মঙ্গলকাব্য: মনসামঙ্গল
➺ বংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে বিশেষ এক শ্রেণির ধর্ম বিষয়ক অখ্যান কাব্য হলো – মঙ্গলকাব্য।
➺ মঙ্গলকাব্যের উপজীব্য বিষয় – দেবদেবীর গুণগান।
➺ একটি সম্পূর্ণ মঙ্গলকাব্যে সাধারণত – ৫ টি অংশ থাকে।
➺ মঙ্গলকাব্যের প্রধান ধারা – মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল।
🌼 মনসামঙ্গল 🌼
মঙ্গলকাব্য গুলির মধ্যে সর্বাধিক প্রাচীন হল মনসামঙ্গল কাব্য ধারা। মনসা দেবী অনার্য হলেও সাংস্কৃতিক ডামাডোলের যুগে তাঁর আর্যীকরণ করা হয়। যদিও তাতে বাংলার লোকজ কৃষ্টিকালচার পিছু ছাড়েনি। সেই সময়ের গ্রাম বাংলার আর্থসামাজিক রাজনৈতিক চিত্র জানতে এই কাব্যের গুরুত্ব আছে বৈকি।
মনসামঙ্গল কাব্যের ত্রিধারা :
মঙ্গলকাব্যের আদি কবি হলেন হরি দত্ত।
তাঁর উল্লেখ করেন কবি বিজয় গুপ্ত এবং কবি পুরুষোত্তম। তবে বিজয় গুপ্তের উল্লেখে কবিসুলভ সম্মান প্রদর্শন নেই।তাঁর কাব্যের নাম হল পদ্মার সর্পসজ্জা। হরিদত্ত সম্পর্কে কবি বিজয়গুপ্ত লিখেছেন —
পূর্ববঙ্গের ভীষণই জনপ্রিয় কবি।
জন্ম-বরিশালের গৈলা ফুল্লশ্রী গ্রাম
কাব্যের নাম- পদ্মাপুরাণ
পৃষ্ঠপোষক -হোসেন শাহ
সম্পাদনা- প্যারীমোহন দাশগুপ্ত
বিজয় গুপ্তের কাব্যের নাম ‘পদ্মাপুরাণ’ । কাব্যটি পূর্ববঙ্গের অধিক পরিচিত । গল্পরস সৃজনে, করুণরস ও হাস্যরসের প্রয়োগে, সামাজিক ও রাষ্ট্রিক জীবনের পরিচয়ে, চরিত্র চিত্রণে এবং পাণ্ডিত্যের গুণে বিজয়গুপ্তের ‘পদ্মাপুরাণ’ একটি জনপ্রিয় মঙ্গলকাব্য।
রচনাকাল :
বিজয় গুপ্তের ‘পদ্মাপুরাণ’ কাব্যের রচনাকালজ্ঞাপক শ্লোকটি হলঃ
‘‘ঋতু শশী বেদ শশী পরিমিত শক ।
সুলতান হোসেন শাহ নৃপতি তিলক ।”
—- এই শ্লোকটি বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়ঃ ঋতু = ৬, শশী = ১, বেদ = ৪, শশী= ১, শকে = শকাব্দ ।
‘অঙ্কস্য বামা গতি’ অনুসারে ১৪১৬ শকে । অর্থাৎ (১৪১৬+৭৮) = ১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দে এই কাব্য রচিত হয় ।
প্রকাশকাল :
বিজয় গুপ্তের ‘পদ্মাপুরাণ’ ১৩০৩ বঙ্গাব্দে প্যারিমোহন দাশগুপ্তের উদ্যোগে বরিশাল থেকে প্রকাশিত হয় ।
চরিত্রলিপি :
(১) চাঁদ সদাগর — চন্দ্রধর ।
(২) লখীন্দর — অনিরুদ্ধ ।
(৩) বেহুলা — নর্তকী ঊষা ( অনিরুদ্ধের স্ত্রী) ।
কাব্য বৈশিষ্ট্য :
(ক) বিজয় গুপ্তের মনসামঙ্গল তৎকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান।
(খ) কাহিনিচয়ন, চরিত্রচিত্রণ ও সমাজজীবনের প্রতিবিম্বনে বিজয়গুপ্ত দেবমাহাত্ম্যকে অবাস্তব কল্পনা রাজ্যের বিষয়বস্তু করে তোলেননি।
(গ) তীক্ষ্ণ সমাজচেতনা ও প্রগাঢ় বাস্তব জীবনবোধ তাঁর কাব্যের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য৷
কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ :
পূর্ববঙ্গীয় কবি।
গ্রন্থনাম- পদ্মাপুরাণ, সুকন্নানি
সম্পাদনা-ভৈরব চন্দ্র শর্মা
উপাধি- সুকবিবল্লভ,কবিসার্বভৌম
বিপ্রদাস পিপলাই :
পশ্চিমবঙ্গীয় কবি।
কাব্যনাম-মনসাবিজয়,মনসামঙ্গল, মনসাচরিত
কলকাতা সহ বিভিন্ন ঘাটের বর্ণনা বর্তমান কাব্যে।
তন্ত্রবিভূতি
উত্তরবঙ্গীয় কবি।
জগজ্জীবন ঘোষাল
উত্তরবঙ্গীয়।
তন্ত্রবিভূতি ও জগজ্জীবনের কাব্যে মিল বর্তমান।
দ্বিজ বংশীদাস :
পূর্ববঙ্গীয়।
রামায়ণ অনুবাদক চন্দ্রাবতীর পিতা।
শাক্ত ও বৈষ্ণব প্রভাব বিদ্যমান।
জীবন মৈত্র :
কাব্য-পদ্মাপুরাণ
উপাধি-কবিভূষণ
বিষ্ণুপাল
কাব্য-অষ্টমঙ্গলা
ষষ্ঠীবর দত্ত
কাব্য-পদ্মাপুরাণ
উপাধি- গুণরাজ খাঁ
এনার কাব্যে ফারসির ব্যবহার আছে।
সীতারাম দাস
ধর্মমঙ্গলের প্রভাব বিদ্যমান তাঁর কাব্যে।
# রসিক_মিশ্র
কাব্য-জগতীমঙ্গল
মাণিক দত্ত
ধর্মমঙ্গলের প্রভাব আছে কাব্যে।
মনসামঙ্গল কোথায় কী নামে পরিচিত :
১.রাঢ়-ঝাপান
২.দক্ষিণবঙ্গ -ভাসান
৩.পূর্ববঙ্গ-রয়ানী
৪.উত্তরবঙ্গ- সাইটোল বিষহরীর গান বা ডগজিয়ানী পালা বা মড়াজিয়ানী পালা
বাইশা
সাধারণ ভাবে বাইশ কবির কবিতা সংকলন।
এর উল্লেখযোগ্য কবিঃ
নারায়ণ দেব,ষষ্ঠীবর দত্ত প্রমুখ
**প্রকাশক- আশুতোষ ভট্টাচার্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
ষট কবি
বাইশার মতোই। ছয় কবির সংকলন।
বারোমাস্যা
এটি মধ্যযুগের প্রায় সব কাব্য ধারাতেই পাওয়া যায়,এমনকি রোমান্স-উপাখ্যান ধারাতেও। কেবল পীর-সাহিত্যে ব্যতিক্রম লক্ষিত হয়।
বারোমাসের চিত্রাঙ্কন থাকে এখানে নায়িকার জীবনকে কেন্দ্র করে।
চৌতিশা
এটিও মধ্য যুগের কাব্যধারায় প্রায়শই লক্ষ করা যায়,এমনকি পুঁথিসাহিত্যও এর ব্যতিক্রম নয়।
এতে বাংলা বর্ণমালার ক্রমানুসারে চৌত্রিশটা বর্ণে মন্ত্রজপ করা হয় ইষ্টদেবতার নামে। কোথাও কোথাও আল্লাহর নামেও এইভাবে চৌতিশা তৈরি করতে দেখা যায়।
প্রশ্নোত্তরে মনসামঙ্গল :
◆ বাংলা সাহিত্যে মঙ্গল কাব্যের প্রাচীনতম ধারা – মনসামঙ্গল।
◆ মঙ্গলকাব্যের আদি কবি – কানাহরি দত্ত।
◆ মনসামঙ্গলেরর একমাত্র পশ্চিমবঙ্গীয় কবির নাম – কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ।
◆ বিপ্রদাস পিপিলাই রচিত কাব্যের নাম – মনসাবিজয়।
◆ মনসা মঙ্গল রচিত – মনসা দেবীর কাহিনি নিয়ে রচিত।
◆ সাপের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মনসার অপর নাম – কেতকা ও পদ্মাবতী।
◆ মনসামঙ্গল কাব্যের অপর নাম – পদ্মপুরাণ।
উঃ ২
২] বিজয় গুপ্তের কাব্য প্রথম কত সাল প্রকাশিত হয় ?
উঃ ১৮৯৬
৩] চাঁদ সদাগর এর পিতার নাম কী ছিল ?
উঃ বিজয়
৪] কোন কবির কাব্যে চৈতন্য বন্দনা আছে ?
উঃ কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের কাব্যে
৫] কেতকাদাসের প্রকৃত নাম কী ?
উঃ ক্ষেমানন্দ
৬] পূর্ববঙ্গে কার কাব্য ক্ষেমানন্দী নামে পরিচিত ?
উঃ কেতকাদাস
৭] মনসামঙ্গল কাব্যের আদি কবি কে ?
উঃ কানাহরি দত্ত
৮] বিপ্রদাস পিপলাই কোথায় জন্মগ্রহণ করেন ?
উঃ চব্বিশ পরগণা
৯] কেতকাদাসের কাব্যের কটি পালা ?
উঃ ৫ টি
১০] রঘুনাথ কার ছদ্মনাম ?
উঃ বিজয় গুপ্ত
১১] ফুল্লেশ্বর গ্রামের বর্তমান নাম কী ?
উঃ গৈলা
১২] উনবিংশ শতাব্দীর মনসামঙ্গল কাব্যের দুজন কবির নাম ?
১৩] বিজয় গুপ্তের পিতার নাম ?
উঃ সনাতন
১১] মনসার সহচরীর নাম কী ?
উঃ নেতা ধোপানি
১২] নারায়ণ দেবের “পদ্মপুরাণ” কটি খণ্ডে বিভক্ত ?
উঃ ৩
১৩] মনসাকে জাঙ্গুলিতারা বলা হয়েছে কোন গ্রন্থে ?
উঃ সাধনমালা
১৪) ষটকবি মনসামঙ্গল কাকে বলে ?
উঃ ৬ জন কবির সঙ্কলিত গ্রন্থ
১৫] জগজ্জীবন ঘোষালের মায়ের নাম কি?
উঃ রেবতি
১৬] নারায়ণ দেবের উপাধি কি ছিল ?
উঃ সুকবিবল্লভ
১৭] বাণের পিতার নাম কী ?
উঃ বিরোচন
১৮] সুকুমার সেন এর মতে মনসামঙ্গলের সবচেয়ে প্রাচীন কবি কে?
উঃ বিপ্রদাস পিপলাই
১৯] বিজয় গুপ্তের মঙ্গলকাব্য কোন ছন্দে রচিত ?
উঃ পয়ার ও লাচার
২০] মনসামঙ্গলের প্রধান নারীচরিত্র কী ?
উঃ বেহুলা আর সনকা
২১] মনসার ছেলের নাম কী ?
উঃ আস্তিক
২২] জাগরণ পালা কার লেখা ?
উঃ দ্বিজ বংশীদাস
২৩] কার মনসামঙ্গল ‘অষ্টমঙ্গলা’ নামে পরিচিত ?
উঃ বিষ্ণপাল এর কাব্যে মনসা কার কল্পিত মনসা কণ্যা
২৪] কোন কবির কাব্য ‘বিদ্যাভূষণী মনসা’ নামে পরিচিত ?
২৫] “সনাতন তনয় রুক্মিনী গর্ভজাত” কোন কবি তাঁর সম্পর্কে এ কথা বলেছেন ?
উঃ বিজয় গুপ্ত
২৬] মনসামঙ্গল কাব্যের অষ্টাদশ শতাব্দীর কয়েক জন কবির নাম বল ?
উঃ জীবন মৈত্র, ষষ্ঠীবর দত্ত, বিষ্ণু পাল
২৭] মনসামঙ্গলের কোন কবির উপাধি ‘গুণরাজ খাঁ’ ?
উ: ষষ্ঠীবর দত্ত
২৮] মনসামঙ্গল কাব্যের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী ?
উঃ ১) আনার্য দেবীরা উচ্চত্বর স্থান পেল।
২) আর্য-আনার্য মিলন ঘটল।
৩) তৎকালীন সমাজ ও ইতিহাসের তথ্য পাওয়া যায়।
২৯] মনসার গান কোথায় ঝাপান নামে পরিচিত ?
উঃ রাঢ় বঙ্গে
৩০] “হরিদত্তের গীত যত লোপ পাইল কালে ” – কার রচনা ?
উঃ বিজয় গুপ্ত
৩১] দ্বিজ বংশীদাস কোথাকার কবি ?
উঃ পূর্ববাংলার
৩২] সবচেয়ে প্রাচীনতম মঙ্গলকাব্য কোনটি ?
উঃ মনসামঙ্গল
৩৩] কার কাছে মনসা দেবী পূজা আদায় করতে পারছিলেন না ?
উঃ চাঁদ
৩৪] বিজয়গুপ্তের মনসামঙ্গল কোথা থেকে কত সালে কার সম্পাদনায় প্রথম প্রকাশিত হয় ?
উঃ বরিশাল থেকে ১৩০৩ সালে প্যারীমোহন দাসগুপ্তের সম্পাদনায় প্রথম প্রকাশিত হয়।
উঃ কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের মনসামঙ্গলে মনসার সর্পসয্যা
৩৬] হরি দত্ত রচিত কাব্যের নাম কী ?
উঃ কালিকাপুরাণ
৩৭] কোন পর্বতে লখিন্দর – বেহুলার বাসরঘর ছিল ?
উঃ সাঁতালি বা সান্তালি পর্বত
৩৮] অন্য কবিরা মনসার জন্ম পদ্মপত্র থেকে হয়েছে বললেও ইনি বলেছেন মনসার জন্ম কেয়া পাতা থেকে। ইনি কোন কবি ?
উঃ কেতকাদাস
৩৯] মনসা পূজা কোন ভাষাভাষীর মানুষেরা প্রথম শুরু করেছিলেন ?
উঃ দ্রাবিড়
৪০] কেতকাদাসের কাব্যে বেহুলার ভাসান পথে কটি ঘাটের উল্লেখ আছে ?
উঃ ২২
৪১] “বিজয়গুপ্ত দেবতার মাহাত্ম্য রচনা করেন নাই, মানবেরই মঙ্গলগান গাহিয়াছেন” – একথা কে বলেছেন ?
উঃ আশুতোষ ভট্টাচার্য
৪২] “মূর্খে রচিলা গীত না জানে মাহাত্ম” – কে কার সম্পর্কে একথা বলেছেন ?
উঃ বিজয় গুপ্ত কানা হরিদত্ত সম্পর্কে
৪৩] মনসামঙ্গলের কবি হিসাবে নারায়ণ দেবের বিশিষ্টতা কী ছিল ?
উঃ তিনি পৌরাণিক কাহিনীর অসামান্য প্রয়োগ ঘটিয়েছেন
৪৪] লখিন্দরের শ্বশুর বাড়ি কোথায় ?
উঃ উজানী নগরে
৪৫] কেতকাদাসের কাব্যে কোন কবির প্রভাব আছে ?
৪৬] কার কাব্যে চাঁদ সদাগরের বাণিজ্য পথের মধ্যে কলকাতার উল্লেখ আছে ?
উঃ বিপ্রদাস পিপলাই
৪৭] অস্ট্রিক দের ভাষাতে মনসা দেবীকে কি বলে ?
উঃ মনচঁআ মা
৪৮] ইতিহাস নিষ্ঠার সাথে ভৌগোলিক জ্ঞানের যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায় কার কাব্যে ?
উঃ কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ এর কাব্যে
৪৯] মনসার স্বামীর নাম কী ?
উঃ জরুৎকারু মুনি
৫০] কে অন্যান্য মঙ্গল কবিদের মতো স্বপ্নাদেশ প্রাপ্তিতে মঙ্গল কাব্য রচনা করেননি ?
উঃ কেতকাদাস
৫১] মুচিনী বেশ নিয়ে মনসা কাকে কাব্য রচনার নির্দেশ দেয় ?
উঃ ক্ষেমানন্দ
৫২] কেতকাদাস কোন শতকের কবি ?
উঃ সপ্তদশ
৫৩] নারায়ণ দেবের কাব্যে চাঁদসদাগরের কাহিনী আছে কোন খণ্ডে ?
উঃ ৩
৫৪] পশ্চিম বঙ্গের কাব্য গুলি কী নামে পরিচিত
উঃ মনসা মঙ্গল
৫৫] কোন্ কবি নিজেকে সুকবিবল্লভ বলেছেন ?
উঃ নারায়ণ দেব
৫৬] কে নিজেকে নাটোরের রানি ভবানীর পুত্র রাজা রামকৃষ্ণের আশ্রিত বলে উল্লেখ করেছেন ?
উঃ জীবন মৈত্র
৫৭] মাঞ্চাম্মা কোথায় প্রচলিত ?
উঃ দক্ষিণ ভারত
৫৮] বিপ্রদাসের কাব্যের কী কী নাম পাওয়া যায় ?
উঃ মনসামঙ্গল, মনসাবিজয়, মনসাচরিত
উঃ হুসেন শাহ
৬০] মনসামঙ্গল কাব্যের কোন কবির কাব্যে আরবি ফারসি শব্দের প্রাধান্য লক্ষ করা য়ায ?
উঃ দ্বিজ বংশীদাস