বিশ্বের ভাষা ও পরিবার |একাদশ শ্রেণি |প্রথম সেমেস্টার|ভাষা

বিশ্বের ভাষা ও পরিবার :


বিশ্বের ভাষা ও ভাষা পরিবার MCQ


ভাষাবিজ্ঞানীদের মতে, হাজার তিনেক ভাষা ও সেসব ভাষার অসংখ্য বৈচিত্র্য ছড়িয়ে আছে সারা পৃথিবী জুড়ে। তবে বেশির ভাগ ভাষারই ব্যবহারকারীর সংখ্যা দশ লক্ষ থেকে কয়েকশোর মধ্যে। ১৭৮৬ সালে কলকাতার রয়‍্যাল সোসাইটির অধিবেশনে উইলিয়ম জোন্স তাঁর বক্তৃতায় সংস্কৃত, গ্রিক, লাতিন ও জার্মানিক গোষ্ঠীর ভাষাগুলির মধ্যে গভীর মিলের কথা বলেন।


এইভাবে ভাষাগুলির মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করে ভাষাগুলির অতীত ইতিহাস পুনর্গঠন করে গোত্রনির্ণয়

করা হয়। পৃথিবীর এতগুলো ভাষাকে কয়েকটি বিশেষ পদ্ধতিতে বর্গীকরণ করা হয়। 

এই পদ্ধতিগুলি হল-

১.ভাষার রূপতত্ত্ব বা আকৃতি অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ, 

২. গোত্র বা বংশানুযায়ী বিভাগ, 

৩. মহাদেশ অনুযায়ী বিভাগ,

৪. দেশভিত্তিক বিভাগ, 

৫. ধর্মীয় শ্রেণিবিভাগ এবং 

৬. কালগত শ্রেণিবিভাগ। 


ভাষার রূপতত্ত্ব বা আকৃতি অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ:


ভাষার মধ্যে বাক্য ও শব্দের বিশ্লেষণ করে সেই অনুযায়ী যে শ্রেণিবিভাগ করা হয় তাকেই রূপতাত্ত্বিক শ্রেণিবিভাগ বলা যেতে পারে। 


রুপতত্ত্বগত বিশ্লেষণে বিশ্বের ভাষা গুলিকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়। অনন্বয়ী বা অসমবায়ী ভাষা এবং  সমবায়ী ভাষা।


অনন্বয়ী বা অসমবায়ী ভাষা : 

যে ভাষাগুলিতে উপসর্গ, প্রত্যয়, বিভক্তি বা অনুসর্গের অস্তিত্ব নেই বাক্যের মধ্যে শব্দের অবস্থান দেখে কর্তা, কর্ম ইত্যাদি নিরূপণ করা হয়। এই শ্রেণিবিভাগের নাম অনন্বয়ী বা অসমবায়ী (Isolating/Positional)। এই ধরনের ভাষা হলো চিনা ভাষাগোষ্ঠীর ভাষা, ভারতীয় ভোটচিনা ভাষা।


সমবায়ী ভাষা :

যে সকল ভাষায় বাক্যে অবস্থিত পদ বিভক্তি বা প্রত্যয়ের সাহায্যে গঠিত হয় এবং শব্দের উপাদানগুলিকে আলাদা করলেও স্বতন্ত্র অর্থ বজায় থাকে তাকে সমবায়ী ভাষা বলে। সংস্কৃত, আরবি, ইংরেজি প্রভৃতি এই ভাষার অন্তর্গত।


সমবায়ী ভাষাকে আবার তিনটি উপবিভাগে ভাগ করা যায় : 


মুক্তান্বয়ী বর্গ : 

যে ভাষায় পদ গঠিত হয় বিভক্তি বা প্রত্যয়ের সাহায্যে এবং শব্দের উপাদানগুলিকে আলাদা করলেও স্বতন্ত্র অর্থ বজায় থাকে এবং স্বাধীনভাবে যে-কোনো পদগঠনে ব্যবহারও করা যায়, তবে এই ধরনটিকে মুক্তান্বয়ী (Agglutinating) বর্গ বলা হয়। 


তুর্কি ভাষা ও আফ্রিকার সোয়াহিলি-এই শ্রেণির উদাহরণ। 


অত্যন্বয়ী বর্গ : 

যে ভাষাবর্গে বাক্যের বাইরে শব্দের কোনো স্বাধীন সত্তাই নেই এক্ষেত্রে শব্দ বা পদ নয়, বাক্যই হল অন্যতম অংশ। একে বলা হয় অত্যন্বয়ী (Incorporating) বর্গ।

এস্কিমো ভাষা এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। 


সমন্বয়ী বর্গ :

বর্তমান পৃথিবীর অধিকাংশ প্রধান ভাষাতে দেখা যায় যে প্রত্যয়-বিভক্তি, উপসর্গ প্রভৃতি সম্পর্কজ্ঞাপক চিহ্নগুলি এমনভাবে শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয় যে আলাদা অস্তিত্ব থাকে না। এই ধরনটিকে বলা হয় সমন্বয়ী (Inflectional/Synthetic) বর্গ।


সংস্কৃত, বাংলা, লাতিন, ইংরেজি, আরবি প্রভৃতি।

গোত্র বা বংশানুযায়ী বিভাগ:


বর্তমান পৃথিবীর ভাষাগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি ভাষায় এমন কিছু সাদৃশ্য আছে, যা থেকে ভাষাবিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে সেইসব ভাষাগুলি অতীতে কোনো একটি ভাষা থেকেই এসেছে। অতীতের সেই ভাষাগুলির কথা মাথায় রেখে একেকটি ভাষাবংশের নামকরণ করা হয়। একই বংশজাত ভাষাগুলিকে বলা হয় সমগোত্রজ (Cognate) ভাষা।


 যে ভাষাগুলিকে শ্রেণিবদ্ধ করা সম্ভব হয়নি, সেগুলিকে ‘অগোষ্ঠীভূত ভাষা’ বলা হয়। 


পৃথিবী জুড়ে যেসব ভাষাবংশ ছড়িয়ে আছে, সেগুলির মধ্যে প্রধান বংশগুলি হল ১২ টি। এগুলি হল –


১. ইন্দো-ইউরোপীয়

২. সেমীয়-হামীয় 

৩. বান্টু 

৪. ফিনো-উগ্রীয় বা উরালীয় 

৫. তুর্ক-মোঙ্গল-মাঞ্চু বা আলতাইক 

৬. ককেশীয় 

৭. দ্রাবিড় 

৮. অস্ট্রিক 

৯. ভোট-চিনীয় 

১০. প্রাচীন এশীয় 

১১. এসকিমো, 

১২. আমেরিকার আদিম ভাষাসমূহ 


ইন্দো-ইউরোপীয় :

এই বংশগুলির মধ্যে বৃহত্তম ভাষাবংশ ইন্দো-ইউরোপীয় । ইউরোপের পশ্চিমপ্রান্ত থেকে পূর্বে ভারত পর্যন্ত যতগুলি দেশ, তার বেশিরভাগ ভাষাই এই ইন্দো-ইউরোপীয় জাত। ইতালীয়, গ্রিক, তিউনিশীয়, কেলতীয়, তোখারীয়, আলবেনীয়, বালতো-স্লাভীয়, আরমেনীয় এবং ইন্দো-ইরানীয়- মোট নটি ভাষাগোষ্ঠী এর অন্তর্ভুক্ত।


‘ইন্দো-ইউরোপায়ীয়’ নাম থেকে এ কথা মনে হতে পারে যে ইউরোপ ও ভারতের মধ্যেই এই বংশের ভাষাগুলি সীমাবদ্ধ, কিন্তু বাস্তবে আফ্রিকা, আমেরিকা এবং এশিয়া মহাদেশেরও বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে এ বংশের ভাষাগুলি। 


ইউরোপের ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ ভাষাগুলির মধ্যে নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য গ্রিক ভাষা; হোমারের দুটি মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিসি এই ভাষাতেই রচিত। ক্রিট দ্বীপে প্রাপ্ত গ্রিক ভাষার নিদর্শনটি প্রায় ১৪৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের। 


ইতালীয় শাখার প্রধান ভাষা ল্যাটিন যা রোম সাম্রাজ্যের ঐশ্বর্য ও প্রতিপত্তির নিদর্শন। ইতালীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ফরাসি ভাষা ফ্রান্স ছাড়াও বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড ও কানাডায় প্রচলিত। স্প্যানিশ বলা হয় স্পেন, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ, মধ্য ও উত্তর আমেরিকায়। এছাড়াও ইতালিয়ান, পোর্তুগিজ ইত্যাদি ভাষা ইতালীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। 


তিউনিশীয় বা জার্মানিক শাখা থেকে এসেছে ইউরোপের বেশ কয়েকটি প্রধান ভাষা। জার্মানিক শাখার উত্তর জার্মানিক উপশাখা থেকে এসেছে সুইডেনের ভাষা সুইডিশ; পশ্চিম জার্মানিক থেকে ডাচ্, ফ্লেমিশ, জার্মান এবং সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা ইংরেজি ভাষা। 


কেলতিক ভাষাগুলির মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে সমৃদ্ধ আয়ারল্যান্ডের ভাষা আইরিশ। বালতো-শ্লাভিক গোষ্ঠীর ভাষাগুলি হল লিথুয়ানিয়ার ভাষা, বুলগেরিয়ার বুলগেরীয়, চেক, শ্লোভাক, পোলিশ ও রুশভাষা। এশিয়া মাইনর ও ককেশাস অঞ্চলে প্রচলিত আরমেনীয় এবং মধ্য এশিয়ায় প্রচলিত তোখারীয়। 


ইন্দো-ইরানীয় শাখাটি দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়-একটি শাখা ‘ইরানীয় আর্য’ হিসেবে ইরানে প্রবেশ করে, অন্যটি ‘ভারতীয় আর্য’ নামে চলে আসে ভারতে।


           ইন্দো-হিট্টি


হিট্টি                 ইন্দো-ইউরোপীয়


                  কেন্তুম্             সতম্


                 গ্রিক            ইন্দো-ইরানীয়

                 ইতালীয়       আলবেনীয়

                 কেলতিক        আর্মেনীয়

                 জার্মানিক     বালতিক

                 তোখারীয়       স্লাভিক


ইরানীয় শাখাটি বিস্তারলাভ করে প্রায় সমগ্র প্রাচীন পারস্য জুড়ে। ইরানীয় শাখা থেকে ক্রমে জন্ম নেয় দুটি প্রাচীন ভাষা-আবেস্তীয় এবং প্রাচীন পারসিক। জরথুস্ট্রীয় মতাবলম্বীদের ধর্মগ্রন্থ ‘জেন্দ আবেস্তা’র ভাষা আবেস্তীয় ভাষার উদাহরণ। ইরানীয় শাখারও প্রাচীনতম নিদর্শন এই ‘জেন্দ আবেস্তা’। প্রাচীন পারসিক থেকে মধ্যযুগে পহ্লবী ভাষা ও তা থেকে আধুনিক ফারসি ভাষার জন্ম হয়। এই ইরানীয় বংশের আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হল, আফগানিস্তানের পশতু আর বেলুচিস্তানের বেলুচি


ইন্দো-ইউরোপীয় বংশের যে শাখাটি ভারতে প্রবেশ করে ‘ভারতীয় আর্য’ নামে, এবং যে শাখা থেকে কালক্রমে জন্ম নেয় বর্তমান ভারতের প্রধান প্রধান ভাষা এমনকি বাংলাও। 


সেমীয়-হামীয় ভাষাবংশের দুটি উল্লেখযোগ্য ভাষা– হিব্রু ও আরবি। সেমীয় থেকে উদ্ভুত হিব্রু ভাষায় রচিত বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট। ইজরায়েল দেশের সরকারি ভাষা আধুনিক হিব্রুআরবি ভাষাও ছড়িয়ে পড়েছে আরব থেকে উত্তর আফ্রিকা এবং পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চলে। হামীয় শাখার ঐতিহ্যপূর্ণ মিশরীয় ভাষা এখন লুপ্ত। তবে উত্তর আফ্রিকার আলজিরিয়া ও সাহারা অঞ্চলে তমশেক্, কাবিল ভাষা ইত্যাদি এবং ইথিওপিয়া ও সোমালিল্যান্ডে হামীয় শাখার সন্ততিরা রয়ে গেছে।


সেমীয়-হামীয় ভাষাবংশের বাইরে আফ্রিকার সব ভাষাগোষ্ঠীকে ‘বান্টু’ নামে অভিহিত করা হলেও মূলত দুটি ভাষাগোষ্ঠী দেখা যায়, নাইজার-কঙ্গো পরিবার এবং চারিনিল পরিবার। ‘নাইজার-কঙ্গো’ পরিবারের প্রচুর সংখ্যক ভাষার মধ্যে সোয়াহিলি, কঙ্গো, নিয়াঞ্জা, লুবা, জুলু ভাষা উল্লেখযোগ্য। নীল নদীর উত্তর দিকে চারিনিল পরিবারের দিনকা, মাসাই, মোরু, নুবা ভাষাগুলি প্রচলিত। এছাড়াও আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে পিগমিদের ভাষাগুলি হটেনটট্-বুশম্যান বংশের অন্তর্ভুক্ত।


ইউরোপে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমুদ্রের মধ্যে দ্বীপের মতো রয়ে গেছে ফিনো-উগ্রীয় ভাষাবংশ। হাঙ্গেরির ভাষা মজর বা হাঙ্গেরীয়, ফিনল্যান্ডের ভাষা ফিনিস, এস্তোনিয়ার ভাষা এস্তোনীয়, সাইবেরিয়ার মরু অঞ্চলে সাময়েদ, অব উগ্রিক ভাষা ফিনো-উগ্রীয় বা উরাল ভাষাবংশের অন্তর্ভুক্ত। রাশিয়ার পার্বত্য অঞ্চল ককেশাস অঞ্চলের বেশ কয়েকটি ভাষা ককেশীয় বংশের, যার মধ্যে জর্জীয় ভাষা উল্লেখযোগ্য।



দক্ষিণ আমেরিকায় মায়া ও আজতেক সভ্যতার মতো ছিল আরেকটি প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতা, ইনকা। ইনকারা যে ‘কিচুয়া’ ভাষা ব্যবহার করত, তা ইনকা সাম্রাজ্যবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।



অবর্গীভূত ভাষা:


যেসব ভাষাকে কোনো সূত্রেই বর্গীভূত করা সম্ভব হয়নি সেই ভাষাগুলিকে অবর্গীভূত বা অশ্রেণিবদ্ধ ভাষা বা Unclassified Language বলে।

কারণ এই ভাষাগুলির মধ্যে এক ভাষার সঙ্গে অন্য ভাষার সাদৃশ্য পাওয়া যায়নি, বা কিছু পাওয়া গেলেও এমন কোনো ভাষাতাত্ত্বিক প্রমাণ বা সূত্র স্থাপন করা যায়নি, যার মাধ্যমে বংশ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়ে ওঠে। 


জাপানি, কোরীয়, বাস্ক ইত্যাদি হল অবর্গীভূত ভাষার উদাহরণ। 


ভারতীয় উপমহাদেশে কয়েকটি অবর্গীভূত ভাষা পাওয়া যায়। ভাষাতাত্ত্বিকেরা মনে করেছেন উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে বুরুশাস্কি বা খজুনা, আন্দামানে প্রচলিত আন্দামানি, মায়ানমারের করেন্ ও মন্ এই ধরনের ভাষা।

পৃথিবীর নানা স্থানে এমন ভাষারও সন্ধান পাওয়া যায় যেগুলিকে ঠিক স্বাভাবিক ভাষা বলা যায় না। এই অস্বাভাবিক ভাষাগুলির জন্ম স্বাভাবিক ভাষারই মিশ্রণে। এই অস্বাভাবিক ভাষার উদাহরণ হল মিশ্র ভাষা এবং কৃত্রিম ভাষা।



মিশ্র ভাষা:


পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে নানা কারণে একাধিক ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ পাশাপাশি থাকতে থাকতে একে অপরের ভাষা গ্রহণ ও ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে যায়। ফলে দুই বা তার বেশি ভাষার মধ্যে মিশ্রণ ঘটে যে ভাষার জন্ম হয় তাকে মিশ্র ভাষা বলে। 


মিশ্র ভাষার শব্দভান্ডার সীমিত এবং এই ভাষাগুলি সাধারণত কথ্যরূপেই বেশি ব্যবহৃত হয়, লিখিত সাহিত্যের বিকাশের সম্ভাবনা কম থাকে।


ভাষাবিজ্ঞানীরা  মিশ্র ভাষাকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা – ১. পিজিন (Pidgin) ও ২. ক্লেওল (Creole)। 


১. পিজিন (Pidgin) :

পিজিন প্রধানত ইউরোপীয় জাতিগুলির উপনিবেশ বিস্তারের ফল। পিজিন ইংলিশের পিজিন শব্দটি এসেছে ইংরেজি বিজনেস শব্দের চিনীয় উচ্চারণ থেকে। 

পিজিন সবসময়ই সংযোগ-সংস্পর্শের ফলে উদ্ভূত ভাষা, কখনোই মাতৃভাষা নয়। কাছাকাছি-আসা ভাষাগোষ্ঠীর মানুষেরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে পিজিন ভাষাটি লুপ্ত হয়ে যায়। যেমন ভিয়েতনামে ব্যবহৃত ফরাসি-পিজিন লোপ পেয়েছে, লোপ পেয়েছে পিজিন-ইংরেজিও। 


২. ক্লেওল (Creole):

 কোনো পিজিন যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে কোনো গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পরিণত হয় তখন তা হয়ে যায় ক্রেওল। সেক্ষেত্রে পিজিনের সীমিত শব্দভাণ্ডার ক্রমশ সুগঠিত হয়, তৈরি হয় নির্দিষ্ট ব্যাকরণ। গড়ে ওঠার এই প্রক্রিয়াকে বলে Creolization। ক্লেওল পিজিন থেকেই তৈরি হয়, ক্রেওল পিজিনেরই পরিণতি বা বিকাশ।


প্রাচীন মিশ্র ভাষাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিচ-লা-মার, পিজিন-ইংরেজি, মরিশাস ক্রেওল এবং চিনুক। চিনের উপকূল বন্দরে, জাপানে পিজিন-ইংরেজির প্রচলন ছিল।


বিচ-লা-মার হল ইংরজি ভাষার সঙ্গে স্পেনীয় ও পর্তুগিজ ভাষার মিশ্রণ। বিচ-লা-মার ব্যবহৃত হত পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। ফরাসি ও মাদাগাসকারি ভাষার মিশ্রণে তৈরি হয়েছিল মরিশাস ক্রেওল। পরে মরিশাস ক্রেওলে ঢুকে পড়ে অন্য ভাষার শব্দ। অষ্টাদশ শতকে উত্তর আমেরিকার ওরেগন অঞ্চলে জন্ম হয়েছিল চিনুক-এর। কয়েকটি আদিম আমেরিকার ভাষার সঙ্গে মিশে গিয়েছিল ফরাসি এবং ইংরেজি শব্দ।


কৃত্রিম ভাষা :


সারা পৃথিবীতে প্রচলিত এতগুলি ভাষা সমস্ত মানুষের পক্ষে মনের ভাব আদানপ্রদানের পরিপন্থী। ভাষার পার্থক্যে মানুষের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা নেমে আসে।এই বিচ্ছিন্নতা ঘুচিয়ে ঐক্যের সন্ধানেই কৃত্রিম ভাষা তৈরির কথা বলেছিলেন দার্শনিক রেনে দেকার্ত, ফ্রান্সিস বেকন, জন উইলকিন্স। উনিশ শতকে যোহান মার্টিন শ্লেইয়ার ‘ভোলাপুক‘ নামে একটি কৃত্রিম ভাষা তৈরি করেন। 

১৮৮৭ সালে পোল্যান্ডের চক্ষুচিকিৎসক এল. এল. জামেনহফ আরেকটি কৃত্রিম ভাষা তৈরি করেন। রুশ ভাষায় তিনি যে প্রস্তাবটি লেখেন সেখানে তিনি ব্যবহার করেন ছদ্মনাম Doktoro Esperanto, যার অর্থ Doctor Hopeful। এই নাম থেকেই তাঁর প্রস্তাবিত বিশ্বভাষার নাম হয় এসপেরান্তো


বর্তমান পৃথিবীতে কুড়ি লক্ষ মানুষ এই ভাষায় কথা বলতে পারে, যার মধ্যে প্রায় এক হাজার লোকের মাতৃভাষা এসপেরান্তো। জামেনহফ প্রধানত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলির উপর ভিত্তি করেই এই এসপেরান্তো ভাষা গড়ে তোলেন। এসপেরান্তোর সুবিধে হল এর শব্দগুলি উচ্চারিত হয় উচ্চারণ অনুযায়ী। এর ব্যাকরণও সহজ, মাত্র ১৬টি সূত্রের মাধ্যমে এই ভাষা আয়ত্ত করা সম্ভব। এই ভাষায় ২৩টি ব্যঞ্জনধ্বনি, ৫টি স্বরধ্বনি, ২টি অর্ধস্বর এবং ৬টি যৌগিক স্বরধ্বনি আছে। ৯২১টি শব্দমূলের সঙ্গে বিভিন্ন প্রত্যয়/বিভক্তি যোগ করে শব্দ তৈরি হয়। এ ভাষায় শব্দসংখ্যা ৬০০০-এরও বেশি।


কয়েকটি এসপেরান্তো শব্দ উদাহরণ হিসেবে নাচে দেওয়া হল-


English                Esperanto


Hello                        Saluton

Yes                            Jes

No                              Ne

Good morning        Bonan matenon

Please                         Bonvolu

I love you                  Mi amas vin

Thank you                    Dankon

Para Language :

মাথা, হাত, চোখ প্রভৃতি অঙ্গসঞ্চালনের মাধ্যমে যে ভাষা ব্যবহার করা হয় তাকে ভাষাতাত্ত্বিকেরা নাম দিয়েছেন Para Language। 


এই ধরনের ভাষাকে নির্ভর করেই মূলত মূক ও বধির মানুষদের জন্য তৈরি হলো এক বিশেষ সাংকেতিক ভাষা Sign Language। ১৭৭৫ সালে ফরাসি শিক্ষাবিদ Abbe’ Charles Michel de l’Epe’e প্রথম এই ধরনের ভাষা উদ্ভাবন করেন। 

Sign Language-গুলির মধ্যে অন্যতম Paget-Gorman পদ্ধতি। প্রায় ৩,০০০ সংকেত-সমন্বিত এই ভাষায় ‘ক্রিয়া’, ‘পশু’, ‘রং’, ‘আধার’, ‘খাদ্য’ প্রভৃতি কতগুলি মৌলিক বিষয়ভিত্তিক কিছু সংকেত রয়েছে। 


আঙুল দিয়ে বানান করে শব্দ বোঝানোর পদ্ধতিকে ইংরেজিতে বলে finger spelling বা  Dactylology.



বিশ্বের ভাষা ও ভাষা পরিবার MCQ


ভারতে প্রচলিত ভাষাপরিবার

1 thought on “বিশ্বের ভাষা ও পরিবার |একাদশ শ্রেণি |প্রথম সেমেস্টার|ভাষা”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top