হারিয়ে যাওয়া কালি কলম – শ্রীপান্থ |hariye jaoya kali kalom|BanglaSahayak.com

 হারিয়ে যাওয়া কালি কলম -শ্রীপান্থ  (নিখিল সরকার)


লেখক  পরিচিত:

শ্রীপান্থ (নিখিল সরকার) :

জন্ম:১৯৩২     মৃত্যু : ২০০৪

খ্যাতনামা প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক শ্রীপান্থের জন্ম ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর গ্রামে। শ্রীপান্থ তাঁর ছদ্মনাম, প্রকৃত নাম নিখিল সরকার । তাঁর লেখাপড়া শুরু ময়মনসিংহে হলেও পরবর্তীকালে তিনি কলকাতায় চলে আসেন ।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক হন। অল্প বয়সে শ্রীপান্থ সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। প্রথমে যুগান্তর পত্রিকা এবং পরে আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগের দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেন। পেশায় সাংবাদিক হলেও গবেষক ও জ্ঞানপিপাসু প্রাবন্ধিক কলকাতা সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ে চর্চা করেন। ‘পুস্তক পর্যালোচনা’ এবং প্রতি সোমবার প্রকাশিত ‘কলকাতার কড়চা’ তাঁর কর্মজীবনের উল্লেখযোগ্য কীর্তি । দেবদাসী, ঠগী, হারেম,  আজব নগরী, শ্রীপান্থের কলকাতা,  যখন ছাপাখানা এল, কেয়াবাৎ মেয়ে, মেটিয়াবুরুজের নবাব প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ।বাংলা মুলুকে প্রথম ধাতব হরফে ছাপা বই হ্যালহেডের  ‘আ গ্রামার অফ দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ -এর  সাম্প্রতিক  একটি সংস্করনের দীর্ঘ ভূমিকা তিনি লিখেছেন।


উৎস: কালি কলম ও মন


১. এই নেশা আমি পেয়েছি শরৎদার কাছ থেকে – বক্তা— 
উ: শৈলজানন্দ

২. লেখক কলম তৈরি করতেন-  
উ:-রোগা বাঁশের কঞ্চি দিয়ে

৩. তাঁরও ছিল ফাউন্টেন পেনের নেশা’ যার বলা হয়েছে— 
উ: শরৎচন্দ্র

৪. লেখকদের কালি তৈরিতে সাহায্য করতেন   
 উঃ  মা পিসি দিদিরা

৫. লেখকদের শৈশবে কালির দোয়াত ছিল  
উঃ – মাটির

৬. “বাবু কুইল ড্রাইভারস”- কথাটি বলতেন—- 
উ: লর্ড কার্জন

৭. খাগের কলম একমাত্র দেখা যায়– 
উ:- সরস্বতী পুজোয়

৮. কুইল কোন কলমের ইংরেজি নাম- 
উ:  পালকের কলম

৯. পন্ডিত মশাইয়ের কলম খ্যাত ছিল – 
উ:-কানে গুঁজে রাখার জন্য

১০. দারোগাবাবুর কলম গোঁজা ছিল— 
উ: পায়ের মোজায়।

১১. কলমের দুনিয়ায় সত্যিকারের বিপ্লব ঘটায়  –
উ: ঝরনা কলম

১২. ফাউন্টেন পেনের জনক কে? 
উ: ওয়াটারম্যান

১৩. লেখক ফাউন্টেন পেন কিনতে কোথায় গেছিলেন? 
উঃ কলেজ স্ট্রিট

১৪. ঝরনা কলম কিনতে গিয়ে লেখক কোন কলম কিনেছিলেন? 
উ: জাপানি পাইলট

১৫. ডজন দুয়েক ফাউন্টেন কলম সংগ্রহ করে লেখক কে দেখিয়েছিলেন   
উ: শৈলজানন্দ

১৬. আদিতে ফাউন্টেন পেনের নাম ছিল– 
উ:- রিজার্ভার পেন

১৭. দোয়াত কালির কী কী নাম আমরা পাই? 
উঃ- কাজল, সুলেখা

১৮. “লাঠি তোমার দিন ফুরাইয়াছে”- বলেছিলেন-
উ:-বঙ্কিমচন্দ্র 

১৯. তলোয়ারের চেয়ে শক্তিধর বলা হয়–
উ :- কলমকে

২০. শেষ পর্যন্ত নিবের কলমের মান মর্যাদা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন —
উ :- সত্যজিৎ রায়

২১. একটি কলমের দাম দাম ধার্য্য হয়েছে _________ পাউন্ড —
উ:- আড়াই হাজার

২২. চিনারা অবশ্য চিরকালই লিখে আসছে-উ: তুলিতে

২৩. সোনার দোয়াত কলম ব্যবহার করতেন— 
উ: সুভো ঠাকুর

২৪. যারা ওস্তাদ কলমবাজ তাদের বলা হতো —
 উ: ক্যালিগ্রাফিস্ট বা লিপিকুশলী

২৫. চারখণ্ড রামায়ণ কপি করে অষ্টাদশ শতকে এক জন লেখক পেয়েছিলেন— 
উ: নগদ সাত টাকা, কিছু কাপড় আর মিঠাই।

২৬. ধরে ধরে টাইপরাইটারে লিখে গেছেন—
উ: অন্নদাশঙ্কর রায়

২৭. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
চিত্রশিল্পী হিসেবে সূচনা হয়েছিল— 
উ: পাণ্ডুলিপির পাতায়

২৮. এক সাহেব লিখে গেছেন বত্রিশ হাজার অক্ষর লেখানো যেত— 
উ: বারোআনায়।

২৯. ‘বাংলায় একটা কথা চালু ছিল’ —
উ:  কালি নেই, কলম নেই, বলে আমি মুনশি 

৩০. ‘কঙ্কাবতী’ , ‘ডমরুচরিত’ -এর লেখক হলেন —
উ:  ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়

এই  প্রবন্ধ থেকে যেসব MCQ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এসেছে :
 
১। “সিজার যে কলমটি দিয়ে কাসকাকে আঘাত করেছিলেন” তার পোশাকি নাম— [মাধ্যমিক-২০১৭]
(ক) রিজার্ভার    (খ) স্টাইলাস        
(গ) পার্কার        (ঘ) পাইলট
উ: (খ) স্টাইলাস

২।  নিজের হাতের কলমের আঘাতে মৃত্যু হয়েছিল যে লেখকের, তার নাম —  
[ মাধ্যমিক-২০১৭ ]
(ক) বনফুল       (খ) পরশুরাম       
(গ) ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়   
(ঘ) শৈলজানন্দ
উ: (গ) ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়   

৩।  চারখণ্ড রামায়ণ কপি করে একজন লেখক অষ্টাদশ শতকে কত টাকা পেয়েছিলেন ?   [মাধ্যমিক-২০১৮]
(ক) সাত টাকা        (খ) আট টাকা        
(গ) ন-টাকা             (ঘ) দশ টাকা
উ: (ক) সাত টাকা

৪। ‘শ্রীপান্থ’ ছদ্মনামে লিখেছেন —            [মাধ্যমিক-২০১৮]
(ক) অন্নদাশঙ্কর রায় (খ) বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় 
(গ) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়   (ঘ) নিখিল সরকার
উ: (ঘ) নিখিল সরকার

৫।  চিনারা চিরকালই লেখার জন্য ব্যবহার করে আসছে —    [মাধ্যমিক-২০১৯]
(ক) তুলি      (খ) ব্রোঞ্জের শলাকা      
 (গ) হাড়       (ঘ) নল-খাগড়া
উ: (ক) তুলি

৬।  পালকের কলমের ইংরেজি নাম হল —          [মাধ্যমিক-২০২০]
(ক) স্টাইলাস        (খ) ফাউন্টেন পেন       
(গ) কুইল              (ঘ) রিজার্ভার পেন
উ: (গ) কুইল

৭।  কানে কলম গুঁজে দুনিয়া খোঁজেন  —           [মাধ্যমিক-২০২০]
(ক) প্রাবন্ধিক        (খ) দার্শনিক       
(গ) গল্পকার           (ঘ) নাট্যকার
 উ: (খ) দার্শনিক
 


অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর : [প্রতিটি প্রশ্নের মান-১]

১. হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ -এ বর্ণিত সবচেয়ে দামি কলমটির দাম কত ?      [মাধ্যমিক-২০১৭]

উঃ–  ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ -এ বর্ণিত সবচেয়ে দামি কলমটির দাম আড়াই হাজার পাউন্ড ।

২. “আমরা ফেরার পথে কোনও পুকুরে ফেলে দিয়ে আসতাম ।” — বক্তা কেন তা পুকুরে ফেলে দিতেন ?      [মাধ্যমিক-২০১৭]

উঃ– প্রশ্নের উদ্ধৃত অংশের প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ হোমটাস্কের জন্য ব্যবহৃত কলাপাতা পুকুরে ফেলে দিয়ে আসতেন কারণ তা গোরুতে খেয়ে নিলে অমঙ্গল হবে ।

৩. দু-জন সাহিত্যিকের নাম করো যাঁদের নেশা ছিল ফাউন্টেন পেন সংগ্রহ করা ।       [মাধ্যমিক-২০১৮]

উঃ– শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় হলেন সেই দুজন সাহিত্যিক, যাঁদের নেশা ছিল ফাউন্টেন পেন সংগ্রহ করা।

৪.  লেখক শ্রীপান্থ ছোটোবেলায় কীসে ‘হোম-টাস্ক’  করতেন ?          [মাধ্যমিক-২০১৮]

উঃ– কলাপাতাকে কাগজের মাপে কেটে হোম-টাস্ক করতেন ।

৫. “সোনার দোয়াত কলম যে সত্যি হতো” তা লেখক কীভাবে জেনেছিলেন ?      [মাধ্যমিক-২০১৯]

উঃ– সোনার দোয়াত কলম যে সত্যিই হতো তা লেখক জেনেছিলেন সুভো ঠাকুরের বিখ্যাত দোয়াত সংগ্রহ দেখতে গিয়ে


৬. স্টাইলাস কী ?

উ:  ব্রোঞ্জের সরু শলাকার পােশাকি নাম স্টাইলাস। প্রাচীনকালে কলম হিসেবে ব্যবহৃত হত ব্রোঞ্জের এই শলাকা।
 
৭.  “মুঘল দরবারে একদিন তাদের কত না খাতির”- কাদের কথা বলা হয়েছে ?
উ:   বিখ্যাত প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে ক্যালিগ্রাফিস্ট বা ওস্তাদ কলমবাজদের কথা বলা হয়েছে।

৮. “জন্ম নিল ফাউন্টেন পেন।”- ফাউন্টেন পেনের জন্ম বৃত্তান্তটি উল্লেখ করো।
উ:  লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান একবার এক চুক্তিপত্র সই করার সময় দোয়াত উল্টে কালি পড়ে যাওয়ায় চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। এরই বিহিত করতে গিয়ে তিনি ফাউন্টেন পেন আবিষ্কার করেন।

৯. “সেই আঘাতেরই পরিণতি নাকি তাঁর মৃত্যু।”- কোন্ আঘাতের পরিণতির কথা বলা হয়েছে?
উ:  বাংলা সাহিত্যে কঙ্কাবতী, ডমরুধর -এর স্রষ্টা  ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় নিজের হাতের কলম অসাবধানতাবশত বুকে বিঁধে মারা যান।এখানে সেই ঘটনার কথাই বলা হয়েছে।

১০. “তাঁর অনেক সুস্থ সুন্দর নেশার একটি ছিল লিপিশিল্প।”-  কার কথা বলা হয়েছে? 
উ:  বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ  ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ রচনায় এখানে সত্যজিৎ রায়ের কথা বলেছেন। 

নিজেরা চেষ্টা করো :

১১) ‘বাঙলায় একটা কথা চালু ছিল’ – কথাটি কী?

১২) ‘পুকুরে তা ফেলে দিয়ে আসতাম’ – কী কেন পুকুরে ফেলে দিয়ে আসতে হত?

১৩) ‘তাই নিয়ে আমাদের প্রথম লেখালেখি’ – কী নিয়ে লেখালেখি?

১৪) লর্ড কার্জন বাঙালি সাংবাদিকদের ইংরাজি বলার বিষয়ে কী বলতেন?

১৫) ” বাস , ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলাম।” – ভ্যাবাচাকা খাওয়ার কারণ কী ?

১৬) ‘সমানি সম শীর্ষাণি সনানি বিরলানি চ’ – অর্থ লেখো।

১৭) অষ্টাদশ শতকে চার খণ্ড রামায়ণ কপি করে এক জন লেখক কী কী পেতেন?

১৮) টাইপ রাইটারে লিখেছেন এমন দু’ জন লেখকের নাম উল্লেখ করো।

১৯) নিবের কলম কীভাবে ঘাতকের ভূমিকা নিয়েছিল?

২০)” কিন্তু সে সব ফাঁকি মাত্র।”- কীসের কথা বলা হয়েছে ?

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর  : মান-৫

১. “আমরা কালিও তৈরি করতাম নিজেরাই।”— লেখকেরা কিভাবে কালি তৈরি করতেন তার প্রবন্ধ অনুসরণে লেখ ।

অথবা,  “আমাদের ছিল সহজ কালি তৈরি পদ্ধতি” – প্রবন্ধানুসারে কালি তৈরির সহজ পদ্ধতিটি লেখো।

উত্তর:-  প্রাবন্ধিক নিখিল সরকার ওরফে শ্রীপান্থ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে উদ্ধৃতাংশটি ব্যবহৃত হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক শ্রীপান্থ তাঁর ফেলে আসা শৈশবের কথা স্মৃতিচারণ করেছেন ,কীভাবে  তখনকার দিনে তাঁরা কালি তৈরি করতেন । কালি তৈরিতে মা-পিসি বা দিদিরাও হাত লাগাতেন । এই প্রসঙ্গে প্রচলিত একটি ছড়ার কথা বলেছেন। ছড়াটি হল-

“তিল ত্রিফলা শিমূল ছালা
ছাগদুগ্ধে করি মেলা
লৌহ পাত্রে লোহায় ঘষি
ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে মসি।”

 এটি ছিল ভালো কালি তৈরির ব্যবস্থা। লেখকেরা এত কিছুর আয়োজন করতে পারতেন না, তাই তাঁরা সহজ কালি তৈরির পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। 

লেখকের বাড়ির রান্না হতো কাঠের উনুনে। ফলে কড়াইয়ের তলায় বেশ কালি জমত। লাউপাতা দিয়ে  সেটাকে ঘষে তুলে একটি  বাটিতে রাখা জলে গুলে নিতে হতো । যারা কালি তৈরিতে ওস্তাদ তারা সেই জলে হরীতকী ঘষত । আবার কখনো আতপচাল ভেজে পুড়িয়ে তা ভালো করে গুড়ো করে কালির জলে মেশানো হত । তারপর খুন্তির গোড়ার দিকটা  লাল টকটক করে পুড়িয়ে তাতে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো । ফলে তা টগবগ করে ফুটত।তারপর ন্যাকড়ায় ছেঁকে মাটির দোয়াতে ভরে নিলেই তৈরি হয়ে যেত কালি । এই ভাবেই লেখক সহজ গ্রাম্য পদ্ধতিতে কালি তৈরির কথা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন।

২. ‘ফাউন্টেন পেন’ বাংলায় কী নামে পরিচিত ? নামটি কার দেওয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে ? ফাউন্টেন পেনের জন্ম ইতিহাস লেখো ।     [মাধ্যমিক-২০১৭]

উত্তর:- বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক নিখিল সরকার ওরফে শ্রীপান্থ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধ অনুযায়ী ‘ফাউন্টেন পেন’ বাংলায় ‘ঝরনা কলম’ নামে পরিচিত ।

    উক্ত নামটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া বলে প্রাবন্ধিক উল্লেখ করেছেন ।
 
  তথাকথিত ‘ফাউন্টেন পেন’ -এর পূর্বনাম ছিল ‘রিজার্ভার পেন’ । একেই উন্নত করে ‘ফাউন্টেন পেন’ -এর রূপদান করা হয়েছিল । ‘ফাউন্টেন পেন’ -এর স্রষ্টা ছিলেন, লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান নামে জনৈক ব্যবসায়ী । তিনি একবার অন্য আরেক ব্যবসায়ীর সাথে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করতে গিয়েছিলেন । কিন্তু চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করা কালীন দোয়াতে রাখা কালি কাগজের উপর উল্টে পড়ে যায়, ফলে ওয়াটারম্যানকে কালি সংগ্রহের জন্য পুনরায় বাইরে যেতে হয় । কিন্তু ফিরে এসে তিনি শোনেন ইতিমধ্যে অন্য এক তৎপর ব্যবসায়ী চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে চলে গিয়েছেন । দোয়াতে রাখা কালির জন্য ঘটা এই দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে, এই উদ্দেশ্যে ওয়াটারম্যান ‘ফাউন্টেন পেন’ -এর আবিষ্কার করেছিলেন । এইভাবে লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান ফাউন্টেন পেন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ”কালির ফোয়ারা খুলে দিয়েছিলেন ।

৩. “আশ্চর্য, সবই আজ অবলুপ্তির পথে ।” — কোন জিনিস আজ অবলুপ্তির পথে ? এই অবলুপ্তির কারণ কী ? এ বিষয়ে লেখকের মতামত কী ?      [মাধ্যমিক-২০১৮]

 উত্তর:-  বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক নিখিল সরকার ওরফে শ্রীপান্থ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধ থেকে  আলোচ্য অংশটি  নেওয়া হয়েছে। নানা ধরনের ফাউনটেন পেন, কালি, দোয়াত, কলমদানি —এ সবই আজ অবলুপ্তির পথে ।
    
 কম্পিউটারের ব্যাপক ব্যবহার এই অবলুপ্তির কারণ ।
    
লেখক এতে বিপন্ন বোধ করেন ।
   
 কলমের দ্বারা নিজের হাতে লেখাটা লেখকের কাছে অধিক প্রীতিকর । কিন্তু বিজ্ঞানের চরম উন্নতিতে লেখালেখির কাজকে অতি সহজবোধ্য ও উপযোগী করতে কম্পিউটারের ব্যবহার সর্বত্র । তাই লেখক কলমের অবলুপ্তির কথা ভেবে নস্টালজিক হয়ে পড়েন । তিনি আরও চিন্তিত এই কারণে যে হাতে লেখা হয়তো চিরতরে মুছে যাবে, কী হবে ক্যালিগ্রাফিস্টদের অস্তিত্ব ? এ সকল ভাবনায় লেখক বিপন্নবোধ করেন ।

৪. “সব মিলিয়ে লেখালেখি রীতিমতো ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান”— প্রবন্ধ অনুসরণে মন্তব্যটির বিশ্লেষণ করো ।

উত্তর:-  আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে । লেখক শ্রীপান্থ তাঁর কিশোর বয়সের লেখাপড়া বিষয়ে উপরোক্ত মন্তব্যটি করেছেন । 

কালি ও কলম এর বিবর্তনের ইতিহাস আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন । শৈশবে লেখকেরা নিজের হাতে তৈরি বাঁশের কলম ব্যবহার করতেন। কালিও তৈরি করতেন নিজেরাই লেখক শৈশবে সহজেই কালি তৈরির পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন। কড়াইয়ের তলায় জমা কালি লাউপাতা দিয়ে  সেটাকে ঘষে তুলে একটি  বাটিতে রাখা জলে গুলে নিতে হতো । যারা কালি তৈরিতে ওস্তাদ তারা সেই জলে হরীতকী ঘষত । আবার কখনো আতপচাল ভেজে পুড়িয়ে তা ভালো করে গুড়ো করে কালির জলে মেশানো হত । তারপর খুন্তির গোড়ার দিকটা  লাল টকটক করে পুড়িয়ে তাতে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো । ফলে তা টগবগ করে ফুটত।তারপর ন্যাকড়ায় ছেঁকে মাটির দোয়াতে ভরে নিলেই তৈরি হয়ে যেত কালি । 

 শহরে হাইস্কুলে ভর্তির পর লেখক  কঞ্চির কলম ছাড়েন। কাজল কালি, সুলেখা কালি বাজারে কিনতে পাওয়া গেলে সেই দিয়ে লেখাপড়ার কাজ করতেন । লেখাপড়া যখন কলেজে পড়তেন তখন সব বড়ুয়ার পকেটেই ফাউন্টেন পেন। কঞ্চির কলম, খাগের কলম, পালকের কলম সব উধাও । শুধুমাত্র অফিসে বা শিক্ষিত লোকের ঘর সাজানোর জন্য দোয়াত কলম ব্যবহার হতো। লেখাপড়া বা লেখালেখির এতসব আয়োজনের জন্যই লেখক প্রশ্নোদ্ধৃতাংশটির অবতারণা করেছেন।

৫. “আমার মনে পড়ে প্রথম ফউন্টেন পেন কেনার কথা”—লেখকের প্রথম ফাউন্টেন পেন কেনার অভিজ্ঞতা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।

উত্তর :- বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক নিখিল সরকার ওরফে শ্রীপান্থ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধ থেকে আলােচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে।

লেখকরা প্রথমে বাঁশের কঞ্চির কলম বাড়িতে তৈরি কালি ইত্যাদি ব্যবহার করতেন। হাই স্কুলে ভর্তির পর লেখক বাঁশের কঞ্চির কলমকে ছুটি দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক বছর পর লেখক কলেজ স্ট্রিটের এক দোকানে কলম কিনতেগিয়েছিলেন । দোকানদার পেনের নাম জানতে চাইলে লেখক ভ্যাবাচাকা খেয়ে যান। দোকানদার লেখককে একে-একে পেনের দাম ও নাম বলতে থাকলেন। শেষে লেখকের পকেটের অবস্থা বুঝে নিয়ে সস্তার একটি জাপানি পাইলট পেন লেখকের সামনে তুলে ধরলেন। কলমটি সস্তা হলেও দারুণ তা বোঝানোর জন্য দোকানদার সার্কাসের ভঙ্গির মতো কলমটিকে  সজোরে কাঠের বোর্ডের দিকে ছুঁড়ে দেন। কলমটি বোর্ড থেকে খুলে দু’এক লাইন লিখে দেখিয়েও দেন নিব ঠিক আছে।

আলোচ্য প্রবন্ধে জাপানি-পাইলট পেন কেনার এই বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা সুন্দরভাবে পাঠ্যাংশে তুলে ধরেছেন।



৬. কালি কলমের প্রতি ভালোবাসা ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে কীভাবে ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো।  

উত্তর:  বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে দোয়াত, কলম, কালি প্রভৃতি লেখার সরঞ্জাম গুলোকে ঘিরে লেখকের মমতা স্মৃতিমেদুরতা আর ভালোবাসা ফুটে উঠেছে।

 ছোটবেলায় লেখক তাঁর গ্রামের বাড়িতে নিজের হাতেই কালি কলম বানিয়ে নিতেন। বাঁশের কঞ্চি কেটে তৈরি হতো কলম । রান্নার কড়াইয়ের নীচের কালি লাউপাতা দিয়ে ঘষে জলে গুলে নিয়ে বানানো হতো কালি। ক্রমশ বাঁশের কলমের বদলে জায়গা করে নিল ফাউন্টেন পেন। সে পেনের প্রেমে পড়ে গেলেন লেখক । এর পর বাজারে বল পেন এল কিন্তু বল পেন লেখকের মনে ধরল না। যদিও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে তার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হল তাঁকে ।যন্ত্রসভ্যতার হাত ধরে এল কম্পিউটার। দিন ফুরোল কলমের। এখন সবাই কম্পিউটারেই লেখে। কিন্তু লেখক এখনো কলম ফেলে কম্পিউটারকে আপন করে নিতে পারেননি।
তাই যন্ত্রের দাপটে কালি-কলমের এই হারিয়ে যাওয়ার যুগে লেখক বারবার আঁকড়ে ধরেছেন তাঁর ছেলেবেলার কলমের স্মৃতিকে। হারিয়ে যাওয়া সেইসব কালি কলমের কথা ভেবে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে তাঁর মন।



৭. “মোগল দরবারে একদিন তাঁদের কত না খাতির, কত না সম্মান।” –  তাঁদের বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? তাঁদের খাতির ও সম্মানের পরিচয় দাও।

উত্তর:  বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ ওরফে নিখিল সরকার রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে তাঁদের বলতে এখানে ওস্তাদ কলমবাজ অর্থাৎ ক্যালিগ্রাফিস্ট বা লিপিকুশলীদের কথা বলা হয়েছে।

 যারা ওস্তাদ কলমবাজ বা ক্যালিগ্রাফিস্ট,  তাঁদের স্থান ইতিহাসে পাকা। মোগল দরবারে তাঁদের প্রচুর খাতির ও সম্মান ছিল। শুধু মোগল দরবার নয় পৃথিবীর সর্বত্রই তাদের কদর ছিল । এমনকি বাংলাদেশেও রাজা-জমিদারদা লিপিকুশলীদের গুণের কদর করতেন। তাঁদের ভরণপোষণের ব্যবস্থাও করা হতো । সাধারণ গৃহস্থরাও এঁদের ডেকে পুথি নকল করাতেন। আজও সেসব পুথি দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। সংস্কৃতে যাকে  বলে – “সমানি সম শীর্ষাণি ঘনানি বিরলানি চ” অর্থাৎ সব অক্ষর সমান, প্রতিটি ছত্র সুশৃঙ্খল ও পরিচ্ছন্ন। এইসব লিপিকরদের হস্তাক্ষর ছিল মুক্তোর মতো । অথচ তাঁদের রোজগার ছিল সামান্যই। অষ্টাদশ শতকে এক লিপিকুশলী চার খণ্ড রামায়ণ কপি করে নগদ সাত টাকা, কিছু কাপড় আর মিঠাই সাম্মানিক হিসেবে পেয়েছিলেন অর্থাৎ সেসময়ে এদের উপার্জন কম হলেও গুণের সমাদর ছিল বেশ।


1 thought on “হারিয়ে যাওয়া কালি কলম – শ্রীপান্থ |hariye jaoya kali kalom|BanglaSahayak.com”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top