বাচ্য |বাংলা ব্যাকরণ| বাচ্য চেনার উপায়| BanglaSahayak

বাচ্য :


১. বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি। 

২. আমা কর্তৃক বাংলার মুখ দৃষ্ট হইয়াছে। 

৩. আমার বাংলার মুখ দেখা হইয়াছে। 


তিনটি বাক্যের অর্থ একই থাকলেও কর্তার রূপ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ক্রিয়াপদেরও রূপ পরিবর্তন ঘটেছে। ক্রিয়ার এই প্রকাশভঙ্গিকেই বাচ্য বলে। 


বাচ্য বলতে সাধারণত বোঝায় প্রকাশভঙ্গি বা বাচনভঙ্গির রূপভেদ অর্থাৎ রূপের পরিবর্তন । যেমন— পুলিশ চোরটিকে ধরেছে । পুলিশের দ্বারা চোরটি ধরা হয়েছে । এখানে দেখা যাচ্ছে, বক্তব্য এক কিন্তু প্রকাশভঙ্গি আলাদা । সুতরাং বাচ্য হল ব্যক্তিভেদে বাচনভঙ্গি অনুযায়ী কর্তা, কর্ম বা ক্রিয়াপদের প্রাধান্য নির্দেশ করে ক্রিয়াপদের রূপের যে পরিবর্তন ঘটে, তাকেই বলে বাচ্য ।

বাচ্যের সাধারণ অর্থ : বলার যোগ্য, কথ্য, গণ্য বা অভিধেয়।

বাচ্য শব্দের প্রকৃতি প্রত্যয় : বচ্+য

বাচ্যের শ্রেণিবিভাগ :

 বাচ্য চার প্রকার, যথা — (১) কর্তৃবাচ্য  (২) কর্মবাচ্য (৩) ভাববাচ্য ও (৪) কর্মকর্তৃবাচ্য ।


(১) কর্তৃবাচ্য :– যে বাচ্যে বাক্যের কর্তা প্রাধান্য পায় এবং কর্তা অনুগামী ক্রিয়াপদ হয় সেই বাচ্যকে কর্তৃবাচ্য বলে । যেমন— রমা গান গায় । মোনা বই পড়ে । তবে মনে রাখতে হবে কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়াটি কখনো সকর্মক ক্রিয়া হয়, আবার কখনো কখনো অকর্মক ক্রিয়া হয় ।


(২) কর্মবাচ্য :-  যে বাচ্যে কর্মপদটি কর্তৃপদে পরিণত হয়ে বাচ্যে প্রাধান্য পায় এবং ক্রিয়া, কর্মের অনুগামী হয় তাকে কর্মবাচ্য বলে । যেমন— পুলিশ কর্তৃক চোরটি ধৃত হল । মীরার দ্বারা গানটা গাওয়া হল ।


(৩) ভাববাচ্য :-  যে বাক্যে ক্রিয়াপদটিই প্রধান হয় অর্থাৎ ক্রিয়ার উপর বেশি জোর দেওয়া হয়, সেই বাক্যকে ভাববাচ্য বলে । যেমন— আপনার কোথা থেকে আসা হচ্ছে ? এস যাওয়া হোক ।


(৪) কর্মকর্তৃবাচ্য :- যে বাক্যে কর্তার উল্লেখ থাকে না, কর্ম পদটিই কর্তার মতো কাজ করে, তাকে কর্মকর্তৃবাচ্য বলে । যেমন— ঢাক বাজে । ঘুড়ি ওড়ে । পাতা নড়ে ইত্যাদি ।


✍ কর্তৃবাচ্য ও কর্মবাচ্যের মধ্যে পার্থক্য :

 ✍ কর্তৃবাচ্য ও ভাববাচ্যের মধ্যে পার্থক্য :

বাচ্য পরিবর্তন :

বাক্যের অর্থ অপরিবর্তিত রেখে এক বাচ্যের বাক্যকে অন্য বাচ্যে রূপান্তরিত করাকে বাচ্য পরিবর্তন বলে। 


(১) কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্যে পরিবর্তন :- কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্যে রূপান্তরিত করার সময় কতগুলি নিয়ম মেনে চলতে হয় । যেমন —


(ক) কর্তৃবাচ্যের পদকে কর্মবাচ্যে রূপান্তরিত করার সময় কর্তায় ‘র’, ‘এর’ বিভক্তি যুক্ত করা হয় । যেমন— আমি > আমার, তুমি > তোমার, ছেলেরা > ছেলেদের ইত্যাদি ।


(খ) কর্মপদের সঙ্গে ‘দ্বারা’, ‘দিয়ে’, ‘কর্তৃক’ অনুস্বর্গ যুক্ত হয় ।


(গ) কর্তৃবাচ্যের বাক্যে কর্ম না থাকলে সেই বাক্যকে কর্মবাচ্যে রূপান্তরিত করা যায় না ।


উদাহরণ :-

(কর্তৃবাচ্য) – আমি রামায়ণ পড়ি ।  (কর্মবাচ্য) – আমার দ্বারা রামায়ণ পঠিত হয় ।


(কর্তৃবাচ্য) – সে ছবি আঁকে । (কর্মবাচ্য) -তার দ্বারা ছবি অঙ্কিত হয় ।


(কর্তৃবাচ্য) – পুলিশ চোর ধরেছেন । (কর্মবাচ্য) – পুলিশ কর্তৃক চোরটি ধৃত হয়েছে ।


(কর্তৃবাচ্য) – সবাই হাততালি দিচ্ছে। (কর্মবাচ্য) সবার দ্বারা হাততালি দেওয়া হচ্ছে ।


(২) কর্মবাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে রূপান্তর :- কর্মবাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে রূপান্তরিত করার নিয়ম হল—


(ক) কর্মবাচ্যের কর্মরূপী কর্তার বিভক্তি ও অনুসর্গ তুলে দিতে হয় ।


(খ) যৌগিক ক্রিয়ার সমাপিকা অংশটি লুপ্ত হয়, অসমাপিকা ক্রিয়ার ধাতুটির সঙ্গে কর্তার পুরুষ, বচন ও বিভক্তি যুক্ত করে তৈরি করতে হয় ।


উদাহরণ:- 

তোমার দ্বারা এ কাজ হবে না (কর্মবাচ্য) । তুমি এ কাজ করতে পারবে না (কর্তৃবাচ্য) ।


আমার ভাত খাওয়া হয়ে গেছে (কর্মবাচ্য) । আমি ভাত খেয়েছি (কর্তৃবাচ্য) ।


মধুসূদন দ্বারা “মেঘনাদ বধ কাব্য” রচিত হয়েছে (কর্মবাচ্য) ।  

মধুসূদন “মেঘনাদ বধ কাব্য” রচনা করেছেন ।(কর্তৃবাচ্য) ।

(৩) কর্তৃবাচ্য থেকে ভাববাচ্যে রূপান্তর :- কর্তৃবাচ্য থেকে ভাববাচ্যে রূপান্তর করার নিয়মগুলি হল —


(ক) ভাববাচ্যে ক্রিয়া প্রধান হয়, কর্তৃপদ, কর্মপদ সব গৌণ, কর্তৃপদের সঙ্গে ‘র’, ‘এর’ বিভক্তি যুক্ত হয় ।


(খ) কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়ার মূল ধাতুর সঙ্গে ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে ক্রয়াবিশেষ্য পদ গঠন করা হয়, এরপর কোথাও ‘হ’ বা ‘যা’ ধাতুর আগমন ঘটে ।


উদাহরণ:-


আমি স্কুলে এসেছি (কর্তৃবাচ্য) । আমার স্কুলে আসা হয়েছে (কর্মবাচ্য) ।


ভিতরে এসে বসো ( কর্তৃবাচ্য) । ভিতরে এসে বসা হোক (কর্মবাচ্য) ।


পুলিশ সন্দেহ করেছিল ( কর্তৃবাচ্য) । পুলিশের সন্দেহ হয়েছিল (কর্মবাচ্য) ।

বাচ্য চেনার উপায়: 


১: ক্রিয়াপদ যদি কর্তার পুরুষ ধরে হয়, তাহলে অবশ্য‌ই কর্তৃবাচ্য হবে। মনে রাখবে, জড় পদার্থ‌ও কর্তা হতে পারে। যেমন : সূর্য ওঠে।


২: এককর্মক ক্রিয়ার কর্মে যদি ‘কে’ বিভক্তি থাকে, তাহলে জানবে সেটি কোনোমতেই কর্মবাচ‍্য বা কর্মকর্তৃবাচ্য হবে না। কারণ ওই দুটি বাচ্যে কর্মকে কর্তা সাজতে হয় আর কর্তা সাজতে হলে শূন্য বিভক্তি‌র ভেকটি ধারণ করতেই হয়।


৩: প্রকৃত কর্তায় দ্বারা/কর্তৃক/দিয়ে অনুসর্গ থাকলে সেটি কর্মবাচ্য হ‌ওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।


৪: মূল ক্রিয়াটিকে যদি ত/ইত প্রত্যয় যোগে বিশেষণে পরিণত করা হয়, (যেমন: পঠিত, ভুক্ত, গৃহীত, বর্জিত, পরিত্যক্ত ইত্যাদি) তাহলে সেটি প্রায় সব সময়‌ই কর্মবাচ্য। যেমন : স্থানটি পরিত্যক্ত হয়েছে।

তবে যদি ২ আর ৪ এর বিরল সংযোগ ঘটে, সেক্ষেত্রে ভাববাচ্য হবার সম্ভাবনা প্রবল।  এমন হলে কর্মটি প্রাণিবাচক হবে।

যেমন : “তোমাকে সত্যি সত্যি প্রহৃত হতে হল?” এখানে একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে— কর্মবাচ্যের কর্তারূপী কর্মকে সত্যিকার কর্তার মর্যাদা দিয়ে গৌণকর্ম-কর্তা ভাববাচ্য তৈরি করা হচ্ছে ।


৫: কর্মকর্তৃবাচ্যে কখন‌ও কর্তার উল্লেখ থাকে না। 


৬: ক্রিয়া অকর্মক হলে স্বাভাবিক ভাবেই তার কর্মবাচ্য সম্ভব নয়। তাতে কর্তায় দ্বারা/দিয়া যাই থাক।


৭: কর্মটি ক্রিয়ার ভাব-জাত বিশেষ্যের সাথে হাইফেন দিয়ে জুড়ে দেওয়া থাকলে সেটি অবশ্য‌ই ভাববাচ্য। যেমন : “আমার ভাত-খাওয়া শেষ হ’ল।”


৮: এছাড়া, ভাববাচ্যে কর্তায় কে/র-এর বিভক্তি থাকবে অথবা কর্তা থাকবে না।


৯: ভাববাচ্যে হ ধাতু আছে দেখেই সহসা ভাববাচ্য ধরতে নেই। কর্মবাচ্যেও ধাতু লাগে।


বাচ্য MCQ

১. ক্রিয়ার অর্থ প্রাধান্য পায় –
ক) কর্মবাচ্যে 
খ) কর্তৃবাচ্যে 
গ) ভাববাচ্যে 
ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্যে 
২. “নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে।”- এটি কোন বাচ্যের উদাহরণ ?ক) কর্মবাচ্য
খ) কর্তৃবাচ্য
গ) ভাববাচ্য
ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য 
৩. যে বাক্যে কর্ম কর্তা রূপে প্রতীয়মান হয় তাকে বলে
ক) কর্মবাচ্য
খ) কর্তৃবাচ্য
গ) ভাববাচ্য
ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য
৪. “অল্প লোকই বেদের অর্থ বুঝিত” — এটি কোন বাচ্যের উদাহরণ ?
ক) কর্মবাচ্য
খ) কর্তৃবাচ্য
গ) ভাববাচ্য
ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য
৫. ‘কোথা থেকে আসছেন ?’ – এটি
ক) কর্মবাচ্য
খ) কর্তৃবাচ্য
গ) ভাববাচ্য
ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য
৬. ভাববাচ্যের কর্তায় যুক্ত থাকে 
ক) ‘কে’ বিভক্তি 
খ) ‘র’ বিভক্তি 
গ) ‘শূন্য’ বিভক্তি
ঘ) ‘তে’ বিভক্তি
৭. বাচ্য ভেদে ভিন্ন হয়
ক) কর্তার প্রকাশভঙ্গি
খ) কর্মের প্রকাশভঙ্গি
গ) বিশেষ্যের প্রকাশভঙ্গি
ঘ) ক্রিয়ার প্রকাশভঙ্গি
৮. ‘ক্রিয়াপদই প্রধান’ – কোন বাচ্যে ?
ক) কর্মবাচ্যে 
খ) কর্তৃবাচ্যে 
গ) ভাববাচ্যে 
ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্যে 
৯. “মহাশয়ের কোথায় যাওয়া হবে ?”- এটি হলো
ক) কর্মবাচ্য
খ) কর্তৃবাচ্য
গ) ভাববাচ্য
ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য
১০. “পাঁচ দিন নদীকে দেখা হয় নাই”– এটি কোন বাচ্যের উদাহরণ ?
ক) কর্মবাচ্য
খ) কর্তৃবাচ্য
গ) ভাববাচ্য
ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য
১১. যে বাচ্যে ক্রিয়ার ভাবই প্রধান বলে প্রতীয়মান হয় তাকে বলে
ক) কর্মবাচ্য
খ) কর্তৃবাচ্য
গ) ভাববাচ্য
ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য
১২. ‘কলমে কায়স্থ চিনি’ – এটি কোন বাচ্যের উদাহরণ ?
ক) কর্মবাচ্য
খ) কর্তৃবাচ্য
গ) ভাববাচ্য
ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য
১৩. ‘বাঁশি বাজে’, ‘গাড়ি চলে’, ‘ঘণ্টা বাজে’, ‘নৌকা চলে’ — এগুলি কোন জাতীয়  বাচ্য ?
ক) কর্মবাচ্য
খ) কর্তৃবাচ্য
গ) ভাববাচ্য
ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য
১৪. ‘হাট বসেছে শুক্রবারে’ — কোন বাচ্যের দৃষ্টান্ত ?
ক) কর্মবাচ্য
খ) কর্তৃবাচ্য
গ) ভাববাচ্য
ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য
১৫. পরস্পর বাচ্যান্তর সম্ভব নয়
ক) কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যের
খ) কর্তৃবাচ্য ও কর্মবাচ্যের
গ) কর্তৃবাচ্য ও ভাববাচ্যের
ঘ) কর্মবাচ্য ও কর্তৃবাচ্যের
১৬. ‘অন্তরে লভেছি তব বাণী’–কোন বাচ্যের দৃষ্টান্ত ?
ক) কর্মবাচ্য
খ) কর্তৃবাচ্য
গ) ভাববাচ্য
ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য
১৭. ‘শ্যামার নরম গান শোনা হয়েছিল’ —বাক্যটি
(ক) কর্মবাচ্য       
(খ) কর্মকর্তৃবাচ্য                  
(গ) কর্তৃবাচ্য       
(ঘ) ভাববাচ্য
১৮. “অপু সর্বপ্রথম গ্রামের বাহিরে পা দিল” – ভাববাচ্যে রূপান্তর করলে হবে
ক) অপু কর্তৃক সর্বপ্রথম গ্রামের বাহিরে পা দেওয়া হল
খ) অপুর সর্বপ্রথম গ্রামের বাহিরে পা দেওয়া হইল
গ) অপুই সর্বপ্রথম গ্রামের বাইরে পা দিল
ঘ) অপুর দ্বারা সর্বপ্রথম গ্রামের বাইরে পা দেওয়া হল



1 thought on “বাচ্য |বাংলা ব্যাকরণ| বাচ্য চেনার উপায়| BanglaSahayak”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top