সমাস:
পরস্পর অর্থসম্পর্ক যুক্ত একাধিক পদকে একপদে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে।
সমাসের শ্রেণিবিভাগ :
সমাসের তিনটি প্রধান বিভাগ হলো—
১) সংযোগমূলক সমাস :– এই প্রকার সমাসে সমস্যমান পদগুলির দ্বারা দুই বা ততোধিক পদার্থের ( ভাবের বা বস্তুর ) সংযোগ প্রকাশ পায় ।
যেমন– দ্বন্দ্ব সমাস ।
যেমন– দ্বন্দ্ব সমাস ।
২) ব্যাখ্যানমূলক / আশ্রয়মূলক সমাস :- এই প্রকার সমাসে প্রথম শব্দটি দ্বিতীয় শব্দটিকে আশ্রয় করে থাকে বা তার বিশেষণ রূপে বসে ।
যেমন:- তৎপুরুষ সমাস , কর্মধারয় সমাস, দ্বিগু সমাস ।
যেমন:- তৎপুরুষ সমাস , কর্মধারয় সমাস, দ্বিগু সমাস ।
৩) বর্ণনামূলক সমাস :- সমস্যমান পদগুলি একত্রে মিলিত হয়ে অন্য কোনো ভিন্ন অর্থের প্রকাশ করে ।
যেমন:- বহুব্রীহি সমাস ।
যেমন:- বহুব্রীহি সমাস ।
সব মিলিয়ে আলোচনার সুবিধার্থে আমরা সমাসকে নিম্নলিখিত ভাবে ভাগ করে বিশ্লেষণের চেষ্টা করব —–
১) দ্বন্দ্ব সমাস
২) দ্বিগু সমাস
৩) কর্মধারয় সমাস
৪) তৎপুরুষ সমাস
৫) বহুব্রীহি সমাস
৬) অব্যয়ীভাব সমাস
২) দ্বিগু সমাস
৩) কর্মধারয় সমাস
৪) তৎপুরুষ সমাস
৫) বহুব্রীহি সমাস
৬) অব্যয়ীভাব সমাস
ব্যতিক্রমী সমাস :
৭) অলোপ/অলুক সমাস
৮) নিত্য সমাস
৯) বাক্যাশ্রয়ী সমাস
বিভিন্ন সমাসে বিভিন্ন পদের অর্থপ্রাধান্য :
ক) পূর্বপদের অর্থপ্রাধান্য = অব্যয়ীভাব সমাস
খ) পরপদের অর্থপ্রাধান্য = তৎপুরুষ সমাস, কর্মধারয় সমাস ও দ্বিগু সমাস
গ) উভয় পদের অর্থপ্রাধান্য = দ্বন্দ্ব সমাস
ঘ) অন্যপদের অর্থপ্রাধান্য = বহুব্রীহি সমাস
★ দ্বন্দ্ব সমাস ★
সংজ্ঞা :– যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থ প্রধানভাবে বোঝায় এবং সংযোজক অব্যয় ও দ্বারা পদগুলি যুক্ত হয় তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে ।
🔵এই সমাসে ব্যাসবাক্যে সমস্যমান পদগুলি ও, এবং,আর প্রভৃতি দিয়ে যুক্ত থাকে |
☆ দ্বন্দ্ব শব্দের বুৎপত্তি কী ?
দ্বন্দ্ব শব্দের বুৎপত্তি হল – দ্বি+দ্বি।
☆ দ্বন্দ্ব শব্দের অর্থ কী ?
দ্বন্দ্ব শব্দের দুই প্রকার অর্থ রয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ হল মিলন এবং প্রচলিত অর্থ হলো কলহ বা বিবাদ। আর ব্যাকরণসম্মত অর্থ হলো – যুগ্ম বা জোড়া।
☆ দ্বন্দ্ব সমাসের নাম দ্বন্দ্ব সমাস কেন ?
দ্বন্দ্ব শব্দটি ‘দ্বি’ ও ‘দ্বি’ পদগুলির একপদীকরণের ফলে সৃষ্ট। শব্দটির পূর্বপদ (‘দ্বি) ও পরপদ (‘দ্বি’) – এর অর্থ যুগ্মভাবে প্রাধান্য পায় ও ব্যাসবাক্যে উভয়পদের সংযোজক হিসেবে ‘ও’ অব্যয় ব্যবহার করা হয়। শব্দটির গঠনের এই বৈশিষ্ট্যগুলি এই শ্রেনীর সমাসে থাকায় ‘দ্বন্দ্ব’ শব্দানুসারে এই সমাসের নাম দ্বন্দ্বসমাস।
☆ দ্বন্দ্ব সমাসের দৃষ্টান্ত :
১) বিশেষ্য-বিশেষ্য দ্বন্দ্ব — সমস্যমান পদগুলি সব বিশেষ্য হয় |
উদাহরণ–
রবি ও শশী = রবিশশী
ভাই আর বোন = ভাইবোন
কায়, মনঃ ও বাক্য = কায়মনোবাক্য
উদাহরণ–
রবি ও শশী = রবিশশী
ভাই আর বোন = ভাইবোন
কায়, মনঃ ও বাক্য = কায়মনোবাক্য
সোনা ও রূপা = সোনারূপা
২) বিশেষণ-বিশেষণ দ্বন্দ্ব — এখানে একাধিক বিশেষণ , বিশেষ্যবৎ ব্যবহৃত হয় |
উদাহরণ–
হিত ও অহিত= হিতাহিত
নরম ও গরম = নরমগরম
গত ও আয়াত = গতায়াত
উদাহরণ–
হিত ও অহিত= হিতাহিত
নরম ও গরম = নরমগরম
গত ও আয়াত = গতায়াত
দীন ও দুঃখী = দীনদুঃখী
চেনা ও অচেনা = চেনা-অচেনা
৩) সর্বনামের দ্বন্দ্ব– একাধিক সর্বনাম পদের একপদীকরণ হয় এখানে |
উদাহরণ–
আমি ও তুমি = আমি-তুমি
যাকে ও তাকে = যাকে-তাকে
উদাহরণ–
আমি ও তুমি = আমি-তুমি
যাকে ও তাকে = যাকে-তাকে
যার ও তার = যার-তার
৪) ক্রিয়ার দ্বন্দ্ব– একাধিক ক্রিয়াপদের সমাসবদ্ধ পদে রূপান্তরিত করা হয় |
উদাহরণ–
হাসি ও খেলি = হাসিখেলি
ছুঁয়ে আর ধরে = ছুঁয়েধরে
চলো ও ফেরো = চলোফেরো
উদাহরণ–
হাসি ও খেলি = হাসিখেলি
ছুঁয়ে আর ধরে = ছুঁয়েধরে
চলো ও ফেরো = চলোফেরো
৫) প্রায় সমার্থক শব্দের দ্বন্দ্ব– সমস্যমান পদগুলি প্রায়-সমার্থক হয় |
উদাহরণ–
উদাহরণ–
হাট ও বাজার = হাটবাজার
টাকা ও পয়সা = টাকাপয়সা
আদর ও অভ্যর্থনা = আদর-অভ্যর্থনা
মান ও ইজ্জত= মানইজ্জত
আদব আর কায়দা = আদবকায়দা
হাসি ও ঠাট্টা = হাসিঠাট্টা
আদর ও অভ্যর্থনা = আদর-অভ্যর্থনা
মান ও ইজ্জত= মানইজ্জত
আদব আর কায়দা = আদবকায়দা
হাসি ও ঠাট্টা = হাসিঠাট্টা
দ্বন্দ্ব সমাসের শ্রেণিবিভাগ :
ক) সমার্থক দ্বন্দ্ব
খ) বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব
গ) একশেষ দ্বন্দ্ব
ঘ) বহুপদনিষ্পন্ন দ্বন্দ্ব
ঙ) ইত্যাদি অর্থবোধক দ্বন্দ্ব
চ) বিকল্প দ্বন্দ্ব
ক) সমার্থক দ্বন্দ্ব– সমস্যমান পদগুলি পরস্পর সমার্থক হয় ।
উদাহরণ–
উদাহরণ–
বন ও জঙ্গল =বনজঙ্গল
ছাই ও ভস্ম = ছাইভস্ম
ছাই ও ভস্ম = ছাইভস্ম
হাট ও বাজার = হাটবাজার
পাহাড় এবং পর্বত = পাহাড়-পর্বত
পাহাড় এবং পর্বত = পাহাড়-পর্বত
কাজ ও কর্ম = কাজকর্ম
আত্মীয় ও স্বজন = আত্মীয়স্বজন
রাজা ও বাদশা = রাজাবাদশা
কাগজ ও পত্র = কাগজপত্র
জন্তু ও জানোয়ার = জন্তুজানোয়ার
ঠাকুর ও দেবতা = ঠাকুরদেবতা
চিঠি ও পত্র = চিঠিপত্র
দীন ও দরিদ্র = দীনদরিদ্র
ঘর ও বাড়ি = ঘরবাড়ি
জন ও মানব = জনমানব
লজ্জা ও শরম = লজ্জাশরম
খ) বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব — সমস্যমান পদগুলি পরস্পর বিপরীত অর্থ বহন করে |
উদাহরণ–
আদি ও অন্ত = আদ্যন্ত
বাঁচা আর মরা = বাঁচামরা
অগ্র ও পশ্চাৎ = অগ্রপশ্চাৎ
পাপ ও পুণ্য = পাপপুণ্য
উদাহরণ–
আদি ও অন্ত = আদ্যন্ত
বাঁচা আর মরা = বাঁচামরা
অগ্র ও পশ্চাৎ = অগ্রপশ্চাৎ
পাপ ও পুণ্য = পাপপুণ্য
ধনী ও দরিদ্র = ধনীদরিদ্র
দিবস ও রজনী = দিবস-রজনী
জানা ও অজানা = জানা-অজানা
লাভ ও লোকসান = লাভ-লোকসান
দেনা ও পাওনা = দেনা-পাওনা
বাঁচা ও মরা = বাঁচামরা
জল ও স্থল = জলস্থল
ক্রয় ও বিক্রয়= ক্রয়বিক্রয়
স্বর্গ ও নরক = স্বর্গনরক
ভালো ও মন্দ =ভালো-মন্দ
শীত ও গ্রীষ্ম = শীতগ্রীষ্ম
সন্ধি ও বিগ্রহ = সন্ধিবিগ্রহ
আয় ও ব্যয় =আয়ব্যয়
রাজা ও প্রজা = রাজাপ্রজা
আকাশ ও পাতাল = আকাশ-পাতাল
দিন ও রাত = দিনরাত
ভাঙা ও গড়া = ভাঙাগড়া
গ) একশেষ দ্বন্দ্ব-– সমস্যমান পদগুলি সমাসবদ্ধ হয়ে বহুবচনান্ত একটি পদে পরিণত হয় |
উদাহরণ–
আমি, তুমি ও সে = আমরা (বহুবচন )
উদাহরণ–
আমি, তুমি ও সে = আমরা (বহুবচন )
তুমি ও আমি = আমরা
তুমি ও সে = তোমরা ( বহুবচন ) |
তুমি ও সে = তোমরা ( বহুবচন ) |
ঘ) বহুপদনিষ্পন্ন দ্বন্দ্ব– যে দ্বন্দ্ব সমাস বহুপদের মিলনে নিষ্পন্ন হয়।
উদাহরণ :
স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল= স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল।
একইরকম ভাবে–
সত্য-শিব-সুন্দর, তেল-নুন-লকড়ি, চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারা
রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ, শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম
উদাহরণ :
স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল= স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল।
একইরকম ভাবে–
সত্য-শিব-সুন্দর, তেল-নুন-লকড়ি, চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারা
রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ, শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম
ঙ) ইত্যাদি অর্থবোধক দ্বন্দ্ব –অনুরূপ বা সমজাতীয় ভাবপ্রকাশের জন্য অনুচর, সহচর, প্রতিচর, বিকার, অনুকার প্রভৃতি অর্থপ্রকাশক শব্দের মিলনে এই সমাস হয়।
সহচর : জনমানব, ঘরবাড়ি, গোঁফদাড়ি
অনুচর: চেয়ার-টেবিল , ছলচাতুরি
প্রতিচর: রাজারাণি, পাপপুণ্য, কেনাবেচা
বিকার: ঠাকুর-ঠুকুর, কাঁদাকাটা
অনুকার: তেলটেল, জলটল, বইটই।
চ) বিকল্প দ্বন্দ্ব– যে দ্বন্দ্ব সমাসে পূর্বপদ ও পরপদের অর্থ বিকল্প হিসাবে গৃহীত হয়।
উদাহরণ :
হার বা জিত =হারজিত, কম বা বেশি, সাত কিংবা পাঁচ, উনিশ কিংবা কুড়ি।
উদাহরণ :
হার বা জিত =হারজিত, কম বা বেশি, সাত কিংবা পাঁচ, উনিশ কিংবা কুড়ি।
দ্বন্দ্ব সমাসের কয়েকটি বিশিষ্ট উদাহরণ :
জায়া ও পতি = দম্পতি
দিবা ও রাত্রি = দিবারাত্র
কুশ ও লব = কুশীলব
অহঃ ও নিশা = অহর্নিশ
অহঃ ও রাত্রি = অহোরাত্র
রাত্রি ও দিবা = রাত্রিন্দিব
জায়া ও পতি = দম্পতি
দিবা ও রাত্রি = দিবারাত্র
কুশ ও লব = কুশীলব
অহঃ ও নিশা = অহর্নিশ
অহঃ ও রাত্রি = অহোরাত্র
রাত্রি ও দিবা = রাত্রিন্দিব
★ কর্মধারয় সমাস ★
সংজ্ঞা :– যে সমাসে পূর্বপদ পরপদের বিশেষণ রূপে বসে এবং পরপদের অর্থ ই প্রধানভাবে প্রকাশ পায়, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে |
★’কর্মধারয়’ শব্দের অর্থ :
‘কর্ম’ বা ‘বৃত্তি’ ধারণকারী |
‘কর্ম’ বা ‘বৃত্তি’ ধারণকারী |
এই সমাসে বিশেষ্য-বিশেষ্য , বিশেষণ-বিশেষণ , বিশেষণ-বিশেষ্য — সকল পদের সংযোগে সমাস হয় |
কর্মধারয় সমাসের শ্রেণিবিভাগ :
ক) সাধারণ কর্মধারয় সমাস
খ) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
গ) উপমান কর্মধারয় সমাস
ঘ) উপমিত কর্মধারয় সমাস
ঙ) রূপক কর্মধারয় সমাস
ক) সাধারণ কর্মধারয় সমাস :
অ) বিশেষ্য+ বিশেষ্য :-–
এখানে দুটি বিশেষ্য পদ যোগে একটি বিশেষ্যপদ ই তৈরী হবে সমাসবদ্ধ পদ হিসেবে |
যেমন:–
জ্ঞাতি যিনি শত্রুও তিনি = জ্ঞাতিশত্রু
যিনি রাম তিনিই কৃষ্ণ = রামকৃষ্ণ
যিনি রাজা তিনিই ঋষি = রাজর্ষি
এখানে দুটি বিশেষ্য পদ যোগে একটি বিশেষ্যপদ ই তৈরী হবে সমাসবদ্ধ পদ হিসেবে |
যেমন:–
জ্ঞাতি যিনি শত্রুও তিনি = জ্ঞাতিশত্রু
যিনি রাম তিনিই কৃষ্ণ = রামকৃষ্ণ
যিনি রাজা তিনিই ঋষি = রাজর্ষি
আ) বিশেষণ + বিশেষণ :-–
এই সমাসে দুটি বিশেষণ ই একসঙ্গে একই ব্যক্তি/ বস্তু তে উপস্থিত বোঝাবে |
যেমন–
কাঁচা অথচ মিঠে = কাঁচামিঠে ( একটি ফল)
আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা ( একটি স্থান )
এই সমাসে দুটি বিশেষণ ই একসঙ্গে একই ব্যক্তি/ বস্তু তে উপস্থিত বোঝাবে |
যেমন–
কাঁচা অথচ মিঠে = কাঁচামিঠে ( একটি ফল)
আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা ( একটি স্থান )
ই) বিশেষণ + বিশেষ্য ::–
এখানে বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ পূর্বপদ – পরপদ রূপে বসে একই ব্যক্তি / বস্তু কে প্রকাশ করে |
যেমন:-
সাধারণ যে জন = জনসাধারণ
পাণ্ডু ( খসড়া ) যে লিপি = পাণ্ডুলিপি
প্রিয় যে সখা = প্রিয়সখ
এখানে বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ পূর্বপদ – পরপদ রূপে বসে একই ব্যক্তি / বস্তু কে প্রকাশ করে |
যেমন:-
সাধারণ যে জন = জনসাধারণ
পাণ্ডু ( খসড়া ) যে লিপি = পাণ্ডুলিপি
প্রিয় যে সখা = প্রিয়সখ
খ) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস :
এই কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যে অবস্থিত পদ লোপ পায় |
যেমন:–
জীবনহানির আশঙ্কায় বীমা =জীবনবীমা
আক্ষেপ-দ্যোতক অনুরাগ=আক্ষেপানুরাগ
ছাত্র থাকাকালীন জীবন = ছাত্রজীবন
সিঁদুর রাখিবার কৌটা = সিঁদুরকৌটা
♡ মনে রাখার বিষয় :-–
তৎপুরুষ সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যস্থিত বিভক্তি-স্থানীয় অনুসর্গ লোপ পায় | আর মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাসে অনুসর্গ নয়, কোনো পদের লোপ ঘটবে |
গ) উপমান কর্মধারয় সমাস :
উপমান ও উপমিত কর্মধারয় সমাস আলাদা করে চেনার আগে কতোগুলো সংজ্ঞা/ টার্মস জানা জরুরি। সেগুলো হলো- উপমান, উপমেয় ও সাধারণ ধর্ম।
উপমেয় :
কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা হলে যাকে তুলনা করা হলো, তাকে বলা হয় উপমেয়।
উপমান :
যার সঙ্গে তুলনা করা হয় তাকে বলে উপমান।
সাধারণ ধর্ম :
উপমেয় আর উপমানের যে গুণটি নিয়ে তাদের তুলনা করা হয়, সেই গুণটিকে বলা হয় সাধারণ ধর্ম ।
যেমন, ‘অরুণের ন্যায় রাঙা প্রভাত’।
এখানে ‘প্রভাত’কে ‘অরুণ’র মতো ‘রাঙা’ বলে তুলনা করা হয়েছে। সুতরাং, এখানে ‘প্রভাত’ উপমেয়। উপমান হলো ‘অরুণ’। আর প্রভাত আর অরুণের সাধারণ ধর্ম হলো ‘রাঙা’।
উপমানের ( যার সাথে তুলনা করা হয় ) সঙ্গে সাধারণ ধর্মবাচক পদের সমাসকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে |
♡মনে রাখার বিষয়:-
এখানে উপমান পদটি প্রথমে বসে, তারপর সাদৃশ্যবাচক শব্দ , শেষে সাধারণ ধর্মবাচক পদ বসে |
উপমান + সাদৃশ্য বাচক শব্দ + সাধারণ ধর্মবাচক পদ = উপমান কর্মধারয় সমাস
যেমন:–
শঙ্খের ন্যায় শুভ্র = শঙ্খশুভ্র
বজ্রের মতো কঠিন = বজ্রকঠিন
আলতার মতো রাঙা = আলতারাঙা
ঘ) উপমিত কর্মধারয় সমাস :
উপমেয় ( যাকে তুলনা করা হয় ) -র সাথে উপমান এর যে সমাস হয় , তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে |
♡ মনে রাখার বিষয়:–
এই সমাসে কোনো সাধারণ ধর্মবাচক পদের উল্লেখ থাকে না |
উপমেয় + উপমান + সাদৃশ্য বাচক শব্দ = উপমিত কর্মধারয় সমাস |
যেমন:–
নয়ন কমলের ন্যায় = নয়নকমল
অধর বিম্বের ন্যায় = বিম্বাধর
কথা অমৃতের তুল্য = কথামৃত
ঙ) রূপক কর্মধারয় সমাস :
যে সমাসে উপমেয় ও উপমান এর মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয় , তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে |
♡ মনে রাখার বিষয়:–
এখানে উপমেয় আর উপমান এর মধ্যে ‘রূপ’ শব্দটি বসে |
উপমেয় + রূপ + উপমান = রূপক কর্মধারয় সমাস
যেমন:–
যৌবন রূপ কুসুম = যৌবনকুসুম
প্রাণ রূপ প্রবাহিণী = প্রাণপ্রবাহিণী
জীবন রূপ যুদ্ধ = জীবনযুদ্ধ
সুখ রূপ দীপ = সুখদীপ |
সহজেই কর্মধারয় সমাস কীভাবে চিনব :
কর্মধারয় সমাসে “যে /যিনি/যারা ” এই শব্দগুলো থাকবেই। যেমন: চালাকচতুর – এটি কোন সমাস? চালাকচতুর মানে ‘যে চালাক সে চতুর ‘ তাহলে এখানে ‘যে ‘ কথাটি আছে,অতএব এটি কর্মধারয় সমাস। মহান যে পুরুষ =মহাপুরুষ- মাঝে যে থাকলেই সাধারণ কর্মধারয়।
প্রথমেই আসুন মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস চিনি। নামটা খেয়াল করুন, মধ্যপদলোপী। মানে মধ্যপদ অর্থাৎ মাঝখানের পদটা লোপ পাবে মানে চলে যাবে।
সহজ করে বললে হয়, যেখানে মাঝখানের পদটা চলে যায় সেটিই মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস। যেমনঃ
সিংহাসন -কোন সমাস? সিংহাসন মানে ‘সিংহ চিহ্নিত যে আসন ‘। তাহলে দেখুন এখানে ‘সিংহ চিহ্নিত যে আসন ‘ বাক্যটি থেকে মাঝখানের “চিহ্নিত ” শব্দটি বাদ দিলে অর্থাৎ মধ্যপদ “চিহ্নিত ” শব্দটি লোপ পেলে হয় “সিংহাসন “। যেহেতু মধ্যপদলোপ পেয়েছে, অতএব এটি মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস।
☆উপমান কর্মধারয় সমাস কীভাবে চিনবেন জানেন?
→যদি ২টি শব্দ তুলনা করা যায় তবে সেটি হবে উপমান কর্মধারয় সমাস। যেমনঃ তুষারশুভ্র – কোন সমাসের উদাহরন? শব্দটি খেয়াল করুন “তুষারশুভ্র “। তুষার মানে বরফ, আর শুভ্র মানে সাদা। বরফ তো দেখতে সাদা। তাহলে তো এটি তুলনা করা যায়। অতএব এটি উপমান কর্মধারয়।
একইভাবে “কাজলকালো “এটিও উপমান কর্মধারয় সমাস। কারণ কাজল দেখতে তো কালো রঙেরই হয়। তার মানে তুলনা করা যাচ্ছে। অতএব এটি উপমান কর্মধারয়।
☆এটি অন্যভাবে ও মনে রাখা যায়। উপমান মানে Noun + Adjective. যেমন তুষারশুভ্র শব্দটির তুষার মানে বরফ হল Noun, আর শুভ্র মানে সাদা হল Adjective। কাজলকালো শব্দটির কাজল হল Noun, এবং কালো হল Adjective। অতএব Noun + Adjective = উপমান কর্মধারয় সমাস।
উপমিত কর্মধারয় চেনার উপায় :
উপমিত কর্মধারয় মানে যেটা তুলনা করা যাবে না। যেমন : পুরুষসিংহ – কোন সমাসেরঞঞঞ্জঞ উদাহরণ? খেয়াল করুন শব্দটি।পুরুষসিংহ মানে পুরুষ আর সিংহ। আচ্ছা পুরুষ কি কখনো সিংহ হতে পারে নাকি পুরুষ কখনো সিংহ হতে পারে? একটা মানুষ আর অন্যটা জন্তু, কেউ কারো মতো হতে পারেনা। অর্থাৎ তুলনা করা যাচ্ছে না। তার মানে যেহেতু তুলনা করা যাচ্ছেনা, অতএব এটি উপমিত কর্মধারয় সমাস।
চন্দ্রমুখ শব্দটি কোন সমাস? খেয়াল করুন মুখ কি কখনো চাঁদের মতো হতে পারে, নাকি চাঁদ কখনো মুখের মতো হতে পারে? কোনোটাই কোনোটার মতো হতে পারেনা। অর্থাৎ তুলনা করা যাচ্ছে না। তার মানে যেহেতু তুলনা করা যাচ্ছেনা, অতএব এটি উপমিত কর্মধারয় সমাস।
এটিও অন্যভাবে মনে রাখা যায়। উপমিত মানে Noun+ Noun. যেমন -পুরুষসিংহ শব্দটির পুরুষ ও সিংহ দুটোই Noun। অর্থাৎ Noun+ Noun। একইভাবে চন্দ্রমুখ শব্দটির চন্দ্র ও মুখ দুটিই Noun । অর্থাৎ Noun+ Noun। অতএব । অর্থাৎ Noun+ Noun= উপমিত কর্মধারয় সমাস
রূপক কর্মধারয় সমাস চেনার উপায় :
এটিও খুব সোজা। রূপ- কথাটি থাকলেই রূপক কর্মধারয়।
যেমনঃ বিষাদসিন্ধু -এটি কোন সমাস? বিষাদসিন্ধু কে বিশ্লেষণ করলে হয় “বিষাদ রূপ সিন্ধু “। যেহেতু এখানে রূপ কথাটি আছে, অতএব এটি রূপক কর্মধারয় সমাস। একইভাবে মনমাঝি -মন রূপ মাঝি, ক্রোধানল -ক্রোধ রূপ অনল, এগুলো ও রূপক কর্মধারয় সমাস, যেহেতু রূপ কথাটা আছে।
★ বহুব্রীহি সমাস ★
সংজ্ঞা:– যে সমাসে সমস্যমান পদগূলির কোনোটির অর্থই প্রধান ভাবে না বুঝিয়ে অন্য কোনো অর্থ প্রধানভাবে বোঝায় , তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে |
যেমন– বীণা পাণিতে যার = বীণাপাণি ( সরস্বতী )
** ‘বহুব্রীহি’ = বহু ব্রীহি ( ধান ) যার
শ্রেণিবিভাগ :
ক) সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস
খ) ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস
গ) নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস
ঘ) মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস
ঙ) ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস
চ) সহার্থক বহুব্রীহি সমাস
ছ) সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস
ক) সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস :
এই সমাসে পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হয় |
এখানে উভয় পদেই শূন্য বিভক্তি থাকায় এর নাম সমানাধিকরণ |
যেমন:–
দৃঢ় প্রতিজ্ঞা যাহার= দৃঢ়প্রতিজ্ঞ
ছিন্ন হয়েছে শাখা যার = ছিন্নশাখা (বৃক্ষ)
সমান পতি যাদের= সপত্নী
ব্যতিক্রম:::
** কখনও আবার বিশেষ্যপদটি পূর্বেও বসে |
যেমন:–
লক্ষ্মী ছাড়িয়াছে যাকে= লক্ষ্মীছাড়া
বুক ফাটে যার দ্বারা= বুকফাটা ( কান্না )
স্বার্থই পর ( পরম ) যার = স্বার্থপর
** কখনও আবার দুটি পদই বিশেষ্য / পূর্বপদটি বিশেষণ ভাবাপন্ন |
যেমন:–
চন্দ্র হয়েছে শেখর যার= চন্দ্রশেখর ( শিব )
পদ্ম আসন যাহার= পদ্মাসন
নদী মাতা যাহার= নদীমাতৃক
খ) ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস :
এই বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদটি বিশেষণ নয় |
এখানে সমস্যমান পদ দুটি পৃথক বিভক্তিযুক্ত হওয়ায় এর নাম ব্যধিকরণ বহুব্রীহি |
যেমন:–
মিলন অন্তে যার= মিলনান্তক
অন্য বিষয়ে মন যার = অন্যমনস্ক
আশীতে (দন্তে) বিষ যার= আশীবিষ (সর্প)
রত্ন গর্ভে যাহার= রত্নগর্ভা
অন্তঃ (অন্তরে) অপ্ যার= অন্তরীপ
গ) নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস :
নঞর্থক বা নাবাচক পদের সঙ্গে বিশেষ্যপদের যে বহুব্রীহি সমাস তাকেই নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস বলে |
যেমন:—
নেই অর্থ যার = নিরর্থক
নিঃ (নাই) রদ (দন্ত) যার= নীরদ
বে (নাই) তার যাতে= বেতার
নিঃ (নাই) সহায় যার = নিঃসহায়
ঘ) মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস :
ব্যাসবাক্যের মধ্যস্থিত পদের লোপ হয় এই বহুব্রীহি সমাসে |
**এই সমাসে বেশিরভাগভাগ স্থানে উপমানের সঙ্গে সমাস হয়, তাই একে উপমানাত্মক বহুব্রীহি ও বলা হয় |
** আবার ব্যাসবাক্যটি ব্যাখ্যামূলক হওয়ায় এর অপর একটি নাম ব্যাখ্যাত্মক বহুব্রীহি সমাস |
যেমন:–
ধর্মের(আদর্শের) উদ্দেশে ঘট স্থাপন পূর্বক যে আন্দোলন= ধর্মঘট
বিম্বের ন্যায় রঞ্জিত অধর যে নারীর= বিম্বাধরী
মীনের অক্ষির মতো অক্ষি যে নারীর= মীনাক্ষী
কাঞ্চনের প্রভার ন্যায় প্রভা যা=কাঞ্চনপ্রভ
ঙ) ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস :
পরস্পর একজাতীয় ক্রিয়ার বিনিময় বোঝালে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস হয় |
যেমন:–
কেশে কেশে আকর্ষণ করে যে যুদ্ধ= কেশাকেশি
পরস্পরের মধ্যে আড়ি= আড়াআড়ি
পরস্পরকে জানা= জানাজানি
হেসে হেসে যে আলাপ = হাসাহাসি
চ) সহার্থক বহুব্রীহি সমাস :
পূর্বপদ বিশেষ্যের সঙ্গে, সহার্থক পরপদের বহুব্রীহি সমাসকে সহার্থক বহুব্রীহি সমাস বলে |
যেমন:–
শ্রদ্ধার সহিত বর্তমান= সশ্রদ্ধ
প্রতিভার সহিত বর্তমান= সপ্রতিভ
বেগের সহিত বর্তমান = সবেগ
চকিতের সহিত বর্তমান= সচকিত
** পূর্বপদ যদি বিশেষণ হয় , তবে তা সহার্থক বহুব্রীহি হয় না |
ছ) সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস :
এই বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদটি সংখ্যাবাচক বিশেষণ হয় |
যেমন:–
একদিকেই চোখ যার= একচোখা
দশ আনন যার= দশানন
ত্রি নয়ন যার= ত্রিনয়ন / ত্রিনয়না (স্ত্রীবাচক)
সে (তিন) তার যার= সেতার
দুই দিকে অপ্(জল) যার= দ্বীপ |
★তৎপুরুষ সমাস ★
সংজ্ঞা:- যে সমাসে পূর্বপদের কারকের বিভক্তিচিহ্ন বা বিভক্তিস্থানীয় অনুসর্গের লোপ হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধান হয় , তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে |
যেমন:–
রথকে দেখা = রথদেখা
লোককে দেখানো=লোকদেখানো
☆ তৎপুরুষ সমাসের অর্থ কী?
‘তৎ’ শব্দাংশের অর্থ হল – তার এবং তৎপুরুষ শব্দের অর্থ হল – ‘তার সম্বন্ধীয় পুরুষ’ বা ‘তার পুরুষ’ বা ‘তস্যপুরুষ’।
☆ তৎপুরুষ সমাসের নাম তৎপুরুষ সমাস হল কেন?
তৎপুরুষ শব্দটি, তার পুরুষ (তস্য পুরুষ:) পদগুলির একপদীকরণে সৃষ্ট। শব্দটি গঠনে পূর্বপদের (তার) সম্বন্ধ বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। এই শ্রেনীর সমাসের অধিকাংশ দৃষ্টান্তইই পুর্বপদের সম্বন্ধ বিভক্তি লোপ পেয়ে গঠিত হয়। তাই তৎপুরুষ শব্দানুসারে এই শ্রেনীর সমাসের নাম তৎপুরুষ সমাস।
☆ তৎপুরুষ শব্দটি ব্যাকরণের কোন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় এবং কেন?
তৎপুরুষ শব্দটি ব্যাকরণের সমাস প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। তৎপুরুষ শব্দটি গঠিত হয়েছে ‘তার পুরুষ’ (তস্য পুরুষ:) পদদ্বয়ের একপদীকরণে। শব্দটি পূর্বপদের সম্বন্ধ বিভক্তি লোপ পেয়ে গঠিত এবং পরপদের অর্থ প্রধান। সমাসের এক বিশেষ শ্রেনীতে অধিকাংশ দৃষ্টান্তই বা পূর্বপদের সম্বন্ধ বিভক্তি লোপ পেয়ে গঠিত, সেই জন্য তৎপুরুষ শব্দানুসারে উক্ত প্রক্রিয়ার নামকরণের জন্য শব্দটি ব্যবহার হয়।
☆তৎপুরুষ সমাস চেনার উপায় কী?
(ক) প্রথমেই তৎপুরুষ সমাস ও তার ভাগগুলিকে পড়ে নিতে হবে।
(খ) ক্রমাগত ব্যাসবাক্য করার অভ্যাস করতে হবে।
(গ) পূর্বপদের পরনিপাত অনেক ক্ষেত্রেই হবে।
(ঘ) বহুব্রীহি ও তৎপুরুষ সমাসের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য জেনে নিতে হবে।
(ঙ) ব্যাপ্তি তৎপুরুষ সমাসে কোন না কোন সময়কাল বোঝাবেই।
(চ) না তৎপুরুষ ও না বহুব্রীহি সমাসের মধ্যেকার পার্থক্য জেনে নিতে হবে।
*শ্রেণিবিভাগ *
ক) কর্ম তৎপুরুষ সমাস :
এই সমাসে পূর্পদের কর্মকারকের বিভক্তিচিহ্ন ( যেমন ‘কে’ ) লোপ পায় |
উদাহরণ:–
ছেলেকে ভুলানো = ছেলেভুলানো
লুচিকে ভাজা = লুচিভাজা
কাপড়কে কাচা = কাপড়কাচা
মাছধরা = মাছকে ধরা
তরীবাওয়া = তরীকে বাওয়া
লোকদেখানো = লোককে দেখানো
বাসনমাজা = বাসনকে মাজা
নবীনবরণ = নবীনকে বরণ
ঘাসকাটা = ঘাসকে কাটা
ব্যক্তিগত = ব্যক্তিকে গত
শোকাতীত = শোককে অতীত
রথদেখা = রথকে দেখা
কলাবেচা = কলাকে বেচা
ভয়প্রাপ্ত = ভয়কে প্রাপ্ত
বইপড়া = বইকে পড়া
দেশোদ্ধার =দেশকে উদ্ধার
ঘরমোছা = ঘরকে মোছা
বাসনধোয়া = বাসনকে ধোয়া
চরনাশ্রিত = চরনকে আশ্রিত
গঙ্গাপ্রাপ্ত = গঙ্গাকে প্রাপ্ত
স্মরনাতীত = স্মরঙ্কে অতীত
বিপদাপন্ন = বিপদকে আপন্ন
খ) করণ তৎপুরুষ সমাস :
এই সমাসে পূর্বপদের করণকারকের বিভক্তি (‘এ’, ‘য়’, ‘তে’)/ অনুসর্গ ( ‘দ্বারা’, ‘দিয়া’, ‘কর্তৃক’ ) লোপ পায় |
উদাহরণ–
আশা দ্বারা আহত=আশাহত
প্রথার দ্বারা বদ্ধ =প্রথাবদ্ধ
জরায় জীর্ণ=জরাজীর্ণ
যন্ত্রচালিত = যন্ত্র দ্বারা চালিত ।
লোহাবাঁধানো = লোহা দ্বারা বাঁধানো ।
শোকাকুল = শোক দ্বারা আকুল ।
বিজ্ঞানসম্মত = বিজ্ঞান দ্বারা সম্মত ।
কন্টকাকীর্ণ = কন্টক দ্বারা আকীর্ণ ।
সঙ্গীহীন = সঙ্গী দ্বারা হীন ।
জ্ঞানশূন্য = জ্ঞান দ্বারা শূন্য ।
ঢেঁকিছাটা = ঢেঁকি দ্বারা ছাটা ।
শ্রীযুক্ত = শ্রী দ্বারা যুক্ত ।
মেঘাবৃত = মেঘ দ্বারা আবৃত ।
রাজদত্ত = রাজা কর্তৃক দত্ত ।
মধুমাখা = মধু দ্বারা মাখা ।
মনগড়া = মন দিয়ে গড়া ।
হাতছানি = হাত দ্বারা ছানি ।
হাতকাটা = হাত দ্বারা কাটা ।
চেষ্টালব্ধ = চেষ্টা দ্বারা লব্ধ ।
বিদ্যাহীন = বিদ্যা দ্বারা হীন ।
বিষমাখা = বিষ দ্বারা মাখা ।
ভিক্ষালব্ধ = ভিক্ষা দ্বারা লব্ধ ।
বিস্ময়বিহ্বল = বিস্ময় দ্বারা বিহ্বল ।
পাথরচাপা = পাথর দ্বারা চাপা ।
নজরবন্দী = নজর দ্বারা বন্দী ।
ছায়াঘেরা = ছায়া দ্বারা ঘেরা ।
আশাহত = আশা দ্বারা হত ।
অস্ত্রাহত = অস্ত্রের দ্বারা আহত ।
তৃষ্ণার্ত = তৃষ্ণার দ্বারা ঋত ।
ঋণগ্রস্ত = ঋণ দ্বারা গ্রস্ত ।
অশ্রুভরা = অশ্রুতে ভরা ।
ছাতাপেটা = ছাতা দিয়ে পেটা
গ) নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস :
এই সমাসে পূর্বপদের নিমিত্ত / জন্য / উদ্দেশ্য প্রভৃতি নিমিত্তবাচক অংশগুলির লোপ হয় |
উদাহরণ—
স্বদেশের জন্য প্রেম =স্বদেশপ্রেম
তীর্থের উদ্দেশ্যে যাত্রা = তীর্থযাত্রা
শিশুর নিমিত্ত সাহিত্য =শিশুসাহিত্য
উদাহরণ—
স্বদেশের জন্য প্রেম =স্বদেশপ্রেম
তীর্থের উদ্দেশ্যে যাত্রা = তীর্থযাত্রা
শিশুর নিমিত্ত সাহিত্য =শিশুসাহিত্য
বরন ডালা = বরনের নিমিত্ত ডালা ।
ছাত্রাবাস = ছাত্রদের জন্য আবাস ।
নাট্যমঞ্চ = নাটকের নিমিত্ত মঞ্চ ।
দেবতা নিবেদিত = দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত ।
তীর্থযাত্রা = তীর্থের উদ্দেশ্যে যাত্রা ।
শিশুসাহিত্য = শিশুর নিমিত্ত সাহিত্য ।
মড়াকান্না = মড়ার জন্য কান্না ।
শয়নকক্ষ = শয়নের নিমিত্ত কক্ষ ।
বিদ্যালয় = বিদ্যার নিমিত্ত আলয় ।
অনাথআশ্রম = অনাথের জন্য আশ্রম ।
স্মৃতিমন্দির = স্মৃতির উদ্দেশ্যে মন্দির ।
ভিক্ষাঝুলি = ভিক্ষার নিমিত্ত ঝুলি ।
স্বদেশপ্রেম = স্বদেশের জন্য প্রেম ।
জলকর = জলের জন্য কর ।
ধানজমি = ধানের জন্য জমি ।
শয়নঘর = শয়নের জন্য ঘর ।
জপমালা = জপের জন্য মালা ।
ডাকমাশুল = ডাকের নিমিত্ত মাশুল ।
বিয়েপাগল = বিয়ের জন্য পাগল ।
রান্নাঘর = রান্নার জন্য ঘর ।
লোকহিত = লোকের নিমিত্ত হিত ।
তপোবন = তপের নিমিত্ত বন ।
রক্ষাকবচ = রক্ষার নিমিত্ত কবচ ।
অনাথআশ্রম = অনাথদের জন্য আশ্রম ।
হজযাত্রা = হজের নিমিত্ত যাত্রা ।
পাগলাগারদ = পাগলাদের জন্য গারদ ।
শিশুমঙ্গঁল = শিশুদের জন্য মঙ্গঁল ।
মেয়েস্কুল = মেয়েদের জন্য স্কুল ।
শিশুবিভাগ = শিশুদের জন্য বিভাগ ।
বালিকাবিদ্যালয় = বালিকাদের নিমিত্ত বিদ্যালয় ।
উন্নতিবিধান = উন্নতির জন্য বিধান ।
শিক্ষায়তন = শিক্ষার জন্য আয়তন ।
মাপকাঠি = মাপের জন্য কাঠি ।
ঘ) অপাদান তৎপুরুষ সমাস :
এই সমাসে পূর্বপদের অপাদান কারকের বিভক্তি (‘এ’, ‘তে’ ) / অনুসর্গ ( ‘হইতে’, ‘থেকে’, ‘চেয়ে’ ) লোপ পায় |
উদাহরণ–
জল হইতে আতঙ্ক= জলাতঙ্ক
দল থেকে ছাড়া =দলছাড়া
মৃত্যুতে ভয়=মৃত্যুভয়
উদাহরণ–
জল হইতে আতঙ্ক= জলাতঙ্ক
দল থেকে ছাড়া =দলছাড়া
মৃত্যুতে ভয়=মৃত্যুভয়
দুগ্ধজাত = দুগ্ধ হইতে জাত ।
মায়ামুক্ত = মায়া হইতে মুক্ত ।
কর্মবিরতি = কর্ম হইতে বিরতি ।
শাখাচ্যুত = শাখা থেকে চ্যুত ।
শাপমুক্ত = শাপ থেকে মুক্ত ।
প্রানপ্রিয় = প্রান অপেক্ষা প্রিয় ।
চাকভাঙা = চাক থেকে ভাঙা ।
পারীজাত = পারী (সমুদ্র) হইতে জাত ।
বৃন্তচ্যুত = বৃন্ত হইতে চ্যুত ।
আদ্যন্ত = আদি হইতে অন্ত ।
স্নাতকোত্তর = স্নাতক হইতে উত্তর ।
অশীতিপর = অশীতি থেকে পর ।
তদ্ভব = তৎ হইতে ভব ।
ঐশ্বর্যভ্রষ্ট = ঐশ্বর্য হইতে ভ্রষ্ট ।
বামেতর = বাম হইতে ইতর ।
পাঠবিরত = পাঠ হইতে বিরত ।
দূরাগত = দূর হইতে আগত ।
মৃত্যুত্তীর্ন = মৃত্যু হইতে উত্তীর্ন ।
দত্তজা = দত্ত বংশ হইতে জাত ।
রাজভয় = রাজা হইতে ভয় ।
পদচ্যুত = পদ হইতে চ্যুত ।
বর্ষনক্ষান্ত = বর্ষণ হইতে ক্ষান্ত ।
খাঁচাছাড়া = খাঁচা হইতে ছাড়া ।
জেলখালাস = জেল থেকে খালাস ।
বিলাতফেরত = বিলাত থেকে ফেরত ।
লোকভয় = লোক থেকে ভয় ।
প্রানপ্রিয় = প্রান থেকে প্রিয় ।
স্কুলপালানো = স্কুল থেকে পালানো ।
শিখরতুষারনিঃসৃত = শিখরতুষার হইতে নিঃসৃত
আগাগোড়া = আগা থেকে গোড়া ।
জন্মান্ধ = জন্ম থেকে অন্ধ ।
বিদেশাগত = বিদেশ থেকে আগত ।
অপাদান তৎপুরুষ সমাসকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে কেন?
অপাদান তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের পঞ্চমী বিভক্তি (হতে,চেয়ে,থেকে প্রভৃতি) লোপ পায়, তাই একে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে। সাধারণত চ্যুত, ভীত, জাত, গৃহীত, ভ্রষ্ট, বিরত, আগত প্রভৃতি পরপদের সাথে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস হয়।
ঙ) অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস :
এখানে পূর্বপদের অধিকরণ কারকের বিভক্তিচিহ্ন (‘এ’, ‘য়’, ‘এতে’ ) লোপ পায় |
উদাহরণ—
গীতায় উক্ত= গীতোক্ত
ওষ্ঠে আগত= ওষ্ঠাগত
স্বার্থে পর (আসক্ত) = স্বার্থপর
ধ্যানলীন = ধ্যানে লীন ।
প্রাতভ্রমন = প্রাতে ভ্রমন ।
নরপ্রীতি = নরগনে প্রীতি ।
ক্ষমাসুন্দর = ক্ষমায় সুন্দর ।
মাতৃভক্তি = মাতার প্রতি ভক্তি ।
তর্কপটু = তর্কে পটু ।
মর্মাহত = মর্মে আহত ।
আহারনিরত = আহারে নিরত ।
গৃহাগত = গৃহে আগত ।
ক্ষমতাসীন = ক্ষমতায় আসীন ।
শীর্ষস্থিত = শীর্ষে স্থিত ।
কারাবরুদ্ধ = কারায় অবরুদ্ধ ।
একনিষ্ঠা = একে নিষ্ঠা ।
গীতোক্ত = গীতায় উক্ত ।
মনমরা = মনে মরা ।
দাঁতকপাটি = দাঁতে কপাটি ।
রাতকানা = রাতে কানা ।
বাটাভরা = বাটায় ভরা ।
গলাধাক্কা = গলাতে ধাক্কা ।
বক্ষলীন = বক্ষে লীন ।
তীর্থাগত = তীর্থে আগত ।
বচনবাগীশ = বচনে বাগীশ ।
ভ্রাতৃস্নেহ = ভ্রাতার প্রতি স্নেহ ।
রুপানুরাগ = রুপের প্রতি অনুরাগ ।
পাড়াবেড়ানো = পাড়ায় বেড়ানো ।
ঘরপাতা = ঘরে পাতা ।
অকালপক্ক = অকালে পক্ক ।
কর্মব্যস্ত = কর্মে ব্যস্ত ।
অষ্টাগত = অষ্টে আগত ।
ক্রিড়ামত্ত = ক্রিড়াতে মত্ত ।
শিল্পনৈপুন্য = শিল্পে নৈপুন্য ।
হাড়বজ্জাত = হাড়ে বজ্জাত ।
পানিবন্দি = পানিতে বন্দি ।
সাহিত্যপ্রীতি = সাহিত্যের প্রতি প্রীতি ।
মৃৎ-প্রোথিত = মৃৎ-এ প্রোথিত ।
সর্বাঙ্গসুন্দরি = সর্বাঙ্গে সুন্দরি ।
গ্রীশ্মকৃশ = গ্রীশ্মে কৃশ ।
অকালমৃত্যু = অকালে মৃত্যু ।
বাক্সবন্দী = বাক্সে বন্দী ।
বস্তাপচা = বস্তায় পচা ।
ভোজনপটু = ভোজনে পটু ।
বিশ্ববিখ্যাত = বিশ্বের মধ্যে বিখ্যাত ।
রাতজাগা = রাতে জাগা ।
গাছপাক = গাছে পাকা ।
☆ অধিকরণ তৎপুরুষ সমাসকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে কেন?
অধিকরণ তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের সপ্তমী বিভক্তি ( এ,য়,তে) লোপ পায় বলে,একে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে।
চ) সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস :
এই সমাসে পূর্বপদের সম্বন্ধের বিভক্তিচিহ্ন ( ‘র’, ‘এর’, ‘দের’ ) লোপ পায় |
উদাহরণ–
বসন্তের সখা= বসন্তসখ (কোকিল)
মন্ত্রীদের সভা =মন্ত্রীসভা
রোগের রাজা =রাজরোগ
রত্নের আকর = রত্নাকর
ফুলবাগান = ফুলের বাগান ।
রাজ্যপাল = রাজ্যের পাল ।
শালবন = শালের বন ।
রাজগৃহ = রাজার গৃহ ।
ছাগদুগ্ধ = ছাগীর দুগ্ধ ।
হংসডিম্ব = হংসীর ডিম্ব ।
স্বর্গোদ্যান = স্বর্গের উদ্যান।
চাবাগান = চায়ের বাগান ।
রাজপুত্র = রাজার পুত্র ।
খেয়াঘাট = খেয়া পারাপারের ঘাট ।
ছাত্রসমাজ = ছাত্রদের সমাজ ।
দেশসেবা = দেশের সেবা ।
বাঁদরনাচ = বাঁদরের নাচ ।
পাটক্ষেত = পাটের ক্ষেত ।
শ্বশুরবাড়ি = শ্বশুরের বাড়ি ।
বিড়ালছানা = বিড়ালের ছানা ।
জলপিপাসা = জলের পিপাসা ।
মাঝনদী = নদীর মাঝ ।
চণ্ডীদাস = চণ্ডীর দাস ।
গঙ্গাজল = গঙ্গার জল ।
ভাতৃদয় = ভ্রাতার দ্বয় ।
রাজরানী = রাজার রানী ।
শ্রীশ = শ্রীর ঈশ ।
পরীক্ষার্থী = পরীক্ষার অর্থী ।
ঘনঘটা = ঘনের(মেঘের) ঘটা ।
জগজ্জন = জগতের জন ।
বিমাতৃনন্দন = বিমাতার নন্দন ।
সুধাকর = সুধার আকর ।
বিদ্বৎসভা = বিদ্বানের সভা ।
পণ্ডিতমহল = পন্ডিতের মহল ।
মাধব = মা’র(লক্ষ্মীর) ধব(স্বামী)
পিতৃমাতা = পিতার মাতা ।
বসন্তসখ = বসন্তের সখা ।
বুধমণ্ডলী = বুধের(পন্ডিতগনের) মণ্ডলী ।
মহৎপ্রান = মহতের প্রান ।
বীরপুজা = বীরের পূজা ।
বহ্নিভোজ্য = বহ্নির ভোজ্য ।
স্বাধীন = স্ব-র আধীন ।
ধনিগৃহ = ধনির গৃহ ।
পৌরসভা = পৌরের সভা ।
মধুকমালা = মধুকের মালা ।
নরকুলধন = নরকুলের ধন ।
ফুলবাগান = ফুলের বাগান ।
উদয়রবিরশ্মি = উদয়রবির রশ্মি ।
যুবসংঘ = যুবার সংঘ ।
তপোবন = তপের বন ।
বিষজ্বালা = বিষের জ্বালা ।
দেশনেতা = দেশের নেতা ।
অর্থগৌরব = অর্থের গৌরব ।
চন্দ্রোদ্বয় = চন্দ্রের উদয় ।
ভোটদাতা = ভোটের দাতা ।
ইষ্টদর্শন = ইষ্টদেবতার দর্শন ।
পাঠচক্র = পাঠের চক্র ।
রথতলা = রথের তলা ।
ধানক্ষেত = ধানের ক্ষেত ।
বিশ্বামিত্র = বিশ্বের মিত্র ।
ব্রাহ্মনপাড়া = ব্রাহ্মনের পাড়া ।
ছ) ব্যাপ্তি তৎপুরুষ সমাস :
এখানে ‘ব্যাপিয়া’ বা বিস্তার অর্থ বোঝায় |
উদাহরণ–
চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী
চিরকাল ব্যাপিয়া সুন্দর = চিরসুন্দর
জ) উপপদ তৎপুরুষ সমাস :
উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের সমাসকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে |
☆ কৃদন্ত পদ কী?
কৃদন্ত পদের বুৎপত্তি হল – কৃ-দম্+ক্ত ;অর্থাৎ যে পদের দ্বারা কাজ করা বোঝায়।
কৃদন্ত পদের বুৎপত্তি হল – কৃ-দম্+ক্ত ;অর্থাৎ যে পদের দ্বারা কাজ করা বোঝায়।
☆ উপপদ শব্দের অর্থ কী?
উপপদ শব্দের অর্থ হল ‘সমীপবর্তী পদ’।
উপপদ শব্দের অর্থ হল ‘সমীপবর্তী পদ’।
☆ উপপদ কাকে বলে?
কৃদন্ত পদের পূর্ববর্তী পদকে ব্যাকরণে উপপদ বলে। যেমন – জলচর পদের ‘চর’ (অর্থাৎ চরা) কৃদন্ত পদটির পূর্বপদ ‘জল’ পদটি হল উপপদ।
কৃদন্ত পদের পূর্ববর্তী পদকে ব্যাকরণে উপপদ বলে। যেমন – জলচর পদের ‘চর’ (অর্থাৎ চরা) কৃদন্ত পদটির পূর্বপদ ‘জল’ পদটি হল উপপদ।
উদাহরণ–
পঙ্কে জন্মে যে =পঙ্কজ
মুখে থাকে যা =মুখস্থ
গণিত জানেন যিনি =গণিতজ্ঞ
দিবাকর = দিবা করে যে ।
জলচর = জলে চরে যে ।
সূত্রধর = সূত্র ধরে যে ।
খেচর = খ-তে(আকাশে) চরে যে ।
বিজ্ঞ = বিশেষভাবে জানেন যিনি ।
পাদপ = পা দিয়ে পান করে যে ।
শুভদা = শুভ দান করে যে ।
অভ্রভেদী = অভ্র ভেদ করে যে ।
পঙ্কজ = পঙ্কে জন্মে যা ।
ইন্দ্রজিৎ = ইন্দ্রকে জয় করিয়াছে যে ।
যাদুকর = যাদু করে যে ।
নীরদ = নীর দান করে যে ।
মধুকর = মধু করে যে ।
বসুন্ধরা = বসু(ধন) ধরে যে ।
গুপ্তচর = গুপ্তভাবে চরে যে ।
সারদা = সার দেন যে দেবী ।
নৃপ = নৃ(নরগনকে) পালন করেন যিনি ।
সহজ = সহ(সঙ্গে সঙ্গে) জন্মে যাহা ।
রসজ্ঞ = রস জানেন যিনি ।
একদেশদর্শী = এক দেশ দেখে যে ।
মনোমোহী = মনকে মহীত করে যে ।
গোপ = গোপালন করে যে ।
একান্নবর্তী = একান্নে বর্তন করে যে ।
মুখস্থ = মুখে থাকে যে ।
বরদ = বর দান করেন যিনি ।
পয়োধর = পয়ঃ ধারন করে যে ।
পত্রচর = পত্রে পত্রে চরে যে ।
রুচিকর = রুচি করে যে ।
সব্যসাচী = সব্য দারা সচন করেন যিনি ।
মলয়জ = মলয়ে জন্মে যে ।
বোলধরা = বোল ধরিয়াছে যে ।
কাঠঠোকরা = কাঠে ঠোকরায় যে ।
ডানপিতে = ডান্ডা পিটিয়া থাকে যে ।
মনোলোভা = মন লুব্ধ করে যে ।
পুঁথিপড়ো = পুঁথি পড়ে যে ।
দুনিয়াজোড়া = দুনিয়া জুড়ে থাকে যে ।
কুলমজানী = কুল মজায় যে নারী ।
পথিকৃৎ = পথ করেন যিনি ।
পেশকার = পেশ করে যে ।
গিরিশ = গিরিতে শয়ন করেন যিনি ।
ছেলেধরা = ছেলে ধরে যে ।
পকেটমার = পকেট মারে যে ।
বর্ণচোরা = বর্ণ চুরি করে যে ।
মিথ্যাবাদী = মিথ্যা বলে যে ।
বিহগ = বিহায়সে(আকাশে) গমন করে যে।
শত্রুঘ্ন = শত্রুকে বধ করে যে ।
দ্বিপ = দ্বি(দুইয়ের দ্বারা) পান করে যে ।
পারদর্শী = পার(সীমা) দর্শন করে যে ।
হৃদয়হরন = হৃদয় হরন করে যে ।
ভূমিষ্ঠ = ভূমিতে থাকে যে ।
পাসকরা = পাস করিয়াছে যে ।
ঝ) নঞ তৎপুরুষ সমাস :
নঞ অব্যয় কে পূর্বপদ করে, উত্তরপদ বিশেষ্য বা বিশেষণের সঙ্গে এই সমাস হয় |
** উত্তরপদের প্রথমবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ হলে ‘নঞ’ স্থানে ‘অ’ হয় |
আর স্বরবর্ণ হলে ‘অন্’ হয় |
উদাহরণ–
আবশ্যক নয়= অনাবশ্যক
আস্থা নেই =অনাস্থা
শুভ নয় =অশুভ
স্থির নয়= অস্থির
অনাসৃষ্টি = নয় সৃষ্টি ।
অনিয়ম = নয় নিয়ম ।
অনভ্যাস = নয় অভ্যাস ।
বেসরকারি = নয় সরাকারি ।
অনন্য = নয় অন্য ।
বিসদৃশ = নয় সদৃশ ।
অনাবৃত = নয় আবৃত ।
অনুন্নত = নয় উন্নত ।
অসুস্থ = নয় সুস্থ ।
অকাজ = নয় কাজ ।
অবিধেয় = নয় বিধেয় ।
অচেনা = নয় চেনা ।
অনাবাদী = নয় আবাদী ।
অনেক = নয় এক ।
নাবালক = নয় বালক ।
গরমিল = নয় মিল ।
গরহাজির = নয় হাজির ।
বেঠিক = নয় ঠিক ।
বেসামাল = নয় সামাল ।
বিদেশ = নয় দেশ ।
নিরাশা = নাই আসা ।
নিখুঁত = নাই খুঁত ।
অনটন = অটন(গমন) নয় ।
নাতিবৃহৎ = বৃহৎ নয় ।
নাতিশীতোষ্ণ = অতিশীতোষ্ণ নয় ।
নারাজ = রাজী নয় ।
অনীহা = ঈহা(ইচ্ছা বা চেষ্টা) নয় ।
অনাময় = আময়(অসুস্থতা) নয় ।
অনৃত = ঋত (সত্য) নয় ।
নেই মামা = মামা নয় ।
অনবদ্য = অবদ্য(নিন্দনীয়) নয় ।
নির্ভরসা = ভরসা নয় ।
অনিবার্য = নিবার্য নয় ।
বিশৃঙ্খলা = নয় শৃঙ্খলা ।
নাতিদীর্ঘ = নয় অতি দীর্ঘ ।
অম্লান = নয় ম্লান ।
অনাবশ্যক = নয় আবশ্যক ।
অরসিক = নয় রসিক ।
অনাহূত = নয় আহূত ।
অনির্বচনীয় = নির্বচনীয় নহে ।
অনন্বিত = অন্বিত নয় ।
অনুন্নীত = নয় উন্নীত ।
অব্রাহ্মন = ব্রাহ্মন নয় ।
অকুন্ঠিত = নয় কুন্ঠিত ।
অধীর = নয় ধীর ।
অনাকাঙ্খিত = কাঙ্খিত নয় ।
অনভিপ্রেত = অভিপ্রেত নয় ।
অনাস্বাদিত = নয় আস্বাদিত ।
অনবনত = অবনত নয় ।
অনাস্থা = নয় আস্থা ।
অনলস = অলস নয় ।
অব্যক্ত = ব্যক্ত নয় ।
অজ্ঞাত = জ্ঞাত নয় ।
অসঙ্গত = সঙ্গত নয় ।
অনভিজ্ঞ = অভিজ্ঞ নয় ।
অস্থির = স্থির নয় ।
অনৈশ্বর্য = নয় ঐশ্বর্য ।
অনাচার = নয় আচার ।
অনুচিত = উচিত নয় ।
অসাধু = নয় সাধু ।
অনাসক্ত = আসক্ত নয় ।
অনাদর = নয় আদর ।
নগন্য = গন্য নয় ।
অশুভ = শুভ নয় ।
অবেলা = নয় বেলা ।
অনশন = নয় অশন ।
অনাবাদী = আবাদী নয় ।
অজানা = জানা নয় ।
ঞ) অকারক তৎপুরুষ / উপকারক তৎপুরুষ সমাস ::::
এখানে ‘গত’, ‘প্রাপ্ত’, ‘আপন্ন’, ‘আশ্রিত’, ‘আরূঢ়’, ‘অতীত’ ইত্যাদি শব্দযোগে পূর্বপদের ‘কে’ বিভক্তিচিহ্ন লোপ পায় |
উদাহরণ—
যৌবনকে প্রাপ্ত= যৌবনপ্রাপ্ত
অশ্বে আরূঢ় =অশ্বারূঢ়
দেবকে আশ্রিত =দেবাশ্রিত
ট) উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস :
যে তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদ উপসর্গের সঙ্গে পরপদ বিশেষ্য বা বিশেষনের সমাস হয় তাকে উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস বলে।
☆ উপসর্গ তৎপুরুষ সমাসকে প্রাদি সমাস বলে কেন?
প্রাদি শব্দকে ভাঙলে পাওয়া যায় – ‘প্র+আদি’। অর্থাৎ উপসর্গ তৎপুরুষ সমাসে প্র, প্রতি, উপ, অনু প্রভৃতি উপসর্গের সাথে কৃদন্ত পদ বা নাম পদের সমাস হয় বলে উপসর্গ তৎপুরুষ সমাসকে প্রাদি সমাস বলে।
☆ উপসর্গ তৎপুরুষ সমাসকে চেনার উপায় কী?
(ক) সমস্তপদের প্রথমেই উপসর্গ আছে কিনা দেখে নাও।
(খ) পরপদে বিশেষ্য বা বিশেষন আছে কিনা দেখে নাও।
যদি থাকে, তবে উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস হবে।
★ দ্বিগু সমাস ★
দ্বিগু শব্দের অর্থ কী?
‘দ্বিগু’ শব্দের অর্থ হল – দুই গরুর সমাহার বা দুটি গরুর বিনিময়ে কেনা।
দ্বিগু সমাসের নাম দ্বিগু সমাস হল কেন?
‘দ্বিগু’ শব্দটি ‘দ্বি (দুই) গু (গরু)র বিনিময়ে ক্রীত’ – পদগুলির একপদীকরণে সৃষ্টি। শব্দটির পূর্বপদ (দ্বি) সংখ্যাবাচক বিশেষণ এবং পরবর্তী পদ (গু) বিশেষ্য, পরোক্ষভাবে শব্দটিতে সমাহার বা সমষ্টি অর্থ বর্তমান এবং উত্তরপদের অর্থ প্রধান, শব্দটি গঠনের এই বৈশিষ্ট্যগুলি এই শ্রেনীর সমাসে বর্তমান। তাই দ্বিগু শব্দানুসারে এই সমাসের নাম দ্বিগু সমাস।
দ্বিগু সমাস :
পূর্বপদটি যখন সংখ্যাবাচক বিশেষণ, উত্তরপদটি বিশেষ্য হয় আর সমস্তপদটির দ্বারা কোনো সমষ্টি/সমাহার বোঝায় তাকে দ্বিগু সমাস বলে |
উদাহরণ::—
দুইটি গোরুর সমাহারে ক্রীত=দ্বিগু
চতুঃ (চার) অক্ষরের সমাহার= চতুরক্ষর
ত্রি প্রান্তরের সমাহার= ত্রিপ্রান্তর > তেপান্তর
সপ্ত ঋষির সমাহার = সপ্তর্ষি
সপ্ত অহ(দিন) এর সমাহার= সপ্তাহ
** দ্বিগু সমাসে সমস্তপদটি কখনও ‘আ’ কারান্ত , কখনও ‘ঈ’ কারান্ত হয় |
যেমন—
ত্রি ফলের সমাহার = ত্রিফলা
পঞ্চ বটের সমাহার = পঞ্চবটী
শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী |
পূর্বপদটি যখন সংখ্যাবাচক বিশেষণ, উত্তরপদটি বিশেষ্য হয় আর সমস্তপদটির দ্বারা কোনো সমষ্টি/সমাহার বোঝায় তাকে দ্বিগু সমাস বলে |
উদাহরণ::—
দুইটি গোরুর সমাহারে ক্রীত=দ্বিগু
চতুঃ (চার) অক্ষরের সমাহার= চতুরক্ষর
ত্রি প্রান্তরের সমাহার= ত্রিপ্রান্তর > তেপান্তর
সপ্ত ঋষির সমাহার = সপ্তর্ষি
সপ্ত অহ(দিন) এর সমাহার= সপ্তাহ
** দ্বিগু সমাসে সমস্তপদটি কখনও ‘আ’ কারান্ত , কখনও ‘ঈ’ কারান্ত হয় |
যেমন—
ত্রি ফলের সমাহার = ত্রিফলা
পঞ্চ বটের সমাহার = পঞ্চবটী
শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী |
শ্রেণিবিভাগ :
দ্বিগু সমাস দুই প্রকার।যথা :
ক) তদ্বিতার্থক দ্বিগু
খ) সমাহার দ্বিগু
ক) তদ্বিতার্থক দ্বিগু : যে দ্বিগু সমাসে তদ্ধিত প্রত্যয় নিষ্পন্ন পদ গঠিত হয়, তাকে তদ্বিতার্থক দ্বিগু সমাস বলে ।
দুই গোরুর মূল্যে কেনা= দ্বিগু।
এক দুই তিন পাঁচ সাত বা নয়টি কড়ির মূল্যে কেনা এমন= এককড়ি, দুকড়ি, তিনকড়ি, পাঁচকড়ি, সাতকড়ি, ন’কড়ি।
খ) সমাহার দ্বিগু : যে দ্বিগু সমাসে এককালে অনেক বস্তু বা ব্যক্তির সমাহার বা সমষ্টি বোঝায়, তাকে সমাহার দ্বিগু সমাস বলে ।
সপ্ত অহের সমাহার = সপ্তাহ
নব রত্নের সমাহার = নবরত্ন
♡দ্বিগু সমাস কীভাবে চিনবেন জানেন?
আচ্ছা, দ্বিগু শব্দের “দ্বি ” মানে কী? দ্বিতীয় শব্দে “দ্বি ” আছে না? আমরা ২ বুঝাতে “দ্বি ” শব্দটি ব্যবহার করি। ২ মানে কী? একটি সংখ্যা। তাহলে যে শব্দে সংখ্যা প্রকাশ পাবে এখন থেকে সেটাকেই “দ্বিগু ” সমাস বলে ধরে নিবেন। যেমন পরীক্ষায় আসলো শতাব্দী কোন সমাস? আচ্ছা শতাব্দী মানে হল শত অব্দের সমাহার। অর্থাৎ প্রথমেই আছে “শত ” মানে একশ, যা একটি সংখ্যা। সুতরাং এটি দ্বিগু সমাস। একইভাবে ত্রিপদী ( তিন পদের সমাহার)এটি ও দ্বিগু সমাস। কারণ এখানে ও একটি সংখ্যা (৩) আছে। এবার যেকোন ব্যাকরণ বই নিয়ে দ্বিগু সমাসের যত উদাহরন আছে সব এই সুত্রের সাহায্যে মিলিয়ে নিন।
★অব্যয়ীভাব সমাস ★
পূর্বপদ অব্যয়ের সাথে পরপদ বিশেষ্যের যে সমাস হয় , তাকে এই সমাস বলে |
** অব্যয়ের অর্থই প্রধান এবং সমস্তপদটি অব্যয়ের ভাবপ্রাপ্ত হয় | তাই নাম অব্যয়ীভাব সমাস |
** বিভিন্ন অর্থে এই অব্যয়ীভাব সমাস হয় |
যেমন :
১) অভাব অর্থে—-
উদাহরণ :-
ভিক্ষার অভাব= দুর্ভিক্ষ
মিলের অভাব= গরমিল
হায়ার (লজ্জার) অভাব= বেহায়া
২) সামীপ্য / নিকট অর্থে —–
উদাহরণ:–
কূলের সমীপে= উপকূল
অক্ষির সমীপে= সমক্ষ
কণ্ঠের সমীপে = উপকণ্ঠ
উদাহরণ:–
কূলের সমীপে= উপকূল
অক্ষির সমীপে= সমক্ষ
কণ্ঠের সমীপে = উপকণ্ঠ
৩) বীপ্সা অর্থে ——
উদাহরণ:–
জনে জনে = প্রতিজন
দিনে দিনে =প্রতিদিন
রোজ রোজ = হররোজ
উদাহরণ:–
জনে জনে = প্রতিজন
দিনে দিনে =প্রতিদিন
রোজ রোজ = হররোজ
৪) অনতিক্রম অর্থে —-
উদাহরণ:–
বিধিকে অতিক্রম না করে = যথাবীধি
শাস্ত্রকে অতিক্রম না করে= যথাশাস্ত্র
রীতিকে অতিক্রম না করে = যথারীতি
ক্রমকে অতিক্রম না করে = যথাক্রম
উদাহরণ:–
বিধিকে অতিক্রম না করে = যথাবীধি
শাস্ত্রকে অতিক্রম না করে= যথাশাস্ত্র
রীতিকে অতিক্রম না করে = যথারীতি
ক্রমকে অতিক্রম না করে = যথাক্রম
৫) সাদৃশ্য অর্থে—–
উদাহরণ:–
বনের সদৃশ= উপবন
ভাষার সদৃশ = উপভাষা
কথার সদৃশ = উপকথা
উদাহরণ:–
বনের সদৃশ= উপবন
ভাষার সদৃশ = উপভাষা
কথার সদৃশ = উপকথা
৬) সীমা / ব্যাপ্তি অর্থে ——
উদাহরণ:–
আদি হইতে অন্ত পর্যন্ত= আদ্যন্ত
মৃত্যু পর্যন্ত = আমৃত্যু
বাল্য হইতে = আবাল্য
উদাহরণ:–
আদি হইতে অন্ত পর্যন্ত= আদ্যন্ত
মৃত্যু পর্যন্ত = আমৃত্যু
বাল্য হইতে = আবাল্য
৭) ক্ষুদ্রতা অর্থে —–
উদাহরণ:–
ক্ষুদ্র শাখা= প্রশাখা
ক্ষুদ্র নদী = উপনদী
ক্ষুদ্র জাতি = উপজাতি
উদাহরণ:–
ক্ষুদ্র শাখা= প্রশাখা
ক্ষুদ্র নদী = উপনদী
ক্ষুদ্র জাতি = উপজাতি
৮) যোগ্যতা অর্থে–—
উদাহরণ:–
রূপের যোগ্য = অনুরূপ
গুণের যোগ্য = অনুগুণ
উদাহরণ:–
রূপের যোগ্য = অনুরূপ
গুণের যোগ্য = অনুগুণ
৯) সম্মুখ অর্থে—-
উদাহরণ:—
অক্ষির সম্মুখে= প্রত্যক্ষ
কূলের সম্মুখে= অনুকূল
উদাহরণ:—
অক্ষির সম্মুখে= প্রত্যক্ষ
কূলের সম্মুখে= অনুকূল
১০) পশ্চাৎ অর্থে—-
উদাহরণ:–
রাগের পশ্চাৎ =অনুরাগ
গমনের পশ্চাৎ= অনুগমন
রণনের পশ্চাৎ = অনুরণন
উদাহরণ:–
রাগের পশ্চাৎ =অনুরাগ
গমনের পশ্চাৎ= অনুগমন
রণনের পশ্চাৎ = অনুরণন
১১) বিরুদ্ধ / প্রতিবাদ অর্থে —–
উদাহরণ:–
কূলের বিরুদ্ধে = প্রতিকূল
ক্রিয়ার বিপরীতে =প্রতিক্রিয়া
পক্ষের বিরুদ্ধে = প্রতিপক্ষ
উদাহরণ:–
কূলের বিরুদ্ধে = প্রতিকূল
ক্রিয়ার বিপরীতে =প্রতিক্রিয়া
পক্ষের বিরুদ্ধে = প্রতিপক্ষ
১২) বিবিধ অর্থে ——
উদাহরণ:–
পিতামহের পূর্ব= প্রপিতামহ
দস্তুর অনুযায়ী = দস্তুরমতো
হীন দেবতা = উপদেবতা
মুখের অভিমুখে = সম্মুখ
আত্মাকে অধিকার করিয়া= অধ্যাত্ম
উদাহরণ:–
পিতামহের পূর্ব= প্রপিতামহ
দস্তুর অনুযায়ী = দস্তুরমতো
হীন দেবতা = উপদেবতা
মুখের অভিমুখে = সম্মুখ
আত্মাকে অধিকার করিয়া= অধ্যাত্ম
★ অলোপ / অলুক সমাস ★
সমাসবদ্ধ পদ গঠনের পরও যে সমস্ত সমাসে , পূর্বপদের বিভক্তিচিহ্নের কোনো লোপ ঘটে না, তাকে অলোপ বা অলুক সমাস বলে |
** ‘লুক’ কথার অর্থ হল ‘লোপ’ |
যেমন–
মনের মানুষ = মনের মানুষ ( বিভক্তির লোপ হয়নি ) |
শ্রেণিবিভাগ :
ক) অলুক দ্বন্দ্ব সমাস :::
উদাহরণ :-
হাটে ও বাজারে = হাটেবাজারে
বনে ও জঙ্গলে = বনেজঙ্গলে
চোখে ও মুখে = চোখেমুখে
আগে ও পিছে = আগেপিছে
খ) অলুক তৎপুরুষ সমাস
অ) অলুক করণ তৎপুরুষ সমাস :
উদাহরণ :-
হাতে কাটা = হাতেকাটা
কলে ছাঁটা = কলেছাঁটা
উদাহরণ :-
হাতে কাটা = হাতেকাটা
কলে ছাঁটা = কলেছাঁটা
আ) অলুক নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস :
উদাহরণ :-
ভুলের (ভুলের জন্য) মাশুল = ভুলের মাশুল
পেটের (পেটের জন্য) খোরাক = পেটের খোরাক
উদাহরণ :-
ভুলের (ভুলের জন্য) মাশুল = ভুলের মাশুল
পেটের (পেটের জন্য) খোরাক = পেটের খোরাক
ই) অলুক অপাদান তৎপুরুষ সমাস ::::
উদাহরণ :-
বিদেশ থেকে আনা = বিদেশ থেকে আনা ( বিভক্তিস্থানীয় অনুসর্গ ‘থেকে’ অলুপ্ত থেকেছে )
চোখের (চোখের থেকে) জল = চোখের জল
ঈ) অলুক অধিকরণ তৎপুরুষ সমাস ::::
উদাহরণ :–
দিনে ডাকাতি = দিনেডাকাতি
অঙ্কে কাঁচা = অঙ্কেকাঁচা
উ) অলুক সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস ::::
উদাহরণ :–
চোখের বালি = চোখের বালি
মামার বাড়ি = মামার বাড়ি
ঊ) অলুক উপপদ তৎপুরুষ সমাস ::::
উদাহরণ :–
অন্তে বাস করে যে = অন্তেবাসী
কলেজে পড়ে যে = কলেজেপড়া
গ) অলুক বহুব্রীহি সমাস :
উদাহরণ :–
গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুস্থানে = গায়েহলুদ
হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = হাতেখড়ি
মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = মুখেভাত
উদাহরণ :–
গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুস্থানে = গায়েহলুদ
হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = হাতেখড়ি
মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে = মুখেভাত
** এই সমাসকে ‘অনুষ্ঠানবাচক বহুব্রীহি’ সমাস ও বলে |
★নিত্য সমাস★
যে সমাসে সমস্যমান পদগুলি নিত্য বা সর্বদাই সমাসবদ্ধ থাকে, কোনো ব্যাসবাক্য হয় না বা ব্যাসবাক্য করতে গেলে অন্য পদের প্রয়োজন হয় ,তাকে নিত্য সমাস বলে |
যেমন–
কাঁচা কলা = কাঁচকলা
এখানে ‘কাঁচকলা’ নিত্যসমাস, কারণ ‘কাঁচকলা’ একটি বিশেষ ধরণের কলা বোঝায় | তাই এর ব্যাসবাক্য কখনই ‘কাঁচা যে কলা’ হবে না |
অ) সর্বদাই সমাসবদ্ধ এমন নিত্যসমাস :
উদাহরণ :–
কৃষ্ণসর্প= কৃষ্ণসর্প
দাঁড়কাক = দাঁড়কাক
উদাহরণ :–
কৃষ্ণসর্প= কৃষ্ণসর্প
দাঁড়কাক = দাঁড়কাক
আ) ‘অন্য’ যোগে নিত্য সমাস :
উদাহরণ :–
অন্য মত = মতান্তর
অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর
ই) ‘কেবল’ বা ‘শুধু’ যোগে নিত্য সমাস :
উদাহরণ :–
কেবল শোনা = শোনামাত্র
শুধু চিহ্ন =চিহ্নমাত্র
ঈ) ‘তুল্য’ যোগে নিত্য সমাস :::::
উদাহরণ :—
বজ্রের তুল্য = বজ্রসন্নিভ
জবাকুসুমের তুল্য = জবাকুসুমসঙ্কাশ
★বাক্যাশ্রয়ী সমাস ★
কোনো বাক্য বা বাক্যখণ্ড কে সুসংহতরূপে একটি শব্দে পরিণত করে, তাকে বিশেষ্য / বিশেষণের রূপ দিলে অথবা কোনো সমাসবদ্ধ পদকে আশ্রয় করে, একটি বাক্যের অর্থ প্রকাশ পেলে , তাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে |
উদাহরণ :—
গল্পকে বলা (কর্ম তৎপুরুষ), তার প্রতিযোগিতা (সম্বন্ধ তৎপুরুষ) = গল্পবলা-প্রতিযোগিতা
সবুজকে বাঁচাও (কর্ম তৎপুরুষ) , তার জন্য কমিটি (নিমিত্ত তৎপুরুষ) = সবুজ-বাঁচাও-কমিটি
★অসংলগ্ন সমাস ★
সাধারণত সমাসবদ্ধ পদকে এক মাত্রায় লেখা হয় | তবে বাংলায় কিছু সমাসবদ্ধ পদকে বিচ্ছিন্ন ভাবেও লেখা হয়ে থাকে , সেগুলিকে অসংলগ্ন সমাস বলে |
উদাহরণ :—-
পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতি
চায়ের দোকান
✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍✍
২০ টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর:
১.সমাস কেন পড়ব?
ব্যাকরণ যেমন ভাষার বিভিন্ন কৌশলকে বিশ্লেষণ করে থাকে, তেমনি ব্যাকরণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল, ভাষাকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করে তোলা। সেই লক্ষ্যে বাক্যের অন্তর্গত বিভিন্ন পদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে বাক্যকে সুন্দর করে তুলতে, আমরা ব্যাকরণের একটি অন্যতম প্রক্রিয়া, সমাস সমন্ধে পড়ব, জানব ও নির্ণয় শিখব।
২. সমাস শব্দের অর্থ কী?
সমাস শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল – “এক হওয়া” বা সংক্ষেপ।
ব্যাকরণসম্মত অর্থ হল সংক্ষিপ্তকরণ বা একপদীকরণ।
৩. সমাস শব্দের বিভিন্ন বিশ্লেষণ কী?
ক) প্রত্যয় : সম্-অস+অ(ঘঞ)
খ) সন্ধি : সম+আস
গ) সমাস : সম্(এক) আস(হওয়া)= এক হওয়া।
৪. সমাসের কাজ কী?
ক) সংক্ষিপ্তকরণ অর্থাৎ ভাষার শব্দ (পদ) বাহুল্যকে বর্জন করে ভাষাকে ঘনপিনদ্ধ করা ও অর্থব্যঞ্জক করে তোলা।
খ) সৌন্দর্য বৃদ্ধি অর্থাৎ নতুন নতুন শব্দ বা পদ সৃষ্টি করে ভাষাকে সৌন্দর্য মন্ডিত করে তোলা।
গ) পদের সাথে পদের সংহতি স্থাপন করা।
৫. সমাসের ফলে ভাষা সমৃদ্ধি হয় কেন?
যে কোনো ভাষারই সম্পদ হল তার শব্দ ভাণ্ডার অর্থাৎ শব্দ সংখ্যা। সমাসে অর্থ সমন্ধযুক্ত দুটি শব্দ বা পদ মিলে অথবা একটি উপসর্গ ও একটি পদ নিয়ে নতুন নতুন শব্দ তৈরি হয়। এইভাবে সমাস ভাষাকে সমৃদ্ধ করে তার শব্দ সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
৬. সন্ধি ও সমাসের মধ্যে তুলনা করো।
সাদৃশ্য : বাক্ সীমিত ও সৌন্দর্য সৃষ্টি।
বৈসাদৃশ্য : ক ) সন্ধি বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলনে হয় । সমাস পদের সঙ্গে পদের মিলনে হয়।
খ) সন্ধিতে মিলন উচ্চারণভিত্তিক। সমাসে মিলন অর্থভিত্তিক।
গ) সন্ধিতে বিভক্তি লোপ পায় না।
সমাসে অলোপ সমাস ছাড়া বিভক্তি লোপ পায়।
৭. সমাস প্রক্রিয়ার বিভিন্ন উপাদান গুলি কী কী?
ক) সমস্যমান পদ।
খ) সমস্ত পদ।
গ) ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহ বাক্য।
৮. সমস্যমান পদ কাকে বলে?
যে সকল পদ একত্রিত হয়ে সমাস সংগঠিত হয়, তাদের প্রত্যেকটি পদকে সমস্যমান পদ বলে। যেমন – বীণা পাণিতে যার = বীণাপাণি। এখনে ‘বীণা’ ‘পাণিতে’ হল সমস্যমান পদ ও ‘যার’ হল সমস্যমান সহায়ক অন্য পদ।
৯. পূর্বপদ কাকে বলে?
পূর্বপদ অর্থাৎ পূর্ববর্তী পদ বা প্রথমে অবস্থিত পদ। (ব্যাসবাক্যে) সমস্যমান পদগুলির মধ্যে যে পদটি প্রথমে বা আগে থাকে, তাকে পূর্বপদ বলে।”বীণা পাণিতে যার” ব্যাসবাক্যে “বীণা” হল পূর্বপদ।
১০. উত্তরপদ কাকে বলে?
উত্তরপদ অর্থাৎ পশ্চাতে অবস্থিত পদ বা পরে (উত্তর) থাকা পদ।
(ব্যাসবাক্যে) সমস্যমান পদগুলির মধ্যে যে পদ পরে থাকে, তাকে উত্তরপদ বা পরপদ বলে।
যেমন – “বীণা পাণিতে যার” ব্যাসবাক্যে পরে অবস্থিত “পাণিতে” হল উত্তরপদ, সেক্ষেত্রে “যার” হল সমস্যমান সহায়ক অন্যপদ।
১১. সমস্তপদ কাকে বলে?
সমাসে একাধিক পদ মিলিত হয়ে যে একটি নতুন পদ গঠন করে, তাকে সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ বলে। যেমন – ‘শঙ্খের মতো ধবল’= ‘শঙ্খধবল’। এখানে সমস্যমান পদগুলি মিলিত হয়ে ‘শঙ্খধবল’ পদটি গঠিত হয়েছে – যা সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ।
১২. ব্যাসবাক্যের নাম ব্যাসবাক্য কেন?
ব্যাসবাক্য শব্দের অর্থ হল বিস্তৃত বাক্য বা বিশ্লেষণকারী বাক্য। যেহেতু এই শ্রেণির বাক্যের দ্বারা সমস্তপদকে বিশ্লেষণ করা যায় বা সমস্তপদের মূল অর্থ বিশ্লেষন করে পাওয়া যায়, তাই এই বাক্যের নাম ব্যাস বাক্য।
১৩. ব্যাস বাক্যের নাম বিগ্রহ বাক্য কেন?
‘বিগ্রহ’ শব্দের অর্থ বিশেষ রূপ বা মূর্তি ধারণ করা, যেহেতু ব্যাসবাক্য সমস্তপদের মূল অর্থকে বিশ্লেষণ করার জন্য বা নির্ণয় করার জন্য বিশেষ রূপ বা মূর্তি ধারণ করে বাক্য গঠন করে, তাই ব্যাসবাক্যের নাম বিগ্রহ বাক্য।
১৪. পূর্বপদের পরনিপাত কী?
যখন ব্যাসবাক্যে ব্যবহৃত পূর্বপদ ও উত্তরপদগুলি সমস্তপদে নিজেরদের স্থান বদলে বসে, তখন ব্যাকরণে তাকে পূর্বপদের পরনিপাত বলে।
যেমন – সেদ্ধ যে আলু = আলুসেদ্ধ। এখানে পূর্বপদ ‘সেদ্ধ’ সমস্তপদের পরে বসেছে ‘আলুসেদ্ধ’।
১৫. কে সমাসকে সুনিপুণ গৃহিণীর সাথে তুলনা করেছেন?
→রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১৬. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমাসকে সুনিপুণ গৃহিণীর সাথে তুলনা করেছেন কেন?
কোনো গৃহিণী যেমন তার সুনিপুণ গৃহিণীপনার সাহায্যে বিভিন্ন উপাদানের দ্বারা খাদ্যবস্তু তৈরি করে এবং বিভিন্ন স্বভাবের ব্যক্তিবর্গকে একসূত্রে আবদ্ধ রাখে সমাস প্রক্রিয়াও তেমনি বিভিন্ন অর্থযুক্ত (যদি অর্থগত সম্বন্ধ থাকে) শব্দ বা পদ নিয়ে নতুন শব্দ বা পদ গঠন করে। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমাসকে সুনিপুণ গৃহিণীপনার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
১৭. সমাস শব্দটি ব্যাকরণে কেন ব্যবহার করা হয়?
‘সমাস’ শব্দের অর্থ হল এক হওয়া বা সংক্ষেপ কিংবা সংক্ষিপ্তকরণ। ব্যকরণের এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় অর্থ সম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদ সংক্ষিপ্ত হয়ে অর্থব্যঞ্জক ও সৌন্দর্যমণ্ডিত নতুন নতুন পদ বা শব্দ গঠন করে, উক্ত প্রক্রিয়ার নামকরণের জন্য ‘সমাস’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
১৮. সংস্কৃতে সমাসের কয়টি প্রকারভেদ লক্ষ্য করা যায় ?
চারটি প্রকার দেখা যায়।
ক) দ্বন্দ্ব
খ) তৎপুরুষ
গ) বহুব্রীহি
ঘ) অব্যয়ীভাব
১৯. ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে সমাসের শ্রেণিবিভাগ লিখুন?
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় সমাসের তিনটি ভাগের করা উল্লেখ করেছেন।
ক) সংযোগমূলক সমাস – দ্বন্দ্বসমাস।
খ) ব্যাখ্যামূলক সমাস – কর্মধারয়, তৎপুরুষ, দ্বিগু সমাস।
গ) বর্ণনামূলক সমাস – বহুব্রীহিসমাস।
২০.আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পদের অর্থগত দিক থেকে সমাসকে কয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে?
চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
ক) উভয় পদের অর্থপ্রধান – দ্বন্দ্বসমাস।
খ) পরপদের অর্থপ্রধান – তৎপুরুষ, কর্মধারয়, দ্বিগু।
গ) পূর্বপদের অর্থপ্রধান – অব্যয়ীভাব সমাস।
ঘ) অন্যপদের অর্থপ্রধান – বহুব্রীহি সমাস।
☆★☆★☆★☆★☆★☆★☆★☆★
সমাস অনলাইন টেস্ট
Comments are closed.