ভাষার দক্ষতা
Language Skills
পারস্পরিক ভাব বিনিময় বা যোগাযোগের মাধ্যমই হলো ভাষা। এই যোগাযোগ সম্পূর্ণতা লাভ করে ভাষা দক্ষতার উপর। তাই ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে ভাষা দক্ষতা বা Language Skills- এর আলোচনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রসঙ্গে চার প্রকার ভাষা দক্ষতার কথা আলোচনা করতে হবে–
১. শ্রবণ
২. কথন
৩. পঠন
৪. লিখন
১. শ্রবণ (Listening) :
চার ধরনের ভাষা দক্ষতার প্রথম স্থান দেওয়া হয় শ্রবণকে। এখন প্রশ্ন হল শ্রবণ কী ? ভাষাকে কান দিয়ে গ্রহণ করাকেই শ্রবণ বলা হয় অর্থাৎ কান দিয়ে যা শুনি তাই শ্রবণ।
শ্রবণ হল একটি গ্রহণমূলক (Receptive) দক্ষতা। ভাষা শেখার ক্ষেত্রে এটিকে যোগান(Input) হিসেবে বিবেচনা করা হয় । যেকোনো ভাষা শেখা শুরু করার আগে শিক্ষার্থীকে সেই ভাষা শোনানোর ব্যবস্থা করা উচিত । এই শ্রবণের অর্থ নিতান্ত কয়েকটি শব্দ বা Sound শোনা নয় বরং অপরের বক্তব্য বোঝা ।
সাধারন অবস্থায় বাস্তব জীবনে আমরা দু ধরনের শ্রবণ পরিস্থিতির সম্মুখীন হই ।
(ক) পারস্পারিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ছাড়া শোনা বা একমুখী শ্রবণ প্রক্রিয়া (One way communication)
(খ) পারস্পারিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে শোনা বা দ্বিমুখী শ্রবণ প্রক্রিয়া (Both way communication)
ক) একমুখী শ্রবণ প্রক্রিয়া : এক্ষেত্রে আমরা কথা শুনলেও তার কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে পারিনা । এর মাধ্যমগুলি হল –
(i) বেতার ও দূরদর্শন ।
(ii) Public Address System (জনস্বার্থে প্রচরিত বার্তা-বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, শপিংমল ইত্যাদি স্থানের ঘোষণা)
(iii) ভাষণ এবং বক্তৃতা প্রভৃতি
দ্বিমুখী শ্রবণ প্রক্রিয়া : এক্ষত্রে আমরা ক্রমান্বয়ে শুনি ও বলি এবং কথাটিকে পুরোপুরি বোধগম্য করার জন্য পুনরাবৃত্তির অনুরোধ রাখতে পারি এর মাধ্যমগুলি হল সাক্ষাতে কথোপকথন, টেলিফোনে কথোপকথন, কোন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ।
শ্রবণ দক্ষতা অর্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা :
মানব শিশুর জন্মের পর থেকে তার পরিচিত পরিবেশে বাবা, মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের কথাবার্তা শুনে বিভিন্ন ধ্বনি ও শব্দ অনুকরণ করে। ধ্বনি থেকে শব্দ এবং ক্রমান্বয়ে শব্দ থেকে পূর্ণবাক্য গঠন করে। বস্তুত নিজেকে প্রকাশ করার প্রয়োজনই শিশু মাতৃভাষা শেখে ও দক্ষতা অর্জন করে। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা ভাষা দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ও প্রকাশ ঘটায়। ভালো বক্তা হতে গেলে ভালো শ্রোতা হতে হয়। শ্রবণের দক্ষতা কেবল অন্য মানুষের কথা শুনতেই সাহায্য করে না, শ্রবণ মানুষকে পরিষ্কারভাবে কথা বলতেও সাহায্য করে। শ্রবণ মানুষকে সঠিক উচ্চারণ শেখায়।
শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে শ্রবণ দক্ষতা অর্জন করতে পারলে যে কাজগুলি সহজে করতে পারবে —
১. বিভিন্ন ধ্বনি সহযোগে শব্দা ও বাক্য গঠনে অভ্যস্ত ও দক্ষ হয়ে উঠবে।
২. শিখন কার্যক্রমে সাফল্য অর্জন করতে পারবে।
৩. যে কোনো বিষয় শুনে উপলব্ধি করে তা শুদ্ধভাবে প্রকাশ করতে পারবে
৪. সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে ভাষা ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে সে ভাষার ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন করবে।
৫. বক্তব্য পরিবেশনে যথার্থ স্বরপ্রক্ষেপণ ও দেহভঙ্গি প্রদর্শনে সক্ষম হবে।
শ্রবণ দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের সমস্যা :
১. বিদ্যালয়ে শ্রবণের প্রতি তেমন দৃষ্টি দেওয়া হয় না।
২. শ্রবণ দক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক উপকরণের অভাব
৩. দীর্ঘ শ্রবণ অর্থাৎ দীর্ঘ সময় ধরে শুনলে ক্লান্তি আসে।
৪. শারীরিক সমস্যা ও বধিরতা
৫. প্রতিকূল পরিবেশ
যেকোনো ভাষায় শ্রবণের ক্ষেত্রে মনোযোগ(attention) ব্যাপারটি খুবই প্রয়োজনীয়। শ্রবণ দক্ষতার জন্য অনেক বেশি মনোযোগ দিতে হয়।
শিশুদের শোনার দক্ষতা বাড়ানোর উপায় :
শ্রবন দক্ষতা অর্জন করতে হলে মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে এবং শোনার আগ্রহ বাড়াতে হবে। এজন্য গৃহ পরিবেশের নিকটজনের বিশেষ করে মা-বাবার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।শিশুর সঙ্গে তাদের কথা বলতে হবে এবং কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক পরিবেশে শিক্ষক সচেতনতার সঙ্গে আকর্ষণীয় করে পাঠ উপস্থাপন করবেন যেন শিক্ষার্থীর কাছে বিষয়টি শুনতে ভালো লাগে এবং তারা উপলব্ধি করে আত্মস্থ করতে পারে।
শোনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা সেই বিষয়েও শিক্ষককে দৃষ্টি দিতে হবে। এক্ষেত্রে শারীরিক,মানসিক বা পরিবেশগত সমস্যা থাকতে পারে –যেমন শিক্ষার্থীর শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের ত্রুটি, অমনোযোগ, অনাগ্রহ, জড়তা বা শঙ্কা প্রভৃতি।
শিক্ষণ-শিখন কার্যাবলীতে শোনার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে শিক্ষককে অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে এসব সম্ভাব্য সমস্যা চিহ্নিত করে শ্রবণ দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের সহায়তা দিতে হবে।
ভালোভাবে শোনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে বিষয়বস্তু আয়ত্ত করার জন্য শিক্ষক অনুশীলন কার্যক্রমের ব্যবস্থা করবেন।
২. কথন ( Speaking ) :
কথা বলাকেই কথন বলে। শ্রবণ,কথন, পঠন এবং লিখন এই চারটির মধ্যে কেবল কথনকে অন্য তিনটি থেকে আলাদা করা যায়। কথন বাদ দিলে অন্য তিনটি যে কেউ একা একা অভ্যাস করতে পারে। কিন্তু কেউ একা একা কথা বলতে পারেনা অর্থাৎ কথনের অভ্যাস একা একা সম্ভব নয়। কেউ একা একা গান শুনতে পারে, কেউ একা একা বই পড়তে পারে বা কেউ লেখালেখি করতে পারে। কিন্তু স্বাভাবিক মানুষ একা একা কথা বলে না।
কথন হল একটি উৎপাদনমূলক বা Productive দক্ষতা। কারণ কথা বলার ক্ষেত্রে বক্তা অন্য কারোর সাথে যোগদান করেন ।
মায়ের কোল থেকে ভাষা শেখা প্রক্রিয়া শুরু হয়। শিশুদের কথা বলা একটি সহজাত ক্ষমতা যা সে আপনা থেকেই পেয়ে থাকে। তবে ভাষা ব্যবহারের পারদর্শিতা বা দক্ষতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভাষার দক্ষতা অর্জন ব্যতিরেকে সকল পরিবেশে ভাব বিনিময় সহজ হয় না। স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পারেনা, জড়তা মুক্ত হতে পারেনা। আর এই সবই পরবর্তী জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।
শিশুর সামাজিক মেলামেশার পরিধি যত বাড়ে ততই ভাষা ব্যবহার ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বিদ্যালয়ের শিক্ষা কথন দক্ষতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
কথন দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা :
১. কথন দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যম
২. মনের ভাবকে সুন্দর, সুগ্রথিত, সুবিন্যস্তরূপে প্রকাশ করতে শেখায়।
৩. পরিমার্জিত রুচিশীল ভাষা প্রয়োগে উৎসাহী করে।
৪. নিজস্ব কথন রীতি বা স্টাইল তৈরি করতে শেখায়।
৫. ভাষা প্রয়োগে স্পষ্টতা আনে।
৬. নির্ভুল উচ্চারণ, ব্যাকরণ জ্ঞান ও নতুন নতুন শব্দ প্রয়োগের কুশলতা শেখায়।
কথন দক্ষতা বাড়ানোর উপায় :
১. চিন্তাকে সংগঠিতত করা
২. চোখে চোখ রেখে কথা বলা বা বক্তৃতা করা
৩. ধীরে ধীরে বক্তৃতা করা
৪. উপযুক্ত স্বরে কথা বলা
৫. ভালো শ্রোতা হওয়া।
৬. প্রচুর পড়ার অভ্যাস করা
৭. অনুকরণ থেকে বিরত থাকা
৮. সরব পাঠ ও আবৃত্তি
৯. তাৎক্ষণিক বক্তৃতা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা।
কথন দক্ষতা বিকাশে শিক্ষকের ভূমিকা
১. শ্রেণিকক্ষে কখন কার্যাবলির সময় শিক্ষক নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করবেন। দুজনের মধ্যে অথবা কয়েকজনের দল গঠন করে তিনি এই কথা-কার্যাবলী পরিচালনা করবেন।
২. কার্যাবলিটির সহজ সরল হবে,
শিক্ষকের নির্দেশ যেন পরিষ্কার ও স্বচ্ছ হয়।
৩. শিক্ষক আদর্শ কথার নমুনা দেয়ার চেষ্টা করবেন। প্রয়োজনে তিনি টেপ রেকর্ডার, রেডিও বা দূরদর্শনের প্রোগ্রাম দেখাতে পারেন।
৪. শিক্ষার্থীদের বলার বিষয় নির্বাচনে শিক্ষক স্বাধীনতা দেবেন। কখনো হালকা বিষয় কখনো বা কঠিন বিষয় বেছে দেবেন।
৫. শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিজের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেবেন- এর মাধ্যমে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
৬. শিক্ষক প্রয়োজনে আলাদাভাবে শিক্ষার্থীদের উচ্চারণের ত্রুটি বা জড়তা সংশোধন করবেন
৩. পঠন (Reading) :
পঠন হলো একপ্রকার গ্রহণমূলক দক্ষতা (receptive)। তবে পঠন এমনই এক জটিল প্রক্রিয়া যার মধ্যে কথনের দক্ষতা লুকিয়ে থাকে আমরা যা পড়ছি তা সঠিকভাবে উচ্চারণও করতে হয়। এই কারণে পঠন হলো এক ধরনের সৃজনমূলক দক্ষতা (productive skill) যেখানে আমরা তথ্য গ্রহণ করি এবং প্রেরণ করি।
শিশু যখন প্রথম পড়তে শেখে, সে তখন সরবে বানান করে অর্থাৎ শব্দটিকে ভেঙে ভেঙে উচ্চারন করে পাঠ্যবস্তুর অর্থ বোঝার চেষ্টা করে ভাষার লিখিত রূপ টি উপলব্ধি করে, তার অর্থ বুঝতে পারাই হল পঠনের উদ্দেশ্য । শিশুর পড়ার অভ্যাস যতই পরিণত হতে থাকে, ততই সে পঠনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে ও অপেক্ষাকৃত কম সময়ে পঠিত বিষয়ের বুঝতে পারে ।
পঠন দক্ষতা :
পাঠ করার দক্ষতা আসলে একটা শৈল্পিক ব্যাপার, যাকে বলে বাচিক শিল্প। আগ্রহ এবং অভ্যাস এই দুইয়ের মেলবন্ধনে পাঠ করা দক্ষতা বৃদ্ধি সম্ভব। শিক্ষার্থীর চিন্তা- চেতনা, ভাবনা, কল্পনার প্রসার ঘটে পঠনক্রিয়ার মাধ্যমে। শিক্ষা যেহেতু জীবনব্যাপী ধারাবাহিক প্রক্রিয়া তাই মানব জীবনে পঠনের প্রভাব খুব বেশি। শিক্ষা গ্রহণ কালে শিক্ষার্থীরা নানা পর্যায়ে নানা বিষয়ে অসংখ্য বই পড়ে থাকে।এতে তার জ্ঞান লাভের স্পৃহা, পাঠের প্রতি মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়ে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অভ্যাস ও অনুশীলনের মাধ্যমে পাঠের দক্ষতা বৃদ্ধিতে শিক্ষকদের উদ্যোগ নিতে হবে।
ভাষা লিখিত রূপটির উপলব্ধি করে তার অর্থ বুঝতে পারাই হল পঠনের উদ্দেশ্য। পাঠ্য বিষয়কে বোধশক্তি দিয়ে হৃদয়ঙ্গম করার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য জনপ্রিয় পদ্ধতিকে বলে SRR পদ্ধতি। এই পদ্ধতির তিনটি ধাপ।এগুলি হল –
S- Skimming – ভাসাভাষা বা উপর উপর পাঠ করা
R – Reading কোন কিছু বাদ না দিয়ে পাঠ্য বিষয় সম্পূর্ণরূপে পাঠ করা
R- Reviewing পাঠ্য বিষয়কে হৃদয়ঙ্গম করার জন্য সমগ্র রচনাটিকে পুনর্বিচার করে দেখা।
পাঠের শ্রেণীবিভাগ :
পদ্ধতি বা বহিরঙ্গের দিক দিয়ে পঠন কর্মকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- সরব পাঠ ও নীরব পাঠ।
সরব পাঠ :
রব বা ধ্বনি সহযোগে পাঠকেই সরব পাঠ বলা হয়।
নীরব পাঠ :
যে পাঠে কোনো রব বা ধ্বনি থাকে না তাকে নীরব পাঠ বলা হয়।
দুই রকম পাঠেরই কিছু সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে।
সরব পাঠের সুবিধা :
সরব পাঠ শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়পক্ষের কাছেই আনন্দজনক। কবিতা পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের রসচেতনা, সংগীতধর্মিতা, চিত্রধর্মিতা বিশেষভাবে জাগরিত হয়।
১. প্রাথমিকে ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে সরব পাঠ একান্ত অপরিহার্য।
২. সরব পাঠে বিষয়বস্তুর প্রতি মনোযোগ দেওয়া সহজতর হয়।
৩. ছাত্রছাত্রীরা প্রাথমিক স্তর থেকে সঠিক উচ্চারণে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে।
৪. শিক্ষকদের দেওয়া আদর্শ সরব পাঠ শিক্ষার্থীদের উচ্চারণ শিক্ষায় যথেষ্ট সাহায্য করে।
৫. এটি শিশু প্রকৃতির সঙ্গে যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ।
৬. সরব পাঠ শিশুদের প্রাণবন্ত করে তোলে।
৭. সুস্পষ্ট উচ্চারণের মাধ্যমে পাঠের ত্রুটি সংশোধিত হয়।
৮. এই পাঠ শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণে সাহায্য করে।
৯. সঠিক বাচনভঙ্গি ও কথন-শৈলী বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
১০. উচ্চারণে আঞ্চলিকতা দোষ দূর করতে সাহায্য করে।
১১. সরব পাঠ বর্ণ ও শব্দের সঠিক উচ্চারণ করতে সাহায্য করে।
নীরব পাঠের উপযোগিতা :
ভাষা শিক্ষা ক্ষেত্রে সরব পাঠের ভূমিকা থাকলেও জীবনের বহু বিস্তৃত ক্ষেত্রে নীরব পাঠেরই প্রয়োগ বেশি। নীরব পাঠের উপযোগিতা গুলি হল –
১. নীরব পাঠ মনন শীলতার উপযোগী
২. অল্প সময়ে অনেক বেশি শব্দ পড়া যায়
৩. কম সময়ে কোনো ধারণাকে অধিগত করতে সাহায্য করে
৪. অকারণ শক্তি ক্ষয় রোধ করে
৫. গ্রন্থাগার বা শ্রেণিকক্ষে নীরব পাঠ বাঞ্ছনীয়
সমবেত পাঠ :
এককভাবে সরব পাঠ ছাড়াও সমবেতভাবে সরব পাঠও হয়ে থাকে। বিশেষ করে প্রাথমিক স্তরে সমবেত পাঠ বিশেষ কার্যকরী।
পদ্ধতির দিক দিয়ে যেমন পাঠকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় তেমনি পাঠের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যর দিক থেকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল –
১. ধারনা পাঠ
২. চর্বণা পাঠ
৩. স্বাদনা পাঠ
১. ধারনা পাঠ
কোনো বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা পেতে হলে যে ধরনের পাঠের প্রয়োজন হয় তাকে ধারণা পাঠ বলে। সংবাদপত্র পাঠ, কোনো সাময়িক পত্রিকা পাঠ বা কোন গল্পগ্রন্থ পড়া প্রভৃতি ধারণা পাঠের সাহায্য করা হয়। অনেকে আবার একে আয়ত্তীকরণ পাঠও বলেন।
২. চর্বণা পাঠ :
যখন কোনো কঠিন প্রবন্ধ বা বিষয়বস্তুকে বিচার বিশ্লেষণ করে অন্তর্নিহিত অর্থ পাওয়া যায় – এই ধরনের বিষয়বস্তু পাঠকে চর্বণা পাঠ বলা হয়। কঠিন খাদ্যবস্তুকে যেমন চিবিয়ে চিবিয়ে তার রস আস্বাদন করতে হয়, এখানেও তেমনি কঠিন বিষয়বস্তুকে দীর্ঘ অনুশীলনের সাহায্যে আয়ত্ত করতেহয়। যে সমস্ত রচনার বিষয়বস্তু প্রাধান্য থাকে, সেই সমস্ত ক্ষেত্রে চর্বণা পাঠ প্রয়োজন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বা বঙ্কিমচন্দ্রের প্রবন্ধ অনুশীলনে চর্বণা পাঠের উপযোগিতা যথেষ্ট।
৩. স্বাদনা পাঠ
কাব্য কবিতার বিষয়বস্তুর চেয়ে কবির অনুভূতির উচ্ছ্বাস বেশি করে ধরা পড়ে। কবিতায় রস বিশ্লেষণ বা রসাস্বাদনই বড়ো কথা। কাব্য-কবিতার উপলব্ধি এই ধরনের পাঠেই সম্ভব।
এগুলি ছাড়াও সুসংহত পাঠ, বিস্তৃত পাঠ, অনুপূরক বা সম্পূরক পাঠ, সমধর্মী পাঠও রয়েছে।
আদর্শ পাঠের বৈশিষ্ট্য :
সাধারণভাবে আদর্শ পাঠের চারটি বৈশিষ্ট্য আমাদের চোখে পড়ে। সেগুলি হল-
১. নির্ভুলতা (Accuracy)
২. গতি ( Speed)
৩. উপলব্ধি ( Comprehension)
৪. অভিব্যক্তি (Expression)
শিশুদের পড়ার দক্ষতা বাড়ানোর উপায় :
পঠন কৌশল একটি বিশেষ জটিল ক্রিয়া। শিশুদের ছোটবেলা থেকে ধীরে ধীরে এটিকে আয়ত্ত করাতে হয়। প্রাথমিক স্তরে এভাবে পঠনের অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে
১. সঠিকভাবে শব্দ উচ্চারণের দক্ষ করে তোলা।
২. সঠিকভাবে শব্দের অর্থ উপলব্ধিতে দক্ষ করে তোলা।
৩. সরব পাঠে উৎসাহ দিতে হবে ।
৪. পাঠের গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে । সেই শব্দগুলির অর্থ জানাতে হবে ।
৫. অচেনা নতুন শব্দগুলিকে জানাতে পাড়লে শিশুদের পড়ার আগ্রহ বাড়ে ।
৬. শব্দগুলির ব্যাকরণগত পরিচয় জানিয়ে দিতে হবে ।
৭. কোনো পাঠের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি শিক্ষার্থীদের কাছে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে ।
৮. স্পষ্টভাবে সঠিক উচ্চারণে কোনো বিষয়বস্তু পড়ে সহজভাবে প্রকাশ করা।
৪. লিখন (Writing) :
ভাবের আদান প্রদান ও যোগাযোগ স্থাপনের অন্যতম মাধ্যম হলো লিখন এই প্রক্রিয়ায় একজনের চিন্তা লিখিত পথিকের মাধ্যমে বাইরে আসে। শিক্ষার্থীদের কাছে লেখা হল সৃজনশীল (productive) দক্ষতা। কথা বলা, শোনা, ও পড়ার দক্ষতা ঠিকমতো থাকলে লেখার দক্ষতাও বাড়ে ।
মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম হলো ভাষা আমরা পরস্পর ভাব নির্ণয় করি ভাষার মাধ্যমে ভাষার দুটি রূপ মৌখিক রূপ লিখিত মানুষের প্রকাশ ক্ষমতা এক অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার লিপির মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ। মনের ভাবকে ভাষায় প্রকাশের লিখিত যে রূপ তাকে আমরা বলি লিখন মানুষের জ্ঞান জগতের চিন্তা কল্পনা ভাবনার প্রকাশের দায়িত্ব দিতে লেখার কোনো বিকল্প নেই মানুষের জ্ঞান যত বিস্তৃত হচ্ছে যত সমৃদ্ধ হচ্ছে ভাষা লিখিত রূপের মধ্য দিয়েই আগামী দিনের মানুষের জন্য স্থায়ী রূপে সংরক্ষিত হচ্ছে। এজন্যই ভাষার লিখন পদ্ধতি এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
লিখন দক্ষতা কীভাবে উন্নত করা যায় :
লিখন দক্ষতাও একটি প্রকাশমূলক(expressive) দক্ষতা লিখন দক্ষতা উন্নত করার চারটি প্রধান স্তম্ভ হল-
১. শব্দ ভান্ডারের উন্নতি
২. বানানের উন্নতি
৩. পঠন দক্ষতার উন্নতি
৪. ব্যাকরণের উন্নতি।
শিশুদের লেখার দক্ষতা বাড়ানোর উপায় –
অভ্যাস অভ্যাস এবং অভ্যাস। অভ্যাসই হল লিখন দক্ষতা বৃদ্ধির অন্যতম উপায়।
পাঠ্যপুস্তকের অনুশীলনীর প্রশ্নের উত্তর লেখা শিক্ষার্থীদের অন্যতম করণীয় কাজ। এতে যেমন বিষয় জ্ঞান বৃদ্ধি পায় তেমনি লিখন দক্ষতাও বৃদ্ধি পায়।
লেখার হরফ যেন স্পষ্ট হয় ।
হরফগুলি একই আকারের হয় ।
বানান যেন শুদ্ধ হয় ।
শব্দের শুদ্ধরূপ শিশু লিখেছে কিনা দেখতে হবে ।
পূর্ণ বাক্য যেন ব্যাকরণগতভাবে সঠিক হয় ।
নিজস্ব জ্ঞানে কতটা নিজের মতো লিখতে পারছে, তা যাচাই করে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে হবে ।
লিখতে হবে নিয়মিত প্রতিদিন ।
ভাষার লিখিত রূপের সঙ্গে হাতের লেখা সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। হাতের লেখায় মানুষের মনের ভাষা অভাব প্রকাশিত হয় এবং শিল্প ও সৌন্দর্য প্রতিফলিত হয়।
সুলিখনের বৈশিষ্ট্য :
১. স্পষ্টতা
২. দ্রুততা,স্বচ্ছন্দ্য ও গতিময়তা
৩. নির্ভুল
৪. সৌন্দর্যমন্ডিত রেখাবিন্যাস
৫. যতি চিহ্নের যথাযথ ব্যবহার
Md mamunur rashid
অসাধারণ লিখন।