শিখন |Learning | শিখনের বৈশিষ্ট্য | পরিণমন| শিখনের তত্ত্ব

 শিখন(Learning) কী :

শিখন হল নতুন কোনো জ্ঞান, অভিজ্ঞতা অর্জন, দক্ষতা বা দৃষ্টিভঙ্গি যা প্রাণিকে অভিযোজিত হতে সাহায্য করে। অর্থাৎ নতুন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য প্রাণির আচরণের মধ্যে যে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটায় তাকে শিখন (Learning) বলা হয়। অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে নতুন কোনো কিছু আয়ত্ত করার নাম শিখন। 

অতীত অভিজ্ঞতা ও অনুশীলনের মাধ্যমে আচরণ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া হল শিখন।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে শিখন :

মনোবিদ উডওয়ার্থ (Woodworth) :
শিখন হল সেই ধরনের সক্রিয়তা যা ব্যক্তির আচরণে পরিবর্তন আনে এবং ব্যক্তির পূর্ববর্তী আচরণ ও অভিজ্ঞতার পরিবর্তন ঘটায়।

মনোবিদ ড্রিভার (Drever):
ফলাফলের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আচরণের পরিবর্তনকে শিখন বলে।

মনোবিদ ম্যাকডুগাল (Mcdougal) :
শিখন হলো অভ্যাসের ফলে আচরণের পরিবর্তন।

মনোবিদ বার্নার্ড (Bernard):
শিখন হলো আচরণের পরিবর্তন।

মনোবিদ স্মিথ (Smith) :
অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নতুন আচরণ আয়ত্ত করা, যা পুরোনো আচরণকে শক্তিশালী বা দুর্বল করে সেই প্রক্রিয়ায় হল শিখন।

মনোবিদ ক্রো অ্যান্ড ক্রো (Crow and Crow):
শিখন হল অভ্যাস, মনোভাব গঠন ও জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া।

শিখনের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি (Characteristics of learning/ Nature of Learning):

১. আচরণের পরিবর্তন: 
পুরাতন আচরণের পরিবর্তন এবং নতুন আচরণ সম্পাদনই শিখন।

২. নতুন অভিজ্ঞতা: 
নতুন আচরণ সম্পাদনের মাধ্যমেই ব্যক্তি বিশেষ নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে।

৩. জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া :
আমরা যতদিন বাঁচি ততদিন শিখি। জন্মলগ্ন থেকে  শিখন শুরু হয়, চলে মৃত্যু পর্যন্ত।

৪. আচরণের উৎকর্ষতা: 
শিখনের ফলে আচরণের শুধু পরিবর্তন নয় উন্নত আচরণ আশা করা যায়।

৫. অনুশীলন: 
শিখন অনুশীলন নির্ভর। পুরাতন আচরণের পরিবর্তে নতুন আচরণ আয়ত্ত করতে বার বার চেষ্টা ও অনুশীলন অবশ্যই প্রয়োজন। এছাড়া শিখন হয় না।

৬. পরিণমন: 
শিখনের একটি অপরিহার্য শর্ত। দৈহিক এবং মানসিকভাবে পরিপক্ক না হলে  ব্যক্তি বিশেষকে বিষয়বস্তু বা দক্ষতা শেখানো যায় না।

৭. প্রেষণা:
শিখন প্রেষণা নির্ভর। শেখার জন্য চাহিদা বা আগ্রহ না থাকলে কাউকে শেখানো যায় না।

৮. শিখন একটি বিকাশমূলক  বা মানসিক প্রক্রিয়া।

৯. শিখন উদ্দেশ্যমুখী প্রক্রিয়া।

১০. শিখন প্রক্রিয়া ব্যক্তির আত্মসক্রিয়তাকে জাগিয়ে তোলে।

শিখনের নির্ধারক :
১. প্রেষণা
২. চাহিদা
৩. অনুশীলন
৪. সমস্যা
৫. মনোযোগ ও আগ্রহ
৬. পরিণমন


পরিণমন :

পরিণমন একটি অভ্যন্তরীণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যা ব্যক্তির মধ্যে সংঘটিত হয় কোনাে বাহ্যিক উদ্দীপকের প্রভাব ছাড়াই। অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বিকাশ প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয়, তাকে পরিণমন বলে।

শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিকেই পরিণমন বলে। পরিণমন হল প্রাণির মধ্যে সেই সব গুণগত আচরণের পরিবর্তন যার জন্য শিখনের প্রয়োজন হয় না। যেমন বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশুর পাকস্থলী বৃদ্ধি পায় এবং অনেক বেশি খাদ্য হজম করতে পারে।

মনােবিদ কোলেসনিক(Kolesnick)-এর মতে, জন্মগত সম্ভাবনাগুলি স্বাভাবিকভাবে প্রস্ফুটিত হওয়ার ফলে শিশুর আচরণের গুণগত এবং পরিমাণগত পরিবর্তনের প্রক্রিয়াই হল পরিণমন।

শিখন ও পরিণমনের পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে মনোবিদ বার্নার্ড (Bernard) বলেছেন,
“Maturation is biological whereas learning is psychological.”
অর্থাৎ  পরিণমন হল জৈবিক এবং শিখন হল মনস্তাত্ত্বিক।

শিখন ও পরিণমনের ফলে বিকাশ সংঘটিত হয় অর্থাৎ দুটিই হল জীবন বিকাশের প্রক্রিয়া।

বিকাশ = শিখন × পরিণমন

শিখন ও পরিণমনের পার্থক্য :

শিখনের তত্ত্ব :
শিক্ষার্থীরা কীভাবে শেখে এবং চিন্তা করে সে সম্পর্কে মনোবিদ এবং শিক্ষাবিদগণ বিভিন্ন তত্ত্ব  উপস্থাপন করেছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top