Inclusive Education
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা
Concept of Inclusive Education
“Education for all ” বর্তমান বিশ্বে শিক্ষা জগতের নতুনতম স্লোগান। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা আজ মৌলিক চাহিদা। ২০০০ সালে এপ্রিল মাসে সেনেগালের ডাকার শহরে ওয়ার্ল্ড এডুকেশন ফোরাম একটি আন্তর্জাতিক কর্মসূচি রূপায়ণের পরিকল্পনা করে। এই সভায় আন্তর্জাতিক সহমতের ভিত্তিতে স্থির হয় আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে পৃথিবীর সকল রাষ্ট্র সকলের জন্য শিক্ষা কর্মসূচির বাস্তবায়নের সহযোগিতা করবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের প্রতিটি শিশুকে প্রথাগত শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণি রয়েছে যাদের যুগ যুগ ধরে প্রতিবন্ধী নাম দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। কিন্তু জ্ঞান বিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতিতে মানুষের চিন্তার জগতে এসেছে পরিবর্তন এবং তারই ফলশ্রুতি হিসেবে জন্ম নেয়। ইনক্লুসিভ এডুকেশন বা অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা বা ব্যাপক শিক্ষা।
Inclusive Education :
১৯৯৯ সালে Norwich অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ধারণা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন যে কোনোভাবে বেশ কিছু শিশুর প্রতিবন্ধকতা আছে কিছু কিছু বিষয়ে অথচ অন্যান্য দিক থেকে তারা অন্যসব স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতোই। তাদের সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়া ও তাদের ব্যক্তিগত চাহিদা অনুসারে শিখনের সুযোগ করে দেওয়া হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা।
অর্থাৎ সমাজের সব ধরনের শিক্ষার্থীর কথা মাথায় রেখে যে শিক্ষার আয়োজন করা হয় তাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা বলে। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা হলো এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে যারা পৃথক তারাও স্বাভাবিক শিশুদের সঙ্গে একই সঙ্গে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার লক্ষ্য :
১. শিক্ষায় সমান সুযোগ দান অন্তর্ভুক্তি মূলক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।
২. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো একীভবন এবং স্বাভাবিকীকরণ।
৩. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও সাধারণ শিশুদের মধ্যে সুন্দর বোঝাপড়ার সম্পর্ক গড়ে তোলা।
৪. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিখনের পারদর্শিতা ঘটিয়ে শিখনে বাধা দূর করা।
৫. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলা এবং তাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশে সহায়তা করা।
৬. সাধারণ শিশুদের যে ধরনের শিক্ষা ও শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা আদান-প্রদানের সুযোগ আছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদেরও সেই একইরকম সুযোগ দেওয়া।
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার নীতি :
অন্তর্ভুক্তি মূলক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান তিনটি নীতি রয়েছে
১. সমাজের সব নাগরিকের শিক্ষা গ্রহণের যে সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত করা।
২. প্রত্যেক শিশু পৃথক পৃথক সত্তাযুক্ত। তাই প্রত্যেকের জন্য ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৩. কোনরকম শাস্তি বা ভয় প্রদর্শন এর মাধ্যমে শিক্ষা নয় শিক্ষা হবে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্কে মাধ্যম।
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয় পরিষেবা :
এক) প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা কৌশলের পরিকল্পনা করা।
দুই) শিক্ষাদানের বিষয়গুলি সঠিকভাবে নির্ধারণ করা।
তিন) পাঠক্রমের কার্যক্রমের পাশাপাশি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর ব্যবস্থা করা।
চার) উপযুক্ত মূল্যায়ন ব্যবস্থা পরিচালনা করা।
পাঁচ) শিশুদের সাফল্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া।
ছয়) অভিভাবক ও অভিভাবিকাদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করা।
সাত) শিক্ষণ সহায়ক উপকরণ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করা।
অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার বাধা সমূহ
১. শিশুর শারীরিক দুর্বলতা
২. পারিবারিক দারিদ্র্য
৩. সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য
৪. বিদ্যালয়ের দূরত্ব
৫. শিক্ষক ও সহপাঠীদের অবহেলা
৬. পারিবারিক অশান্তি
৭. বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব
৮. বিদ্যালয় অনুপযুক্ত ও অনুন্নত পরিবেশ
বঞ্চিত অবহেলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা :
বঞ্চিত শিশু কারা ?
ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী শিক্ষা হল প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকদের কাছে মৌলিক অধিকার শিক্ষার মূল স্রোতে সবাই যুক্ত হবে- নিশ্চিত ভাবে। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক বা পূর্ণ বয়স্ক সকলে। কিন্তু যুগ যুগ ধরে সমাজ শোষণ ও অবহেলা করে এসেছে তপশিলি জাতি ও উপজাতিকে। যার ফলে এদের মধ্যে হীনমন্যতা দেখা দিয়েছে স্বাভাবিকভাবে এরা বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া। নারীরাও এ শিক্ষার সুযোগ থেকে বরাবরই বঞ্চিত।
শিক্ষার মূল স্রোতে আসার পূর্বে কিছু শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। এই সকল শিশুরা শিক্ষার বদলে কারখানায় যোগ দেয় শিশুশ্রমিক হিসেবে পারিবারিক আর্থিক উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। মেয়েরা পরের বাড়িতে কাজ করে অর্থ উপার্জন করে। অর্থাৎ বঞ্চিত শিশু তারায় যারা যুগ যুগ ধরে প্রতিবন্ধকতার নামে নিশ্চিত শিক্ষালাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
পিছিয়ে পড়া শিশু করা?
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির দিকে লক্ষ্য রেখে সেই সব শিশুকে বলা হবে পিছিয়ে পড়া শিশু যারা শিক্ষার আঙিনায় এসে পরবর্তীকালে কোন কারণে শিক্ষার মূল থেকে দূরে সরে গেছে বা একই শ্রেণীতে বারবার অকৃতকার্য হচ্ছে। শিশুরা পিছিয়ে পড়ে যখন পারিবারিক আর্থিক সংকট, অশান্তি, আপনজন বিয়োগ, বাল্যবিবাহ, সামাজিক কুসংস্কার প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলি প্রকট হয়ে ওঠে আবার কিছু ক্ষেত্রে শিশুরা শারীরিক প্রতিবন্ধী হলে যেমন দৃষ্টি, শ্রবণ, অস্থিগত, স্নায়ুগতভাবে অক্ষম তারাও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার ক্ষেত্রে।
এদের জন্য শিক্ষা :
১. বিদ্যালয়ে না আসার কারণ অনুসন্ধান করা।
২. পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করা
৩. সবার জন্য শিক্ষা এই ধারণায় প্রতিটি অভিভাবককে নিয়ে আসা
৪. সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষাদান
৫. কোনো ক্লাসে আটকে না রাখা।
৬. প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বিশেষ শিক্ষণ পদ্ধতির আয়োজন করা।
৭. শিক্ষা সহায়ক উপকরণের ব্যবস্থা।
৮. বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া মৃদু প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষায় উৎসাহিত করা।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী
[ Learners with Special Needs]
দৈহিক মানসিক সামাজিক বা প্রাক্ষোভিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে যে সমস্ত শিশু সাধারণ শিশুদের দিক থেকে পৃথক তাদের ব্যতিক্রমধর্মী শিশু বলা হয়।
শিক্ষা মনোবিদ্যায় বুদ্ধ্যঙ্কের দিক থেকে যারা স্বাভাবিকের তুলনায় পৃথক তারা হলো ব্যতিক্রমধর্মী শিশু।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শ্রেণিবিভাগ :
উন্নত বুদ্ধি সম্পন্ন শিশু :
যেসব শিশুর বুদ্ধ্যঙ্ক সাধারণের চেয়ে বেশি অর্থাৎ ১১০ এর উপরে তাদের উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন শিশু বলা হয়।
উন্নত বুদ্ধি সম্পন্ন শিশুদের বৈশিষ্ট্য :
১. দৈহিক বিকাশ দ্রুত হয়
২. কম বয়সে হাঁটতে শেখে
৩. ভাষার বিকাশ খুব দ্রুত হয়
৪.কৌতূহল প্রবণতা প্রবল হয়
৫. খুব অল্প বয়সে পড়তে ও গণনা করতে শেখে
৬. দ্রুত ধারণার বিকাশ হয়
৭.যুক্তিসম্মত কথা বলে
৮. দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে পারে
৯. মনোযোগের পরিসর বিস্তৃত হয়
১০. রসবোধ বেশি থাকে (সেন্স অফ হিউমার)
উন্নত বুদ্ধি সম্পন্ন শিশুদের চাহিদা :
১. প্রশংসার চাহিদা
২. নিরাপত্তার চাহিদা
৩. জ্ঞানের চাহিদা
৪. সান্নিধ্যের চাহিদা
৫. সক্রিয়তার চাহিদা
৬. যুক্তপূর্ণ তথ্যের চাহিদা
উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা :
১. পাঠ্যসূচিব উন্নতিকরণ
২. শিক্ষার স্তরে ত্বরণ
৩. বিশেষ শ্রেণিকরণ
শিক্ষকের ভূমিকা :
১. প্রশ্নগ্রহণ ও উত্তরদানের জন্য তৈরি থাকা
২. পাঠদানের জন্য যথাযথ পূর্ব প্রস্তুতি
৩. শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতাকে স্বীকৃতি দান
৪. বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ ও যথার্থ জ্ঞানমূলক দক্ষতা
৫. সামাজিক চেতনা জাগ্রত করা।
ক্ষীণ বুদ্ধিসম্পন্ন শিশু:
যেসব শিশুর বুদ্ধ্যঙ্ক ৭৫ এর নীচে তাদের ক্ষীণ বুদ্ধিসম্পন্ন শিশু বলা হয়।
ক্ষীণ বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুর শ্রেণিবিভাগ :
ক্ষীণ বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
ক) স্বল্পবুদ্ধি খ)বোধহীন গ) জড়বুদ্ধি
ক) স্বল্পবুদ্ধি-(IQ: 75-50) – শিখনযোগ্য (Educable)
খ) বোধহীন -(IQ: 49-26) – প্রশিক্ষণযোগ্য (Trainable)
গ) জড়বুদ্ধি -(IQ: 25 এর নীচে) – শিখন ও প্রশিক্ষণ উভয়ের অযোগ্য (Non Educable, non Trainable)
ক্ষীণ বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের বৈশিষ্ট্য :
১. দৈহিক বিকাশের হার স্বাভাবিক শিশুদের হিসেবে তুলনায় অনেক কম
২. বিভিন্ন অঙ্গের বিকৃতি/ অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়
৩. ভাষার বিকাশ ধীরগতিতে হয়
৪. উচ্চারণগত ত্রুটি
৫. কৌতূহল প্রবণতা, জানার আগ্রহ, উৎসাহ উদ্দীপনা খুবই কম
৬. শিক্ষাগত অনগ্রসরতা
৭. কম বয়সের শিশুদের সঙ্গে মেলামেশা
৮. বয়স অনুপাতে প্রাক্ষোভিক বিকাশ কম
৯. স্বল্প মানসিক ক্ষমতা
স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা :
১. ব্যক্তিগত পদ্ধতিতে শিক্ষাদান
২. প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিক্ষাদান
৩. বিষয়বস্তুর পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষা
৪. বৃত্তিকেন্দ্রিক পাঠক্রম
বোধহীনদের শিক্ষা :
১. ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন বিকাশের জন্য শিক্ষা দান
২. ব্যক্তিগত আচরণ শেখানো
৩. ব্যক্তিকেন্দ্রিক পাঠক্রম
৪. দলগত কাজের মাধ্যমে বা সংগীতের মাধ্যমে শিক্ষা দান
জড় বুদ্ধিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা :
১. সঞ্চালনমূলক ক্ষমতার বিকাশের জন্য শিক্ষাদান
২. চিরদিন পর নির্ভর
শিক্ষায় অন্তর্ভুক্তি করনের বাঁধা সমূহ আলোচনা কর। "