সর্বনাম পদ :
“বাংলা ভাষায় সর্বনামের খুব ঘটা।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
অর্থ:
সর্বনাম কথাটির আক্ষরিক অর্থ ‘সকল নাম’।
নামকরণ:
সকল নামের জায়গায় ব্যবহৃত হয় বলে এই পদের ‘সর্বনাম’ নামকরণ করা হয়েছে।
তিতাস বেশ শান্ত মেয়ে। তিতাস প্রতিদিন মন দিয়ে তিতাসের পড়াশোনা করে। এজন্য তিতাসের শিক্ষকেরা তিতাসকে খুব ভালোবাসে। — এই বাক্যগুলি তে বারবার তিতাস বলায় আদৌ শুনতে ভালো লাগছে না ।
কিন্তুু যদি বলি তিতাস খুব শান্ত মেয়ে । সে প্রতিদিন মন দিয়ে তার পড়াশোনা করে ।এজন্য তার শিক্ষকেরা তাকে খুব ভালোবাসে। তবে শুনতে ভাালো লাগবে। তিতাসের (বিশেষ্য ) পরিবর্তে সে ,তার ,তাকে ব্যবহার করা হয়েছে । এই সে , তার , তাকে এক-একটি সর্বনাম পদ।
সংজ্ঞা:
বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহার করা হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে।
উদাহরণ:
আমি, আমরা, তুমি,তোমরা,আপনি,তিনি ,তুই , সে, সব,ইনি,উনি,যে, কে, কী, কারা ইত্যাদি।
সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ :
ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য রেখে সর্বনাম পদকে মোট আটটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা-
১. ব্যক্তিবাচক সর্বনাম
২. নির্দেশক সর্বনাম
৩. অনির্দেশক সর্বনাম
৪. প্রশ্নবাচক সর্বনাম
৫. সাপেক্ষ সর্বনাম বা নিত্যসম্বন্ধী সর্বনাম
৬. আত্মবাচক সর্বনাম
৭. সাকল্যবাচক সর্বনাম
৮. পারস্পরিক সর্বনাম
১: ব্যক্তিবাচক সর্বনাম :
ক) আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।
খ) তুমি যাবে ভাই,যাবে মোর সাথে ?
গ) তিনি বড়ো পণ্ডিত ছিলেন।
ব্যক্তিনামের পরিবর্তে যে সর্বনাম ব্যবহৃত হয়, তাকে ব্যক্তিবাচক সর্বনাম বলে। একে পুরুষবাচক সর্বনামও বলা হয়।
ব্যক্তিবাচক সর্বনাম পদে কোনো ব্যক্তি বা পুরুষকে নির্দেশ করে।
উদাহরণ : আমি, আমরা, আমাকে,আমাদের, তুমি,তোমরা,তোমাকে,তাঁকে,তুই,তোকে, আপনি, আপনাকে,সে, তারা,তিনি,তার ইত্যাদি।
মনে রেখো : বিশেষ্য পদে যেমন ‘রাম’ , ‘রাম’কে, ‘রাম’ দ্বারা, ‘রাম’ হতে ইত্যাদি হয় সর্বনামে কিন্তু আমি—আমিকে, তুমি—তুমিকে, সে—সে’কে হয় না। পরিবর্তে আসে ‘আমা-তোমা-তা’—কে ইত্যাদি।
২: নির্দেশক সর্বনাম :
ক) এটা রেখে দাও কাজে লাগবে।
খ) এই বিড়ালটি পোষা।
গ) উনি কোথায় গেলেন ?
যে সব সর্বনাম নিকটবর্তী বা দূরবর্তী কোনো ব্যক্তি, বস্তু ইত্যাদিকে নির্দেশ করে তাদের নির্দেশক সর্বনাম বলে।
উদাহরণ : এ , ইহা , ও, উহা , এই , ওই ইত্যাদি।
নির্দেশক সর্বনাম আবার দুই প্রকার ।যথা–
১. সামীপ্যবাচক বা নিকট নির্দেশক
২. দূরত্ববাচক নির্দেশক।
১. সামীপ্যবাচক বা নিকট নির্দেশক :
যে নির্দেশক সর্বনামগুলি কাছের জিনিসকে নির্দেশ করে তাদের সামীপ্যবাচক নির্দেশক সর্বনাম বলে।
উদাহরণ : এই, এ,এরা,ইহা,ইনি,এটা ইত্যাদি।
২. দূরত্ববাচক নির্দেশক :
যে নির্দেশক সর্বনামগুলি দূরের জিনিসকে নির্দেশ করে তাদের দূরত্ববাচক নির্দেশক সর্বনাম বলে।
উদাহরণ : ও,ওরা,ওই,উনি,ওটা,ওগুলি ইত্যাদি।
৩: অনির্দেশক সর্বনাম :
ক) কোনো কিছু বলার আগে চিন্তা করা উচিত।
খ) কেউ কেউ জ্ঞানী হয়,সবাই নয়।
গ) কেউ নিশ্চয় এ কাজ করেছে।
যে সর্বনাম পদে কোনো বস্তু, ব্যক্তি বা ভাবকে নির্দিষ্ট করে বোঝায় না, তাকে অনির্দেশক সর্বনাম বলে।
উদাহরণ : কেউ , কিছু, কোনো, যে-কেউ , যা-কিছু , কিছু-কিছু, কোনো-কিছু, কেউ-কেউ, ইত্যাদি।
৪: প্রশ্নবাচক সর্বনাম :
ক) কে বা কারা এই কথা বলেছে ?
খ) কোন্ প্রশ্নের উত্তর তোমার কাছেে সহজ ?
গ) যেতে পারি কিন্তু কেন যাব ?
যে সর্বনাম পদ দ্বারা কোনো কিছু সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়, তাকে প্রশ্নবাচক সর্বনাম বলে।
উদাহরণ : কে , কী, কোন,কোনটা,কারা,কোনগুলি ,কোথায় ইত্যাদি।
৫: সাপেক্ষ সর্বনাম বা নিত্যসম্বন্ধী সর্বনাম :
ক) যে বাংলা সহায়ক পড়বে সে ভালো ফল করবে।
খ) যারা পরিশ্রমী তারা সাফল্য লাভ করে।
গ) দেহ যাহা পায় তাহা রাখিবার জন্য নহে।
পারস্পরিক নির্ভরশীল সংযোগবাচক সর্বনামকে সাপেক্ষ সর্বনাম বলে।
সর্বনামের যে জোড়াগুলির একটি ব্যবহৃত হলে অপরটিও ব্যবহৃত হয়, তাদের সাপেক্ষ সর্বনাম বা নিত্যসম্বন্ধী সর্বনাম বলে।
উদাহরণ : যা-তা, যে-সে, যিনি-তিনি, যাহা-তাহা, যারা-তারা ইত্যাদি।
৬: আত্মবাচক সর্বনাম :
ক) স্বয়ং ঈশ্বর এবার আর রক্ষা করতে পারবে না ।
খ) অর্ঘ্য নিজেই একাজ করেছে।
গ) মজাইলা এ কনক লঙ্কা রাজা , মজাইলা আপনি!
যে সর্বনামগুলি বিশেষ ভাবে কোনো ব্যক্তির নিজেকেই বা আত্মভাবকে প্রাধান্য দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়, তাদের আত্মবাচক সর্বনাম বলে।
উদাহরণ : স্বয়ং , নিজে , নিজ , খোদ , নিজে-নিজে , আপনি ইত্যাদি।
৭: সাকল্যবাচক সর্বনাম:
ক) পৃথিবীতে সবাই সুখী নয়।
খ) বল বল বল সবে।
গ) সকলকে রামায়ণ শোনাতে হবে।
যে সর্বনামের দ্বারা কোনো সমষ্টির সকলকে বোঝানো হয়, তাকে সাকল্যবাচক বা সমষ্টিবাচক সর্বনাম বলে।
উদাহরণ : সব,সকল, সবাই, উভয় ইত্যাদি।
৮: পারস্পরিক সর্বনাম :
ক) আপনা-আপনিই ঝগড়া মিটে গেছে।
খ) নিজে নিজেই বকতে আরম্ভ করল।
গ) পরস্পর মারামারি করিও না।
যে সর্বনাম পদ পরস্পর অর্থে অপরের সাহায্য ছাড়া স্বেচ্ছায় ব্যবহৃত হয় তাকে পারস্পরিক সর্বনাম বলে।
উদাহরণ : আপনা-আপনি, নিজে নিজে, পরস্পর ইত্যাদি।
মনে রেখো: সর্বনাম শুধু বিশেষ্যের পরিবর্তে বসে না, বাক্যাংশ বা পূর্ণবাক্যের পরিবর্তেও বসে।
যেমন :
বাক্যাংশের পরিবর্তে :
যাকে তুমি চাও না সেই মেয়েটি এসেছে। এখানে ‘যাকে’ বাক্যাংশের পরিবর্তে বসেছে।
বাক্যের পরিবর্তে :
তুমি বাপ্পাকে ভুল বুঝেছিলে। তা স্বীকার করো। এখানে ‘তা’ বাক্যের পরিবর্তে বসেছে।
অসাধারণ পোস্ট আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ অনেক বেশি উপকৃত হলাম