিমবাহ অগ্রসর হওয়ার সময় স্পার বা পর্বতের অভিক্ষিপ্তাংশে তীক্ষ্ম ও মসৃণভাবে ক্ষয় করে। এই স্পারগুলিকেই বলা হয় কর্তিত স্পার বা কর্তিত শৈলশিরা।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ঝুলন্ত উপত্যকায় জলপ্রপাত সৃষ্টি হয় কেন?—ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : ঝুলন্ত উপত্যকায় জলপ্রপাত সৃষ্টির কারণগুলি নিম্নরূপ-
(i) কর্তিত স্পার বরাবর মূল হিমবাহের গভীর উপত্যকা ও উপহিমবাহের দ্বারা গঠিত অগভীর উপত্যকার মধ্যে উচ্চতার উল্লম্ব ব্যবধান সৃষ্টি হয়ে জলপ্রপাত সৃষ্টি করে। (ii) বায়ুর উয়তার বৃদ্ধি পেলে হিমবাহ গলে গিয়ে বরফ গলা জলধারার সৃষ্টি হয়। (iii) বরফগলা জলধারা ঝুলন্ত উপত্যকা বরাবর প্রবাহিত হয়ে মূল হিমস্রোণীর ওপর জলপ্রপাতের সৃষ্টি করে।
2. গ্রাবরেখার শ্রেণিবিভাগ আলােচনা করাে।
উত্তর : পার্বত্য অঞ্চলে নানা আকৃতির বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখণ্ড, নুড়ি, কাকড়, বালি, কাদা-হিমবাহের সাথে স্তুপাকারে সঞ্চিত হতে হতে নীচের দিকে অগ্রসর হয়। একে গ্রাবরেখা বলে। একে নানাভাগে ভাগ করা হয়। যথা—(1) বিচলনশীল গ্রাবরেখা : (i) পার্শ্ব গ্রাবরেখা (ii) মধ্য গ্রাবরেখা (iii) হিমপৃষ্ঠ গ্রাবরেখা (iv) হিমাবদ্ধ গ্রাবরেখা (v) ভূমি গ্রাবরেখা।
(2) অবক্ষিপ্ত গ্রাবরেখা-(i) প্রান্ত গ্রাবরেখা (ii) বিরাম গ্রাবরেখা (iii) ঠেলা গ্রাবরেখা, (iv) অবিন্যস্ত গ্রাবরেখা। (v) রােজেন গ্রাবরেখা (vi) স্তরায়িত সামুদ্রিক গ্রাবরেখা (vii) বলয়ধর্মী গ্রাবরেখা।।
ভূমিরূপের পরিবর্তনে হিমবাহের ভূমিকা—বায়ুর কাজ
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. আর্গ বা কুম কী?
উত্তর : বায়ুর অপসারণ কার্যের ফলে বালি দিয়ে ঢাকা ছােটো ছােটো যে ভূমির সৃষ্টি হয় তাকে আর্গ বলে। সাহারা মরুভূমিতে এটি আর্গ এবং তুর্কিস্থানে এটি কুম নামে পরিচিত।
2. গাসি কী?
উত্তর : বায়ুপ্রবাহের সমান্তরালে দীর্ঘ ও সংকীর্ণ শৈলশিরার মতাে বালির পাহাড়গুলিকে সিফ বালিয়াড়ি বলে। এই সিফ বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী করিডােরগুলি সাহারায় ‘গাসি’ নামে পরিচিত। এই করিডােরগুলি যাতায়াতের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
3. সিফ বালিয়াড়ি কাকে বলে?
উত্তর : বায়ুপ্রবাহের গতিপথের সঙ্গে সমান্তরাল গঠিত দীর্ঘাকৃতি বালিয়াড়িকে সিফ বা অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বলে। এদের আকৃতি তরােয়ালের মতাে বলে ভূবিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড এর নামকরণ করেন সিফ বালিয়াড়ি। এগলির উচ্চতা কয়েকশাে মিটার ও দৈর্ঘ্য কয়েক কিমি থেকে কয়েকশাে কিমি হয়। এর শীর্ষদেশ তীক্ষ্ণরু হয়। এরা একে অপরের সমান্তরালে গড়ে ওঠে।
4. মরুখাত বা ব্লো-আউট কাকে বলে ?
উত্তর : মরু অঞ্চলে প্রবল বায়ুপ্রবাহের দ্বারা কোনাে একটি অঞ্চল থেকে হাজার হাজার টন বালুকারাশি অপসৃত হলে সেখানে অবনতভূমি বা খাতের সৃষ্টি হয়। এই প্রকার খাত বা অবনতভূমি ব্লোআউট বলে। মিশরের কাতারা হল পৃথিবীর বৃহত্তম মরুখাত।
5. রেগ কী?
উত্তর : বিভিন্ন আকৃতির প্রস্তর খণ্ড দিয়ে গঠিত ও পাথুরে মরুভূমিকে আলজিরিয়াতে রেগ বলা হয়। লিবিয়া ও মিশরে এটি সেরীয় এবং অস্ট্রেলিয়ায় গিবার বলা হয়।
6. দুটি করে ক্রান্তীয় ও নাতিশীতােয় মরুভূমির নাম লেখাে।
উত্তর : ক্রান্তীয় মরুভূমি ও উয় মরুভূমি—(i) আফ্রিকার উত্তর সাহারা মরুভূমি। (ii) উত্তর আমেরিকা সােনেরান মরুভূমি।
নাতিশীতােয় মরুভূমি- (i) দক্ষিণ আমেরিকার প্যাটাগােনিয়া মরুভূমি। (ii) এশিয়ার গােবি ও তাকলামাকান মরুভূমি।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর :[প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজ সর্বাধিক কেন?
উত্তর : মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজ সর্বাধিক হবার কারণগুলি হল—
(i) যান্ত্রিক আবহবিকার : মরু অঞ্চলে সর্বাধিক পরিমাণে যান্ত্রিক আবহবিকার সংঘটিত হওয়ার প্রচুর বালুকারাশি উৎপন্ন হয়।
(ii) স্বল্প বৃষ্টিপাত : স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে উদ্ভিদহীন পরিবেশে বায়ু বাধাহীনভাবে প্রবল গতিতে প্রবাহিত হতে পারে।
(iii) উদ্ভিজ্জ আবরণের অভাব : গাছপালা না থাকায় উন্মুক্ত ভূ-পৃষ্ঠে বায়ু সহজেই নানা পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে।
(iv) শিথিল ভূপৃষ্ঠ : ভূ-পৃষ্ঠের শিথিল উপরিভাগ বায়ুর কার্যের সহায়ক।
2. টীকা লেখাে : ‘লােয়েশ।
উত্তর : লােয়েশ : মরুভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্জলের হলুদ ও ধূসর বর্ণের ক্যালশিয়াম কার্বনেট (CaCO3), কোয়ার্টজ, ফেলপার ডলােমাইট সমৃদ্ধ শিথিল সূক্ষ্ম (20-25 মাইক্রোমিটার) পলিকনা হলাে লােয়েশ। বায়ু দ্বারা বাহিত হয়ে এই পলিকণা অন্যত্র সঞ্চিত হলে তাকে লােয়েশ ভূমি বলে। মধ্য এশিয়ার গােবি মরুভূমি থেকে বায়ুকারাশি উড়ে চিনের হােয়াংহাে নদী অববাহিকায় সঞ্চিত হয়ে লােয়েশ সমভূমি গড়ে উঠেছে।
3. টীকা লেখাে : ‘বার্খান’।
উত্তর : বার্খান : বায়ুর গতিপথের সঙ্গে লম্বভাবে অবস্থিত অপ্রতিসম, অর্ধচন্দ্রাকৃতি উত্তল অংশ বিশিষ্ট বালিয়াড়িকে বার্খান বলে। এর সামনের দিক উত্তল এবং পিছনের দিক অবতল হয়। বাখানের দুই প্রান্তে শিং-এর মতাে দুটি শিরা দেখা যায়। এর উচ্চতা 10-30 মিটার এবং প্রস্থ 40-70 মিটার। উদাহরণ : সাহারা মরুভূমিতে অসংখ্য বার্খান দেখা যায়।
4. মরুসম্প্রসারণের কারণ এবং এর প্রতিরােধের উপায়গুলি কী কী?
উত্তর : মরু সম্প্রসারণের কারণগুলি হল—(i) বিশ্ব উষ্যায়ন : এটি মরুভূমিকরণের প্রধান কারণ। (ii) খরা : মরু প্রায় অঞ্চলে দীর্ঘ দিন খরা চললে তা মরুগ্রাসে পড়ে। (iii) পশুচারণ : এর ফলে মাটি আলগা হয়ে যায়। (iv) বৃক্ষচ্ছেদন : গাছপালা কেটে ফেললে মরুকরণ দ্রুত হয়। (v) অবৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষাবাদ।
মরুকরণ প্রতিরােধের উপায়গুলি হল : (i) চেক ড্যাম : বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য চেক ড্যাম নির্মাণ দরকার। (ii) গ্রিন ওয়াল নির্মাণ : গাছের বেড়া লাগাতে হবে। (iii) ঘাস রােপণ : অগভীর বালিস্তরে মুনা জাতীয় ঘাস লাগাতে হবে। (iv) পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ দরকার। (v) উন্নত ফসলের চাষ : জমির লবণতা কমাতে বিভিন্ন প্রকার ফসলের চাষ করতে হবে।
5. বার্খান এবং সিফ বালিয়াড়ির মধ্যে পার্থক্যগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : বার্খান এবং সিফ বালিয়াড়ির মধ্যে পার্থক্যগুলি-
বিষয় বার্খান সিফ বালিয়াড়ি
(i) অর্থ বাখান শব্দের অর্থ বালির পাহাড়। ফরাসি শব্দ ‘বিউট’ এর অর্থ ‘টিবি’।
(ii) শব্দগত উৎপত্তি বায়ুর গতিপথের সাথে আড়াআড়ি মেসার ক্ষুদ্র সংস্করণ বিউট।
(iii) অবস্থান পার্শ্বদেশ মালভূমির মত খাড়া। ততটা খাঢ়া পার্শ্বদেশ নয়।
(iv) আকৃতি লােকালয় গড়ে ওঠে। লােকালয় গড়ে ওঠে না।
6. মেসা এবং বিউট-এর মধ্যে পার্থক্যগুলি লেখাে।
উত্তর : মেসা এবং বিউট-এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল-
বিষয় মেসা বিউট
(i) সংজ্ঞা স্পেনীয় শব্দ ‘Mesa’-র অর্থ হল ‘টেবিল। ফরাসি শব্দ ‘বিউট’ এর অর্থ ‘টিবি’।
(ii) আকৃতি মেসা আকৃতিতে বৃহৎ। মেসার ক্ষুদ্র সংস্করণ বিউট।
(iii) ঢাল পার্শ্বদেশ মালভূমির মত খাড়া। ততটা খাঢ়া পার্শ্বদেশ নয়।
(iv) বসতি লােকালয় গড়ে ওঠে। লােকালয় গড়ে ওঠে না।
রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি হল নিম্নরূপ-
(i) অপবাহন সৃষ্ট গর্ত বা বেসিন : প্রবল বায়ুপ্রবাহে বালিস্তর অপসারিত হয়ে কোনাে কোনাে স্থানে গর্ত বা অবনমিত অঞ্চল সৃষ্টি করলে তাকে বলা হয় অপবাহন সৃষ্ট গর্ত। ভারতে এটি ধান্দ নামে পরিচিত। আমেরিকার মন্টানা থেকে টেক্সাস পর্যন্ত এরূপ অনেক অপবাহন গর্ত দেখতে পাওয়া যায়।
(ii) জুগ্যান : মরু অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলা অনুভূমিক ভাবে অবস্থান করলে কঠিন শিলার দারন বা ফাটল বরাবর বায়ুক্ষয় করে নরম শিলা ক্ষয় করতে থাকে। ফলে কঠিন শিলায় চ্যাপ্টা মাথা বিশিষ্ট যে ভূমিরূপ গঠন করে তাকে জুগ্যান বলা হয়। উদাহরণ : কালাহারি মরুভূমিতে দেখা যায়।
(iii) ইয়াদাং :মর অলে কঠিন ও কোমল শিলা পাশাপাশি উল্লম্বভাবে অবস্থান করলে বৈষম্যমূলক ক্ষয়ের ফলে কঠিন কোমল শিলা শিলায় প্রাচীর ও কোমলশিলায় খাত সৃষ্টি করে। একে ইয়ার্দাং বলে। উদাহরণ : সাহারা, গােবি ও সােনেরান মরুভূমিতে দেখা যায়।
(iv) ভেন্টিফ্যাক্ট ও (v) ড্রেইকান্টার : মরুভূমি অঞ্চলে অনেক সময় একদিকে বায়ু প্রবাহের ফলে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় শিলার একদিক ক্ষয় পেয়ে মসৃণ হলে তা ব্রাজিল নাটের ন্যায় দেখতে হয়ে থাকে। একে ভেন্টি ফ্যাক্ট বলে। অপরদিকে বিভিন্ন দিকে বায়ু প্রবাহের ফলে শিলার দুই বা তিন দিক মসৃণ হয়ে যে ভুমিরুপ গঠন করে তাকে ড্রেইকান্টার বলে। কালাহারি মরুভূমিতে ভেন্টিফ্যাক্ট ও সাহারায় ড্রেইকান্টার দেখতে পাওয়া যায়।
(vi) ইনসেলবার্জ : অনেক সময় মরুভূমি অঞ্জলে স্থানে স্থানে দণ্ডায়মান উচ্চ পাহাড়গুলি বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অনুচ্চ ক্ষয়ীভূত টিলার ন্যায় আকার ধারণ করে। এদের ঢাল কম বেশি হয় অথচ এদের উচ্চতা খুব কম ও গােলাকার দেখতে হয়, এদের বলা হয় ইনসেলবার্জ। উদাহরণ : কালাহারি মরুভূমিতে ইনসেলবার্জ দেখা যায়।
2. বায়ু এবং জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত খুব কম হলেও আবহবিকার বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে ভূমিরূপের পরিবর্তন হয়। নীচে ভুমিরুপগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করা হলাে-
(i) ওয়াদি : মরুভূমির শুষ্ক নদীখাত হল ওয়াদি। ওয়াদির মধ্যে দিয়ে স্থায়ী নদী ইলের প্রবাহিত হয় না। ‘ওয়াদি’ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘শুষ্ক উপত্যকা। থর মরুভূমিতে একে ‘না’ বলা হয়।
(ii) পেডিমেন্ট : মরুভূমি মধ্যস্থিত পর্বতের পাদদেশে বায়ু প্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে একপ্রকার প্রায় সমতল ভূমির সৃষ্টি হয়, একে বলে পেডিমেন্ট। এর ঢাল 1.5°7° পর্যন্ত হয়। উদাহরণ : আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির মধ্যস্থিত আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির মধ্যস্থিত উত্তর পশ্চিম প্রান্তে পেডিমেন্ট লক্ষ করা যায়।
(iii) বাজাদা : মরু অঞ্চলের পর্বতের পাদদেশে বায়ু ও জলধারার মিলিত কাজের ফলে যে বালুময় সমতল ভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে বাজাদা বলে। বাজাদা সূক্ষ্ম পলি ও বালি দ্বারা গঠিত। বাজাদার তলদেশে থাকে পেডিমেন্টের আবৃত অংশ। বাজাদা মূলত বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত হয়। বাজাদার ঢাল কম, প্রায় 4°।
(iv) প্লায়া : মরুভূমির পাহাড় ঘেরা অবনমিত তালগুলিতে জল জমে যে হ্রদ তৈরি করে তাকে প্লায়া বলে। এই হ্রদগুলির লবণাক্ত ও কর্মস্তর দ্বারা বেষ্টিত। এটি দক্ষিণ আমেরিকায় ‘স্যালিনা’, আরব অঞ্চলে ‘সবখা’ বা ‘শট’ নামে পরিচিত। উদাহরণ : আরাবল্লী পর্বতে অবস্থিত। সম্বর’ হ্রদ একটি প্লায়া হ্রদ।
(v) পলল ব্যাজনী : মরু ও মরুপ্রায় অঞলে উচ্চভূমির পাদদেশে নুড়ি, বালি ও পলি গঠিত ত্রিকোণাকার ভূমি হল পলল ব্যজনী।
বায়ুমণ্ডল
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ]:[প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. উত্তর গােলার্ধে বায়ুপ্রবাহের দিকে পেছন করে দাঁড়ালে ডানদিকের থেকে বাঁদিকের বায়তে কম চাপ থাকে। একে বলে-
[A] ফেরেলের সূত্র [B] কোরিওলিস বল [C] বাইস ব্যালটসূত্র [D] কোনােটিই সঠিক নয়।
উত্তরঃ [C] বাইস ব্যালটসূত্র
2. কোরিওলিস শক্তির প্রভাবে বায়ুর –
[A] দিক বিক্ষেপ হয়। [B] গতিবেগের পরিবর্তন হয় [C] চাপের পরিবর্তন হয় [D] কোনােটিই হয় না
উত্তরঃ [A] দিক বিক্ষেপ হয়
3. ‘লু’বাতাস প্রবাহিত হয় যে ঋতুতে
[A] বর্ষাকালে [B] শীতকালে [c] বসন্তকালে [D] গ্রীষ্মকালে
উত্তরঃ [D] গ্রীষ্মকালে
4. ‘লু’ একটি
[A] স্থানীয় বায়ু [B] অনিয়মিত বায়ু [C] নিয়মিত বায়ু [D] সাময়িক বায়ু
উত্তরঃ [A] স্থানীয় বায়ু
5. উত্তর-পূর্ব আয়নবায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায়
[A] 10 কিমি [B] 15 কিমি [C] 16 কিমি [D] 40 কিমি
উত্তরঃ [C] 16 কিমি
6. দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায়
[A] 12 কিমি [B] 22 কিমি [C] 32 কিমি [D] 42 কিমি।
উত্তরঃ [B] 22 কিমি
7. দিনেরবেলা উম্ন ও হালকা বায়ু পর্বতের ঢাল বেয়ে ওপরের দিকে উঠলে তাকে বলে—
[A] ‘লু বায়ু। [B] ক্যাটাবেটিক বায়ু [C] অ্যানাবেটিক বায়ু [D] হ্যারিকেন বায়ু
উত্তর : অ্যানাবেটিক বায়ু
8. বৃষ্টিপাত পরিমাপের একক হল—
[A] মিটার-ফুট [B] সেমি বা ইঞি [C] গ্রাম [D] কিলােগ্রাম
উত্তরঃ [B] সেমি বা ইঞি
9. মেঘ থেকে ভূপৃষ্ঠের জলকণা ও বরফকণার পতনকে বলে—
[A] তুষারপাত [B] শিলাবৃষ্টি [C] বৃষ্টিপাত [D] অধঃক্ষেপণ
উত্তরঃ [D] অধঃক্ষেপণ
10. বৃষ্টিপাত পরিমাপ করার যন্ত্রের নাম—
[A] রেনগেজ বা বৃষ্টিমাপক যন্ত্র [B] ব্যারােমিটার [C] হাইগ্রোমিটার [D] থার্মোমিটার
উত্তরঃ [A] রেনগেজ বা বৃষ্টিমাপক যন্ত্
11. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত শহরটি হল—
[A] কালিম্পং [B] চেন্নাই [C] শিলং [D] দন্ডকারণ্য
উত্তরঃ [C] শিলং
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. কীভাবে বায়ু প্রবাহের নামকরণ করা হয়?
উত্তর : বায়ু যেদিক থেকে আসে সেই দিক অনুসারে বায়ু প্রবাহের নামকরণ করা হয়।
2. হ্যারিকেন কী?
উত্তর : পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ক্রান্তীয় ঘূর্ণর্বাত।
3. আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ প্রান্তে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতকে কী বলে?
উত্তর : টর্নেডাে।
4. বায়ুর আপেক্ষিক আদ্রর্তা 100% হলে সেই বায়ুকে কী বলে?
উত্তর : পরিপৃক্ত বায়ু।
5. নিরক্ষীয় অঞলে কী জাতীয় বৃষ্টি হয়?
উত্তর : পরিচলন বৃষ্টি।
6. কোন মৌসুমি বাতাসের দ্বারা বৃষ্টি হয় না?
উত্তর : শীতকালীন মৌসুমি বাতাসের দ্বারা বৃষ্টি হয় না।
7. বৃষ্টিমাপক যন্ত্রের নাম কী?
উত্তর : বৃষ্টিমাপক যন্ত্রের নাম রেনগজ বা বৃষ্টিমাপক যন্ত্র।
৪. বায়ুতে ভাসমান জলীয়বাষ্প যখন শীতল ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে জলকণায় পরিণত হয়, তাকে কী বলে?
উত্তর : শিশির।
9. কোন বায়ু স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর ব্যাপক সংস্করণ ?
উত্তর : মৌসুমি বায়ু।
10. লু’ বাতাস কোন্ সময় প্রবাহিত হয় ?
উত্তর : ‘লু’ বাতাস গ্রীষ্মকালে প্রবাহিত হয়।
11. একটি স্থানীয় বায়ুর নাম করাে।
উত্তর : ‘লু।
12. বায়ুর আদ্রর্তা কোন যন্ত্রের সাহায্যে নিরূপণ করা হয়?
উত্তর : শুষ্ক ও আর্দ্র কুন্ডযুক্ত হাইগ্রোমিটারের সাহায্যে।
13. সিসিলিতে প্রবাহিত এক ধরনের উন্ন স্থানীয় বায়ু কী নামে পরিচিত?
উত্তর : সিরােক্কো।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. ‘অ্যারােসল’ কী?
উত্তর : অ্যারােসেল : ‘অ্যারাে’ শব্দের অর্থ বাতাস, ‘সল’ শব্দের অর্থ ভাসমান ধূলিকণা। বায়ুতে ভাসমান সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কঠিন উপাদানকে (ধূলিকণা, লবণকণা, কয়লা গুঁড়াে, কাঠের গুঁড়াে প্রভৃতি) বলা হয় অ্যারােসল।
2. বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : ধূলিকণার গুরুত্বের কারণগুলি হল—(i) ভাসমান ধূলিকণাকে কেন্দ্র করে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয় এবং তার ফলে মেঘ, কুয়াশা, তুহিন, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির সৃষ্টি হয়। (i) বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা সরাসরি সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত ও বিচ্ছুরিত হয়ে বর্ণচ্ছটার সৃষ্টি করে। (iii) বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার আধিক্য বায়ুমণ্ডলকে অস্বচ্ছ করে। তােলে অর্থাৎ দৃষ্টি স্বচ্ছতা কমায় এবং পৃথিবীর গড় উত্তাপ বৃদ্ধি করে
3. Lapse rate’ বা ‘উয়তা হ্রাসের হার’ বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : সাধারণভাবে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উয়তা হ্রাস পায়। বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরে অর্থাৎ ট্রপােস্ফিয়ার স্তরে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ট্রপােপজ পর্যন্ত উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উয়তা হ্রাস পেতে থাকে। সাধারণত প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় 6:45°C (6.5°C) হারে উষ্মতা হ্রাস পেতে থাকে। এইভাবে উয়তা হ্রাস পাওয়ার বায়ুর স্বাভাবিক উম্লতা হ্রাস হার বলে।
4. ট্রপােপজ কী?
উত্তর : টুপােপজ কথাটির আক্ষরিক অর্থ ‘স্তন্ধ যে স্তর’, অর্থাৎ ট্রপােস্ফিয়ার ও স্ট্রাটোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী 2-3 কিমি বিস্তৃত অঞলে বায়ুপ্রবাহ ও উয়তার পরিবর্তন তেমন হয় না তাই একে ট্রলােপজ বলে। এখানে বায়ুর গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় –58°C থেকে –60°c।
5. অ্যাপলটন স্তর কাকে বলে?
উত্তর : ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় 300 কিমি ওপরে আয়নােস্ফিয়ারের একটি স্তরকে অ্যাপলটন স্তর বলে। এই স্তরে প্রতিফলিত হয়ে ভূ-পৃষ্ঠে উৎপন্ন হ্রস্ব তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের বেতার তরঙ্গ ভূ-পৃষ্ঠে আবার ফিরে আসে বলে ভূ-পৃষ্ঠে দূরবর্তী এবং অতি দূরবর্তী অঞ্জলগুলি মধ্যে বেতার যােগাযােগ সম্ভব।
6. ফেরেলসূত্রটি কী?
উত্তর : পৃথিবীর আবর্তনজনিত বলের প্রভাবে বায়ু সরাসরি উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে বায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। বায়ু প্রবাহের দিক সংক্রান্ত এই নিয়মটি বিজ্ঞানী উইলিয়াম ফেরেল আবিষ্কার করেন। তার নামানুসারে এটি ‘ফেরেল সূত্র নামে পরিচিত।
7. বাইস ব্যালস সূত্র কী?
উত্তর : বায়ুচাপের অবস্থানের সঙ্গে বায়ুপ্রবাহের সম্পর্কে সম্বন্ধে 1857 খ্রিস্টাব্দে ডাচ আবহবিদ বাইস ব্যালট একটি সূত্র উদ্ভাবন করেন। সূত্রটি হল উত্তর গােলার্ধে বায়ুর গতির দিকে পিছন ফিরে দাঁড়ালে ডানদিকের তুলনায় বামদিকের বায়ু চাপ কম অনুভূত হয় এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকের তুলনায় ডানদিকে বায়ু চাপ কম অনুভূত হয়। এই সূত্রটি বাইসব্যালট সূত্র নামে পরিচিত।
৪. কোরিওলিস শক্তি বা বল কী?
উত্তর : পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে বায়ুপ্রবাহের ওপর যে শক্তি প্রযুক্ত হয় তাকে কোরিওলিস বল বলে। 1835 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিজ্ঞানী ড. De. Coriolis এই শক্তি প্রথম আবিষ্কার করেন।
9. ‘গর্জনশীল চল্লিশা’ কী?
উত্তর : দক্ষিণ গােলার্ধে স্থলভাগের তুলনায় জলভাগ বেশি থাকায় পশ্চিমাবায়ু বাধাহীনভাবে প্রবলবেগে প্রবাহিত হয়। 40° দক্ষিণ অক্ষরেখা বরাবর পশ্চিম থেকে পূর্বে এই প্রবল পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহকে ‘গর্জনশীল চল্লিশা’ বলে।
10. প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে?
উত্তর : হিমমণ্ডল বা নাতিশীতােষ মণ্ডলের কোনাে স্থানে অধিক শীতলতার জন্য প্রবল উচ্চচাপের সৃষ্টি হলে তখন ওই উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চল থেকে শুষ্ক ও শীতল বায়ু কুণ্ডলী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। একে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে।
11. রসবি তরঙ্গ কী?
উত্তর : ঊর্ধ্ব ট্রপােস্ফিয়ারে বায়ুচাপের অবক্ৰমজনিত শক্তি ও কোরিওলিস শক্তির পরিমাণ সমান এবং তারা পরস্পরের বিপরীতে ক্রিয়া করে। ফলে উর্ধ বায়ুতে সমচাপ রেখার সঙ্গে সমান্তরালভাবে জিওট্রোফিক বায়ু প্রবাহিত হয়। C. G. Rossby- 1930 এর দশকে গাণিতিক পদ্ধতিতে এই ধরনের তরঙ্গায়িত বায়ুপ্রবাহের উপস্থিতি প্রমাণ করেছিলেন। তাই এই তরঙ্গায়িত প্রবাহকে ‘রসবি তরঙ্গা’ বলা। হয়।
12. হ্যাডলী সেল কী?
উত্তর : নিরক্ষীয় অঞ্চলে নিম্নচাপের দরুণ উর্ধ্বগামী বায়ু পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে ওই বায় ওপরে উঠে শীতল হয়ে উত্তর ও দক্ষিণে ছিটকে যায় এবং তা ক্রমশ সংকুচিত ও ভারী হয়ে কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি অঞ্চলে নেমে আসে, বায়ুর এই চক্রাকার আবর্তনকে হ্যাডলী কক্ষ বলা হয়।
13. সৌর ধ্রুবক (Solar Constant) কাকে বলে?
উত্তর : সূর্য থেকে পৃথিবী ক্রমাগত ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে সূর্যের তাপীয় ফল লাভ করে চলেছে। তবে সূর্য থেকে পৃথিবী প্রতিদিনি ও প্রতিবছর প্রায় কেই পরিমাণ সৌরতাপীয় ফল লাভ করে। একেই সৌর ধ্রুবক বলা হয়।
14. ITCZ কী?
উত্তর : নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 5 থেকে 10° অক্ষরেখার মধ্যে যে নিম্নচাপদ্রোণী আছে সেখানে উত্তর পূর্ব আয়নবায়ু এবং দক্ষিণপূর্ব আয়নবায়ু পরস্পর এসে মিলিত হয়। তাই এই মিলন অঞ্চলকে অন্তক্রান্তীয় অভিসৃতি অঞ্চল বা Inter Tropical Convergence Zone (ITCZ) বলে। এই অঞ্চলে বায়ুচাপীয় ঢাল প্রায় না থাকায়। অনুভূমিক বায়ুপ্রবাহ নেই। তাই এই অঙুলকে শান্তবলয় বলা হয়।
15. লীনাপ কী?
উত্তর : যে তাপ পদার্থের উন্নতার পরিবর্তন না ঘটিয়ে পদার্থের অবস্থার (যেমন—কঠিন থেকে তরলে এবং তরল থেকে গ্যাসীয় অথবা গ্যাসীয় থেকে তরল এবং তরল থেকে কঠিন ইত্যাদি) পরিবর্তন ঘটায় তাকে লীনতাপ বলে।
16. চরম আদ্রর্তা কাকে বলে?
উত্তর : কোনাে নির্দিষ্ট উয়তায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প বর্তমান। থাকে তাকে ওই বায়ুর নিরপেক্ষ বা চরম আদ্রর্তা বলা হয়। নিরপেক্ষ বা চরম আদ্রর্তার পরিমাণ সাধারণত গ্রামে প্রকাশ করা হয়। যেমন—10 গ্রাম/ঘনসেমি।
17. শিলাবৃষ্টি কী?
উত্তর : নাতিশীতােয় মণ্ডলে গ্রীষ্মকালে জলকণা ও বরকণা একত্রে অধঃক্ষেপন রূপে পতিত হলে তাকে শিলাবৃষ্টি বলে। ঊর্ধ্বমুখী প্রবলবায়ুর প্রভাবে জলকণাগুলি অনেক উঁচুতে উঠে গিয়ে শীতল হয়ে বরফকণায় পরিণত হয়। অবশেষে ধীরে ধীরে আয়তনে বেড়ে গিয়ে এই কণাগুলি বৃষ্টির সাথে ঝরে পড়ে।
18. ‘ঘূর্ণবাতের চক্ষু-কাকে বলে?
উত্তর : কুণ্ডলাকারে ঘূর্ণমান ক্রান্তীয় ঘূর্ণর্বাতের কেন্দ্ৰাঞ্চলটিতে বায়ু শান্ত থাকে এবং ঘূর্ণবাতের উপরিভাগ পর্যন্ত শান্ত বায়ুর একটি স্তম্ভ রচিত হয়। একে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলা হয়। এই অলটি প্রায়বৃত্তাকার এবং এর ব্যাস 20-40 কিমি। এখানে বায়ু অত্যন্ত হালকা ও পরিবর্তনশীল।
19. টর্নেডাে কী?
উত্তর : টর্নেডাে হল অতি ক্ষুদ্র কিন্তু অতি মারাত্মক শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণর্বাত। এদের আকৃতি অনেকটা চোঙের মতাে এবং ভূ-পৃষ্ঠের ওপর এদের ব্যাস 100-500 মিটার। এই ঝড়ের কেন্দ্রে বায়ুচাপ 900mb এর নীচে নেমে যায়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রকি পর্বতের পূর্বদিকে এই ঝড় বেশি হয়।।
20. আশ্বিনের ঝড় কী?
উত্তর : শরৎকালে ভারতের উপকূল অঞ্চলে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড়সহ বৃষ্টিপাত হয়। ঝড়ের তাণ্ডবে জীবনহানি ও ধনসম্পত্তির বিপুল ক্ষতি হয়। পশ্চিমবঙ্গে প্রধানত ‘আশ্বিন মাসে এই ধরনের ঘূর্ণিঝড় হয় বলে একে ‘আশ্বিনের ঝড়’ বলা হয়।
21. মৌসুমি বিস্ফোরণ কী?
উত্তর : ক্রান্তীয় পুবালি জেটের প্রভাবে মধ্যভারত ও বঙ্গোপসাগরে গ্রীষ্মকালে সৃষ্ট একাধিক নিম্নচাপজনিত গােলযােগকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমিবায়ু ত্বরান্বিত হয়। এবং বজ্রবিদ্যুৎসহ আকস্মিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। একেই ‘মৌসুমি বিস্ফোরণ’ বা Burst of Monsoon বলে।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ‘অশ্ব অক্ষাংশ কাকে বলে?
উত্তর : নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় ও মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় থেকে বিক্ষিপ্ত ও উর্ধ্বগামী উয় বায়ু শীতল হয়ে ভারি হয়ে উভয় গােলার্ধের 25-35° অক্ষাংশে সৃষ্ট কৰ্কটীয় উচ্চচাপ বলয়ে নেমে আসে ফলে এই অঞ্চলে বায়ুর কোনাে পার্শ্ব প্রবাহ থাকে না, শান্ত অবস্থা বিরাজ করে। উত্তর গােলার্ধে এই অঞ্চলকে কর্কটীয় শান্তবলয় বা অশ্ব অক্ষাংশ বলে। প্রাচীনকালে ইউরােপীয় ঔপনিবেশিকগণ পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে পালতােলা জাহাজে অশ্ব বােঝাই করে আনার সময় এই অণ্ডলে বাতাসের অভাবে আটকে যেত। পানীয় জল অপচয় রােধ করার জন্য নাবিকরা জাহাজের রুগ্ন অশ্বগুলিকে জলে ফেলে দিত। তাই এই কর্কটীয় শান্ত বলয়কে অশ্ব অক্ষাংশ বলা হয়।
2. ওজোন স্তরের গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : স্ট্রাট্রোস্ফিয়ারের 20-35 কিমি উচ্চতায় অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে দুটি অনুক্রমিক আলােক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঘনত্বযুক্ত যে গ্যাসের আস্তরণ সৃষ্টি হয়েছে তা ওজোনস্তর নামে পরিচিত। গুরুত্ব : (i) এই স্তর সূর্য থেকে আসা তিনটি (UV-A, B, C) ক্ষতিকারক রশ্মিকে শােষণ করে জীবজগৎকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। (ii) এই স্তর ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত দীর্ঘ তরঙ্গের অবলােহিত রশ্মির বিকিরণে বাধা দিয়ে বায়ুমণ্ডলের উষ্মতার ভারসাম্য বজায় রাখে।
3. ওজোনস্তর বিনাশের কারণগুলি লেখাে।
উত্তর : ওজোনস্তর বিনাশের কারণগুলি হলাে—(i) CFC বা ক্লোরােফ্লুরােকার্বন হল ওজোন স্তর বিনাশের অন্যতম কারণ। (i) নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রসারের সঙ্গে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস ওজোনস্তর বিনাশ ত্বরান্বিত করছে। (ii) হলােন যৌগের বিশেষত হ্যালােন। 1211 ও হ্যালােন 1301 যৌগদুটি ওজোনস্তর বিনাশে বিশেষ ভূমিকা নেয়। (iv) ট্রাইরাে ব্রোমাে কার্বন, মিথাইল ব্রোমাইড প্রভৃতি ওজোনস্তর বিনাশ করে। (v) কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া (vi) সুপারসনিক জেট বিমান কর্তৃক পরিত্যক্ত জলীয় বাষ্প ওজোন বিনাশ ঘটায়।
4. গ্রিন হাউস এফেক্ট বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : বর্তমানে যথেচ্ছভাবে বৃক্ষচ্ছেদন ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে বায়ুমণ্ডলে co, CH No প্রভৃতি গ্যাসের পরিমাণ দ্রুত হারে বাড়ছে। এই সমস্ত গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলের উধ্বস্তরে একটি স্বচ্ছ আবরণ সৃষ্টি করেছে যার ফলে সূর্যরশ্মি সহজে ভূ-পৃষ্ঠে প্রবেশ করতে পারে কিন্তু বিকিরিত সূর্যরশ্মি সম্পূর্ণরূপে ফিরে যেতে পারে না। ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠের উয়তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা গ্রিনহাউস এফেক্ট নামে পরিচিত।
5. বৈপরীত্য উয়তা (Inversion of Temperature) কাকে বলে?
উত্তর : সাধারণ অবস্থায় বায়ুমণ্ডলের ট্রপােস্ফিয়ার স্তরে প্রতি 1000 মি. উচ্চতা বৃদ্ধিতে 45°C হারে উয়তা হ্রাস পায়। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উয়তা হ্রাস না পেয়ে বরং বাড়তে থাকে। এরূপ অবস্থাকে বৈপরীত্য উয়তা বা উয়তার উক্ৰম বলে। উয়তার উক্ৰম ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরে কিংবা ট্রপােস্ফিয়ারে উর্ধ্ববায়ুস্তরে পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৈপরীত্য উয়তা হলাে বায়ু তাপের অস্থায়ী অবস্থা।
6. মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি অপেক্ষা মেঘমুক্ত রাত্রি শীতল কেন?
উত্তর : দিনের বেলায় মেঘমুক্ত আকাশ থাকলে আগত সৌরকিরণ বাধাহীনভাবে ভূ-পৃষ্ঠে পৌছায় ফলে ভূ-পৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলের উম্লতা বৃদ্ধি পায়। তেমনি রাত্রে পার্থিব বিকিরণ বাধাহীনভাবে হয় ও রাত্রে উয়তা কমে যায়। কিন্তু আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে দিনের বেলায় আগত সৌরকিরণ মেঘে বাধা পেয়ে ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারে না তাই দিনে উয়তা কম হয়। এবং রাতে পার্থিব বিকিরণ মেঘে বাধা পেয়ে পৃথিবী পৃষ্ঠেই ফিরে আসে, তাই রাতে উয়তা বৃদ্ধি পায়। এই জন্যই মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি মেঘমুক্ত রাত্রি অপেক্ষা বেশি উয় হয়।
7. ক্রান্তীয় মণ্ডলে মহাদেশগুলির পশ্চিমে মরুভূমির সৃষ্টি হয় কেন?
উত্তর : ক্রান্তীয় মণ্ডলে মহাদেশগুলির পশ্চিমে মরুভূমি সৃষ্টির কারণগুলি হল—(i) আয়নবায়ু মহাদেশের পশ্চিমদিক থেকে এসে সমুদ্রের শীতল বায়ুর সাথে মেশে। (ii) নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে যত যায় জলীয় বাষ্পধারণ ক্ষমতা তত বাড়ে বলে বৃষ্টির সম্ভাবনা কমে। (ii) মরুভূমি অঞ্চলের ওপর থেকে শুষ্ক বায়ুস্রোত নেমে আসে—ফলে দীর্ঘকাল এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় না। ফলে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
8. জেট বায়ুর বৈশিষ্ট্য লেখাে।
উত্তর : জেট বায়ু হল একটি দ্রুতগামী বায়ুস্রোত। যা মূলত 30° উত্তর অক্ষাংশে পশ্চিমাবায়ু প্রবাহিত অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলের 7-13 কিমি ঊর্ধ্বে ট্রপােস্ফিয়ারে একটি সংকীর্ণ আঁকাবাঁকা পথে প্রবল বেগে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়। বৈশিষ্ট্য—(i) এই বায়ু ভূ-পৃষ্ঠ থেকে 10-12 কিমি উর্ধ্বে সংকীর্ণ স্থানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। সময় | (i) জেট বায়ুর গতিবেগ 350-450km/ঘণ্টা (ii) শীতের প্রারম্ভে এই বায়ু প্রবাহ শুরু হয় এবং চলে মার্চ এপ্রিল মাস পর্যন্ত।
9. নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রতিদিন পরিচলন বৃষ্টিপাত হয় কেন ?
উত্তর : (i) নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর সূর্যকিরণ লম্বভাবে পড়ার দরুণ প্রচুর উত্তাপের সৃষ্টি হয়। (ii) এই অঞ্চলে জলভাগ বেশি। (iii) জলভাগ বেশি তাই প্রচুর জলীয়বাষ্প উৎপন্ন হয়। (iv) উভয় গােলার্ধ থেকে আয়নবায়ু নিরক্ষীয় অঞলে মিলিত হয়। উয়—আর্দ্র বায়ু উর্ধ্বগামী পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি করে। ও ঘনীভূত হয়ে শীতল হয় ও মেঘে পরিণত হয়। (v) পরে এই মেঘ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই ধরনের বৃষ্টি হয় ও বিকেলের দিকে হয় বলে 40 Clock Rain বলা হয।
রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. বায়ুর উয়তার তারতম্যের কারণ সমূহ আলােচনা করাে।
উত্তর : বায়ুর তাপের তারতম্যের কারণ সমূহ :
(i) অক্ষাংশ : পৃথিবীর কক্ষতলের সঙ্গে সর্বদা 66%° কোণে হেলে সূর্যের চারিদিকে পরিক্রমণ করে। এর ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য সারাবছর লম্বভাবে কিরণ দেয় এবং তাপীয় ফল বেশি থাকে। আবার মেরুর দিকে সূর্য ক্রমশ তির্যকভাবে পতিত হয়। ফলে সূর্যের তাপীয় ফল কম হয়। তাই উচ্চ অক্ষাংশ অপেক্ষা নিম্ন অক্ষাংশের গড় উয়তা অধিক হয়।
(ii) ভূমির উচ্চতা : ট্রপােস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতি কিমিতে গড়ে প্রায় 6.4° সেলসিয়াস | sIL ৪০০০ মি হারে উষ্মতা হ্রাস পায়। বায়ুমণ্ডলের উম্লতা তত কম হয়।
(iii) স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন : জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত উঃ বা শীতল হয়। এই কারণে সমুদ্র থেকে কম দূরবর্তী স্থান গ্রীষ্মকালে অধিক। উম্ন ও শীতকালে অধিক শীতল হয়।
(iv) বায়ুপ্রবাহ : সমুদ্রস্রোতের মতােই উয় বায়ু প্রবাহিত অঞল উয় এবং শীতলবায়ু প্রবাহিত অঞ্চল শীতল প্রকৃতির হয়।
(v) সমুদ্রস্রোত : সমুদ্রের যে উপকূলীয় অঞ্চল বরাবর উয় সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় |সে অঞ্চলের বায়ুমণ্ডল উয় এবং যে অঞ্চলে শীতল সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়। সেখানকার বায়ুমণ্ডল শীতল প্রকৃতির হয়।
(vi) ভূমির ঢাল : ভূমির ঢালের দিক অনুযায়ী সৌরশক্তি প্রাপ্তির তারতম্য ঘটে। উত্তর গােলার্ধে উত্তরমুখী ভূমির ঢাল অপেক্ষা দক্ষিণমুখী ভূমির ঢালে অধিক লম্বভাবে সৌরকিরণ পড়ে, ফলে বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা অধিক হয়।
(vii) মেঘাচ্ছন্নতা ও অধঃক্ষেপন : দিনের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে সৌররশ্মির তাপীয়। ফল হ্রাস পায় কিন্তু রাতের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপ মেঘদ্বারা বাধা প্রাপ্ত হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে। ফলে উয়তা বৃদ্ধি পায়। উয়তার ওপর বৃষ্টিপাতের প্রভাব কম হলেও বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে বায়ুমণ্ডলের। উয়তা সামান্য হ্রাস পায়।
(viii) স্বাভাবিক উদ্ভিদ : সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার সময় উদ্ভিদ সৌরশক্তি ও co, শােষণ করে এবং বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের সংযােজন ঘটায়। তাই অধিক উদ্ভিদ আবৃত অঙুল তুলনামূলকভাবে কম উয় হয়; কিন্তু উদ্ভিদ কম থাকলে উয়তা চরম প্রকৃতির
2. জীবজগৎ তথা পরিবেশের ওপর বিশ্ব উন্নয়নের প্রভাব আলােচনা করাে।
উত্তর : পরিবেশের ওপর বিশ্ব উয়ায়নের প্রভাব : বিশ্ব উয়ায়ণ বা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার জীবজগৎ তথা পরিবেশের ওপর সুদূর প্রসারি ক্ষতিকারক প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। যেমন—
(i) মেরু অঞ্চলে বরফের গলন ও পার্বত্য হিমবাহের গলন : বিয় উয়ায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের সঞ্চিত বরফ স্তুপের গলন শুরু হয়েছে এবং পার্বত্য হিমবাহগুলির বরফের আয়তন ক্রমশ কমছে।
(ii) সমুদ্র জলের উচ্চতা বৃদ্ধি : গ্রিনহাউস প্রভাব বৃদ্ধি পেলে পৃথিবীর গড় উয়তা বৃদ্ধিজনিত কারণে মেরু অঞ্চলে ও পার্বত্য অঞ্চলের বরং বেশি মাত্রায় গলে গিয়ে সমুদ্র জলতলে উচ্চতা বৃদ্ধি করছে। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর গড় উয়তায়। প্রায় 1:5° c বৃদ্ধি পাওয়ায় সমুদ্র জলতলের উচ্চতা প্রায় 10-12 সেমি বৃদ্ধি পেয়েছে।
(iii) অধঃক্ষেপনের প্রকৃতি পরিবর্তন : পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন উৎসের জল অধিকতর দ্রুত ও বেশি পরিমাণে বাষ্পীভূত হচ্ছে তার ফলে বৃষ্টিপাত বা অধঃক্ষেপনের পরিমাণ সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাস্পীভবন বেশি হওয়ার ফলে কোথাও প্রবল বর্ষণ অন্যত্র খরা আবার উপকুলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(iv) শস্য উৎপাদনে হ্রাসবৃদ্ধি : বিশ্ব উম্নয়নের প্রভাবে ফসলের উৎপাদন হ্রাস বা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা। নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভৌগােলিক অবস্থান, আবহাওয়ার পরিবর্তন, c0, বৃদ্ধির পরিমাণ, মৃত্তিকার আদ্রর্তা বা শুষ্কতা, ফসলের ধরণ প্রকৃতির উপর শস্য উৎপাদনের হ্রাসবৃদ্ধির বিষয়টি নির্ভর করে।
(v) কৃষি পদধতির পরিবর্তন : গ্রিনহাউস প্রভাবের জন্য পৃথিবীর উয়তা বৃদ্ধি পেলে কৃষিকাজের ওপর ভার প্রভাব পড়লে। যেমন—কৃষি বলয়ের স্থান পরিবর্তিত হয়ে উচ্চ অক্ষাংশের দিকে বিস্তৃত হচ্ছে। আবার চাষযােগ্য জমিতে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ, আগাছা ও রেশম পােকার উপদ্রব বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষিকাজের পরিবর্তে শিল্প, বসতি ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হবে।
3. পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়গুলির সঙ্গে নিয়তবায়ু প্রবাহের সম্পর্ক সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : বায়ুচাপের পার্থক্যই বায়ুপ্রবাহের প্রধান কারণ। ভূ-পৃষ্ঠে সাতটি স্থায়ী বায়ুচাপ বলয় অবস্থান করছে। যথা—(i) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ শান্তবলয়, (i) ও (ii) কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপযুক্ত বলয়, (iv) ও (v) সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়, (vi) ও (vii) সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয়। স্থায়ী চালবলয়গুলির প্রভাবে নিয়মিতভাবে প্রবাহিত বায়ুকেই নিয়তবায়ু বলে। নিয়তবায়ু প্রধানত তিন প্রকার (i) আয়ন বায়ু, (ii) পশ্চিমাবায়ু ও (iii) মেরু বায়ু।
(1) আয়ন বায়ু ও বায়ুচাপ বলয় : কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নির্দিষ্ট পথে, নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয়। উত্তর গােলার্ধে 25°-30° অক্ষরেখা থেকে 5-10° অক্ষরেখার মধ্যে আয়নবায়ু প্রবাহিত হয়। ফেরেলের সূত্রানুযায়ী আয়নবায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে যথাক্রমে উত্তরপূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব আয়নবায়রূপে প্রবাহিত হয়। এই দুই প্রকার আয়নবায়ু নিরক্ষীয় অঞ্চলে মিলিত হয়ে উর্ধ্বগামী হয়। তাই এই অঞ্চলে বায়ুর পার্শ্বপ্রবাহ থাকে না। এই অঞ্জলকেই নিরক্ষীয় শান্তবলয় বলে।
(2) পশ্চিমাবায়ু ও বায়ুচাপ বলয় : কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরু ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নিয়মিতভাবে বায়ু প্রবাহিত হয়। সাধারণভাবে এই বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হওয়ায়, একে পশ্চিমাবায়। বলে। ফেরেলের সূত্রানুসারে, এই বায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে যথাক্রমে দক্ষিণ পশ্চিমা পশ্চিমাবায়ু ও উত্তরপশ্চিম পশ্চিমাবায়ু রূপে প্রবাহিত হয়। উত্তর গােলার্ধে সাধারণত 30°-60° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে পশ্চিমাবায়ু প্রবাহিত হয়।
(3) মেরু ও বায়ুচাপ বলয় : সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নিয়মিতভাবে বায়ু প্রবাহিত হয়। মেরু কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নিয়মিতভাবে বায়ু প্রবাহিত হয়। মেরু। অঞ্চল থেকে প্রবাহিত হওয়ায় একে মেরুবলয় বলে। সাধারণভাবে এই বায়ু উভয় গােলার্ধে 70-80° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়। ফেরেলের সূত্রানুসারে এই বায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে যথাক্রমে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব মেরুবায়ু রূপে প্রবাহিত হয়। উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব আয়নবায়ু যেখানে মিলিত হয় সেই অঞ্চলকে Inter Tropical Convergence Zone বা ITCZ বলে। এবং পশ্চিমাবায়ু ও মেরুবায়ু সেখানে মিলিত হয়, সেই অঞ্জলকে মেরুসীমান্ত অঞ্চল বলে। চাপবলয়গুলি স্থায়ী এবং বায়ুপ্রবাহগুলি নিয়মিত হলেও সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সঙ্গে সঙ্গে চাপবলয়গুলিও যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণে সরে যায়। চাপবলয়গুলির স্থান পরিবর্তনের ফলে বায়ুপ্রবাহগুলিও উত্তরে বা দক্ষিণে সরে যায়।
4. বায়ুচাপের তারতম্যের কারণগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : বায়ুচাপের তারতম্যের প্রধান কারণ হলাে বায়ুর ঘনত্বের তারতম্য। বায়ুচাপের তারতম্যের নিয়ন্ত্রকগুলি হলাে-
(i) উচ্চতা : ভূমিভাগের উচ্চতা, বায়ুচাপের তারতম্যের ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ন্ত্রক। ওপরের বায়ুস্তরের প্রবল চাপে বায়ুর অণুগুলি ও ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি অঞ্চলে বেশি পরিমাণে থাকে। একারণেই সমুদ্রতল সংলগ্ন বায়ুস্তরে বায়ুচাপ বেশি হয়। আবার ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ুর ঘনত্ব ও ওজন কমতে থাকে বলে বায়ুর চাপও কমে যায়। দেখা গেছে, সমুদ্রতল থেকে প্রতি 110 মিটার উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে 1 cm পারদস্তম্ভের সমান বায়ুচাপ (1:34 mb হারে) কমতে থাকে।
(ii) উয়তা : বায়ুর উয়তার পরিবর্তন হলে বায়ুর আয়তন ও ঘনত্বের পরিবর্তন হয়। ফলস্বরূপ চাপেরও পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ বায়ু উত্তপ্ত হলে বায়ুর অনুগুলি গতিশীল হয়ে পরস্পর থেকে দুরে সরে যায়। ওই উয় বায়ু হালকা ও প্রসারিত হয়ে ওপরে উঠে যায় এবং এর চাপও কমে যায়। আবার উত্মতা কম হলে বা বায়ু শীতল হলে সংকুচিত হয় বলে বায়ুর ঘনত্ব বেড়ে যায় এবং চাপও বেশি হয়।
(iii) জলীয়বাষ্প : বায়ুতে উপস্থিত অন্যান্য উপাদানের মধ্যে জলীয়বাষ্প হল অধিক হালকা উপাদান। বেশি জলীয় বাষ্পযুক্ত বায়ু নিম্নচাপবিশিষ্ট হয় এবং কম জলীয়বাষ্পযুক্ত বায়ু উচ্চচাপবিশিষ্ট হয়।
(iv) পৃথিবীর আবর্তন : পৃথিবীর আবর্তনগতির ফলে সৃষ্ট কেন্দ্ৰবহির্মুখী বলের (Centrifugal force) প্রভাবে বায়ুর গতিবিক্ষেপ ঘটে। ফলে বায়ুর চাপ ও ঘনত্ব উভয়ই হ্রাস পায়। নিরীক্ষয় অঞলে আবর্তনের বেগ বেশি থাকায় বায়ুর বেশি গতিবিক্ষেপ ঘটে বলে স্থায়ী নিম্নচাপ বলয় সৃষ্টি হয়েছে।
(v) স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন : পৃথিবীপৃষ্ঠে জলভাগ ও স্থলভাগের বিন্যাস বা বণ্টন তথা উভয়ের মধ্যেকার তাপগ্রাহীতা শক্তির পার্থক্যের জন্যও বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে। জলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু জলীয়বাষ্প গ্রহণ করে বলে তা আর্দ্রও হালকা হয় এবং চাপও কম হয়। কিন্তু স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করতে পারে না। তাই তা শুষ্ক, ভারি হয় এবং চাপও অধিক হয়।
বারিমন্ডল
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ]:[প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. মরা কোটাল হয়—
[A] অমাবস্যা তিথিতে | [B] পূর্ণিমা তিথিতে [C] প্রতিপদে [D] শুক্ল ও কৃয়পক্ষের অষ্টমী তিথিতে
উত্তরঃ [D] শুক্ল ও কৃয়পক্ষের অষ্টমী তিথিতে
2. পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীরতম মহাসাগর হল—
[A] সুমেরু মহাসাগর। [B] ভারত মহাসাগর [C] আটলান্টিক মহাসাগর। [D] প্রশান্ত মহাসাগর
উত্তরঃ [C] আটলান্টিক মহাসাগর
3. ভূপৃষ্ঠের জলভাগের প্রতিটি স্থানে 24 ঘণ্টায় জোয়ার হয়—
[A] একবার [B] দু’বার [C] তিনবার। [D] কোনােটিই সঠিক নয়
উত্তরঃ [B] দু’বার
4. জাপান উপকূলে টাইফুন নামে ভয়ংকর ঝড়-তুফানের সৃষ্টি হয় –
[A] কুরেশিয়ে স্রোত ও শীতল বেরিং স্রোতের মিলনের ফলে [B] উয় নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত ও শীতল কুমেরু স্রোতের মিলনের ফলে [C] উয় নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত ও শীতল পেরু স্রোতের মিলনের ফলে [D] কোনােটিই সঠিক নয়।
উত্তরঃ [A] কুরেশিয়ে স্রোত ও শীতল বেরিং স্রোতের মিলনের ফলে
5. মরা কোটাল হয় যখন চন্দ্র ও সূর্য…………. অবস্থান করে।
[A] সমান্তরালে। [B] একই রেখায় [C] পরস্পরের সমকোণে। [D] সূক্ষ্মকোণে
উত্তরঃ [C] পরস্পরের সমকোণে
6. সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবীর সরলরৈখিক অবস্থানকে বলে-
[A] সি.জি.গি [B] প্রতিযােগ। [C] সংযােগ। [D] কোনােটিই সঠিক নয়
উত্তরঃ [A] সি.জি.গি
7. নিউ ফাউল্যান্ডের কাছে ঘন কুয়াশা ও ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়—
[A] উপসাগরীয় স্রোত ও উত্তর আটলান্টিক স্রোতের মিলনের ফলে [B] ক্যানারি স্রোতের সঙ্গে উপসাগরীয় স্রোতের মিলনের ফলে [C] উপসাগরীয় স্রোত ও ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনের ফলে [D] কোনােটিই সঠিক নয়।
উত্তরঃ [C] উপসাগরীয় স্রোত ও ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনের ফলে
8, ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত প্রবাহিত হয়—
[A] প্রশান্ত মহাসাগরে [B] ভারত মহাসাগরে [C] সুমেরু মহাসাগরে [D] আটলান্টিক মহাসাগরে
উত্তরঃ [A] প্রশান্ত মহাসাগরে
9. আটলান্টিক মহাসাগরে শৈবাল সাগর সৃষ্টি হয়েছে যে স্রোতের দ্বারা সেটি হল—
[A] বেগুয়েলা স্রোত। [B] ক্যানারি স্রোত [C] ল্যাব্রাডর স্রোত [D] কুরেশিয়ে স্রোত
উত্তরঃ [B] ক্যানারি স্রোত
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর :[ প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. আটলান্টিক মহাসাগরের কোন অংশে হিমপ্রাচীর সৃষ্টি হয়?
উত্তর : উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাংশে হিমপ্রাচীর সৃষ্টি হয়।
2. সি. জি. গি. কী?
উত্তর : পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য যখন একটি সরলরেখায় অবস্থান করে তখন সেই অবস্থানকে সি. জি. গি. বলে।
3. সৌর জোয়ার কাকে বলে?
উত্তর : সূর্যের আকর্ষণে পৃথিবীতে যে জোয়ার হয় তাকে সৌর জোয়ার বলা হয়।
4. চান্দ্র জোয়ার কাকে বলে?
উত্তর : চন্দ্রের আকর্ষণে পৃথিবীতে যে জোয়ার হয় তাকে চান্দ্র জোয়ার বলা হয়। (27 দিনে পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের একবার পরিক্রমাকে বলা হয় চান্দ্রমাস।)
5. কোনাে স্থানে একটি জোয়ার ও একটি ভাটার মধ্যে সময়ের ব্যবধান কত থাকে?
উত্তর : 6 ঘণ্টা 13 মিনিট।
6. মৌসুমি স্রোত কোন মহাসাগরে দেখা যায় ?
উত্তর : ভারত মহাসাগরে মৌসুমি স্রোত দেখা যায়।
7. কেন্দ্রাতিগ বল কাকে বলে?
উত্তর : পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতমুখী ক্রিয়াশীল বলকে কেন্দ্রাতিগ বল বলে।
৪. হিমপ্রাচীর কোন মহাসাগরে দেখা যায় ?
উত্তর : হিমপ্রাচীর আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশে দেখা যায়।
9. পশ্চিমবঙ্গে বান ডাকে এমন একটি নদীর নাম লেখাে।
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গে হুগলি নদীতে বান ডাকে।
10. ভূপৃষ্ঠের শতকরা কত ভাগ স্থান জলভাগ অধিকার করে আছে?
উত্তর : ভূপৃষ্ঠের প্রায় 70 ভাগ স্থান জলভাগ অধিকার করে আছে।
11. আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি উয় স্রোতের নাম লেখাে।
উত্তর : আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি উয় স্রোত হল—(i) উপসাগরীয় স্রোত ও (ii) ব্রাজিল স্রোত।
12. পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগরের নাম কী?
উত্তর : পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগরটির নাম প্রশান্ত মহাসাগর।
13. পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগরের নাম কী?
উত্তর : পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগরের নাম আটলান্টিক মহাসাগর।
বারিমন্ডল – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. মগ্নচড়া কী?
উত্তর : মেরু অঞ্চল থেকে শীতল সমুদ্রস্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈল উয়স্রোতের সংস্পর্শে এসে গলে যায়। হিমশৈল মধ্যস্থ নুড়ি, কাকর, বালি, কাদা প্রভৃতি ওজনানুসারে সমুদ্র তলদেশে পর্যায়ক্রমে থিতিয়ে পড়ে। দীর্ঘকাল ধরে এই সম পদার্থ অধঃক্ষিপ্ত হয়ে অগভীর নিমজ্জিত ও চড়ার সৃষ্টি হয়। একে মগ্নচড়া বা ব্যাংক বলে। উদাহরণ : সেবল ব্যাংক, জর্জেস ব্যাংক।
2. হিমপ্রাচীর কাকে বলে?
উত্তর : আটলান্টিক মহাসাগরের নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের নিকট (হ্যালিফক্স ও কড অন্তরীক্ষের মাঝে) উত্তর দিকে (ব্যাকিন উপসাগর) থেকে আগত শীতল ও গাঢ় সবুজ জলের শীতল ল্যাব্রাডার স্রোত এবং দক্ষিণ দিক থেকে আগত উয় ও গাঢ় নীল জলের উপসাগরীয় স্রোত পাশাপাশি পরস্পরের বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। এই দুই স্রোতের স্পষ্ট সীমারেখাকে হিমপ্রাচীর বলে। এখানে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়।
3. নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে ঘন কুয়াশা, ঝড় সৃষ্টি হয়—কারণ ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকুলে উম্ন উপসাগরীয় ও শীতল ল্যাব্রাডার স্রোত পরস্পর মিলিত হয়। উয় উপসাগরীয় স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু উয় ও জলীয়বাষ্পপূর্ণ এবং শীতল ল্যাব্রাডার স্রোতের ওপরকার বায়ু শীতল ও শুষ্ক হওয়ায়, দুই ভিন্নধর্মী বায়ু পরস্পরে সংস্পর্শে এলে শীতলবায়ুর প্রভাবে উয় বায়ুস্থিত জলীয় বাষ্প জমে গিয়ে কুয়াশার সৃষ্টি করে। আবার নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলের কাছে এই দুই ভিন্নধর্মী বায়ুর মুখােমুখী সংঘর্ষের ফলে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়।
4. উপসাগরীয় স্রোত (Gulf Current) কাকে বলে?
উত্তর : উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মেক্সিকো উপসাগর থেকে উৎপন্ন একটি উয়স্রোত হল উপসাগরীয় স্রোত। এই স্রোতের কয়েকটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল— (i) এই স্রোতের জলের রং নীল। (ii) এই স্রোত উয় (27:02°C)। (iii) এই স্রোতের বিস্তার 64 কিমি এবং গভীরতা 914 মিটার। (iv) এই স্রোতের গড় গতিবেগ হল 10-15 মাইল/দিন। (v) এই স্রোত প্রতিসেকেন্ডে 74-93 মিলিয়ন ঘনমিটার জল বহন করে।
5. জাপান বা কুরােশীয় স্রোত কাকে বলে?
উত্তর : উত্তর প্রশান্তমহাসাগরের এই স্রোতটি উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত প্রথমে পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে এবং পরে ফিলিপাইল্স দ্বীপপুঞ্জে প্রতিহত হয়ে উত্তরে বেঁকে যায় এবং দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের উত্তরগামী শাখার সঙ্গে মিশে কুরােশীয় স্রোত নামে এবং জাপানের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হবার সময় জাপান স্রোত নামে পরিচিত।
6. ৰেয়েলা স্রোত কাকে বলে?
উত্তর : দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের এই শীতল স্রোতটি কুমেরু স্রোতের একটি শাখা আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে উত্তমাশা অন্তরীপে প্রতিহত হয়ে পশ্চিম উপকূল বরাবর অ্যাগুয়েলার বেঙ্গুয়েলা বন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্রোতের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় 10 কিমি।
7. ব্রাজিল স্রোত কাকে বলে?
উত্তর : বেঙ্গুয়েলা স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহ দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূলে সেন্ট রক অন্তরীপে প্রতিহত হয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। এর দক্ষিণের শাখাটি ব্রাজিলের পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণে 40° দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্রোত ব্রাজিলস্রোত নামে পরিচিত। অধিক উয়তা ও লবণাক্ততা এই স্রোতের প্রধান বৈশিষ্ট্য। গতিবেগ 28 km/hour।
8. বানডাকা কাকে বলে?
উত্তর : ভরা কোটালের সময় সমুদ্রের জল সংকীর্ণ নদীমুখে বা চড়াযুক্ত নদীমুখে মােহানা দিয়ে উলটো খাতে, খুব উঁচু হয়ে তীব্র গতিতে নদীতে প্রবেশ করে প্রবল জলােচ্ছ্বাস ঘটায়। একে বান ডাকা বলে। হুগলি, ইয়াংসিকিয়াং, টেমস্ নদীতে বানডাকার সৃষ্টি হয়।
9. সিজিগি কী?
উত্তর : চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবীর সরলরৈখিক (180°) অবস্থানকে জ্যোতির্বিজ্ঞানে সিজিগি (Sy Zy Gy) বলে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে সিজিগি অবস্থান লক্ষ করা যায়। সিজিগি অবস্থানে জোয়ারভাটার প্রাবল্য বেশি হয়।
10. যাঁড়াযৗড়ি বান কাকে বলে?
উত্তর : প্রবল বর্ষায় ভরা কোটালের সময় জলস্ফীতির মাত্রা এত বেশি হয় যে ওই অবস্থানকে দুটি ষাঁড়ের (নদীর সমুদ্রগামী জল ও জোয়ারের উজানগামী জল) লড়াই বা যুদ্ধকালীন অবস্থার সাথে তুলনা করে একে যাড়া-যাঁড়ির বান বলে। এই সময় জোয়ারের জল 5-10 মিটার উঁচু হয়। উদাহরণ : ভাগীরথী হুগলি নদীতে বর্ষাকালে এই বান দেখা যায়।
11. বেলাের্মি কী?
উত্তর : জোয়ার তরঙ্গের অগ্রগমনকে বেলাের্মি বলা হয়। পৃথিবীর যে যে স্থানবিন্দু সমূহে GMT অনুসারে একই সময় জোয়ার হয়, সেই স্থানগুলিকে একটি কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করলে যে রেখা পাওয়া যায়, তাকে বলে সহবেলাের্মি রেখা।
12. জোয়ার অন্তর কাকে বলে?
উত্তর : যে কোনাে দুটি জোয়ারের সময়ের ব্যবধানকে জোয়ার অন্তর বলে। সাধারণভাবে পরপর দুটি জোয়ারের (মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ার) সময়ের ব্যবধান প্রায় 12 ঘণ্টা 26 মিনিট। তবে দুটি মুখ্য জোয়ার ও দুটি গৌণ জোয়ারের অন্তর হয় 24 ঘণ্টা 52 মিনিট।
বারিমন্ডল – ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. সারগাসসা সি বা শৈবাল সাগর কী?
উত্তর : নিয়ত বায়ু দ্বারা পরিচালিত সমুদ্রস্রোত অনেক সময় সমুদ্রের মধ্যবর্তী অংশে স্রোতের আবর্ত বা ঘূর্ণির সৃষ্টি করে। আবর্তের মধ্যবর্তী অংশ স্রোতহীন হওয়ায় সামুদ্রিক আগাছা ও শৈবাল জন্মায়। স্রোতহীন, আগাছা সমৃদ্ধ সমুদ্রের ওই অংশকে সারােগাসাে সি বা শৈবাল সাগর বলে। উদাহরণ : (i) আটলান্টিক মহাসাগরীয় শৈবাল সাগর, (ii) প্রশান্ত মহাসাগরীয় শৈবাল সাগর।
2. গ্র্যান্ড ব্যাংক কী?
উত্তর : গ্র্যান্ড ব্যাংক হল বিশ্বের বৃহত্তম মগ্নচড়া।
অবস্থান—উত্তর-পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগর, নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের নিকট অবস্থিত।
উৎপত্তির কারণ—শীতল লাব্রাডার স্রোতের সঙ্গে আসা হিমশৈল উয় উপসাগরীয় স্রোতের সংস্পর্শে গলে গিয়ে সমুদ্র তলদেশে নুড়ি, কাকর, বালি, পলি, কাদা প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে। বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণের জন্য বিখ্যাত।
3. সমুদ্রস্রোতের চক্ৰগতি বা জায়র (Gyre) বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : পৃথিবীর প্রধান তিনটি মহাসাগরে সমুদ্রস্রোতের গতিপথ অনুসরণ করলে দেখা যায় যে সেগুলি চক্রাকারে ঘুরে জলাবর্ত সৃষ্টি করে। একে সমুদ্রস্রোতের চক্রগতি বা জায়র বলে। কোরিওলিস বলের প্রভাবে এটি হয়। এই চক্রগতিতে সমুদ্রস্রোত উত্তর গােলার্ধে দক্ষিণাবর্তে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বামাবর্তে ঘুরতে থাকে।
4. গ্র্যান্ড ব্যাংক মগ্নচড়াটি বাণিজ্যিক মৎস্যক্ষেত্র হিসাবে
খ্যাতি লাভ করেছে কেন?
উত্তর : কারণগুলি হল—(i) এখানে সমুদ্র অগভীর হওয়ায় সূর্যরশ্মি তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। ফলে এখানে মাছের খাদ্য প্ল্যাঙ্কটন প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। (ii) উয় ও শীতল স্রোতের মিলনের ফলে এখানে প্রচুর সামুদ্রিক মাছের সমাবেশ ঘটে। (iii) এখানকার নীতিশীতােয় জলবায়ু মাছ শিকার, মাছ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অনুকূল। (iv) এখানে কৃষিজমির অভাব থাকায় মৎস্য আহরণ এখানকার অধিবাসীদের অন্যতম জীবিকা।
5. উয়স্রোত ও শীতলস্রোতের মধ্যে পার্থক্যগুলি লেখাে।
উত্তর : উয়স্রোত ও শীতলস্রোতের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল-
উয়ুস্রোত শীতলস্রোত
(i) ক্রান্তীয় ও উপক্ৰান্তীয় সমুদ্র (i) মেরু সমুদ্রে এর উৎপত্তি হয়।
(ii) জলের উয়তা প্রবাহিত অঞ্চলের জলের উয়তা অপেক্ষা বেশি। (ii) জলের উয়তা প্রবাহিত অঞ্চলের জলের উয়তা অপেক্ষা কম।
(iii) সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের উয়তা বাড়ায়। উচ্চ নাতিশীতােয় অঞ্চলের উপকূলে বরফ জমতে দেয় না। (iii) উয়তা কমায়। উয় অঞ্চলের উপকূলে মনােরম অবস্থা সৃষ্টি করে।
6. মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের মধ্যে পার্থক্য আলােচনা করাে।
উত্তর : মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল-
বিষয় মুখ্য জোয়ার গৌণ জোয়ার
সংজ্ঞা পৃথিবী আবর্তনরত অবস্থায় ভূ-পৃষ্ঠের যে অংশ চাদের সম্মুখীন বা সর্বাপেক্ষা নিবর্তী হয়, সেই স্থানের জলরাশি চন্দ্রের আকর্ষণে অধিকমাত্রায় ফুলে উঠে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয়, তাকে মুখ্য বা চন্দ্র জোয়ার বলে। ভূ-পৃষ্ঠের পৃথিবীর যে অংশে মুখ্য জোয়ার হয় তার বিপরীতে প্রতিপাদ স্থানে প্রধানত পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয় তাকে গৌণ জোয়ার বলে।
কার্যকরী বল চাদের আকর্ষণ বল মুখ্য ভূমিকা পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বল মুখ্য ভূমিকা নেয়। পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বল মুখ্য ভূমিকা।
জোয়ারের প্রাবল্য মুখ্য জোয়ারের প্রাবল্য গৌণ জোয়ারের তুলনায় অনেক বেশি। গৌণ জোয়ারের প্রাবল্য মুখ্য জোয়ারের তুলনায় বেশ কম।
ভরকেন্দ্রের দূরত্ব পৃথিবীর ভরকেন্দ্র থেকে মুখ্য জোয়ার স্থানের দূরত্ব কম অর্থাৎ চাদের অধিকতর নিকটবর্তী। পৃথিবীর ভরকেন্দ্র থেকে গৌণ জোয়ার স্থানের দূরত্ব পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে দূরত্ব অপেক্ষা প্রায় 4800 কিমি অধিক হওয়ায় ওই স্থানে পৃথিবীর আকর্ষণ বল কম, তাই কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবেই গৌণ জোয়ার হয়।
7. পূর্ণিমা অপেক্ষা অমবস্যার জোয়ার প্রবল হয় কেন তা ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : পূর্ণিমা তিথিতে চঁাদ ও সূর্যের মাঝখানে পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করায় পৃথিবীর যে অংশ চাদের ঠিক সামনে আসে সেখানে হয় মুখ্য চান্দ্র জোয়ার এবং প্রতিপাদ স্থানে হয় মুখ্য সৌর জোয়ার। ফলে পূর্ণিমা তিথিতে যে তীব্র জোয়ারের সৃষ্টি হয় তা পূর্ণিমার ভরা জোয়ার বা ভরা কোটাল বলে। অন্যদিকে অমাবস্যা তিথিতে একই সরলরেখায় পৃথিবীর একই দিকে চাঁদ ও সূর্য অবস্থান করলে তাদের মিলিত আকর্ষণ বল পৃথিবীর একই স্থানে হওয়ায় ওই স্থানে জলরাশি অতি প্রবলমাত্রায় স্ফীত হয় এবং ভরা কোটাল নামে পরিচিত। পূর্ণিমাতে একটি স্থানে চাদের একক মহাকর্ষ শক্তি, অমাবস্যাতে চাঁদ ও সূর্যের যৌথ মহাকর্ষ বল কাজ করায় অমাবস্যার জোয়ারে প্রাবল্য বেশি।
8. দিনে দুবার জোয়ার ভাটার কারণ কী?
উত্তর : আবর্তনের ফলে পৃথিবীর যে অংশ চঁাদের সামনে আসে সেখানে মুখ্য জোয়ার এবং তার বিপরীত প্রান্তে গৌণ জোয়ার হয়। এই দুই স্থানের সমকোণে অবস্থিত স্থানে ভাটা হয়। পৃথিবীর একবার আবর্তনের মধ্যে অর্থাৎ 24 ঘণ্টায় পৃথিবীর প্রতিটি স্থান একবার করে চাঁদের সামনে আসে। ফলে সেই স্থানে মুখ্য জোয়ার ও প্রতিপাদ স্থানে গৌণ জোয়ার হয়। এই গৌণ জোয়ারের 12 ঘন্টা 26 মিনিট পর প্রতিপাদ স্থানটি চাদের সামনে এলে সেখানে মুখ্য জোয়ার হয় এবং প্রথমে যে স্থানে মুখ্য জোয়ার হয়েছিল সেখানে গৌণ জোয়ার হয়। সুতরাং 24 ঘন্টায় একই স্থানে দিনে দুবার জোয়ার এবং জোয়ারের সমকোণী অবস্থানে ভাটা হয়। ভাঁটাও দিনে দু’বার সংঘটিত হয়।
9. অ্যাপােজি ও পেরিজির মধ্যে পার্থক্য লেখাে।
উত্তর : অ্যাপােজি ও পেরিজির মধ্যে পার্থক্য
বিষয় অ্যাপােজি পেরিজি
(i) সংজ্ঞা চাদের পৃথিবী পরিক্রমণ কালে চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব যখন সর্বাধিক থাকে সেই অবস্থানকে অ্যাপােজি বলে। চাদের পৃথিবী পরিক্রমণ কালে চঁাদ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব যখন সবচেয়ে কম থাকে, সেই অবস্থানকে পেরিজি বলে।
(ii) দূরত্ব অ্যাপােজি অবস্থানে চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যেকার দূরত্ব 4,07,000 কিমি. পেরিজি অবস্থানে চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে কার দূরত্ব 3,56,000 কিমি।
(iii) দৃশ্যমান অপর নাম এই সময় চাঁদকে ছােটো ও অনুজ্জ্বল দেখায়। এই সময় চঁাদকে অ্যাপােজি অপেক্ষা 12%-14% বড়াে ও 25-30 গুণ বেশি উজ্জ্বল দেখায়।
জোয়ারের তীব্রতা অ্যাপােজি অবস্থানে জোয়ার ভাটার তীব্রতা কম হয়। পেরিজি অবস্থান জোয়ারভাটার তীব্রতা বেশি হয়।
বারিমন্ডল – রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখাে। অথবা, সমুদ্রস্রোতের গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : সমুদ্রস্রোত জলবায়ু ও মানুষের অর্থনৈতিক কাজকর্মকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। যেমন-
(1) জলবায়ুর ওপর প্রভাব :
(i) উয়তার হ্রাসবৃদ্ধিতে : উয় সমুদ্রস্রোত উচ্চঅক্ষাংশীয় অঞ্চলে উয়তা বৃদ্ধি করে। যেমন—উয় উত্তর আটলান্টিক স্রোত নরওয়ের উপকুলীয় অঞ্চলে উয়তা বৃদ্ধি করে। শীতল সমুদ্রস্রোত সংশ্লিষ্ট উপকুলীয় অঞ্চলের উয়তা হ্রাস করে। যেমন— শীতল লাব্রাডার স্রোতের প্রভাবে কানাডার পূর্ব উপকূলের উয়তা হ্রাস পায়।
(ii) বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত : উয় উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে ইংল্যান্ডের পশ্চিম উপকুলে বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে শীতল বেরিং স্রোতের প্রভাবে রাশিয়ার পূর্ব উপকূলে তুষারপাত হয়।
(iii) ঝড়ঝঞা ও কুয়াশা : উয় ও শীতল সমুদ্রস্রোতের মিলন স্থলে কুয়াশা, ঝড়-ঝঞ্চার সৃষ্টি হয়।
(iv) মরুভূমির সৃষ্টি : ক্রান্তীয় অঞ্চলে শীতলস্রোত প্রভাবিত মহাদেশগুলির পশ্চিমাংশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কমে গিয়ে উয় মরুভূমি সৃষ্টি করে। যেমন—কালাহারি, সােনেরান, আটাকামা প্রভৃতি মরুভূমি সৃষ্টির অন্যতম কারণ শীতলস্রোত।
(2) পরিবহন ব্যবস্থার ওপর প্রভাব : (i) সমুদ্রস্রোতের অনুকুলে জাহাজ চলাচলের সুবিধা হয়। (ii) উয় সমুদ্রস্রোত উপকূলীয় অঞ্চলের বন্দরগুলিকে বরফযুক্ত রাখে। (iii) শীতল স্রোতের সঙ্গে আগত হিমশৈল জাহাজ চলাচলে বাধা দেয় ও বিপদ সৃষ্টি করে।
(3) মাচড়া ও মৎস্য আহরণ : শীতলস্রোতের সঙ্গে আগত বরফ উয়স্রোতের সংস্পর্শে গলে গিয়ে সেই সঙ্গে আসা নুড়ি, বালি, কাদা অধঃক্ষিপ্ত হয়ে অগভীর মগ্নচড়া সৃষ্টি করে। যেখানে প্ল্যাঙ্কটনের প্রাচুর্য থাকায় বিপুল পরিমাণ মৎস্যের সমাবেশ ঘটে ও বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ ক্ষেত্র তৈরি হয়। যেমন—উত্তর পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগরীয় ক্ষেত্র।
(4) জীবজগতের ওপর প্রভাব : (i) স্রোতের মাধ্যমে সমুদ্রজলের উয়তা নিয়ন্ত্রিত হয় যা সামুদ্রিক জীবের বসবাস নিয়ন্ত্রিত হয়। (i) উম্ন স্রোত সামুদ্রিক জীব, মাছ, প্রবাল, প্ল্যাঙ্কটন বিস্তারের আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। (ii) স্রোতের উর্ধ্বমুখী প্রবাহ বা আবর্তের কারণে লবণতার পরিমাণ নির্ভর করে। (iv) অন্যদিকে এলনিনাের প্রভাবে পেরু চিলি উপকুলে প্ল্যাঙ্কটন ও মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
2. জোয়ার ভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : প্রধানত দুটি কারণে পৃথিবীতে জোয়ার ভাটার সৃষ্টি হয়। যথা-(i) পৃথিবীর ওপর চঁদ ও সূর্যের মিলিত মহাকর্ষ বলের প্রভাব এবং (ii) পৃথিবীর আবর্তন জনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব।
(i) পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের মিলিত মহাকর্ষ বলের প্রভাব : নিউটনের মহাকর্ষ নিয়ম অনুযায়ী পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য পরস্পর পরস্পরকে আকর্ষণ করে। যে বস্তুর ভর যত বেশি আকর্ষণ বল তার তত বেশি এবং যে বস্তুর দূরত্ব যত বেশি তার আকর্ষণ বল তত কম।
পৃথিবী থেকে সূর্য গড়ে 15 কোটি কিমি দূরে অবস্থিত এবং চাঁদ ও 3 লক্ষ 84 হাজার 400 কিমি দূরে অবস্থিত। তাই পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ বল (2.2 গুণ) বেশি। প্রধানত চাঁদের আকর্ষণেই সমুদ্রের জল স্ফীত হয়ে জোয়ারের সৃষ্টি করে। জোয়ারের সমকোণস্থ অঞ্চলের জলতল নেমে গিয়ে ভাটার সৃষ্টি করে। সূর্যের চন্দ্রের চেয়ে প্রায় 255 লক্ষ গুণ ভারি হলেও বহু দূরে (প্রায় 391 গুণ) অবস্থিত হওয়ার জন্য সূর্যের আকর্ষণে জোয়ার তত প্রবল হয় না। সিজিগি অবস্থানে পৃথিবীর একই স্থানে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণ কার্যকরী হওয়ায় জোয়ার খুব প্রবল হয়।
(i) পৃথিবীর আবর্তনজনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব : পৃথিবীর আবর্তনজনিত কারণে কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয়, যার প্রভাবে সমুদ্রের জলরাশি বাইরের দিকে বিক্ষিপ্ত হওয়ায় প্রবণতা লাভ করে। এই বল মহাকর্ষ বলের বিপরীতে কাজ করে। অর্থাৎ চাঁদের আকর্ষণে যে স্থানে জোয়ার হয় তার বিপরীতে প্রতিপাদ স্থানে কেন্দ্রাতিগ বল অধিক কার্যকরী হওয়ায় সেখানে জোয়ার (গৌণ জোয়ার) হয়, তবে প্রাবল্য তুলনামূলক কম। জোয়ারের স্থানে বিপুল জলরাশি সরবরাহের জন্য এদের মধ্যবর্তী সমকোণস্থ স্থানগুলিতে জলতল নেমে গিয়ে ভাটার সৃষ্টি করে।
এছাড়া, সমুদ্রতলের ঢাল, তটভূমির প্রকৃতি, জলস্তরের ওঠানামা, জলের পৃষ্ঠতলে বায়ুর গতিশক্তির ঘর্ষণ প্রভৃতি জোয়ারভাটা সৃষ্টিতে পরােক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
3. ভরা কোটাল এবং মরা কোটাল কীভাবে সৃষ্টি হয় ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : ভরা কোটাল : আবর্তনকালে পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিতে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করে (সিজিগি অবস্থান)। এই সময় জোয়ার অতি প্রবল হয় এবং সাধারণ জোয়ার অপেক্ষা 20% জল বেশি ফুলে ওঠে। একেই ভরা কোটাল বলে।
পূর্ণিমায় ভরা কোটাল : পূর্ণিমা তিথিতে সিজিগি অবস্থানে পৃথিবী থাকে চাদ ও সূর্যের মাঝখানে (প্রতিযােগ)। এই অবস্থায় চাঁদের আকর্ষণে জোয়ার প্রবল আকার নেয় এবং বিপরীত অংশে কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব ও সূর্যের আকর্ষণেও জোয়ার প্রবল হয়। একেই পূর্ণিমার ভরা কোটাল বা তেজ কোটাল বলে।
অমাবস্যায় ভরা কোটাল : অমাবস্যা তিথিতে সিজিগি অবস্থানে চাদ থাকে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে (সংযােগ)। এই অবস্থায় পৃথিবীর যে অংশে চাদের আকর্ষণ বল কাজ করে সেখানেই সূর্যের আকর্ষণ বলও কাজ করে। ফলে জল প্রবলভাবে ফুলে ওঠে এবং জোয়ার অতি প্রবল আকার নেয়। একে অমাবস্যার ভরা কোটাল বা তেজ কোটাল বলে। পূর্ণিমার ভরা কোটাল অপেক্ষা অমাবস্যার ভরা কোটাল অনেক তেজি হয়।
মরা কোটাল বা মরা জোয়ার : কৃয় ও শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পৃথিবীর সাপেক্ষে চাঁদ ও সূর্য পরস্পরের সমকোণে অবস্থান করে। এরূপ অবস্থায় পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের ঠিক সামনে থাকে সেখানে জোয়ার হয়। এক্ষেত্রে চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল পরস্পরের বিপরীতে কাজ করে বলে সমুদ্রের জলরাশি সেভাবে ফুলে ওঠে না। অষ্টমী তিথির এই জোয়ারকে মরা কোটাল বা মরা জোয়ার বলে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ]:[প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. ছেড়া কাগজ থেকে পুনরায় কাগজ তৈরি করা হল যে ধরনের প্রক্রিয়া –
[A] পুনর্নবীকরণ [B] পরিমাণ হ্রাস [C] পৃথকীকরণ [D] পুনর্ব্যবহার
উত্তরঃ [A] পুনর্নবীকরণ
2. গৃহস্থালীর বর্জ্যের উদাহরণ হল—
[A] কীটনাশক [B] তরিতরকারির খােসা [C] ইনজেকশনের সিরি [D] বীজ
উত্তরঃ [B] তরিতরকারির খােসা
3. মৃতপ্রাণী বা গাছের পচা ডালপালা যে ধরনের বর্জ্যের উদাহরণ-
[A] গৃহস্থালী [B] তেজস্ক্রিয় [C] জৈব [D] কৃষিজ
উত্তরঃ [C] জৈব
4. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার তিনটি মূল প্রক্রিয়া হল-
[A] 3s [B] 3z [C] 3R [D] 3B
উত্তরঃ [C] 3R
5. পরিবেশের জীবজ ও অজীব উপাদনের মধ্যে গড়ে ওঠা পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ককে বলা হয়—
[A] বাস্তুতন্ত্র [B] গ্রিন হাউস [C] জীবতন্ত্র [D] জলতন্ত্র
উত্তরঃ [A] বাস্তুতন্ত্র
6. পরিবেশে থাকা এক ধরনের সবুজাভ সহজ দাহ্য গ্যাস হল-
[A] মিথেন [B] অক্সিজেন। [C] নাইট্রোজেন [D] নাইট্রাস অক্সাইড
উত্তরঃ [A] মিথেন
7. সিমেন্ট তৈরিতে যে প্রক্রিয়া প্রয়ােগ করা হয় সেটা হল—
[A] কম্পােজিট [B] স্ক্র্যাবার [C] ল্যান্ডফিল [D] নিষ্কাশন
উত্তরঃ [B] স্ক্র্যাবার
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. বর্জ্য পদার্থগুলিকে কোনাে স্থানে ফেলে জমাট করার পদ্ধতিকে বলে ____________
উত্তর : ভরাটকরণ বা Landfil
2. বর্জ্য থেকে নির্গত একটি গ্যাস হল, ______________
উত্তর : মিথেন।
3. প্রকৃতির বৃক্ক’ বলা হয় __________
উত্তর : জলাভূমিকে
4. GAP’-এর পুরাে নাম ____________
উত্তর : গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. ইউট্রোফিকেশন কী?
উত্তর : পরিপােষক দুষণের ফলে হ্রদ জলাশয় ও পুকুরে যে প্রক্রিয়ায় অ্যালগি জাতীয় জলজ উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটে এবং জলাশয় ক্রমশ ভরাট হয়ে আসে, সেই প্রক্রিয়াকে ইউট্রোসিকেশন বলে।
2. Bio-gas কী?
উত্তর : জৈব পদার্থকে বন্ধ জায়গায় রেখে যে জ্বালানি গ্যাস উৎপন্ন করা হয়, তাকে Bio- gas বা জৈব গ্যাস বলে। জৈব গ্যাসের কাঁচামাল হিসাবে সাধারণত গােবর ব্যবহার করা হয়। এটি একটি পুনর্ভব শক্তি সম্পদ ও পরিবেশমিত্র।
3. ল্যান্ডফিল কী?
উত্তর : লােকালয় থেকে দুরে ফাঁকা জায়গায় কিংবা নীচু জমিতে বিপজ্জনক নয় এমন কঠিন বর্জ্য পদার্থ জমা করাকে ‘ল্যান্ডফিল’ বলে। এ পদ্ধতি প্রয়ােগে খরচ কম হয় এবং এটি পরিকল্পনাহীন। সাধারণ নির্মাণ সামগ্রী, গার্হস্থ্য ও কুটির শিল্পজাত সামগ্রী নিক্ষেপ করা হয়।
4. জীববিশ্লেষ্য বর্জ্য ও জীব অবিশ্লেষ্য বর্জ্য পদার্থ কী?
উত্তর : জীববিশ্লেষ্য বর্জ্য পদার্থ হল সেই সমস্ত বর্জ্য পদার্থ যা যেকোনাে জীব, মূলত আণুবীক্ষণিক বিয়ােজক দ্বারা বিশ্লেষ্য হতে পারে। উদাঃ—উচ্ছিষ্ট খাদ্য বস্তু যে সমস্ত বর্জ্য পদার্থ কোনাে জীব দ্বারা বিয়ােজিত হয় না তাদের জীব অবিশ্লেষ্য বর্জ্য পদার্থ বলে। উদাঃ—কৃত্রিম পলিমার, প্লাস্টিক, ডিডিটি, কাচ ইত্যাদি।
5. ভার্মি কম্পােস্টিং কাকে বলে?
উত্তর : জৈব বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি পদ্ধতি হলাে ভার্মি কম্পােস্টিং। এই পদ্ধতিতে জৈব বর্জ্য পদার্থ, মানুষ বা গবাদি পশুর মল ব্যাকটিরিয়া দ্বারা পচন ঘটিয়ে হিউমাসে পরিণত করা হয়। কেঁচো, আবায়বীয় ব্যাকটেরিয়া দ্বারা জৈব বর্জ্যের সন্ধান প্রক্রিয়া ঘটে। 2-3 সপ্তাহের মধ্যে এই জৈবসার প্রস্তুত হয়।
6. ধোঁয়াশা (Smog) কী?
উত্তর : নাইট্রোজেন অক্সাইড ও হাইড্রোকার্বনের সঙ্গে সূর্যরশ্মির আলােক রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটলে যে ধোঁয়াটে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে ধোঁয়াশা বলে। এর ফলে নাক, জ্বালা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হয়। শীতকালে ধোঁয়াশা বেশি হয়।
7. London Smog ঘটনাটি কী?
উত্তর : 1952 সালে বায়ুদূষণজনিত কারণে যে ভয়ঙ্কর ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছিল লন্ডন শহরে তা London Smog নামে পরিচিত। শিল্প কারখানার অতিরিক্ত ভাসমান কয়লা গুড়াে, ঘূর্ণবাতের ফলে শহর জুড়ে ধোঁয়াশার একটি পুরু স্তর সৃষ্টি করেছিল যেটি 5 ডিসেম্বর 1952 থেকে 9 ডিসেম্বর 1952 পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল ঘটনাটি।
8. PAN কী?
উত্তর : PAN হলাে পারঅক্সি অ্যাসাইট নাইট্রেট, যা একটি গৌণ বায়ুদূষক যানবাহনের ধোঁয়া, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া এর উৎস। ধোঁয়া সৃষ্টির অন্যতম কারণ। বাতাসে এর উপস্থিতি মানুষের চোখের সমস্যা এবং ফুসফুসের সমস্যা সৃষ্টি করে।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ম্যানিওর পিট কী?
উত্তর : গ্রামাঞ্চলে বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপস্থল, সংগ্রহ ও তার নির্বিকরণ পদ্ধতি না থাকায় বর্জ্য পদার্থ যত্রতত্র ফেলা হয়। ফলে দূষিত হয়। ম্যানিওর পিট ব্যবস্থায় বাড়ির আশে পাশে গর্ত তৈরি করে গৃহস্থালির সকল প্রকার বর্জ্য পদার্থ ওই গর্তে 5-6 আশে পাশে গর্ত তৈরি করে গৃহস্থালির সকল প্রকার বর্জ্য পদার্থ ওই গর্তে 5-6 মাস ধরে চাপা দেওয়া হয় যা পরে জৈবসারে পরিণত হয় এবং কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়।
2. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় Fly Ash-এর ভূমিকা কী?
উত্তর : কয়লা নির্ভর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রচুর পরিমাণে ফ্লাই অ্যাশ ও তলানি ছাই উৎপন্ন হয়। ফ্লাই অ্যাস সিমেন্ট ও ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া বাঁধ তৈরি করতে, খনির ফাকা স্থান পূরণ করার কাজে, নীচু জমি ভরাট করতে, মৎস্য প্রকল্পে ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার করা হয়।
3. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্কাবারের ভূমিকা কী?
উত্তর : এই পদ্ধতিতে শিল্প থেকে নির্গত বায়ুদূষণকারী পদার্থ ও গ্যাসের অপসারণ ঘটিয়ে বায়ুকে বিপন্মুক্ত করা হয়। এটি দু’ প্রকার—(i) শুদ্ধ স্ক্রাবার ব্যবহার করা হয় নির্গত ধোঁয়া থেকে অন্নদূর করার জন্য। এবং (ii) আর্দ্র স্ক্রাবার ব্যবহার করা হয় দূষণকারী গ্যাস, দূষণ কণা দূর করার জন্য।
4. কম্পােস্টিং প্রক্রিয়া কী?
উত্তর : জৈব বর্জ্য পদার্থ, মানুষ বা গবাদি পশুর মলকে ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা পচন ঘটিয়ে হিউমাসে বা জৈবসারে পরিণত করাকে কম্পােস্টিং বলে। কম্পােস্টিং-এর সময় উপজাত বস্তু হিসাবে CO, জল ও তাপ উৎপন্ন হয়। এই পদ্ধতিতে 60°C বা তার বেশি উয়তা উৎপন্ন হওয়ায় মশা-মাছির ডিম বা লার্ভা নষ্ট হয়। আগাছা ও অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস হয়। আমাদের দেশে দুটি পদ্ধতিতে কম্পােস্টিং করা হয়। (i) বেঙ্গালুরু পদ্ধতি ও (ii) যান্ত্রিক কম্পােস্টিং ।
5. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় 4R এর ভূমিকা কী?
উত্তর : 4Rহল—(i) Reduction-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রথম স্তম্ভ হলাে বর্জ্যের পরিমাণকে হ্রাস করা। (ii) Waste Recycling-ব্যবহারের অনুপযুক্ত পদার্থকে পুনরায় ব্যবহারের উপযােগী করে তােলাকে বর্জ্যের পুনর্নবীকরণ বলে। (iii) Reuse-কোনাে পরিবর্তন ছাড়াই বর্জ্য পদার্থের ব্যবহার করা হলে তাকে পুনর্ব্যবহার বলে। (iv) Rot- কম্পােস্টিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জৈব বর্জকে জৈব সারে পরিণত করে কৃষিকাজে ব্যবহার করার প্রক্রিয়া।
6. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের ভূমিকা আলােচনা করাে।
উত্তর : বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীরা নিম্নলিখিত কাজগুলি করতে পারে- (i) বাড়ির বর্জ্য নির্দিষ্ট পাত্রে একত্রিত করা। (ii) ম্যানিওর পিট ব্যবস্থায় জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। (iii) নিজের শ্রেণিকক্ষ এবং স্কুল প্রাঙ্গণ বর্জ্য মুক্ত রাখা। (iv) নিকটস্থ হাট বাজার পর্যবেক্ষণ করে দূষণ সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।
7. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়ােজনীয়তা আলােচনা করাে।
উত্তর : বর্জ্য বা জঞ্জালকে কমিয়ে এনে মুক্ত করে পৃথিবীকে সুষ্ঠু বাসযােগ্য করে গড়ে তােলার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়ােজন। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে হাসপাতালের মােট বর্জ্যের 10% সংক্রামক বর্জ্য। খুব সহজেই এই 10% বর্জকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। পরিবেশ তথা মানব জাতি সমূহ সমগ্র জীবজগৎকে বাঁচাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার
8. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কী? এবং পদধতিগুলির নাম লেখাে।
উত্তর : দূষণ মাত্রাকে প্রকৃতির সহ্যসীমার মধ্যে রাখার উদ্দেশ্যে যে বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিভিন্ন উৎসস্থল থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ করিয়ে আনা, পুনর্নবীকরণ ও সংরক্ষণ করা হয় তাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগুলি হলাে—(i) বর্জ্য পৃথকীকরণ (i) ভরাটকরণ (iIi) কম্পােস্টিং (iv) নিকাশি বা নিষ্কাশন ব্যবস্থা (v) স্ক্রাবার ইত্যাদি।
ভারত : ভূমিকা, প্রাকৃতিক পরিবেশ
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ]:[প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. যে পর্বতকে হিমালয়ের উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত হিসেবে ধরা হয়—
[A] গডউইন অস্টিনকে [B] নাঙ্গা পর্বতকে [C] কাঞ্চনজঙ্ঘাকে [D] অন্নপূর্ণাকে
উত্তরঃ [B] নাঙ্গা পর্বতকে
2. শ্রীনগর ও জম্মুর মধ্যে সংযােগ রক্ষা করেছে—
[A] জোজিলা পাস। [B] নাথুলা পাস [C] বানিহাল পাস [D] সােলারগড় পাস
উত্তরঃ [C] বানিহাল পাস
3. কোঙ্কন উপকূল অবস্থিত যে সাগরের তীরে –
[A] আরবসাগর [B] বঙ্গোপসাগর [C] ভারতমহাসাগর [D] চিন সাগর
উত্তরঃ [A] আরবসাগর
4. কৃয়া নদীর বদ্বীপের পূর্বভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূল ভাগকে বলা হয়—
[A] ওড়িশা উপকূল [B] অন্ত্র উপকূল [C] করমণ্ডল উপকূল [D] উত্তর সরকার উপকূল
উত্তরঃ [D] উত্তর সরকার উপকূল
5. ভারতের বৃহত্তম নদী বাঁধ হল-
[A] নাগার্জুন সাগর [B] ম্যাসানজোর [C] হীরাকুঁদ [D] আক্রা-নাঙ্গাল
উত্তরঃ [D] আক্রা-নাঙ্গাল
6. ভারতের উচ্চতম লবণাক্ত জলের হ্রদ হল—
[A] প্যাংগং [B] ডাল [C] সাততাল [D] মিকির
উত্তরঃ [A] প্যাংগং
7. শিবালিক ও মধ্য হিমালয়ের মাঝে অবস্থিত ‘দুন উপত্যকা অবস্থিত
[A] হিমাচল প্রদেশে [B] অরুণাচল প্রদেশে [C] উত্তরাখণ্ডে [D] কাশ্মীরে
উত্তরঃ [C] উত্তরাখণ্ডে
8. মহারাষ্ট্রের উপকূল অঞ্চলকে বলে—
[A] করমণ্ডল উপকূল [B] মালাবার উপকূল [C] কোঙ্কন উপকূল [D] তামিলনাড়ু উপকূল
উত্তরঃ [C] কোঙ্কন উপকূল
9. পশ্চিম উপকূলের উপহ্রদগুলিকে বলা হয়—
[A] কয়াল [B] ভাবর [C] ধান্দ। [D] তাল
উত্তরঃ [A] কয়াল
10. ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহটি হল-
[A] জেমু [B] সিয়াচেন [C] চেমায়ুংদুং [D] গঙ্গোত্রী
উত্তরঃ [B] সিয়াচেন
14. মহারাষ্ট্রের নাসিকের কাছে ত্র্যম্বক উচ্চভূমি থেকে যে নদীটির উৎপত্তি হয়েছে, সেই নদীর নাম-
[A]গােদাবরী [B] কৃয়া [C] সরাবতী [D] কাবেরী
উত্তরঃ [A]গােদাবরী
11. ভারতের পশ্চিম উপকূলের ভেনাদ কয়াল অবস্থিত-
[A] কোঙ্কনে [B] মালাবারে [C] গুজরাতে [D] রাজস্থানে
উত্তরঃ [B] মালাবারে
12. আরাবল্লি পর্বত থেকে উৎপন্ন হওয়া নদীটির নাম
[A] কাবেরী [B] চম্বল। [C] সবরমতী [D] লুনি
উত্তরঃ [C] সবরমতী
13, জব্বলপুরের কাছে ধুয়াধর জলপ্রপাতটি যে নদীর ওপর অবস্থিত সেটি হল-
[A] তাপ্তী [B] নর্মদা [C] কাবেরী [D] তুঙ্গভদ্রা
উত্তরঃ [B] নর্মদা
14. ভারতের একটি অন্তর্বাহিনী নদী হল—
[A] সবরমতী [B] নর্মদা [C] লুনি [D] কাবেরী
উত্তরঃ [C] লুনি
15. যমুনােত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গার উপনদী যমুনা’ যে শহরের কাছে গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়েছে-
[A] লখনউ [B] আগ্রা [C] রাজমহল [D] এলাহাবাদ
উত্তরঃ [D] এলাহাবাদ
16. গাৱসােপ্পা বা যােগ জলপ্রপাতটি যে নদীর ওপর অবস্থিত সেটি হল—
[A] কৃয়া [B] সরাবতী [C] কাবেরী [D] গােদাবরী
উত্তরঃ [B] সরাবতী
17. মৌসুমি কথার উৎপত্তি ‘মৌসিন’ শব্দ থেকে। এটি একটি
[A] বাংলা শব্দ [B] মালয়ালাম শব্দ [C] আরবি শব্দ [D] ফারসি শব্দ।
উত্তরঃ [C] আরবি শব্দ
18. পূর্ব ভারতে কালবৈশাখী দেখা যায়-
[A] মার্চ-মে মাসে [B] জুন-জুলাই মাসে [C] সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে [D] ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে
উত্তরঃ [A] মার্চ-মে মাসে
19. আবৃষ্টি দেখা যায়-
[A] পূর্ব ভারতে [B] দক্ষিণ ভারতে [C] উত্তর ভারতে [D] উত্তর-পশ্চিম ভারতে
উত্তরঃ [B] দক্ষিণ ভারতে
20. কার্পাস চাষের পক্ষে খুব ভালাে—
[A] কৃয়মৃত্তিকা [B] এঁটেল মৃত্তিকা [C] পডসল মৃত্তিকা [D] নবীন পলি মৃত্তিকা
উত্তরঃ [A] কৃয়মৃত্তিকা
21. ভারতের প্রায় 46% অঞ্চল জুড়ে আছে যে মৃত্তিকা
[A] রেগুর মৃত্তিকা [B] ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা [C] পডসল মৃত্তিকা [D] পলি মৃত্তিকা
উত্তরঃ [D] পলি মৃত্তিকা
22. তরাই অঞলের মৃত্তিকার অপর নাম-
[A] ভাবর [B] ভুর [C] ভাঙ্গার [D] খাদার
উত্তরঃ [A] ভাবর
23. প্লাবনভূমিতে গঠিত নবীন পলিমাটিকে বলে—
[A] ভুর [B] ভাঙ্গার [C] খাদার [D] ভাবর
উত্তরঃ [C] খাদার
24. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা দেখা যায়—
[A] গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে [B] ছােটোনাগপুর মালভূমি অঞ্জলে [C] রাজস্থানের মরু অঞ্চলে [D] পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে।
উত্তরঃ [B] ছােটোনাগপুর মালভূমি অঞ্জলে
25. মার্চ-এপ্রিল মাসে নিম্নচাপজনিত ঝড় অসমে যে নামে পরিচিত
[A] বরদাইছিলা [B] নরওয়েস্টার [C] কালবৈশাখী [D] আঁধি
উত্তরঃ [A] বরদাইছিলা
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. সােনালি তন্তু ____________ কে বলা হয়।
উত্তর : পাট।
2. একটি লৌহ-সংকর ধাতুর নাম ।
উত্তর : ইস্পাত।
3. পশ্চিমবঙ্গের একটি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হল প্রকল্প।
উত্তর : জলঢাকা।
4. _______________ শিল্পকে ভারতে ‘আধুনিক শিল্প’ বলা হয়।
উত্তর : পেট্রো-রসায়ন।
5. ভারতের নবীনতম রাজ্য হল ________ ।
উত্তর : তেলেঙ্গানা।
6. গুজরাতের প্রধান বন্দর _____________
উত্তর : কান্ডালা।
7.____________ কে হ্রদের শহর বলা হয়।
উত্তর : হায়দরাবাদ।
৪, ভারতের সর্বাধিক জনঘনত্বপূর্ণ রাজ্যটি হল ______________ –
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গ।
9. সর্বাধিক সাক্ষর রাজ্যটির নাম ________________ ।
উত্তর : কেরালা।
10. ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহের নাম
উত্তর : সিয়াচেন।
11. যে সম্পদ শুধুমাত্র পৃথিবীর একটি স্থানেই আছে, তাকে বলে _______________ সম্পদ।
উত্তর : অদ্বিতীয়।
12. সম্পদ সৃষ্টির উপাদান অনুসারে সম্পদ প্রকার ______________ ।
উত্তর : তিন।
13, যে সব সম্পদ ক্রমাগত ব্যবহার করলেও নিঃশেসিত হয় না, তাদের ___________ সম্পদ বলে।
উত্তর : প্রবহমান।
একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাও :
1. সিপকিলা, লিপুলেখ ও নাথুলা কী?
উত্তর : সিপকিলা, লিপুলেখ ও নাথুলা হল—হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি গিরিপথ।
2. ভূস্বর্গ’ বা ‘প্রাচ্যের নন্দনকানন কাকে বলে ?
উত্তর : অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য কাশ্মীর উপত্যকাকে ‘ভূস্বর্গ’ বা ‘প্রাচ্যের নন্দনকানন বলা হয়।
3. ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাতটির নাম কী?
উত্তর : ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাতটির নাম গেরসােপ্পা বা যােগ জলপ্রপাত।
4. ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমিটির নাম কী?
উত্তর : ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমিটির নাম লাডাক মরুভূমি।
5. ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহ কোনটি?
উত্তর : ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহটির নাম সিয়াচেন হিমবাহ।
6. ভারতের জীবন্ত আগ্নেয়গিরিটির নাম কী?
উত্তর : ভারতের জীবন্ত আগ্নেয়গিরিটির নাম ব্যারেন দ্বীপ।
7. ভারতের নবগঠিত রাজ্য কোনটি?
উত্তর : ভারতের নবগঠিত রাজ্যটির নাম তেলেঙ্গানা (2014-2,জুন)।
৪. ভারত পাকিস্তান সীমারেখা কী নামে পরিচিত?
উত্তর : ভারত পাকিস্তান সীমারেখা র্যাডক্লিফ লাইন ও LoC নামে পরিচিত।
9. হিমালয় কী জাতীয় পর্বত?
উত্তর : হিমালয় ভঙ্গিল জাতীয় পর্বত।
10. দুন কাকে বলে?
উত্তর : কুমায়ুন হিমালয়ের মধ্যে হিমালয় পর্বতশ্রেণি এবং শিবালিক পর্বতশ্রেণির মধ্যবর্তী অংশে যে দীর্ঘ উপত্যকা রয়েছে তাকে দুন বলে।
11. পশ্চিম হিমালয়ের একটি উষ্ণ প্রস্রবণের নাম করাে।
উত্তর : পশ্চিম হিমালয়ের একটি উষ্ণ প্রস্রবণ হল কাশ্মীরের ভেরনাগ।
12. ‘বসুধার ধবল শীর্ষ’ কাকে বলে?
উত্তর : কারাকোরাম পর্বতশ্রেণিকে ‘বসুধার ধবল শীর্ষ’ বলে।
13. ভারতের কোন শহরে মৃত্তিকা গবেষণাগার স্থাপিত হয়েছে?
উত্তর : ভারতের উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে মৃত্তিকা গবেষণাগার স্থাপিত হয়েছে।
14. মৃত্তিকা সংরক্ষণের প্রধান উপায় কী?
উত্তর : মৃত্তিকা সংরক্ষণের প্রধান উপায় হল বৃক্ষরােপণ।
15. তিনটি চিরসবুজ বৃক্ষের নাম লেখাে।
উত্তর : তিনটি চিরসবুজ বৃক্ষ হল—শিশু, গর্জন ও তুন।
16. ভারতের কোন রাজ্যে বনভূমির পরিমাণ সর্বাধিক?
উত্তর : ভারতের মধ্যপ্রদেশে বনভূমির পরিমাণ সর্বাধিক।
17, ভারতের মরু অঞলে কোন ধরনের উদ্ভিদ জন্মায়?
উত্তর : ভারতের মরু অঞ্চলে ক্যাকটাস বা ফণিমনসা, বাবলা, ঘাস, খেজুর প্রভৃতি বিভিন্ন মরু উদ্ভিদ বা জেরােফাইটিক প্ল্যান্টস জন্মায়।
18. ভারতের একমাত্র ভাসমান অভয়ারণ্যের নাম কী?
উত্তর : ভারতের একমাত্র ভাসমান অভয়ারণ্যের নাম মণিপুর রাজ্যের কইরুল লামজা।
19. ভারতে মােট বনভূমির পরিমাণ কত?
উত্তর : ভারতের মােট বনভূমির পরিমাণ মাত্র 21.05%।
20. একটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের নাম লেখাে।
উত্তর : একটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের নাম হল গরান।
21, ধান চাষের জন্য কত ডিগ্রি তাপমাত্রার প্রয়ােজন হয় ?
উত্তর : ধান চাষের জন্য 20° সে থেকে 30° সেন্টিগ্রেড উয়তার প্রয়ােজন হয়।
22. ভারতে ধান গবেষণাগার কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : ভারতে ধান গবেষণাগার কেন্দ্রটি ওড়িশার কটকে অবস্থিত।
23. হটিকালচার কাকে বলে?
উত্তর : বাগানের মধ্যে বিভিন্ন শাকসবজি, ফল প্রভৃতির উৎপাদনকে হর্টিকালচার বলে। হর্টিকালচারকে বলে বাজার বাগান বা উদ্যান কৃষি।
24. গম উৎপাদনে ভারতের কোন রাজ্য প্রথম স্থান অধিকার করে?
উত্তর : গম উৎপাদনে ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্য প্রথম স্থান অধিকার করে।
25. ভারতের গম গবেষণাগার কেন্দ্রটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : ভারতের গম গবেষণাগার কেন্দ্রটি দিল্লির কাছে পুষায় অবস্থিত।
26. কোন ধরনের মাটিতে গম চাষ ভালাে হয় ?
উত্তর : দো-আঁশ মাটিতে গম চাষ ভালাে হয়।
27. ভারতের দুটি প্রধান তন্ত্রশস্যের নাম লেখাে।
উত্তর : ভারতের দুটি প্রধান তন্ত্রশস্যের নাম হল-(i) পাট ও (i) তুলাে।
28, কয়েকটি উন্নতফলনশীল তলােৰীজের নাম করাে।
উত্তর : কয়েকটি উন্নতফলনশীল তুলােবীজের নাম হল-সুজাতা, MCU-4, MCU-5।
29. তুলাে চাষের জন্য কী পরিমাণ বৃষ্টিপাত ও উয়তার প্রয়ােজন হয় ?
উত্তর : তুলাে চাষের জন্য 50 সেমি থেকে 100 সেমি বৃষ্টিপাত ও 20° সেলসিয়াস থেকে 25° সেলসিয়াস উয়তার প্রয়ােজন হয়।
30. তুলাে চাষের জন্য কীরকম মাটির প্রয়ােজন?
উত্তর : তুলাে চাষের জন্য চুন মেশানাে উর্বর দো-আঁশ মাটি বা কৃয় মৃত্তিকার প্রয়ােজন হয়।
31. বাণিজ্য ফসল কাকে বলে?
উত্তর : প্রধানত রপ্তানি বা বাণিজ্যের জন্য যে সব ফসল উৎপাদন করা হয়, সেগুলিকে বাণিজ্য ফসল বলে।
ভারতের ভূ-প্রকৃতি
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. ‘দুন’ বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : হিমাদ্রি হিমালয় ও হিমাচল হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদীগুলি শিবালিকের উত্তরদিকে যে উপত্যকা গঠন করেছে তাকে দুন উপত্যকা বলে। এই উপত্যকা উর্বর হওয়ায় কৃষিকার্য ভালাে হয় এবং জনবসতি ঘন। উত্তরাখণ্ড রাজ্যের দেরাদুন ভারতের বৃহত্তম দুন।
2. ‘কয়াল’ কী?
উত্তর : উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রতরঙ্গ বাহিত নুড়ি, বালি প্রভৃতি সঞ্চয়ে পুরােদেশীয় বাঁধ গঠিত হয়। পুরােদেশীয় বাঁধের পশ্চাতে আবদ্ধ লবণাক্ত জলাভূমিকে কয়াল বলে। কেরালার ভেম্বনাদ একটি কয়াল।
3. মরুস্থলী’ কী?
উত্তর : ভারতীয় মরু অঞ্চলের সর্ব পশ্চিম অংশে অবস্থিত উদ্ভিদহীন বালুকাময় যে মরুভূমি অঞ্চলটিকে মরুস্থলী। মরুস্থলী’ শব্দটির অর্থ ‘মৃতের দেশ। অতি অল্প বৃষ্টিপাতের কারণে এই অঞ্চলে জীবনের অস্তিত্ব প্রায় নেই। এখানে বেলে ও চুনা পাথর গঠিত ছােটো ছােটো টিলা দেখা যায়।
4, পূর্বাচল কী?
উত্তর : ভারতের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের উত্তর পূর্ব দিকের প্রসারিত অঞলটি পূর্বাঞ্চল নামে পরিচিত। ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে পূর্বাঞ্চল গঠিত। এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা 1500-4000 মি.। পাটকাই, নাগা, লুসাই, মিশনি এখানকার উল্লেখযােগ্য পর্বতশ্রেণি।
5. ডেকানট্টাপ’ কী?
উত্তর : ডেকান শব্দটির অর্থ দাক্ষিণাত্য এবং ‘টাপ’ শব্দটির অর্থ ‘সিঁড়ি’। মহারাষ্ট্রের লাভা গঠিত মালভূমিটি ডেকানট্রাপ নামে পরিচিত। প্রায় 6-7 কোটি বছর পূর্বে ভূ-ত্বকের প্রশস্ত ফাটল দিয়ে তরল ম্যাগমা বেরিয়ে এটি সিঁড়ি মত গঠন তৈরি করেছে। প্রাচীন ভূ-খণ্ড গন্ডােয়ানাল্যান্ডের অংশবিশেষ।
6. কারেওয়া কী?
উত্তর : উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে কাশ্মীর উপত্যকায় পাহাড়ের ধাপযুক্ত ঢালু অংশকে বলা হয় কারেওয়া।
7. মালনাদ ও ময়দান কী?
উত্তর : মহারাষ্ট্র মালভূমির দক্ষিণে অবস্থিত কর্ণাটক মালভূমি গ্রানাইট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত। এই মালভূমির বেশি উচ্চতাসম্পন্ন দক্ষিণ পশ্চিমাংশ মালনাদ ও কম উচ্চতাসম্পন্ন উত্তর পূর্বাংশ ময়দান নামে পরিচিত। মালদ বন্ধুর ও পর্বতময়। ময়দান তরঙ্গায়িত।
৪. আকসাই চিন কী?
উত্তর : ট্রান্স হিমালয়ের অন্তর্গত লাউক মালভূমির উত্তরপূর্বে একটি পর্বতবেষ্টিত উচ্চ মালভূমি আকসাই চিন নামে পরিচিত। এই অঞলের উচ্চতা 4500-6000 মি.। এই মালভূমি অঞ্চলে কয়েকটি লবণাক্ত হ্রদ আছে, যার মধ্যে লিং-জিং-টন উল্লেখযােগ্য।
9. তরাই কাকে বলে?
উত্তর : ভাবর অঞ্চলের দক্ষিণ প্রান্তে ভূ-গর্ভস্থ নদীগুলি যেখানে আত্মপ্রকাশ করেছে, সেখানকার 15 থেকে 30 কিমি প্রশস্ত সাতস্যাতে জলাভূমিকে সাধারণভাবে তরাই বলা হয়। এই অঞ্চলটি উত্তর পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ পূর্ব দিকে ঢালু হয়ে গেছে।
10. কচ্ছের রণ বলতে কী বােঝায়?
উত্তর : গুজরাত রাজ্যের উত্তরাংশে, তিনদিকে জলভাগ বেষ্টিত কচ্ছ উপদ্বীপের বিস্তীর্ণ, অগভীর, লবণাক্ত জলাভূমিকে কচ্ছের রণ বলে। এই অঞ্চলটি সম্পূর্ণ শুষ্ক, উদ্ভিদহীন ও সাদা লবণে ঢাকা বালুকাময় সমভূমিতে পরিণত হয়েছে।
11. ভাবর কাকে বলে?
উত্তর : উত্তর ভারতের অন্যতম ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ গঙ্গা সমভূমি। এই সমভূমি অঞ্চলের উত্তর প্রান্তের ভূমির নাম ভাবর। অঞ্চলটি হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চলে অবস্থিত।
12. তাল কাকে বলে?
উত্তর : কুমায়ুন হিমালয় অঞ্চলে হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদগুলিকে স্থানীয় ভাষায় তাল বলা হয়। যেমন—নৈনিতাল, সাততাল, ভীমতাল ইত্যাদি।
13. বাগার অল কাকে বলে?
উত্তর : থর মরু অঞ্চলের পূর্বপ্রান্তে আরাবল্লী পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত অল্প বালুকাময় অলটি হল বাগার অল। এই অঞ্চলটি প্রকৃতপক্ষে মরুভূমি ও সমভূমি অঞ্চলের মধ্যবর্তী অঞ্চল। এখানকার অধিকাংশ অল ঘাসে ঢাকা। রাজস্থান খাল এই অঞ্চলে কৃষি প্রসারে সাহায্য করেছে।
14. ‘থালি’ কী?
উত্তর : রাজস্থানের লুনির উত্তরে বালি গঠিত সমভূমি হল থালি।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. মালনাদ ও ময়দানের মধ্যে পার্থক্য আলােচনা করাে।
উত্তর : মালনাদ ও ময়দানের মধ্যে পার্থক্য –
বিষয় মালদান ময়দান
(i) অবস্থান কর্ণাটক মালভূমির পশ্চিমে অবস্থিত। কর্ণাটক মালভূমির পূর্বে অবস্থিত।
(ii) অর্থ মালনাদ’ শব্দের অর্থ ‘পাহাড়ি দেশ। ময়দান’ শব্দের অর্থ অনুচ্চ ভূমিভাগ।
(iii) ভূপ্রকৃতি এটি একপ্রকার ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি। এটি এক প্রকার সময় মালভূমি।
(iv) উচ্চতা মালনাদের উচ্চতা ময়দানের চেয়ে বেশি। ময়দানের উচ্চতা মালনাদের চেয়ে কম।
দশম শ্রেণী ভূগোল | ভারত : ভূমিকা, প্রাকৃতিক পরিবেশ – রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. উত্তরপূর্ব হিমালয়ে পাহাড়ি অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি আলােচনা করাে।
উত্তর : উত্তরপূর্ব পাহাড়ি অঞ্চল :
অবস্থান : ভারতের উত্তর পূর্বাংশে মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে উত্তর পূর্বের পাহাড়ি অঞ্চল অবস্থিত। এই উচ্চভূমিটি হিমালয় থেকে চুলের কাটার মতাে বাঁক নিয়ে উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত হয়েছে। ভূ-প্রকৃতি : উত্তর পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। নিম্নে তা। আলােচনা করা হল-
(a) পূর্বাঞ্চল : এই অংশে কতকগুলি ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণি উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত রয়েছে। এগুলির মধ্যে পাটকই, নাগা, লুসাই, মিরিক, মিশমি, কোহিমা প্রভৃতি প্রধান। মিশমি পাহাড়ের দাফাকুম (4579 মি.) পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। অন্যদিকে নাগা পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সরামতী শৃঙ্গ (3,826 মি.)। এই অঞ্চলের পাহাড়গুলির গড় উচ্চতা 1500-3000 মিটার। পূর্বাঞ্চলের মণিপুর রাজ্যের লােকটাক হ্রদটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র হ্রদ। মণিপুরের ইম্ফল উপত্যকা পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম উপত্যকা।
(b) মেঘালয় মালভূমি : বর্তমানে মেঘালয়ের মালভূমিটিকে উত্তরপূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলের অংশ ধরা হয়। প্রাচীনকালে এই অঞ্চলটি ছােটোনাগপুর মালভূমির অন্তর্গত ছিল। এই অংশের ক্ষয়প্রাপ্ত পাহাড় যেমন—গারাে, খাসি, জয়ন্তিয়া প্রভৃতি পশ্চিম থেকে পূর্বে অবস্থান করছে। এখানে শিলা পাহাড়ের শিলং শৃঙ্গ (1961 মি.) মেঘালয় মালভূমির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এই মালভূমির পশ্চিমে অবস্থিত গারাে পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নরেক (1412 মি.)। এই মালভূমির দক্ষিণে অবস্থিত চুনাপাথরে গঠিত চেরা মালভূমি।
2. উত্তর ভারতের সমভূমির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। অথবা, উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির বিবরণ লেখাে।
উত্তর : উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চল : উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা ও দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্যবর্তী অবনমিত অংশে এই বিশাল সমভূমি অঞ্চল অবস্থান করছে। আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে এই সমভূমিটি প্রধান তিনটি ভাগে বিভক্ত। নিম্নে আলােচনা করা হল।
(a) পশ্চিমের সমভূমি : উত্তর ভারতের সমভূমির একেবারে পশ্চিমে এই সমভূমিটি অবস্থিত। এটি দুটি ভাগে বিভক্ত। (i) রাজস্থানের শুষ্ক সমভূমি—আরাবল্লী পর্বতের পূর্বাংশে একসময় নদীর পলিসঞ্চয়ে এই সমভূমির সৃষ্টি হয়। (ii) পাঞ্জাব হরিয়ানা সমভূমি—শতদ্র, বিপাশা, ইরাবতী প্রভৃতি নদীবাহিত পলিসগুয়ে এই সমভূমি গঠিত।
(b) গাঙ্গেয় সমভূমি : গঙ্গা নদীর প্রবাহ পথে উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে পলি সয়ে সৃষ্ট সমভূমি গাঙ্গেয় সমভূমি নামে পরিচিত। এই সমভূমির তিনটি ভাগে বিভক্ত। (i) উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমি—উত্তরপ্রদেশে যমুনার বামতীর থেকে এলাহাবাদ শহর পর্যন্ত বিস্তৃত। গড় উচ্চতা 100 মিটার থেকে 300 মিটার। (ii) মধ্যগাঙ্গেয় সমভূমি-পশ্চিমে এলাহাবাদ শহর থেকে পুর্বে রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। গড় উচ্চতা 25-100 মিটার। (iii) নিম্নগাঙ্গেয় সমভূমি-রাজমহল থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অংশ নিম্নগাঙ্গেয় সমভূমি নামে পরিচিত। এই সমভূমি উত্তরবঙ্গের সমভূমি (তরাই, তিস্তা, মহানন্দার সমভূমি), রাঢ় সমভূমি ও ব-দ্বীপ সমভূমিতে (পরিণত, মৃতপ্রায় ও সক্রিয়) বিভক্ত।
(c) ব্রহ্মপুত্র সমভূমি : অসম রাজ্যের প্রায় 56,000 বর্গ কিমি অঞ্চল ব্যাপী ব্রম্মপুত্র ও তার একাধিক উপনদীর পলি সঞ্জয়ে গঠিত এই ব্রম্মপুত্র সমভূমি। এই অংশের গড় উচ্চতা 50-100 মিটার। নদীর গতিপথে স্বাভাবিক বাঁধ, বালুচড়া, জলাভূমি, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ প্রভৃতি দেখা যায়।
দশম শ্রেণী ভূগোল | ভারত : ভূমিকা, প্রাকৃতিক পরিবেশ – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্ববাহিনী কেন?
উত্তর : গােদাবরী, মহানদী, কৃয়া, কাবেরী প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য নদীগুলি পূর্ববাহিনী। কারণ— (i) দক্ষিণ ভারতের ভূমিভাগের ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্বে। (ii) পশ্চিমদিক থেকে আগত আরবসাগরীয় পাতের চাপ প্রতিরােধ করতে গিয়ে দাক্ষিণাত্য মালভূমি ভূভাগ পশ্চিম থেকে পূর্বে ঢালু হয়ে গিয়েছে।
2. দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্বাহিনী কিন্তু নর্মদা ও তাপ্তী নদী পশ্চিমবাহিনী কেন?
উত্তর : পূর্ব পশ্চিমে বিস্তৃত সাতপুরা পর্বতের উত্তর ও দক্ষিণে চ্যুতির ফলে দুটি গ্রস্ত উপত্যকা সৃষ্টি হয়েছে। নর্মদা ও তাপ্তী নদী ওই দুটি অবনমিত ভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার জন্য দাক্ষিণাত্য মালভূমির সাধারণ ঢাল নিরপেক্ষ হয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে।
3. জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনা বা জলবিভাজিকা উন্নয়ন বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : কোনাে নদী অববাহিকা অঞ্চলের জলবিভাজিকা সামগ্রিক ও বিজ্ঞানসম্মত উন্নয়নই হল জলবিভাজিকা উন্নয়ন বা ব্যবস্থাপনা। এই উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে কোনাে নদী অববাহিকা অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র, পরিবেশের উপাদান এবং সম্পদের স্থায়ী উন্নয়ন করা সম্ভব হয়।
4. জলসংরক্ষণ কী? এর গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : ভবিষ্যতে জলসংকট থেকে মুক্তি পেতে জলকে সংরক্ষণ করে রাখাই হল জলসংরক্ষণ। (i) দূষণ থেকে জলকে রক্ষা, (ii) জলের সুষম বণ্টন, (iii) ভৌম জলের যথাযথ ব্যবহার, (iv) জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, (v) জলসেচের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার, (vi) বনভূমির বৃদ্ধির মাধ্যমে জলসংরক্ষণ করা যায়।
5. GAP কী?
উত্তর : গঙ্গার দূষণ প্রতিরােধে গঙ্গা অ্যাক্সন প্লান (GAP) গঠিত হয়। 1985 খ্রিস্টাব্দে “সেন্ট্রাল গঙ্গা অথরিটি’ নামে একটি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার অধীনে ‘GAP পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যেসব শহরগুলি গঙ্গা দূষণের জন্য সর্বাধিক দায়ী সেখানে পরিকল্পনা মাফিক নিকাশি ব্যবস্থা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
6. DVC কী?
উত্তর : 1948 সালে কেন্দ্রীয় সরকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, বিহার সরকারের উদ্যোগে দামােদর পরিকল্পনার উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয় ‘দামােদর ভ্যালি কর্পোরেশন। 1955 সালে এর কাজ শেষ হয়। বন্যা প্রতিরােধ, জলসেচের সুবিধা, কলকাতার নাব্যতা বৃদ্ধি ও অনান্য সমস্যা সমাধানে দামােদর পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. দক্ষিণ ভারতে পশ্চিমবাহিনী নদী মােহানায় ব-দ্বীপ নেই কেন?
উত্তর : পশ্চিমবাহিনী নদী মােহনায় ব-দ্বীপ না গড়ে ওঠার কারণগুলি হল—(i) নদীগুলির দৈর্ঘ্যে ছােটো তাই পলি কম থাকে জলে। (ii) নদীগুলিতে জলের স্রোত বেশি থাকায় মােহানায় পলি সঞ্চিত হতে পারে না। (iii) নদীগুলির উপনদীর সংখ্যা কম থাকায় পলি বেশি থাকে না। (iv) মােহানা অংশে ভূমির ঢাল বেশি থাকায় পলি সঞ্চিত হতে পারে না। (v) সর্বোপরি আরব সাগর ও খাম্বত উপসাগর বেশ গভীর তাই তা পলি সঞ্চয়নের ক্ষেত্রে প্রতিকূল।
2. ব্রক্ষ্মপুত্র নদে প্রতিবছর বন্যা হয় কেন? অথবা, অসমে প্রতিবছর বন্যা হয় কেন?
উত্তর : ব্রম্মপুত্র নদের প্রভাবে অসমে প্রতিবছর বন্যার কারণগুলি হল—(i) পার্বত্য অঞ্চল থেকে আনা বস্তুর অসমের সমভূমির ওপর সঞ্চিত হয়ে নদীগর্ভ অগভীর করে তােলে, ফলে অতিরিক্ত জল বন্যার কারণ হয়। (i) বরফগলা জলে পুষ্ট হওয়ায় এবং বৃষ্টির জলে সমৃদ্ধ হওয়া এই নদে জল খুব বেশি, তাই উপত্যকা অঞ্চলে বর্ষার সময় অধিক জল বহন করতে না পেরে দুকূল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে।
3. দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ অধিক প্রচলিত কেন?
উত্তর : এর কারণগুলি হল—(i) কঠিন ও অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের অবস্থানের জন্য দক্ষিণ ভারতে কূপ খনন করে জলসেচ করা অসুবিধাজনক। (ii) এখানকার ভূমিভাগ বন্ধুর ও তরঙ্গায়িত হওয়ায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদীর উপর বাঁধ দিয়ে জলাশয় তৈরি করা সুবিধাজনক। (iii) বর্ষার জলে পুষ্ট হওয়ায় সারাবছর জলসেচ সম্ভব হয় না।
4. গঙ্গার উপনদীগুলির পরিচয় দাও।
উত্তর : (i) মধ্যগতিতে মিলিত হওয়া উপনদী : রামগঙ্গা, গােমতী, ঘর্ঘরা, গণ্ডক, বুড়িগণ্ডক, কোশি হল বামতীরের উপনদী। যমুনা ও শােন ডানতীরস্থ উপনদী। (i) নিম্নগতিতে মিলিত হওয়া উপনদী : বাঁশলই, ব্রাত্মণী, দ্বারকা, ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামােদর, রূপনারায়ণ, কংসাবতী ও রসুলপুর হল ডানতীরস্থ উপনদী। জলঙ্গী, মাথাভাঙ্গা ও চূর্ণী হল গঙ্গার বামতীরস্থ উপনদী।
5. দামােদর পরিকল্পনার (DVC) সুবিধাগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : (i) বন্যারােধ : পশ্চিবঙ্গের দামােদর উপত্যকা অনেকটা অংশ বন্যামুক্ত হয়েছে। (i) বিদ্যুৎ উৎপাদন : 4টি বড়াে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং 11টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। (ii) জলসেচ : জলসেচ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে ফলে রবি ফসলের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। (iv) পরিবহন : দুর্গাপুর থেকে খাল কেটে কলকাতা যুক্ত করা হয়েছে। (v) মৃত্তিকা ক্ষয় রােধ সম্ভব হয়েছে। (vi) মাছ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। (vi) নতুন বনভূমি স্থাপন হয়েছে। সার্বিকভাবে দামােদর অববাহিকা অঞ্চলের উন্নয়ন সাধন হয়েছে।
রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1, গঙ্গা নদীর গতিপথের বিবরণ দাও।
উত্তর : তিনটি গতি স্পষ্ট বলে গঙ্গাকে আদর্শ নদী বলে। গঙ্গা নদীর মােট দৈর্ঘ্য 2510 কিমি, তবে ভারতে প্রবাহ পথ 2071 কিমি।
(a) উৎস : গঙ্গার উৎস হল উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন হিমালয়ের গােমুখ গুহার গঙ্গোত্রী হিমবাহ।
(b) প্রবাহ পথ : সর্বপ্রথম গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে ভাগীরথী নামে একটি সংকীর্ণ জলধারা গিরিখাতের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে দেবপ্রয়াগের নিকট অলকানন্দার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মূলক পিন্ডার, মন্দাকিনি ও ধৌলিগঙ্গার মিলিত প্রবাহই হল অলকানন্দা। দেব প্রয়াগের পর ভাগীরথী ও অলকানন্দার মিলিত প্রবাহ গঙ্গা নামে পরিচিত।
(c) গতিপথ : (i) উচ্চগতি : উৎপত্তি স্থল বা দেবপ্রয়াগ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার উচ্চগতি। উৎস থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার উচ্চগতি হল 280 কিমি।
(ii) মধ্যগতি : হরিদ্বার থেকে বিহারের রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পথ মধ্যগতির অন্তর্গত।
(iii) নিম্নগতি : রাজমহল থেকে মােহানা পর্যন্ত গতিপথ (520 কিমি) হল নিম্নগতি। মুরশিদাবাদের ভগবানগােলায় গঙ্গা দুটি শাখায় ভাগ হয়ে প্রধান শাখা পদ্মা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং অপর শাখাটি প্রথমে ভাগীরথী এবং নবদ্বীপের পর হুগলি নাম নিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এই অংশে অজয়, দামােদর, ময়ুরাক্ষী প্রভৃতি ভাগীরথী ও হুগলির উপনদী।
ভারতের জলবায়ু
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. মৌসুমি বিস্ফোরণ কী?
উত্তর : ভারতে গ্রীষ্মকালের শেষদিকে উত্তর পশ্চিমভাগে এক গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এর ফলে ভারতমহাসাগর থেকে আগত জলীয়বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ু আরবীয় ও বঙ্গোপসাগরীয় দুটি শাখায় বিভক্ত করে ভারতে প্রবেশ করে এবং বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। মৌসুমি বায়ুর আগমনজনিত হঠাৎ বৃষ্টিপাতের ঘটনাকে মৌসুমি বিস্ফোরণ বলে।
2. পশ্চিমী ঝঞা কী?
উত্তর : শীতকালে ভারতে স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত উত্তর পূর্ব মৌসুমি বায়ু জলীয়বাষ্পহীন থাকায় ভারতে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না। এই সময় মাঝে মাঝে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ভুত ঘূর্ণবাত ভারতের উত্তর পশ্চিম অংশ দিয়ে প্রবেশ করে। ফলে উত্তরভারতে ঝড় ঝঞা হয়। এই পশ্চিমী নিম্নচাপ বিশিষ্ট ঘূর্ণবাত উত্তরভারতে শীতের শান্ত আবহাওয়াকে বিঘ্নিত করে বলে একে পশ্চিমী ঝঞ্চা বলে।
3. আবৃষ্টি বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক, কেরালা ও তামিলনাড়ুতে গ্রীষ্মকালে স্থানীয় নিম্নচাপের প্রভাবে যে, বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত ঘটে, তাকে আবৃষ্টি বলে। এই বৃষ্টিপাতের ফলে দক্ষিণ ভারতে আমের ফলন ভালাে হয় বলে এই বৃষ্টিকে আবৃষ্টি বা Mango Shower বলে।
4. কালবৈশাখী কী?
উত্তর : গ্রীষ্মকালে প্রখর সূর্যকিরণে স্থলভাগ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এপ্রিল মে মাসে গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও অসমের স্থলভাগের উয় বাতাস ও সমুদ্র থেকে আগত জলীয়বাষ্পপূর্ণ শীতল বাতাসের সংঘর্ষে ফলে বিকেলে বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড় বৃষ্টি হয়, যা কালবৈশাখী নামে পরিচিত।
5. মৌসুমি বায়ুর বিরতি বা ছেদ বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : মৌসুমি বায়ুর নিষ্ক্রিয় অবস্থায় এই বায়ুর গতিবেগ, গভীরতা, মেঘাচ্ছন্নতা, বৃষ্টিপাত কমে যায়। এই সময় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত অবিরাম না হয়ে সাময়িক বিরতি দেখা যায়। বৃষ্টিহীন এই অবস্থাকে মৌসুমী বায়ুর ছেদ বলে। এই বিরতি 3-10 দিন থাকে।
6. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল কাকে বলে?
উত্তর : জলীয়বাষ্পপূর্ণ আর্দ্রবায়ু পর্বতের প্রতিবাত ঢালে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে যখন পর্বতের বিপরীত ঢালে বা অনুবাত ঢালে এসে পৌঁছায় তখন জলীয়বাষ্পের অভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায়। অনুবাত ঢালে অবস্থিত বৃষ্টিহীন বিস্তীর্ণ অঞ্চলটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল নামে পরিচিত। উদাহরণ—ভারতের শিলং একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. লু কী?
উত্তর : গ্রীষ্মকালে ভারতের উত্তর পশ্চিমে রাজস্থান, গুজরাত, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি স্থানে ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরালে যে উয় ও শুদ্ধ বায়ু পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়, তাকে স্থানীয় ভাষায় ‘লু’ বলে। এটি অত্যন্ত উম্ন বায়ু (40°C – 50°C)।‘লু’-র প্রভাবে মানুষ ও গবাদি পশু মারা যায়।
2. ‘আঁধি’ কাকে বলে?
উত্তর : গ্রীষ্মকালে রাজস্থানের মরুভূমি অঞলে যে প্রবল ধূলিঝড়ের সৃষ্টি হয়, তাকেই স্থানীয় ভাষায়, আঁধি বলা হয়। আঁধির গতিবেগ 50-60 কিমি/ঘন্টা। মেঘের সার ঘটে না বলে এই ঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হয় না। তাই প্রবল ধুলাে ওড়ে। তবে এই ঝড়ের প্রভাবে উয়তা কিছুটা কমে।
3. ‘আশ্বিনের ঝড়’ কাকে বলে?
উত্তর : প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে সামুদ্রিক বায়ুর সংঘর্ষে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরীয় উপকূলের রাজ্যগুলিতে প্রবল ঝড় বৃষ্টি হয়। একে সাইক্লোন বলে। পশ্চিমবঙ্গে এই ঝড় যেহেতু আশ্বিন মানে দেখা যায়, তাই তা আশ্বিনের ঝড় নামে পরিচিত।
4. তামিলনাড়ু (করমণ্ডল) উপকূলে বছরে দুবার বর্ষাকাল হয় কেন?
উত্তর : তামিলনাড়ু উপকূলে মৌসুমি বায়ুর আগমনের সময় জুন মাসে বৃষ্টি হয়, আবার অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে উঃ পূঃ ভারত থেকে প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে ফেরেল সূত্রানুসারে ডানদিকে বেঁকে করমণ্ডল উপকুলে প্রবেশ করে এবং পূর্বঘাটে বাধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
5. ভারতে খরার কারণগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : (i) বিলম্বিত আগমন : দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নির্ধারিত সময়ের পরে ভারতীয় ভূখণ্ডে এলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে খরার সৃষ্টি করে।
(ii) অগ্রিম প্রত্যাবর্তন : দঃ পঃ মৌসুমি বায়ু নির্ধারিত সময়ের আগে ফিরে গেলে বৃষ্টিপাত কম হবার দরুন খরা হয়।
(iii) বৃষ্টিপাতের সাময়িক বিরতি : কোনাে কোনাে বছর বর্ষাকালের মাঝে দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত হয় না, ফলে খরার প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যায়।
(iv) পরিবেশ দূষণ : পরিবেশ দূষিত হলে বায়ুমণ্ডলের গড় উষ্মতা বেড়ে যায় এবং জলীয়বাষ্প ঘনীভূত না হলে বৃষ্টিপাত হয় না। ফলে খরা হয়।
6. ভারতে প্রায়ই বন্যা হয় কেন?
উত্তর : (i) অগ্রিম আগমন : নির্ধারিত সময়ের বহু পূর্বে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বন্যার সৃষ্টি করে।
(ii) বিরামহীন বৃষ্টি : বছরে কোনাে কোনাে সময় বিরামহীন বৃষ্টি বন্যার কারণ হয়।
(iii) বর্ষাকালের অধিক স্থায়ীত্ব : বর্ষাকালের স্থায়ীত্ব বেশি হলে ভারি বর্ষণের ফলে বন্যা দেখা দেয়।
(iv) নিম্নচাপের স্থায়ীত্ব : দীর্ঘক্ষণ নিম্নচাপ অবস্থান করলে ভারী বৃষ্টি বন্যার কারণ।
(v) নদীর গভীরতা হ্রাস : নদীর গভীরতা হ্রাসের ফলে অধিক বৃষ্টিতে দুকূল ছাপিয়ে বন্যা হয়।
7. ভারতে শীতকাল শুল্ক কেন?
উত্তর : (i) উয়তার অবনমন : 22 ডিসেম্বর তারিখে সূর্য দক্ষিণ গােলার্ধে মকরক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় উত্তর গােলার্ধে উয়তার অবনমন ঘটে।
(ii) উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমন : এশিয়ার উত্তরাংশে সাইবেরিয়া অংশ থেকে আগত শুষ্ক ও শীতল মৌসুমি বায়ু স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জলীয়বাষ্পের পরিমান অনেক কম থাকে। এই কারণে শীতকাল বৃষ্টিহীন ও শুষ্ক প্রকৃতির হয়।
৪. মনেক্স (Monex) কী?
উত্তর : Monex হল Monsoon Experiment বা মৌসুমি গবেষণা। বিশ্ব বায়ুমণ্ডল গবেষণা প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে মৌসুমি জলবায়ু গবেষণার যে বিশেষ কার্যক্রম স্থির করা হয়, তাকে Monex বলে।
9. থর মরুভূমির সৃষ্টির কারণ কী?
উত্তর : দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখাটি খাম্বা উপসাগরের ওপর দিয়ে কাথিয়াবাড় হয়ে গুজরাত ও পশ্চিম রাজস্থানে প্রবেশ করলেও মৌসুমি বায়ুকে প্রতিহত করার মতাে কোনাে উচ্চভূমি না থাকায় বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলার ফলে অনাবৃষ্টির কারণে ভারতে পশ্চিমে রাজস্থানের পশ্চিমাংশে থর মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 20 cm এর কম।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর :[প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলােচনা করাে।
উত্তর : ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব অপরিসীম। তাই ভারতকে মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলা হয়। এর প্রভাবগুলি নীচে আলােচনা করা হল।
(a) আর্দ্র পরিবর্তন ও শুষ্ক শীতকাল : ভারতে গ্রীষ্মকালে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌমুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং শীতকাল উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শুষ্ক থাকে।
(b) ঋতু পরিবর্তন : মৌসুমি বায়ুর আগমণ ও প্রত্যাগমন-এর ওপর নির্ভর করে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীত প্রশ্ন চারটি ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয়।
(C) বৃষ্টিপাত : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে 90% বৃষ্টিপাত হয়।
(d) উয়তা : দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমণে গ্রীষ্মকালের শেষে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে উয়তা কিছুটা হ্রাস করে। ও উত্তপূর্ব মৌসুমি বায়ুর ফলে শীতের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
(e) প্রাকৃতিক দুর্যোগ : মৌসুমি বায়ুর অনিয়মিত ও অনিশ্চয়তার জন্য অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির কারণে কোথাও বন্যা আবার কোথাও খরা সৃষ্টি হয়।
(f) ঘূর্ণাবাত সৃষ্টি : শরৎকালে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমণের সময় এবং সমুদ্রবায়ুর সংঘর্ষে বঙ্গোপসাগরে বা আরবসাগরে ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়।
(g) বৃষ্টিপাতের অসমবন্টন : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম উপকূল, উত্তর পূর্ব ভারত, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি স্থানে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে। অপরদিকে রাজস্থানের মরু অঞ্চল ও পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বটালে বৃষ্টিচ্ছায় অল স্থানে বৃষ্টির পরিমাণ কম। তাই মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ভারতের জলবায়ুতে বৃষ্টিপাতে অসমবণ্টন লক্ষ করা যায়।
ভারতের মৃত্তিকা
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. ‘রেগুর’ কী?
উত্তর : ভারতের মধ্য প্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের পশ্চিমাংশ এবং গুজরাত, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু অংশ তথা উপদ্বীপীয় মালভূমির ডেকানট্রাপ অঞ্চলে ব্যাসল্ট শিলা থেকে উদ্ভূত যে কালাে বর্ণের মৃত্তিকা দেখা যায়, তাকে কৃয় মৃত্তিকা বা রেগুর বলে। বিভিন্ন খনিজ সমৃদ্ধ এই মৃত্তিকা খুব উর্বর।
2. ব্যাডল্যান্ড’ কী?
উত্তর : অত্যধিক খাতক্ষয়ের ফলে ভূমিভাগ এবড়ােখেবড়াে হয়ে যায়। এর ফলে ভূমিভাগ কৃষিকাজের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। এই ধরনের কৃষিকাজে অনুপযুক্ত বন্ধুর ভূ-ভাগকে ব্যাডল্যান্ড বলে। মধ্যপ্রদেশের বদভূমি অঞ্চলে ব্যাডল্যান্ডের আধিক্য দেখা যায়।
3. ‘রাঙাইন ক্ষয় কী?
উত্তর : জলনালিকা ও খেয়াই আরও গভীরভাবে ক্ষয় পাবার ফলে তা গভীর খাড়া পাড়যুক্ত খাত তৈরি করে। এটি হল র্যাভাইন ক্ষয়। এর মাধ্যমে মাটি ক্ষয় খুব বেশি পরিমাণে ঘটে।
4, ‘ভর’ কী?
উত্তর : গাঙ্গেয় সমভূমির নিম্ন অঞ্চলে (বিশেষত উত্তর প্রদেশ রাজ্যে পশ্চিমাংশের দোয়াব অঞ্চলে) কলি মিশ্রিত অতিসুক্ষ্ম মৃত্তিকা গঠিত তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি দেখা যায়। যা ‘ভুর” নামে পরিচিত।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ঝুমচাষ মৃত্তিকা ক্ষয়কে কীভাবে তরান্বিত করে?
উত্তর : ভারতের উত্তর-পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলের আদিম সম্প্রদায় ঝুমচাষ প্রথায় কৃষিকাজ করে থাকে। এটি একটি আদিম ও অবৈজ্ঞানিক কৃষি পদ্ধতি। এক্ষেত্রে বনজঙ্গল কেটে, পুড়িয়ে সাফ করে কয়েকবছর পর চাষ করে যখন ওই স্থানের মাটির উর্বরতা কমে যায় তখন ওই স্থানকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে অন্যত্র গিয়ে এই পদ্ধতি চাষ করা শুরু করে। এর ফলে সমস্ত অঞ্চলটি প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে ভূমিক্ষয়ের কবলে পড়ে।
2. সমােন্নতি চাষ কাকে বলে?
উত্তর : সমােন্নতিরেখা বরাবর বাঁধ দিয়ে জলের গতিকে বাধা দিয়ে আটকে দিলে মৃত্তিকা ক্ষয়রােধ করার জন্য কৃষিকাজ করা হয় এবং গাছ লাগানাে হয়। এবং আটকে রাখা জলের সাহায্যে জলসেচও করা হয়। যথােন্নতি রেখা বরাবর এই কৃষিকাজকে বলে সমােন্নতি চাষ।
3. কৃষ্ণ মৃত্তিকা সম্পর্কে লেখাে।
উত্তর : ভারতের উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চলে ব্যাসল্ট শিলাদ্বারা গঠিত টাইটানিয়াম অক্সাইড ও জৈব যৌগ সমৃদ্ধ মৃত্তিকাকে কৃষ্ণ মৃত্তিকা বলে। এই মাটির রং কালাে। কৃয় মৃত্তিকা বা রেগুর তুলা চাষের পক্ষে বিশেষ উপযােগী। পলি ও কাদার ভাগ (50%-80%) বেশি থাকায় গ্রহণ মাঝারি বলে জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি। বিভিন্ন খজিন সমৃদ্ধ যেমন—অ্যালুমিনা, চুন, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রণ অক্সাইড থাকায় মাটি খুব উর্বর।
4. কারেওয়া কী?
উত্তর : বিজ্ঞানীদের মতে, প্রাচীন কোনাে হ্রদ ভরাট হয়ে কাশ্মীর উপত্যকার সৃষ্টি হয়েছে। এই উপত্যকার মধ্য দিয়ে ঝিলাম নদী প্রবাহিত হয়েছে এবং প্রায় সমতল উপত্যকার ধাপযুক্ত ভূমিভাগ বা কারেওয়া কৃষিকাজের জন্য বিখ্যাত।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. মৃত্তিকা সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : ভূমি বা মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ অনুসন্ধান করে বিজ্ঞানসম্মত সমাধান করাই হল মৃত্তিকা ক্ষয় বা ভূমিক্ষয় রােধের যথাযথ পন্থা। নিম্নে আলােচনা করা হলাে।
(a) যান্ত্রিক পদ্ধতি : (i) ঢালু জমিতে বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়ােজনীয়। (ii) সমােন্নতি রেখা ভিত্তিক বাঁধ নির্মাণ দরকার। (iii) উঁচু-নীচু, ভূ-ভাগের সমতলীকরণ প্রয়ােজন।
(b) জৈবিক পদ্ধতি : (i) ঢালু জমিতে তৃণভূমি তৈরী। (ii) মরুভূমি প্রসার রােধে বায়ু প্রবাহের দিকে অরণ্য সৃষ্টি। (iii) শস্যাবর্তন পদ্ধতির ব্যবহার মৃত্তিকা ক্ষয়ের রােধে সাহায্য করে। (iv) পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়ােজন। (v) সামাজিক বণসৃজন এবং বনমহােৎসব পালনের মাধ্যমে মৃত্তিকা রােধের ব্যবস্থা।
(c) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি : (i) স্থানান্তর কৃষি বা ঝুম চাষের বিলােপসাধন অত্যাবশকীয়। (ii) পার্বত্য বা উচ্চভূমি অংশে ধাপ বা সােপান কৃষির প্রচলন। (iii) স্বল্পোন্নত ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়ােগ। (iv) সরকারি উদ্যোগে গবেষণাকেন্দ্র (দেরাদুন, আগ্রা, যােধপুর) স্থাপন। (v) প্রচার মাধ্যম দ্বারা জনসচেতনতার বৃদ্ধি।
ভূ-বিজ্ঞানী বিনেটের মতে সর্বোচ্চ বা জাতীয় স্তরে ভূমি সংরক্ষণের জন্য কৃষিজমির বৈজ্ঞানিক ব্যবহার ও উপযুক্ত ভূমি ব্যবহার বিধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. সামাজিক বনসৃজন বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : কৃষি ও সামাজিক পদ্ধতিতে গাছের চারা রােপণ করে নতুন বনভূমি সৃষ্টি করা হয়, তাকে সামাজিক বনসৃজন বলে। এর ফলে স্থানীয় বন সম্পদের জোগান বজায় রাখা যায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক।
2. কৃষি বনসৃজন কাকে বলে ?
উত্তর : বিজ্ঞানী ফোলে ও বানার্ড-এর মতে, কৃষক তার কৃষিজমি বা পতিত জমিতে ফসল উৎপাদনের সঙ্গে কাঠ, ভেষজ ওষুধ, ফলমূল ইত্যাদি উৎপাদনের জন্য গাছ ও লতা গুল্ম রােপন করে যে বনভূমি গড়ে তােলে, তাকে কৃষি বনসৃজন বলে।
3. সিলভিকালচার কী?
উত্তর : পার্বত্য অঞ্চলে বাণিজ্যিক হারে কাঠের সরবরাহ বর্জ্য রাখার জন্য যখন বিশাল অঞ্চল জুড়ে বনভূমি তৈরি করা হয়। তাকেই সিলভিকালচার বলে।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. যৌথ বন ব্যবস্থাপনা (Joint Forest Management বা JFM) কী ?
উত্তর : বনসৃজন এবং বনভূমির সংরক্ষণের জন্য রাজ্যের বন দফতর ও স্থানীয় জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণকে যৌথ বন ব্যবস্থাপনা বলে। এই প্রকল্প অনুসারে অরণ্যের আদিবাসীরা অরণ্যকে পশুচারণ ও দাবানলের হাত থেকে রক্ষা করেন, তবে বনভূমির জমি স্থানান্তরের অধিকার তাদের নেই। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার আড়াআড়ি গ্রামে প্রথম যৌথ বন ব্যবস্থাপনা রূপায়িত করা হয়।
2. সামাজিক বনসৃজন এবং কৃষি বনসৃজনের পার্থক্যগুলি লেখাে।
উত্তর : সামাজিক বনসৃজন এবং কৃষি বনসৃজনের মধ্যে পার্থক্য –
ভারতের কৃষি
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. শস্যাবর্তন কাকে বলে?
উত্তর : কৃষি ব্যবস্থায় একই জমিতে বছরের বিভিন্ন সময় অথবা বিভিন্ন বছরে ভিন্ন প্রকার কৃষি ফসল উৎপন্ন করে জমির সাধারণ উর্বরতা শক্তি বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়, তাকে শস্যাবর্তন বলে
2. জায়িদ শস্য কী?
উত্তর : শীতের শেষে ও গ্রীষ্মের শুরুতে যে ফসল চাষ করা হয় এবং বর্ষার পূর্বে ফসল কাটা হয়, তাকে জায়িদ শষ্য বলে। যেমন—শশা, তরমুজ ইত্যাদি।
3. বাগিচা কৃষি কী?
উত্তর : পৃথিবীর ক্রান্তীয় ও উপক্ৰান্তীয় অঞ্চলের বিশেষ কতকগুলি স্থানে উপযুক্ত ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা ও জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে ছােটো, বড়াে ও মাঝারি বাগান তৈরি করে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যে কৃষিকার্য করা হয়, তাকে বাগিচা কৃষি বলে। উদাহরণ—চা ও কফি হল বাগিচা ফসল। রপ্তানি বা বাণিজ্যের জন্যই এই প্রকার কৃষিকার্য করা হয়।
4. অর্থকরী ফসল কাকে বলে?
উত্তর : নিজ বা পরিবারের ব্যবহারের জন্য নয়, বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে যে ফসল উৎপাদন করা হয় তা হল অর্থকরী ফসল। যেমন—পাট, আখ, কার্পাস ইত্যাদি।
5. চা-এর শ্রেণিগুলি লেখাে।
উত্তর : চা হল ক্যাফিনযুক্ত মাদক বর্জিত মৃদু উত্তেজক পানীয়। বিভিন্ন ধরনের চাগুলি হল : (i) কালাে সেঁকা চা—ভারতে এটি জনপ্রিয়। (ii) সবুজ চা-চিনে জনপ্রিয়, (iii) ইস্টক চা-রাশিয়ায় জনপ্রিয়। (iv) ওলং চা—তাইওয়ানে জনপ্রিয়।
6, টেন’ কী?
উত্তর : প্রথমবার আখ কাটার পর আখের যে চারা জন্মায়, তাকে বলা হয় রেটুন। আখ ভারতে রেটুন হিসাবে প্রধানত উৎপন্ন হয়।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় কৃষি তথা গম চাযের উন্নতির কারণগুলি লেখাে।
উত্তর : এই অঞ্চলে কৃষি তথা গম চাষের উন্নতির কারণগুলি লেখাে-
(i) বিস্তীর্ণ সমভূমি ও উর্বর মৃত্তিকা : সিন্ধুনদের পাঁচটি উপনদী বিধৌত বিস্তীর্ণ সমভূমি এবং উর্বর পলিমাটি কৃষির উন্নতির অন্যতম কারণ।
(ii) ভাকরা-নাঙ্গল প্রকল্প : এই প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে 14.6 লক্ষ হেক্টর। জমিতে জলসেচ সম্ভবপর হয়েছে।
(iii) উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার : উচ্চ ফলনশীল গমবীজ, যেমন- সােনারা-64, কল্যাণ সােনা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
(iv) আধুনিক কৃষি পদ্ধতি : আধুনিক কৃষি পদ্ধতির সাথে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার করা হয়। সুলভ শ্রমিকের অভাব হয় না।
(v) চাহিদা : মানুষের খাদ্য হিসাবে গমের ব্যবহার হওয়ায় বিপুল চাহিদা এই অঞ্চলে।
2. ভারতীয় কৃষির সমস্যাগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : ভারতের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় কৃষি পদ্ধতি বর্তমানে প্রাচীন ও অনুন্নত। ভারতীয় কৃষি সমস্যাগুলি হল—(i) যথাসময়ে জলের অভাব, জমির উর্বরতা শক্তির অভাবে হেক্টর প্রতি উৎপাদন কম। (ii) ভারতের কৃষি জোতগুলি আয়তনে ক্ষুদ্র ও অখণ্ডিত কৃষি-জোত। (iii) প্রাকৃতিক দুর্যোগ। (iv) কৃষিতে প্রাচীন পদ্ধতির প্রচলন। (v) যথেচ্ছ বনভূমি ধ্বংসের ফলে ভূমিক্ষয় অধিক। (vi) সীমিত জলসেচ। (vii) সর্বোপরি ভারতীয় কৃষকদের শিক্ষার অভাব থাকায় বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করা সম্ভবপর হচ্ছে না।
3. দক্ষিণ ভারতে কফি চাষের উন্নতির কারণ কী?
উত্তর : দক্ষিণ ভারতের কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চলে কফি চাষ উন্নতিলাভ করেছে। কারণ—(i) দক্ষিণ ভারতের গড় উয়তা (18°-28°C) কফি চাষের আদর্শ। (ii) 140-200 cm বৃষ্টি হয় যা কফি চাশের ক্ষেত্রে উপযােগী। (iii) দক্ষিণ ভারতের মাটি লােহা, পটাশ, নাইট্রোজেন ও হিউমাস সমৃদ্ধ হওয়ায় কফি চাষ ভালাে হয়। (iv) কফি চাষের অনুকুল ভূ-প্রকৃতি দক্ষিণ ভারতে বিদ্যমান। (v) তুষারপাত না হওয়ায় দক্ষিণ ভারত কফি চাষের আদর্শ অঞ্চল।
4. সবুজ বিপ্লবের সুফলগুলি কী কী?
উত্তর : কৃষি বিজ্ঞানী নরম্যান বােরলােগ ও ভারতীয় কৃষিবিজ্ঞানীদের সহায়তায় কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি সবুজ বিপ্লব নামে পরিচিত। সবুজ বিপ্লবের ফলে (i) শস্য উৎপাদন বিশেষত গমের উৎপাদনে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। (ii) শস্যাবর্তন পদ্ধতির প্রয়ােগে শুরু হয়। (iii) নতুন করে ভারতীয় কৃষির ভিত্তি স্থাপন হয়। (iv) উন্নতসার, কীটনাশক প্রয়ােগে হেক্টর প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। (v) ভূমি সংস্কার ও পরিকাঠামােগত উন্নতি সাধন হয়।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর :[প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. চা-চাযের অনুকূল পরিবেশ বর্ণনা করাে।
উত্তর : চাষের অনুকূল পরিবেশ নিয়ে আলােচনা করা হল-
A. প্রাকৃতিক অবস্থা :
(i) উয়তা : গড়ে 21°c-27°C উয়তা ও রৌদ্রকরােজ্জ্বল আবহাওয়ার প্রয়ােজন।
(ii) বৃষ্টিপাত : প্রতিমাসের নিয়মিত বৃষ্টিপাত উপযােগী। বার্ষিক 200cm-250cm বৃষ্টিপাত প্রয়ােজন।
(iii) মৃত্তিকা : লৌহমিশ্রিত উর্বর দোঁয়াশ মাটি এবং অধিক জৈবপদার্থ সমৃদ্ধ পার্বত্য মৃত্তিকা বিশেষ উপযােগী।
(iv) ভূমির প্রকৃতি : চা গাছের গােড়ায় জল দাঁড়ানাে ক্ষতিকর, তাই চা বাগিচার জন্য ঢালু জমির প্রয়ােজন।
(v) তুষারপাত : কিছুটা তুষারপাত সহ্য করতে পারলেও অধিক তুষারপাত চা গাছ সহ্য করতে পারে না।
(vi) ছায়া-প্রদানকারী বৃক্ষ : প্রখর সূর্যকিরণ চা গাছের জন্য ক্ষতিকারক। তাই চা বাগিচার মাঝে মাঝে ছায়া প্রদানকারী গাছ লাগানাে দরকার।
B. অ-প্রাকৃতিক বা অর্থনৈতিক পরিবেশ :
(i) শ্রমিক : চা বাগিচা থেকে পাতা ও কুঁড়ি সংগ্রহ, ডাল ছাঁটা প্রভৃতি কাজের জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়ােজন। মহিলা শ্রমিক বেশি দরকার।
(ii) মূলধন : সমস্ত কিছু ব্যবস্থাপনার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে মূলধন আবশ্যক।
(iii) পরিবহণ : অন্তর্দেশীয় বাজার ও রপ্তানিকারী বন্দরগুলির সাথে যােগাযােগের জন্য উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা দরকার।
(iv) চাহিদা : সর্বোপরি মৃদু উত্তেজক পানীয় রূপে অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চায়ের ব্যাপক চাহিদা বা বাজারে চা চাষকে প্রভাবিত করে।
2. ইক্ষু চাষের অনুকূল অবস্থাগুলি বর্ণনা করাে।
উত্তর : ইক্ষু চাষের অনুকূল অবস্থা নিয়ে আলােচনা করা হলাে-
A. প্রাকৃতিক অবস্থা :
(i) উয়তা : ইক্ষু উয়ুমণ্ডলের ফসল হওয়ায়, ইক্ষু চাষে গড় মাসিক 21°c-27°c উয়তা প্রয়ােজন হয়।
(ii) বৃষ্টিপাত : ইক্ষু উৎপাদনের জন্য বার্ষিক 125-200 সেমি বৃষ্টিপাতের প্রয়ােজন হয়।
(iii) মৃত্তিকা : ইক্ষু চাষের জন্য চুন ও লবণমিশ্রিত উর্বর দোঁয়াশ মাটি আদর্শ। এই কারণে সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে ইক্ষুর চাষ ভালাে হয়।
(iv) ভূমির প্রকৃতি : সামান্য ঢালযুক্ত সমতলভুমিই ইক্ষু চাষের পক্ষে ভালাে।
(v) তুহিন ও কুয়াশা : তুহিন ও কুয়াশা দুইই ইক্ষু চাষের পক্ষে ক্ষতিকর। ভারত ক্রান্তীয় মণ্ডলের অন্তর্গত হওয়ায় এখানকার সমভূমি অঞ্চলে তুষারপাত হয়
B. অ-প্রাকৃতিক বা অর্থনৈতিক পরিবেশ :
(i) শ্রমিক : ইক্ষু চারারােপণ, পরিচর্যা, ফসল কাটার জন্য পর্যাপ্ত সুলভ শ্রমিকের প্রয়ােজন হয়। এই কারণে ঘন বসতিপূর্ণ অল ইক্ষু চাষের সহায়ক পরিবেশ।
(ii) মূলধন : ইক্ষু চাষের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে মূলধনের প্রয়ােজন।
(iii) পরিবহণ : ইক্ষু উৎপাদক অঞ্চলে সুনদ্র পরিবহণ ব্যবস্থার প্রয়ােজন কারণ ইক্ষু কাটার 24 ঘণ্টার মধ্যে তা থেকে রস নিষ্কাশ না করলে রসের পরিমাণ হ্রাস পায়। এই কারণেই ইক্ষু কলগুলি উৎপাদন ক্ষেত্রের নিকটেই গড়ে ওঠে।
(iv) বাজার বা চাহিদা : ইক্ষু গুদামজাত করে রাখা যায় না। ভাটার একদিন পর থেকেই এর রসের পরিমাণ কমতে থাকে। এই কারণে ইক্ষুর জন্য পর্যাপ্ত নির্ভরযােগ্য বাজার থাকার প্রয়ােজন।
ভারতের শিল্প
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. অনুসারী শিল্প কাকে বলে?
উত্তর : বৃহদায়তন শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যকে কাচামাল রূপে ব্যবহার করে যে-সব ক্ষুদ্র আয়তন শিল্প গড়ে ওঠে তাদের অনুসারী বা Downstream Industry বলে। উদাহরণ : পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে উৎপাদিত প্লাস্টিক বা PVC কে ব্যবহার করে মগ, বালতি, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
2. পূর্ত শিল্প কাকে বলে? অথবা, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, তামা, দস্তা প্রভৃতি ধাতব পদার্থ এবং রবার, প্লাস্টিক, কাঠ প্রভৃতি পদার্থকে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে যে শিল্পে নানা ভারি ও হালকা যন্ত্রপাতি প্রস্তুত করা হয় তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলে। পূর্ত শিল্প হল যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ নির্মাণ শিল্প।।
3. সহায়ক (Ancillary Industry) শিল্প বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : যে সমস্ত ছােটো ছােটো শিল্প অন্য কোনাে বড়াে শিল্পকে তাদের প্রয়ােজনীয় কাঁচামাল হিসাবে নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের জোগান দেয়, সেই সমস্ত ছােটো শিল্পকে সহায়ক শিল্প বলে। উদাহরণ—মােটর গাড়ি নির্মাণ শিল্পের সহায়ক শিল্প হল কাচ, কাঠ, ব্যাটারি, টায়ার, টিউব শিল্প ইত্যাদি।
4. দুর্গাপুরকে কেন ‘ভারতের রূঢ় বলা হয় ?
উত্তর : বুঢ় যেমন পশ্চিম জার্মানির বিখ্যাত লৌহ ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র তেমনি দুর্গাপুর পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের বিখ্যাত লৌহ-ইস্পাতকেন্দ্র। রূঢ় শিল্পাঞ্চলের ওয়েস্টফেলিয়া খনির বিটুমিনাস কয়লা, আয়ারল্যান্ডের লৌহ আকরিক ব্যবহৃত হয়। তেমন দুর্গাপুরে রানিগঞ্জের কয়লা, নােয়ামুন্ডি ও বাদাম পাহাড়ের লৌহ আকরিক ব্যবহৃত হয়। উক্ত সাদৃশ্যের কারণে দুর্গাপুরকে ভারতের রূঢ় বলা হয়।
5. পণ্যসূচক কাকে বলে?
উত্তর : বিশুদ্ধ ও অবিশুদ্ধ কাঁচামাল দিয়ে পণ্যসুচক নির্ধারিত হয়। শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং উৎপাদিত দ্রব্যের অনুপাত হল পণ্যসূচক। এর মান যদি 1 হয় তাহলে বুঝতে হবে বিশুদ্ধ শ্রেণির কাঁচামাল ব্যবহূত হয়েছে। এবং 1 এর বেশি হলে অবিশুদ্ধ শ্রেণির কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়।
6. আউট সাের্সিং বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : মানের উন্নতি, দক্ষতা বৃদ্ধি, খরচ কম, দ্রুত কাজ সম্পন্ন ইত্যাদি কারণে কোনাে একটি সংস্থা বাইরের অন্য কোনাে সংস্থার মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেয় তা হল আউট সাের্সিং (Outsourcing) । এবং এই কাজ যখন অন্য দেশ থেকে করিয়ে নেওয়া হয় তখন তা ‘অফ সাের্সিং (off-Sourcing)।
7. মােটর গাড়ি বা অটোমাবাইল শিল্প কাকে বলে?
উত্তর : বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ, যেমন—টায়ার, টিউব, প্লাস্টিক, গ্লাস, ফোম ইলেকট্রিক তার ইত্যাদি সংযােজনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন নির্মাণ শিল্পকে অটোমােবাইল শিল্প বলে। বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য দ্রব্য সযােজনের মাধ্যমে মােটর গাড়ি নির্মিত হয় বলে মােটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পকে সংযােজনভিত্তিক শিল্প বলে।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. পেট্রোরসায়ন শিল্পকে উদীয়মান শিল্প বলা হয় কেন?
উত্তর : কারণ—(i) তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কালে 1966 সালে এই শিল্পের সূত্রপাত হয়। সর্বসাকুল্যে এর বয়স 43 বছর হলেও এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল। (ii) এই শিল্পের অগ্রগতি অতি দ্রুত হচ্ছে এবং শিল্পগুচ্ছের আকারে গড়ে উঠেছে। (iii) পেট্রোরসায়ন শিল্পের ওপর নির্ভর করে ভারতে বহু বৃহদায়তন শিল্পের বিকাশ হয়েছে। (iv) এই শিল্পের কাঁচামাল অন্যান্য শিল্পের ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সহযােগী শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।
2. TISCO কী?
উত্তর : 1907 খ্রিস্টাব্দের 25 আগস্ট ভারতের জামশেদপুরে জামশেদজি টাটার উদ্যোগে TISCO বা Tata Iron and Steel Company স্থাপিত হয়। ঝাড়খণ্ডের সিংভূম জেলার জামশেদপুরে সুবর্ণরেখা ও খরকাই নদীর সংগমস্থলে এই বেসরকারি কারখানাটি স্থাপিত হয়। এটি লৌহ ও কয়লাখনির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।
দশম শ্রেণী ভূগোল | ভারত : ভূমিকা, প্রাকৃতিক পরিবেশ – রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. পশ্চিমভারতে পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের কারণগুলি হল—
(i) খনিজ তেলের প্রাচুর্য : বােম্বে হাই, আলিয়াবেত, বাসিন, কাম্বে প্রভৃতি অঞ্চল। থেকে খনিজতেল পাওয়া যায়। যা এই শিল্পের প্রধান কাচামাল হিসাবে ব্যবহৃত।
(ii) খনিজতেল শােধনাগারের অবস্থান : গুজরাতের জামনগর ও কয়ালি এবং মহারাষ্ট্রের ট্রম্বেতে খনিজ তৈল শােধনাগারের অবস্থান।
(iii) বন্দরের সুবিধা : মুম্বাই, কান্ডালা, নবসেবা, সুরাত, পােরবন্দর দিয়ে অপরিশােধিত খনিজ তেল, পলিমার ও যন্ত্রপাতি আমদানি ও উৎপাদিত শিল্পদ্রব্য রপ্তানির সুবিধা রয়েছে।
(iv) পর্যাপ্ত জল : নর্মদা, তাপ্তী, মাহী, সবরমতী নদী থেকে পর্যাপ্ত জলের সুবিধা।
(v) বাজার : মুম্বাই, পুনে, আমেদাবাদ, ভাদোদরা প্রভৃতি অঞ্চলে অসংখ্য অনুসারী শিল্প গড়ে ওঠায় উৎপাদিত পণ্য যেমন বস্ত্র, ওষুধ, প্লাস্টিক, সার প্রভৃতির সারা দেশব্যাপী বৃহৎ বাজার সৃষ্টি হয়েছে।
(vi) পরিবহণ : রেলপথ-পশ্চিম, মধ্য, কোঙ্কন, দক্ষিণ-মধ্য, জাতীয় সড়কপথ (NH- 3, 4, 6, 7, 8, 9, 15, 17) দ্বারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও (vii) মফতলাল, রিলায়েন্স শিল্প গােষ্ঠী ও বহুজাতিক সংস্থার মূলধন। বিনিয়ােগ, (viii) সুলভ দক্ষ শ্রমিক, দক্ষ পরিচালন ব্যবস্থা, (ix) দুই রাজ্য সরকারের অনুকূল প্রগতিশীল শিল্পনীতি পশ্চিমাঞ্চলের পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের উন্নতিতে অনুঘটকের কাজ করছে।
2. ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে দ্রুত উন্নতি লাভের কারণগুলি ব্যাখ্যা করাে
উত্তর : ভারত তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে দ্রুত উন্নতি লাভের কারণগুলি হল—
(i) মানব সম্পদ : মানুষের উচ্চমেধা জ্ঞান তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের প্রধান সম্পদ। সারা ভারত জুড়ে উন্নত মেধা সম্পন্ন মানব সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে।
(ii) প্রশিক্ষণ কেন্দ্র : সারা ভারত জুড়ে বহু উচ্চমানের তথ্য প্রযুক্তির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন-(i) IT রয়েছে 16টি স্থানে (রুকি, নিউ দিল্লি, কানপুর, খল্লাপুর)। এছাড়াও অনেক উচ্চমানের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন-(i) Indian Institute of Science-Bengaluru (ii) Indian Institute of Science Education and Research-Kolkata, Pune প্রভৃতি।
(iii) উন্নত পরিকাঠামাে : উন্নত যাতায়াত ও যােগাযােগ ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ পরিসেবা, নিরপত্তা, 24×7 কর্মের পরিবেশ প্রভৃতি বিষয়ে উন্নত পরিকাঠামােগত সুযােগ করে দিচ্ছে।
(iv) বিপুল চাহিদা ও বাজার :কৃষি, শিল্প, পরিবহণ-যােগাযােগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, সরকারি, বেসরকারি পরিসেবা প্রদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বহুল ব্যবহার ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলিতে বিশাল বাজার তৈরি করেছে।
(v) মূলধনের প্রাচুর্য : উদারীকরণ ও বিশ্বায়নের মধ্য দিয়ে ভারতের এই উদীয়মান শিল্পটিতে দেশীয় ও বহুজাতিক সংস্থাগুলি বিপুল অর্থ বিনিয়ােগ করায় শিল্পটি বিকশিত হচ্ছে।
ভারতের কয়েকটি হাব হল—(i) বেঙ্গালুরু, (i) চেন্নাই, (ii) হায়দরাবাদ, (iv) কলকাতা, (v) দিল্লি-গুরগাঁও-নয়ডা (vi) পুনে (vii) ত্রিবান্দ্রম এবং (viii) তিরুবন্তপুরম।
ভারতের জনসংখ্যা
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. জনবিস্ফোরণ কাকে বলে?
উত্তর : কোনাে অঞ্চলে জন্মহার ও প্রবাসনের তুলনায় মৃত্যুহার হ্রাস ও অভিবাসন বৃদ্ধি পেলে মােট জনসংখ্যার পরিমাণের ব্যাপক বৃদ্ধিকে জন-বিস্ফোরণ বলে। কোনাে দেশে বার্ষিক জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার 2% এর বেশি বৃদ্ধি পেলে সেই দেশে জনবিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
2. শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি কাকে বলে?
উত্তর : কোনাে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনাে দেশে জন্মহার ও মৃত্যুহার প্রায় সমান হলে তাকে শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা Zero Popolation Growth বলে। জীবিত শিশু ও অভিবাসন জনসংখ্যা এবং মৃত ও প্রবাসন জনসংখ্যা প্রায় সমান হলে শুন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে।
3. মহানগর বা মেগাসিটি কাকে বলে ?
উত্তর : যখন কোনাে জনপদ বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তারলাভ করে এবং অত্যাধুনিক পরিসেবা প্রদান করে, তখন তাকে মহানগর বা মেগাসিটি বলে। 2011 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতে মেগাসিটির সংখ্যা ৪টি। উদাহরণ—মুম্বাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, আহমেদবাদ, বৃহত্তর কলকাতা, বৃহত্তর চেন্নাই, বৃহত্তর সুরাত প্রভৃতি।
4. কোন রাজ্যে জনঘনত্ব সবথেকে কম এবং কেন?
উত্তর : ভারতের অরুণাচল প্রদেশের জনঘনত্ব সবথেকে কম। প্রতি বর্গকিমিতে 13 জন বাস করে। কারণ—(i) দুর্গম পার্বত্য ভূ-ভাগ, (ii) প্রতিকুল জলবায়ু, (iii) গভীর বনভূমি, (iv) কৃষি, শিল্প নগরায়ণের অভাব, (v) খনিজ ও শক্তি সম্পদের অভাব এই অতি জনবিরলতার কারণ।
5. সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের সর্বাধিক ও সর্বনিম্ন জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাজ্য দুটির নাম লেখাে।
উত্তর : সর্বাধিক জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাজ্য—ভারতের সর্বাধিক জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাজ্য হল উত্তর প্রদেশ। মােট জনসংখ্যা 16.62 কোটি।
সর্বনিম্ন জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাজ্য—ভারতের সর্বনিম্ন জনসংখ্যা বিশিষ্ট্য রাজ্য হল সিকিম। মােট জনসংখ্যা—5,40,493 জন।
6. পরিব্রাজন বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : যখন কোনাে দেশের বা কোনাে অঞ্চলের জনসাধারণের এক অংশ কোনাে বিশেষ পরিব্রাজন বলে। পরিব্রাজনে আকর্ষণজনিত কারণগুলি হল—(i) উন্নততর শিক্ষালাভ ও গবেষণা, (ii) সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, (iii) মনােরম আবহাওয়া ও পরিবেশ, (iv) নতুন সম্পদ বা নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কার ইত্যাদি। এবং Push Factor গুলাে হল-(i) রাজনৈতিক অস্থিরতা, (ii) কর্মসংস্থানের অভাব, (iii) যুদ্ধবিগ্রহ, দেশভাগ (iv) সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে অস্থিরতা, (i) জনসংখ্যা বৃদ্ধি, (ii) উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা করার সুযােগের অভাব ইত্যাদি বিষয়ের আকর্ষণে অথবা বিকর্ষণজনিত কারণে অন্যত্র গমন করে থাকে।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : (i) বৃদ্ধির হার : ভারতের উচ্চ জন্মহার ও নিম্নমৃত্যুহার জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ।
(ii) বিবাহ : বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, বিধবা বিবাহ, সর্বজনীন বিবাহ জনসংখ্যা বাড়ায়।
(iii) শিক্ষা : স্বল্প শিক্ষা, অশিক্ষা, কুসংস্কার, নারীশিক্ষার অভাব জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে।
(iv) অনুপ্রবেশ : অনুপ্রবেশ ও উদ্বাস্তু সমস্যা জনসংখ্যা বাড়ায়।
(v) সামাজিক মর্যাদা : নারীদের স্বল্প সামাজিক মর্যাদা জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ।
এছাড়াও (i) যৌথ পরিবার প্রথা, (ii) পুত্রসন্তানের আশঙ্কা এবং (ii) কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি জনসংখ্যা বাড়ায়।
2. ভারতের অধিক জন্মহারের কারণগুলি কী কী?
উত্তর : (i) আধুনিক চিকিৎসা ব্যবহার উন্নতি ভারতের মৃত্যুহারকে অনেকাংশে কমিয়েছে। (ii) দুর্ভিক্ষ, খরা, বন্যা রােধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা, ত্রাণ মৃত্যুহার কমিয়েছে। (iii) পুষ্টিকর সুষম খাদ্যের সরবরাহ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। (iv) আধুনিক যােগাযােগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা মৃত্যুহার কমিয়েছে। (v) মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, সন্তান প্রতিপালনের আর্থিক স্বচ্ছলতা, সুশিক্ষা মৃত্যুহার কমিয়ে দিয়েছে।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. ভারতের অসম জনসংখ্যা বণ্টনের কারণগুলি আলােচনা করাে :
উত্তর : ভারতের মােট জনসংখ্যা 121.02 কোটি (2011 খ্রীঃ) হলেও সর্বত্র জনসংখ্যা সমান হারে বন্টিত হয়নি। ভারতে অসম জনসংখ্যা বন্টনের কারণগুলি হল নিম্নরূপ-
প্রাকৃতিক কারণ :
(a) ভূ-প্রকৃতি : উচ্চ পার্বত্য অঞলে খাড়া ঢাল, বাসযােগ্যতার অভাব, পরিবহন যাতায়াত ব্যবস্থার অসুবিধার দরুণ জনজাতি তুলনামূলক কম। মালভূমি অঞ্চলে খনিজ ও শিল্পের সমৃদ্ধির জন্য জনবসতি মাঝারি। এবং পৃথিবীর প্রায় 90% মানুষ সমভূমি অঞ্চলে বাস করে সমস্ত সুযােগ সুবিধা পাওয়া যায় বলে।
(b) জলবায়ু : উমরু অঞ্চলে জলবায়ু চরমভাবাপন্ন, উয়, পার্বত্য অঞ্চলে হিমশীতল জলবায়ু ও বৃষ্টিবহুল পরিবেশের কারণে জনবসতি বিরল। অন্যদিকে উপকূলীয় এবং সমভূমি অঞলে সমভাবাপন্ন মনােরম জলায়ুর কারণে জনঘনত্ব অধিক।
(c) নদ-নদী : নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় ভারতের অধিকাংশ শহারল নদী তীরবর্তী অণ্ডলে গড়ে উঠেছে।
(d) মৃত্তিকা : মৃত্তিকার গুণাগুণের ওপর কৃষির সাফল্য নির্ভর করে। উর্বর মৃত্তিকাযুক্ত অণ্ডলে ঘনবসতি দেখা যায়। অপরদিকে অনুর্বর মৃত্তিকায় বিরল জনবসতি দেখা যায়।
(e) বনভূমি : বনভূমির প্রকৃত ও বনভূমির বন্টনের উপর জনসংখ্যার তারতম্য নির্ভরশীল।
II অর্থনৈতিক কারণ :
(a) কৃষি : ভারত কৃষি নির্ভর দেশ। তাই কৃষির সুবিধাযুক্ত অঞ্চলে জনঘনত্ব অর্ধেক।
(b) শিল্প : শিল্পাঞ্চলে কর্ম সংস্থানের সুযােগ থাকায় জনঘনত্ব বেশি হয়।
(c) পরিবহণ ও যােগাযােগ : ভারতের উন্নত পরিবহণ ও যােগাযােগ ব্যবস্থা সম্পন্ন স্থানে জনঘনত্ব বেশী। অপরদিকে এই স্বসুবিধা না থাকায় সেখানে বিরল জনবসতি।
(d) ধর্ম : ধর্মীয় আচার আচরণকে কেন্দ্র করে ধর্মতীর্থস্থলগুলিকে জনসংখ্যা বেশি।
(e) শিক্ষা ও সংস্কৃতি : শিক্ষা দীক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্পকলা সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলােতে জনঘনত্ব অনেক বেশি। সেখানে এই সকল সুযােগ কম সেখানে জনঘনত্ব অনেক কম।
III রাজনৈতিক কারণ :ভারত বিভাজন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পর্বে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে অনুপ্রবেশের কারণে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ, অসম রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলিতে অধিক কর্মসংস্থানের জন্য শহুরে জনসংখ্যার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তুলনামূলক ভাবে গ্রামাঞ্চলে কম।
উপরিউক্ত কারণগুলির জন্য ভারতে অসম জনসংখ্যা বন্টন লক্ষ করা যায়।
ভারতের পরিবহণ ও যােগাযােগ ব্যবস্থা
1. ইন্টারনেট বা আন্তর্জাল কী?
উত্তর : সমগ্র পৃথিবীর সমস্ত কম্পিউটারকে মডেমের সাহায্যে টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে একসূত্রে যােগ করার নামই হল ইন্টারনেট বা অন্তর্জাল। 1963 খ্রিস্টাব্দে ইন্টারনেট হল সমগ্র বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার নেটওয়ার্কের ইন্টারনেট বা অন্তর্জাল সূচনা : হয় মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের উদ্যোগে।
2. ই-মেল (E-mail) কী?
উত্তর : ই-মেল-এর অর্থ হল Electronic mail বা বৈদ্যুতিক বার্তা। কম্পিউটার ইন্টারনেট ব্যবস্থায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ পদ্ধতিতে অতি অল্প সময়ে পৃথিবীর যে কোনাে প্রান্তে যেখানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা আছে, সেখানে ডিজিটাল তথ্য পাঠানাে যায়।
3. ব্যাক ওয়াটার্স ৰা পশ্চাদভূমি বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : ভারতের মালাবার উপকূলে অসংখ্য কয়াল বা উপহদ আছে, এগুলিকে ব্যাকওয়াটার্স বলে। এগুলি জলপথরূপে ব্যবহৃত হয়। আলেপ্পি থেকে কোচিন পর্যন্ত ভেম্বনাদ কয়ালের মধ্য দিয়ে স্টিমারে যাতায়াত করা যায়। তাছাড়া তিরুবন্তপুরম থেকে উত্তরে কেপুর পর্যন্ত জলপথে যাওয়া যায়।
4. শিপিংলেন কাকে বলে?
উত্তর : মহাসাগরের বিস্তৃতি হলেও তারতম্যের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করে জাহাজ চলাচল করে। জাহাজ সমুদ্রে যে নির্দিষ্ট পথে চলে তাকে শিপিংলেন বলে।
5. শিপিং লাইন কী?
উত্তর : জলপথ পণ্য ও যাত্রী পরিবহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সমুদ্রপথ পরিবহণে কোম্পানির জাহাজ সমুদ্রে চলাচল করে, সেই কোম্পানিকে শিপিং লাইন বলে।
6, পুনঃ রপ্তানিবন্দর কাকে বলে?
উত্তর : যে বন্দরের মাধ্যমে পণ্যদ্রব্য, আমদানি, আমদানিকৃত পণ্য সঞ্চয় অথভা ব্যবসা করার পর পুনরায় রপ্তানি করা হয়, তাকে বলা হয় পুনঃরপ্তানিবন্দর। যেমন- কেরলের কোলাম বন্দর।
7. বুলেট ট্রেন কী ?
উত্তর : বুলেট ট্রেন হল প্রচণ্ড গতিসম্পন্ন ট্রেন। জাপানে টোকিও-ওসাকার শহরের মধ্যে 1964 সালে প্রথম এই ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ভারতের 2014-15 অথবর্যে রেল বাজেটে মুম্বাই থেকে আমেদাবাদের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালানাের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর : (প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ‘জলপথ হল উন্নয়নের রূপরেখা’-ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : সমুদ্র, হ্রদ, নদী, খাল প্রভৃতি দিয়ে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণকে জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থা বলে। পথ নির্মামে খরচ কম (কখনাে খরচ লাগে না), পরিহণ পদ্ধতি সহজ ও সরল ও কমব্যয়বহুল, একসাথে প্রচুর পণ্য বহন করা যায় এবং শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটে বলে জলপথ হল উন্নয়নের রূপরেখা।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. পরিবহণ (Transport) এবং যােগাযােগ (Communication) ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য লেখাে।
উত্তর : পরিবহণ এবং যােগাযােগ ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য –
ভিত্তি ভাবর তরাই
1. প্রকৃতি পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে কেবল পণ্যসামগ্রী ও যাত্রী এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত হয়। যােগাযােগ ব্যবস্থার মাধ্যমে কেবল সংবাদ ও তথ্যের আদান-প্রদান হয়।
2. মাধ্যম এর মাধ্যমগুলি হল—সড়কপথ,রেলপথ, জলপথ, আকাশপথ,রজ্জুপথ, পাইপলাইন, পাতাল রেল। এর মাধ্যমগুলি হল ইন্টারনেট, ই-মেল মােবাইল ফোন, টেলিগ্রাফ ইত্যাদি।
3. সময় পরিবহণ ব্যবস্থায় যাত্রী বা পণ্যদ্রব্য এক স্থান থেকে অপরস্থানে পৌঁছাতে অনেক বেশি সময় লাগে। যােগাযােগ ব্যবস্থায় তথ্য বা সংবাদ পৃথিবীর যে কোন স্থানে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারে।
4. ব্যয় পরিবহণ ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়বহুল।
উপগ্রহ চিত্র ও ভূ-বৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ]:[প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. ভারতীয় সর্বেক্ষণ বিভাগ স্থাপিত হয় যে সালে—
[A] 1667 সালে [B] 1767 সালে [C] 1867 সালে [D] 1967 সালে
উত্তরঃ [B] 1767 সালে
2. ভারতের একটি ভূসমলয় উপগ্রহ হল—
[A] NOAA [B] GMS [C]INSAT [D] METEOSAT
উত্তরঃ [C] INSAT
3, পৃথিবীর প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ হল ।
[A] ল্যান্ডস্যাট-1 [B] আর্যভট্ট [C] ইনস্যাট [D] স্পুটনিক
উত্তরঃ [D] স্পুটনিক
4. ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র আঁকা হয়—
[A] জরিপ থেকে [B] বিমানচিত্র থেকে [C] উপগ্রহ চিত্র থেকে। [D] কোনােটিই না
উত্তরঃ [A] জরিপ থেকে
5. নাসা প্রেরিত প্রথম উপগ্রহের নাম হল-
[A] NOAA [B] TRIOS-1 [C] IRS-1A [D] LISS-I
উত্তরঃ [B] TRIOS-1
6. ভারতের মহাশূন্য থেকে ছবি তােলার কাজ শুরু হয় যে সালে—
[A] 1950 [B] 1960 [C] 1970 [D] 1990
উত্তরঃ [D] 1990
7. ভূসমলয় উপগ্রহগুলি ভূপৃষ্ঠ থেকে কত কিলােমিটার ওপরের অবস্থান করছে?
[A] 400 কিমি [B] 4000 কিমি [C] 600 কিমি [D] 6000 কিমি।
উত্তরঃ [B] 4000 কিমি
8. ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের আন্তর্জাতিক স্কেল হল—
[A] ১00000 [B] 1 – 100000 [C] 1 – 200000 [D] 1 – 1000000
উত্তরঃ [C] 1 – 200000
9. স্যাটেলাইট শব্দের ফরাসি অর্থ হল—
[A] দ্বাররক্ষী [B] উপগ্রহ [C] নজরদারি [D] প্রহরী
উত্তরঃ [D] প্রহরী
10. ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ
[A] আর্যভট্ট [B] স্পুটনিক [C] লুনা-II [D] ভস্তক
উত্তরঃ [A] আর্যভট্ট
11. ভারতের প্রথম মহাকাশচারী
[A] কল্পনা চাওলা [B] রাকেশ শর্মা। [C] ভ্যালেনন্তিলা [D] ইউরি গ্যাগারিন
উত্তরঃ [B] রাকেশ শর্মা
12. SPOT উপগ্রহটি উৎক্ষেপন করা হয় যে সালে
[A] 1966 [B] 1976 [C] 1986 [D] 1996
উত্তরঃ [C] 1986
13. অবলােহিত রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকে পাওয়া যায়
[A] উপগ্রহ চিত্রের [B] চাঁদের [C] বিমানপথের [D] ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের
উত্তরঃ [D] ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
নিম্নলিখিত বাক্যগুলি শুদ্ধ হলে পাশে ‘শ’ এবং অশুদ্ধ হলে পাশে ‘অ’ লেখাে :
1. এক্স রশ্মি থেকে দূর সংবেদন সম্ভব নয়। উত্তর : শু
2. লাল রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে স্বাভাবিক উদ্ভিদের মানচিত্র তৈরি করা হয় উত্তর : শু
3. LANDSAT উপগ্রহ থেকে ওজোনস্তরের ঘনত্ব সম্পর্কে জানা যায়। উত্তর : অ
4. গামা রশ্মিকে দূর সংবেদনের প্রধান রশ্মি হিসেবে ধরা হয়। উত্তর : অ
5. ভারতের উপগ্রহ চিত্র শুধুমাত্র হায়দরাবাদ-এর দূর সংবেদন সংস্থা থেকেই প্রকাশ করা হয়। উত্তর : শু
শূন্যস্থানে সঠিক শব্দ বসিয়ে বাক্যটি সম্পূর্ণ করাে
1. 10m×10®®M হল _ রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য। উত্তর : অবলােহিত
2. LANDSAT উপগ্রহ একই জায়গার ছবি – দিন পরপর পাঠায়। উত্তর : 18
3. বস্তুর সংস্পর্শে না এসে দূর থেকে কোনাে বস্তুর ছবি তােলাকে বলে উত্তর : দূরসংবেদন।
4. উপগ্রহ চিত্রের ক্ষুদ্রতম একককে বলে । উত্তর : পিক্সেল
5. স্পেকট্রাম বরাবর তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিমাপের যে একক ব্যবহার করা হয় তা হল উত্তর : মাইক্রোমিটার
6. মানচিত্রে তিন ধরনের স্কেল ব্যবহৃত হয়। যথা – ভগ্নাংশসূচক ও লৈখিক স্কেল। উত্তর : বিবৃতিমূলক।
7, 198৪ সালে ভারতে। উপগ্রহ নামে উৎক্ষেপন শুরু হয়। উত্তর : IRS
8. ভারতের দুর সংবেদনের পিতা বলা হয় উত্তর : সতীশধরণ।
একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাও :
1. ভারতের টোপাে মানচিত্রে কতগুলি গ্রিড রয়েছে?
উত্তর : 135টি।
2. সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার শাখা দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : কলকাতার উড স্ট্রিটে।
3. টোগােশিটের কোন দিকে স্কেল উল্লেখ করা থাকে?
উত্তর : উত্তর-পূর্বদিকে।
4. টোপাে মানচিত্রে জাতীয় সড়কের চিহ্ন কী?
উত্তর : NHT
5. ডিগ্রি শিটের মেট্রিক স্কেল কত?
উত্তর : 1 সেমিতে 25 কিমি বা 1:250000।
6. ভারতের প্রথম উপগ্রহের নাম কী?
উত্তর : আর্যভট্ট।
7. ভূসমলয় উপগ্রহের কক্ষপথটিকে কী বলে?
উত্তর : পার্কিং অরবিট।
৪. রিমােট সেসিং শব্দের আভিধানিক অর্থ কী?
উত্তর : দূরসংবেদন।
9. সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : দেরাদুনে।
10. পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার সঠিক অবস্থান নির্ণয়ের জন্য ভারতে কোন উপগ্রহ ব্যবহার করা হয়?
উত্তর : INSAT উপগ্রহ।
11. নিরক্ষীয় তল বরাবর যে সব উপগ্রহ পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘােরে তাকে কী বলা হয়?
উত্তর : ভূসমলয় উপগ্রহ।
12. ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের অপর নাম কী?
উত্তর : টোপাে মানচিত্র।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. দূর সংবেদন (Remote Sensing) কাকে বলে?
উত্তর : বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে দূরের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সুন্দর নিখুঁত ধারণা গড়ে তােলার পদ্ধতিকে দূরসংবেদন বা Remote Sensing বলে। এই পদ্ধতির দুটি প্রধান উপাদান হল-(i) বিমান চিত্র (Aerial Photo) এবং (ii) উপগ্রহ চিত্র (Satellite Imagery)।
2. বিভেদন বা Resolution কাকে বলে ?
উত্তর : সংবেদক (Sensor)-এর সাহায্যে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে গৃহীত কৃত্রিম উপগ্রহ চিত্রের বিভিন্ন বস্তু, ক্ষেত্র, উপাদানের পৃথক করণের ক্ষমতাকে বিভেদন বা Resolution বলে।
3. উপগ্রহ চিত্রে ব্যান্ড’ (Bond) বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : পৃথিবীর কোনাে বস্তু বা পদার্থ থেকে বিচ্ছুরিত অথবা প্রতিফলিত তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণগুলি উপগ্রহ সংবেদনে স্থাপিত ডিভাইসের যে অংশে লিপিবদ্ধ হয় তাকে ‘ব্যান্ড (Band) বলে।
4. কৃত্রিম উপগ্রহ কাকেবলে?
উত্তর : কৃত্রিম উপগ্রহ হল তথ্য প্রযুক্তি সমৃদ্ধ মানুষ দ্বারা নির্মিত এক অত্যাধুনিক যন্ত্র যা একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৃথিবীকে বারবার প্রদক্ষিণ করে।
5. দূরসংবেদনে ‘সেনসর’ (Sensor) কাকে বলে?
উত্তর : সেনসিং’ কথাটির অর্থ—কোনাে বস্তুকে পর্যবেক্ষণ করা। সুতরাং সেনসর হল একটি যন্ত্র যা মহাকাশ থেকে ভূ-পৃষ্ঠের কোনাে নির্দিষ্ট লক্ষ বস্তুর তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ গ্রহণ করে, তাকে চিহ্নিত করতে পারে। র্যাডার, ল্যাডার, অপটিক্যাল স্ক্যানার এর উদাহরণ।
6. Pixel কাকে বলে?
উত্তর : উপগ্রহ প্রতিচ্ছবির ক্ষুদ্রতম অঙ্গানু বা উপাদানকেই পিক্সেল বলা হয়। যার নির্দিষ্ট value, address থাকে। এই address আবার দুই প্রকার। যথা-(i) Latitude/ Longitude এবং (i) Row/Column। এক একটি পিক্সেল ভূ-পৃষ্ঠের নির্দিষ্ট অংশকে নির্দেশ করে।
7. দূরসংবেদন ব্যবস্থায় (True Colour Composition (TCC) বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : উপগ্রহ প্রতিচ্ছবিতে ভূমির ব্যবহার দেখাবার জন্য সাধারণত তিনটি রঙ যথা—লাল, সবুজ, নীল (RGB) বা এদের সংমিশ্রণ করে দেখানাে হয়। তাই সাধারণত ও ব্যান্ডের উপগ্রহের মাধ্যমে কোনাে প্রতিচ্ছবি TCC প্রতিস্থাপনের জন্য Red, Green, Blue Channel ব্যবহৃত হয়। ফলে লাল বস্তুকে লাল, নীল বস্তুকে নীল সবুজ বস্তুকে সবুজ ব্যান্ডের রঙ এ দেখানাে হয়, একে TCC বলে।
8. দূরসংবেদনে False Colour Composition (Fcc) বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : উপগ্রহ প্রতিচ্ছবিকে নিখুতভাবে বােঝাবার জন্য যখন Image-processing এর সময় লক্ষবস্তুর প্রকৃতি রং-এর পরিবর্তে ছদ্মরং ব্যবহার করা হলে তাকে False Colour Compoisition (FCC) বলে।
9. GIS কী?
উত্তর : GIS কথাটির পুরাে কথা হল—Geographical Information System। যা একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। যার সাহায্যে ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন পরিসংখ্যানকে ধারণ, সংরক্ষণ, পরীক্ষা পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়, ব্যাখ্যা, সর্বোপরি মানচিত্রের আকারে প্রকাশ করা হয়।
10. Nadir Point কী ?
উত্তর : কৃত্রিম উপগ্রহের সােজাসুজি নীচে ভূ-পৃষ্ঠের অবস্থিত বিন্দুকে নাদির বিন্দু বলে। এটি ভূ-পৃষ্ঠস্থ পথের মধ্যে অবস্থিত হয়।
11. বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ বা EMR (Electro Magnetic Radiation) কী?
উত্তর : বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ হল শক্তির একটি রূপ। এতে একটি সর্পিল বিদ্যুৎ তরঙ্গ থাকে এবং সর্পিল চৌম্বকীয় তরঙ্গ থাকে। অতিবেগুনী রশ্মি, মাইক্রোওয়েভ, এক্সরশ্মি, রেডিওতরঙ্গ ও দৃশ্যমান আলাে প্রত্যেকটি এক একটি বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. দূরসংবেদন ব্যবস্থার সুবিধাগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : (i) সংগৃহীত তথ্য বাস্তবের সাথে সঠিক। (ii) বিস্তীর্ণ অঞ্চলের তথ্য সংগ্রহ। (iii) দুর্গম অঞ্চলের তথ্য সহজেই পাওয়া যায়। (iv) বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে সহজে তথ্য সংগৃহীত হয়। (v) কম্পিউটারের মাধ্যমে সহজে ও দ্রুত তথ্য বিশ্লেষণ করা যায়। (vi) Digital আকারে তথ্য সংগৃহীত হয়। (vii) প্রতিনিয়ত এই তথ্য পাওয়া যায় বলে তথ্যের পরিবর্তন কি ঘটলাে তা ধরে ফেলা যায়।
2. উপগ্রহ চিত্রের বিশেষ ব্যবহারগুলি কী কী?
উত্তর : উপগ্রহ চিত্র এবং তথ্যাদি বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন—(i) আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা যায়। (ii) ক্রান্তীয় সরল বা দুর্বল ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান, গতিপ্রকৃতি, ক্ষমতা জানা যায়। (iii) কৃষিজ ফসলের বন্টন পরিমাপ করা যায়। (iv) ফসলের গুণমান এবং (v) অন্যান্য গ্রহদের সম্পর্কে জানা যায়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. আর্গ বা কুম কী?
উত্তর : বায়ুর অপসারণ কার্যের ফলে বালি দিয়ে ঢাকা ছােটো ছােটো যে ভূমির সৃষ্টি হয় তাকে আর্গ বলে। সাহারা মরুভূমিতে এটি আর্গ এবং তুর্কিস্থানে এটি কুম নামে পরিচিত।
2. গাসি কী?
উত্তর : বায়ুপ্রবাহের সমান্তরালে দীর্ঘ ও সংকীর্ণ শৈলশিরার মতাে বালির পাহাড়গুলিকে সিফ বালিয়াড়ি বলে। এই সিফ বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী করিডােরগুলি সাহারায় ‘গাসি’ নামে পরিচিত। এই করিডােরগুলি যাতায়াতের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
3. সিফ বালিয়াড়ি কাকে বলে?
উত্তর : বায়ুপ্রবাহের গতিপথের সঙ্গে সমান্তরাল গঠিত দীর্ঘাকৃতি বালিয়াড়িকে সিফ বা অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বলে। এদের আকৃতি তরােয়ালের মতাে বলে ভূবিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড এর নামকরণ করেন সিফ বালিয়াড়ি। এগলির উচ্চতা কয়েকশাে মিটার ও দৈর্ঘ্য কয়েক কিমি থেকে কয়েকশাে কিমি হয়। এর শীর্ষদেশ তীক্ষ্ণরু হয়। এরা একে অপরের সমান্তরালে গড়ে ওঠে।
4. মরুখাত বা ব্লো-আউট কাকে বলে ?
উত্তর : মরু অঞ্চলে প্রবল বায়ুপ্রবাহের দ্বারা কোনাে একটি অঞ্চল থেকে হাজার হাজার টন বালুকারাশি অপসৃত হলে সেখানে অবনতভূমি বা খাতের সৃষ্টি হয়। এই প্রকার খাত বা অবনতভূমি ব্লোআউট বলে। মিশরের কাতারা হল পৃথিবীর বৃহত্তম মরুখাত।
5. রেগ কী?
উত্তর : বিভিন্ন আকৃতির প্রস্তর খণ্ড দিয়ে গঠিত ও পাথুরে মরুভূমিকে আলজিরিয়াতে রেগ বলা হয়। লিবিয়া ও মিশরে এটি সেরীয় এবং অস্ট্রেলিয়ায় গিবার বলা হয়।
6. দুটি করে ক্রান্তীয় ও নাতিশীতােয় মরুভূমির নাম লেখাে।
উত্তর : ক্রান্তীয় মরুভূমি ও উয় মরুভূমি—(i) আফ্রিকার উত্তর সাহারা মরুভূমি। (ii) উত্তর আমেরিকা সােনেরান মরুভূমি।
নাতিশীতােয় মরুভূমি- (i) দক্ষিণ আমেরিকার প্যাটাগােনিয়া মরুভূমি। (ii) এশিয়ার গােবি ও তাকলামাকান মরুভূমি।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর :[প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজ সর্বাধিক কেন?
উত্তর : মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজ সর্বাধিক হবার কারণগুলি হল—
(i) যান্ত্রিক আবহবিকার : মরু অঞ্চলে সর্বাধিক পরিমাণে যান্ত্রিক আবহবিকার সংঘটিত হওয়ার প্রচুর বালুকারাশি উৎপন্ন হয়।
(ii) স্বল্প বৃষ্টিপাত : স্বল্প বৃষ্টিপাতের কারণে উদ্ভিদহীন পরিবেশে বায়ু বাধাহীনভাবে প্রবল গতিতে প্রবাহিত হতে পারে।
(iii) উদ্ভিজ্জ আবরণের অভাব : গাছপালা না থাকায় উন্মুক্ত ভূ-পৃষ্ঠে বায়ু সহজেই নানা পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে।
(iv) শিথিল ভূপৃষ্ঠ : ভূ-পৃষ্ঠের শিথিল উপরিভাগ বায়ুর কার্যের সহায়ক।
2. টীকা লেখাে : ‘লােয়েশ।
উত্তর : লােয়েশ : মরুভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্জলের হলুদ ও ধূসর বর্ণের ক্যালশিয়াম কার্বনেট (CaCO3), কোয়ার্টজ, ফেলপার ডলােমাইট সমৃদ্ধ শিথিল সূক্ষ্ম (20-25 মাইক্রোমিটার) পলিকনা হলাে লােয়েশ। বায়ু দ্বারা বাহিত হয়ে এই পলিকণা অন্যত্র সঞ্চিত হলে তাকে লােয়েশ ভূমি বলে। মধ্য এশিয়ার গােবি মরুভূমি থেকে বায়ুকারাশি উড়ে চিনের হােয়াংহাে নদী অববাহিকায় সঞ্চিত হয়ে লােয়েশ সমভূমি গড়ে উঠেছে।
3. টীকা লেখাে : ‘বার্খান’।
উত্তর : বার্খান : বায়ুর গতিপথের সঙ্গে লম্বভাবে অবস্থিত অপ্রতিসম, অর্ধচন্দ্রাকৃতি উত্তল অংশ বিশিষ্ট বালিয়াড়িকে বার্খান বলে। এর সামনের দিক উত্তল এবং পিছনের দিক অবতল হয়। বাখানের দুই প্রান্তে শিং-এর মতাে দুটি শিরা দেখা যায়। এর উচ্চতা 10-30 মিটার এবং প্রস্থ 40-70 মিটার। উদাহরণ : সাহারা মরুভূমিতে অসংখ্য বার্খান দেখা যায়।
4. মরুসম্প্রসারণের কারণ এবং এর প্রতিরােধের উপায়গুলি কী কী?
উত্তর : মরু সম্প্রসারণের কারণগুলি হল—(i) বিশ্ব উষ্যায়ন : এটি মরুভূমিকরণের প্রধান কারণ। (ii) খরা : মরু প্রায় অঞ্চলে দীর্ঘ দিন খরা চললে তা মরুগ্রাসে পড়ে। (iii) পশুচারণ : এর ফলে মাটি আলগা হয়ে যায়। (iv) বৃক্ষচ্ছেদন : গাছপালা কেটে ফেললে মরুকরণ দ্রুত হয়। (v) অবৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষাবাদ।
মরুকরণ প্রতিরােধের উপায়গুলি হল : (i) চেক ড্যাম : বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য চেক ড্যাম নির্মাণ দরকার। (ii) গ্রিন ওয়াল নির্মাণ : গাছের বেড়া লাগাতে হবে। (iii) ঘাস রােপণ : অগভীর বালিস্তরে মুনা জাতীয় ঘাস লাগাতে হবে। (iv) পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ দরকার। (v) উন্নত ফসলের চাষ : জমির লবণতা কমাতে বিভিন্ন প্রকার ফসলের চাষ করতে হবে।
5. বার্খান এবং সিফ বালিয়াড়ির মধ্যে পার্থক্যগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : বার্খান এবং সিফ বালিয়াড়ির মধ্যে পার্থক্যগুলি-
বিষয় বার্খান সিফ বালিয়াড়ি
(i) অর্থ বাখান শব্দের অর্থ বালির পাহাড়। ফরাসি শব্দ ‘বিউট’ এর অর্থ ‘টিবি’।
(ii) শব্দগত উৎপত্তি বায়ুর গতিপথের সাথে আড়াআড়ি মেসার ক্ষুদ্র সংস্করণ বিউট।
(iii) অবস্থান পার্শ্বদেশ মালভূমির মত খাড়া। ততটা খাঢ়া পার্শ্বদেশ নয়।
(iv) আকৃতি লােকালয় গড়ে ওঠে। লােকালয় গড়ে ওঠে না।
6. মেসা এবং বিউট-এর মধ্যে পার্থক্যগুলি লেখাে।
উত্তর : মেসা এবং বিউট-এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল-
বিষয় মেসা বিউট
(i) সংজ্ঞা স্পেনীয় শব্দ ‘Mesa’-র অর্থ হল ‘টেবিল। ফরাসি শব্দ ‘বিউট’ এর অর্থ ‘টিবি’।
(ii) আকৃতি মেসা আকৃতিতে বৃহৎ। মেসার ক্ষুদ্র সংস্করণ বিউট।
(iii) ঢাল পার্শ্বদেশ মালভূমির মত খাড়া। ততটা খাঢ়া পার্শ্বদেশ নয়।
(iv) বসতি লােকালয় গড়ে ওঠে। লােকালয় গড়ে ওঠে না।
রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি হল নিম্নরূপ-
(i) অপবাহন সৃষ্ট গর্ত বা বেসিন : প্রবল বায়ুপ্রবাহে বালিস্তর অপসারিত হয়ে কোনাে কোনাে স্থানে গর্ত বা অবনমিত অঞ্চল সৃষ্টি করলে তাকে বলা হয় অপবাহন সৃষ্ট গর্ত। ভারতে এটি ধান্দ নামে পরিচিত। আমেরিকার মন্টানা থেকে টেক্সাস পর্যন্ত এরূপ অনেক অপবাহন গর্ত দেখতে পাওয়া যায়।
(ii) জুগ্যান : মরু অঞ্চলে কঠিন ও কোমল শিলা অনুভূমিক ভাবে অবস্থান করলে কঠিন শিলার দারন বা ফাটল বরাবর বায়ুক্ষয় করে নরম শিলা ক্ষয় করতে থাকে। ফলে কঠিন শিলায় চ্যাপ্টা মাথা বিশিষ্ট যে ভূমিরূপ গঠন করে তাকে জুগ্যান বলা হয়। উদাহরণ : কালাহারি মরুভূমিতে দেখা যায়।
(iii) ইয়াদাং :মর অলে কঠিন ও কোমল শিলা পাশাপাশি উল্লম্বভাবে অবস্থান করলে বৈষম্যমূলক ক্ষয়ের ফলে কঠিন কোমল শিলা শিলায় প্রাচীর ও কোমলশিলায় খাত সৃষ্টি করে। একে ইয়ার্দাং বলে। উদাহরণ : সাহারা, গােবি ও সােনেরান মরুভূমিতে দেখা যায়।
(iv) ভেন্টিফ্যাক্ট ও (v) ড্রেইকান্টার : মরুভূমি অঞ্চলে অনেক সময় একদিকে বায়ু প্রবাহের ফলে অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় শিলার একদিক ক্ষয় পেয়ে মসৃণ হলে তা ব্রাজিল নাটের ন্যায় দেখতে হয়ে থাকে। একে ভেন্টি ফ্যাক্ট বলে। অপরদিকে বিভিন্ন দিকে বায়ু প্রবাহের ফলে শিলার দুই বা তিন দিক মসৃণ হয়ে যে ভুমিরুপ গঠন করে তাকে ড্রেইকান্টার বলে। কালাহারি মরুভূমিতে ভেন্টিফ্যাক্ট ও সাহারায় ড্রেইকান্টার দেখতে পাওয়া যায়।
(vi) ইনসেলবার্জ : অনেক সময় মরুভূমি অঞ্জলে স্থানে স্থানে দণ্ডায়মান উচ্চ পাহাড়গুলি বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অনুচ্চ ক্ষয়ীভূত টিলার ন্যায় আকার ধারণ করে। এদের ঢাল কম বেশি হয় অথচ এদের উচ্চতা খুব কম ও গােলাকার দেখতে হয়, এদের বলা হয় ইনসেলবার্জ। উদাহরণ : কালাহারি মরুভূমিতে ইনসেলবার্জ দেখা যায়।
2. বায়ু এবং জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত খুব কম হলেও আবহবিকার বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে ভূমিরূপের পরিবর্তন হয়। নীচে ভুমিরুপগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করা হলাে-
(i) ওয়াদি : মরুভূমির শুষ্ক নদীখাত হল ওয়াদি। ওয়াদির মধ্যে দিয়ে স্থায়ী নদী ইলের প্রবাহিত হয় না। ‘ওয়াদি’ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘শুষ্ক উপত্যকা। থর মরুভূমিতে একে ‘না’ বলা হয়।
(ii) পেডিমেন্ট : মরুভূমি মধ্যস্থিত পর্বতের পাদদেশে বায়ু প্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে একপ্রকার প্রায় সমতল ভূমির সৃষ্টি হয়, একে বলে পেডিমেন্ট। এর ঢাল 1.5°7° পর্যন্ত হয়। উদাহরণ : আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির মধ্যস্থিত আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির মধ্যস্থিত উত্তর পশ্চিম প্রান্তে পেডিমেন্ট লক্ষ করা যায়।
(iii) বাজাদা : মরু অঞ্চলের পর্বতের পাদদেশে বায়ু ও জলধারার মিলিত কাজের ফলে যে বালুময় সমতল ভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে বাজাদা বলে। বাজাদা সূক্ষ্ম পলি ও বালি দ্বারা গঠিত। বাজাদার তলদেশে থাকে পেডিমেন্টের আবৃত অংশ। বাজাদা মূলত বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত হয়। বাজাদার ঢাল কম, প্রায় 4°।
(iv) প্লায়া : মরুভূমির পাহাড় ঘেরা অবনমিত তালগুলিতে জল জমে যে হ্রদ তৈরি করে তাকে প্লায়া বলে। এই হ্রদগুলির লবণাক্ত ও কর্মস্তর দ্বারা বেষ্টিত। এটি দক্ষিণ আমেরিকায় ‘স্যালিনা’, আরব অঞ্চলে ‘সবখা’ বা ‘শট’ নামে পরিচিত। উদাহরণ : আরাবল্লী পর্বতে অবস্থিত। সম্বর’ হ্রদ একটি প্লায়া হ্রদ।
(v) পলল ব্যাজনী : মরু ও মরুপ্রায় অঞলে উচ্চভূমির পাদদেশে নুড়ি, বালি ও পলি গঠিত ত্রিকোণাকার ভূমি হল পলল ব্যজনী।
বায়ুমণ্ডল
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ]:[প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. উত্তর গােলার্ধে বায়ুপ্রবাহের দিকে পেছন করে দাঁড়ালে ডানদিকের থেকে বাঁদিকের বায়তে কম চাপ থাকে। একে বলে-
[A] ফেরেলের সূত্র [B] কোরিওলিস বল [C] বাইস ব্যালটসূত্র [D] কোনােটিই সঠিক নয়।
উত্তরঃ [C] বাইস ব্যালটসূত্র
2. কোরিওলিস শক্তির প্রভাবে বায়ুর –
[A] দিক বিক্ষেপ হয়। [B] গতিবেগের পরিবর্তন হয় [C] চাপের পরিবর্তন হয় [D] কোনােটিই হয় না
উত্তরঃ [A] দিক বিক্ষেপ হয়
3. ‘লু’বাতাস প্রবাহিত হয় যে ঋতুতে
[A] বর্ষাকালে [B] শীতকালে [c] বসন্তকালে [D] গ্রীষ্মকালে
উত্তরঃ [D] গ্রীষ্মকালে
4. ‘লু’ একটি
[A] স্থানীয় বায়ু [B] অনিয়মিত বায়ু [C] নিয়মিত বায়ু [D] সাময়িক বায়ু
উত্তরঃ [A] স্থানীয় বায়ু
5. উত্তর-পূর্ব আয়নবায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায়
[A] 10 কিমি [B] 15 কিমি [C] 16 কিমি [D] 40 কিমি
উত্তরঃ [C] 16 কিমি
6. দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায়
[A] 12 কিমি [B] 22 কিমি [C] 32 কিমি [D] 42 কিমি।
উত্তরঃ [B] 22 কিমি
7. দিনেরবেলা উম্ন ও হালকা বায়ু পর্বতের ঢাল বেয়ে ওপরের দিকে উঠলে তাকে বলে—
[A] ‘লু বায়ু। [B] ক্যাটাবেটিক বায়ু [C] অ্যানাবেটিক বায়ু [D] হ্যারিকেন বায়ু
উত্তর : অ্যানাবেটিক বায়ু
8. বৃষ্টিপাত পরিমাপের একক হল—
[A] মিটার-ফুট [B] সেমি বা ইঞি [C] গ্রাম [D] কিলােগ্রাম
উত্তরঃ [B] সেমি বা ইঞি
9. মেঘ থেকে ভূপৃষ্ঠের জলকণা ও বরফকণার পতনকে বলে—
[A] তুষারপাত [B] শিলাবৃষ্টি [C] বৃষ্টিপাত [D] অধঃক্ষেপণ
উত্তরঃ [D] অধঃক্ষেপণ
10. বৃষ্টিপাত পরিমাপ করার যন্ত্রের নাম—
[A] রেনগেজ বা বৃষ্টিমাপক যন্ত্র [B] ব্যারােমিটার [C] হাইগ্রোমিটার [D] থার্মোমিটার
উত্তরঃ [A] রেনগেজ বা বৃষ্টিমাপক যন্ত্
11. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত শহরটি হল—
[A] কালিম্পং [B] চেন্নাই [C] শিলং [D] দন্ডকারণ্য
উত্তরঃ [C] শিলং
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. কীভাবে বায়ু প্রবাহের নামকরণ করা হয়?
উত্তর : বায়ু যেদিক থেকে আসে সেই দিক অনুসারে বায়ু প্রবাহের নামকরণ করা হয়।
2. হ্যারিকেন কী?
উত্তর : পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ক্রান্তীয় ঘূর্ণর্বাত।
3. আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ প্রান্তে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতকে কী বলে?
উত্তর : টর্নেডাে।
4. বায়ুর আপেক্ষিক আদ্রর্তা 100% হলে সেই বায়ুকে কী বলে?
উত্তর : পরিপৃক্ত বায়ু।
5. নিরক্ষীয় অঞলে কী জাতীয় বৃষ্টি হয়?
উত্তর : পরিচলন বৃষ্টি।
6. কোন মৌসুমি বাতাসের দ্বারা বৃষ্টি হয় না?
উত্তর : শীতকালীন মৌসুমি বাতাসের দ্বারা বৃষ্টি হয় না।
7. বৃষ্টিমাপক যন্ত্রের নাম কী?
উত্তর : বৃষ্টিমাপক যন্ত্রের নাম রেনগজ বা বৃষ্টিমাপক যন্ত্র।
৪. বায়ুতে ভাসমান জলীয়বাষ্প যখন শীতল ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে জলকণায় পরিণত হয়, তাকে কী বলে?
উত্তর : শিশির।
9. কোন বায়ু স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর ব্যাপক সংস্করণ ?
উত্তর : মৌসুমি বায়ু।
10. লু’ বাতাস কোন্ সময় প্রবাহিত হয় ?
উত্তর : ‘লু’ বাতাস গ্রীষ্মকালে প্রবাহিত হয়।
11. একটি স্থানীয় বায়ুর নাম করাে।
উত্তর : ‘লু।
12. বায়ুর আদ্রর্তা কোন যন্ত্রের সাহায্যে নিরূপণ করা হয়?
উত্তর : শুষ্ক ও আর্দ্র কুন্ডযুক্ত হাইগ্রোমিটারের সাহায্যে।
13. সিসিলিতে প্রবাহিত এক ধরনের উন্ন স্থানীয় বায়ু কী নামে পরিচিত?
উত্তর : সিরােক্কো।
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. ‘অ্যারােসল’ কী?
উত্তর : অ্যারােসেল : ‘অ্যারাে’ শব্দের অর্থ বাতাস, ‘সল’ শব্দের অর্থ ভাসমান ধূলিকণা। বায়ুতে ভাসমান সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কঠিন উপাদানকে (ধূলিকণা, লবণকণা, কয়লা গুঁড়াে, কাঠের গুঁড়াে প্রভৃতি) বলা হয় অ্যারােসল।
2. বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : ধূলিকণার গুরুত্বের কারণগুলি হল—(i) ভাসমান ধূলিকণাকে কেন্দ্র করে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয় এবং তার ফলে মেঘ, কুয়াশা, তুহিন, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির সৃষ্টি হয়। (i) বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা সরাসরি সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত ও বিচ্ছুরিত হয়ে বর্ণচ্ছটার সৃষ্টি করে। (iii) বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার আধিক্য বায়ুমণ্ডলকে অস্বচ্ছ করে। তােলে অর্থাৎ দৃষ্টি স্বচ্ছতা কমায় এবং পৃথিবীর গড় উত্তাপ বৃদ্ধি করে
3. Lapse rate’ বা ‘উয়তা হ্রাসের হার’ বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : সাধারণভাবে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উয়তা হ্রাস পায়। বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরে অর্থাৎ ট্রপােস্ফিয়ার স্তরে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ট্রপােপজ পর্যন্ত উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উয়তা হ্রাস পেতে থাকে। সাধারণত প্রতি 1000 মিটার উচ্চতায় 6:45°C (6.5°C) হারে উষ্মতা হ্রাস পেতে থাকে। এইভাবে উয়তা হ্রাস পাওয়ার বায়ুর স্বাভাবিক উম্লতা হ্রাস হার বলে।
4. ট্রপােপজ কী?
উত্তর : টুপােপজ কথাটির আক্ষরিক অর্থ ‘স্তন্ধ যে স্তর’, অর্থাৎ ট্রপােস্ফিয়ার ও স্ট্রাটোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী 2-3 কিমি বিস্তৃত অঞলে বায়ুপ্রবাহ ও উয়তার পরিবর্তন তেমন হয় না তাই একে ট্রলােপজ বলে। এখানে বায়ুর গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় –58°C থেকে –60°c।
5. অ্যাপলটন স্তর কাকে বলে?
উত্তর : ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় 300 কিমি ওপরে আয়নােস্ফিয়ারের একটি স্তরকে অ্যাপলটন স্তর বলে। এই স্তরে প্রতিফলিত হয়ে ভূ-পৃষ্ঠে উৎপন্ন হ্রস্ব তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের বেতার তরঙ্গ ভূ-পৃষ্ঠে আবার ফিরে আসে বলে ভূ-পৃষ্ঠে দূরবর্তী এবং অতি দূরবর্তী অঞ্জলগুলি মধ্যে বেতার যােগাযােগ সম্ভব।
6. ফেরেলসূত্রটি কী?
উত্তর : পৃথিবীর আবর্তনজনিত বলের প্রভাবে বায়ু সরাসরি উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে বায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। বায়ু প্রবাহের দিক সংক্রান্ত এই নিয়মটি বিজ্ঞানী উইলিয়াম ফেরেল আবিষ্কার করেন। তার নামানুসারে এটি ‘ফেরেল সূত্র নামে পরিচিত।
7. বাইস ব্যালস সূত্র কী?
উত্তর : বায়ুচাপের অবস্থানের সঙ্গে বায়ুপ্রবাহের সম্পর্কে সম্বন্ধে 1857 খ্রিস্টাব্দে ডাচ আবহবিদ বাইস ব্যালট একটি সূত্র উদ্ভাবন করেন। সূত্রটি হল উত্তর গােলার্ধে বায়ুর গতির দিকে পিছন ফিরে দাঁড়ালে ডানদিকের তুলনায় বামদিকের বায়ু চাপ কম অনুভূত হয় এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকের তুলনায় ডানদিকে বায়ু চাপ কম অনুভূত হয়। এই সূত্রটি বাইসব্যালট সূত্র নামে পরিচিত।
৪. কোরিওলিস শক্তি বা বল কী?
উত্তর : পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে বায়ুপ্রবাহের ওপর যে শক্তি প্রযুক্ত হয় তাকে কোরিওলিস বল বলে। 1835 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিজ্ঞানী ড. De. Coriolis এই শক্তি প্রথম আবিষ্কার করেন।
9. ‘গর্জনশীল চল্লিশা’ কী?
উত্তর : দক্ষিণ গােলার্ধে স্থলভাগের তুলনায় জলভাগ বেশি থাকায় পশ্চিমাবায়ু বাধাহীনভাবে প্রবলবেগে প্রবাহিত হয়। 40° দক্ষিণ অক্ষরেখা বরাবর পশ্চিম থেকে পূর্বে এই প্রবল পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহকে ‘গর্জনশীল চল্লিশা’ বলে।
10. প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে?
উত্তর : হিমমণ্ডল বা নাতিশীতােষ মণ্ডলের কোনাে স্থানে অধিক শীতলতার জন্য প্রবল উচ্চচাপের সৃষ্টি হলে তখন ওই উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চল থেকে শুষ্ক ও শীতল বায়ু কুণ্ডলী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। একে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে।
11. রসবি তরঙ্গ কী?
উত্তর : ঊর্ধ্ব ট্রপােস্ফিয়ারে বায়ুচাপের অবক্ৰমজনিত শক্তি ও কোরিওলিস শক্তির পরিমাণ সমান এবং তারা পরস্পরের বিপরীতে ক্রিয়া করে। ফলে উর্ধ বায়ুতে সমচাপ রেখার সঙ্গে সমান্তরালভাবে জিওট্রোফিক বায়ু প্রবাহিত হয়। C. G. Rossby- 1930 এর দশকে গাণিতিক পদ্ধতিতে এই ধরনের তরঙ্গায়িত বায়ুপ্রবাহের উপস্থিতি প্রমাণ করেছিলেন। তাই এই তরঙ্গায়িত প্রবাহকে ‘রসবি তরঙ্গা’ বলা। হয়।
12. হ্যাডলী সেল কী?
উত্তর : নিরক্ষীয় অঞ্চলে নিম্নচাপের দরুণ উর্ধ্বগামী বায়ু পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে ওই বায় ওপরে উঠে শীতল হয়ে উত্তর ও দক্ষিণে ছিটকে যায় এবং তা ক্রমশ সংকুচিত ও ভারী হয়ে কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি অঞ্চলে নেমে আসে, বায়ুর এই চক্রাকার আবর্তনকে হ্যাডলী কক্ষ বলা হয়।
13. সৌর ধ্রুবক (Solar Constant) কাকে বলে?
উত্তর : সূর্য থেকে পৃথিবী ক্রমাগত ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে সূর্যের তাপীয় ফল লাভ করে চলেছে। তবে সূর্য থেকে পৃথিবী প্রতিদিনি ও প্রতিবছর প্রায় কেই পরিমাণ সৌরতাপীয় ফল লাভ করে। একেই সৌর ধ্রুবক বলা হয়।
14. ITCZ কী?
উত্তর : নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 5 থেকে 10° অক্ষরেখার মধ্যে যে নিম্নচাপদ্রোণী আছে সেখানে উত্তর পূর্ব আয়নবায়ু এবং দক্ষিণপূর্ব আয়নবায়ু পরস্পর এসে মিলিত হয়। তাই এই মিলন অঞ্চলকে অন্তক্রান্তীয় অভিসৃতি অঞ্চল বা Inter Tropical Convergence Zone (ITCZ) বলে। এই অঞ্চলে বায়ুচাপীয় ঢাল প্রায় না থাকায়। অনুভূমিক বায়ুপ্রবাহ নেই। তাই এই অঙুলকে শান্তবলয় বলা হয়।
15. লীনাপ কী?
উত্তর : যে তাপ পদার্থের উন্নতার পরিবর্তন না ঘটিয়ে পদার্থের অবস্থার (যেমন—কঠিন থেকে তরলে এবং তরল থেকে গ্যাসীয় অথবা গ্যাসীয় থেকে তরল এবং তরল থেকে কঠিন ইত্যাদি) পরিবর্তন ঘটায় তাকে লীনতাপ বলে।
16. চরম আদ্রর্তা কাকে বলে?
উত্তর : কোনাে নির্দিষ্ট উয়তায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প বর্তমান। থাকে তাকে ওই বায়ুর নিরপেক্ষ বা চরম আদ্রর্তা বলা হয়। নিরপেক্ষ বা চরম আদ্রর্তার পরিমাণ সাধারণত গ্রামে প্রকাশ করা হয়। যেমন—10 গ্রাম/ঘনসেমি।
17. শিলাবৃষ্টি কী?
উত্তর : নাতিশীতােয় মণ্ডলে গ্রীষ্মকালে জলকণা ও বরকণা একত্রে অধঃক্ষেপন রূপে পতিত হলে তাকে শিলাবৃষ্টি বলে। ঊর্ধ্বমুখী প্রবলবায়ুর প্রভাবে জলকণাগুলি অনেক উঁচুতে উঠে গিয়ে শীতল হয়ে বরফকণায় পরিণত হয়। অবশেষে ধীরে ধীরে আয়তনে বেড়ে গিয়ে এই কণাগুলি বৃষ্টির সাথে ঝরে পড়ে।
18. ‘ঘূর্ণবাতের চক্ষু-কাকে বলে?
উত্তর : কুণ্ডলাকারে ঘূর্ণমান ক্রান্তীয় ঘূর্ণর্বাতের কেন্দ্ৰাঞ্চলটিতে বায়ু শান্ত থাকে এবং ঘূর্ণবাতের উপরিভাগ পর্যন্ত শান্ত বায়ুর একটি স্তম্ভ রচিত হয়। একে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলা হয়। এই অলটি প্রায়বৃত্তাকার এবং এর ব্যাস 20-40 কিমি। এখানে বায়ু অত্যন্ত হালকা ও পরিবর্তনশীল।
19. টর্নেডাে কী?
উত্তর : টর্নেডাে হল অতি ক্ষুদ্র কিন্তু অতি মারাত্মক শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণর্বাত। এদের আকৃতি অনেকটা চোঙের মতাে এবং ভূ-পৃষ্ঠের ওপর এদের ব্যাস 100-500 মিটার। এই ঝড়ের কেন্দ্রে বায়ুচাপ 900mb এর নীচে নেমে যায়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রকি পর্বতের পূর্বদিকে এই ঝড় বেশি হয়।।
20. আশ্বিনের ঝড় কী?
উত্তর : শরৎকালে ভারতের উপকূল অঞ্চলে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড়সহ বৃষ্টিপাত হয়। ঝড়ের তাণ্ডবে জীবনহানি ও ধনসম্পত্তির বিপুল ক্ষতি হয়। পশ্চিমবঙ্গে প্রধানত ‘আশ্বিন মাসে এই ধরনের ঘূর্ণিঝড় হয় বলে একে ‘আশ্বিনের ঝড়’ বলা হয়।
21. মৌসুমি বিস্ফোরণ কী?
উত্তর : ক্রান্তীয় পুবালি জেটের প্রভাবে মধ্যভারত ও বঙ্গোপসাগরে গ্রীষ্মকালে সৃষ্ট একাধিক নিম্নচাপজনিত গােলযােগকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমিবায়ু ত্বরান্বিত হয়। এবং বজ্রবিদ্যুৎসহ আকস্মিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। একেই ‘মৌসুমি বিস্ফোরণ’ বা Burst of Monsoon বলে।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ‘অশ্ব অক্ষাংশ কাকে বলে?
উত্তর : নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় ও মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় থেকে বিক্ষিপ্ত ও উর্ধ্বগামী উয় বায়ু শীতল হয়ে ভারি হয়ে উভয় গােলার্ধের 25-35° অক্ষাংশে সৃষ্ট কৰ্কটীয় উচ্চচাপ বলয়ে নেমে আসে ফলে এই অঞ্চলে বায়ুর কোনাে পার্শ্ব প্রবাহ থাকে না, শান্ত অবস্থা বিরাজ করে। উত্তর গােলার্ধে এই অঞ্চলকে কর্কটীয় শান্তবলয় বা অশ্ব অক্ষাংশ বলে। প্রাচীনকালে ইউরােপীয় ঔপনিবেশিকগণ পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে পালতােলা জাহাজে অশ্ব বােঝাই করে আনার সময় এই অণ্ডলে বাতাসের অভাবে আটকে যেত। পানীয় জল অপচয় রােধ করার জন্য নাবিকরা জাহাজের রুগ্ন অশ্বগুলিকে জলে ফেলে দিত। তাই এই কর্কটীয় শান্ত বলয়কে অশ্ব অক্ষাংশ বলা হয়।
2. ওজোন স্তরের গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : স্ট্রাট্রোস্ফিয়ারের 20-35 কিমি উচ্চতায় অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে দুটি অনুক্রমিক আলােক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি ঘনত্বযুক্ত যে গ্যাসের আস্তরণ সৃষ্টি হয়েছে তা ওজোনস্তর নামে পরিচিত। গুরুত্ব : (i) এই স্তর সূর্য থেকে আসা তিনটি (UV-A, B, C) ক্ষতিকারক রশ্মিকে শােষণ করে জীবজগৎকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। (ii) এই স্তর ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত দীর্ঘ তরঙ্গের অবলােহিত রশ্মির বিকিরণে বাধা দিয়ে বায়ুমণ্ডলের উষ্মতার ভারসাম্য বজায় রাখে।
3. ওজোনস্তর বিনাশের কারণগুলি লেখাে।
উত্তর : ওজোনস্তর বিনাশের কারণগুলি হলাে—(i) CFC বা ক্লোরােফ্লুরােকার্বন হল ওজোন স্তর বিনাশের অন্যতম কারণ। (i) নগরায়ন ও শিল্পায়নের প্রসারের সঙ্গে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস ওজোনস্তর বিনাশ ত্বরান্বিত করছে। (ii) হলােন যৌগের বিশেষত হ্যালােন। 1211 ও হ্যালােন 1301 যৌগদুটি ওজোনস্তর বিনাশে বিশেষ ভূমিকা নেয়। (iv) ট্রাইরাে ব্রোমাে কার্বন, মিথাইল ব্রোমাইড প্রভৃতি ওজোনস্তর বিনাশ করে। (v) কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া (vi) সুপারসনিক জেট বিমান কর্তৃক পরিত্যক্ত জলীয় বাষ্প ওজোন বিনাশ ঘটায়।
4. গ্রিন হাউস এফেক্ট বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : বর্তমানে যথেচ্ছভাবে বৃক্ষচ্ছেদন ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে বায়ুমণ্ডলে co, CH No প্রভৃতি গ্যাসের পরিমাণ দ্রুত হারে বাড়ছে। এই সমস্ত গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলের উধ্বস্তরে একটি স্বচ্ছ আবরণ সৃষ্টি করেছে যার ফলে সূর্যরশ্মি সহজে ভূ-পৃষ্ঠে প্রবেশ করতে পারে কিন্তু বিকিরিত সূর্যরশ্মি সম্পূর্ণরূপে ফিরে যেতে পারে না। ফলে পৃথিবী পৃষ্ঠের উয়তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা গ্রিনহাউস এফেক্ট নামে পরিচিত।
5. বৈপরীত্য উয়তা (Inversion of Temperature) কাকে বলে?
উত্তর : সাধারণ অবস্থায় বায়ুমণ্ডলের ট্রপােস্ফিয়ার স্তরে প্রতি 1000 মি. উচ্চতা বৃদ্ধিতে 45°C হারে উয়তা হ্রাস পায়। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উয়তা হ্রাস না পেয়ে বরং বাড়তে থাকে। এরূপ অবস্থাকে বৈপরীত্য উয়তা বা উয়তার উক্ৰম বলে। উয়তার উক্ৰম ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরে কিংবা ট্রপােস্ফিয়ারে উর্ধ্ববায়ুস্তরে পরিলক্ষিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বৈপরীত্য উয়তা হলাে বায়ু তাপের অস্থায়ী অবস্থা।
6. মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি অপেক্ষা মেঘমুক্ত রাত্রি শীতল কেন?
উত্তর : দিনের বেলায় মেঘমুক্ত আকাশ থাকলে আগত সৌরকিরণ বাধাহীনভাবে ভূ-পৃষ্ঠে পৌছায় ফলে ভূ-পৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলের উম্লতা বৃদ্ধি পায়। তেমনি রাত্রে পার্থিব বিকিরণ বাধাহীনভাবে হয় ও রাত্রে উয়তা কমে যায়। কিন্তু আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে দিনের বেলায় আগত সৌরকিরণ মেঘে বাধা পেয়ে ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারে না তাই দিনে উয়তা কম হয়। এবং রাতে পার্থিব বিকিরণ মেঘে বাধা পেয়ে পৃথিবী পৃষ্ঠেই ফিরে আসে, তাই রাতে উয়তা বৃদ্ধি পায়। এই জন্যই মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি মেঘমুক্ত রাত্রি অপেক্ষা বেশি উয় হয়।
7. ক্রান্তীয় মণ্ডলে মহাদেশগুলির পশ্চিমে মরুভূমির সৃষ্টি হয় কেন?
উত্তর : ক্রান্তীয় মণ্ডলে মহাদেশগুলির পশ্চিমে মরুভূমি সৃষ্টির কারণগুলি হল—(i) আয়নবায়ু মহাদেশের পশ্চিমদিক থেকে এসে সমুদ্রের শীতল বায়ুর সাথে মেশে। (ii) নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে যত যায় জলীয় বাষ্পধারণ ক্ষমতা তত বাড়ে বলে বৃষ্টির সম্ভাবনা কমে। (ii) মরুভূমি অঞ্চলের ওপর থেকে শুষ্ক বায়ুস্রোত নেমে আসে—ফলে দীর্ঘকাল এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় না। ফলে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
8. জেট বায়ুর বৈশিষ্ট্য লেখাে।
উত্তর : জেট বায়ু হল একটি দ্রুতগামী বায়ুস্রোত। যা মূলত 30° উত্তর অক্ষাংশে পশ্চিমাবায়ু প্রবাহিত অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলের 7-13 কিমি ঊর্ধ্বে ট্রপােস্ফিয়ারে একটি সংকীর্ণ আঁকাবাঁকা পথে প্রবল বেগে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়। বৈশিষ্ট্য—(i) এই বায়ু ভূ-পৃষ্ঠ থেকে 10-12 কিমি উর্ধ্বে সংকীর্ণ স্থানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। সময় | (i) জেট বায়ুর গতিবেগ 350-450km/ঘণ্টা (ii) শীতের প্রারম্ভে এই বায়ু প্রবাহ শুরু হয় এবং চলে মার্চ এপ্রিল মাস পর্যন্ত।
9. নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রতিদিন পরিচলন বৃষ্টিপাত হয় কেন ?
উত্তর : (i) নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর সূর্যকিরণ লম্বভাবে পড়ার দরুণ প্রচুর উত্তাপের সৃষ্টি হয়। (ii) এই অঞ্চলে জলভাগ বেশি। (iii) জলভাগ বেশি তাই প্রচুর জলীয়বাষ্প উৎপন্ন হয়। (iv) উভয় গােলার্ধ থেকে আয়নবায়ু নিরক্ষীয় অঞলে মিলিত হয়। উয়—আর্দ্র বায়ু উর্ধ্বগামী পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি করে। ও ঘনীভূত হয়ে শীতল হয় ও মেঘে পরিণত হয়। (v) পরে এই মেঘ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই ধরনের বৃষ্টি হয় ও বিকেলের দিকে হয় বলে 40 Clock Rain বলা হয।
রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. বায়ুর উয়তার তারতম্যের কারণ সমূহ আলােচনা করাে।
উত্তর : বায়ুর তাপের তারতম্যের কারণ সমূহ :
(i) অক্ষাংশ : পৃথিবীর কক্ষতলের সঙ্গে সর্বদা 66%° কোণে হেলে সূর্যের চারিদিকে পরিক্রমণ করে। এর ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য সারাবছর লম্বভাবে কিরণ দেয় এবং তাপীয় ফল বেশি থাকে। আবার মেরুর দিকে সূর্য ক্রমশ তির্যকভাবে পতিত হয়। ফলে সূর্যের তাপীয় ফল কম হয়। তাই উচ্চ অক্ষাংশ অপেক্ষা নিম্ন অক্ষাংশের গড় উয়তা অধিক হয়।
(ii) ভূমির উচ্চতা : ট্রপােস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতি কিমিতে গড়ে প্রায় 6.4° সেলসিয়াস | sIL ৪০০০ মি হারে উষ্মতা হ্রাস পায়। বায়ুমণ্ডলের উম্লতা তত কম হয়।
(iii) স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন : জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত উঃ বা শীতল হয়। এই কারণে সমুদ্র থেকে কম দূরবর্তী স্থান গ্রীষ্মকালে অধিক। উম্ন ও শীতকালে অধিক শীতল হয়।
(iv) বায়ুপ্রবাহ : সমুদ্রস্রোতের মতােই উয় বায়ু প্রবাহিত অঞল উয় এবং শীতলবায়ু প্রবাহিত অঞ্চল শীতল প্রকৃতির হয়।
(v) সমুদ্রস্রোত : সমুদ্রের যে উপকূলীয় অঞ্চল বরাবর উয় সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় |সে অঞ্চলের বায়ুমণ্ডল উয় এবং যে অঞ্চলে শীতল সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়। সেখানকার বায়ুমণ্ডল শীতল প্রকৃতির হয়।
(vi) ভূমির ঢাল : ভূমির ঢালের দিক অনুযায়ী সৌরশক্তি প্রাপ্তির তারতম্য ঘটে। উত্তর গােলার্ধে উত্তরমুখী ভূমির ঢাল অপেক্ষা দক্ষিণমুখী ভূমির ঢালে অধিক লম্বভাবে সৌরকিরণ পড়ে, ফলে বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা অধিক হয়।
(vii) মেঘাচ্ছন্নতা ও অধঃক্ষেপন : দিনের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে সৌররশ্মির তাপীয়। ফল হ্রাস পায় কিন্তু রাতের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপ মেঘদ্বারা বাধা প্রাপ্ত হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে। ফলে উয়তা বৃদ্ধি পায়। উয়তার ওপর বৃষ্টিপাতের প্রভাব কম হলেও বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে বায়ুমণ্ডলের। উয়তা সামান্য হ্রাস পায়।
(viii) স্বাভাবিক উদ্ভিদ : সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার সময় উদ্ভিদ সৌরশক্তি ও co, শােষণ করে এবং বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের সংযােজন ঘটায়। তাই অধিক উদ্ভিদ আবৃত অঙুল তুলনামূলকভাবে কম উয় হয়; কিন্তু উদ্ভিদ কম থাকলে উয়তা চরম প্রকৃতির
2. জীবজগৎ তথা পরিবেশের ওপর বিশ্ব উন্নয়নের প্রভাব আলােচনা করাে।
উত্তর : পরিবেশের ওপর বিশ্ব উয়ায়নের প্রভাব : বিশ্ব উয়ায়ণ বা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার জীবজগৎ তথা পরিবেশের ওপর সুদূর প্রসারি ক্ষতিকারক প্রভাব অবশ্যম্ভাবী। যেমন—
(i) মেরু অঞ্চলে বরফের গলন ও পার্বত্য হিমবাহের গলন : বিয় উয়ায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের সঞ্চিত বরফ স্তুপের গলন শুরু হয়েছে এবং পার্বত্য হিমবাহগুলির বরফের আয়তন ক্রমশ কমছে।
(ii) সমুদ্র জলের উচ্চতা বৃদ্ধি : গ্রিনহাউস প্রভাব বৃদ্ধি পেলে পৃথিবীর গড় উয়তা বৃদ্ধিজনিত কারণে মেরু অঞ্চলে ও পার্বত্য অঞ্চলের বরং বেশি মাত্রায় গলে গিয়ে সমুদ্র জলতলে উচ্চতা বৃদ্ধি করছে। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর গড় উয়তায়। প্রায় 1:5° c বৃদ্ধি পাওয়ায় সমুদ্র জলতলের উচ্চতা প্রায় 10-12 সেমি বৃদ্ধি পেয়েছে।
(iii) অধঃক্ষেপনের প্রকৃতি পরিবর্তন : পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন উৎসের জল অধিকতর দ্রুত ও বেশি পরিমাণে বাষ্পীভূত হচ্ছে তার ফলে বৃষ্টিপাত বা অধঃক্ষেপনের পরিমাণ সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাস্পীভবন বেশি হওয়ার ফলে কোথাও প্রবল বর্ষণ অন্যত্র খরা আবার উপকুলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ও পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
(iv) শস্য উৎপাদনে হ্রাসবৃদ্ধি : বিশ্ব উম্নয়নের প্রভাবে ফসলের উৎপাদন হ্রাস বা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা। নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভৌগােলিক অবস্থান, আবহাওয়ার পরিবর্তন, c0, বৃদ্ধির পরিমাণ, মৃত্তিকার আদ্রর্তা বা শুষ্কতা, ফসলের ধরণ প্রকৃতির উপর শস্য উৎপাদনের হ্রাসবৃদ্ধির বিষয়টি নির্ভর করে।
(v) কৃষি পদধতির পরিবর্তন : গ্রিনহাউস প্রভাবের জন্য পৃথিবীর উয়তা বৃদ্ধি পেলে কৃষিকাজের ওপর ভার প্রভাব পড়লে। যেমন—কৃষি বলয়ের স্থান পরিবর্তিত হয়ে উচ্চ অক্ষাংশের দিকে বিস্তৃত হচ্ছে। আবার চাষযােগ্য জমিতে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ, আগাছা ও রেশম পােকার উপদ্রব বৃদ্ধি পাবে এবং কৃষিকাজের পরিবর্তে শিল্প, বসতি ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হবে।
3. পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়গুলির সঙ্গে নিয়তবায়ু প্রবাহের সম্পর্ক সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : বায়ুচাপের পার্থক্যই বায়ুপ্রবাহের প্রধান কারণ। ভূ-পৃষ্ঠে সাতটি স্থায়ী বায়ুচাপ বলয় অবস্থান করছে। যথা—(i) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ শান্তবলয়, (i) ও (ii) কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপযুক্ত বলয়, (iv) ও (v) সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়, (vi) ও (vii) সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয়। স্থায়ী চালবলয়গুলির প্রভাবে নিয়মিতভাবে প্রবাহিত বায়ুকেই নিয়তবায়ু বলে। নিয়তবায়ু প্রধানত তিন প্রকার (i) আয়ন বায়ু, (ii) পশ্চিমাবায়ু ও (iii) মেরু বায়ু।
(1) আয়ন বায়ু ও বায়ুচাপ বলয় : কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নির্দিষ্ট পথে, নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয়। উত্তর গােলার্ধে 25°-30° অক্ষরেখা থেকে 5-10° অক্ষরেখার মধ্যে আয়নবায়ু প্রবাহিত হয়। ফেরেলের সূত্রানুযায়ী আয়নবায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে যথাক্রমে উত্তরপূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব আয়নবায়রূপে প্রবাহিত হয়। এই দুই প্রকার আয়নবায়ু নিরক্ষীয় অঞ্চলে মিলিত হয়ে উর্ধ্বগামী হয়। তাই এই অঞ্চলে বায়ুর পার্শ্বপ্রবাহ থাকে না। এই অঞ্জলকেই নিরক্ষীয় শান্তবলয় বলে।
(2) পশ্চিমাবায়ু ও বায়ুচাপ বলয় : কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরু ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নিয়মিতভাবে বায়ু প্রবাহিত হয়। সাধারণভাবে এই বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হওয়ায়, একে পশ্চিমাবায়। বলে। ফেরেলের সূত্রানুসারে, এই বায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে যথাক্রমে দক্ষিণ পশ্চিমা পশ্চিমাবায়ু ও উত্তরপশ্চিম পশ্চিমাবায়ু রূপে প্রবাহিত হয়। উত্তর গােলার্ধে সাধারণত 30°-60° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে পশ্চিমাবায়ু প্রবাহিত হয়।
(3) মেরু ও বায়ুচাপ বলয় : সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নিয়মিতভাবে বায়ু প্রবাহিত হয়। মেরু কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে নিয়মিতভাবে বায়ু প্রবাহিত হয়। মেরু। অঞ্চল থেকে প্রবাহিত হওয়ায় একে মেরুবলয় বলে। সাধারণভাবে এই বায়ু উভয় গােলার্ধে 70-80° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়। ফেরেলের সূত্রানুসারে এই বায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গােলার্ধে বামদিকে বেঁকে যথাক্রমে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব মেরুবায়ু রূপে প্রবাহিত হয়। উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব আয়নবায়ু যেখানে মিলিত হয় সেই অঞ্চলকে Inter Tropical Convergence Zone বা ITCZ বলে। এবং পশ্চিমাবায়ু ও মেরুবায়ু সেখানে মিলিত হয়, সেই অঞ্জলকে মেরুসীমান্ত অঞ্চল বলে। চাপবলয়গুলি স্থায়ী এবং বায়ুপ্রবাহগুলি নিয়মিত হলেও সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সঙ্গে সঙ্গে চাপবলয়গুলিও যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণে সরে যায়। চাপবলয়গুলির স্থান পরিবর্তনের ফলে বায়ুপ্রবাহগুলিও উত্তরে বা দক্ষিণে সরে যায়।
4. বায়ুচাপের তারতম্যের কারণগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : বায়ুচাপের তারতম্যের প্রধান কারণ হলাে বায়ুর ঘনত্বের তারতম্য। বায়ুচাপের তারতম্যের নিয়ন্ত্রকগুলি হলাে-
(i) উচ্চতা : ভূমিভাগের উচ্চতা, বায়ুচাপের তারতম্যের ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ন্ত্রক। ওপরের বায়ুস্তরের প্রবল চাপে বায়ুর অণুগুলি ও ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি অঞ্চলে বেশি পরিমাণে থাকে। একারণেই সমুদ্রতল সংলগ্ন বায়ুস্তরে বায়ুচাপ বেশি হয়। আবার ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ুর ঘনত্ব ও ওজন কমতে থাকে বলে বায়ুর চাপও কমে যায়। দেখা গেছে, সমুদ্রতল থেকে প্রতি 110 মিটার উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে 1 cm পারদস্তম্ভের সমান বায়ুচাপ (1:34 mb হারে) কমতে থাকে।
(ii) উয়তা : বায়ুর উয়তার পরিবর্তন হলে বায়ুর আয়তন ও ঘনত্বের পরিবর্তন হয়। ফলস্বরূপ চাপেরও পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ বায়ু উত্তপ্ত হলে বায়ুর অনুগুলি গতিশীল হয়ে পরস্পর থেকে দুরে সরে যায়। ওই উয় বায়ু হালকা ও প্রসারিত হয়ে ওপরে উঠে যায় এবং এর চাপও কমে যায়। আবার উত্মতা কম হলে বা বায়ু শীতল হলে সংকুচিত হয় বলে বায়ুর ঘনত্ব বেড়ে যায় এবং চাপও বেশি হয়।
(iii) জলীয়বাষ্প : বায়ুতে উপস্থিত অন্যান্য উপাদানের মধ্যে জলীয়বাষ্প হল অধিক হালকা উপাদান। বেশি জলীয় বাষ্পযুক্ত বায়ু নিম্নচাপবিশিষ্ট হয় এবং কম জলীয়বাষ্পযুক্ত বায়ু উচ্চচাপবিশিষ্ট হয়।
(iv) পৃথিবীর আবর্তন : পৃথিবীর আবর্তনগতির ফলে সৃষ্ট কেন্দ্ৰবহির্মুখী বলের (Centrifugal force) প্রভাবে বায়ুর গতিবিক্ষেপ ঘটে। ফলে বায়ুর চাপ ও ঘনত্ব উভয়ই হ্রাস পায়। নিরীক্ষয় অঞলে আবর্তনের বেগ বেশি থাকায় বায়ুর বেশি গতিবিক্ষেপ ঘটে বলে স্থায়ী নিম্নচাপ বলয় সৃষ্টি হয়েছে।
(v) স্থলভাগ ও জলভাগের বণ্টন : পৃথিবীপৃষ্ঠে জলভাগ ও স্থলভাগের বিন্যাস বা বণ্টন তথা উভয়ের মধ্যেকার তাপগ্রাহীতা শক্তির পার্থক্যের জন্যও বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে। জলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু জলীয়বাষ্প গ্রহণ করে বলে তা আর্দ্রও হালকা হয় এবং চাপও কম হয়। কিন্তু স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করতে পারে না। তাই তা শুষ্ক, ভারি হয় এবং চাপও অধিক হয়।
বারিমন্ডল
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ]:[প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. মরা কোটাল হয়—
[A] অমাবস্যা তিথিতে | [B] পূর্ণিমা তিথিতে [C] প্রতিপদে [D] শুক্ল ও কৃয়পক্ষের অষ্টমী তিথিতে
উত্তরঃ [D] শুক্ল ও কৃয়পক্ষের অষ্টমী তিথিতে
2. পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীরতম মহাসাগর হল—
[A] সুমেরু মহাসাগর। [B] ভারত মহাসাগর [C] আটলান্টিক মহাসাগর। [D] প্রশান্ত মহাসাগর
উত্তরঃ [C] আটলান্টিক মহাসাগর
3. ভূপৃষ্ঠের জলভাগের প্রতিটি স্থানে 24 ঘণ্টায় জোয়ার হয়—
[A] একবার [B] দু’বার [C] তিনবার। [D] কোনােটিই সঠিক নয়
উত্তরঃ [B] দু’বার
4. জাপান উপকূলে টাইফুন নামে ভয়ংকর ঝড়-তুফানের সৃষ্টি হয় –
[A] কুরেশিয়ে স্রোত ও শীতল বেরিং স্রোতের মিলনের ফলে [B] উয় নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত ও শীতল কুমেরু স্রোতের মিলনের ফলে [C] উয় নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত ও শীতল পেরু স্রোতের মিলনের ফলে [D] কোনােটিই সঠিক নয়।
উত্তরঃ [A] কুরেশিয়ে স্রোত ও শীতল বেরিং স্রোতের মিলনের ফলে
5. মরা কোটাল হয় যখন চন্দ্র ও সূর্য…………. অবস্থান করে।
[A] সমান্তরালে। [B] একই রেখায় [C] পরস্পরের সমকোণে। [D] সূক্ষ্মকোণে
উত্তরঃ [C] পরস্পরের সমকোণে
6. সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবীর সরলরৈখিক অবস্থানকে বলে-
[A] সি.জি.গি [B] প্রতিযােগ। [C] সংযােগ। [D] কোনােটিই সঠিক নয়
উত্তরঃ [A] সি.জি.গি
7. নিউ ফাউল্যান্ডের কাছে ঘন কুয়াশা ও ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়—
[A] উপসাগরীয় স্রোত ও উত্তর আটলান্টিক স্রোতের মিলনের ফলে [B] ক্যানারি স্রোতের সঙ্গে উপসাগরীয় স্রোতের মিলনের ফলে [C] উপসাগরীয় স্রোত ও ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনের ফলে [D] কোনােটিই সঠিক নয়।
উত্তরঃ [C] উপসাগরীয় স্রোত ও ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনের ফলে
8, ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত প্রবাহিত হয়—
[A] প্রশান্ত মহাসাগরে [B] ভারত মহাসাগরে [C] সুমেরু মহাসাগরে [D] আটলান্টিক মহাসাগরে
উত্তরঃ [A] প্রশান্ত মহাসাগরে
9. আটলান্টিক মহাসাগরে শৈবাল সাগর সৃষ্টি হয়েছে যে স্রোতের দ্বারা সেটি হল—
[A] বেগুয়েলা স্রোত। [B] ক্যানারি স্রোত [C] ল্যাব্রাডর স্রোত [D] কুরেশিয়ে স্রোত
উত্তরঃ [B] ক্যানারি স্রোত
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর :[ প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. আটলান্টিক মহাসাগরের কোন অংশে হিমপ্রাচীর সৃষ্টি হয়?
উত্তর : উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাংশে হিমপ্রাচীর সৃষ্টি হয়।
2. সি. জি. গি. কী?
উত্তর : পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য যখন একটি সরলরেখায় অবস্থান করে তখন সেই অবস্থানকে সি. জি. গি. বলে।
3. সৌর জোয়ার কাকে বলে?
উত্তর : সূর্যের আকর্ষণে পৃথিবীতে যে জোয়ার হয় তাকে সৌর জোয়ার বলা হয়।
4. চান্দ্র জোয়ার কাকে বলে?
উত্তর : চন্দ্রের আকর্ষণে পৃথিবীতে যে জোয়ার হয় তাকে চান্দ্র জোয়ার বলা হয়। (27 দিনে পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের একবার পরিক্রমাকে বলা হয় চান্দ্রমাস।)
5. কোনাে স্থানে একটি জোয়ার ও একটি ভাটার মধ্যে সময়ের ব্যবধান কত থাকে?
উত্তর : 6 ঘণ্টা 13 মিনিট।
6. মৌসুমি স্রোত কোন মহাসাগরে দেখা যায় ?
উত্তর : ভারত মহাসাগরে মৌসুমি স্রোত দেখা যায়।
7. কেন্দ্রাতিগ বল কাকে বলে?
উত্তর : পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতমুখী ক্রিয়াশীল বলকে কেন্দ্রাতিগ বল বলে।
৪. হিমপ্রাচীর কোন মহাসাগরে দেখা যায় ?
উত্তর : হিমপ্রাচীর আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশে দেখা যায়।
9. পশ্চিমবঙ্গে বান ডাকে এমন একটি নদীর নাম লেখাে।
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গে হুগলি নদীতে বান ডাকে।
10. ভূপৃষ্ঠের শতকরা কত ভাগ স্থান জলভাগ অধিকার করে আছে?
উত্তর : ভূপৃষ্ঠের প্রায় 70 ভাগ স্থান জলভাগ অধিকার করে আছে।
11. আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি উয় স্রোতের নাম লেখাে।
উত্তর : আটলান্টিক মহাসাগরের দুটি উয় স্রোত হল—(i) উপসাগরীয় স্রোত ও (ii) ব্রাজিল স্রোত।
12. পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগরের নাম কী?
উত্তর : পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগরটির নাম প্রশান্ত মহাসাগর।
13. পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগরের নাম কী?
উত্তর : পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগরের নাম আটলান্টিক মহাসাগর।
বারিমন্ডল – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. মগ্নচড়া কী?
উত্তর : মেরু অঞ্চল থেকে শীতল সমুদ্রস্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈল উয়স্রোতের সংস্পর্শে এসে গলে যায়। হিমশৈল মধ্যস্থ নুড়ি, কাকর, বালি, কাদা প্রভৃতি ওজনানুসারে সমুদ্র তলদেশে পর্যায়ক্রমে থিতিয়ে পড়ে। দীর্ঘকাল ধরে এই সম পদার্থ অধঃক্ষিপ্ত হয়ে অগভীর নিমজ্জিত ও চড়ার সৃষ্টি হয়। একে মগ্নচড়া বা ব্যাংক বলে। উদাহরণ : সেবল ব্যাংক, জর্জেস ব্যাংক।
2. হিমপ্রাচীর কাকে বলে?
উত্তর : আটলান্টিক মহাসাগরের নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের নিকট (হ্যালিফক্স ও কড অন্তরীক্ষের মাঝে) উত্তর দিকে (ব্যাকিন উপসাগর) থেকে আগত শীতল ও গাঢ় সবুজ জলের শীতল ল্যাব্রাডার স্রোত এবং দক্ষিণ দিক থেকে আগত উয় ও গাঢ় নীল জলের উপসাগরীয় স্রোত পাশাপাশি পরস্পরের বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। এই দুই স্রোতের স্পষ্ট সীমারেখাকে হিমপ্রাচীর বলে। এখানে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়।
3. নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে ঘন কুয়াশা, ঝড় সৃষ্টি হয়—কারণ ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকুলে উম্ন উপসাগরীয় ও শীতল ল্যাব্রাডার স্রোত পরস্পর মিলিত হয়। উয় উপসাগরীয় স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু উয় ও জলীয়বাষ্পপূর্ণ এবং শীতল ল্যাব্রাডার স্রোতের ওপরকার বায়ু শীতল ও শুষ্ক হওয়ায়, দুই ভিন্নধর্মী বায়ু পরস্পরে সংস্পর্শে এলে শীতলবায়ুর প্রভাবে উয় বায়ুস্থিত জলীয় বাষ্প জমে গিয়ে কুয়াশার সৃষ্টি করে। আবার নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলের কাছে এই দুই ভিন্নধর্মী বায়ুর মুখােমুখী সংঘর্ষের ফলে মাঝে মাঝে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়।
4. উপসাগরীয় স্রোত (Gulf Current) কাকে বলে?
উত্তর : উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মেক্সিকো উপসাগর থেকে উৎপন্ন একটি উয়স্রোত হল উপসাগরীয় স্রোত। এই স্রোতের কয়েকটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল— (i) এই স্রোতের জলের রং নীল। (ii) এই স্রোত উয় (27:02°C)। (iii) এই স্রোতের বিস্তার 64 কিমি এবং গভীরতা 914 মিটার। (iv) এই স্রোতের গড় গতিবেগ হল 10-15 মাইল/দিন। (v) এই স্রোত প্রতিসেকেন্ডে 74-93 মিলিয়ন ঘনমিটার জল বহন করে।
5. জাপান বা কুরােশীয় স্রোত কাকে বলে?
উত্তর : উত্তর প্রশান্তমহাসাগরের এই স্রোতটি উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত প্রথমে পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে এবং পরে ফিলিপাইল্স দ্বীপপুঞ্জে প্রতিহত হয়ে উত্তরে বেঁকে যায় এবং দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের উত্তরগামী শাখার সঙ্গে মিশে কুরােশীয় স্রোত নামে এবং জাপানের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হবার সময় জাপান স্রোত নামে পরিচিত।
6. ৰেয়েলা স্রোত কাকে বলে?
উত্তর : দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের এই শীতল স্রোতটি কুমেরু স্রোতের একটি শাখা আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে উত্তমাশা অন্তরীপে প্রতিহত হয়ে পশ্চিম উপকূল বরাবর অ্যাগুয়েলার বেঙ্গুয়েলা বন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্রোতের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় 10 কিমি।
7. ব্রাজিল স্রোত কাকে বলে?
উত্তর : বেঙ্গুয়েলা স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহ দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূলে সেন্ট রক অন্তরীপে প্রতিহত হয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। এর দক্ষিণের শাখাটি ব্রাজিলের পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণে 40° দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্রোত ব্রাজিলস্রোত নামে পরিচিত। অধিক উয়তা ও লবণাক্ততা এই স্রোতের প্রধান বৈশিষ্ট্য। গতিবেগ 28 km/hour।
8. বানডাকা কাকে বলে?
উত্তর : ভরা কোটালের সময় সমুদ্রের জল সংকীর্ণ নদীমুখে বা চড়াযুক্ত নদীমুখে মােহানা দিয়ে উলটো খাতে, খুব উঁচু হয়ে তীব্র গতিতে নদীতে প্রবেশ করে প্রবল জলােচ্ছ্বাস ঘটায়। একে বান ডাকা বলে। হুগলি, ইয়াংসিকিয়াং, টেমস্ নদীতে বানডাকার সৃষ্টি হয়।
9. সিজিগি কী?
উত্তর : চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবীর সরলরৈখিক (180°) অবস্থানকে জ্যোতির্বিজ্ঞানে সিজিগি (Sy Zy Gy) বলে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে সিজিগি অবস্থান লক্ষ করা যায়। সিজিগি অবস্থানে জোয়ারভাটার প্রাবল্য বেশি হয়।
10. যাঁড়াযৗড়ি বান কাকে বলে?
উত্তর : প্রবল বর্ষায় ভরা কোটালের সময় জলস্ফীতির মাত্রা এত বেশি হয় যে ওই অবস্থানকে দুটি ষাঁড়ের (নদীর সমুদ্রগামী জল ও জোয়ারের উজানগামী জল) লড়াই বা যুদ্ধকালীন অবস্থার সাথে তুলনা করে একে যাড়া-যাঁড়ির বান বলে। এই সময় জোয়ারের জল 5-10 মিটার উঁচু হয়। উদাহরণ : ভাগীরথী হুগলি নদীতে বর্ষাকালে এই বান দেখা যায়।
11. বেলাের্মি কী?
উত্তর : জোয়ার তরঙ্গের অগ্রগমনকে বেলাের্মি বলা হয়। পৃথিবীর যে যে স্থানবিন্দু সমূহে GMT অনুসারে একই সময় জোয়ার হয়, সেই স্থানগুলিকে একটি কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করলে যে রেখা পাওয়া যায়, তাকে বলে সহবেলাের্মি রেখা।
12. জোয়ার অন্তর কাকে বলে?
উত্তর : যে কোনাে দুটি জোয়ারের সময়ের ব্যবধানকে জোয়ার অন্তর বলে। সাধারণভাবে পরপর দুটি জোয়ারের (মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ার) সময়ের ব্যবধান প্রায় 12 ঘণ্টা 26 মিনিট। তবে দুটি মুখ্য জোয়ার ও দুটি গৌণ জোয়ারের অন্তর হয় 24 ঘণ্টা 52 মিনিট।
বারিমন্ডল – ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. সারগাসসা সি বা শৈবাল সাগর কী?
উত্তর : নিয়ত বায়ু দ্বারা পরিচালিত সমুদ্রস্রোত অনেক সময় সমুদ্রের মধ্যবর্তী অংশে স্রোতের আবর্ত বা ঘূর্ণির সৃষ্টি করে। আবর্তের মধ্যবর্তী অংশ স্রোতহীন হওয়ায় সামুদ্রিক আগাছা ও শৈবাল জন্মায়। স্রোতহীন, আগাছা সমৃদ্ধ সমুদ্রের ওই অংশকে সারােগাসাে সি বা শৈবাল সাগর বলে। উদাহরণ : (i) আটলান্টিক মহাসাগরীয় শৈবাল সাগর, (ii) প্রশান্ত মহাসাগরীয় শৈবাল সাগর।
2. গ্র্যান্ড ব্যাংক কী?
উত্তর : গ্র্যান্ড ব্যাংক হল বিশ্বের বৃহত্তম মগ্নচড়া।
অবস্থান—উত্তর-পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগর, নিউফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের নিকট অবস্থিত।
উৎপত্তির কারণ—শীতল লাব্রাডার স্রোতের সঙ্গে আসা হিমশৈল উয় উপসাগরীয় স্রোতের সংস্পর্শে গলে গিয়ে সমুদ্র তলদেশে নুড়ি, কাকর, বালি, পলি, কাদা প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে। বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণের জন্য বিখ্যাত।
3. সমুদ্রস্রোতের চক্ৰগতি বা জায়র (Gyre) বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : পৃথিবীর প্রধান তিনটি মহাসাগরে সমুদ্রস্রোতের গতিপথ অনুসরণ করলে দেখা যায় যে সেগুলি চক্রাকারে ঘুরে জলাবর্ত সৃষ্টি করে। একে সমুদ্রস্রোতের চক্রগতি বা জায়র বলে। কোরিওলিস বলের প্রভাবে এটি হয়। এই চক্রগতিতে সমুদ্রস্রোত উত্তর গােলার্ধে দক্ষিণাবর্তে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বামাবর্তে ঘুরতে থাকে।
4. গ্র্যান্ড ব্যাংক মগ্নচড়াটি বাণিজ্যিক মৎস্যক্ষেত্র হিসাবে
খ্যাতি লাভ করেছে কেন?
উত্তর : কারণগুলি হল—(i) এখানে সমুদ্র অগভীর হওয়ায় সূর্যরশ্মি তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। ফলে এখানে মাছের খাদ্য প্ল্যাঙ্কটন প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। (ii) উয় ও শীতল স্রোতের মিলনের ফলে এখানে প্রচুর সামুদ্রিক মাছের সমাবেশ ঘটে। (iii) এখানকার নীতিশীতােয় জলবায়ু মাছ শিকার, মাছ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অনুকূল। (iv) এখানে কৃষিজমির অভাব থাকায় মৎস্য আহরণ এখানকার অধিবাসীদের অন্যতম জীবিকা।
5. উয়স্রোত ও শীতলস্রোতের মধ্যে পার্থক্যগুলি লেখাে।
উত্তর : উয়স্রোত ও শীতলস্রোতের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল-
উয়ুস্রোত শীতলস্রোত
(i) ক্রান্তীয় ও উপক্ৰান্তীয় সমুদ্র (i) মেরু সমুদ্রে এর উৎপত্তি হয়।
(ii) জলের উয়তা প্রবাহিত অঞ্চলের জলের উয়তা অপেক্ষা বেশি। (ii) জলের উয়তা প্রবাহিত অঞ্চলের জলের উয়তা অপেক্ষা কম।
(iii) সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের উয়তা বাড়ায়। উচ্চ নাতিশীতােয় অঞ্চলের উপকূলে বরফ জমতে দেয় না। (iii) উয়তা কমায়। উয় অঞ্চলের উপকূলে মনােরম অবস্থা সৃষ্টি করে।
6. মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের মধ্যে পার্থক্য আলােচনা করাে।
উত্তর : মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল-
বিষয় মুখ্য জোয়ার গৌণ জোয়ার
সংজ্ঞা পৃথিবী আবর্তনরত অবস্থায় ভূ-পৃষ্ঠের যে অংশ চাদের সম্মুখীন বা সর্বাপেক্ষা নিবর্তী হয়, সেই স্থানের জলরাশি চন্দ্রের আকর্ষণে অধিকমাত্রায় ফুলে উঠে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয়, তাকে মুখ্য বা চন্দ্র জোয়ার বলে। ভূ-পৃষ্ঠের পৃথিবীর যে অংশে মুখ্য জোয়ার হয় তার বিপরীতে প্রতিপাদ স্থানে প্রধানত পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে যে জোয়ারের সৃষ্টি হয় তাকে গৌণ জোয়ার বলে।
কার্যকরী বল চাদের আকর্ষণ বল মুখ্য ভূমিকা পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বল মুখ্য ভূমিকা নেয়। পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বল মুখ্য ভূমিকা।
জোয়ারের প্রাবল্য মুখ্য জোয়ারের প্রাবল্য গৌণ জোয়ারের তুলনায় অনেক বেশি। গৌণ জোয়ারের প্রাবল্য মুখ্য জোয়ারের তুলনায় বেশ কম।
ভরকেন্দ্রের দূরত্ব পৃথিবীর ভরকেন্দ্র থেকে মুখ্য জোয়ার স্থানের দূরত্ব কম অর্থাৎ চাদের অধিকতর নিকটবর্তী। পৃথিবীর ভরকেন্দ্র থেকে গৌণ জোয়ার স্থানের দূরত্ব পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে দূরত্ব অপেক্ষা প্রায় 4800 কিমি অধিক হওয়ায় ওই স্থানে পৃথিবীর আকর্ষণ বল কম, তাই কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবেই গৌণ জোয়ার হয়।
7. পূর্ণিমা অপেক্ষা অমবস্যার জোয়ার প্রবল হয় কেন তা ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : পূর্ণিমা তিথিতে চঁাদ ও সূর্যের মাঝখানে পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করায় পৃথিবীর যে অংশ চাদের ঠিক সামনে আসে সেখানে হয় মুখ্য চান্দ্র জোয়ার এবং প্রতিপাদ স্থানে হয় মুখ্য সৌর জোয়ার। ফলে পূর্ণিমা তিথিতে যে তীব্র জোয়ারের সৃষ্টি হয় তা পূর্ণিমার ভরা জোয়ার বা ভরা কোটাল বলে। অন্যদিকে অমাবস্যা তিথিতে একই সরলরেখায় পৃথিবীর একই দিকে চাঁদ ও সূর্য অবস্থান করলে তাদের মিলিত আকর্ষণ বল পৃথিবীর একই স্থানে হওয়ায় ওই স্থানে জলরাশি অতি প্রবলমাত্রায় স্ফীত হয় এবং ভরা কোটাল নামে পরিচিত। পূর্ণিমাতে একটি স্থানে চাদের একক মহাকর্ষ শক্তি, অমাবস্যাতে চাঁদ ও সূর্যের যৌথ মহাকর্ষ বল কাজ করায় অমাবস্যার জোয়ারে প্রাবল্য বেশি।
8. দিনে দুবার জোয়ার ভাটার কারণ কী?
উত্তর : আবর্তনের ফলে পৃথিবীর যে অংশ চঁাদের সামনে আসে সেখানে মুখ্য জোয়ার এবং তার বিপরীত প্রান্তে গৌণ জোয়ার হয়। এই দুই স্থানের সমকোণে অবস্থিত স্থানে ভাটা হয়। পৃথিবীর একবার আবর্তনের মধ্যে অর্থাৎ 24 ঘণ্টায় পৃথিবীর প্রতিটি স্থান একবার করে চাঁদের সামনে আসে। ফলে সেই স্থানে মুখ্য জোয়ার ও প্রতিপাদ স্থানে গৌণ জোয়ার হয়। এই গৌণ জোয়ারের 12 ঘন্টা 26 মিনিট পর প্রতিপাদ স্থানটি চাদের সামনে এলে সেখানে মুখ্য জোয়ার হয় এবং প্রথমে যে স্থানে মুখ্য জোয়ার হয়েছিল সেখানে গৌণ জোয়ার হয়। সুতরাং 24 ঘন্টায় একই স্থানে দিনে দুবার জোয়ার এবং জোয়ারের সমকোণী অবস্থানে ভাটা হয়। ভাঁটাও দিনে দু’বার সংঘটিত হয়।
9. অ্যাপােজি ও পেরিজির মধ্যে পার্থক্য লেখাে।
উত্তর : অ্যাপােজি ও পেরিজির মধ্যে পার্থক্য
বিষয় অ্যাপােজি পেরিজি
(i) সংজ্ঞা চাদের পৃথিবী পরিক্রমণ কালে চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব যখন সর্বাধিক থাকে সেই অবস্থানকে অ্যাপােজি বলে। চাদের পৃথিবী পরিক্রমণ কালে চঁাদ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব যখন সবচেয়ে কম থাকে, সেই অবস্থানকে পেরিজি বলে।
(ii) দূরত্ব অ্যাপােজি অবস্থানে চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যেকার দূরত্ব 4,07,000 কিমি. পেরিজি অবস্থানে চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে কার দূরত্ব 3,56,000 কিমি।
(iii) দৃশ্যমান অপর নাম এই সময় চাঁদকে ছােটো ও অনুজ্জ্বল দেখায়। এই সময় চঁাদকে অ্যাপােজি অপেক্ষা 12%-14% বড়াে ও 25-30 গুণ বেশি উজ্জ্বল দেখায়।
জোয়ারের তীব্রতা অ্যাপােজি অবস্থানে জোয়ার ভাটার তীব্রতা কম হয়। পেরিজি অবস্থান জোয়ারভাটার তীব্রতা বেশি হয়।
বারিমন্ডল – রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. সমুদ্রস্রোতের প্রভাব লেখাে। অথবা, সমুদ্রস্রোতের গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : সমুদ্রস্রোত জলবায়ু ও মানুষের অর্থনৈতিক কাজকর্মকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। যেমন-
(1) জলবায়ুর ওপর প্রভাব :
(i) উয়তার হ্রাসবৃদ্ধিতে : উয় সমুদ্রস্রোত উচ্চঅক্ষাংশীয় অঞ্চলে উয়তা বৃদ্ধি করে। যেমন—উয় উত্তর আটলান্টিক স্রোত নরওয়ের উপকুলীয় অঞ্চলে উয়তা বৃদ্ধি করে। শীতল সমুদ্রস্রোত সংশ্লিষ্ট উপকুলীয় অঞ্চলের উয়তা হ্রাস করে। যেমন— শীতল লাব্রাডার স্রোতের প্রভাবে কানাডার পূর্ব উপকূলের উয়তা হ্রাস পায়।
(ii) বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত : উয় উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে ইংল্যান্ডের পশ্চিম উপকুলে বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে শীতল বেরিং স্রোতের প্রভাবে রাশিয়ার পূর্ব উপকূলে তুষারপাত হয়।
(iii) ঝড়ঝঞা ও কুয়াশা : উয় ও শীতল সমুদ্রস্রোতের মিলন স্থলে কুয়াশা, ঝড়-ঝঞ্চার সৃষ্টি হয়।
(iv) মরুভূমির সৃষ্টি : ক্রান্তীয় অঞ্চলে শীতলস্রোত প্রভাবিত মহাদেশগুলির পশ্চিমাংশে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কমে গিয়ে উয় মরুভূমি সৃষ্টি করে। যেমন—কালাহারি, সােনেরান, আটাকামা প্রভৃতি মরুভূমি সৃষ্টির অন্যতম কারণ শীতলস্রোত।
(2) পরিবহন ব্যবস্থার ওপর প্রভাব : (i) সমুদ্রস্রোতের অনুকুলে জাহাজ চলাচলের সুবিধা হয়। (ii) উয় সমুদ্রস্রোত উপকূলীয় অঞ্চলের বন্দরগুলিকে বরফযুক্ত রাখে। (iii) শীতল স্রোতের সঙ্গে আগত হিমশৈল জাহাজ চলাচলে বাধা দেয় ও বিপদ সৃষ্টি করে।
(3) মাচড়া ও মৎস্য আহরণ : শীতলস্রোতের সঙ্গে আগত বরফ উয়স্রোতের সংস্পর্শে গলে গিয়ে সেই সঙ্গে আসা নুড়ি, বালি, কাদা অধঃক্ষিপ্ত হয়ে অগভীর মগ্নচড়া সৃষ্টি করে। যেখানে প্ল্যাঙ্কটনের প্রাচুর্য থাকায় বিপুল পরিমাণ মৎস্যের সমাবেশ ঘটে ও বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ ক্ষেত্র তৈরি হয়। যেমন—উত্তর পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগরীয় ক্ষেত্র।
(4) জীবজগতের ওপর প্রভাব : (i) স্রোতের মাধ্যমে সমুদ্রজলের উয়তা নিয়ন্ত্রিত হয় যা সামুদ্রিক জীবের বসবাস নিয়ন্ত্রিত হয়। (i) উম্ন স্রোত সামুদ্রিক জীব, মাছ, প্রবাল, প্ল্যাঙ্কটন বিস্তারের আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। (ii) স্রোতের উর্ধ্বমুখী প্রবাহ বা আবর্তের কারণে লবণতার পরিমাণ নির্ভর করে। (iv) অন্যদিকে এলনিনাের প্রভাবে পেরু চিলি উপকুলে প্ল্যাঙ্কটন ও মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
2. জোয়ার ভাটা কীভাবে সৃষ্টি হয় চিত্রসহ ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : প্রধানত দুটি কারণে পৃথিবীতে জোয়ার ভাটার সৃষ্টি হয়। যথা-(i) পৃথিবীর ওপর চঁদ ও সূর্যের মিলিত মহাকর্ষ বলের প্রভাব এবং (ii) পৃথিবীর আবর্তন জনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব।
(i) পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের মিলিত মহাকর্ষ বলের প্রভাব : নিউটনের মহাকর্ষ নিয়ম অনুযায়ী পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য পরস্পর পরস্পরকে আকর্ষণ করে। যে বস্তুর ভর যত বেশি আকর্ষণ বল তার তত বেশি এবং যে বস্তুর দূরত্ব যত বেশি তার আকর্ষণ বল তত কম।
পৃথিবী থেকে সূর্য গড়ে 15 কোটি কিমি দূরে অবস্থিত এবং চাঁদ ও 3 লক্ষ 84 হাজার 400 কিমি দূরে অবস্থিত। তাই পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ বল (2.2 গুণ) বেশি। প্রধানত চাঁদের আকর্ষণেই সমুদ্রের জল স্ফীত হয়ে জোয়ারের সৃষ্টি করে। জোয়ারের সমকোণস্থ অঞ্চলের জলতল নেমে গিয়ে ভাটার সৃষ্টি করে। সূর্যের চন্দ্রের চেয়ে প্রায় 255 লক্ষ গুণ ভারি হলেও বহু দূরে (প্রায় 391 গুণ) অবস্থিত হওয়ার জন্য সূর্যের আকর্ষণে জোয়ার তত প্রবল হয় না। সিজিগি অবস্থানে পৃথিবীর একই স্থানে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণ কার্যকরী হওয়ায় জোয়ার খুব প্রবল হয়।
(i) পৃথিবীর আবর্তনজনিত কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব : পৃথিবীর আবর্তনজনিত কারণে কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয়, যার প্রভাবে সমুদ্রের জলরাশি বাইরের দিকে বিক্ষিপ্ত হওয়ায় প্রবণতা লাভ করে। এই বল মহাকর্ষ বলের বিপরীতে কাজ করে। অর্থাৎ চাঁদের আকর্ষণে যে স্থানে জোয়ার হয় তার বিপরীতে প্রতিপাদ স্থানে কেন্দ্রাতিগ বল অধিক কার্যকরী হওয়ায় সেখানে জোয়ার (গৌণ জোয়ার) হয়, তবে প্রাবল্য তুলনামূলক কম। জোয়ারের স্থানে বিপুল জলরাশি সরবরাহের জন্য এদের মধ্যবর্তী সমকোণস্থ স্থানগুলিতে জলতল নেমে গিয়ে ভাটার সৃষ্টি করে।
এছাড়া, সমুদ্রতলের ঢাল, তটভূমির প্রকৃতি, জলস্তরের ওঠানামা, জলের পৃষ্ঠতলে বায়ুর গতিশক্তির ঘর্ষণ প্রভৃতি জোয়ারভাটা সৃষ্টিতে পরােক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
3. ভরা কোটাল এবং মরা কোটাল কীভাবে সৃষ্টি হয় ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : ভরা কোটাল : আবর্তনকালে পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিতে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করে (সিজিগি অবস্থান)। এই সময় জোয়ার অতি প্রবল হয় এবং সাধারণ জোয়ার অপেক্ষা 20% জল বেশি ফুলে ওঠে। একেই ভরা কোটাল বলে।
পূর্ণিমায় ভরা কোটাল : পূর্ণিমা তিথিতে সিজিগি অবস্থানে পৃথিবী থাকে চাদ ও সূর্যের মাঝখানে (প্রতিযােগ)। এই অবস্থায় চাঁদের আকর্ষণে জোয়ার প্রবল আকার নেয় এবং বিপরীত অংশে কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাব ও সূর্যের আকর্ষণেও জোয়ার প্রবল হয়। একেই পূর্ণিমার ভরা কোটাল বা তেজ কোটাল বলে।
অমাবস্যায় ভরা কোটাল : অমাবস্যা তিথিতে সিজিগি অবস্থানে চাদ থাকে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে (সংযােগ)। এই অবস্থায় পৃথিবীর যে অংশে চাদের আকর্ষণ বল কাজ করে সেখানেই সূর্যের আকর্ষণ বলও কাজ করে। ফলে জল প্রবলভাবে ফুলে ওঠে এবং জোয়ার অতি প্রবল আকার নেয়। একে অমাবস্যার ভরা কোটাল বা তেজ কোটাল বলে। পূর্ণিমার ভরা কোটাল অপেক্ষা অমাবস্যার ভরা কোটাল অনেক তেজি হয়।
মরা কোটাল বা মরা জোয়ার : কৃয় ও শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পৃথিবীর সাপেক্ষে চাঁদ ও সূর্য পরস্পরের সমকোণে অবস্থান করে। এরূপ অবস্থায় পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের ঠিক সামনে থাকে সেখানে জোয়ার হয়। এক্ষেত্রে চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ বল পরস্পরের বিপরীতে কাজ করে বলে সমুদ্রের জলরাশি সেভাবে ফুলে ওঠে না। অষ্টমী তিথির এই জোয়ারকে মরা কোটাল বা মরা জোয়ার বলে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ]:[প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. ছেড়া কাগজ থেকে পুনরায় কাগজ তৈরি করা হল যে ধরনের প্রক্রিয়া –
[A] পুনর্নবীকরণ [B] পরিমাণ হ্রাস [C] পৃথকীকরণ [D] পুনর্ব্যবহার
উত্তরঃ [A] পুনর্নবীকরণ
2. গৃহস্থালীর বর্জ্যের উদাহরণ হল—
[A] কীটনাশক [B] তরিতরকারির খােসা [C] ইনজেকশনের সিরি [D] বীজ
উত্তরঃ [B] তরিতরকারির খােসা
3. মৃতপ্রাণী বা গাছের পচা ডালপালা যে ধরনের বর্জ্যের উদাহরণ-
[A] গৃহস্থালী [B] তেজস্ক্রিয় [C] জৈব [D] কৃষিজ
উত্তরঃ [C] জৈব
4. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার তিনটি মূল প্রক্রিয়া হল-
[A] 3s [B] 3z [C] 3R [D] 3B
উত্তরঃ [C] 3R
5. পরিবেশের জীবজ ও অজীব উপাদনের মধ্যে গড়ে ওঠা পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ককে বলা হয়—
[A] বাস্তুতন্ত্র [B] গ্রিন হাউস [C] জীবতন্ত্র [D] জলতন্ত্র
উত্তরঃ [A] বাস্তুতন্ত্র
6. পরিবেশে থাকা এক ধরনের সবুজাভ সহজ দাহ্য গ্যাস হল-
[A] মিথেন [B] অক্সিজেন। [C] নাইট্রোজেন [D] নাইট্রাস অক্সাইড
উত্তরঃ [A] মিথেন
7. সিমেন্ট তৈরিতে যে প্রক্রিয়া প্রয়ােগ করা হয় সেটা হল—
[A] কম্পােজিট [B] স্ক্র্যাবার [C] ল্যান্ডফিল [D] নিষ্কাশন
উত্তরঃ [B] স্ক্র্যাবার
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. বর্জ্য পদার্থগুলিকে কোনাে স্থানে ফেলে জমাট করার পদ্ধতিকে বলে ____________
উত্তর : ভরাটকরণ বা Landfil
2. বর্জ্য থেকে নির্গত একটি গ্যাস হল, ______________
উত্তর : মিথেন।
3. প্রকৃতির বৃক্ক’ বলা হয় __________
উত্তর : জলাভূমিকে
4. GAP’-এর পুরাে নাম ____________
উত্তর : গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. ইউট্রোফিকেশন কী?
উত্তর : পরিপােষক দুষণের ফলে হ্রদ জলাশয় ও পুকুরে যে প্রক্রিয়ায় অ্যালগি জাতীয় জলজ উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটে এবং জলাশয় ক্রমশ ভরাট হয়ে আসে, সেই প্রক্রিয়াকে ইউট্রোসিকেশন বলে।
2. Bio-gas কী?
উত্তর : জৈব পদার্থকে বন্ধ জায়গায় রেখে যে জ্বালানি গ্যাস উৎপন্ন করা হয়, তাকে Bio- gas বা জৈব গ্যাস বলে। জৈব গ্যাসের কাঁচামাল হিসাবে সাধারণত গােবর ব্যবহার করা হয়। এটি একটি পুনর্ভব শক্তি সম্পদ ও পরিবেশমিত্র।
3. ল্যান্ডফিল কী?
উত্তর : লােকালয় থেকে দুরে ফাঁকা জায়গায় কিংবা নীচু জমিতে বিপজ্জনক নয় এমন কঠিন বর্জ্য পদার্থ জমা করাকে ‘ল্যান্ডফিল’ বলে। এ পদ্ধতি প্রয়ােগে খরচ কম হয় এবং এটি পরিকল্পনাহীন। সাধারণ নির্মাণ সামগ্রী, গার্হস্থ্য ও কুটির শিল্পজাত সামগ্রী নিক্ষেপ করা হয়।
4. জীববিশ্লেষ্য বর্জ্য ও জীব অবিশ্লেষ্য বর্জ্য পদার্থ কী?
উত্তর : জীববিশ্লেষ্য বর্জ্য পদার্থ হল সেই সমস্ত বর্জ্য পদার্থ যা যেকোনাে জীব, মূলত আণুবীক্ষণিক বিয়ােজক দ্বারা বিশ্লেষ্য হতে পারে। উদাঃ—উচ্ছিষ্ট খাদ্য বস্তু যে সমস্ত বর্জ্য পদার্থ কোনাে জীব দ্বারা বিয়ােজিত হয় না তাদের জীব অবিশ্লেষ্য বর্জ্য পদার্থ বলে। উদাঃ—কৃত্রিম পলিমার, প্লাস্টিক, ডিডিটি, কাচ ইত্যাদি।
5. ভার্মি কম্পােস্টিং কাকে বলে?
উত্তর : জৈব বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি পদ্ধতি হলাে ভার্মি কম্পােস্টিং। এই পদ্ধতিতে জৈব বর্জ্য পদার্থ, মানুষ বা গবাদি পশুর মল ব্যাকটিরিয়া দ্বারা পচন ঘটিয়ে হিউমাসে পরিণত করা হয়। কেঁচো, আবায়বীয় ব্যাকটেরিয়া দ্বারা জৈব বর্জ্যের সন্ধান প্রক্রিয়া ঘটে। 2-3 সপ্তাহের মধ্যে এই জৈবসার প্রস্তুত হয়।
6. ধোঁয়াশা (Smog) কী?
উত্তর : নাইট্রোজেন অক্সাইড ও হাইড্রোকার্বনের সঙ্গে সূর্যরশ্মির আলােক রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটলে যে ধোঁয়াটে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে ধোঁয়াশা বলে। এর ফলে নাক, জ্বালা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হয়। শীতকালে ধোঁয়াশা বেশি হয়।
7. London Smog ঘটনাটি কী?
উত্তর : 1952 সালে বায়ুদূষণজনিত কারণে যে ভয়ঙ্কর ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছিল লন্ডন শহরে তা London Smog নামে পরিচিত। শিল্প কারখানার অতিরিক্ত ভাসমান কয়লা গুড়াে, ঘূর্ণবাতের ফলে শহর জুড়ে ধোঁয়াশার একটি পুরু স্তর সৃষ্টি করেছিল যেটি 5 ডিসেম্বর 1952 থেকে 9 ডিসেম্বর 1952 পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল ঘটনাটি।
8. PAN কী?
উত্তর : PAN হলাে পারঅক্সি অ্যাসাইট নাইট্রেট, যা একটি গৌণ বায়ুদূষক যানবাহনের ধোঁয়া, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া এর উৎস। ধোঁয়া সৃষ্টির অন্যতম কারণ। বাতাসে এর উপস্থিতি মানুষের চোখের সমস্যা এবং ফুসফুসের সমস্যা সৃষ্টি করে।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ম্যানিওর পিট কী?
উত্তর : গ্রামাঞ্চলে বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপস্থল, সংগ্রহ ও তার নির্বিকরণ পদ্ধতি না থাকায় বর্জ্য পদার্থ যত্রতত্র ফেলা হয়। ফলে দূষিত হয়। ম্যানিওর পিট ব্যবস্থায় বাড়ির আশে পাশে গর্ত তৈরি করে গৃহস্থালির সকল প্রকার বর্জ্য পদার্থ ওই গর্তে 5-6 আশে পাশে গর্ত তৈরি করে গৃহস্থালির সকল প্রকার বর্জ্য পদার্থ ওই গর্তে 5-6 মাস ধরে চাপা দেওয়া হয় যা পরে জৈবসারে পরিণত হয় এবং কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়।
2. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় Fly Ash-এর ভূমিকা কী?
উত্তর : কয়লা নির্ভর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রচুর পরিমাণে ফ্লাই অ্যাশ ও তলানি ছাই উৎপন্ন হয়। ফ্লাই অ্যাস সিমেন্ট ও ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া বাঁধ তৈরি করতে, খনির ফাকা স্থান পূরণ করার কাজে, নীচু জমি ভরাট করতে, মৎস্য প্রকল্পে ফ্লাই অ্যাশ ব্যবহার করা হয়।
3. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্কাবারের ভূমিকা কী?
উত্তর : এই পদ্ধতিতে শিল্প থেকে নির্গত বায়ুদূষণকারী পদার্থ ও গ্যাসের অপসারণ ঘটিয়ে বায়ুকে বিপন্মুক্ত করা হয়। এটি দু’ প্রকার—(i) শুদ্ধ স্ক্রাবার ব্যবহার করা হয় নির্গত ধোঁয়া থেকে অন্নদূর করার জন্য। এবং (ii) আর্দ্র স্ক্রাবার ব্যবহার করা হয় দূষণকারী গ্যাস, দূষণ কণা দূর করার জন্য।
4. কম্পােস্টিং প্রক্রিয়া কী?
উত্তর : জৈব বর্জ্য পদার্থ, মানুষ বা গবাদি পশুর মলকে ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা পচন ঘটিয়ে হিউমাসে বা জৈবসারে পরিণত করাকে কম্পােস্টিং বলে। কম্পােস্টিং-এর সময় উপজাত বস্তু হিসাবে CO, জল ও তাপ উৎপন্ন হয়। এই পদ্ধতিতে 60°C বা তার বেশি উয়তা উৎপন্ন হওয়ায় মশা-মাছির ডিম বা লার্ভা নষ্ট হয়। আগাছা ও অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস হয়। আমাদের দেশে দুটি পদ্ধতিতে কম্পােস্টিং করা হয়। (i) বেঙ্গালুরু পদ্ধতি ও (ii) যান্ত্রিক কম্পােস্টিং ।
5. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় 4R এর ভূমিকা কী?
উত্তর : 4Rহল—(i) Reduction-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রথম স্তম্ভ হলাে বর্জ্যের পরিমাণকে হ্রাস করা। (ii) Waste Recycling-ব্যবহারের অনুপযুক্ত পদার্থকে পুনরায় ব্যবহারের উপযােগী করে তােলাকে বর্জ্যের পুনর্নবীকরণ বলে। (iii) Reuse-কোনাে পরিবর্তন ছাড়াই বর্জ্য পদার্থের ব্যবহার করা হলে তাকে পুনর্ব্যবহার বলে। (iv) Rot- কম্পােস্টিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জৈব বর্জকে জৈব সারে পরিণত করে কৃষিকাজে ব্যবহার করার প্রক্রিয়া।
6. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের ভূমিকা আলােচনা করাে।
উত্তর : বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীরা নিম্নলিখিত কাজগুলি করতে পারে- (i) বাড়ির বর্জ্য নির্দিষ্ট পাত্রে একত্রিত করা। (ii) ম্যানিওর পিট ব্যবস্থায় জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। (iii) নিজের শ্রেণিকক্ষ এবং স্কুল প্রাঙ্গণ বর্জ্য মুক্ত রাখা। (iv) নিকটস্থ হাট বাজার পর্যবেক্ষণ করে দূষণ সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।
7. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়ােজনীয়তা আলােচনা করাে।
উত্তর : বর্জ্য বা জঞ্জালকে কমিয়ে এনে মুক্ত করে পৃথিবীকে সুষ্ঠু বাসযােগ্য করে গড়ে তােলার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়ােজন। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে হাসপাতালের মােট বর্জ্যের 10% সংক্রামক বর্জ্য। খুব সহজেই এই 10% বর্জকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। পরিবেশ তথা মানব জাতি সমূহ সমগ্র জীবজগৎকে বাঁচাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার
8. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কী? এবং পদধতিগুলির নাম লেখাে।
উত্তর : দূষণ মাত্রাকে প্রকৃতির সহ্যসীমার মধ্যে রাখার উদ্দেশ্যে যে বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিভিন্ন উৎসস্থল থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ করিয়ে আনা, পুনর্নবীকরণ ও সংরক্ষণ করা হয় তাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগুলি হলাে—(i) বর্জ্য পৃথকীকরণ (i) ভরাটকরণ (iIi) কম্পােস্টিং (iv) নিকাশি বা নিষ্কাশন ব্যবস্থা (v) স্ক্রাবার ইত্যাদি।
ভারত : ভূমিকা, প্রাকৃতিক পরিবেশ
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ]:[প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. যে পর্বতকে হিমালয়ের উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত হিসেবে ধরা হয়—
[A] গডউইন অস্টিনকে [B] নাঙ্গা পর্বতকে [C] কাঞ্চনজঙ্ঘাকে [D] অন্নপূর্ণাকে
উত্তরঃ [B] নাঙ্গা পর্বতকে
2. শ্রীনগর ও জম্মুর মধ্যে সংযােগ রক্ষা করেছে—
[A] জোজিলা পাস। [B] নাথুলা পাস [C] বানিহাল পাস [D] সােলারগড় পাস
উত্তরঃ [C] বানিহাল পাস
3. কোঙ্কন উপকূল অবস্থিত যে সাগরের তীরে –
[A] আরবসাগর [B] বঙ্গোপসাগর [C] ভারতমহাসাগর [D] চিন সাগর
উত্তরঃ [A] আরবসাগর
4. কৃয়া নদীর বদ্বীপের পূর্বভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূল ভাগকে বলা হয়—
[A] ওড়িশা উপকূল [B] অন্ত্র উপকূল [C] করমণ্ডল উপকূল [D] উত্তর সরকার উপকূল
উত্তরঃ [D] উত্তর সরকার উপকূল
5. ভারতের বৃহত্তম নদী বাঁধ হল-
[A] নাগার্জুন সাগর [B] ম্যাসানজোর [C] হীরাকুঁদ [D] আক্রা-নাঙ্গাল
উত্তরঃ [D] আক্রা-নাঙ্গাল
6. ভারতের উচ্চতম লবণাক্ত জলের হ্রদ হল—
[A] প্যাংগং [B] ডাল [C] সাততাল [D] মিকির
উত্তরঃ [A] প্যাংগং
7. শিবালিক ও মধ্য হিমালয়ের মাঝে অবস্থিত ‘দুন উপত্যকা অবস্থিত
[A] হিমাচল প্রদেশে [B] অরুণাচল প্রদেশে [C] উত্তরাখণ্ডে [D] কাশ্মীরে
উত্তরঃ [C] উত্তরাখণ্ডে
8. মহারাষ্ট্রের উপকূল অঞ্চলকে বলে—
[A] করমণ্ডল উপকূল [B] মালাবার উপকূল [C] কোঙ্কন উপকূল [D] তামিলনাড়ু উপকূল
উত্তরঃ [C] কোঙ্কন উপকূল
9. পশ্চিম উপকূলের উপহ্রদগুলিকে বলা হয়—
[A] কয়াল [B] ভাবর [C] ধান্দ। [D] তাল
উত্তরঃ [A] কয়াল
10. ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহটি হল-
[A] জেমু [B] সিয়াচেন [C] চেমায়ুংদুং [D] গঙ্গোত্রী
উত্তরঃ [B] সিয়াচেন
14. মহারাষ্ট্রের নাসিকের কাছে ত্র্যম্বক উচ্চভূমি থেকে যে নদীটির উৎপত্তি হয়েছে, সেই নদীর নাম-
[A]গােদাবরী [B] কৃয়া [C] সরাবতী [D] কাবেরী
উত্তরঃ [A]গােদাবরী
11. ভারতের পশ্চিম উপকূলের ভেনাদ কয়াল অবস্থিত-
[A] কোঙ্কনে [B] মালাবারে [C] গুজরাতে [D] রাজস্থানে
উত্তরঃ [B] মালাবারে
12. আরাবল্লি পর্বত থেকে উৎপন্ন হওয়া নদীটির নাম
[A] কাবেরী [B] চম্বল। [C] সবরমতী [D] লুনি
উত্তরঃ [C] সবরমতী
13, জব্বলপুরের কাছে ধুয়াধর জলপ্রপাতটি যে নদীর ওপর অবস্থিত সেটি হল-
[A] তাপ্তী [B] নর্মদা [C] কাবেরী [D] তুঙ্গভদ্রা
উত্তরঃ [B] নর্মদা
14. ভারতের একটি অন্তর্বাহিনী নদী হল—
[A] সবরমতী [B] নর্মদা [C] লুনি [D] কাবেরী
উত্তরঃ [C] লুনি
15. যমুনােত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গার উপনদী যমুনা’ যে শহরের কাছে গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়েছে-
[A] লখনউ [B] আগ্রা [C] রাজমহল [D] এলাহাবাদ
উত্তরঃ [D] এলাহাবাদ
16. গাৱসােপ্পা বা যােগ জলপ্রপাতটি যে নদীর ওপর অবস্থিত সেটি হল—
[A] কৃয়া [B] সরাবতী [C] কাবেরী [D] গােদাবরী
উত্তরঃ [B] সরাবতী
17. মৌসুমি কথার উৎপত্তি ‘মৌসিন’ শব্দ থেকে। এটি একটি
[A] বাংলা শব্দ [B] মালয়ালাম শব্দ [C] আরবি শব্দ [D] ফারসি শব্দ।
উত্তরঃ [C] আরবি শব্দ
18. পূর্ব ভারতে কালবৈশাখী দেখা যায়-
[A] মার্চ-মে মাসে [B] জুন-জুলাই মাসে [C] সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে [D] ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে
উত্তরঃ [A] মার্চ-মে মাসে
19. আবৃষ্টি দেখা যায়-
[A] পূর্ব ভারতে [B] দক্ষিণ ভারতে [C] উত্তর ভারতে [D] উত্তর-পশ্চিম ভারতে
উত্তরঃ [B] দক্ষিণ ভারতে
20. কার্পাস চাষের পক্ষে খুব ভালাে—
[A] কৃয়মৃত্তিকা [B] এঁটেল মৃত্তিকা [C] পডসল মৃত্তিকা [D] নবীন পলি মৃত্তিকা
উত্তরঃ [A] কৃয়মৃত্তিকা
21. ভারতের প্রায় 46% অঞ্চল জুড়ে আছে যে মৃত্তিকা
[A] রেগুর মৃত্তিকা [B] ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা [C] পডসল মৃত্তিকা [D] পলি মৃত্তিকা
উত্তরঃ [D] পলি মৃত্তিকা
22. তরাই অঞলের মৃত্তিকার অপর নাম-
[A] ভাবর [B] ভুর [C] ভাঙ্গার [D] খাদার
উত্তরঃ [A] ভাবর
23. প্লাবনভূমিতে গঠিত নবীন পলিমাটিকে বলে—
[A] ভুর [B] ভাঙ্গার [C] খাদার [D] ভাবর
উত্তরঃ [C] খাদার
24. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা দেখা যায়—
[A] গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে [B] ছােটোনাগপুর মালভূমি অঞ্জলে [C] রাজস্থানের মরু অঞ্চলে [D] পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে।
উত্তরঃ [B] ছােটোনাগপুর মালভূমি অঞ্জলে
25. মার্চ-এপ্রিল মাসে নিম্নচাপজনিত ঝড় অসমে যে নামে পরিচিত
[A] বরদাইছিলা [B] নরওয়েস্টার [C] কালবৈশাখী [D] আঁধি
উত্তরঃ [A] বরদাইছিলা
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. সােনালি তন্তু ____________ কে বলা হয়।
উত্তর : পাট।
2. একটি লৌহ-সংকর ধাতুর নাম ।
উত্তর : ইস্পাত।
3. পশ্চিমবঙ্গের একটি জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হল প্রকল্প।
উত্তর : জলঢাকা।
4. _______________ শিল্পকে ভারতে ‘আধুনিক শিল্প’ বলা হয়।
উত্তর : পেট্রো-রসায়ন।
5. ভারতের নবীনতম রাজ্য হল ________ ।
উত্তর : তেলেঙ্গানা।
6. গুজরাতের প্রধান বন্দর _____________
উত্তর : কান্ডালা।
7.____________ কে হ্রদের শহর বলা হয়।
উত্তর : হায়দরাবাদ।
৪, ভারতের সর্বাধিক জনঘনত্বপূর্ণ রাজ্যটি হল ______________ –
উত্তর : পশ্চিমবঙ্গ।
9. সর্বাধিক সাক্ষর রাজ্যটির নাম ________________ ।
উত্তর : কেরালা।
10. ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহের নাম
উত্তর : সিয়াচেন।
11. যে সম্পদ শুধুমাত্র পৃথিবীর একটি স্থানেই আছে, তাকে বলে _______________ সম্পদ।
উত্তর : অদ্বিতীয়।
12. সম্পদ সৃষ্টির উপাদান অনুসারে সম্পদ প্রকার ______________ ।
উত্তর : তিন।
13, যে সব সম্পদ ক্রমাগত ব্যবহার করলেও নিঃশেসিত হয় না, তাদের ___________ সম্পদ বলে।
উত্তর : প্রবহমান।
একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাও :
1. সিপকিলা, লিপুলেখ ও নাথুলা কী?
উত্তর : সিপকিলা, লিপুলেখ ও নাথুলা হল—হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি গিরিপথ।
2. ভূস্বর্গ’ বা ‘প্রাচ্যের নন্দনকানন কাকে বলে ?
উত্তর : অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য কাশ্মীর উপত্যকাকে ‘ভূস্বর্গ’ বা ‘প্রাচ্যের নন্দনকানন বলা হয়।
3. ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাতটির নাম কী?
উত্তর : ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাতটির নাম গেরসােপ্পা বা যােগ জলপ্রপাত।
4. ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমিটির নাম কী?
উত্তর : ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমিটির নাম লাডাক মরুভূমি।
5. ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহ কোনটি?
উত্তর : ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহটির নাম সিয়াচেন হিমবাহ।
6. ভারতের জীবন্ত আগ্নেয়গিরিটির নাম কী?
উত্তর : ভারতের জীবন্ত আগ্নেয়গিরিটির নাম ব্যারেন দ্বীপ।
7. ভারতের নবগঠিত রাজ্য কোনটি?
উত্তর : ভারতের নবগঠিত রাজ্যটির নাম তেলেঙ্গানা (2014-2,জুন)।
৪. ভারত পাকিস্তান সীমারেখা কী নামে পরিচিত?
উত্তর : ভারত পাকিস্তান সীমারেখা র্যাডক্লিফ লাইন ও LoC নামে পরিচিত।
9. হিমালয় কী জাতীয় পর্বত?
উত্তর : হিমালয় ভঙ্গিল জাতীয় পর্বত।
10. দুন কাকে বলে?
উত্তর : কুমায়ুন হিমালয়ের মধ্যে হিমালয় পর্বতশ্রেণি এবং শিবালিক পর্বতশ্রেণির মধ্যবর্তী অংশে যে দীর্ঘ উপত্যকা রয়েছে তাকে দুন বলে।
11. পশ্চিম হিমালয়ের একটি উষ্ণ প্রস্রবণের নাম করাে।
উত্তর : পশ্চিম হিমালয়ের একটি উষ্ণ প্রস্রবণ হল কাশ্মীরের ভেরনাগ।
12. ‘বসুধার ধবল শীর্ষ’ কাকে বলে?
উত্তর : কারাকোরাম পর্বতশ্রেণিকে ‘বসুধার ধবল শীর্ষ’ বলে।
13. ভারতের কোন শহরে মৃত্তিকা গবেষণাগার স্থাপিত হয়েছে?
উত্তর : ভারতের উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে মৃত্তিকা গবেষণাগার স্থাপিত হয়েছে।
14. মৃত্তিকা সংরক্ষণের প্রধান উপায় কী?
উত্তর : মৃত্তিকা সংরক্ষণের প্রধান উপায় হল বৃক্ষরােপণ।
15. তিনটি চিরসবুজ বৃক্ষের নাম লেখাে।
উত্তর : তিনটি চিরসবুজ বৃক্ষ হল—শিশু, গর্জন ও তুন।
16. ভারতের কোন রাজ্যে বনভূমির পরিমাণ সর্বাধিক?
উত্তর : ভারতের মধ্যপ্রদেশে বনভূমির পরিমাণ সর্বাধিক।
17, ভারতের মরু অঞলে কোন ধরনের উদ্ভিদ জন্মায়?
উত্তর : ভারতের মরু অঞ্চলে ক্যাকটাস বা ফণিমনসা, বাবলা, ঘাস, খেজুর প্রভৃতি বিভিন্ন মরু উদ্ভিদ বা জেরােফাইটিক প্ল্যান্টস জন্মায়।
18. ভারতের একমাত্র ভাসমান অভয়ারণ্যের নাম কী?
উত্তর : ভারতের একমাত্র ভাসমান অভয়ারণ্যের নাম মণিপুর রাজ্যের কইরুল লামজা।
19. ভারতে মােট বনভূমির পরিমাণ কত?
উত্তর : ভারতের মােট বনভূমির পরিমাণ মাত্র 21.05%।
20. একটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের নাম লেখাে।
উত্তর : একটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের নাম হল গরান।
21, ধান চাষের জন্য কত ডিগ্রি তাপমাত্রার প্রয়ােজন হয় ?
উত্তর : ধান চাষের জন্য 20° সে থেকে 30° সেন্টিগ্রেড উয়তার প্রয়ােজন হয়।
22. ভারতে ধান গবেষণাগার কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : ভারতে ধান গবেষণাগার কেন্দ্রটি ওড়িশার কটকে অবস্থিত।
23. হটিকালচার কাকে বলে?
উত্তর : বাগানের মধ্যে বিভিন্ন শাকসবজি, ফল প্রভৃতির উৎপাদনকে হর্টিকালচার বলে। হর্টিকালচারকে বলে বাজার বাগান বা উদ্যান কৃষি।
24. গম উৎপাদনে ভারতের কোন রাজ্য প্রথম স্থান অধিকার করে?
উত্তর : গম উৎপাদনে ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্য প্রথম স্থান অধিকার করে।
25. ভারতের গম গবেষণাগার কেন্দ্রটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : ভারতের গম গবেষণাগার কেন্দ্রটি দিল্লির কাছে পুষায় অবস্থিত।
26. কোন ধরনের মাটিতে গম চাষ ভালাে হয় ?
উত্তর : দো-আঁশ মাটিতে গম চাষ ভালাে হয়।
27. ভারতের দুটি প্রধান তন্ত্রশস্যের নাম লেখাে।
উত্তর : ভারতের দুটি প্রধান তন্ত্রশস্যের নাম হল-(i) পাট ও (i) তুলাে।
28, কয়েকটি উন্নতফলনশীল তলােৰীজের নাম করাে।
উত্তর : কয়েকটি উন্নতফলনশীল তুলােবীজের নাম হল-সুজাতা, MCU-4, MCU-5।
29. তুলাে চাষের জন্য কী পরিমাণ বৃষ্টিপাত ও উয়তার প্রয়ােজন হয় ?
উত্তর : তুলাে চাষের জন্য 50 সেমি থেকে 100 সেমি বৃষ্টিপাত ও 20° সেলসিয়াস থেকে 25° সেলসিয়াস উয়তার প্রয়ােজন হয়।
30. তুলাে চাষের জন্য কীরকম মাটির প্রয়ােজন?
উত্তর : তুলাে চাষের জন্য চুন মেশানাে উর্বর দো-আঁশ মাটি বা কৃয় মৃত্তিকার প্রয়ােজন হয়।
31. বাণিজ্য ফসল কাকে বলে?
উত্তর : প্রধানত রপ্তানি বা বাণিজ্যের জন্য যে সব ফসল উৎপাদন করা হয়, সেগুলিকে বাণিজ্য ফসল বলে।
ভারতের ভূ-প্রকৃতি
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. ‘দুন’ বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : হিমাদ্রি হিমালয় ও হিমাচল হিমালয় থেকে উৎপন্ন নদীগুলি শিবালিকের উত্তরদিকে যে উপত্যকা গঠন করেছে তাকে দুন উপত্যকা বলে। এই উপত্যকা উর্বর হওয়ায় কৃষিকার্য ভালাে হয় এবং জনবসতি ঘন। উত্তরাখণ্ড রাজ্যের দেরাদুন ভারতের বৃহত্তম দুন।
2. ‘কয়াল’ কী?
উত্তর : উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রতরঙ্গ বাহিত নুড়ি, বালি প্রভৃতি সঞ্চয়ে পুরােদেশীয় বাঁধ গঠিত হয়। পুরােদেশীয় বাঁধের পশ্চাতে আবদ্ধ লবণাক্ত জলাভূমিকে কয়াল বলে। কেরালার ভেম্বনাদ একটি কয়াল।
3. মরুস্থলী’ কী?
উত্তর : ভারতীয় মরু অঞ্চলের সর্ব পশ্চিম অংশে অবস্থিত উদ্ভিদহীন বালুকাময় যে মরুভূমি অঞ্চলটিকে মরুস্থলী। মরুস্থলী’ শব্দটির অর্থ ‘মৃতের দেশ। অতি অল্প বৃষ্টিপাতের কারণে এই অঞ্চলে জীবনের অস্তিত্ব প্রায় নেই। এখানে বেলে ও চুনা পাথর গঠিত ছােটো ছােটো টিলা দেখা যায়।
4, পূর্বাচল কী?
উত্তর : ভারতের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের উত্তর পূর্ব দিকের প্রসারিত অঞলটি পূর্বাঞ্চল নামে পরিচিত। ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে পূর্বাঞ্চল গঠিত। এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা 1500-4000 মি.। পাটকাই, নাগা, লুসাই, মিশনি এখানকার উল্লেখযােগ্য পর্বতশ্রেণি।
5. ডেকানট্টাপ’ কী?
উত্তর : ডেকান শব্দটির অর্থ দাক্ষিণাত্য এবং ‘টাপ’ শব্দটির অর্থ ‘সিঁড়ি’। মহারাষ্ট্রের লাভা গঠিত মালভূমিটি ডেকানট্রাপ নামে পরিচিত। প্রায় 6-7 কোটি বছর পূর্বে ভূ-ত্বকের প্রশস্ত ফাটল দিয়ে তরল ম্যাগমা বেরিয়ে এটি সিঁড়ি মত গঠন তৈরি করেছে। প্রাচীন ভূ-খণ্ড গন্ডােয়ানাল্যান্ডের অংশবিশেষ।
6. কারেওয়া কী?
উত্তর : উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে কাশ্মীর উপত্যকায় পাহাড়ের ধাপযুক্ত ঢালু অংশকে বলা হয় কারেওয়া।
7. মালনাদ ও ময়দান কী?
উত্তর : মহারাষ্ট্র মালভূমির দক্ষিণে অবস্থিত কর্ণাটক মালভূমি গ্রানাইট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত। এই মালভূমির বেশি উচ্চতাসম্পন্ন দক্ষিণ পশ্চিমাংশ মালনাদ ও কম উচ্চতাসম্পন্ন উত্তর পূর্বাংশ ময়দান নামে পরিচিত। মালদ বন্ধুর ও পর্বতময়। ময়দান তরঙ্গায়িত।
৪. আকসাই চিন কী?
উত্তর : ট্রান্স হিমালয়ের অন্তর্গত লাউক মালভূমির উত্তরপূর্বে একটি পর্বতবেষ্টিত উচ্চ মালভূমি আকসাই চিন নামে পরিচিত। এই অঞলের উচ্চতা 4500-6000 মি.। এই মালভূমি অঞ্চলে কয়েকটি লবণাক্ত হ্রদ আছে, যার মধ্যে লিং-জিং-টন উল্লেখযােগ্য।
9. তরাই কাকে বলে?
উত্তর : ভাবর অঞ্চলের দক্ষিণ প্রান্তে ভূ-গর্ভস্থ নদীগুলি যেখানে আত্মপ্রকাশ করেছে, সেখানকার 15 থেকে 30 কিমি প্রশস্ত সাতস্যাতে জলাভূমিকে সাধারণভাবে তরাই বলা হয়। এই অঞ্চলটি উত্তর পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ পূর্ব দিকে ঢালু হয়ে গেছে।
10. কচ্ছের রণ বলতে কী বােঝায়?
উত্তর : গুজরাত রাজ্যের উত্তরাংশে, তিনদিকে জলভাগ বেষ্টিত কচ্ছ উপদ্বীপের বিস্তীর্ণ, অগভীর, লবণাক্ত জলাভূমিকে কচ্ছের রণ বলে। এই অঞ্চলটি সম্পূর্ণ শুষ্ক, উদ্ভিদহীন ও সাদা লবণে ঢাকা বালুকাময় সমভূমিতে পরিণত হয়েছে।
11. ভাবর কাকে বলে?
উত্তর : উত্তর ভারতের অন্যতম ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ গঙ্গা সমভূমি। এই সমভূমি অঞ্চলের উত্তর প্রান্তের ভূমির নাম ভাবর। অঞ্চলটি হিমালয়ের পাদদেশীয় অঞ্চলে অবস্থিত।
12. তাল কাকে বলে?
উত্তর : কুমায়ুন হিমালয় অঞ্চলে হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদগুলিকে স্থানীয় ভাষায় তাল বলা হয়। যেমন—নৈনিতাল, সাততাল, ভীমতাল ইত্যাদি।
13. বাগার অল কাকে বলে?
উত্তর : থর মরু অঞ্চলের পূর্বপ্রান্তে আরাবল্লী পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত অল্প বালুকাময় অলটি হল বাগার অল। এই অঞ্চলটি প্রকৃতপক্ষে মরুভূমি ও সমভূমি অঞ্চলের মধ্যবর্তী অঞ্চল। এখানকার অধিকাংশ অল ঘাসে ঢাকা। রাজস্থান খাল এই অঞ্চলে কৃষি প্রসারে সাহায্য করেছে।
14. ‘থালি’ কী?
উত্তর : রাজস্থানের লুনির উত্তরে বালি গঠিত সমভূমি হল থালি।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. মালনাদ ও ময়দানের মধ্যে পার্থক্য আলােচনা করাে।
উত্তর : মালনাদ ও ময়দানের মধ্যে পার্থক্য –
বিষয় মালদান ময়দান
(i) অবস্থান কর্ণাটক মালভূমির পশ্চিমে অবস্থিত। কর্ণাটক মালভূমির পূর্বে অবস্থিত।
(ii) অর্থ মালনাদ’ শব্দের অর্থ ‘পাহাড়ি দেশ। ময়দান’ শব্দের অর্থ অনুচ্চ ভূমিভাগ।
(iii) ভূপ্রকৃতি এটি একপ্রকার ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি। এটি এক প্রকার সময় মালভূমি।
(iv) উচ্চতা মালনাদের উচ্চতা ময়দানের চেয়ে বেশি। ময়দানের উচ্চতা মালনাদের চেয়ে কম।
দশম শ্রেণী ভূগোল | ভারত : ভূমিকা, প্রাকৃতিক পরিবেশ – রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. উত্তরপূর্ব হিমালয়ে পাহাড়ি অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি আলােচনা করাে।
উত্তর : উত্তরপূর্ব পাহাড়ি অঞ্চল :
অবস্থান : ভারতের উত্তর পূর্বাংশে মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে উত্তর পূর্বের পাহাড়ি অঞ্চল অবস্থিত। এই উচ্চভূমিটি হিমালয় থেকে চুলের কাটার মতাে বাঁক নিয়ে উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত হয়েছে। ভূ-প্রকৃতি : উত্তর পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। নিম্নে তা। আলােচনা করা হল-
(a) পূর্বাঞ্চল : এই অংশে কতকগুলি ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণি উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত রয়েছে। এগুলির মধ্যে পাটকই, নাগা, লুসাই, মিরিক, মিশমি, কোহিমা প্রভৃতি প্রধান। মিশমি পাহাড়ের দাফাকুম (4579 মি.) পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। অন্যদিকে নাগা পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সরামতী শৃঙ্গ (3,826 মি.)। এই অঞ্চলের পাহাড়গুলির গড় উচ্চতা 1500-3000 মিটার। পূর্বাঞ্চলের মণিপুর রাজ্যের লােকটাক হ্রদটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র হ্রদ। মণিপুরের ইম্ফল উপত্যকা পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম উপত্যকা।
(b) মেঘালয় মালভূমি : বর্তমানে মেঘালয়ের মালভূমিটিকে উত্তরপূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলের অংশ ধরা হয়। প্রাচীনকালে এই অঞ্চলটি ছােটোনাগপুর মালভূমির অন্তর্গত ছিল। এই অংশের ক্ষয়প্রাপ্ত পাহাড় যেমন—গারাে, খাসি, জয়ন্তিয়া প্রভৃতি পশ্চিম থেকে পূর্বে অবস্থান করছে। এখানে শিলা পাহাড়ের শিলং শৃঙ্গ (1961 মি.) মেঘালয় মালভূমির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। এই মালভূমির পশ্চিমে অবস্থিত গারাে পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নরেক (1412 মি.)। এই মালভূমির দক্ষিণে অবস্থিত চুনাপাথরে গঠিত চেরা মালভূমি।
2. উত্তর ভারতের সমভূমির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। অথবা, উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির বিবরণ লেখাে।
উত্তর : উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চল : উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা ও দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্যবর্তী অবনমিত অংশে এই বিশাল সমভূমি অঞ্চল অবস্থান করছে। আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে এই সমভূমিটি প্রধান তিনটি ভাগে বিভক্ত। নিম্নে আলােচনা করা হল।
(a) পশ্চিমের সমভূমি : উত্তর ভারতের সমভূমির একেবারে পশ্চিমে এই সমভূমিটি অবস্থিত। এটি দুটি ভাগে বিভক্ত। (i) রাজস্থানের শুষ্ক সমভূমি—আরাবল্লী পর্বতের পূর্বাংশে একসময় নদীর পলিসঞ্চয়ে এই সমভূমির সৃষ্টি হয়। (ii) পাঞ্জাব হরিয়ানা সমভূমি—শতদ্র, বিপাশা, ইরাবতী প্রভৃতি নদীবাহিত পলিসগুয়ে এই সমভূমি গঠিত।
(b) গাঙ্গেয় সমভূমি : গঙ্গা নদীর প্রবাহ পথে উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে পলি সয়ে সৃষ্ট সমভূমি গাঙ্গেয় সমভূমি নামে পরিচিত। এই সমভূমির তিনটি ভাগে বিভক্ত। (i) উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমি—উত্তরপ্রদেশে যমুনার বামতীর থেকে এলাহাবাদ শহর পর্যন্ত বিস্তৃত। গড় উচ্চতা 100 মিটার থেকে 300 মিটার। (ii) মধ্যগাঙ্গেয় সমভূমি-পশ্চিমে এলাহাবাদ শহর থেকে পুর্বে রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। গড় উচ্চতা 25-100 মিটার। (iii) নিম্নগাঙ্গেয় সমভূমি-রাজমহল থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অংশ নিম্নগাঙ্গেয় সমভূমি নামে পরিচিত। এই সমভূমি উত্তরবঙ্গের সমভূমি (তরাই, তিস্তা, মহানন্দার সমভূমি), রাঢ় সমভূমি ও ব-দ্বীপ সমভূমিতে (পরিণত, মৃতপ্রায় ও সক্রিয়) বিভক্ত।
(c) ব্রহ্মপুত্র সমভূমি : অসম রাজ্যের প্রায় 56,000 বর্গ কিমি অঞ্চল ব্যাপী ব্রম্মপুত্র ও তার একাধিক উপনদীর পলি সঞ্জয়ে গঠিত এই ব্রম্মপুত্র সমভূমি। এই অংশের গড় উচ্চতা 50-100 মিটার। নদীর গতিপথে স্বাভাবিক বাঁধ, বালুচড়া, জলাভূমি, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ প্রভৃতি দেখা যায়।
দশম শ্রেণী ভূগোল | ভারত : ভূমিকা, প্রাকৃতিক পরিবেশ – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্ববাহিনী কেন?
উত্তর : গােদাবরী, মহানদী, কৃয়া, কাবেরী প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য নদীগুলি পূর্ববাহিনী। কারণ— (i) দক্ষিণ ভারতের ভূমিভাগের ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্বে। (ii) পশ্চিমদিক থেকে আগত আরবসাগরীয় পাতের চাপ প্রতিরােধ করতে গিয়ে দাক্ষিণাত্য মালভূমি ভূভাগ পশ্চিম থেকে পূর্বে ঢালু হয়ে গিয়েছে।
2. দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ নদী পূর্বাহিনী কিন্তু নর্মদা ও তাপ্তী নদী পশ্চিমবাহিনী কেন?
উত্তর : পূর্ব পশ্চিমে বিস্তৃত সাতপুরা পর্বতের উত্তর ও দক্ষিণে চ্যুতির ফলে দুটি গ্রস্ত উপত্যকা সৃষ্টি হয়েছে। নর্মদা ও তাপ্তী নদী ওই দুটি অবনমিত ভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার জন্য দাক্ষিণাত্য মালভূমির সাধারণ ঢাল নিরপেক্ষ হয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে।
3. জলবিভাজিকা ব্যবস্থাপনা বা জলবিভাজিকা উন্নয়ন বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : কোনাে নদী অববাহিকা অঞ্চলের জলবিভাজিকা সামগ্রিক ও বিজ্ঞানসম্মত উন্নয়নই হল জলবিভাজিকা উন্নয়ন বা ব্যবস্থাপনা। এই উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে কোনাে নদী অববাহিকা অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র, পরিবেশের উপাদান এবং সম্পদের স্থায়ী উন্নয়ন করা সম্ভব হয়।
4. জলসংরক্ষণ কী? এর গুরুত্ব আলােচনা করাে।
উত্তর : ভবিষ্যতে জলসংকট থেকে মুক্তি পেতে জলকে সংরক্ষণ করে রাখাই হল জলসংরক্ষণ। (i) দূষণ থেকে জলকে রক্ষা, (ii) জলের সুষম বণ্টন, (iii) ভৌম জলের যথাযথ ব্যবহার, (iv) জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, (v) জলসেচের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার, (vi) বনভূমির বৃদ্ধির মাধ্যমে জলসংরক্ষণ করা যায়।
5. GAP কী?
উত্তর : গঙ্গার দূষণ প্রতিরােধে গঙ্গা অ্যাক্সন প্লান (GAP) গঠিত হয়। 1985 খ্রিস্টাব্দে “সেন্ট্রাল গঙ্গা অথরিটি’ নামে একটি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার অধীনে ‘GAP পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যেসব শহরগুলি গঙ্গা দূষণের জন্য সর্বাধিক দায়ী সেখানে পরিকল্পনা মাফিক নিকাশি ব্যবস্থা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
6. DVC কী?
উত্তর : 1948 সালে কেন্দ্রীয় সরকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, বিহার সরকারের উদ্যোগে দামােদর পরিকল্পনার উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয় ‘দামােদর ভ্যালি কর্পোরেশন। 1955 সালে এর কাজ শেষ হয়। বন্যা প্রতিরােধ, জলসেচের সুবিধা, কলকাতার নাব্যতা বৃদ্ধি ও অনান্য সমস্যা সমাধানে দামােদর পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. দক্ষিণ ভারতে পশ্চিমবাহিনী নদী মােহানায় ব-দ্বীপ নেই কেন?
উত্তর : পশ্চিমবাহিনী নদী মােহনায় ব-দ্বীপ না গড়ে ওঠার কারণগুলি হল—(i) নদীগুলির দৈর্ঘ্যে ছােটো তাই পলি কম থাকে জলে। (ii) নদীগুলিতে জলের স্রোত বেশি থাকায় মােহানায় পলি সঞ্চিত হতে পারে না। (iii) নদীগুলির উপনদীর সংখ্যা কম থাকায় পলি বেশি থাকে না। (iv) মােহানা অংশে ভূমির ঢাল বেশি থাকায় পলি সঞ্চিত হতে পারে না। (v) সর্বোপরি আরব সাগর ও খাম্বত উপসাগর বেশ গভীর তাই তা পলি সঞ্চয়নের ক্ষেত্রে প্রতিকূল।
2. ব্রক্ষ্মপুত্র নদে প্রতিবছর বন্যা হয় কেন? অথবা, অসমে প্রতিবছর বন্যা হয় কেন?
উত্তর : ব্রম্মপুত্র নদের প্রভাবে অসমে প্রতিবছর বন্যার কারণগুলি হল—(i) পার্বত্য অঞ্চল থেকে আনা বস্তুর অসমের সমভূমির ওপর সঞ্চিত হয়ে নদীগর্ভ অগভীর করে তােলে, ফলে অতিরিক্ত জল বন্যার কারণ হয়। (i) বরফগলা জলে পুষ্ট হওয়ায় এবং বৃষ্টির জলে সমৃদ্ধ হওয়া এই নদে জল খুব বেশি, তাই উপত্যকা অঞ্চলে বর্ষার সময় অধিক জল বহন করতে না পেরে দুকূল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে।
3. দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ অধিক প্রচলিত কেন?
উত্তর : এর কারণগুলি হল—(i) কঠিন ও অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের অবস্থানের জন্য দক্ষিণ ভারতে কূপ খনন করে জলসেচ করা অসুবিধাজনক। (ii) এখানকার ভূমিভাগ বন্ধুর ও তরঙ্গায়িত হওয়ায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদীর উপর বাঁধ দিয়ে জলাশয় তৈরি করা সুবিধাজনক। (iii) বর্ষার জলে পুষ্ট হওয়ায় সারাবছর জলসেচ সম্ভব হয় না।
4. গঙ্গার উপনদীগুলির পরিচয় দাও।
উত্তর : (i) মধ্যগতিতে মিলিত হওয়া উপনদী : রামগঙ্গা, গােমতী, ঘর্ঘরা, গণ্ডক, বুড়িগণ্ডক, কোশি হল বামতীরের উপনদী। যমুনা ও শােন ডানতীরস্থ উপনদী। (i) নিম্নগতিতে মিলিত হওয়া উপনদী : বাঁশলই, ব্রাত্মণী, দ্বারকা, ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামােদর, রূপনারায়ণ, কংসাবতী ও রসুলপুর হল ডানতীরস্থ উপনদী। জলঙ্গী, মাথাভাঙ্গা ও চূর্ণী হল গঙ্গার বামতীরস্থ উপনদী।
5. দামােদর পরিকল্পনার (DVC) সুবিধাগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : (i) বন্যারােধ : পশ্চিবঙ্গের দামােদর উপত্যকা অনেকটা অংশ বন্যামুক্ত হয়েছে। (i) বিদ্যুৎ উৎপাদন : 4টি বড়াে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং 11টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। (ii) জলসেচ : জলসেচ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে ফলে রবি ফসলের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। (iv) পরিবহন : দুর্গাপুর থেকে খাল কেটে কলকাতা যুক্ত করা হয়েছে। (v) মৃত্তিকা ক্ষয় রােধ সম্ভব হয়েছে। (vi) মাছ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। (vi) নতুন বনভূমি স্থাপন হয়েছে। সার্বিকভাবে দামােদর অববাহিকা অঞ্চলের উন্নয়ন সাধন হয়েছে।
রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1, গঙ্গা নদীর গতিপথের বিবরণ দাও।
উত্তর : তিনটি গতি স্পষ্ট বলে গঙ্গাকে আদর্শ নদী বলে। গঙ্গা নদীর মােট দৈর্ঘ্য 2510 কিমি, তবে ভারতে প্রবাহ পথ 2071 কিমি।
(a) উৎস : গঙ্গার উৎস হল উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন হিমালয়ের গােমুখ গুহার গঙ্গোত্রী হিমবাহ।
(b) প্রবাহ পথ : সর্বপ্রথম গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে ভাগীরথী নামে একটি সংকীর্ণ জলধারা গিরিখাতের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে দেবপ্রয়াগের নিকট অলকানন্দার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মূলক পিন্ডার, মন্দাকিনি ও ধৌলিগঙ্গার মিলিত প্রবাহই হল অলকানন্দা। দেব প্রয়াগের পর ভাগীরথী ও অলকানন্দার মিলিত প্রবাহ গঙ্গা নামে পরিচিত।
(c) গতিপথ : (i) উচ্চগতি : উৎপত্তি স্থল বা দেবপ্রয়াগ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার উচ্চগতি। উৎস থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত গঙ্গার উচ্চগতি হল 280 কিমি।
(ii) মধ্যগতি : হরিদ্বার থেকে বিহারের রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পথ মধ্যগতির অন্তর্গত।
(iii) নিম্নগতি : রাজমহল থেকে মােহানা পর্যন্ত গতিপথ (520 কিমি) হল নিম্নগতি। মুরশিদাবাদের ভগবানগােলায় গঙ্গা দুটি শাখায় ভাগ হয়ে প্রধান শাখা পদ্মা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং অপর শাখাটি প্রথমে ভাগীরথী এবং নবদ্বীপের পর হুগলি নাম নিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এই অংশে অজয়, দামােদর, ময়ুরাক্ষী প্রভৃতি ভাগীরথী ও হুগলির উপনদী।
ভারতের জলবায়ু
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. মৌসুমি বিস্ফোরণ কী?
উত্তর : ভারতে গ্রীষ্মকালের শেষদিকে উত্তর পশ্চিমভাগে এক গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এর ফলে ভারতমহাসাগর থেকে আগত জলীয়বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ু আরবীয় ও বঙ্গোপসাগরীয় দুটি শাখায় বিভক্ত করে ভারতে প্রবেশ করে এবং বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। মৌসুমি বায়ুর আগমনজনিত হঠাৎ বৃষ্টিপাতের ঘটনাকে মৌসুমি বিস্ফোরণ বলে।
2. পশ্চিমী ঝঞা কী?
উত্তর : শীতকালে ভারতে স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত উত্তর পূর্ব মৌসুমি বায়ু জলীয়বাষ্পহীন থাকায় ভারতে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না। এই সময় মাঝে মাঝে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ভুত ঘূর্ণবাত ভারতের উত্তর পশ্চিম অংশ দিয়ে প্রবেশ করে। ফলে উত্তরভারতে ঝড় ঝঞা হয়। এই পশ্চিমী নিম্নচাপ বিশিষ্ট ঘূর্ণবাত উত্তরভারতে শীতের শান্ত আবহাওয়াকে বিঘ্নিত করে বলে একে পশ্চিমী ঝঞ্চা বলে।
3. আবৃষ্টি বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক, কেরালা ও তামিলনাড়ুতে গ্রীষ্মকালে স্থানীয় নিম্নচাপের প্রভাবে যে, বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত ঘটে, তাকে আবৃষ্টি বলে। এই বৃষ্টিপাতের ফলে দক্ষিণ ভারতে আমের ফলন ভালাে হয় বলে এই বৃষ্টিকে আবৃষ্টি বা Mango Shower বলে।
4. কালবৈশাখী কী?
উত্তর : গ্রীষ্মকালে প্রখর সূর্যকিরণে স্থলভাগ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এপ্রিল মে মাসে গ্রীষ্মকালে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও অসমের স্থলভাগের উয় বাতাস ও সমুদ্র থেকে আগত জলীয়বাষ্পপূর্ণ শীতল বাতাসের সংঘর্ষে ফলে বিকেলে বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড় বৃষ্টি হয়, যা কালবৈশাখী নামে পরিচিত।
5. মৌসুমি বায়ুর বিরতি বা ছেদ বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : মৌসুমি বায়ুর নিষ্ক্রিয় অবস্থায় এই বায়ুর গতিবেগ, গভীরতা, মেঘাচ্ছন্নতা, বৃষ্টিপাত কমে যায়। এই সময় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত অবিরাম না হয়ে সাময়িক বিরতি দেখা যায়। বৃষ্টিহীন এই অবস্থাকে মৌসুমী বায়ুর ছেদ বলে। এই বিরতি 3-10 দিন থাকে।
6. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল কাকে বলে?
উত্তর : জলীয়বাষ্পপূর্ণ আর্দ্রবায়ু পর্বতের প্রতিবাত ঢালে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে যখন পর্বতের বিপরীত ঢালে বা অনুবাত ঢালে এসে পৌঁছায় তখন জলীয়বাষ্পের অভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায়। অনুবাত ঢালে অবস্থিত বৃষ্টিহীন বিস্তীর্ণ অঞ্চলটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল নামে পরিচিত। উদাহরণ—ভারতের শিলং একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. লু কী?
উত্তর : গ্রীষ্মকালে ভারতের উত্তর পশ্চিমে রাজস্থান, গুজরাত, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি স্থানে ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরালে যে উয় ও শুদ্ধ বায়ু পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়, তাকে স্থানীয় ভাষায় ‘লু’ বলে। এটি অত্যন্ত উম্ন বায়ু (40°C – 50°C)।‘লু’-র প্রভাবে মানুষ ও গবাদি পশু মারা যায়।
2. ‘আঁধি’ কাকে বলে?
উত্তর : গ্রীষ্মকালে রাজস্থানের মরুভূমি অঞলে যে প্রবল ধূলিঝড়ের সৃষ্টি হয়, তাকেই স্থানীয় ভাষায়, আঁধি বলা হয়। আঁধির গতিবেগ 50-60 কিমি/ঘন্টা। মেঘের সার ঘটে না বলে এই ঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টি হয় না। তাই প্রবল ধুলাে ওড়ে। তবে এই ঝড়ের প্রভাবে উয়তা কিছুটা কমে।
3. ‘আশ্বিনের ঝড়’ কাকে বলে?
উত্তর : প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে সামুদ্রিক বায়ুর সংঘর্ষে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরীয় উপকূলের রাজ্যগুলিতে প্রবল ঝড় বৃষ্টি হয়। একে সাইক্লোন বলে। পশ্চিমবঙ্গে এই ঝড় যেহেতু আশ্বিন মানে দেখা যায়, তাই তা আশ্বিনের ঝড় নামে পরিচিত।
4. তামিলনাড়ু (করমণ্ডল) উপকূলে বছরে দুবার বর্ষাকাল হয় কেন?
উত্তর : তামিলনাড়ু উপকূলে মৌসুমি বায়ুর আগমনের সময় জুন মাসে বৃষ্টি হয়, আবার অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে উঃ পূঃ ভারত থেকে প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করে ফেরেল সূত্রানুসারে ডানদিকে বেঁকে করমণ্ডল উপকুলে প্রবেশ করে এবং পূর্বঘাটে বাধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
5. ভারতে খরার কারণগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : (i) বিলম্বিত আগমন : দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নির্ধারিত সময়ের পরে ভারতীয় ভূখণ্ডে এলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে খরার সৃষ্টি করে।
(ii) অগ্রিম প্রত্যাবর্তন : দঃ পঃ মৌসুমি বায়ু নির্ধারিত সময়ের আগে ফিরে গেলে বৃষ্টিপাত কম হবার দরুন খরা হয়।
(iii) বৃষ্টিপাতের সাময়িক বিরতি : কোনাে কোনাে বছর বর্ষাকালের মাঝে দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত হয় না, ফলে খরার প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যায়।
(iv) পরিবেশ দূষণ : পরিবেশ দূষিত হলে বায়ুমণ্ডলের গড় উষ্মতা বেড়ে যায় এবং জলীয়বাষ্প ঘনীভূত না হলে বৃষ্টিপাত হয় না। ফলে খরা হয়।
6. ভারতে প্রায়ই বন্যা হয় কেন?
উত্তর : (i) অগ্রিম আগমন : নির্ধারিত সময়ের বহু পূর্বে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটলে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বন্যার সৃষ্টি করে।
(ii) বিরামহীন বৃষ্টি : বছরে কোনাে কোনাে সময় বিরামহীন বৃষ্টি বন্যার কারণ হয়।
(iii) বর্ষাকালের অধিক স্থায়ীত্ব : বর্ষাকালের স্থায়ীত্ব বেশি হলে ভারি বর্ষণের ফলে বন্যা দেখা দেয়।
(iv) নিম্নচাপের স্থায়ীত্ব : দীর্ঘক্ষণ নিম্নচাপ অবস্থান করলে ভারী বৃষ্টি বন্যার কারণ।
(v) নদীর গভীরতা হ্রাস : নদীর গভীরতা হ্রাসের ফলে অধিক বৃষ্টিতে দুকূল ছাপিয়ে বন্যা হয়।
7. ভারতে শীতকাল শুল্ক কেন?
উত্তর : (i) উয়তার অবনমন : 22 ডিসেম্বর তারিখে সূর্য দক্ষিণ গােলার্ধে মকরক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় উত্তর গােলার্ধে উয়তার অবনমন ঘটে।
(ii) উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমন : এশিয়ার উত্তরাংশে সাইবেরিয়া অংশ থেকে আগত শুষ্ক ও শীতল মৌসুমি বায়ু স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জলীয়বাষ্পের পরিমান অনেক কম থাকে। এই কারণে শীতকাল বৃষ্টিহীন ও শুষ্ক প্রকৃতির হয়।
৪. মনেক্স (Monex) কী?
উত্তর : Monex হল Monsoon Experiment বা মৌসুমি গবেষণা। বিশ্ব বায়ুমণ্ডল গবেষণা প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে মৌসুমি জলবায়ু গবেষণার যে বিশেষ কার্যক্রম স্থির করা হয়, তাকে Monex বলে।
9. থর মরুভূমির সৃষ্টির কারণ কী?
উত্তর : দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখাটি খাম্বা উপসাগরের ওপর দিয়ে কাথিয়াবাড় হয়ে গুজরাত ও পশ্চিম রাজস্থানে প্রবেশ করলেও মৌসুমি বায়ুকে প্রতিহত করার মতাে কোনাে উচ্চভূমি না থাকায় বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলার ফলে অনাবৃষ্টির কারণে ভারতে পশ্চিমে রাজস্থানের পশ্চিমাংশে থর মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে। এই অঞলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 20 cm এর কম।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর :[প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব আলােচনা করাে।
উত্তর : ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব অপরিসীম। তাই ভারতকে মৌসুমি জলবায়ুর দেশ বলা হয়। এর প্রভাবগুলি নীচে আলােচনা করা হল।
(a) আর্দ্র পরিবর্তন ও শুষ্ক শীতকাল : ভারতে গ্রীষ্মকালে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌমুমি বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং শীতকাল উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শুষ্ক থাকে।
(b) ঋতু পরিবর্তন : মৌসুমি বায়ুর আগমণ ও প্রত্যাগমন-এর ওপর নির্ভর করে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীত প্রশ্ন চারটি ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয়।
(C) বৃষ্টিপাত : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে 90% বৃষ্টিপাত হয়।
(d) উয়তা : দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমণে গ্রীষ্মকালের শেষে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে উয়তা কিছুটা হ্রাস করে। ও উত্তপূর্ব মৌসুমি বায়ুর ফলে শীতের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
(e) প্রাকৃতিক দুর্যোগ : মৌসুমি বায়ুর অনিয়মিত ও অনিশ্চয়তার জন্য অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির কারণে কোথাও বন্যা আবার কোথাও খরা সৃষ্টি হয়।
(f) ঘূর্ণাবাত সৃষ্টি : শরৎকালে মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাগমণের সময় এবং সমুদ্রবায়ুর সংঘর্ষে বঙ্গোপসাগরে বা আরবসাগরে ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়।
(g) বৃষ্টিপাতের অসমবন্টন : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম উপকূল, উত্তর পূর্ব ভারত, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি স্থানে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে। অপরদিকে রাজস্থানের মরু অঞ্চল ও পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বটালে বৃষ্টিচ্ছায় অল স্থানে বৃষ্টির পরিমাণ কম। তাই মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ভারতের জলবায়ুতে বৃষ্টিপাতে অসমবণ্টন লক্ষ করা যায়।
ভারতের মৃত্তিকা
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. ‘রেগুর’ কী?
উত্তর : ভারতের মধ্য প্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের পশ্চিমাংশ এবং গুজরাত, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু অংশ তথা উপদ্বীপীয় মালভূমির ডেকানট্রাপ অঞ্চলে ব্যাসল্ট শিলা থেকে উদ্ভূত যে কালাে বর্ণের মৃত্তিকা দেখা যায়, তাকে কৃয় মৃত্তিকা বা রেগুর বলে। বিভিন্ন খনিজ সমৃদ্ধ এই মৃত্তিকা খুব উর্বর।
2. ব্যাডল্যান্ড’ কী?
উত্তর : অত্যধিক খাতক্ষয়ের ফলে ভূমিভাগ এবড়ােখেবড়াে হয়ে যায়। এর ফলে ভূমিভাগ কৃষিকাজের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। এই ধরনের কৃষিকাজে অনুপযুক্ত বন্ধুর ভূ-ভাগকে ব্যাডল্যান্ড বলে। মধ্যপ্রদেশের বদভূমি অঞ্চলে ব্যাডল্যান্ডের আধিক্য দেখা যায়।
3. ‘রাঙাইন ক্ষয় কী?
উত্তর : জলনালিকা ও খেয়াই আরও গভীরভাবে ক্ষয় পাবার ফলে তা গভীর খাড়া পাড়যুক্ত খাত তৈরি করে। এটি হল র্যাভাইন ক্ষয়। এর মাধ্যমে মাটি ক্ষয় খুব বেশি পরিমাণে ঘটে।
4, ‘ভর’ কী?
উত্তর : গাঙ্গেয় সমভূমির নিম্ন অঞ্চলে (বিশেষত উত্তর প্রদেশ রাজ্যে পশ্চিমাংশের দোয়াব অঞ্চলে) কলি মিশ্রিত অতিসুক্ষ্ম মৃত্তিকা গঠিত তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি দেখা যায়। যা ‘ভুর” নামে পরিচিত।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ঝুমচাষ মৃত্তিকা ক্ষয়কে কীভাবে তরান্বিত করে?
উত্তর : ভারতের উত্তর-পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলের আদিম সম্প্রদায় ঝুমচাষ প্রথায় কৃষিকাজ করে থাকে। এটি একটি আদিম ও অবৈজ্ঞানিক কৃষি পদ্ধতি। এক্ষেত্রে বনজঙ্গল কেটে, পুড়িয়ে সাফ করে কয়েকবছর পর চাষ করে যখন ওই স্থানের মাটির উর্বরতা কমে যায় তখন ওই স্থানকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে অন্যত্র গিয়ে এই পদ্ধতি চাষ করা শুরু করে। এর ফলে সমস্ত অঞ্চলটি প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে ভূমিক্ষয়ের কবলে পড়ে।
2. সমােন্নতি চাষ কাকে বলে?
উত্তর : সমােন্নতিরেখা বরাবর বাঁধ দিয়ে জলের গতিকে বাধা দিয়ে আটকে দিলে মৃত্তিকা ক্ষয়রােধ করার জন্য কৃষিকাজ করা হয় এবং গাছ লাগানাে হয়। এবং আটকে রাখা জলের সাহায্যে জলসেচও করা হয়। যথােন্নতি রেখা বরাবর এই কৃষিকাজকে বলে সমােন্নতি চাষ।
3. কৃষ্ণ মৃত্তিকা সম্পর্কে লেখাে।
উত্তর : ভারতের উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চলে ব্যাসল্ট শিলাদ্বারা গঠিত টাইটানিয়াম অক্সাইড ও জৈব যৌগ সমৃদ্ধ মৃত্তিকাকে কৃষ্ণ মৃত্তিকা বলে। এই মাটির রং কালাে। কৃয় মৃত্তিকা বা রেগুর তুলা চাষের পক্ষে বিশেষ উপযােগী। পলি ও কাদার ভাগ (50%-80%) বেশি থাকায় গ্রহণ মাঝারি বলে জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি। বিভিন্ন খজিন সমৃদ্ধ যেমন—অ্যালুমিনা, চুন, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রণ অক্সাইড থাকায় মাটি খুব উর্বর।
4. কারেওয়া কী?
উত্তর : বিজ্ঞানীদের মতে, প্রাচীন কোনাে হ্রদ ভরাট হয়ে কাশ্মীর উপত্যকার সৃষ্টি হয়েছে। এই উপত্যকার মধ্য দিয়ে ঝিলাম নদী প্রবাহিত হয়েছে এবং প্রায় সমতল উপত্যকার ধাপযুক্ত ভূমিভাগ বা কারেওয়া কৃষিকাজের জন্য বিখ্যাত।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. মৃত্তিকা সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : ভূমি বা মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ অনুসন্ধান করে বিজ্ঞানসম্মত সমাধান করাই হল মৃত্তিকা ক্ষয় বা ভূমিক্ষয় রােধের যথাযথ পন্থা। নিম্নে আলােচনা করা হলাে।
(a) যান্ত্রিক পদ্ধতি : (i) ঢালু জমিতে বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়ােজনীয়। (ii) সমােন্নতি রেখা ভিত্তিক বাঁধ নির্মাণ দরকার। (iii) উঁচু-নীচু, ভূ-ভাগের সমতলীকরণ প্রয়ােজন।
(b) জৈবিক পদ্ধতি : (i) ঢালু জমিতে তৃণভূমি তৈরী। (ii) মরুভূমি প্রসার রােধে বায়ু প্রবাহের দিকে অরণ্য সৃষ্টি। (iii) শস্যাবর্তন পদ্ধতির ব্যবহার মৃত্তিকা ক্ষয়ের রােধে সাহায্য করে। (iv) পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়ােজন। (v) সামাজিক বণসৃজন এবং বনমহােৎসব পালনের মাধ্যমে মৃত্তিকা রােধের ব্যবস্থা।
(c) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি : (i) স্থানান্তর কৃষি বা ঝুম চাষের বিলােপসাধন অত্যাবশকীয়। (ii) পার্বত্য বা উচ্চভূমি অংশে ধাপ বা সােপান কৃষির প্রচলন। (iii) স্বল্পোন্নত ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়ােগ। (iv) সরকারি উদ্যোগে গবেষণাকেন্দ্র (দেরাদুন, আগ্রা, যােধপুর) স্থাপন। (v) প্রচার মাধ্যম দ্বারা জনসচেতনতার বৃদ্ধি।
ভূ-বিজ্ঞানী বিনেটের মতে সর্বোচ্চ বা জাতীয় স্তরে ভূমি সংরক্ষণের জন্য কৃষিজমির বৈজ্ঞানিক ব্যবহার ও উপযুক্ত ভূমি ব্যবহার বিধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. সামাজিক বনসৃজন বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : কৃষি ও সামাজিক পদ্ধতিতে গাছের চারা রােপণ করে নতুন বনভূমি সৃষ্টি করা হয়, তাকে সামাজিক বনসৃজন বলে। এর ফলে স্থানীয় বন সম্পদের জোগান বজায় রাখা যায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক।
2. কৃষি বনসৃজন কাকে বলে ?
উত্তর : বিজ্ঞানী ফোলে ও বানার্ড-এর মতে, কৃষক তার কৃষিজমি বা পতিত জমিতে ফসল উৎপাদনের সঙ্গে কাঠ, ভেষজ ওষুধ, ফলমূল ইত্যাদি উৎপাদনের জন্য গাছ ও লতা গুল্ম রােপন করে যে বনভূমি গড়ে তােলে, তাকে কৃষি বনসৃজন বলে।
3. সিলভিকালচার কী?
উত্তর : পার্বত্য অঞ্চলে বাণিজ্যিক হারে কাঠের সরবরাহ বর্জ্য রাখার জন্য যখন বিশাল অঞ্চল জুড়ে বনভূমি তৈরি করা হয়। তাকেই সিলভিকালচার বলে।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. যৌথ বন ব্যবস্থাপনা (Joint Forest Management বা JFM) কী ?
উত্তর : বনসৃজন এবং বনভূমির সংরক্ষণের জন্য রাজ্যের বন দফতর ও স্থানীয় জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণকে যৌথ বন ব্যবস্থাপনা বলে। এই প্রকল্প অনুসারে অরণ্যের আদিবাসীরা অরণ্যকে পশুচারণ ও দাবানলের হাত থেকে রক্ষা করেন, তবে বনভূমির জমি স্থানান্তরের অধিকার তাদের নেই। পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার আড়াআড়ি গ্রামে প্রথম যৌথ বন ব্যবস্থাপনা রূপায়িত করা হয়।
2. সামাজিক বনসৃজন এবং কৃষি বনসৃজনের পার্থক্যগুলি লেখাে।
উত্তর : সামাজিক বনসৃজন এবং কৃষি বনসৃজনের মধ্যে পার্থক্য –
ভারতের কৃষি
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. শস্যাবর্তন কাকে বলে?
উত্তর : কৃষি ব্যবস্থায় একই জমিতে বছরের বিভিন্ন সময় অথবা বিভিন্ন বছরে ভিন্ন প্রকার কৃষি ফসল উৎপন্ন করে জমির সাধারণ উর্বরতা শক্তি বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়, তাকে শস্যাবর্তন বলে
2. জায়িদ শস্য কী?
উত্তর : শীতের শেষে ও গ্রীষ্মের শুরুতে যে ফসল চাষ করা হয় এবং বর্ষার পূর্বে ফসল কাটা হয়, তাকে জায়িদ শষ্য বলে। যেমন—শশা, তরমুজ ইত্যাদি।
3. বাগিচা কৃষি কী?
উত্তর : পৃথিবীর ক্রান্তীয় ও উপক্ৰান্তীয় অঞ্চলের বিশেষ কতকগুলি স্থানে উপযুক্ত ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা ও জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে ছােটো, বড়াে ও মাঝারি বাগান তৈরি করে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যে কৃষিকার্য করা হয়, তাকে বাগিচা কৃষি বলে। উদাহরণ—চা ও কফি হল বাগিচা ফসল। রপ্তানি বা বাণিজ্যের জন্যই এই প্রকার কৃষিকার্য করা হয়।
4. অর্থকরী ফসল কাকে বলে?
উত্তর : নিজ বা পরিবারের ব্যবহারের জন্য নয়, বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে যে ফসল উৎপাদন করা হয় তা হল অর্থকরী ফসল। যেমন—পাট, আখ, কার্পাস ইত্যাদি।
5. চা-এর শ্রেণিগুলি লেখাে।
উত্তর : চা হল ক্যাফিনযুক্ত মাদক বর্জিত মৃদু উত্তেজক পানীয়। বিভিন্ন ধরনের চাগুলি হল : (i) কালাে সেঁকা চা—ভারতে এটি জনপ্রিয়। (ii) সবুজ চা-চিনে জনপ্রিয়, (iii) ইস্টক চা-রাশিয়ায় জনপ্রিয়। (iv) ওলং চা—তাইওয়ানে জনপ্রিয়।
6, টেন’ কী?
উত্তর : প্রথমবার আখ কাটার পর আখের যে চারা জন্মায়, তাকে বলা হয় রেটুন। আখ ভারতে রেটুন হিসাবে প্রধানত উৎপন্ন হয়।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় কৃষি তথা গম চাযের উন্নতির কারণগুলি লেখাে।
উত্তর : এই অঞ্চলে কৃষি তথা গম চাষের উন্নতির কারণগুলি লেখাে-
(i) বিস্তীর্ণ সমভূমি ও উর্বর মৃত্তিকা : সিন্ধুনদের পাঁচটি উপনদী বিধৌত বিস্তীর্ণ সমভূমি এবং উর্বর পলিমাটি কৃষির উন্নতির অন্যতম কারণ।
(ii) ভাকরা-নাঙ্গল প্রকল্প : এই প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে 14.6 লক্ষ হেক্টর। জমিতে জলসেচ সম্ভবপর হয়েছে।
(iii) উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার : উচ্চ ফলনশীল গমবীজ, যেমন- সােনারা-64, কল্যাণ সােনা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
(iv) আধুনিক কৃষি পদ্ধতি : আধুনিক কৃষি পদ্ধতির সাথে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার করা হয়। সুলভ শ্রমিকের অভাব হয় না।
(v) চাহিদা : মানুষের খাদ্য হিসাবে গমের ব্যবহার হওয়ায় বিপুল চাহিদা এই অঞ্চলে।
2. ভারতীয় কৃষির সমস্যাগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : ভারতের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় কৃষি পদ্ধতি বর্তমানে প্রাচীন ও অনুন্নত। ভারতীয় কৃষি সমস্যাগুলি হল—(i) যথাসময়ে জলের অভাব, জমির উর্বরতা শক্তির অভাবে হেক্টর প্রতি উৎপাদন কম। (ii) ভারতের কৃষি জোতগুলি আয়তনে ক্ষুদ্র ও অখণ্ডিত কৃষি-জোত। (iii) প্রাকৃতিক দুর্যোগ। (iv) কৃষিতে প্রাচীন পদ্ধতির প্রচলন। (v) যথেচ্ছ বনভূমি ধ্বংসের ফলে ভূমিক্ষয় অধিক। (vi) সীমিত জলসেচ। (vii) সর্বোপরি ভারতীয় কৃষকদের শিক্ষার অভাব থাকায় বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করা সম্ভবপর হচ্ছে না।
3. দক্ষিণ ভারতে কফি চাষের উন্নতির কারণ কী?
উত্তর : দক্ষিণ ভারতের কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চলে কফি চাষ উন্নতিলাভ করেছে। কারণ—(i) দক্ষিণ ভারতের গড় উয়তা (18°-28°C) কফি চাষের আদর্শ। (ii) 140-200 cm বৃষ্টি হয় যা কফি চাশের ক্ষেত্রে উপযােগী। (iii) দক্ষিণ ভারতের মাটি লােহা, পটাশ, নাইট্রোজেন ও হিউমাস সমৃদ্ধ হওয়ায় কফি চাষ ভালাে হয়। (iv) কফি চাষের অনুকুল ভূ-প্রকৃতি দক্ষিণ ভারতে বিদ্যমান। (v) তুষারপাত না হওয়ায় দক্ষিণ ভারত কফি চাষের আদর্শ অঞ্চল।
4. সবুজ বিপ্লবের সুফলগুলি কী কী?
উত্তর : কৃষি বিজ্ঞানী নরম্যান বােরলােগ ও ভারতীয় কৃষিবিজ্ঞানীদের সহায়তায় কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি সবুজ বিপ্লব নামে পরিচিত। সবুজ বিপ্লবের ফলে (i) শস্য উৎপাদন বিশেষত গমের উৎপাদনে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। (ii) শস্যাবর্তন পদ্ধতির প্রয়ােগে শুরু হয়। (iii) নতুন করে ভারতীয় কৃষির ভিত্তি স্থাপন হয়। (iv) উন্নতসার, কীটনাশক প্রয়ােগে হেক্টর প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। (v) ভূমি সংস্কার ও পরিকাঠামােগত উন্নতি সাধন হয়।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর :[প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. চা-চাযের অনুকূল পরিবেশ বর্ণনা করাে।
উত্তর : চাষের অনুকূল পরিবেশ নিয়ে আলােচনা করা হল-
A. প্রাকৃতিক অবস্থা :
(i) উয়তা : গড়ে 21°c-27°C উয়তা ও রৌদ্রকরােজ্জ্বল আবহাওয়ার প্রয়ােজন।
(ii) বৃষ্টিপাত : প্রতিমাসের নিয়মিত বৃষ্টিপাত উপযােগী। বার্ষিক 200cm-250cm বৃষ্টিপাত প্রয়ােজন।
(iii) মৃত্তিকা : লৌহমিশ্রিত উর্বর দোঁয়াশ মাটি এবং অধিক জৈবপদার্থ সমৃদ্ধ পার্বত্য মৃত্তিকা বিশেষ উপযােগী।
(iv) ভূমির প্রকৃতি : চা গাছের গােড়ায় জল দাঁড়ানাে ক্ষতিকর, তাই চা বাগিচার জন্য ঢালু জমির প্রয়ােজন।
(v) তুষারপাত : কিছুটা তুষারপাত সহ্য করতে পারলেও অধিক তুষারপাত চা গাছ সহ্য করতে পারে না।
(vi) ছায়া-প্রদানকারী বৃক্ষ : প্রখর সূর্যকিরণ চা গাছের জন্য ক্ষতিকারক। তাই চা বাগিচার মাঝে মাঝে ছায়া প্রদানকারী গাছ লাগানাে দরকার।
B. অ-প্রাকৃতিক বা অর্থনৈতিক পরিবেশ :
(i) শ্রমিক : চা বাগিচা থেকে পাতা ও কুঁড়ি সংগ্রহ, ডাল ছাঁটা প্রভৃতি কাজের জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়ােজন। মহিলা শ্রমিক বেশি দরকার।
(ii) মূলধন : সমস্ত কিছু ব্যবস্থাপনার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে মূলধন আবশ্যক।
(iii) পরিবহণ : অন্তর্দেশীয় বাজার ও রপ্তানিকারী বন্দরগুলির সাথে যােগাযােগের জন্য উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা দরকার।
(iv) চাহিদা : সর্বোপরি মৃদু উত্তেজক পানীয় রূপে অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চায়ের ব্যাপক চাহিদা বা বাজারে চা চাষকে প্রভাবিত করে।
2. ইক্ষু চাষের অনুকূল অবস্থাগুলি বর্ণনা করাে।
উত্তর : ইক্ষু চাষের অনুকূল অবস্থা নিয়ে আলােচনা করা হলাে-
A. প্রাকৃতিক অবস্থা :
(i) উয়তা : ইক্ষু উয়ুমণ্ডলের ফসল হওয়ায়, ইক্ষু চাষে গড় মাসিক 21°c-27°c উয়তা প্রয়ােজন হয়।
(ii) বৃষ্টিপাত : ইক্ষু উৎপাদনের জন্য বার্ষিক 125-200 সেমি বৃষ্টিপাতের প্রয়ােজন হয়।
(iii) মৃত্তিকা : ইক্ষু চাষের জন্য চুন ও লবণমিশ্রিত উর্বর দোঁয়াশ মাটি আদর্শ। এই কারণে সমুদ্র তীরবর্তী স্থানে ইক্ষুর চাষ ভালাে হয়।
(iv) ভূমির প্রকৃতি : সামান্য ঢালযুক্ত সমতলভুমিই ইক্ষু চাষের পক্ষে ভালাে।
(v) তুহিন ও কুয়াশা : তুহিন ও কুয়াশা দুইই ইক্ষু চাষের পক্ষে ক্ষতিকর। ভারত ক্রান্তীয় মণ্ডলের অন্তর্গত হওয়ায় এখানকার সমভূমি অঞ্চলে তুষারপাত হয়
B. অ-প্রাকৃতিক বা অর্থনৈতিক পরিবেশ :
(i) শ্রমিক : ইক্ষু চারারােপণ, পরিচর্যা, ফসল কাটার জন্য পর্যাপ্ত সুলভ শ্রমিকের প্রয়ােজন হয়। এই কারণে ঘন বসতিপূর্ণ অল ইক্ষু চাষের সহায়ক পরিবেশ।
(ii) মূলধন : ইক্ষু চাষের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে মূলধনের প্রয়ােজন।
(iii) পরিবহণ : ইক্ষু উৎপাদক অঞ্চলে সুনদ্র পরিবহণ ব্যবস্থার প্রয়ােজন কারণ ইক্ষু কাটার 24 ঘণ্টার মধ্যে তা থেকে রস নিষ্কাশ না করলে রসের পরিমাণ হ্রাস পায়। এই কারণেই ইক্ষু কলগুলি উৎপাদন ক্ষেত্রের নিকটেই গড়ে ওঠে।
(iv) বাজার বা চাহিদা : ইক্ষু গুদামজাত করে রাখা যায় না। ভাটার একদিন পর থেকেই এর রসের পরিমাণ কমতে থাকে। এই কারণে ইক্ষুর জন্য পর্যাপ্ত নির্ভরযােগ্য বাজার থাকার প্রয়ােজন।
ভারতের শিল্প
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. অনুসারী শিল্প কাকে বলে?
উত্তর : বৃহদায়তন শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যকে কাচামাল রূপে ব্যবহার করে যে-সব ক্ষুদ্র আয়তন শিল্প গড়ে ওঠে তাদের অনুসারী বা Downstream Industry বলে। উদাহরণ : পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে উৎপাদিত প্লাস্টিক বা PVC কে ব্যবহার করে মগ, বালতি, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
2. পূর্ত শিল্প কাকে বলে? অথবা, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, তামা, দস্তা প্রভৃতি ধাতব পদার্থ এবং রবার, প্লাস্টিক, কাঠ প্রভৃতি পদার্থকে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে যে শিল্পে নানা ভারি ও হালকা যন্ত্রপাতি প্রস্তুত করা হয় তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প বলে। পূর্ত শিল্প হল যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ নির্মাণ শিল্প।।
3. সহায়ক (Ancillary Industry) শিল্প বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : যে সমস্ত ছােটো ছােটো শিল্প অন্য কোনাে বড়াে শিল্পকে তাদের প্রয়ােজনীয় কাঁচামাল হিসাবে নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের জোগান দেয়, সেই সমস্ত ছােটো শিল্পকে সহায়ক শিল্প বলে। উদাহরণ—মােটর গাড়ি নির্মাণ শিল্পের সহায়ক শিল্প হল কাচ, কাঠ, ব্যাটারি, টায়ার, টিউব শিল্প ইত্যাদি।
4. দুর্গাপুরকে কেন ‘ভারতের রূঢ় বলা হয় ?
উত্তর : বুঢ় যেমন পশ্চিম জার্মানির বিখ্যাত লৌহ ইস্পাত শিল্পকেন্দ্র তেমনি দুর্গাপুর পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের বিখ্যাত লৌহ-ইস্পাতকেন্দ্র। রূঢ় শিল্পাঞ্চলের ওয়েস্টফেলিয়া খনির বিটুমিনাস কয়লা, আয়ারল্যান্ডের লৌহ আকরিক ব্যবহৃত হয়। তেমন দুর্গাপুরে রানিগঞ্জের কয়লা, নােয়ামুন্ডি ও বাদাম পাহাড়ের লৌহ আকরিক ব্যবহৃত হয়। উক্ত সাদৃশ্যের কারণে দুর্গাপুরকে ভারতের রূঢ় বলা হয়।
5. পণ্যসূচক কাকে বলে?
উত্তর : বিশুদ্ধ ও অবিশুদ্ধ কাঁচামাল দিয়ে পণ্যসুচক নির্ধারিত হয়। শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল এবং উৎপাদিত দ্রব্যের অনুপাত হল পণ্যসূচক। এর মান যদি 1 হয় তাহলে বুঝতে হবে বিশুদ্ধ শ্রেণির কাঁচামাল ব্যবহূত হয়েছে। এবং 1 এর বেশি হলে অবিশুদ্ধ শ্রেণির কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়।
6. আউট সাের্সিং বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : মানের উন্নতি, দক্ষতা বৃদ্ধি, খরচ কম, দ্রুত কাজ সম্পন্ন ইত্যাদি কারণে কোনাে একটি সংস্থা বাইরের অন্য কোনাে সংস্থার মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেয় তা হল আউট সাের্সিং (Outsourcing) । এবং এই কাজ যখন অন্য দেশ থেকে করিয়ে নেওয়া হয় তখন তা ‘অফ সাের্সিং (off-Sourcing)।
7. মােটর গাড়ি বা অটোমাবাইল শিল্প কাকে বলে?
উত্তর : বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ, যেমন—টায়ার, টিউব, প্লাস্টিক, গ্লাস, ফোম ইলেকট্রিক তার ইত্যাদি সংযােজনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন নির্মাণ শিল্পকে অটোমােবাইল শিল্প বলে। বিভিন্ন ধরনের অসংখ্য দ্রব্য সযােজনের মাধ্যমে মােটর গাড়ি নির্মিত হয় বলে মােটরগাড়ি নির্মাণ শিল্পকে সংযােজনভিত্তিক শিল্প বলে।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. পেট্রোরসায়ন শিল্পকে উদীয়মান শিল্প বলা হয় কেন?
উত্তর : কারণ—(i) তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কালে 1966 সালে এই শিল্পের সূত্রপাত হয়। সর্বসাকুল্যে এর বয়স 43 বছর হলেও এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল। (ii) এই শিল্পের অগ্রগতি অতি দ্রুত হচ্ছে এবং শিল্পগুচ্ছের আকারে গড়ে উঠেছে। (iii) পেট্রোরসায়ন শিল্পের ওপর নির্ভর করে ভারতে বহু বৃহদায়তন শিল্পের বিকাশ হয়েছে। (iv) এই শিল্পের কাঁচামাল অন্যান্য শিল্পের ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সহযােগী শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।
2. TISCO কী?
উত্তর : 1907 খ্রিস্টাব্দের 25 আগস্ট ভারতের জামশেদপুরে জামশেদজি টাটার উদ্যোগে TISCO বা Tata Iron and Steel Company স্থাপিত হয়। ঝাড়খণ্ডের সিংভূম জেলার জামশেদপুরে সুবর্ণরেখা ও খরকাই নদীর সংগমস্থলে এই বেসরকারি কারখানাটি স্থাপিত হয়। এটি লৌহ ও কয়লাখনির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত।
দশম শ্রেণী ভূগোল | ভারত : ভূমিকা, প্রাকৃতিক পরিবেশ – রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. পশ্চিমভারতে পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের কারণগুলি হল—
(i) খনিজ তেলের প্রাচুর্য : বােম্বে হাই, আলিয়াবেত, বাসিন, কাম্বে প্রভৃতি অঞ্চল। থেকে খনিজতেল পাওয়া যায়। যা এই শিল্পের প্রধান কাচামাল হিসাবে ব্যবহৃত।
(ii) খনিজতেল শােধনাগারের অবস্থান : গুজরাতের জামনগর ও কয়ালি এবং মহারাষ্ট্রের ট্রম্বেতে খনিজ তৈল শােধনাগারের অবস্থান।
(iii) বন্দরের সুবিধা : মুম্বাই, কান্ডালা, নবসেবা, সুরাত, পােরবন্দর দিয়ে অপরিশােধিত খনিজ তেল, পলিমার ও যন্ত্রপাতি আমদানি ও উৎপাদিত শিল্পদ্রব্য রপ্তানির সুবিধা রয়েছে।
(iv) পর্যাপ্ত জল : নর্মদা, তাপ্তী, মাহী, সবরমতী নদী থেকে পর্যাপ্ত জলের সুবিধা।
(v) বাজার : মুম্বাই, পুনে, আমেদাবাদ, ভাদোদরা প্রভৃতি অঞ্চলে অসংখ্য অনুসারী শিল্প গড়ে ওঠায় উৎপাদিত পণ্য যেমন বস্ত্র, ওষুধ, প্লাস্টিক, সার প্রভৃতির সারা দেশব্যাপী বৃহৎ বাজার সৃষ্টি হয়েছে।
(vi) পরিবহণ : রেলপথ-পশ্চিম, মধ্য, কোঙ্কন, দক্ষিণ-মধ্য, জাতীয় সড়কপথ (NH- 3, 4, 6, 7, 8, 9, 15, 17) দ্বারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও (vii) মফতলাল, রিলায়েন্স শিল্প গােষ্ঠী ও বহুজাতিক সংস্থার মূলধন। বিনিয়ােগ, (viii) সুলভ দক্ষ শ্রমিক, দক্ষ পরিচালন ব্যবস্থা, (ix) দুই রাজ্য সরকারের অনুকূল প্রগতিশীল শিল্পনীতি পশ্চিমাঞ্চলের পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের উন্নতিতে অনুঘটকের কাজ করছে।
2. ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে দ্রুত উন্নতি লাভের কারণগুলি ব্যাখ্যা করাে
উত্তর : ভারত তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে দ্রুত উন্নতি লাভের কারণগুলি হল—
(i) মানব সম্পদ : মানুষের উচ্চমেধা জ্ঞান তথ্য প্রযুক্তি শিল্পের প্রধান সম্পদ। সারা ভারত জুড়ে উন্নত মেধা সম্পন্ন মানব সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে।
(ii) প্রশিক্ষণ কেন্দ্র : সারা ভারত জুড়ে বহু উচ্চমানের তথ্য প্রযুক্তির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন-(i) IT রয়েছে 16টি স্থানে (রুকি, নিউ দিল্লি, কানপুর, খল্লাপুর)। এছাড়াও অনেক উচ্চমানের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন-(i) Indian Institute of Science-Bengaluru (ii) Indian Institute of Science Education and Research-Kolkata, Pune প্রভৃতি।
(iii) উন্নত পরিকাঠামাে : উন্নত যাতায়াত ও যােগাযােগ ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ পরিসেবা, নিরপত্তা, 24×7 কর্মের পরিবেশ প্রভৃতি বিষয়ে উন্নত পরিকাঠামােগত সুযােগ করে দিচ্ছে।
(iv) বিপুল চাহিদা ও বাজার :কৃষি, শিল্প, পরিবহণ-যােগাযােগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, সরকারি, বেসরকারি পরিসেবা প্রদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বহুল ব্যবহার ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলিতে বিশাল বাজার তৈরি করেছে।
(v) মূলধনের প্রাচুর্য : উদারীকরণ ও বিশ্বায়নের মধ্য দিয়ে ভারতের এই উদীয়মান শিল্পটিতে দেশীয় ও বহুজাতিক সংস্থাগুলি বিপুল অর্থ বিনিয়ােগ করায় শিল্পটি বিকশিত হচ্ছে।
ভারতের কয়েকটি হাব হল—(i) বেঙ্গালুরু, (i) চেন্নাই, (ii) হায়দরাবাদ, (iv) কলকাতা, (v) দিল্লি-গুরগাঁও-নয়ডা (vi) পুনে (vii) ত্রিবান্দ্রম এবং (viii) তিরুবন্তপুরম।
ভারতের জনসংখ্যা
সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. জনবিস্ফোরণ কাকে বলে?
উত্তর : কোনাে অঞ্চলে জন্মহার ও প্রবাসনের তুলনায় মৃত্যুহার হ্রাস ও অভিবাসন বৃদ্ধি পেলে মােট জনসংখ্যার পরিমাণের ব্যাপক বৃদ্ধিকে জন-বিস্ফোরণ বলে। কোনাে দেশে বার্ষিক জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার 2% এর বেশি বৃদ্ধি পেলে সেই দেশে জনবিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
2. শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি কাকে বলে?
উত্তর : কোনাে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনাে দেশে জন্মহার ও মৃত্যুহার প্রায় সমান হলে তাকে শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা Zero Popolation Growth বলে। জীবিত শিশু ও অভিবাসন জনসংখ্যা এবং মৃত ও প্রবাসন জনসংখ্যা প্রায় সমান হলে শুন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে।
3. মহানগর বা মেগাসিটি কাকে বলে ?
উত্তর : যখন কোনাে জনপদ বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তারলাভ করে এবং অত্যাধুনিক পরিসেবা প্রদান করে, তখন তাকে মহানগর বা মেগাসিটি বলে। 2011 খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতে মেগাসিটির সংখ্যা ৪টি। উদাহরণ—মুম্বাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, আহমেদবাদ, বৃহত্তর কলকাতা, বৃহত্তর চেন্নাই, বৃহত্তর সুরাত প্রভৃতি।
4. কোন রাজ্যে জনঘনত্ব সবথেকে কম এবং কেন?
উত্তর : ভারতের অরুণাচল প্রদেশের জনঘনত্ব সবথেকে কম। প্রতি বর্গকিমিতে 13 জন বাস করে। কারণ—(i) দুর্গম পার্বত্য ভূ-ভাগ, (ii) প্রতিকুল জলবায়ু, (iii) গভীর বনভূমি, (iv) কৃষি, শিল্প নগরায়ণের অভাব, (v) খনিজ ও শক্তি সম্পদের অভাব এই অতি জনবিরলতার কারণ।
5. সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতের সর্বাধিক ও সর্বনিম্ন জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাজ্য দুটির নাম লেখাে।
উত্তর : সর্বাধিক জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাজ্য—ভারতের সর্বাধিক জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাজ্য হল উত্তর প্রদেশ। মােট জনসংখ্যা 16.62 কোটি।
সর্বনিম্ন জনসংখ্যা বিশিষ্ট রাজ্য—ভারতের সর্বনিম্ন জনসংখ্যা বিশিষ্ট্য রাজ্য হল সিকিম। মােট জনসংখ্যা—5,40,493 জন।
6. পরিব্রাজন বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : যখন কোনাে দেশের বা কোনাে অঞ্চলের জনসাধারণের এক অংশ কোনাে বিশেষ পরিব্রাজন বলে। পরিব্রাজনে আকর্ষণজনিত কারণগুলি হল—(i) উন্নততর শিক্ষালাভ ও গবেষণা, (ii) সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, (iii) মনােরম আবহাওয়া ও পরিবেশ, (iv) নতুন সম্পদ বা নতুন ভূখণ্ড আবিষ্কার ইত্যাদি। এবং Push Factor গুলাে হল-(i) রাজনৈতিক অস্থিরতা, (ii) কর্মসংস্থানের অভাব, (iii) যুদ্ধবিগ্রহ, দেশভাগ (iv) সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে অস্থিরতা, (i) জনসংখ্যা বৃদ্ধি, (ii) উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা করার সুযােগের অভাব ইত্যাদি বিষয়ের আকর্ষণে অথবা বিকর্ষণজনিত কারণে অন্যত্র গমন করে থাকে।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : (i) বৃদ্ধির হার : ভারতের উচ্চ জন্মহার ও নিম্নমৃত্যুহার জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ।
(ii) বিবাহ : বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, বিধবা বিবাহ, সর্বজনীন বিবাহ জনসংখ্যা বাড়ায়।
(iii) শিক্ষা : স্বল্প শিক্ষা, অশিক্ষা, কুসংস্কার, নারীশিক্ষার অভাব জনসংখ্যা বৃদ্ধি করে।
(iv) অনুপ্রবেশ : অনুপ্রবেশ ও উদ্বাস্তু সমস্যা জনসংখ্যা বাড়ায়।
(v) সামাজিক মর্যাদা : নারীদের স্বল্প সামাজিক মর্যাদা জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ।
এছাড়াও (i) যৌথ পরিবার প্রথা, (ii) পুত্রসন্তানের আশঙ্কা এবং (ii) কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি জনসংখ্যা বাড়ায়।
2. ভারতের অধিক জন্মহারের কারণগুলি কী কী?
উত্তর : (i) আধুনিক চিকিৎসা ব্যবহার উন্নতি ভারতের মৃত্যুহারকে অনেকাংশে কমিয়েছে। (ii) দুর্ভিক্ষ, খরা, বন্যা রােধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা, ত্রাণ মৃত্যুহার কমিয়েছে। (iii) পুষ্টিকর সুষম খাদ্যের সরবরাহ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। (iv) আধুনিক যােগাযােগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা মৃত্যুহার কমিয়েছে। (v) মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, সন্তান প্রতিপালনের আর্থিক স্বচ্ছলতা, সুশিক্ষা মৃত্যুহার কমিয়ে দিয়েছে।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. ভারতের অসম জনসংখ্যা বণ্টনের কারণগুলি আলােচনা করাে :
উত্তর : ভারতের মােট জনসংখ্যা 121.02 কোটি (2011 খ্রীঃ) হলেও সর্বত্র জনসংখ্যা সমান হারে বন্টিত হয়নি। ভারতে অসম জনসংখ্যা বন্টনের কারণগুলি হল নিম্নরূপ-
প্রাকৃতিক কারণ :
(a) ভূ-প্রকৃতি : উচ্চ পার্বত্য অঞলে খাড়া ঢাল, বাসযােগ্যতার অভাব, পরিবহন যাতায়াত ব্যবস্থার অসুবিধার দরুণ জনজাতি তুলনামূলক কম। মালভূমি অঞ্চলে খনিজ ও শিল্পের সমৃদ্ধির জন্য জনবসতি মাঝারি। এবং পৃথিবীর প্রায় 90% মানুষ সমভূমি অঞ্চলে বাস করে সমস্ত সুযােগ সুবিধা পাওয়া যায় বলে।
(b) জলবায়ু : উমরু অঞ্চলে জলবায়ু চরমভাবাপন্ন, উয়, পার্বত্য অঞ্চলে হিমশীতল জলবায়ু ও বৃষ্টিবহুল পরিবেশের কারণে জনবসতি বিরল। অন্যদিকে উপকূলীয় এবং সমভূমি অঞলে সমভাবাপন্ন মনােরম জলায়ুর কারণে জনঘনত্ব অধিক।
(c) নদ-নদী : নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় ভারতের অধিকাংশ শহারল নদী তীরবর্তী অণ্ডলে গড়ে উঠেছে।
(d) মৃত্তিকা : মৃত্তিকার গুণাগুণের ওপর কৃষির সাফল্য নির্ভর করে। উর্বর মৃত্তিকাযুক্ত অণ্ডলে ঘনবসতি দেখা যায়। অপরদিকে অনুর্বর মৃত্তিকায় বিরল জনবসতি দেখা যায়।
(e) বনভূমি : বনভূমির প্রকৃত ও বনভূমির বন্টনের উপর জনসংখ্যার তারতম্য নির্ভরশীল।
II অর্থনৈতিক কারণ :
(a) কৃষি : ভারত কৃষি নির্ভর দেশ। তাই কৃষির সুবিধাযুক্ত অঞ্চলে জনঘনত্ব অর্ধেক।
(b) শিল্প : শিল্পাঞ্চলে কর্ম সংস্থানের সুযােগ থাকায় জনঘনত্ব বেশি হয়।
(c) পরিবহণ ও যােগাযােগ : ভারতের উন্নত পরিবহণ ও যােগাযােগ ব্যবস্থা সম্পন্ন স্থানে জনঘনত্ব বেশী। অপরদিকে এই স্বসুবিধা না থাকায় সেখানে বিরল জনবসতি।
(d) ধর্ম : ধর্মীয় আচার আচরণকে কেন্দ্র করে ধর্মতীর্থস্থলগুলিকে জনসংখ্যা বেশি।
(e) শিক্ষা ও সংস্কৃতি : শিক্ষা দীক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্পকলা সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলােতে জনঘনত্ব অনেক বেশি। সেখানে এই সকল সুযােগ কম সেখানে জনঘনত্ব অনেক কম।
III রাজনৈতিক কারণ :ভারত বিভাজন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পর্বে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে অনুপ্রবেশের কারণে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ, অসম রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলিতে অধিক কর্মসংস্থানের জন্য শহুরে জনসংখ্যার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তুলনামূলক ভাবে গ্রামাঞ্চলে কম।
উপরিউক্ত কারণগুলির জন্য ভারতে অসম জনসংখ্যা বন্টন লক্ষ করা যায়।
ভারতের পরিবহণ ও যােগাযােগ ব্যবস্থা
1. ইন্টারনেট বা আন্তর্জাল কী?
উত্তর : সমগ্র পৃথিবীর সমস্ত কম্পিউটারকে মডেমের সাহায্যে টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে একসূত্রে যােগ করার নামই হল ইন্টারনেট বা অন্তর্জাল। 1963 খ্রিস্টাব্দে ইন্টারনেট হল সমগ্র বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার নেটওয়ার্কের ইন্টারনেট বা অন্তর্জাল সূচনা : হয় মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের উদ্যোগে।
2. ই-মেল (E-mail) কী?
উত্তর : ই-মেল-এর অর্থ হল Electronic mail বা বৈদ্যুতিক বার্তা। কম্পিউটার ইন্টারনেট ব্যবস্থায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ পদ্ধতিতে অতি অল্প সময়ে পৃথিবীর যে কোনাে প্রান্তে যেখানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা আছে, সেখানে ডিজিটাল তথ্য পাঠানাে যায়।
3. ব্যাক ওয়াটার্স ৰা পশ্চাদভূমি বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : ভারতের মালাবার উপকূলে অসংখ্য কয়াল বা উপহদ আছে, এগুলিকে ব্যাকওয়াটার্স বলে। এগুলি জলপথরূপে ব্যবহৃত হয়। আলেপ্পি থেকে কোচিন পর্যন্ত ভেম্বনাদ কয়ালের মধ্য দিয়ে স্টিমারে যাতায়াত করা যায়। তাছাড়া তিরুবন্তপুরম থেকে উত্তরে কেপুর পর্যন্ত জলপথে যাওয়া যায়।
4. শিপিংলেন কাকে বলে?
উত্তর : মহাসাগরের বিস্তৃতি হলেও তারতম্যের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করে জাহাজ চলাচল করে। জাহাজ সমুদ্রে যে নির্দিষ্ট পথে চলে তাকে শিপিংলেন বলে।
5. শিপিং লাইন কী?
উত্তর : জলপথ পণ্য ও যাত্রী পরিবহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সমুদ্রপথ পরিবহণে কোম্পানির জাহাজ সমুদ্রে চলাচল করে, সেই কোম্পানিকে শিপিং লাইন বলে।
6, পুনঃ রপ্তানিবন্দর কাকে বলে?
উত্তর : যে বন্দরের মাধ্যমে পণ্যদ্রব্য, আমদানি, আমদানিকৃত পণ্য সঞ্চয় অথভা ব্যবসা করার পর পুনরায় রপ্তানি করা হয়, তাকে বলা হয় পুনঃরপ্তানিবন্দর। যেমন- কেরলের কোলাম বন্দর।
7. বুলেট ট্রেন কী ?
উত্তর : বুলেট ট্রেন হল প্রচণ্ড গতিসম্পন্ন ট্রেন। জাপানে টোকিও-ওসাকার শহরের মধ্যে 1964 সালে প্রথম এই ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ভারতের 2014-15 অথবর্যে রেল বাজেটে মুম্বাই থেকে আমেদাবাদের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালানাের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর : (প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. ‘জলপথ হল উন্নয়নের রূপরেখা’-ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর : সমুদ্র, হ্রদ, নদী, খাল প্রভৃতি দিয়ে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণকে জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থা বলে। পথ নির্মামে খরচ কম (কখনাে খরচ লাগে না), পরিহণ পদ্ধতি সহজ ও সরল ও কমব্যয়বহুল, একসাথে প্রচুর পণ্য বহন করা যায় এবং শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটে বলে জলপথ হল উন্নয়নের রূপরেখা।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]
1. পরিবহণ (Transport) এবং যােগাযােগ (Communication) ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য লেখাে।
উত্তর : পরিবহণ এবং যােগাযােগ ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য –
ভিত্তি ভাবর তরাই
1. প্রকৃতি পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে কেবল পণ্যসামগ্রী ও যাত্রী এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত হয়। যােগাযােগ ব্যবস্থার মাধ্যমে কেবল সংবাদ ও তথ্যের আদান-প্রদান হয়।
2. মাধ্যম এর মাধ্যমগুলি হল—সড়কপথ,রেলপথ, জলপথ, আকাশপথ,রজ্জুপথ, পাইপলাইন, পাতাল রেল। এর মাধ্যমগুলি হল ইন্টারনেট, ই-মেল মােবাইল ফোন, টেলিগ্রাফ ইত্যাদি।
3. সময় পরিবহণ ব্যবস্থায় যাত্রী বা পণ্যদ্রব্য এক স্থান থেকে অপরস্থানে পৌঁছাতে অনেক বেশি সময় লাগে। যােগাযােগ ব্যবস্থায় তথ্য বা সংবাদ পৃথিবীর যে কোন স্থানে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারে।
4. ব্যয় পরিবহণ ব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ। অপেক্ষাকৃত কম ব্যয়বহুল।
উপগ্রহ চিত্র ও ভূ-বৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর [MCQ]:[প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
1. ভারতীয় সর্বেক্ষণ বিভাগ স্থাপিত হয় যে সালে—
[A] 1667 সালে [B] 1767 সালে [C] 1867 সালে [D] 1967 সালে
উত্তরঃ [B] 1767 সালে
2. ভারতের একটি ভূসমলয় উপগ্রহ হল—
[A] NOAA [B] GMS [C]INSAT [D] METEOSAT
উত্তরঃ [C] INSAT
3, পৃথিবীর প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ হল ।
[A] ল্যান্ডস্যাট-1 [B] আর্যভট্ট [C] ইনস্যাট [D] স্পুটনিক
উত্তরঃ [D] স্পুটনিক
4. ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র আঁকা হয়—
[A] জরিপ থেকে [B] বিমানচিত্র থেকে [C] উপগ্রহ চিত্র থেকে। [D] কোনােটিই না
উত্তরঃ [A] জরিপ থেকে
5. নাসা প্রেরিত প্রথম উপগ্রহের নাম হল-
[A] NOAA [B] TRIOS-1 [C] IRS-1A [D] LISS-I
উত্তরঃ [B] TRIOS-1
6. ভারতের মহাশূন্য থেকে ছবি তােলার কাজ শুরু হয় যে সালে—
[A] 1950 [B] 1960 [C] 1970 [D] 1990
উত্তরঃ [D] 1990
7. ভূসমলয় উপগ্রহগুলি ভূপৃষ্ঠ থেকে কত কিলােমিটার ওপরের অবস্থান করছে?
[A] 400 কিমি [B] 4000 কিমি [C] 600 কিমি [D] 6000 কিমি।
উত্তরঃ [B] 4000 কিমি
8. ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের আন্তর্জাতিক স্কেল হল—
[A] ১00000 [B] 1 – 100000 [C] 1 – 200000 [D] 1 – 1000000
উত্তরঃ [C] 1 – 200000
9. স্যাটেলাইট শব্দের ফরাসি অর্থ হল—
[A] দ্বাররক্ষী [B] উপগ্রহ [C] নজরদারি [D] প্রহরী
উত্তরঃ [D] প্রহরী
10. ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ
[A] আর্যভট্ট [B] স্পুটনিক [C] লুনা-II [D] ভস্তক
উত্তরঃ [A] আর্যভট্ট
11. ভারতের প্রথম মহাকাশচারী
[A] কল্পনা চাওলা [B] রাকেশ শর্মা। [C] ভ্যালেনন্তিলা [D] ইউরি গ্যাগারিন
উত্তরঃ [B] রাকেশ শর্মা
12. SPOT উপগ্রহটি উৎক্ষেপন করা হয় যে সালে
[A] 1966 [B] 1976 [C] 1986 [D] 1996
উত্তরঃ [C] 1986
13. অবলােহিত রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকে পাওয়া যায়
[A] উপগ্রহ চিত্রের [B] চাঁদের [C] বিমানপথের [D] ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের
উত্তরঃ [D] ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-1]
নিম্নলিখিত বাক্যগুলি শুদ্ধ হলে পাশে ‘শ’ এবং অশুদ্ধ হলে পাশে ‘অ’ লেখাে :
1. এক্স রশ্মি থেকে দূর সংবেদন সম্ভব নয়। উত্তর : শু
2. লাল রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে স্বাভাবিক উদ্ভিদের মানচিত্র তৈরি করা হয় উত্তর : শু
3. LANDSAT উপগ্রহ থেকে ওজোনস্তরের ঘনত্ব সম্পর্কে জানা যায়। উত্তর : অ
4. গামা রশ্মিকে দূর সংবেদনের প্রধান রশ্মি হিসেবে ধরা হয়। উত্তর : অ
5. ভারতের উপগ্রহ চিত্র শুধুমাত্র হায়দরাবাদ-এর দূর সংবেদন সংস্থা থেকেই প্রকাশ করা হয়। উত্তর : শু
শূন্যস্থানে সঠিক শব্দ বসিয়ে বাক্যটি সম্পূর্ণ করাে
1. 10m×10®®M হল _ রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য। উত্তর : অবলােহিত
2. LANDSAT উপগ্রহ একই জায়গার ছবি – দিন পরপর পাঠায়। উত্তর : 18
3. বস্তুর সংস্পর্শে না এসে দূর থেকে কোনাে বস্তুর ছবি তােলাকে বলে উত্তর : দূরসংবেদন।
4. উপগ্রহ চিত্রের ক্ষুদ্রতম একককে বলে । উত্তর : পিক্সেল
5. স্পেকট্রাম বরাবর তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিমাপের যে একক ব্যবহার করা হয় তা হল উত্তর : মাইক্রোমিটার
6. মানচিত্রে তিন ধরনের স্কেল ব্যবহৃত হয়। যথা – ভগ্নাংশসূচক ও লৈখিক স্কেল। উত্তর : বিবৃতিমূলক।
7, 198৪ সালে ভারতে। উপগ্রহ নামে উৎক্ষেপন শুরু হয়। উত্তর : IRS
8. ভারতের দুর সংবেদনের পিতা বলা হয় উত্তর : সতীশধরণ।
একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাও :
1. ভারতের টোপাে মানচিত্রে কতগুলি গ্রিড রয়েছে?
উত্তর : 135টি।
2. সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার শাখা দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : কলকাতার উড স্ট্রিটে।
3. টোগােশিটের কোন দিকে স্কেল উল্লেখ করা থাকে?
উত্তর : উত্তর-পূর্বদিকে।
4. টোপাে মানচিত্রে জাতীয় সড়কের চিহ্ন কী?
উত্তর : NHT
5. ডিগ্রি শিটের মেট্রিক স্কেল কত?
উত্তর : 1 সেমিতে 25 কিমি বা 1:250000।
6. ভারতের প্রথম উপগ্রহের নাম কী?
উত্তর : আর্যভট্ট।
7. ভূসমলয় উপগ্রহের কক্ষপথটিকে কী বলে?
উত্তর : পার্কিং অরবিট।
৪. রিমােট সেসিং শব্দের আভিধানিক অর্থ কী?
উত্তর : দূরসংবেদন।
9. সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : দেরাদুনে।
10. পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার সঠিক অবস্থান নির্ণয়ের জন্য ভারতে কোন উপগ্রহ ব্যবহার করা হয়?
উত্তর : INSAT উপগ্রহ।
11. নিরক্ষীয় তল বরাবর যে সব উপগ্রহ পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘােরে তাকে কী বলা হয়?
উত্তর : ভূসমলয় উপগ্রহ।
12. ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের অপর নাম কী?
উত্তর : টোপাে মানচিত্র।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-2]
1. দূর সংবেদন (Remote Sensing) কাকে বলে?
উত্তর : বৈজ্ঞানিক উপায়ে বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে দূরের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সুন্দর নিখুঁত ধারণা গড়ে তােলার পদ্ধতিকে দূরসংবেদন বা Remote Sensing বলে। এই পদ্ধতির দুটি প্রধান উপাদান হল-(i) বিমান চিত্র (Aerial Photo) এবং (ii) উপগ্রহ চিত্র (Satellite Imagery)।
2. বিভেদন বা Resolution কাকে বলে ?
উত্তর : সংবেদক (Sensor)-এর সাহায্যে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যমে গৃহীত কৃত্রিম উপগ্রহ চিত্রের বিভিন্ন বস্তু, ক্ষেত্র, উপাদানের পৃথক করণের ক্ষমতাকে বিভেদন বা Resolution বলে।
3. উপগ্রহ চিত্রে ব্যান্ড’ (Bond) বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : পৃথিবীর কোনাে বস্তু বা পদার্থ থেকে বিচ্ছুরিত অথবা প্রতিফলিত তড়িৎ চৌম্বকীয় বিকিরণগুলি উপগ্রহ সংবেদনে স্থাপিত ডিভাইসের যে অংশে লিপিবদ্ধ হয় তাকে ‘ব্যান্ড (Band) বলে।
4. কৃত্রিম উপগ্রহ কাকেবলে?
উত্তর : কৃত্রিম উপগ্রহ হল তথ্য প্রযুক্তি সমৃদ্ধ মানুষ দ্বারা নির্মিত এক অত্যাধুনিক যন্ত্র যা একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৃথিবীকে বারবার প্রদক্ষিণ করে।
5. দূরসংবেদনে ‘সেনসর’ (Sensor) কাকে বলে?
উত্তর : সেনসিং’ কথাটির অর্থ—কোনাে বস্তুকে পর্যবেক্ষণ করা। সুতরাং সেনসর হল একটি যন্ত্র যা মহাকাশ থেকে ভূ-পৃষ্ঠের কোনাে নির্দিষ্ট লক্ষ বস্তুর তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ গ্রহণ করে, তাকে চিহ্নিত করতে পারে। র্যাডার, ল্যাডার, অপটিক্যাল স্ক্যানার এর উদাহরণ।
6. Pixel কাকে বলে?
উত্তর : উপগ্রহ প্রতিচ্ছবির ক্ষুদ্রতম অঙ্গানু বা উপাদানকেই পিক্সেল বলা হয়। যার নির্দিষ্ট value, address থাকে। এই address আবার দুই প্রকার। যথা-(i) Latitude/ Longitude এবং (i) Row/Column। এক একটি পিক্সেল ভূ-পৃষ্ঠের নির্দিষ্ট অংশকে নির্দেশ করে।
7. দূরসংবেদন ব্যবস্থায় (True Colour Composition (TCC) বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : উপগ্রহ প্রতিচ্ছবিতে ভূমির ব্যবহার দেখাবার জন্য সাধারণত তিনটি রঙ যথা—লাল, সবুজ, নীল (RGB) বা এদের সংমিশ্রণ করে দেখানাে হয়। তাই সাধারণত ও ব্যান্ডের উপগ্রহের মাধ্যমে কোনাে প্রতিচ্ছবি TCC প্রতিস্থাপনের জন্য Red, Green, Blue Channel ব্যবহৃত হয়। ফলে লাল বস্তুকে লাল, নীল বস্তুকে নীল সবুজ বস্তুকে সবুজ ব্যান্ডের রঙ এ দেখানাে হয়, একে TCC বলে।
8. দূরসংবেদনে False Colour Composition (Fcc) বলতে কী বােঝাে?
উত্তর : উপগ্রহ প্রতিচ্ছবিকে নিখুতভাবে বােঝাবার জন্য যখন Image-processing এর সময় লক্ষবস্তুর প্রকৃতি রং-এর পরিবর্তে ছদ্মরং ব্যবহার করা হলে তাকে False Colour Compoisition (FCC) বলে।
9. GIS কী?
উত্তর : GIS কথাটির পুরাে কথা হল—Geographical Information System। যা একটি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা। যার সাহায্যে ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন পরিসংখ্যানকে ধারণ, সংরক্ষণ, পরীক্ষা পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়, ব্যাখ্যা, সর্বোপরি মানচিত্রের আকারে প্রকাশ করা হয়।
10. Nadir Point কী ?
উত্তর : কৃত্রিম উপগ্রহের সােজাসুজি নীচে ভূ-পৃষ্ঠের অবস্থিত বিন্দুকে নাদির বিন্দু বলে। এটি ভূ-পৃষ্ঠস্থ পথের মধ্যে অবস্থিত হয়।
11. বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ বা EMR (Electro Magnetic Radiation) কী?
উত্তর : বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় বিকিরণ হল শক্তির একটি রূপ। এতে একটি সর্পিল বিদ্যুৎ তরঙ্গ থাকে এবং সর্পিল চৌম্বকীয় তরঙ্গ থাকে। অতিবেগুনী রশ্মি, মাইক্রোওয়েভ, এক্সরশ্মি, রেডিওতরঙ্গ ও দৃশ্যমান আলাে প্রত্যেকটি এক একটি বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ।
ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-3]
1. দূরসংবেদন ব্যবস্থার সুবিধাগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর : (i) সংগৃহীত তথ্য বাস্তবের সাথে সঠিক। (ii) বিস্তীর্ণ অঞ্চলের তথ্য সংগ্রহ। (iii) দুর্গম অঞ্চলের তথ্য সহজেই পাওয়া যায়। (iv) বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে সহজে তথ্য সংগৃহীত হয়। (v) কম্পিউটারের মাধ্যমে সহজে ও দ্রুত তথ্য বিশ্লেষণ করা যায়। (vi) Digital আকারে তথ্য সংগৃহীত হয়। (vii) প্রতিনিয়ত এই তথ্য পাওয়া যায় বলে তথ্যের পরিবর্তন কি ঘটলাে তা ধরে ফেলা যায়।
2. উপগ্রহ চিত্রের বিশেষ ব্যবহারগুলি কী কী?
উত্তর : উপগ্রহ চিত্র এবং তথ্যাদি বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন—(i) আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা যায়। (ii) ক্রান্তীয় সরল বা দুর্বল ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান, গতিপ্রকৃতি, ক্ষমতা জানা যায়। (iii) কৃষিজ ফসলের বন্টন পরিমাপ করা যায়। (iv) ফসলের গুণমান এবং (v) অন্যান্য গ্রহদের সম্পর্কে জানা যায়।
প্রেমের ছন্দ পড়ে খুব ভালো লাগলো ধন্যবাদ