মহাভারত :
কবীন্দ্র পরমেশ্বর :
মহাভারতের প্রথম বাংলা অনুবাদক হলেন কবীন্দ্র পরমেশ্বর।
পরমেশ্বর দাসের কাব্যের নাম ‘পান্ডববিজয়’
কবি পরমেশ্বর ছিলেন চট্টগ্রামের শাসক পরাগল খাঁর সভাকবি।
পরাগল খাঁ কবিকে ‘কবীন্দ্র’ উপাধি দান করেছিলেন।
আনুমানিক ১৫১৫ – ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কবীন্দ্র পরমেশ্বর মহাভারতের বাংলা অনুবাদ করেন ।
পরাগল খাঁর নির্দেশে রচিত বলে কবীন্দ্র পরমেশ্বরের কাব্যকে ‘পরাগলী মহাভারত’ বলা হয় ।
শ্রীকরনন্দী :
চট্টগ্রামের শাসক লস্কর পরাগল খাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ছুটি খাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর সভাকবি শ্রীকরনন্দী জৈমিনি মহাভারত অবলম্বনে বাংলা ভাষায় মহাভারত রচনা করেন।
শ্রীকরনন্দীর কাব্যের নাম অশ্বমেধ পর্ব।
শ্রীকরনন্দী জৈমিনি মহাভারত অবলম্বনে ‘অশ্বমেধ পর্ব’ নিয়ে বিস্তৃত কাব্য রচনা করেন।
কাশীরাম দাস :
কাশীরাম দাস সম্পর্কে মাইকেল মধুসূদন দত্ত মন্তব্য করেন —
” মহাভারতের কথা অমৃত-সমান,
হে কাশী কবীশ দলে তুমি পুণ্যবান।।”
বাংলা মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কাশীরাম দাস । তাঁর কাব্যের নাম ‘ভারত পাঁচালী’। সকল বাংলা মহাভারতের অনুবাদের মধ্যে এটিই সর্বাধিক জনপ্রিয়তা লাভ করে ।
কবি কাশীরাম দাস বর্ধমান জেলার ইন্দ্রাণী পরগণার (বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা) অন্তর্গত সিঙ্গি (মতান্তরে সিদ্ধি) গ্রামে এক বৈষ্ণব কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
আত্মপরিচয়ের কাশীরাম দাস নিজেই বলেছেন,
কায়স্থ কুলেতে জন্ম বাস সিঙ্গি গ্রাম।
প্রিয়ঙ্কর দাস পুত্র সুধাকর নাম।।
তৎপুত্র কমলাকান্ত কৃষ্ণদাস পিতা।
কৃষ্ণদাসানুজ গদাধর জৈষ্ঠ্য ভ্রাতা।।
পাঁচালি প্রকাশি কহে কাশীরাম দাস।
অলি হব কৃষ্ণপদ মনে অভিলাষ।।
কবিরা ছিলেন দেব উপাধিধারী কায়স্থ।
তাঁর পিতার নাম ছিল কমলাকান্ত।
কবিরা ছিলেন তিন ভাই—কৃষ্ণরাম, কাশীরাম ও গদাধর।
অগ্রজ কৃষ্ণদাস শ্রীকৃষ্ণবিজয় এবং
শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণ অনুসরণে শ্রীকৃষ্ণবিলাস নামে কাব্য লেখেন। অনুজ গদাধর লিখেছিলেন জগন্নাথমঙ্গল বা জগৎমঙ্গল কাব্য।
কাশীরাম দাসের কাব্য রচনাকাল নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
সাহিত্য পরিষদের রক্ষিত একটি পুথিতে পাওয়া যায় কাশীরামের কাব্য ১৬০৪ খ্রিস্টাব্দে রচিত। আবার একটি শ্লোক অনুযায়ী ১৫২৬ শকাব্দ তথা ১৬০৫ থেকে ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে কাশীরাম দাস বিরাট পর্ব রচনা সমাপ্ত করেন।
১৮৬৬ সালে কালীপ্রসন্ন সিংহ প্রকাশিত মহাভারতে আছে-
“আদি সভা বন বিরাটের কিছুদূর।
ইহা রচি কাশীদাস গেলা স্বর্গপুর।।”
কাশীরাম দাস মহাভারতের সমগ্র অনুবাদ করে যেতে পারেননি। আদি সভা বন ও বিরাট পর্ব রচনা করে কবি লোকান্তরিত হন। কবির তিরোধানের পর তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র ও ভ্রাতুষ্পুত্র মিলে কাব্যটি সমাপ্ত করেন।
মহাভারতের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য অনুবাদক ও কাব্যের নাম :
সময়কাল | কবি | কাব্যের নাম |
ষোড়শ শতাব্দী | কবীন্দ্র পরমেশ্বর | পাণ্ডব বিজয় |
শ্রীকর নন্দী | অশ্বমেধ পর্ব | |
রামচন্দ্র খান রঘুনাথ | অশ্বমেধ পর্ব অশ্বমেধ পর্ব | |
সপ্তদশ শতাব্দী | কাশীরাম দাস | মহাভারত |
নিত্যানন্দ ঘোষ | মহাভারত | |
অষ্টাদশ শতাব্দী | দুর্লভ সিংহ | ভারত পাঁচালি |
পুরুষোত্তম দাস শঙ্কর চক্রবর্তী | পাণ্ডব পাঁচালি ভারত পাঁচালী |