কোহলবার্গের নৈতিক বিকাশের তত্ত্ব
(Kohlberg’s Theory of Moral Development)
🔵 মনোবিদ লরেন্স কোহেলবার্গ শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈতিক বিকাশের ওপর গবেষণা করেন।
🔵 তাঁর বিকাশ সংক্রান্ত এই তত্ত্বটি দার্শনিক আদর্শ ও আচরণভিত্তিক মনোবিদ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত।
নৈতিক বিকাশ : শিশুর মনে ন্যায়-অন্যায় উপকার-অপকার প্রভৃতি নৈতিক অনুভূতিগুলির সক্রিয়তা করার প্রক্রিয়াকে শিশুর নৈতিক বিকাশ বলা হয় ।
নৈতিক বিকাশের তত্ত্ব: মনোবিদ কোহেলবার্গ মানব জীবনের বিকাশ প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মানুষের নৈতিক বিকাশ কীভাবে হয় তা ব্যাখ্যা করেছেন । তাই তাঁর তত্ত্বকে নৈতিক বিকাশের তত্ত্ব বলা হয়।
নৈতিক বিকাশ তত্ত্বের ভিত্তি :
১। মনুষ্য পরিবেশে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া (interaction) হয়। এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াই নৈতিক বিকাশের মূল ভিত্তি।
২। নৈতিক বিকাশের কোনো প্রক্ষোভিক কেন্দ্র নেই। নীতিবোধ বলতে তিনি ন্যায়বিচারকে(justice) বুঝিয়েছেন – যা যুক্তিনির্ভর । তাঁর মতে নৈতিক বিকাশ এক ধরনের জ্ঞানমূলক বিকাশ।
৩। মানুষ তার বহিরাচরণ, ওই আচরণের উদ্দেশ্য এবং ঐ আচরণের আভ্যন্তরীণ প্রভাবের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে ।এই তিনটি ক্ষমতা মানুষের নৈতিক বিকাশে সহায়তা করে।
নৈতিক বিকাশ প্রক্রিয়ার উপাদান :
১। জ্ঞানমূলক বিকাশ (cognitive development)
২। জ্ঞানমূলক দ্বন্দ্ব (cognitive conflict)
৩। নির্দিষ্ট ভূমিকা গ্রহণের ক্ষমতা (role taking ability)
এই তিনটি উপাদানের মধ্যে জ্ঞানমূলক দ্বন্দ্ব বিকাশের মূল শক্তির উৎস । বাকি দুটি উপাদান সহযোগীর ভূমিকা গ্রহণ করে।
নৈতিক বিকাশের পর্যায় :
এক। প্রাক্-সংস্কার নীতিবোধের পর্যায় (Pre Conventional Morality) : ৪ বছর – ১০ বছর।
দুই। সংস্কার প্রভাবিত নীতিবোধের পর্যায় (Conventional Morality) : ১০ বছর – ১৩ বছর।
তিন। সংস্কারমুক্ত নীতিবোধের পর্যায় (Post Conventional Morality) : ১৩ বছরের ঊর্ধ্বে।
কোহলবার্গ বিকাশের এই প্রত্যেকটি পর্যায়কে আবার দুটি স্তরে ভাগ করেছেন।
এক। প্রাক্-সংস্কার নীতিবোধের পর্যায় :
এই পর্যায়ের দুটি স্তর হলো –
১। সামঞ্জস্যহীন নীতিবোধ :
এই স্তরে শিশু ভালো-মন্দ বিচার করে শাস্তি ও পুরস্কার দ্বারা ।
২। ব্যক্তিকেন্দ্রিক নীতিবোধ :
এই স্তরে শিশুর নৈতিক আচরণ তার নিজস্ব চাহিদা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। চাহিদা তৃপ্তির জন্য যে ধরনের আচরণ করা প্রয়োজন শিশু তাই করে।
দুই। সংস্কার প্রভাবিত নীতিবোধের পর্যায়:
এই পর্যায়ের দুটি স্তর হলো –
৩। প্রত্যাশামূলক নীতিবোধ :
শিশুর নৈতিক আচরণ তার গোষ্ঠীর প্রত্যাশা দ্বারা নির্ধারিত হয়।
৪। সমাজ নিয়ন্ত্রিত নীতিবোধ:
শিশুর নৈতিক সামাজিক নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত ।
তিন। সংস্কারমুক্ত নীতিবোধের পর্যায় :
এই পর্যায়ের দুটি স্তর হলো-
৫। সামাজিক চুক্তি নিয়ন্ত্রিত নীতিবোধ:
এই স্তর যুক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ।
৬। সর্বজনীন নীতিবোধ:
এই স্তর বিবেকের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।সকলের কল্যাণ হয় এমন নীতিবোধ। এর জন্য প্রয়োজন হয় বিমূর্ত চিন্তন ক্ষমতা।
আধুনিক শিক্ষাবিদদের মতে, তথ্য গ্রহণের মাধ্যমে শিশুর নৈতিক বিকাশ ঘটে না। যেকোনো বিষয়বস্তুকে শিশুর কাছে যুক্তিগ্রাহ্য করতে পারলে তবে তারা সেসব চিন্তা শক্তিকে সক্রিয় করে তোলে। এরফলে নৈতিক বিকাশ ঘটে।
নৈতিক বিকাশের শিক্ষাগত তাৎপর্য :
১। জ্ঞানমূলক দ্বন্দ্বের কারণে নৈতিক বিকাশ হয় । বিভিন্ন বৌদ্ধিক মানসম্পন্ন শিশু একই শ্রেণিতে থাকলে এই ধরনের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে।
২। শিক্ষার্থীদের মানসিক দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানোর জন্য পারস্পরিক আলোচনার সুযোগ দিতে হবে। এই আলোচনার সময় গ্রহণ ও বর্জনের মাধ্যমে তাদের নৈতিক বিকাশের সুযোগ ঘটবে ।
৩। শিক্ষক সবসময় বিভিন্ন পাঠ্যবিষয়ের অভিজ্ঞতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোচনাকে সংযুক্ত করবেন ।
৪। দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা কর্মসূচির প্রবর্তন নৈতিক বিকাশের সহায়ক।
Ami apnr lekhar moto ato sundor pora bishoi kothao paini ato sahoj ami sab ter er jonno apnr agulo porchi Bengali joto bakaron khub sundor bishes kre সন্ধি