শিক্ষক দিবস|Teachers’ Day| Teachers’ Day Speech |শিক্ষক দিবসের বক্তৃতা



 শিক্ষক দিবস : 

        একটি বক্তৃতা 


দিন যায়-দিন আসে। এটিই প্রকৃতির নিয়ম। তবে কিছু দিন হারিয়ে যায় চিরতরে। আবার কিছু দিবস বিশেষ তাৎপর্যের সাক্ষী হয়ে স্থায়ী আসন লাভ করে প্রতিটি জাতির জীবনে। এমন দিবসগুলো স্বীকৃতি পায় জাতীয় দিবস হিসেবে। ফলে এ দিনগুলো আর সাধারণ থাকে না, হয়ে উঠে অনন্য, অসাধারণ। আমাদের জাতীয় জীবনে এই রকমই একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন হল ৫-ই সেপ্টেম্বর। এই দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে উদ্ যাপিত হয় ।


আজকের এই দিনটিকে শিক্ষক দিবস রূপে বেছে নেওয়ার একটা তাৎপর্য আছে।এই দিনে আমাদের দেশের এক মহান ও আদর্শ শিক্ষক জন্মগ্রহণ করেছিলেন।সেই মহান শিক্ষকের নাম আমরা সবাই জানি-ড: সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ । তিনি আজ থেকে ১৩৪ বছর আগে অর্থাৎ ১৮৮৮ সালে আজকের দিনে চেন্নাই শহর থেকে ৪০ মাইল দূরে তিরুতানি গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে  জন্মগ্রহণ করেন।স্বদেশ ও বিদেশের বিভিন্ন শিক্ষাক্ষেত্রে অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন তিনি।সর্বজনমান্য এই দার্শনিক শিক্ষক ১৯৬২ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি হন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তার গুণমুগ্ধ ছাত্র ও বন্ধুরা তাঁর জন্মদিন পালন করতে চাইলে তিনি বলেন- ‘জন্মদিনের পরিবর্তে ৫ই সেপ্টেম্বর যদি শিক্ষক দিবস উদযাপিত হয় তবে আমি বিশেষরূপে অনুগ্রহ লাভ করবো।’


        শিক্ষকের আসল পরিচয় তাঁর ছাত্রছাত্রীরা।ছাত্রছাত্রীরাই তাদের সাফল্য এবং কৃতিত্বের মাধ্যমে নিজের শিক্ষকদের সুনাম বৃদ্ধি করে।আর, বিশ্বে এমন কেউ কি আছেন, যিনি তাঁর জীবনে মা এবং শিক্ষকের অবদান অস্বীকার করবেন। প্রত্যেক মানুষের জন্মদাত্রী হলেন মা এবং জীবন দান করেন তার শিক্ষক।তিনি বাঁচার লক্ষ্য তৈরি করে দেন।এক জন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের একজন হলেন সক্রেটিস। তিনি না থাকলে একজন প্লেটো তৈরি হত না। আবার প্লেটো না থাকলে একজন অ্যারিস্টটল তৈরি হতেন না।অ্যারিস্টটল না থাকলে হয়তো একজন আলেকজান্ডার তৈরি হতেন না। কেননা সক্রেটিস এর ছাত্র ছিলেন প্লেটো,প্লেটোর অ্যারিস্টটল এবং অ্যারিস্টটল-এর ছাত্র ছিলেন আলেকজান্ডার।  শিক্ষক যে শুধু পড়াশোনার ক্ষেত্রেই হতে হবে, তা নয়। তিনি থাকতে পারেন জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রেই। যাঁদের কাছ থেকে আমরা শিখি তাঁরাই আমাদের শিক্ষক। মানব সন্তানকে শিক্ষিত করে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে বলেই শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। মা-বাবা যেমন শিশুকে জন্মদান করে, লালন করে, তেমনি শিক্ষক তার সকল মেধা, শ্রম ও সাধনা দিয়ে তাকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন।

       নিঃসন্দেহে শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা। পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে অন্য সকল পেশার জননী বলা হয়। সেটি শিক্ষার যেকোনো স্তরেই হোক না কেন। হতে পারে সেটি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা কিংবা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। দল-মত, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে একজন শিক্ষক সমাজের সকল মানুষের কাছে অত্যন্ত মর্যাদা ও সম্মানের পাত্র।  সমৃদ্ধ জাতি গড়ে তুলতে শিক্ষকরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। শিক্ষকদের হাতেই গড়ে ওঠে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রোফেসর,অফিসার প্রমুখ। তাই
শিক্ষকদের নিকট সমাজের প্রত্যাশা অনেক।কিন্তু শুধু প্রত্যাশা থাকলেই চলবে না শিক্ষককে যথাযোগ্য মর্যাদাও দিতে হবে।আমাদের অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যেকের উচিত শিক্ষকদের শ্রদ্ধা ভক্তি করা এবং সম্মান দেওয়া।ঘটা করে শুধু অনুষ্ঠান করলেই হবে না অন্তর থেকে শিক্ষকদের শ্রদ্ধা ভক্তি করতে হবে।তবেই শিক্ষক দিবস পালনের সার্থকতা থাকবে।আমার সকল শিক্ষককে প্রণাম জানিয়ে এখানেই শেষ করছি।  ধন্যবাদ।



Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top