বাংলা ছাত্রছাত্রীদের পাশে সারাক্ষণ

বহুরূপী- সুবোধ ঘোষ | Bohurupi – Subodh Ghosh | মাধ্যমিক – গল্প | প্রশ্ন ও আলোচনা | BanglaSahayak.com

লেখক পরিচিতি:

সুবোধ ঘোষ (জন্ম: ১৯০৯ – মৃত্যু: ১০ মার্চ, ১৯৮০) বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক। বিহারের হাজারিবাগে ১৯০৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আদি নিবাস বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের বহর গ্রামে। তার লেখালেখির কালপর্ব ১৯৪০ থেকে ১৯৮০।প্রথম গল্প ‘অযান্ত্রিক’। এছাড়া বিখ্যাত গল্পগুলি হল- ‘ফসিল’,’থির বিজুরি’, ’সুন্দরম্’ ‘জতুগৃহ’ ‘পরশুরামের কুঠার ‘ ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস- তিলাঞ্জলি (১৯৪৪), গঙ্গোত্রী (১৯৪৭), ত্রিযামা (১৯৫০), শতকিয়া (১৯৫৮) ইত্যাদি।


উৎস : গল্প সমগ্র তৃতীয় খণ্ড।


বিষয়-সংক্ষেপ :

বহুরূপী শব্দের অর্থ বহুরুপ ধারণ করে যে এই গল্পে মূল চরিত্র হরিদা একজন বহুরূপী ।অত্যন্ত গরিব হরিদার ধরাবাঁধা কাজ পছন্দ ছিল না ।তাই বহুরূপী সেজে মাঝে ঘুরে বেড়াতো এবং কিছু পয়সা রোজগার হতো ।কখনো পাগল কখনো বা পুলিশ কখনো বাউল কখনো কাপালিক এমনকি বাইজির রূপক সে ধারণ করেছে। এরকমভাবেই জগদীশ বাবুর কাছে একদিন বিরাগী সেজে হাজির হন হরিদা। বিরাগী সন্ন্যাসীর সাজ পোশাক দেখে জগদীশবাবু এমনকি তার বন্ধুরাও তাকে চিনতে পারেনি। হরিদা বহুরূপী চরিত্রটির সঙ্গে এতটাই একাত্ম হয়ে যেত যে তাকে বহুরূপী বলে কেউ বুঝতে পারত না । বিরাগি সন্ন্যাসীর সাজেও বিরাগী চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছিলেন হরিদা। তাই জগদীশবাবু তাকে তীর্থ ভ্রমণের জন্য অনেক টাকা দিতে চাইলেও তা সহজেই ফিরিয়ে দেয়।



১। সঠিক বিকল্পটি নির্বাচন করো :

১. বাইজির ছদ্মবেশে হরিদার রোজগার হয় — [মাধ্যমিক – ২০১৭]

(ক) আট টাকা দশ আনা

(খ) আট টাকা আট আনা

(গ) দশ টাকা চার আনা

(ঘ) দশ টাকা দশ আনা ।

উত্তর: (ক) আট টাকা দশ আনা


২. সপ্তাহে হরিদা বহুরূপী সেজে বাইরে যান — [মাধ্যমিক – ২০১৮]

(ক) পাঁচদিন

(খ) চারদিন

(গ) একদিন

(ঘ) দুদিন ।

উত্তর : (গ) একদিন


৩. বিরাগী সন্ন্যাসীর ঝোলার ভেতর যে বইটি ছিল —

(ক) গীতা

(খ) রামায়ণ

(গ) মহাভারত

(ঘ) কোনোটিই নয়

উত্তর: ক) গীতা


৪. নকল পুলিশ হরিদাকে মাস্টারমশাই কত টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন

(ক) আট আনা

(খ) দশ আনা

(গ) বারো আনা

(ঘ) দু’টাকা

উত্তর: (ক) আট আনা


৫. ‘খুব হয়েছে হরি, এই বার সরে পড়ো । অন্যদিকে যাও ।’ — একথা কে বলেছে ?

(ক) ভবতোষ

(খ) অনাদি

(গ) বাস ড্রাইভার কাশীনাথ

(ঘ) জনৈক বাসযাত্রী ।

উত্তর: (গ) বাস ড্রাইভার কাশীনাথ

৬. বিরাগী মতে ‘পরম সুখ’ হল —

(ক) কোনোরূপ রাগ না থাকা

(খ) ঈশ্বর সাধনা করা

(গ) সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া

(ঘ) পরমাত্মার দর্শন লাভ

উত্তর : (গ) সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া

৭. বিরাগীরূপী হরিদার গায়ে ছিল কেবলমাত্র একটি —

(ক) জামা (খ) পাঞ্জাবি

(গ) শাল (ঘ) উত্তরীয় ।

উত্তর : (ঘ) উত্তরীয় ।


৮. জগদীশবাবুর কত টাকার সম্পত্তি আছে বলে কাহিনীতে বলা আছে?

ক) ১১ লক্ষ

খ) ১২ লক্ষ

গ) ১৩ লক্ষ

ঘ) ১০ লক্ষ

উত্তর: ক) ১১ লক্ষ


৯. জগদীশবাবু ‘জোর করে সন্ন্যাসীর ঝোলার ভেতরে ফেলে দিলেন’—

(ক) দশ টাকার একটা নোট

(খ) একশো টাকার একটা নোট

(গ) পঞ্চাশ টাকার একটা নোট

(ঘ) পাঁচশো টাকার একটা নোট ।

উত্তর : (খ) একশো টাকার একটা নোট


১০. ‘আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়ো ?’ — বক্তা কাকে এ কথা বললেন ?

(ক) ভবতোষকে

(খ) জগদীশবাবুকে

(গ) দয়ালবাবুকে

(ঘ) স্কুলের মাস্টারমশাইকে ।

উত্তর: (খ) জগদীশবাবুকে


১১. ‘সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস ।’ — দুর্লভ জিনিসটি কী ?

(ক) সন্ন্যাসীর আশীর্বাদ

(খ) সন্ন্যাসীর দেখা পাওয়া

(গ) সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো

(ঘ) সন্ন্যাসীর উপদেশ ।

উত্তর: গ) সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো

১২. বহুরূপী হরিদাকে জগদীশবাবু কত টাকার প্রনামি দেন?

ক) একশো টাকা

খ) একশো এক টাকা

গ) একশো পাঁচ টাকা

ঘ) একশো দশ টাকা

উত্তর: খ) একশো এক টাকা


একইরকমভাবে —


১৩. সন্ন্যসী সারাবছর কী খান — একটি হরীতকী


১৪. পুলিশ সেজে হরিদা স্কুলের কতজন ছাত্রকে ধরেছিলেন–উ :-চারজন


১৪.জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর কাঠের খড়মে লাগিয়েছিলেন–উঃ- সোনার বোল


১৬. “ও সব সুন্দর সুন্দর এক-একটি বঞ্চনা” –ও সব হল —-উ : ধন, জন ও যৌবন


১৭.হরিদার ছোট্ট ঘরে সন্ধ্যাবেলায় আড্ডা দিত–উঃ – চারজন


১৮. খুব হয়েছে হরি এইবার সরে পরো – বক্তা — বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ


১৯. হরিদার ছোট্ট ঘরটি ছিল– উ:- শহরের সবচেয়ে সরু গলির ভিতরে।


২০. হরিদার জীবনের পেশা ছিল–উ:-বহুরূপী সাজা





২। অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর :


১. জগদীশবাবু তীর্থভ্রমণের জন্য কত টাকা বিরাগীকে দিতে চেয়েছিলেন ? [মাধ্যমিক-২০১৭]


উঃ- জগদীশবাবু তীর্থভ্রমণের জন্য বিরাগীকে একশো এক টাকা দিতে চেয়েছিলেন ।


২.”হরিদার জীবন এইরকম বহুরূপের খেলা দেখিয়েই একরকম চলে যাচ্ছে ।” — কী রকম খেলা দেখিয়ে হরিদার জীবন চলে যাচ্ছে ? [মাধ্যমিক-২০১৮]


উঃ- বিচিত্র ছদ্মবেশে বহুরূপী সেজে খেলা দেখিয়ে হরিদার জীবন চলে যাচ্ছে ।


৩. “সপ্তাহে বড়োজোর একটা দিন বহুরূপী সেজে পথে বের হন হরিদা” — ‘বহুরূপী’ কাকে বলে ? [মাধ্যমিক-২০১৯]


উঃ- ‘বহুরুপী’ হল একধরনের লোকশিল্পী যারা বিবিধ বেশে সজ্জিত হয়ে নানা রূপ ধারণ করে জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জন করে ।


৪. “আক্ষেপ করেন হরিদা”- হরিদার আক্ষেপের কারণ কী ?


উত্তর: সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পে হিমালয়ের গুহা থেকে আসা সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিতে না পারার জন্য হরিদা আক্ষেপ করেন।


৫. “বাঃ, এ তো বেশ মজার ব্যাপার!” – মজার ব্যাপারটা কী ?


উত্তর: জগদীশ বাবু একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে যেভাবে সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন সেই ব্যাপারটিকে মজার ব্যাপার বলা হয়েছে।



৬. “নইলে আমি শান্তি পাব না”—বক্তা কেন শান্তি পাবেন না ?


উত্তর : সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পে বক্তা জগদীশবাবু বিরাগী সন্ন্যাসী কিছু উপদেশ শুনিয়ে না গেলে শান্তি পাবেন না।


৭. “ও সব সুন্দর সুন্দর এক-একটি বঞ্চনা” –ও সব কী ?


উত্তর: সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পে ওসব বলতে ধন, জন ও যৌবনকে বোঝানো হয়েছে।


৮. “আপনার কাছে এটা আমার প্রাণের অনুরোধ”– প্রাণের অনুরোধটি কী ?


উত্তর: সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পে জগদীশবাবু বিরাগী সন্ন্যাসীকে তার বাড়িতে কয়েকটা দিন থাকতে বলেছিলেন। এটিই হল প্রাণের অনুরোধ।



৯. “জগদীশবাবুর দুই বিস্মিত চোখ অপলক হয়ে গেল”—কী দেখে জগদীশবাবুর এমন অবস্থা হয়েছিল?


উত্তর : জগদীশবাবু সিঁড়ির দিকে আদুড় গায়ে সাদা উত্তরীয় পরা এক বিরাগী সন্ন্যাসীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অপলক দৃষ্টিতে চেয়েছিলেন।


১০. “অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না।”—হরিদার কোন্ ভুল অদৃষ্ট কখনাে ক্ষমা করবে না?


উত্তর : ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা বিরাগী সন্ন্যাসী সেজে জগদীশ বাবুর কাছে অনেকগুলো টাকা পেয়েও গ্রহণ করেনি। এখানে টাকা না নেওয়াকে ভুল বলা হয়েছে।


১১. “পরম সুখ কাকে বলে জানেন?”—বক্তা ‘পরম সুখ’ বলতে কী বােঝাতে চেয়েছেন?


উত্তর : সুবােধ ঘােষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পে বিরাগী সন্ন্যাসী সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়াকেই ‘পরম সুখ’ বলে অভিহিত করেছেন।


১২. “কী অদ্ভুত কথা বলেন হরিদা!”—হরিদার কোন্ কথাকে অদ্ভুত মনে হয়েছিল?


উত্তর : হরিদা জানিয়েছিলেন যে, একজন বিরাগী সন্ন্যাসী সেজে টাকা-ফাকা স্পর্শ করলে তার ঢং নষ্ট হয়ে যায়। তার এই কথাকে গল্প লেখকের অদ্ভুত মনে হয়েছিল।


১৩. “এই শহরের জীবনে মাঝে মাঝে বেশ চমৎকার ঘটনা সৃষ্টি করেন বহুরূপী হরিদা।”—“বহুরূপী’ গল্পে হরিদার বহুরূপী সাজার কয়েকটি উল্লেখ করাে।


উত্তর : সুবােধ ঘােষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা পাগল, বাইজি, বাউল, কাপালিক, পুলিশ, কাবুলিওয়ালা, ফিরিঙ্গি কেরামিন সাহেব, সন্ন্যাসী প্রভৃতি সেজে উপার্জন করেন।



১৪. “মাঝে মাঝে সত্যিই উপােস করেন হরিদা।”—হরিদা মাঝে মাঝে উপােস করেন কেন?


উত্তর : হরিদা সপ্তাহে একদিন বহুরূপী সেজে রােজগার করত । সামান্য রােজগারে তার এক সপ্তাহ চলত না। তাই হরিদাকে মাঝে মাঝেই সত্যিই উপােস করে দিন কাটাতে হয়।


১৫. “এবার মারি তো হাতি লুঠি তো ভাণ্ডার।”–কে কোন প্রসঙ্গে বলেছে ?

উত্তর: হরিদা জগদীশ বাবুর বাড়িতে আসা সন্ন্যাসীর গল্প শুনে মতলব আঁটেন। বহুরূপী সেজে জগদীশবাবুর কাছ থেকে অনেক টাকা ঝালিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে একথা বলেছিলেন হরিদা।



৩। ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর : মান-৩


১. হরিদা পুলিশ সেজে কোথায় দাঁড়িয়েছিলেন ? তিনি কীভাবে মাস্টারমশাইকে বোকা বানিয়েছিলেন ? [মাধ্যমিক-২০১৭]


উত্তর: সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পের মুখ্য চরিত্র, বহুরূপী হরিদা পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে দাঁড়িয়েছিলেন ।

হরিদা পুলিশ সেজে স্কুলের চারজন ছাত্রকে আটক করেছিলেন যারা লিচুবাগানে অনধিকার প্রবেশ করেছিল । ছেলেগুলো ভয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে । অবশেষে বিদ্যালয়ের মাস্টারমশাই পুলিশবেশী হরিদার স্বরূপ না বুঝতে পেরে তাকে অনুরোধ করেন ছেলেদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য এবং আট আনা উপঢৌকন দিয়ে ছাত্রদের মুক্ত করেন । এইভাবেই হরিদা তার সুনিপুণ সাজসজ্জা ও অভিনয় কৌশলের মাধ্যমে মাস্টারমশাইকে বোকা বানিয়ে ছিলেন ।


২. ঠিক দুপুরবেলাতে একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠল আতঙ্কের হল্লাটির পরিচয় দাও?


উত্তর : আতঙ্কের হল্লা : সুবােধ ঘােষের বহুরূপী গল্পে হরিদা মাঝে মাঝে বহুরূপী সাজতেন। এক দুপুরবেলা চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছের এক পাগলকে দেখা গিয়েছিল কটকটে লাল চোখে সেই পাগলের মুখ থেকে লালা ঝরছিল। তার কোমরে ছেড়া কম্বল। আর গলায় টিনের কৌটোর মালা জরানাে। পাগলটি থান ইট নিয়ে বাসে বসা যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল। তাকে দেখে যাত্রীরা চেচিয়ে উঠেছিল। কেউ কেউ দু-একটা পয়সা তার সামনে ফেলে দিচ্ছিল। কেউ চিনতে না পারলেও কাশীনাথ চিনতে পেরেছিল। পাগলটি আসলে হরিদা। হরিদা পাগল সেজে সবাইকে ভয় দেখাচ্ছিল। আসলে বহুরূপী ছদ্মবেশ সেজে।


৩. জগদীশবাবুর যে সন্ন্যাসী এসেছিলেন—তার বর্ণনা দাও।


উত্তর : সন্ন্যাসীর বর্ণনা : জগদীশবাবুর বাড়িতে সাতদিন ধরে এক সন্ন্যাসী ছিলেন। খুব উঁচু দলের এই সন্ন্যাসী থাকতেন হিমালয়ের গুহাতে। তিনি সারা বছরে শুধুমাত্র একটি হরীতকী খান। এছাড়া তিনি আর কিছু খেতেন না। অনেকে মনে করত সন্ন্যাসীর বয়স ছিল হাজার বছরের বেশি তার পায়ের ধুলাে ছিল অত্যন্ত দুর্লভ জিনিস। একমাত্র জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলাে পেয়েছিলেন।


৪. হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে—নাটকীয় বৈচিত্র্য কী?


উত্তর : নাটকীয় বৈচিত্র্য : গরীব হরিদা নিজের ছােটো করে দিন কাটাত। কোনােদিন খাবার জুটত। কোনােদিন জুটত না। প্রতিদিনের এই একঘেয়ে জীবনে হরিদার একট নাটকীয় বৈচিত্র্য ছিল। হরিদা মাঝে মাঝে বহুরুপী সেজে রােজগার করত। সকাল অথবা সন্ধ্যায় বিচিত্র ছদ্মবেশে রাস্তায় বেরিয়ে পরত। যারা চিনতে পারত তাদের মধ্যে কেউ দুই-একটা পয়সা দিত—কেউ বা বিরক্ত হত। বহুরুপী সেজে রাস্তায় বের হওয়া ছিল হরিদার জীবনে নাটকীয় বৈচিত্র্য।


৫. “অদৃষ্ট কখনো হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না।” — হরিদা কী ভুল করেছিল ? কেন সেই ভুল অদৃষ্ট ক্ষমা করবে না বলা হয়েছে?


উত্তর: সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা বিরাগী সন্ন্যাসী সেজে জগদীশবাবুর কাছ থেকে একশ এক টাকা পেয়েও গ্রহণ করেনি। এটাকে ভুল বলা হয়েছে।


হরিদা খুব গরিব মানুষ। বহুরূপী সাজা ছাড়া নির্দিষ্ট পেশা নেই তার। বহুরূপী সেজে সপ্তাহে একদিন সে বের হয় । তাতে যা রোজগার হয় তাতে তার ঠিকমতো সাত দিন চলে না। কিন্তু হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগী সন্ন্যাসী সেজে একশো এক টাকা আদায় করতে পেরেছিলেন। হয়তো হরিদার ভাগ্য হরিদাকে সঙ্গ দিতে চেয়েছিল কিন্তু ব্যক্তিগত সততা ও আদর্শ বোধের কারণে হরিদা সেই টাকা গ্রহণ করেনি। তাই বক্তা অর্থাৎ কথক বলেছেন অদৃষ্ট কখনো হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না।


৪। রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর : মান-৫


১. জগদীশবাবুর বাড়ি হরিদা বিরাগী সেজে যাওয়ার পর যে ঘটনা ঘটেছিল, তা বর্ণনা করো । [মাধ্যমিক-২০১৭]


উত্তর :- বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পে জগদীশবাবু একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি শিক্ষিত, মার্জিত ও ভদ্র, সৌম্য-শান্ত চেহারার অধিকারী, ধনী হলেও কৃপণ । তাঁর জীবনের দুর্বলতা হল অন্ধ ভক্তি । সুখ-শান্তির আশায় সাধু সন্ন্যাসী দেখলেই তাঁদের তিনি তুষ্ট করার চেষ্টা করতেন । সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই বহুরূপী হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন ।

হরিদা শুধুমাত্র পেশাগত জীবনে বহুরুপী নয়, তার ব্যক্তিগত জীবনও নাটকীয় বৈচিত্রে ভরা । তাই জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদারকে আমরা দেখতে পাই । এক স্নিগ্ধ-শান্ত জ্যোৎস্নালোকিত উজ্জ্বল সন্ধ্যায় জগদীশবাবু বারান্দায় চেয়ারে বসেছিলেন । হঠাৎ বারান্দার সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন । তাঁর চোখের পাতা পড়ছিল না । কারণ সিঁড়ির কাছে যিনি দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি জটাধারী, হাতে কমণ্ডলু, চিমটে, মৃগচর্মের আসনসহ গৈরিক বসন পরিহিত কোন সন্ন্যাসী নন, তিনি একজন বিরাগী, যার আদুড় গা এবং তার উপর একটি ধবধবে সাদা উত্তরীয় । পরনে ছোট বহরের থান, মাথার সাদা চুল বাতাসে উড়ছে, ধুলোমাখা হাত-পা, কাঁধে ঝোলা, ঝোলার মধ্যে বই বলতে গীতা । তাঁকে দেখে জগদীশবাবুর মনে হয়েছিল তিনি যেন জগতের সীমার ওপার থেকে হেঁটে এসেছেন । তাঁর শীর্ণ শরীর দেখে মনে হচ্ছিল যেন অশরীরী এবং তার চোখ থেকে ঝরে পড়ছিল উদাত্ত শান্ত এক দৃষ্টি । বলাবাহুল্য তিনি আর কেউ নয়, সন্ন্যাসীবেশী হরিদা । হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগীর ছদ্মবেশে খেলা দেখাতে গিয়ে অভাবী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর দেওয়া সমস্ত সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেন । কথক ও তাঁর বন্ধুরা যখন অভাবী হরিদা প্রণামী না নেওয়ার জন্য হরিদাকে কাঠগোড়ায় তুলেছেন, হরিদা তখন শিল্প ও শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নির্লিপ্তভাবে বলেছেন,

— “তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয় ।”

২. “হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে।” -বহুরূপী হরিদার কর্মকাণ্ডের মধ্যে যেভাবে নাটকীয় বৈচিত্র্য ধরা পড়েছে তার বিবরণ দাও।


উত্তর : প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র হরিদা। হরিদা অত্যন্ত গরিব মানুষ। কিন্তু ধরা বাঁধা ছকে জীবন কাটানো তার পছন্দ ছিল না । তাই অভাবকে সঙ্গী করেই তিনি জীবনের বৈচিত্র্য খুঁজেছেন। একঘেঁয়ে অভাবকে সহ্য করলেও একঘেঁয়ে কাজ করতে তার ভয়ানক আপত্তি। আর এই জন্য হহরিদার উনানের হাড়িতে অনেক সময় শুধু জল ফোটে, ভাত ফোটে না।


হরিদার পেশাগত বহুরূপী জীবনও নাটকীয়তায় ভরপুর । কখনো তিনি উন্মাদ পাগল সেজে চকের বাস্ট্যান্ডে আতঙ্কের হল্লা বাজিয়ে তুলেছেন। আবার কখনোবা রূপসী বাইজি সেজে ঘুঙুরের মিষ্টি শব্দ তুলে সকলকে মোহিত করে তুলেছেন । কখনো আবার বোচকা কাঁধে বুড়ো কাবলিওয়ালা , কখনো হ্যাট কোট প্যান্টালুন পরা ফিরিঙ্গি কেরামিন সাহেব। এরকম অজস্র রূপেই হরিদাকে পাওয়া যেত। এমনকি পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে স্কুলের চারটে ছেলেকে আটক করেছিলেন। স্কুলের মাস্টারমশাইয়ের কাছে আট আনা ঘুষ নিয়ে তবে ছেড়েছিলেন।


হরিদার বিচিত্র এইসব সাজ আর তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ আচরণে মানুষ কখনো হাসত, কখনো তারিফ করত , কখনো বিরক্ত হত। আর হরিদার যা সামান্য বকশিশ জুটত তাতেই তিনি ‘তাঁর ভাতের হাড়ির দাবি মিটিয়ে দিতে চেষ্টা করেন’। এইভাবে হরিদার জীবনে নাটকীয় বৈচিত্র্য আসে এবং একজন যথার্থ বহুরূপীর সাজে নাটকীয় বৈচিত্র্যের পরিচয় দিয়েছেন।


. “বড়ো চমৎকার আজকে এই সন্ধ্যার চেহারা।”- ‘এই সন্ধ্যার’ পরিচয় দাও। সে দিনের সন্ধ্যার ঘটনাটি বর্ণনা করো। ২+৩

উত্তর: কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ ‘গল্পে বর্ণিত সেদিনের সন্ধ্যা অনির্বচনীয়। আগেও শহরে চাঁদের আলো পড়েছিল কিন্তু এবারে যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতির জগৎ। চাঁদের স্নিগ্ধ শান্ত উজ্জ্বল আলো, ফুরফুরে বাতাসে এক অপার্থিব মোহময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। গাছের পাতাও ঝিরিঝিরি করে কিছু বলতে চাইছিল।

** সাদা মাথা, সাদা দাড়ি, সৌম্য-শান্ত জগদীশবাবু বারান্দার উজ্জ্বল আলোর সামনে বসে হঠাৎ চমকে ওঠেন। গল্পকথক ও তাঁর বন্ধুরাও অবাক হন। আদুড় গা, ধবধবে সাদা উত্তরীয়, পরনে ছোট বহরের সাদা থান-পরা এক বিরাগী। তাঁর মাথায় ফুরফুরে শুকনো সাদা চুল, ধুলো মাখা পা, হাতে ঝোলা, যার ভিতরে গীতা। উদাত্ত শান্ত উজ্জ্বল দৃষ্টির এই আগন্তুককে জগদীশবাবু ডাকলে তিনি প্রতিবাদ করে বলেন যে, তিনি নীচে কেন নেমে আসতে পারছেন না। আগন্তুক বলেন তিনি ভগবানের চেয়ে বড় নন। আগন্তুক বলেন তিনি বিরাগী, তাঁর রাগ নেই, তিনি সৃষ্টির এককণা ধূলি। বিষয়ীর বাড়িতে নয়, খোলা আকাশ তাঁর বাসস্থান। বলেন ‘ধন-জন-যৌবন’ আসলে বঞ্চনা। তাঁর কাছে ‘পরমসুখ’ হল সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া। টাকায় তাঁর লোভ নেই, বুকের ভিতর রয়েছ তাঁর সব তীর্থ।

. “এই শহরের জীবনে মাঝে মাঝে বেশ চমৎকার ঘটনা সৃষ্টি করেন বহুরূপী হরিদা। “–হরিদার সৃষ্ট চমৎকার ঘটনাগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করো।


উত্তর: প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র হরিদা । হরিদা বহুরূপী সেজে শহরের জীবনে মাঝে মাঝে বিভিন্ন চমৎকার ঘটনা সৃষ্টি করত।


একদিন দুপুরবেলা চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠতে দেখা যায় । সকলের চোখে পড়ে একটা বদ্ধ পাগল একটা থান ইট হাতে নিয়ে বাসের যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছে। পাগলটার মুখ থেকে ঝরে পড়ছিল লালা, চোখ দুটো কটকটে লাল, তার কোমরে একটা ছেঁড়া কম্বল জড়ানো। এই পাগলটাই ছিল হরিদা।


আরেকদিন সন্ধ্যায় দোকানের লোকজনের ব্যস্ততা আর মুখরতা যখন জমে উঠেছে তখন হঠাৎ করে সবাই ভ্রমরের শব্দ শুনতে পায়। তারা দেখে এক রূপসী বাইজি প্রায় নাচতে নাচতে রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে । শহরে যারা প্রথম এসেছিল তারা বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে থাকে । রূপসী বাইজি তার সাজি দোকানদারদের দিকে এগিয়ে দেয় আর দোকানদাররাও হাসি মুখে দু’একটা সিকি ফেলে দেয়। দোকানদাররা অবশ্য চিনতে পারে এটা হরির কাণ্ড।


এইরকমই আর একটি চমৎকার ঘটনা ঘটেছিল দয়ালবাবুর লিচু বাগানে। সেখানে পুলিশ সেজে হরিদা স্কুলের চারটে ছেলেকে ধরেছিল। ছেলেগুলো ভয়ে কেঁদে ফেলে। স্কুলের মাস্টারমশাই ক্ষমা চান। কিন্তু তাতেও রক্ষা নেই। শেষে আট আনা ঘুষ খেয়ে নকল পুলিশ হরিদা ছেলেগুলোকে ছেড়ে দেয়।


বহুরূপী সেজে হরিদা এইসব চমৎকার ঘটনাগুলি ঘটিয়েছিল।



. “অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না ।” — হরিদা কী ভুল করেছিলেন ? অদৃষ্ট ক্ষমা না করার পরিণাম কী ? [মাধ্যমিক-২০১৯]


উত্তর :- ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা অর্থ উপার্জনের জন্য বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন । হরিদার বেশভূষা, কথাবার্তায় জগদীশবাবু মুগ্ধ হয়ে ‘বিরাগী’কে আতিথ্য গ্রহণের অনুরোধ জানান এবং বিদায়ের সময়ে একশো টাকা প্রনামী দিতে চান । কিন্তু হরিদা উদাসীনভাবে সে টাকা প্রত্যাখ্যান করে চলে যান । যাওয়ার সময় বলে যান— “আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি, তেমনিই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি ।” সন্ন্যাসী চরিত্রের সঙ্গে তিনি এতটাই একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন যে চরিত্রের ‘ঢং নষ্ট হবে’ বলে হরিদা টাকা নেননি । বিস্মিত গল্পকথক এটাকেই হরিদার ‘ভুল’ বলেছেন ।


অভাবী হরিদার ভাগ্য হরিদাকে হয়ত সঙ্গ দিতে চেয়েছিল । কিন্তু ব্যক্তিগত সততা ও আদর্শবোধের কারণে হরিদা ভাগ্যের সহায়তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন । যা নিশ্চিত করে দিয়েছে যে অভাব কখনও হরিদাকে ছেড়ে যাবে না । তার ভাতের হাঁড়িতে মাঝে মধ্যে শুধু জলই ফুটবে, তাতে চালের জোগান থাকবে না । কথকের মনে হয়েছে অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুলকে ক্ষমা করবে না ।



. বহুরূপী গল্প অবলম্বনে হরিদার চরিত্রের বর্ণনা দাও।


উত্তর : প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ একটি অন্যতম গল্প । এই গল্পটির কাহিনী বিকাশ লাভ করেছে হরিদা চরিত্রকে কেন্দ্র করে। আলোচ্য গল্পে তার চরিত্রের যে দিকগুলি দেখতে পায় তা সংক্ষেপ

তুলে ধরা হল-


সাধারণ পরিচয়: হরিদা ছিলেন খুবই গরিব মানুষ । শহরের সরু গলির একটা ছোট্ট ঘরে তিনি থাকতেন । দারিদ্র মোচনের জন্য তিনি মাঝে মাঝে বহুরূপী সাজতেন।


স্বাধীনচেতা : কোনো ধরা বাধা কাজ হরিদার পছন্দ নয়। কাজের মধ্যে মুক্তি এবং স্বাধীনতার আনন্দ খুঁজে নিতে চান বলেই একঘেঁয়ে কাজের বদলে বহুরূপীর পেশা গ্রহণ করেছিলেন হরিদা।


বন্ধুবৎসলতা: হরিদা পাড়ার লোকজনের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করতেন । তাই তার ঘরে বন্ধুরা সকাল-সন্ধ্যা আড্ডা দিতে আসত।


কৌতুকপ্রিয়তা : হরিদার মধ্যে এক সাধারণ কৌতুকময়তা ছিল । তাই বহুরূপী ছদ্মবেশে তিনি বাইজি পর্যন্ত সাজেন।


নিপুণ শিল্পী : হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য তার বহুরূপের খেলায়, বহু রূপ ধারণে তিনি নিপুণ শিল্পী। সাজ ও অভিনয়ের নৈপুণ্যে তিনি বিশ্বাস তৈরি করার ক্ষমতা রাখেন।


শিল্পী সত্তা : বিরাগীরূপী হরিদার আচরণ প্রকৃত অর্থে একজন শিল্পীর আচরণ। শিল্পই হরিদার জীবনের একমাত্র সত্য। শিল্পের জন্যই শিল্পীর সর্বসত্তা নিবেদিত। এজন্যই তিনি অনায়াসেই টাকার থলি পরিত্যাগ করেন।


গল্পশেষে হরিদা তাই নিরাসক্ত শিল্পী, পরম সুন্দরের প্রতি আত্মনিবেদিত স্রষ্টা হিসেবেই চিরোজ্জ্বল।


Scroll to Top